বিবাহ বিভ্রাট ডটকম পর্ব-৩০+৩১

0
44

#বিবাহ_বিভ্রাট_ডটকম (পর্ব ৩০+৩১)
নুসরাত জাহান লিজা

উৎপলের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা, নইলে সব ঠিকঠাক করার চক্করে এমন কাণ্ড আবার ঘটায়! যদি শোভার সাথে সত্যি সত্যি এঙ্গেজমেন্ট করিয়ে দেয়, এই ভয়ে পরেরদিনই উৎপল জাহিদের কাছ থেকে শোভার মোবাইল নম্বর নিয়ে কল দিয়েছিল। বলেছিল দেখা করতে চায়, জরুরি কথা আছে।

সেই মতো একটা রেস্টুরেন্টে আসতে বলেছিল। শোভা কী বুঝেছে কে জানে, উৎপল গিয়ে দেখে চার-পাঁচজন কাজিনকে সাথে নিয়ে সেজেগুজে এসেছে। কেমন লাজুক চোখে ওকে দেখছিল। কাজিনরা টিকা টিপ্পনী কাটছিল এমনভাবে যেন ওদের বিয়েটা হচ্ছে।

উৎপল ইতস্তত করে বলল, “আপনার সাথে একা কথা বলার দরকার ছিল আসলে।”

পাশ থেকে অন্য একটা মেয়ে বলল, “বিয়ের পরে সারাজীবন পরে আছে একান্তে কথা বলার।”

“আপনারা ভুল বুঝছেন। বিষয়টা জরুরি, প্লিজ।”

শোভা ফিসফিসিয়ে তাদের কী যেন বলল, উৎপল শুনতে পায়নি। এরপর তারা উঠে গেলে শোভা বলল, “আমার ফ্যামিলি ভীষণ কনজারভেটিভ। আপনি বলুন না, কী বলবেন?”

উৎপলের খারাপ লাগল, ওর একটা ভুলের জন্য কতগুলো মানুষের জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হলো। কিন্তু বলতে তো হবেই। শোভা ভীষণ লাজুক, চুপচাপ ধরনের একটা মেয়ে। ওর কথা বলা, তাকানো দেখেই এটা বোঝা যায় যে ওকে পছন্দ করে মেয়েটা। শুধু ছবি দেখে আর ওর সম্পর্কে জেনেই এতটা!

ওদের এক মেয়ে বন্ধু বলেছিল, যে মেয়েরা আগে কোনো রিলেশনশিপে থাকেনি, বিয়ের পরে প্রেম করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা তেমন সম্পর্কের আভাস পেলেও পছন্দ মতো হলে খুব দ্রুত প্রেমে পড়ে যায়! কথাটা সত্যি কিনা উৎপল জানে না। ওর অপরাধবোধ বেড়ে গেল। কিন্তু না বললেও নয়,

“দেখুন, আসলে ভুলটা আমার। আমি কনফেস করতে এসেছি আজ।”

“ভুল?”

“আসলে আমি একজনকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

“কিন্তু আমি জানতাম আপনি কোনো সম্পর্কে নেই।” মৃদু লাজুক হাসি মিলিয়ে গিয়ে একটা দুঃখী দুঃখী মেঘ শোভাকে গ্রাস করে ফেলেছে ততক্ষণে।

“রাত্রির কোনো দোষ নেই। ও জানত না। মানে কিছু জটিলতার জন্য ওকে বলা হয়নি। জানি দুঃখ প্রকাশ করার মুখ আমার নেই। তবুও, বলতে চাই। আমি মন থেকে স্যরি বলছি। যেটুকু দেখলাম আপনাকে, তাতে এটুকু বুঝতে পেরেছি, আপনি খুব ভালো মেয়ে। কিন্তু আমি অপারগ।”

“আপনার সাথে আমার আরও আগে দেখা হলে ভালো হতো।” বিষণ্ণ হেসে বলল শোভা।

“আপনি খুব ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন। যার সবটা জুড়ে আপনি থাকবেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।”

“আপনার জন্যও।”

উৎপল উঠতে না উঠতেই শোভার গ্যাং চলে এলো। হয়তো শোভার প্রতিক্রিয়া দেখেই তারা কিছুটা আন্দাজ করে নিয়েছে।

