#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_২৪
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৬৩.
একটা সপ্তাহ্ ভূমিকার নরক যন্ত্রণার মতো কেটেছে। সে যতবার রাসেলকে চোখের সামনে দেখেছে, ততবার তার শ্বাস বন্ধ হয়ে এসেছে। বুকের কোথায় যেন একটা কঠিন ব্যথা অনুভব করত সে প্রতিটা বার। কষ্ট হয়, খুব কষ্ট হয় মানতে। এই অবুঝ মন কিছুতেই রাসেলের পরিবর্তন মেনে নিতে পারছে না। তবে ভূমি এটাও জানে, তার মানা না মানায় কিছুই যায় আসে না। তার মনে পড়ে যায় প্রথমদিকের কথা। এত এত টেক কেয়ার, এতসব স্বপ্ন সব মিথ্যে ছিল? সবটা অভিনয় ছিল? এর মাঝে কি একটুও ভালোবাসা ছিল না? হয়তো না! ভালোবাসা থাকলে রাসেল নিশ্চয়ই পারত না এভাবে তাকে ধোঁকা দিতে। ধোঁকা! হ্যাঁ, রাসেল তো তাকে ধোঁকাই দিয়েছে। তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, তার ভালোবাসার মানুষ। তার স্বামী! এই মানুষটার থেকে পাওয়া কষ্টও কি কোনো নারী সহ্য করতে পারে? পরিবর্তনই যদি হয়ে যাবে, তবে জীবনে আসার প্রয়োজন কী ছিল? আদৌ ছিল কোনো প্রয়োজন? ভেতর থেকে কান্নারা দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। মানসিক ভারসাম্যও যেন দিনদিন তার হারিয়ে যাচ্ছে। সে যে কী এক বিভীষিকাময় যন্ত্রণা, তা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারব না।
‘ভূমি, ভূমি? একটু এদিকে শুনে যাও তো।’ ড্রয়িংরুম থেকে রাসেলের ডাক শুনে সে স্থির হয়। কান্না চাপানোর চেষ্টা করে। তাকে দুর্বল হলে চলবে না। অন্তত রাসেলের সামনে তো নয়-ই। সে দরজা খুলে ড্রয়িংরুমে আসে। কপালে হাত রেখে সোফায় বসে ছিল রাসেল। ভূমিকার উপস্থিতি টের পেয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। বলল,’এই নাও তোমার পাসপোর্ট।’
ভূমিকা রাসেলের হাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এত সহজেই সে সবটা করে ফেলল? এত দ্রুত? সে শ্লেষের সঙ্গে বলল,’আমি এত বেশি হয়ে গেছি না?’
রাসেল বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বলল,’মানে?’
‘মাত্র সাতদিনেই আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেছ। কতটা চক্ষুশূলই না আমি ছিলাম!’
‘প্রথমত তুমি নিজেই বলেছিলে যাতে তোমার যাওয়ার ব্যবস্থাটা করে দেই। যাবেই যখন, দেরি করে লাভ কী? দ্বিতীয়ত দু’দিন পরপর; স্যরি প্রতিদিন এভাবে আজাইরা প্যারা আমি নিতে পারব না।’
ভূমি পারছে না আর নিজেকে সংবরণ করে রাখতে। দু’চোখ ফেটে অশ্রু নির্গত হতে চাচ্ছে। নিচের ঠোঁট দন্ত দ্বারা চেপে সে কান্না আটকানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ততক্ষণে চক্ষুদ্বয় পানিতে টলমল। সে এদিক-সেদিক তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করে। এরপর হাসার চেষ্টা করে মৃদু। বলে,’দেবো না আর তোমাকে কোনো আজাইরা প্যারা। তুমি মুক্ত।’
সে রাসেলের হাত থেকে পাসপোর্ট নিয়ে ঘরে চলে যায়। শব্দ করে দরজা লাগিয়ে বিছানার ওপর বসে। মুখের ওপর হাত চেপে ধরে বোবা চিৎকার এবং আর্তনাদের সঙ্গে কাঁদে। তার মনে হচ্ছে কেউ তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মনের ওপর পাহাড়সম কষ্ট চাপিয়ে দিয়েছে। সে এই কষ্টের ভার সহ্য করতে পারছে না। মুখের ওপর বালিশ রেখে যত জোরে সম্ভব চিৎকার করে সে কাঁদছে।
‘আল্লাহ্ সাহায্য করো আমায় তুমি সাহায্য করো। এ কোন কঠিন পরীক্ষায় তুমি আমায় ফেললে বলো? কষ্ট যখন দেবেই তখন, কষ্ট সহ্য করার মতো শক্তিও তুমি আমায় দাও। আল্লাহ্ গো! তুমি ছাড়া যে এখন আর আমার কেউ নেই সাহায্য করার জন্য। একটু প্রশান্তি তুমি আমার অন্তরে দিয়ে দাও আল্লাহ্। আমার সহায় হও তুমি।’
ভূমির চাপা আর্তনাদ, চিৎকারের সহিত বোবা কান্না বালিশ, চারদেয়ালের ঘরের মধ্যেই আটকে থাকে। রাসেলের কান অব্দি যেতে পারে না। ভূমি নিজেও এটা চায় না। তবে একজন তো শুনেছে নিশ্চয়ই? আল্লাহ্! সে হবে তো ভূমির প্রতি সহায়?
