বিয়ে পর্ব-২৮

0
691

#বিয়ে
#লেখনীতে -ইসরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-২৮

অদ্রি ওর হাতে ঔষধ আর পানির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,
— আগে ঔষধ খান। পরে এসব বাজে কথার
আলোচনা হবে।
ধ্রুব নাছোড়বান্দা,
— উহু, বাজে কথা নয়। তুমি বসো…
অদ্রি এবার ধমকে ওঠলো,
— আন্টি ঠিকই বলেছিলো। কিন্তু আপনি গ্রামে এসেই
যে পাগল হয়ে যাবেন ভাবিনি…
ধ্রুব ম্লান গলায় বলল,
— সত্যি বলছি তোমার মতো নির্দয় মানুষ আমি আগে কখনো দেখিনি। ভালোবাসি বলেই সব সহ্য করে নিচ্ছি, নয়তো…
অদ্রি মুখ বাঁকা করলো,
— হুহ, আমি জোর করিনি আপনাকে। ইচ্ছে হলে
মারুন, কাটুন।
ধ্রুব’র কন্ঠস্বরে নেমে এলো কঠোরতা। তীক্ষ্ণ গলায় বলল,
— কোনোদিন যদি আমার ভালোবাসা মিথ্যে প্রমাণিত হয়, তখন তোমার রাগ, জেদ কিছুই আমি গ্রাহ্য করবো না অদ্রি।
অদ্রি অকপটে বলল,
— আপনার ভালোবাসা এত ঠুনকো যে মিথ্যে হয়ে যাবে? এটা নিয়ে আবার আপনি গর্ব করেন?
— ভালোবাসা মিথ্যে নয় অদ্রি, শুধুমাত্র যেদিন বুঝতে পারবো তুমি আসলেই আমাকে ভালোবাসো না সেদিন সত্যিই আমি তোমাকে নিজের মতো ছেড়ে দেবো।
— এখনই ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?
ধ্রুব নির্বিকার কন্ঠে বলল,
— তুমি কনফিউজড। আমার জন্য কষ্ট পাও, কিন্তু মুখফুটে বলো না। বাট আই ডোন্ট কেয়ার…
অদ্রি নতমুখে বলল,
— আপনার ধারণা সত্যি তো নাও হতে পারে।
ধ্রুব তেজদীপ্ত কন্ঠে বলল,
— ধারণা নয়, বিশ্বাস। তুমি মুখে যা-ই বলো না কেন সম্পর্ক ভাঙা তোমার ধ্যানধারণার বাইরে। এটুকু অন্তত চিনি তোমায়।
— বেশি কথা বলছেন! ঔষধটা খেয়ে নিন।
ধ্রুব চুপচাপ ওর কথা মানলো, দ্বিরুক্তি করলো না একদমই। কিন্তু ওর বলা কথাগুলো অদ্রির মনে ধাক্কা দিলো। এইযে, অদ্রি সবার থেকে এত ভালোবাসা, সম্মান পাচ্ছে এগুলো ছেড়ে দূরে তো ও যেতে চায় না। ও কি ধ্রুববে বলবে সে কথা? ওর ভাবনার ঘোর কাটলো ধ্রুব’র আর্তনাদে। অদ্রি হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে?
ধ্রুব দু’হাতে কপালের একপাশ আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো। ম্লানমুখে বলল,
— কিছু না।
অদ্রি ঘাবড়ানো গলায় বলল,
— বলার ইচ্ছে না হলে বলবেন না। কিন্তু ভরসা করতেই পারেন। অসুখে পড়লে লুকিয়ে রাখতে হয় না। আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দেবো।
ধ্রুব ওর অস্থিরতা টের পেলো। জানালার কপাট গলে
ঘরে আসছে ঠান্ডা বাতাস। অন্ধকার ঘরে
ঠিকঠাকমতো কিছুই দেখা যায় না। ধ্রুব কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বলে ওঠে,
— মাথা যন্ত্রণা। আমার ঘুমানো প্রয়োজন। তুমি কিন্তু ভালো ব্ল্যাকমেইল করতে জানো দেখছি!
অদ্রি নমনীয় কন্ঠে বলল,
— তা অবশ্য জানি।
ধ্রুব ভারী কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
— আর কি কি জানো?
— অনেককিছু।
— রান্নাবান্না, পড়াশোনা, ঘর গোছানো, ফ্যামিলিকে ভালোবাসা, সেবা করা, এসব গুণই জানো…
অদ্রি বুঝতে পারলো ওর পরের কথাটি কি হতে চলেছে। কিন্তু ও ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
— আপনি বেশ বাচালের মতো আচরণ করছেন। চলুন তো এবার মাথায় পানি দিয়ে আসুন। তাহলে ভালো লাগবে। নাকি আমি ঘরেই নিয়ে আসবো?
ধ্রুব দুর্বল, ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলল,
— প্রয়োজন নেই। ঔষধ খেয়েছি একটু পরই ঠিক হয়ে যাবো।
অদ্রি সন্দেহী গলায় বলল,
— শিওর?
ধ্রুব দৃঢ় কন্ঠে বলে,
— অভিয়েসলি।
— ওকে। কিন্তু আপনি তো চেঞ্জ করেন নি। আমি
কাপড় এনে দিচ্ছি। চেঞ্জ করে নিন।
বলে অদ্রি ব্যস্ত ভঙ্গিতে ওঠে দাঁড়ায়। ধ্রুব ওকে থামিয়ে দিয়ে খুলে রাখা শার্টটাই পরে নিলো। এরপর বিছানায় শুয়ে চাদর টেনে নিলো গায়ে। বাতাসে হালকা ঠান্ডা লাগছে। ও মৃদু কন্ঠে বলল,
— চেঞ্জ করতে ইচ্ছে করছে না। থাকুক…