নানা বাক্যবাণ ভেসে আসছে, পরিস্থিতি জটিল হবে সামনে এটুকু বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আর দাঁড়ায়নি। এটুকু বলতে পেরে এখন একটু শান্তি পাচ্ছে ভেতরে ভেতরে। আরও আগে রাত্রিকে বলতে পারলে এই নিরীহ মেয়েটার মন ভাঙত না।

এখন সে দাঁড়িয়ে আছে রাত্রির রুমের সামনে। সেদিনের পর থেকে প্রায় দশদিন পেরিয়ে গেছে৷ এরমধ্যে রাত্রি একদিনও ওর সাথে কথা বলেনি। মা-ও প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া কথা বলেন না। শুধু বাবাই যা কিছুটা স্বাভাবিক আছেন।

নক করার কিছুক্ষণ পরে রাত্রি দরজা খুলে দিল।

“তোর সাথে কথা ছিল রাত্রি। সময় হবে?”

“জরুরি কথা থাকলে হবে। এছাড়া সময় নেই।”

উৎপলের হাতে অনেকগুলো চকলেট, রাত্রির খুব প্রিয় এগুলো।

“অনেকদিন থেকে জমছিল। নে।”

ওর হাতের দিকে তাকিয়ে বলল রাত্রি, “এখন আমি বড় হয়ে গেছি ভাইয়া। লাগবে না।”

“তুই না বলতি, বড় হয়ে গেলেও ছেলেবেলার কিছু প্রিয় অভ্যাস ধরে রাখতে চাস?”

“তুমি তখন আমাকে ভালোবাসতে ভাইয়া। এখন বাসো না।”

“এটা তোর মনে হয়?”

“হুম।”

উৎপল ভেতরে এলো। বোনকে সে খুব ভালো করে চেনে, ভীষণ জেদি। একবার জেদ চেপে গেলে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা দুষ্কর। তবুও চেষ্টা করবে উৎপল। রাত্রি ওর অন্যতম দুর্বল জায়গা।

রাত্রির বিছানায় বসে উৎপল বলল, “তোর মনে আছে, ছেলেবেলায় আমরা একবার নানু বাড়িতে গিয়ে পাশের বাড়ির আম বাগান থেকে আম চুরি করতে গিয়েছিলাম, তুই মূল হোতা ছিলি। আমি গাছ থেকে পড়ে পা ভেঙে ফেললাম। যতদিন পা ঠিক হয়নি, ততদিনে তুই কোথাও খেলতে যাসনি। সারাক্ষণ আমার সাথে থেকেছিস। কতবার আমার জন্য ঢাল হয়ে তুই পাড়ায় মারামারি পর্যন্ত করেছিস! তুই শুধু আমার ছোট বোন না, আমার সবচাইতে প্রিয় বন্ধুও। এভাবে একটা কনক্লুশনে পৌঁছে গেলি?”

“তুমি আমার কথা ভাবো ভাইয়া? ভাবলা এভাবে চেনা-জানা নেই, এমন একটা মানুষের সাথে শুধু নিজে পাওয়ার আশায় বিয়ে করিয়া দিলে! ইমরোজ ভালো মানুষ। কিন্তু ধরো সে যদি এমন না হতো! যদি খুব খারাপ মানুষ হতো?”

“আমি নিজে খোঁজ নিয়েছি, তাছাড়া ইপ্সিতাকে চিনি, ওর ভাইয়ের কথা অনেক শুনেছি। কাজটা করার পেছনে আমার স্বার্থ ছিল, এটা আমি মানি। কিন্তু ইমরোজ খারাপ হলে আমি পিছিয়ে আসতাম।”

“বিয়েটা খেলা নয় ভাইয়া, জীবনটা ছেলেখেলার জায়গা নয়। ইমরোজ আর আমি পুরোপুরি মিস ম্যাচ। এক ছাদের নিচে সারাজীবন থাকার জন্য শুধু ভালো মানুষ হলেই তো হয় না ভাইয়া, আরও অনেক কিছু দরকার হয়। আমাদের মধ্যে সেসবের কিছুই নেই। আমি রাত হলে ও দিন, আমি তেল হলে ও জল। সারাজীবন কেটে যাবে লড়াই করতে করতে। এভাবে হয় না ভাইয়া।”

“তোর এটাই মনে হয়?”