ভূমির অসহায়ত্ব বোধ হয় প্রকৃতিও বুঝতে পেরেছে। তাই ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশটি হঠাৎ করেই মেঘের চাদর শরীরে জড়িয়ে নিল। মৃদু রোদ্দুরটুকুও আর আকাশের কোণে অবশিষ্ট নেই। হঠাৎ করেই সাদা মেঘের ভেলা একটু একটু করে ঘন কালো মেঘে পরিণত হয়ে গেল। আকাশে এখন শুধু ঘনঘটা মেঘের ছড়াছড়ি। অবাক করে দিয়ে শীতকে ছাপিয়ে বৃষ্টির আগমন শুরু হয়। ঝড়ো হাওয়ার তরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আকাশ থেকে ধেয়ে আসা বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা আমেরিকার শহরকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। প্রতিটি গাছ, পিছঢালা পথ, বাড়িঘর যেন নিমিশেই বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেল। অবাক লাগে। প্রকৃতি ভূমির কষ্টটা বুঝলেও, যেই মানুষটার বোঝার কথা ছিল সে বোঝেনি। বিছানা ছেড়ে উঠে সে জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়ায়। খুলে দেয় জানালার থাই গ্লাস। হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা এসে পড়ে ভূমির মুখমণ্ডলে। সে দু’চোখ বন্ধ করে নেয়। সঙ্গে সঙ্গে দু’চোখের কোণা বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। জানালা দিয়ে হাত বাইরে নিয়ে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে বলে,’আল্লাহ্, যার থেকে আমাকে আলাদা করে নিচ্ছ, তাকে ছাড়া ভালো থাকতেও আমায় শিখিয়ে দিও।’
এভাবে সে কতক্ষণ জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল তা জানা নেই। চিন্তা-ভাবনা, মস্তিষ্ক এখন সব অস্থির। হৃদপিণ্ডের গতি ক্রমশ যেন বেড়েই চলেছে। সে যে কী এক অশান্তি! দু’হাতে চোখের পানি মুছে নিয়ে আলমারি থেকে কাপড়-চোপড় বের করে। রাসেলের কিনে দেওয়া কোনো কাপড়-চোপড় নেয়নি। যেগুলো বাবার বাড়ি থেকে আনা হয়েছিল আর চাচা দিয়েছিল শুধু সেগুলোই লাগেজে তুলে নিল। রাতে ফ্লাইট তাই এই সুযোগে নিজেও একটু পরিপাটি হয়ে নেয়। বৃষ্টি তখন ঝিরিঝিরি পড়ছিল। রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে যায়। রাসেল ছিল দ্বিতীয় রুমে। চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে সে রাসেলের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,’চা খাবে?’