অদ্রি আর কথা বাড়ায় না। ধ্রুবও একটা সময় ঘুমের গভীরে চলে যায়। বাইরে চঞ্চলা বাতাস, রুপোলি চাঁদ আর এক আকাশ ভরা তারার দল পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করছিলো। দূরে কোথাও শোনা যায় শেয়ালের করুণ কান্না। নিঃস্তব্ধতাকে খানখান করে সেই কান্নার শব্দ পৌঁছে যায় অদ্রির কানেও!

কারেন্ট আসার নামগন্ধ নেই। মোম প্রায় অনেকটাই গলে পড়ছে। অদ্রি আরেকটা জ্বালিয়ে নেয়। সোনালি আলোয় ঘরের একপাশ জ্বলজ্বল করছে, অন্যপাশ ঘন কালো আঁধারে ঢেকে। ধ্রুব ঘুমিয়ে পড়েছে সেই কখন। কিন্তু অদ্রির চোখে ঘুম নেই। হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে ধ্রুব’র শিয়রে বসে আছে। একটু পরপর তাপমাত্রা চেক করতে থাকে। মাঝরাতের দিকে তাপমাত্রা একটু বাড়ায় জলপট্টি দিয়ে দেয় ধ্রুবকে। ওর ফর্সা মুখখানা লাল হয়ে আছে। অদ্রি এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয়। ধ্রুব অস্ফুটে কিছু একটা বলে ওঠে। অদ্রি কানপেতে শোনার চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুই ওর গোচর হয় না। ওর মন কু ডাকতে থাকে। অন্ধকার ঘরে ভয়ে কেমন মিইয়ে যায়। অদ্রির বুক কেঁপে ওঠে। অবশ হতে চায় সারা শরীর। হঠাৎই কেমন এক মৃত্যুভয় ঘিরে ধরে ওকে। মা মারা যাওয়ার সময় অদ্রি এভাবেই তাঁর মাথার কাছে বসে ছিলো। সেই মুহূর্তটা কখনো ভুলতে পারবে না। অদ্রি চায় না এই মুহূর্তের আবার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। ওর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। একফোঁটা জল টুপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। সময় যেন দীর্ঘ হয়ে আছে, কাটতেই চায় না। একবুক ভয় নিয়ে ধীরেধীরে বালিশে মাথা রাখে। অদ্রি ধ্রুবকে হারাতে চায় না।