“মনে হবে কেন? এটাই সত্যি। তুমি দেখেছ তো, এভাবে কথা বলতে পারত না। আমাকে বিয়ে করে ওর জীবন শেষ হয়ে গেছে।”

“তুই ভালো করে ভেবে দেখ রাত। তুই যেমন আমার উপরে রেগে আছিস, ইমরোজও তেমন ইপ্সির উপরে রেগে আছে। রাগের মাথায় কী বলেছে…”

“ঠিকই বলেছে। ভুল তো নয়। রেগে গেলেই সবকিছু বলা যায়?”

রাত্রির মনে হয়েছিল হয়তো ভুল বুঝতে পারবে ইমরোজ, কিন্তু বৃথা ভাবনা। নইলে এই দশদিনে একবারও কল দেয়নি লোকটা।

“তুমি যাও ভাইয়া। আর এরপর থেকে চকলেট আনবে না। আমার প্রতি যার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই, ভরসা নেই, তার দেয়া কিছু আমি নেব না। এখন মাথা ব্যথা করছে। ঘুমাব।”

উৎপলের হৃদয় এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে গেল। সে কাতর গলায় বলল, “না নিস, নাই। থাকল এখানে। আমি আনবই। একদিন হয়তো বুঝবি আমার কাজ ভুল হলেও তোর আর ইমরোজের বিয়ের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল। ভুল থেকেও তো ফুল ফোঁটে অনেক সময়। না খেলে ফেলে দিস নাহয়।”

উৎপল বেরিয়ে গেল, যেতে যেতে মনে হলো, সে সত্যিই ভীষণ বোকা।

***
রাত্রির গত দশ দিন কেটেছে ভীষণ অস্থিরতার মধ্যে। যত কাজ আঁকড়ে ধরতে চেয়েছে, ততই যেন ইমরোজের সেদিনের কথাটা কানে বেজেছে বারবার। যেন ওকে কেউ শাস্তি দেবার জন্য ওর অপ্রিয় কথাগুলো জোর করে হাত পা বেঁধে কানের কাছে রেকর্ড করে বারবার বাজাচ্ছে। কী বিশ্রী অনুভূতি! নিজেকে এত ছোট মনে হয়!

একজন অসুস্থ মানুষের সেবা করায় তার মধ্যে বিন্দু পরিমান কৃতজ্ঞতা বোধকে সে ভালো লাগা ভেবে নিয়েছিল! সে-ও সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিল। এই লজ্জা সে কোথায় রাখবে!

কক্সবাজারের বন্ধ হোটেল রুমে জ্বর ক্লিষ্ট অসহায় ইমরোজের নির্মল সুন্দর মুখটাও ওর চোখে ভাসে চোখ বন্ধ করলে। যে ওকে এতটা অপছন্দ করে, তাকে কেন সে মন থেকে বের করতে পারছে না, সহস্রবার চেষ্টা করেও!

***
ইমরোজ মা’য়ের সাথে কথা বলেও সাথে সাথে যেতে পারেনি, বলা ভালো সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারেনি। গত দুইদিন ধরে সে বিবাহ ডটকমের সামনে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসছে। ভেতরে যেতে পারেনি।

গতবার ‘স্যরি’ বলতে গিয়ে যে অপমানিত হতে হয়েছে, তা ভুলে যায়নি। তবে সেই বারের চাইতে এবারের অপরাধ অনেক বড়। দেখা না করতে পারলে, অপরাধবোধের দংশনে সে শেষ হয়ে যাবে!

আজ তাই ভেতরে এলো। মনে পড়ল তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে হলে এপয়েনমেন্ট লাগে। কত নম্বর সিরিয়াল পড়ে কে জানে! তাছাড়া আগে থেকে বলে দিলে যদি দেখা না করে!

রিসিপশনের মেয়েটি ওকে দেখেই উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “আরে ভাইয়া৷ আপনি?”

“রাত্রি আছে?”