রাসেল থতমত খেয়ে তাকিয়ে থাকে। সে যতই ভূমিকে দেখছে ততই বেশি অবাক হচ্ছে। এটা কি তার সেই পরিচিত ভূমি? কই দেখে তো মনে হচ্ছে না। রাসেলকে ছেড়ে যাবে এর পরেও ভূমির মুখ এতটা হাস্যোজ্জ্বল? এও সম্ভব? কিন্তু হায়! এই তুখোড় অভিনেতা নিজে ভালোবাসার অভিনয় করলেও, ভূমির ভালো থাকার অভিনয়টা টের পাচ্ছে না। রাসেলকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভূমি আবার জিজ্ঞেস করল,’ওয়েদার অনেক বেশি ঠাণ্ডা। তাই চা বানাচ্ছিলাম। তুমি চা খাবে?’
রাসেল কী উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছে না। যেখানে সে ভূমিকে একেবারেই ছেড়ে দিচ্ছে, তার কাছে আবার চা খাওয়ার আবদার করাটা খুব বেশি বেহায়াপনা মনে হবে। তবে বৃষ্টি হলে রাসেলের চা চাই-ই। ভূমি এটা বেশ ভালো করেই জানে। তাই সে নিজের জন্য নয় বরং রাসেলের জন্যই চা বানাতে কিচেনে গিয়েছে। রাসেলকে দ্বিধাজড়িত অবস্থায় দেখে সে আর দাঁড়াল না। ফের কিচেনে চলে গেল। চা বানিয়ে এনে রাসেলের পাশে রেখে বলল,’নিরবতাকেই সম্মতির লক্ষণ ধরে নিয়েছি। তাই চা নিয়ে এলাম।’
‘খাব না।’ রাসেলের চটপটে উত্তরে ভূমি আহত হয়। ভেতরটায় কষ্টে তেতো হয়ে ওঠে। তবুও সে নিভল না। সুন্দর করে হেসে বলল,’ইচ্ছে তোমার। এরপর কখনো মৃত্যুর সময় এলেও যদি ইচ্ছে হয় ভূমির হাতে একটু পানি খাবে তবে বলে দিচ্ছি, তোমার সেই ইচ্ছেটাও কখনো পূরণ হবে না।’
‘তুমি শোকে পাগল হয়ে গেছ! তাই আবোল-তাবোল বকছ।’
‘কী জানি হতেও পারে!’
‘ওভার কনফিডেন্স নয় কি এসব?’
‘কনফিডেন্স? সে আবার কী শব্দ? কনফিডেন্স তো ছিল আমার তোমায় নিয়ে। তুমি বদলে যাওয়ার সাথে সাথে কনফিডেন্স শব্দটিও আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে।’
রাসেল এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বলল না। কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল,’সবকিছু গুছিয়ে নাও। আমরা এখনই বের হব।’
‘সবকিছু গোছানোই আছে। আমরা বের হব মানে? তুমি দিয়ে আসবে নাকি?’
‘এয়ারপোর্ট অব্দি যাব।’
‘পরম সৌভাগ্য আমার।’
‘পিঞ্চ মেরে কথা বলছ কেন?’
ভূমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। গুটি গুটি পায়ে সে রাসেলের দিকে এগিয়ে যায়। ডান হাতের তর্জনী রাসেলের বুকের ওপর রেখে বলে,’আমার এটুকু কথাই তুমি সহ্য করতে পারছ না। তাহলে তোমার এভাবে বদলে যাওয়াটা আমি কীভাবে মেনে নিচ্ছি বলতে পারো?’
রাসেল নিরব। ভূমি সরে যায় সেখান থেকে। রুম থেকে বের হওয়ার পথে বলে যায়,’আমি তোমার ওপর রাগ করে কিংবা অভিমান নিয়ে ফিরে যাচ্ছি না। আমি হাসিমুখে ফিরে যাচ্ছি। আর আমার এই হাসিমুখে বিদায় নেওয়ার জন্যই, তুমি হাজার চাইলেও আর আমায় ফেরাতে পারবে না।’
‘আশা করছি সেই দিনটি কখনো আসবে না।’
ভূমি প্রত্যুত্তরে বাঁকা হাসি প্রদান করল। সে নিজেও জানে না আদৌ এ দিনটি কখনো আসবে কিনা।
ভূমি ঘর থেকে লাগেজ নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসে। তার মন-মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ ফাঁকা। দেশের কেউই এখনো জানে না, সে যে দেশে ফিরে যাচ্ছে তাও একা! এবং সারাজীবনের মতো। এখন থেকে সে রাসেলকে ছাড়াই থাকবে। এসব ভাবতেই তো বুকের ভেতরটা কেমন মোচর দিয়ে ওঠে। কোনোভাবেই সে রাসেলের প্রতারণা মেনে নিতে পারছে না। যতবার এসব প্রসঙ্গ মনে পড়ে ততবার সূক্ষ্ম, তিক্ত অনুভূতিতে গা গুলিয়ে ওঠে। মরে যেতে ইচ্ছে করে তার। এ অনুভূতি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দিলো না রাসেল। সে রুম থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করল,’রেডি তুমি?’
