#বিবাহ_বিভ্রাট_ডটকম (পর্ব এক)
নুসরাত জাহান লিজা
“বিবাহ ডট কম
শতভাগ গ্যারান্টি সহকারে পাত্র/পাত্রী সাপ্লাই দেয়া হয়। আমাদের নিজস্ব ডিটেকটিভ দ্বারা চারিত্রিক সার্টিফিকেট হাতে পাবার পরেই বায়োডাটা হাতে নেয়া হয়। আমাদের কোনো শাখা নেই।
এপয়েনমেন্টের জন্য যোগাযোগ করুন- ০১৭…..”
এমন উদ্ভট সাইনবোর্ড জীবনে কোনোদিন দেখেনি ইমরোজ। এক পৃথিবী বিতৃষ্ণা নিয়ে সাইনবোর্ডের লেখা পড়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। পাত্র, পাত্রী সাপ্লাই দেয়া হয় মানে কী! ভাষার এ কেমন অপপ্রয়োগ! ভীষণ খুঁতখুঁতে মানুষ ইমরোজ, বাংলার ছাত্র ছিল, এখন শিক্ষক৷ তাই এটা ওর সহ্যের বাইরে। তারা কি গরু-ছাগল বা মালপত্র নাকি, যে হাটে-বাজারে সাপ্লাই করবে! মা ওকে জোর করে এমন আজব একটা প্রতিষ্ঠানে কেন পাঠিয়েছেন তা ওর বোধগম্য হলো না।
ইমরোজ এক পৃথিবী বিতৃষ্ণা নিয়ে ভেতরে এলো, ছোট্ট একটা রুমে গাদাগাদি ভীড়। রীতিমতো লাইন পড়ে গেছে৷ এটা রিসিপশন নাকি গরুর ভাগাড় কে জানে!
রিসিপশনে একজন অল্পবয়সী মেয়ে বসে আছে। ভীড় দেখে বিস্মিত হলো ইমরোজ।
সে রিসিপশনে এসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল, “আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলতে চাই।”
“আপনার এপয়েনমেন্ট আছে স্যার? সিরিয়াল নম্বর কত?”
একজন ঘটকের সাথে কথা বলার জন্য যে এপয়েনমেন্ট লাগবে সেটা কে জানত! আগে জানলে আসতই না। সে বলল,
“আমার এপয়েনমেন্ট নেই। এখন ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন?”
“আমি এখন সিরিয়াল নম্বর দিচ্ছি, আপনি অপেক্ষা করুন স্যার।”
“দেখুন, এখন ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন না? আসলে আমি ভীষণ ব্যস্ত মানুষ।”
“সিরিয়াল ব্রেক করলে ম্যাডাম ভীষণ রেগে যান। আমরা কোনো অনিয়ম করি না। আমরা স্ট্রিক্টলি আমাদের রুলস এন্ড রেগুলেশনস মেইনটেইন করি। তাছাড়া যারা আসেন, সবারই কিছু না কিছু ব্যস্ততা থাকেই।”
ইমরোজ অগত্যা কোণার দিকে একটা সিটে বসে পড়ল। ভীষণ বিরক্ত লাগছে।
ওর পাশে একজন লোক এসে বসল। পান চিবুতে চিবুতে বলল,
“ডিজিটাল ঘটক। আইজকাল সবই ডিজিটাল। তা আপনে কি আপনের বায়োডাটা জমা দিবার আইছেন ভাইজান? নাকি আপনার কেসটা এক্সেপ্ট হইল কিনা সেই রেজাল্ট নিতে আইছেন?”
ইমরোজের বিরক্তি মাত্রা ছাড়াল, বলল, “কেস মানে?”
“পরথমবার বায়োডাটা জমা নেয়, এরপর ওইযে গোয়েন্দাগিরি করে, দেখে কোনো লটরপটর আছে কিনা।”
এরপর গলা খাদে নামিয়ে বলল, “চারিত্রিক সমস্যা আরকী। থাকলে সোজা বায়োডাটা ফিক্কা মারব, না থাকলে মনে করেন, কপাল ভালো। আপার সুনজর পড়লে বিয়ে পাক্কা।”
এটা কোথায় এসে পড়ল সে! ওর মনে হলো ফিরে যাবে, কিন্তু মায়ের কথা মনে পড়ল, “তুই কী খালি গায়ে-গতরে বড় হয়েছিস? নিজে তো ত্রিশ পার করেছিস, বিয়ে করছিস না, ওইদিকে তোর ছোটবোন বিবাহ উপযুক্ত হয়ে গেছে। তার দায়িত্ব নিবি না?”