“জ্বি ভাইয়া।”

“কত পর্যন্ত সিরিয়াল লেখা আছে আপনার এখানে?”

“ছাব্বিশ।”

“আপনি একটা কাজ করে দেবেন? আসলে আপনাদের ম্যামকে আমি একটা সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম। বেশি সময় নেব না। দশ মিনিটের জন্য আমাকে ভেতরে ঢুকাতে পারবেন?”

“কিন্তু ম্যাম যদি রেগে যান?”

“সেই দায়িত্ব আমার। হেল্প করুন প্লিজ!”
মেয়েটা রাজি হয়ে গেল। রাত্রির কেবিনের বাইরে বসে থাকে ছেলেটাকে ডেকে কথা বলে ওকে বলল,

“ভেতরে যেই ক্লায়েন্ট আছেন, তিনি বেরুলেই আপনাকে ঢুকিয়ে দেব।”

“থ্যাংক ইউ।”

মনে মনে অসংখ্য কথা সাজিয়ে এনেছে ইমরোজ। দশ মিনিট তার জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও কথাগুলো বলতেই হবে।

ভেতরে ঢুকার আগে হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ এমন প্রকট হচ্ছিল, মনে হয় এই গাদাগাদি ঘরে উপস্থিত সকল মানুষ সেই শব্দ শুনতে পাচ্ছে!

কতদিন পরে সে রাত্রিকে দেখল, মেয়েটা ওর দিকে তাকায়নি, একটা ফাইল দেখছিল, চোখ না তুলেই বলল, “মিনারুল আলম?”

“না।”

চেনা স্বরে ঝট করে চোখ তুলল রাত্রি। বিস্ময়ের একটা প্রবল ধাক্কা যে খেয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের অনুভূতি সামলে নেবার ক্ষমতা এই মেয়ের প্রবল।

মুহূর্তেই চোখেমুখে স্বভাবসুলভ কাঠিন্য ফুটিয়ে, গলাতেও সেই কাঠিন্যের একাংশ স্থানান্তর করে জিজ্ঞেস করল,

“আপনি? কী চাই?”

“আপাতত কিছুটা সময়। বসতে পারি?”

“আমি ব্যস্ত।”

“জানি। আমার কথাগুলোও জরুরি।”

“আপনি তো ক্লায়েন্ট হয়ে আসেননি। অতিথি হয়ে এসেছেন। অতিথিকে অসম্মান তো করতে পারি না। বসুন।”

ইমরোজ আয়েশ করে বসল। দশ দিন সময় নিয়ে সাজানো কথার পাহাড় যেন সহসাই আকস্মিক ভূমিকম্পে ধ্বসে পড়েছে। সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন কথার টুকরো মনে আসছে। কিন্তু টুকরো গুলো জুড়ে নিতে পারছে না।

“কী বলতে চান, দ্রুত বলুন।”

“আপনি আসার দিন আমি একটা বাজি হেরেছিলাম। আপনার একটা উইশ পূরণের শর্ত ছিল। ঋণ রাখতে ভালো লাগে না, ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ঘুম আসে না৷ ভাবলাম, শোধবোধ করে আসি। বলবেন, আমাকে কী করতে হবে?”

রাত্রির দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো, কাঠিন্যের মাত্রা বেড়েছে, এই মেয়ের এমন কেন! এভাবে তাকালে ভেতর পর্যন্ত কেঁপে উঠে ইমরোজের সে কী বোঝে না!

অবশ্য যা বলতে এসেছিল, তা বলতে না পারায় নিজের উপরেই ক্ষুব্ধ হলো সে।

“আপনার ঘুম নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই।”

“কিন্তু ঘুম না হলে আমার ম্যাথা ব্যথা করে। আমার মাইগ্রেন আছে। চশমা পরি তো।”

“ফাজলামো করেন?”

“আমার রোগ আপনার কাছে ফাজলামো মনে হলো?”

“রোগের জন্য ডাক্তার আছে। তার চেম্বারে যান। ঘটকের চেম্বারে কী কাজ? বিয়ে করবেন আরেকটা?”