ভূমি একবার সেদিকে তাকিয়ে ছোটো করে বলল,’হুম।’
‘চলো তাহলে।’
ভূমি শেষবারের মতো পুরো বাড়িটিতে চোখ বু্লিয়ে নিল। খুব বেশিদিন হয়নি সে এখানে ছিল। তবে যতদিনই ছিল, সময়টা কম ছিল না। বাড়িটির প্রতি কোণায় কোণায় ভালোবাসা,স্মৃতি মিশে আছে। সবকিছুর মায়া ছেড়ে আজ তাকে চিরদিনের মতো চলে যেতে হবে। সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিই তো তাকে ছেড়ে দিলো, সেখানে আর পিছুটান, মায়া এসব রেখে লাভ কী! দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে সে লাগেজ নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বাইরে এখন আর বৃষ্টি নেই। ভূমি বলল,’বাইকে যাব না। ট্যাক্সি নাও।’
রাসেল আড়চোখে একবার তাকিয়ে ভূমির কথাই রাখল। মিসেস চৌধুরীর সাথেও একবার শেষ দেখা হলো না। এতকিছু যে ঘটে গেছে এসবও জানায়নি। কী প্রয়োজন ঝামেলা পাকিয়ে? যেখানে আসল মানুষটিই ঠিক নেই! ট্যাক্সিতে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। এয়ারপোর্টে নেমে ভূমি দাঁড়ায়। রাসেল ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভূমির মুখোমুখি দাঁড়ায়। তার অস্বস্তি লাগছিল খুব। ভূমি হেসে বলে,’একদিন এই এয়ারপোর্টে এসে আমি কতই না খুশি ছিলাম! সেদিন সারাজীবনের জন্য তোমার কাছে এসেছিলাম। আর আজ সারাজীবনের মতো তোমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’
রাসেল ভূমির দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রয়েছে। ভূমির চোখ অশ্রুতে চিকচিক করছে। সে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলল,’যা হোক, ভালো থেকো। দুজনে অনেক সুখী হও। আসছি।’
রাসেল ছোটো করে বলল,’হু।’ এরচেয়ে বেশি তার আর কী-ই বা বলার আছে? ভূমি লাগেজ নিয়ে এয়ারপোর্টের ভেতর এগিয়ে যায়। পিছু তাকিয়ে দেখে রাসেল এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সে কয়েক পা পিছিয়ে আসে আবার। কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে মন ভরে রাসেলের মায়া মায়া মুখটি দেখে নেয়। চোখের দিকে তাকিয়ে এক টুকরো হাসি প্রদান করে বলে,’যেই বিরহের চাদরে আজ আমি নিজেকে জড়িয়ে নিলাম, দোয়া করি সেই বিরহের সংস্পর্শে কখনো তোমায় যেন না আসতে হয়! তুমি সইতে পারবে না।’
রাসেল শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ভূমি কিছুক্ষণের মাঝেই রাসেলের দৃষ্টির বাইরে চলে যায়। এখন আর এত মানুষের ভীরে ভূমিকে দেখা যাচ্ছে না। চলে গেছে সারাজীবনের জন্য!
চলবে…
#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_২৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
৬৪.