এই প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন, “আজ এখানে গিয়ে সব সেটিং করে আসবি।”
“এসব আমি পারব না, মা। আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। স্টুডেন্টদের হাফ ইয়ারলি এক্সাম সামনে।”
“তোর লেকচার শেষ করে যাবি৷ সারাদিন তো ক্লাস নিবি না।”
“এসব আমার ভালো লাগে না।”
“তা লাগবে কেন? আমার কথার কোনো গুরুত্বই কারো কাছে নেই। এই বয়সে আমাকে যেতে হবে তাহলে। বাতের ব্যথা নিয়ে বুড়ো বয়সে জান কয়লা করার জন্যই তো বেঁচে আছি।”
ওর মা বরাবরই এমন। মেলোড্রামা করে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে তিনি কাজ হাসিল করতে ওস্তাদ।
“ঠিক আছে, যাব।”
“কাজ করে আসবি। নইলে আমি ইপ্সিতার বায়োডাটার সাথে তোরটাও দিয়ে আসব। তোর এই দেবদাসগিরি ছুটিয়ে তবে দম নেব।”
এটা অবশ্য ভয়ের বিষয়, সারাজীবন মা আর বোনকে দেখে ওর বিয়ের সাধ মিটে গেছে। ওরকম নাটুকেপনা করা একপিস ওর কপালে জুটে গেলে জীবন কয়লা হয়ে যাবে! মা একবার ওকে নিয়ে পড়লেই আর নিস্তার নেই। এই আশঙ্কায় সে ফিরে যাবার চিন্তা বাতিল করে নিজের ধৈর্যের পরিধি বৃদ্ধি করল।
মেয়েটা যে সিরিয়াল নম্বর ধরিয়ে দিয়েছিল তার নম্বর তেইশ। সে আবার উঠে গিয়ে রিসিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করল,
“এখন কত নম্বর চলছে?”
“বারো।”
সে দাঁতে দাঁত চেপে গিয়ে আবার বসল। পাশে বসা লোকটা আরেকটা যন্ত্রণা, এক নাগারে কথা বলে ওর মাথা ধরিয়ে দিয়েছে। সে যে বিরক্ত হচ্ছে, তাতে তার কোনো বিকার নেই। মানুষের স্বাভাবিক ম্যানারিজম থাকবে না! অদ্ভুত!
আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পরে ঘটকের ঘরে যখন ঢুকল, তখন মেজাজের পারদ আকাশ ছুঁয়েছে ওর। ওকে বিসিএস ক্যাডারের পুলিশ ভেরিফিকেশনেও এত ঝক্কি পোহাতে হয়নি বোধহয়। ভেতরে ঢুকে ওর চক্ষু চড়কগাছ, ভেবেছিল বয়স্ক পান খাওয়া কোনো মহিলাকে দেখবে, ঘটক শুনলে যে ধরনের ছবি ভাসে। কিন্তু সেখানে পঁচিশ পেরুনো কোনো তরুণীকে সে একেবারেই আশা করেনি। শ্যামলা রঙের নিরীহ চেহারার একজন মেয়ে।
ওর কাছে মনে হলো সব বুরজুকি। সে সময় ধরে চলা মানুষ, এই মেয়ের এমন ফালতু প্রতিষ্ঠানের জন্য তার সময়ের যে অপচয় হয়েছে, নিজের যাপিত জীবনের বাঁধাধরা রুটিনে ব্যাঘাত ঘটেছে, তা কে ফেরত দেবে!
কেবিনে প্রবেশের আগে সে নামফলকে নামটা দেখেছিল,
‘রাত্রি করিম’
“আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?”
ইমরোজের মুখে তখন অমাবস্যার আঁধার।
“বিয়ের ব্যাপারে…”
এটুকু বলতেই রাত্রি নামের তরুণী ওকে থামিয়ে দিল, “আমার কাছে লোকে বিয়ের বিষয়েই কথা বলতে আসে৷ তা স্যাম্পল কে? আপনি?”
