বিরহের নাম তুমি পর্ব-২৮+২৯

0
405

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_২৮
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
৭০.
গান শেষ হওয়ার আগেই লাইভ কেটে দেয় আদিল। এতশত কমেন্টের উত্তর দেওয়ার সময় নেই এখন। তখনও স্থির দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিল রাসেল। কী অদ্ভুত! হঠাৎ করে হলো কী তার? সে পেইজে গিয়ে দেখল কোনো আপডেট আছে কিনা। নেইতো! হুট করে ভূমি এখানে কোত্থেকে থেকে এলো? চিন্তা-ভাবনা সব বাদ দিয়ে ফোন ডেস্কের ওপর রেখে সোজা হয়ে বসে সে। হাত ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। ভালো লাগছে না। তাই সে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য সুমির বাড়িতে যাবে। ভূমিকে নিয়ে ভাবার মতো সময় তার নেই।
________
৭১.
ভূমি টিসএসসি থেকে ফিরে দেখে সূচনা পড়তেছে। সারাদিন মেয়েটা বইয়ের মাঝে ডুবে থাকে। আচ্ছা ওর ভেতরেও কি অনবদ্য কোনো কষ্ট লুকিয়ে আছে, যেটা ভূমি জানে না? না হলে তো মেয়েটা এতটাও চুপচাপ গোছের ছিল না। বইগুলো টেবিলের ওপর রেখে সে ওয়াশরুমে চলে যায়।চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেসিনের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়ায়। আয়নায় তাকিয়ে দেখতে থাকে নিজের মুখটি। চোখের কোণে আবারও অশ্রু জমা হতে শুরু করে। সে আটকায় না সেই অশ্রুকে। রাসেলের জন্য তার ক্ষত-বিক্ষত মনটা নতুন করে পুড়তে থাকে প্রতিনিয়ত। আজকাল সেও অভিনয় করতে শিখে গেছে। ভালো থাকার অভিনয়।

চোখে-মুখে আরও কয়েকবার পানির ঝাপটা দিয়ে সে রুমে ফিরে আসে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বসে সূচনার বিছানায়। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,’এত পড়ুয়া হলি কবে থেকে তুই?’
সূচনা একবার তাকিয়ে শুধু স্মিত হাসে। কী উত্তর আছে এই প্রশ্নের? সেও তার বোনের মতো ব্যস্ত থাকতে চায়। অল্প সময়ের সেই সুন্দর স্মৃতিগুলো ভুলে থাকতে চায়। আর তার ব্যস্ত থাকার জন্য পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছুই নেই।

‘কী ভাবছিস?’ প্রশ্ন করে ভূমি।
সূচনা দু’দিকে মাথা নাড়ায়। ইশারায় বোঝায়, সামনে পরীক্ষা তাই এত পড়ে। এবার ভূমি জিজ্ঞেস করে,’আদিলকে তোর কেমন লাগে?’
ভ্রুঁ কুঞ্চন করে তাকায় সূচনা। এমন প্রশ্ন যেন সে আশাই করেনি। ভূমি নিজেই বলল,’আজ নীলক্ষেতে ওর সাথে দেখা হয়েছিল। তোর নামে নালিশ করল। তুই নাকি নুসরাতের সাথে থাকলে অনেক হাসাহাসি করিস, আর ওর সামনে গেলেই গম্ভীর হয়ে যাস।’
সূচনা বিরক্ত প্রায়। আদিল ছেলেটা ভালো। হয়তো প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই ভালো। তবে তার অন্য কারও প্রতি কোনো অনুভূতি নেই। আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হচ্ছে, ভূমির সাথে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটির পর সে আর কোনো ছেলেকে বিশ্বাসই করতে পারবে না। কে জানে কার মনের ভেতর কী আছে! রাসেলের মতো মুখোশধারী মানুষ তো অভাব নেই আমাদের আশেপাশে। খাতায় সে বিরক্ত হয়ে লিখল,’এসব কেন বলছিস আমায়?’
‘আদিলই বলল,আমি যেন তোকে বলি। ওর সাথে ওমন করিস না।’
‘আপু দেখ, উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কালেভাদ্রে হঠাৎ হঠাৎ দেখা হয় এইটুকুই। উনি আমার ফ্রেন্ডের ভাই। যতটুকু সম্মান উনাকে দেওয়া দরকার আমি সেটা দেই। তাই বলে তো আর উনার সামনে সারাক্ষণ দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারব না।’

শেষের লাইনটি পড়ে ভূমি হেসে ফেলে। বলে,’খুব রাগ দেখছি ওর ওপর? আমার কিন্তু আদিলকে খারাপ লাগেনি।’
‘মানুষ চেনা বড়ো দায়। আমার প্রতি উনার একটা এট্রাকশন কাজ করছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। আর মানুষ যে কতটা বিষাক্ত সেটা আমার চেয়ে তুই ভালো জানিস।’
ভূমি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে। মনে মনে ভাবে,’তা আর বলতে!’
সে ব্যাপারে আর কোনো কথা বলল না। সূচনার যা ভালো মনে হবে তাই করবে। জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হয়। শুধু সে মনে মনে এটাই প্রার্থনা করে, তার মতো যেন সূচনার জীবনটা না হয়। একটা সঠিক মানুষই যেন ওর জীবনে আসে। সেটা আদিল হোক বা অন্য কেউ; তবে সঠিক মানুষ।