______________

বাড়িতে বিয়ের আমেজ। মানুষজনের কোলাহলে উজ্জীবিত আনাচেকানাচ। সকাল আটটা। ধ্রুব’র শরীরে এখন তেমন জ্বর নেই। কিন্তু ও আপাতত নিজের লাগেজের সামনে হতবাক হয়ে বসে রয়েছে। সামনে অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অদ্রি। ধ্রুব বেদনার্ত কন্ঠে বলল,
— আমি কি এখন শুধু ট্রাউজার পরে বসে থাকবো?
তুমি একটু দেখেশুনে গোছাবে না?
অদ্রি ধীর গলায় বলল,
— আমি সামনে যা পেয়েছি তা-ই নিয়েছি। খেয়াল করিনি জামার ব্যাপারটা। স্যরি।
ধ্রুব নির্নিমেষ চেয়ে থাকে অদ্রির মুখপানে। লাগেজে ওর ট্রাউজার আর অফিসে পরার দুটো শার্ট, আর একটাই টি-শার্ট ছাড়া আরকিছু নেই। সেজন্য অদ্রি বারবার নিজেকেই দোষারোপ করছে। হতাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সেই কখন থেকে। ধ্রুব’র ভীষণ মায়া হলো, মেয়েটা অন্তত চেষ্টা তো করেছে! ও তাতেই খুশি। এরপর মৃদু গলায় বলে,
— ইট’স ওকে। আমি যতীনকে বলে দিচ্ছি ও
সব পাঠিয়ে দেবে।
অদ্রি করুণ স্বরে আবারও বলে,
— আমি সত্যিই স্যরি।
ধ্রুব’রর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো। জোরালো কন্ঠে বলল,
— আর একবারও ক্ষমা চাইবে না। তুমি নিজে যা এনেছো তা-ই পরবো, দরকার হলে বিয়েতেও আমি অফিসের শার্টই পরবো। গট ইট?
বলে ওখান থেকেই জামাকাপড় নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অদ্রি বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ও একটু দেখেশুনে নিলেই তো পারতো। নিজের প্রতি রাগে ওর হাত-পা নিশপিশ করতে থাকে।

সকালের নাস্তা শেষ করে সকল কাজিনরা মিলে বাড়ির ওঠোনে বসে গল্প করছিলো। মিহির, ঐশী, নাফিরা বেশ আসর জমাতে জানে। ফ্লোরা অদ্রিকে নিয়ে সেই আসরে নিজেও গল্প জমায়। কিন্তু এসবে অদ্রির একবিন্দুও মন নেই। একটু পরপর দৃষ্টি যাচ্ছে বাঁশঝাড়ের নিচে বসে থাকা ধ্রুব’র দিকে। বড় মামার সাথে বসে বিয়ের আয়োজন নিয়ে কথা হচ্ছিলো ধ্রুব’র। শহরে পরিবারে বিয়ে হচ্ছে আদিবার, গ্রামে বেড়ে ওঠা মেয়েটি সেই জীবনের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে কি-না তা নিয়ে বেশ চিন্তিত আঁইয়ুব আলী। ভাতিজি তার পরম আদরের। এত ভদ্র মেয়ে এ তল্লাটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ধর্মীয় রীতিনীতি, আচার যথাযথ নিষ্ঠার সাথে পালন করে বলেই আদিবা তার চোখের মণি। তাই বিয়ের আয়োজনে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না। এসব নিয়েই আলোচনা চলছিলো ধ্রুব’র সাথে। হঠাৎ রান্নার লোকদের ডাক পড়ায় আঁইয়ুব আলী ওঠে যান। ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘাড় ফিরাতেই অদ্রিকে দেখতে পায়। ওর কাল রাতের কথোপকথন মনে পড়ে। অজান্তেই ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অদ্রির দিকে, ওর মনে হয় অদ্রিও ওকেই দেখছে, ভীষণ উদগ্রীব হয়ে।