এবার আর ইমরোজের পক্ষে নিজের মেজাজের পারদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলো না। নিরীহ চেহারা হলেও ভদ্রতার লেশমাত্র নেই এই মেয়ের মধ্যে।
“স্যাম্পল মানে? ক্লায়েন্টকে আপনারা এভাবে ট্রিট করেন? আপনার কথাবার্তা ভীষণ অশালীন আর অভদ্র।”
“এক্সকিউজ মি! কী বললেন? আমি অভদ্র? অশালীন? আপনি বিনয়ের অবতার? আমাদের রেপুটেশন নিয়ে বাজে কথা বলার রাইট আপনাকে কে দিয়েছে?” ঝাঁঝালো গলায় বলল রাত্রি।
“এটাকে রেপুটেশন বলে? বাইরে যে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন তাতে লিখেছেন, পাত্র পাত্রী সাপ্লাই দেয়া হয়! সেটাই অত্যন্ত ফালতু কথা। আপনার আসলে গবাদি পশুর ব্যবসা করার কথা ছিল, হয়েছেন ঘটক। এদেরকে আমি চিনি না ভেবেছেন? এরা শুধু নানা ভুজুংভাজুং দিয়ে ডাকাতি করার ধান্দা করে। নানান বাহানায় যখন তখন টাকা আদায় করা ছাড়া এদের কোনো কাজ নেই।”
রাত্রির মুখাবয়ব মুহূর্তেই বদলে গেল, একটু আগের দেখা শান্ত চোখ দুটো ক্রোধে জ্বলে উঠল, প্রবল রাগে ফেটে পড়ল সে,
“আপনি একসাথে দুটো শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন৷ এক, আপনি দুটো প্রফেশনকে ইনসাল্ট করেছেন, দুই, একজন নারীর সাথে জঘন্য ব্যবহার করেছেন। আপনি বেরিয়ে যান, আপনার কাজ আমি নেব না।”
এমন স্পর্ধা আজ অব্দি কারোর হয়নি, ইমরোজের অহমে আঘাত লেগেছে, সে-ও তেতে উঠে বলল,
“আমারো এসব ধাপ্পাবাজদের খপ্পরে পড়ার ইচ্ছে নেই।”
বলেই সে ত্বরিত বেগে উঠে দাঁড়াল, দরজার কাছাকাছি যেতেই মায়ের হুমকির কথা মনে পড়ল। এরপর সে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো।
“কাজটা তো আপনাকে নিতেই হবে। আপনার জন্য আমার তিন ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। কাজ না নিলে আমি ক্ষতিপূরণ দাবি করব।”
“আমি কারোর বাধ্য নই। আমার যার কাজ ইচ্ছা নিতে পারি।”
“তাহলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজটা নিন, আমি চলে যাই।”
“আপনার ভাষায় এটা একটা ধাপ্পাবাজ প্রতিষ্ঠান, তবুও কাজটা দিতে চাইছেন? তার মানে প্রয়োজনটা আপনারই বেশি, তাই না?”
ইমরোজ দাঁতে দাঁত পিষল, চোয়াল শক্ত হলো। এই মেয়ে ওর বাধ্যবাধকতা ধরে ফেলেছে, চেহারা দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না, অথচ আস্ত শিং মাছ হাতে ধরে এক গ্লাস পানি দিয়ে কোঁৎ করে গিলে ফেলতে পারে।
অগত্যা জীবনে প্রথমবার মা ভিন্ন অন্য কারোর কাছে সে দুঃখ প্রকাশ করতে বাধ্য হলো,
“আচ্ছা, ধান্দাবাজ বলা আমার উচিত হয়নি। তার জন্য স্যরি।”
“জেনে ভালো লাগল।”
“কিন্তু আপনিও আমার সাথে ভীষণ বাজে ব্যবহার করেছেন৷ একটা স্যরি আমারও পাওনা আছে।” জলদগম্ভীর গলায় বলল ইমরোজ।
“শুরুটা আপনি করেছিলেন। আমি সায়েন্স মেনে চলি। নিউটনের তৃতীয় সূত্র পড়েননি? সব ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে? ক্রিয়া যেহেতু আপনার, প্রতিক্রিয়া তো হজম করতেই হবে৷ তাই না? তাই আমার স্যরি বলার কোনো প্রশ্নই আসে না।” বিদ্রুপ ঝরল কথায়।
“তাহলে কাজটা করুন।”
“কথাটা কেমন যেন নির্দেশের মতো শোনাচ্ছে। আমি ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিজনেস করি। কারোর তাবেদারি নয়।”
এমন ঔদ্ধত্যমাখা বিদ্রুপে ইমরোজের মাথার শিরা দপদপ করছে, এর হিসাব সে তুলে রাখবে ভবিষ্যতের জন্য। মস্তিষ্কের আগ্নেয়গিরি সামলে সে যথাসম্ভব ভদ্রোচিত স্বরে বলার চেষ্টা করল,
“আমরা কি আলোচনা আগাতে পারি? প্লিজ!”