ক্লাস পরীক্ষা শেষ করে সূচনা কলেজ থেকে বের হয়। আজ আর অন্য কোনো ক্লাস হবে না। বাইরে মিঠে রোদ্দুর দেখতে পেয়ে মন ভালো হয়ে যায় তার। ইদানীং খুব বেশি শীত পড়ছে। তাই এখন মিঠে রোদ্দুর শরীরে পড়তে ভালো লাগা অনুভব হয়। নুসরাত হেলতে-দুলতে বলে,’দেখো আজ সুন্দর রোদ উঠেছে। চলো চলো মাঠে গিয়ে দাঁড়াই কিছুক্ষণ।’
সূচনাকে সে টেনে মাঠে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে গল্প-গুজব করে। গল্প-গুজব বলতে প্রতিদিনকার মতো নুসরাত বলে আর সূচনা শুনতে থাকে। মিনিট দশেক সেখানে থেকে ওরা কলেজ থেকে বের হয়। পাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সূচনা দাঁড়িয়ে পড়ে। তার চক্ষু চড়কগাছ। সে কি ঠিক দেখছে? অসম্ভব! এটা কী করে সম্ভব? ভূমির তো এখন এখানে থাকার কথা নয়। নুসরাত মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,’কী হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?’
সূচনা তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভূমিকা মাটির দিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে বসে রয়েছে। সূচনাকে সে এখনো দেখতে পায়নি। এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি তার কলেজের সামনে এসে পড়েছে। ছোটো ছোটো কদমে সূচনা এগিয়ে যায় সামনে। এ তো স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে না এখন আর। কাঁপা কাঁপা হাতে সে ভূমির মাথায় হাত বুলায়। চকিতে ফিরে তাকায় ভূমি। এতক্ষণে সে সূচনার উপস্থিতি টের পেয়েছে। ঠোঁটের কোণে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,’ভালো আছিস?’
সূচনা বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এখনও সে বিশ্বাস করতে পারছে না, ভূমি যে তার সামনেই। তবে ভূমির বিষাদময় মুখ, মলিন হাসি কোনো কিছুকেই স্বপ্ন ভাবার জো নেই। সে আচমকা বোনকে জড়িয়ে ধরে। না, না স্বপ্ন নয়। সব সত্যি! আনন্দে কেঁদে ফেলে সূচনা। অন্যদিকে ভূমি কাঁদে লুকিয়ে আটকে রাখা যন্ত্রণাগুলো দূর করতে। এতক্ষণে নুসরাতও বুঝতে পেরেছে ভূমি যে সূচনার বড়ো বোন।
ভূমি সূচনার মাথায়, গালে, চুলে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,’এমন শুকিয়ে গেছিস কেন? ঠিকমতো খাস না তাই না?’
সূচনার অনেক কথা বলার আছে। অনেক কিছু জানার আছে ভূমির থেকে। প্রশ্নে প্রশ্নে ভেতরে গুলিয়ে যাচ্ছে। দম বন্ধ করা অনুভূতি হচ্ছে। সে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,’কবে এসেছিস আমেরিকা থেকে?’
‘আজই এসেছি। কোথাও যাইনি। তোর হোস্টেলে কয়টা দিন থাকা যাবে?’
সূচনা পূণরায় ইশারায় জিজ্ঞেস করল,’কোনো সমস্যা হয়েছে? হঠাৎ কেন চলে এলি?’
‘বলব সব। আমার একটু ঘুম প্রয়োজন এখন। অনেকদিন হয়েছে শান্তিতে একটু ঘুমুতে পারি না।’
নুসরাত নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘটনার আগামাথা সে কিছুই আন্দাজ করতে পারছে না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছে দু’বোনের এখন প্রাইভেসি দরকার। তাই সে হাসিমুখে বলল,’সূচনা আমি তাহলে বাসায় যাই। তুমি আপুকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসো কেমন?’