সে সূচনাকে বলল,’আচ্ছা বাদ দে এসব। পড় তুই।’
সূচনা আবার পড়ার প্রতি মনোযোগী হয়। ভূমি সাতকাহন বইটা নিয়ে বিছানায় পড়ে। প্রথম কয়েক পেজ পড়তে পড়তে সে বইয়ের মাঝে ডুবে যায়। কখনো কখনো আবার নিজের সেই শৈশবে হারিয়ে যায়। এর মাঝেও আবার হঠাৎ হঠাৎ তার রাসেলের কথা মনে পড়ে যায়। আর তখনই সবকিছু তার বিরক্ত লাগা শুরু করে। কোনো কিছুই আর ভালো লাগে না। বইটা বন্ধ করে রেখে দেয়। এখন আর একটা লাইনও সে মন, মস্তিষ্ক দিয়ে ভাবতে পারবে না। ফোনটা হাতে নিয়ে নোটপ্যাডে যায়। লিখতে শুরু করে নিজের জীবনের ঘটনা। কয়েক ঘণ্টা যাবৎ সে অনেক কিছুই লিখে ফেলে। কী মনে করে আবার সেই লেখাগুলো ফেসবুকেও পোস্ট করে। বেশিক্ষণ অনলাইনে না থেকে শুয়ে পড়ে। এপাশ, ওপাশ ফিরে ঘুম তো আর আসে না। আবারও বইটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর মনে পড়ে রাসেলের আইডিটা সার্চ করে একটু দেখবে। সে আবারও যায় ফেসবুকে। রাসেলের আইডি ঘাঁটতে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে বুকের ব্যথা। কী অসহনীয় যন্ত্রণা!

রাসেলের হাসি হাসি মুখটার দিকে সে অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে থাকে। চোখ থেকে পড়তে থাকে নোনাজল। নোটিফিকেশনের শব্দে সূচনার পড়ায় ব্যাঘাত ঘটছিল। সে ইশারায় বলে ফোন সাইলেন্ট করতে। ভূমি ফোন সাইলেন্ট করে নিউজফিডে ফিরে আসে। এসে দেখে কয়েক মিনিটেই ২০+ রিকোয়েস্ট। সে হকচকিয়ে যায়। এত রিকোয়েস্ট আসছে কেন হঠাৎ? তখন সে নিজের টাইমলাইনে যায়। তার ঐ পোস্টে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের ছড়াছড়ি। সবাই জানতে চাচ্ছে পরবর্তীতে কী হয়েছিল। ভূমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়েই থাকে। এসবকিছু তো তার ধারণারও বাইরে ছিল।
________
৭২.
কুয়াশা আজ এতটাই ঘন যে সামনের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে রয়েছে হাঁড় কাঁপানো শীত। আজ বোধ হয় আর রোদের দেখা মিলবে না। শীতে কাঁপতে কাঁপতে সূচনা কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়। এত শীত পড়েছে বলে হয়তো আজ একটা রিকশাওয়ালাও নেই। তাদেরও তো একটু আরাম-আয়েশের প্রয়োজন আছে।

অবান্তর চিন্তা-ভাবনায় বুদ হয়ে হাঁটছিল সে। আস্ত একটা মানুষ যে তার খুব কাছাকাছি হাঁটছে, এটা সে খেয়ালই করেনি। দিব্যি নিজের মনে চিন্তা-ভাবনার আঁকিবুঁকি করে চলেছে। এবার আগুন্তুক লোকটি সূচনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গলা খাঁকারি দিয়ে কাঁশে। ভাবনায় ছেদ পড়ে সূচনার। পাশে তাকিয়ে দেখতে পায় আদিলকে। গায়ে কালো জ্যাকেট। ভেতরে সম্ভবত সাদা রঙের টি-শার্ট পরেছে। প্রতিবারের মতো এবারও সূচনার চোখে-মুখে বিরক্ত উপচে পড়তে লাগল। আগে আদিলকে দেখলে তার অস্বস্তি লাগত আর এখন বিরক্ত লাগে। এর কারণটাও স্পষ্ট। কারণ এখন সে জানে, আদিল তাকে পছন্দ করে। ভালোবাসে। তবে সে ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয়। বিশ্বাস শব্দটি এখন আর তার জীবনের আনাচে-কানাচে কোত্থাও নেই। সে মনেপ্রাণে এটাই বিশ্বাস করে যে, প্রতিটা মানুষই পরিবর্তনশীল। আজ হোক বা কাল মানুষ বদলাবেই। তবে এর মাঝেও কিছু ভাগ্যবান আর ভাগ্যবতী রয়েছে যাদের ভালোবাসা সারাজীবন অটুট থাকে। তারা কখনো বদলায় না। তবে এতটা সুখ অন্তত সূচনার কপালে সইবে না, এতটুকু সে আন্দাজ করতে পেরেছে।