মেয়েটা ওর কাদায় পড়া অবস্থা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছে, “এবার ভালো শোনাচ্ছে৷ আচ্ছা বসুন তাহলে। বায়োডাটা এনেছেন?”
অসভ্য মেয়েটার হাসি দেখে ওর গা জ্বলে যাচ্ছে। তবুও বসে বায়োডাটা বের করে দিল।
“ইপ্সিতা আহমেদ। বয়স তেইশ। ইনি সম্পর্কে আপনার কে হন?”
“আমার ছোট বোন।”
“আচ্ছা। ওর জন্য কেমন পাত্র পছন্দ?”
“একজন ভালো ফ্যামিলির ভদ্র ছেলে।”
বায়োডাটায় চোখ বুলাতে বুলাতে সিরিয়াস পেশাদারি গলায় প্রশ্ন করল রাত্রী, “কোনো নির্দিষ্ট প্রফেশন প্রেফার করেন?”
“বায়োডাটা তো দেখছেন, ওর যোগ্যতা অনুযায়ী
প্রফেশন হলেই হবে, তবে জেন্টেলম্যান হতে হবে। ভালো ফ্যামিলি হতে হবে।”
“আপনার বোনের কোনো এ্যাফেয়ার আছে?”
“না, ও খুব ভালো মেয়ে।”
“রিলেশনশিপে থাকলেই মেয়ে খারাপ হয়ে যায়?”
“দেখুন ও আমার বোন।”
“তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন?”
“না। কিন্তু আমি জানি। ও এমন কিছু করবে না।”
“সমস্যা নেই। থাকলেও আমাদের ডিটেকটিভ টিম সেটা বের করতে পারবে।”
“ওর উপরে গোয়েন্দাগিরি করবেন? এটা কিন্তু এথিকসের পরিপন্থী। সবার প্রাইভেসি আছে।”
“আমরা আমাদের রেপুটেশনের ব্যাপারে অত্যন্ত স্ট্রিক্ট৷ অনেক ছেলে মেয়েরা আছে, প্রেম করে, কিন্তু ভয়ে বা সংকোচে বাসায় বলতে পারে না। পরিবারের পছন্দে বিয়ে করে ফেলে৷ কিন্তু পুরোনো প্রেম ভুলতে পারে না। ফলাফল ডিভোর্স। আমাদের চার বছরে এমন রেকর্ড নেই।”
“পরে বিভিন্ন কারণেই বনিবনা না হতে পারে, তখন ডিভোর্স হতে পারে।”
“সেসব আমরা ক্লায়েন্টের ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে সম-মনা খুঁজে আরও অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া বিবেচনা করে এরপর সিলেক্ট করে কিছু নাম প্রস্তাব করি। এরমধ্যে তারা যেগুলো পছন্দ করেন সেসব নিয়ে কথা আগাই। এমনি এমনি এত অল্প সময়ে আমাদের এত সুখ্যাতি তৈরি হয়নি।”
অহংকারে এই মেয়ের মাটিতে পা পড়ছে না, এমন বেয়াদব আর অভব্য মেয়ে সে জীবনে দেখেনি। ইমরোজ একটা সরকারি কলেজে জয়েন করেছে বছর দুই হয়েছে। শিক্ষক হিসেবে সে যখন ক্লাসে যায়, পিনপতন নীরবতা নেমে আসে ক্লাস জুড়ে। সেটা ওর প্রতি সমীহ থেকেই হোক বা লেকচার পছন্দ করে বলেই হোক, কিন্তু যথেষ্ট সম্মানিত মানুষ সে। ছাত্রজীবনেও সে সবসময় খুব বেছে বেছে বন্ধুত্ব করেছে। বাজে আড্ডায় কোনোদিন থাকেনি। পোশাকে, চলনে বলনে সবেতেই ভীষণ খুঁতখুঁতে। খানিকটা রগচটা, তবে ওর গুরুগম্ভীর ব্যক্তিত্বের জন্য কেউ ওকে কোনোদিন ঘাঁটায়নি, এভাবে কথা বলারও সাহস পায়নি। এই মেয়ে কি-না ওকে রীতিমতো অপমান, অপদস্ত করেছে।
“আপনার নাম আর ফোন নম্বর দিন। আমাদের ভ্যারিফিকেশন শেষ হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করব।”
ইমরোজ ওর একটা ভিজিটিং কার্ড এগিয়ে দিল। সে চোখ বুলিয়ে বলল,
“যাকে তাকে নিজের ছাত্র ভেবে বসে লেকচার শোনানোর স্বভাব তাহলে এজন্যই।”