ইমরোজ বলতে চাইল, “আপনি আমার পার্সোনাল ডাক্তার। আমার জ্বরের সময় আপনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই আমার ঘুম চলে আসত।”

কিন্তু বলতে পারল না কথাটা, শুধু বলল, “নাউজুবিল্লাহ। আপনি থাকতে ওসব ইচ্ছে নেই আমার। কিন্তু রোগের কারণটা তো আপনি। কারণ দূর করে দিলেই ঘুম হবে।”

রাত্রি বিরক্ত ভঙ্গিতে কাগজে চোখ বুলাতে শুরু করল, ইমরোজ অধৈর্য হচ্ছে।

“আমি সত্যিই ঋণ রাখতে চাই না। একটা উইশ বলুন।”

“যন্ত্রণা তো! আপনি কী আলাদিনের চেরাগের দৈত্য জিনি? আমি প্রদীপে ঘষা দিইনি। কানের কাছে উইশ পূরণ করার রূপকথা ঘ্যানঘ্যান করবেন না তো!”

“আমার একটা জিনি থাকলে ভালো হতো।”

“কেন?”

“তিনটা ইচ্ছা পূরণ করত।”
কথাটা বলে মনে মনে ইমরোজ বলল, “তার একটা ইচ্ছা হতো, আপনাকে মানিয়ে নিয়ে আসা। তাতে কাজ সহজ হতো।”

“আমাদের এখন ফেইরিটেলস শোনার বয়স নেই।”

“আপনার কিছু ডকুমেন্টস আমার রুমে ছিল। নিন।”

রাত্রি সেগুলো নিয়ে বলল, “দিয়ে যাবার জন্য থ্যাংকস। আসুন এবার।”

“আপনার সবকিছু আমার ঘরে রয়ে গেছে।”

“সেগুলো রেখে এসে আপনার শান্তি বিঘ্নিত করার জন্য দুঃখিত। নিয়ে আসব ওগুলো।”

“না, না, আনতে হবে না। থাকুক ওগুলো।”

ইমরোজ বলতে চেয়েছিল, “ওই জিনিসগুলো আপনার কথা মনে করায়। মনে হয় আপনি একটু পরেই চলে আসবেন।”

কী যে হয়েছে ওর! যা বলতে চায়, কিছুই বলতে পারে না। এমন কেন হচ্ছে! এত নার্ভাস সে আগে কখনো অনুভব করেনি। ফোকাস ইমরোজ, ফোকাস!

“আমার জিনিস আপনার ওখানে কেন থাকবে?”

“বা রে, ওটা তো আপনারও ঘর।” এই প্রথম একটা কাজের কথা বলল৷

“না। আমার একটাই ঘর। আমি আপনার জীবন নষ্টের কারণ। আমার কাছ থেকে যেমন আপনাকে মুক্তি দিচ্ছি, আমার জিনিসপত্র থেকেও মুক্তি দিয়ে দেব।”

“কিন্তু আমি তো চাইছি না।”

“কী?”

“মুক্তি। ফিরে এসো প্লিজ রাত্রি। সেদিন তোমাকে ওভাবে বলতে চাইনি। বিশ্বাস করো।”

“আমি চা দিতে বলি। আমার সত্যিই অনেক কাজ আছে।”

ইমরোজ কষ্ট পেল, সে প্রথমবার রাত্রিকে তুমি বলেছে, অথচ এটা নিয়ে কোনো হেলদোল নেই মেয়ের। কাজ আর কাজ। কাজকে বিয়ে করলেই হতো!

“ফিরে চলো রাত্রি, প্লিজ।”

“ফিরে যাওয়া এত সহজ মনে হয়? আপনাকে যদি আমি ওই কথাগুলোই বলতাম? তাও যখন আমাদের মধ্যে…”

এটুকু বলে থেমে গেল রাত্রি। ইমরোজ হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সত্যিই, যখন ঠোকাঠুকি চলছিল, তখন তো কতই অফেন্সিভ কথা বলেছে পরস্পরকে। কই তখন তো রাত্রি রাগ করেনি! তবে কী রাত্রিও ওর জন্য ফিল করতে শুরু করছিল! আর সে কি-না নিজের হাতে সবটা ভণ্ডুল করে দিল!

এই মেয়েকে মানাতে ওকে আরও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
………….
(ক্রমশ)