সূচনা সম্মতিসূচক মাথা নাড়াল। নুসরাত চলে যেতেই সেও ভূমিকে নিয়ে নিজের হোস্টেলে আসে। রুমে এখন কেউই নেই। ফাতেমার আসতে রাত হবে। সে ভূমিকে রুমে রেখে নিচে যায় কিছু খাবার আনতে।
ভূমিকা চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোর খুঁটছে। জার্নি করে খুবই ক্লান্ত লাগছে তার। তবে বিশ্রাম নিতে মন টানছে না। মন আসলে কিছুতেই টানছে না। এই অবসাদ, অশান্তি তার কবে দূর হবে জানা নেই। আদৌ হবে কী-না তাও জানা নেই। আচ্ছা এটা ঠিক কী রকম যন্ত্রণা? নরকযন্ত্রণা সম? তার আবার হাসফাস লাগা শুরু হয়। অস্থির লাগছে খুব। বুকের ভেতরটায় কেমন যেন হাহাকার, চাপা আর্তনাদ। তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। একটু প্রশান্তির আশায় সে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে। কোথায় পাবে সে একটু শান্তি? কোথায় গেলে সে সব ভুলে গিয়ে একটু ভালো থাকতে পারবে? কোথায় গেলে মন শীতল হয়ে ওঠবে? ফাঁকা দৃষ্টি রাখে সে জানালার বাইরে। এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না। শরীরে কেউ আগুন দিলেও বোধ হয় এতটা কষ্ট তার লাগত না। চোখ হঠাৎ করেই যায় সিলিং ফ্যানের দিকে। এক পলকে সে কিছুক্ষণ সেদিকেই তাকিয়ে থাকে। আগ-পিছ আর কিচ্ছু না ভেবেই দরজাটা লক করে সে পড়ার চেয়ার নিয়ে ফ্যানের নিচে দাঁড়ায়। গায়ের ওড়না দিয়ে শক্ত করে ফ্যানের সাথে বাঁধে। হাত-পা অনবরতভাবে কাঁপছে তার। চোখ থেকে অনর্গল পানি পড়ছে। এই মুহূর্তে তার শুধু একটা কথাই মনে পড়ছে। মৃত্যু ছাড়া এই কষ্ট থেকে সে আর কিছুতেই শান্তি পাবে না। কিন্তু তার যে শান্তি দরকার। অনেক বেশি শান্তির দরকার তার। চিরতরে ঘুমুতেই পারলেই বোধ হয় এই কাঙ্ক্ষিত শান্তিটুকু পাওয়া যাবে। ওড়না গলায় প্যাঁচাতে যাওয়ার সময়ে দরজায় কড়া নাড়ে। ভূমি জানে দরজার ওপাশে সূচনা। সে স্থবির হয়ে কতকক্ষণ নিষ্পলকভাবে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। বাকহীন বাবার অসহায় মুখটির প্রতিচ্ছবি চোখের পাতায় ভেসে ওঠে। মায়ের অফুরন্ত আত্মত্যাগের কথা মনে পড়ে যায়। সর্বশেষ মনে পড়ে এই বোনটির কথা। সে তো এভাবে তার বোনকে শাস্তি দিতে পারে না। তার জন্য যদি তার বোন ফেঁসে যায়? না, না এ কী করে সম্ভব? একজন প্রতারকের জন্য সে তার সত্যিকারের মানুষগুলোকে কেন কষ্ট দেবে? সঙ্গে সঙ্গে সে ফ্যান থেকে ওড়নাটি খুলে ফেলে। চেয়ার যেখানে ছিল সেখানে রেখে দিয়ে দু’হাতে গালে লেগে থাকা চোখের পানিটুকু মুছে ফেলে। সূচনা তখনও দরজা ধাক্কাচ্ছিল। ভূমিকা দরজা খুলে দিতেই সূচনা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। ভূমির ভেজা চোখের পাঁপড়ি দেখেই তার বুক কেঁপে ওঠে। অজানা আশঙ্কা, ভয়ে সে তটস্থ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভেতরে ঢোকে। খাবারগুলো টেবিলের ওপর রেখে ভূমিকাকে আগে খেয়ে নিতে বলে। ভূমি ভাঙা ভাঙা গলায় বলে,’এখন খাব না রে। ক্ষুধা নাই একদম।’
সূচনা হাত ধরে টেনে ভূমিকে খাটের ওপর বসায়। চেয়ার সামনে রেখে মুখোমুখি বসে বোনের হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়। ইশারায় বলে,’কী হয়েছে আমায় বল।’
ভূমি হাসে। হাসতে হাসতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে। ক্রন্দনরত অবস্থাতেই বলে,’আমি ঠকে গেছি রে সূচনা আমি ঠকে গেছি! অসীম ভালোবাসা দিয়েও দিনশেষে আমি হয়েছি প্রতারিত। ভুল মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি। ভুল মানুষটাকে ভালোবাসি আমি। জীবনের সবচেয়ে বড়ো আঘাতটা কি রাসেলের থেকেই পেতে হলো বল? এমনটা কেন হলো বলতে পারিস? কোন পাপের ফল পাচ্ছি আমি? এই বিরহ যন্ত্রণা যে আমি আর সহ্য করতে পারছি না রে।’
ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে কষ্টে বুক ফেঁটে যাচ্ছে সূচনারও। দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল। সে ভূমিকে জড়িয়ে ধরে। নিজের বুকে টেনে নেয় বোনের মাথা। পিঠে হাত বুলাতে থাকে। ভূমির বলা কথাগুলো হজম করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়। বিশ্বাস করতে কষ্ট লাগে। রাসেল ভূমিকে ঠকিয়েছে? আজকের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য কথাটি যেন এটাই ছিল। তার বারবার মনে হচ্ছে সে ভুল শুনেছে। তবে ভূমির কান্না? কষ্ট? এগুলো তো ভুল নয়। মন ভরে কান্না করে আজ ভূমি। এতদিন একটু পিঠে হাত রাখার, মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। কিয়ৎক্ষণ বাদে নিজেকে সে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাঙা ভাঙা গলায় বলতে থাকে এতদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। রাগের চেয়ে সূচনার কষ্ট বেশি হচ্ছে। সে কিছুতেই রাসেলের এমন রূপ মেনে নিতে পারছে না। যেখানে সে-ই মানতে পারছে না, সেখানে ভূমি কীভাবে মানবে? কীভাবে সহ্য করছে সে এই যন্ত্রণা? আল্লাহ্ এ কোন পরীক্ষা নিচ্ছে?
সূচনার তো কিছু বলার ভাষাও নেই। সান্ত্বনাও সে দিতে পারবে না তৎক্ষণাৎ। তার যে বাকি সবার মতো বাকশক্তি নেই। সে কাঁদতে কাঁদতে ভূমির চোখের পানি মুছিয়ে দেয়। ইশারায় কাঁদতে বারণ করে। ভূমির অবুঝ মন কি আর এ বারণ মানতে চায়? সূচনা নিচে গিয়ে রুটি আর ভাজি এনেছিল। একটুখানি রুটি ছিঁড়ে জোরপূর্বক সে ভূমির মুখে তুলে দেয়। খাবার ভূমির গলা দিয়ে নামে না। আটকে থাকে। সে খাবার মুখে নিয়েই অঝোরে কাঁদতে থাকে। কীভাবে সে তার এই যন্ত্রণাগুলো প্রকাশ করবে? সূচনার অসহায়বোধ লাগছে খুব। কী করে ভূমিকে সে এখন সামলাবে! সে ভূমিকে গোসল করে আসতে বলে। ভূমি মেনে নেয়। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে চুপচাপ অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে। চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে। গোসল সেরে এসে আর কোনো কথা না বলে ভূমি শুয়ে পড়ে। সূচনা এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় ভূমিকে। পানিতে কম পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল। এটলিস্ট কয়েক ঘণ্টা যেন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে এজন্যই ওষুধ মেশানো। তাছাড়া সে ভূমিকে একা রেখে বাইরে যেতে পারবে না। মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেছে। যদি কিছু করে বসে? আবার তার বাইরে যাওয়াটাও জরুরী। বাড়িতে খবর পাঠাতে হবে। মায়ের এখানে আসা এখন খুব জরুরী। সে যাবে এখন নুসরাতের বাসায়। নুসরাতকে দিয়ে বাড়িতে ফোন দেওয়াবে। ভূমিকার গায়ের ওপর ভালোমতো লেপ তুলে দিয়ে মাথা হাত বুলাতে থাকে। ভূমি পুরোপুরি ঘুমানোর পরই সে হোস্টেল থেকে বের হয়।
পথিমধ্যে তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। পৃথিবীর বুকে কি সত্যি ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই? সবই মিথ্যে? বিশ্বাস শব্দটাই বোধ হয় বর্তমানে ফিকে হয়ে গিয়েছে। তবে তার তো এখন ভেঙে পড়লে চলবে না। তাকে শক্ত থাকতে হবে। বোনকে ভরসা দিতে হবে। সামলাতে হবে। যাওয়ার পথে বইয়ের দোকান দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিছু মোটিভেশনাল বই, ইসলামিক বই কিনে নেয় ভূমির জন্য। এই মুহূর্তে ভূমির মস্তিষ্কে যে কীসব চিন্তা-ভাবনা ঘুরে বেড়াচ্ছে তা বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় সূচনার। তবে জীবনটা যে অনেক দামি এটাও ভূমিকে বুঝতে হবে। সে রিকশায় বসে ফুঁপিয়ে কেঁদেই ফেলে। রিকশাওয়ালা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। তার চোখে-মুখে বিস্ময়। সূচনা চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করে। রিকশাওয়ালা না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলল,’কী হইছে আম্মা? কান্দেন ক্যা?’