“এবার কিন্তু আপনি শুরু করছেন।”
রাত্রি ওর কথা গায়ে না মেখে ইন্টারকমে একজনকে ভেতরে আসতে বলল, একটা ছেলে ভেতরে এলে তাকে বায়োডাটা আর ওর ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে কর্তৃত্বপূর্ণ গলায় বলল,
“এটা নাও। একটা ফাইল তৈরি করে জাহিদ ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দাও।”
এবার ইমরোজের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমরা ঘাটেঘাটে টাকার ধান্দা করি না। ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে একটা কন্ট্রাক্ট পেপার সাইন করি, বিয়ে হলে একেবারে পুরো চার্জ নেই। যদিও চার্জ একটু বেশি, কিন্তু কাজ টেকসই। দামে কম মানে ভালো টাইপ কাজ আমরা করি না, যোগ্য পারিশ্রমিকে পোক্ত কাজ আমাদের।”
ইমরোজ বেরিয়ে এলো থমথমে মুখে, আজ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিল, মনে পড়ল আয়নায় নিজের মুখই দেখেছিল প্রথম।
সে হিসেব তুলে রাখল, অবশ্যই ঋণ রাখবে না। শোধ সমেত ফেরত দেবে।
***
ইপ্সিতা পার্কে বসে অপেক্ষা করছে। উৎপল এখনো আসছে না। এই ছেলে সবসময় লেট লতিফ। অথচ সে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
উৎপল আসতেই সে হিসিয়ে উঠে বলল, “দেরি হলো কেন?”
“জ্যাম ছিল তো।”
“সারা ঢাকায় শুধু তোমারই ট্রাফিক জ্যাম থাকে, আর কারোর থাকে না? আমার পার্সোনাল হেলিকপ্টার আছে না-কি যে উড়ে এখানে এসেছি?”
“আচ্ছা, স্যরি। হয়েছে? এবার বলো এত জরুরি তলব কেন?”
“উৎপল, মা আমার বিয়ে দেবার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।”
“বাসায় আমার কথা বলে দাও।”
“ভাইয়া জানলে সর্বনাশ। মেরে ফেলবে আমাকে।”
“বড় ভাইকে এত ভয় পাও কেন? উনি নিশ্চয়ই বাঘ ভাল্লুক না।”
উৎপল নিজের কথা চিন্তা করল, সে-ও তো বড় ভাই। কিন্তু ওর ছোটবোন ওকে যেভাবে শাসন করে, ভাগ্যিস রাত্রি ওর বড় বোন নয়, নইলে ওর জীবন তেজপাতা হয়ে যেত।
“তোমার মা’কে বলে দেখো।”
“মাকেও বলা সম্ভব না। কেঁদেকুটে বাড়ি মাথায় তুলবে। ভাইয়া জেনেই যাবে৷ তুমি তোমার বাসায় বলো। ওদের কনভিন্স করে আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাও, এছাড়া আর কোনো উপায় নেই।”
উৎপল শঙ্কিত বোধ করল, ওর বোন দুনিয়ার সকল মানুষের বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছে, অথচ বড় ভাইয়ের দিকে নজর নেই৷ না নিজের দিকে আছে। রাত্রি নিজে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে ধীরেসুস্থে সে মাকে বুঝিয়ে বলতে পারত ইপ্সিতার কথা।
যে নিজে বিয়ে করেনি, সে নাকি বিবাহ ডট কম নামের প্রতিষ্ঠান চালায়! এ কেমন অবিচার!
এটা একদিন রাত্রিকে বলতেই উত্তরে বলেছে, “তোমার কথায় যারা বিষ বিক্রি করে তাদের বিষ আগে খেয়ে দেখা উচিত?”
“বিষ আর বিয়ে এক হলো?” উৎপল উত্তর শুনে হতভম্ব গলায় প্রশ্নটা করেছিল বোনকে।
“সেটা আমি কীভাবে জানব? আমি বিয়ে করেছি নাকি বিষ খেয়ে দেখেছি?”
…………
(ক্রমশ)