এরপরের সময়টা পুরোপুরি স্বপ্নের মতো ছিলো ধ্রুব’র কাছে৷ অদ্রি নিয়ম করে ওর ঔষধ দিচ্ছিলো, গায়ের তাপমাত্রা চেক করছিলো। ও কি খেতে চায়, কোনটা অপছন্দ করছে সে সমস্ত কিছু অদ্রি নির্ভুলভাবে করে গেছে৷ সারাটাদিন অদ্রি নিজের চোখের আড়াল করতে একদম চায় নি৷ বিকেলে কাজিনের দলবল এসে জড়ো হলো ওদের থাকার ঘরের দরজায়৷ নতুন কাপলের থেকে তারা বখশিশ দাবি করছে। হৈচে বাঁধিয়ে পুরো হুলস্থুল অবস্থা, রেগে ধ্রুব’র মুখ লাল। চেঁচিয়ে অস্থির। অদ্রি বুঝিয়ে সুঝিয়ে সবাইকে বিদায় করতে চাইলে সবাই টাকা পেলেই চলে যাবে এমন শর্ত দিলো। অদ্রি একটুখানিও দেরি না করে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রাখা ধ্রুব’র ওয়ালেট থেকে হাজার টাকার কিছু নোট বের করতে করতে শীর্ণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কত দেব?
ধ্রুব ক্রুদ্ধ কন্ঠে দিলো,
— পুরোটাই দিয়ে দাও। আই ডোন্ট কেয়ার। তবুও যদি এসব ফাজলামি বন্ধ করে। ওরা ভাবছে বিয়ে করেছি বলে আমাকে বিপদে ফেলবে, আমি কাউকে ভয় পাই নাকি?
অদ্রি ঠোঁট ভিজিয়ে ক্ষীণ কন্ঠে বলে,
— মোটেও না, আপনি তো বীরপুরুষ।
ধ্রুব রাগী চোখে তাকালো,
— মজা করছো তাইনা?
অদ্রি মাথা নাড়ালো,
— একদম না। যাইহোক, টাকাগুলো আপনি দিয়ে আসুন। আমি আনইজি ফিল করবো।
ধ্রুব টাকাগুলো মিহিরের হাতে তুলে দিয়ে ওদেরকে কিছুক্ষণ ঝাড়লো। তার এই কাজিনগুলো এলো বদ বুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘুরে যেগুলো ধ্রুব কস্মিনকালেও চিন্তা করতে পারে না। ও রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে ফিরে এলো। অদ্রি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধ্রুব ওকে ওভাবে দেখে হকচকিয়ে গেলো। বুঝতে না পেরে ভ্রু উঁচিয়ে
জিজ্ঞেস করলো,
— কী?
অদ্রি আদেশের সুরে বলল,
— বসুন।
ধ্রুব বোকার মতো বসলো। অদ্রির হাতে থার্মোমিটারটা দেখে ও হতাশ হয়ে বলল,
— দশ মিনিট পরপর চেক করার প্রয়োজন নেই। ঠিক হয়ে যাবে…
অদ্রি দু’চোখের পল্লবজোড়া নাড়ালো। মেডিসিন আর পানি ধ্রুব হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো,
— আপনি জানেন না, আমি এই অসুস্থতা ঠিক
কতোটা ভয় পাই…

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। কাল আদিবার হলুদের অনুষ্ঠান। তবে তা বড় ভাবে পালন করা হবে না। আদিবার ইচ্ছেয় সবকিছু ঘরোয়াভাবে করা হবে। সেজন্য সবাই নিজেদের সাজগোজ নিয়ে পরিকল্পনা করছিলো, অদ্রিও ছিলো তাদের সাথে। ধ্রুব পুকুরপাড়ে তার মেজো মামার সাথে বসে ছিলো। পকেটে থাকা ওর ফোনটা ঠিক সেই মুহূর্তেই বেজে ওঠলো। ধ্রুব ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছে। ওর অদ্ভুত লাগে একটু। ফোন রিসিভ করে “হ্যালো” বলতেই ওপাশ থেকে একটি ছেলে কন্ঠের আওয়াজ শোনা যায়। ধ্রুব জিজ্ঞেস করে,
— কাকে চাই?
ওপাশ থেকে ছেলেকন্ঠটি বলে,
— মিস্টার ধ্রুবকে।
— বলুন…
ওপাশ থেকে কয়েক সেকেন্ড বিরতি নেয়। এরপর দৃঢ় স্বরে বলে,
— আমি অদ্রির ব্যাপারে আপনার সাথে কিছু বলতে চাই। আসলে বুঝতে পারছিনা আপনি ব্যাপারটা কিভাবে নেবেন….
ধ্রুব থমকে গেলো। এই অচেনা লোক অদ্রির ব্যাপারে কি বলতে চায়? তাও এত রাতে?

[আগামীকাল অবশ্যই দেবো ইনশাআল্লাহ। আসলে আমার পরীক্ষা চলে এসেছে। ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]

চলবে….