সূচনা কাঁদতে কাঁদতেই দু’দিকে মাথা নাড়াল। যার অর্থ ‘কিছু না।’ নুসরাতদের বাড়ির সামনে রিকশা আসতেই সূচনা রিকশা থামানোর জন্য হাত ঝাঁকায়। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করে,’এই বাড়ি?’
সূচনা মাথা ঝাঁকায়। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। কলিংবেল বাজানোর আগে ভালো মতো চোখের পানি মুছে নেয়। তার চোখ, ঠোঁট তখনও তিরতির করে কাঁপছিল। লম্বা শ্বাস নিয়ে কলিংবেল বাজায় সে। দরজা খুলে দেয় বাড়ির ভৃত্য। সে সূচনাকে চেনে তাই দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। ড্রয়িংরুমে যেতেই দেখা হয়ে যায় আদিলের সাথে। সূচনা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সে কবে দেশে ফিরল? সোফায় হেলান দিয়ে ফোন চাপছিল আদিল। আজ সকালেই সে দেশে ফিরেছে। কে এসেছে দেখার জন্য চোখ তুলে তাকাতেই ভীষণভাবে সেও চমকে যায়। একই সাথে তার ঠোঁটের কোণে ফুঁটে ওঠে একটা প্রশান্তিকর হাসি। পরক্ষণেই তার চোখে-মুখেও চিন্তার উদ্বেগ দেখতে পাওয়া যায়। সূচনার ভেজা লাল হয়ে থাকা চোখ দেখে বুক কেঁপে ওঠে। বসা থেকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,’কী হয়েছে সূচনা? সবকিছু ঠিক আছে?’
সূচনা আর নিজেকে সংবরণ করে রাখতে পারে না। মাথা নত করে ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আদিল ব্যস্ত হয়ে বলে,’এই, এই কী হয়েছে আপনার? আপনি কাঁদছেন কেন? আমায় বলুন প্লিজ! কী হয়েছে?’
সূচনার এবার হেঁচকি উঠে যায়। ভূমির মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আদিল শব্দ করে নুসরাতকে ডেকে সূচনার দু’বাহু ধরে ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,’কেউ আপনাকে কিছু বলেছে?’
সে কী করবে বুঝতে না পেরে সূচনাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,’রিল্যাক্স! প্লিজ কাঁদবেন না আপনি।’
নুসরাতের বাবা-মা বাজারে গেছেন বাজার করতে। বাড়িতে এখন শুধু আদিল, নুসরাত আর কাজের লোকটিই ছিল। ভৃত্য আদিলের ঘর পরিষ্কার করায় ব্যস্ত ছিল তাই সূচনার কান্না সে শুনতে পায়নি। আদিলের ডাক শুনে নুসরাত নিজের রুম থেকে বাইরে আসে। সেও সূচনাকে এভাবে কাঁদতে দেখে ভড়কে যায়। আদিল আস্তে করে বলে,’পানি নিয়ে আয়।’
সূচনার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলে,’শান্ত হন একটু। কিচ্ছু হয়নি তো!’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]