সূচনার সুন্দর মুখটুকুতে বিরক্ত ভাবটা বুঝতে পেরে মনে মনে বেশ আহত হয় আদিল। এত সকালে সে শুধুমাত্র সূচনার জন্যই ঘুম থেকে উঠেছিল। আধ ঘণ্টা যাবৎ অপেক্ষা করছিল ওর হোস্টেলের সামনে। মেয়েটার মন এত কঠোর কেন? সে কি ভালোবাসা বোঝে না নাকি বুঝতে চায় না? দুজনই হাঁটছে নিরবে, পাশাপাশি। আদিল আর চুপ করে থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,’আপনি কি বিরক্ত হয়েছেন?’

সূচনা কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখায় না। সে এড়িয়ে যাচ্ছে আদিলকে। যতটা সম্ভব আরও বেশি এড়িয়ে যাবে। সে কোনো রকম মায়ায় জড়াবে না। ভালোবাসা নামক কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। কোনো সম্পর্কই স্থায়ী নয়। মানুষ সারাজীবন এক রকম থাকে না। হয়তো বাকি সবার মতো আদিলও সূচনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এমন পাগলামি করছে। এই পাগলামি বেশিদিন থাকবে না। ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো একদিন জয়ের মতো সেও দূরে চলে যাবে।

‘আপনি আমাকে ইগনোর করছেন কেন?’ আদিল পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্ন করল। সূচনার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে না পেয়ে এবার সে পথ আগলে দাঁড়ায়। নিজের ফোনটি সূচনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,’আপনার সমস্যাটা কি আমায় লিখে জানান।’
সূচনা ফোনটি নিল। নোটপ্যাডে গিয়ে লিখল,’আমার ক্লাসে দেরি হয়ে যাবে। যেতে দিন।’
লেখা মনঃপুত হলো না আদিলের। সে বলল,’আমি যা জানতে চেয়েছি তা লিখুন।’
এবার সূচনা পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে আদিল হাত টেনে ধরে। বরফের মতো ঠান্ডা হাতটি সূচনার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরতেই তার বুকটা কেমন কেঁপে ওঠে। জয়ের কথা মনে পড়ে যায়। তবুও সে স্বাভাবিক থাকে। শান্তভাবে তাকায় আদিলের দিকে। চোখে চোখ রেখে আদিল বলে,’আপনাকে আমি ভালোবাসি আপনি জানেন? ঠিক এজন্যই কি আপনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন? তাহলে শুনে রাখুন, আপনি যত খুশি আমাকে ইগনোর করুন তবুও আমি আপনার পিছু ছাড়ছি না।’
এই বলে সে সূচনার হাত ছেড়ে দেয়। সূচনা আর সেখানে দাঁড়াল না। সরাসরি কলেজের ভেতর চলে গেল।
_______
৭৩.
ইদানীং বেশ ব্যস্ত সময়ই কাঁটছে ভূমিকার। সারাদিন অফিস, অফিস থেকে ফিরে একটু বই পড়া তারপর লেখালেখি করা। আগের আইডিটা ডিএক্টিভ করে সে নতুন আইডি খুলেছে। লেখালেখিটা চলছে নতুন আইডিতেই। নতুনভাবে জীবন চলার শুরু বলা যায়। অফিসেও তার বেশকিছু বন্ধু হয়েছে। মনকে রিল্যাক্স করার জন্য মাঝে মাঝে অফডে তে একসাথে হ্যাং আউটও করে। এতদিনে সে একটা তিক্তকর সত্যি এবং বাস্তবতা বুঝে গেছে যে, রাসেল আর তার নেই। হাজার চাইলেও সম্পর্কটি আর আগের মতো হবে না। আর এ সত্য মেনে নিতেই তার সবচেয়ে বেশি কষ্ট সহ্য করতে হয়। সারাদিন হাসি-খুশি থাকলেও এমন কোনো রাত নেই যে সে, কাঁদে না। তার এ বোবাকান্নার সাক্ষী রাতের নিস্তব্ধতা এবং বালিশ।

লেখালেখি করে অল্প সময়েই বেশ পাঠকমহল গড়ে তুলেছে সে। হয়তো এসব আল্লাহ্-র ইচ্ছেতেই। এখন তাকে অফিস করার পাশাপাশি লেখালেখি নিয়েও ভাবতে হয়। এখানে একটা প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। মস্তিষ্ক এখন রাসেলকে নিয়ে ভাবার চেয়ে লেখালেখি নিয়ে ভাবাতে বেশি সময় দেয়। এতে তার মনের ওপর প্রেশার কম পড়ে। সারাদিন খাটাখাটি করে, আবার লেখালেখি এসব করতেই দু’চোখের পাতা বুজে আসে। এখন আর রাত হলেই তাকে ঘুমের ওষুধ খেতে হয় না।

অফিসের একটা লিস্ট করছিল সে তখন তার ফোনটি বেজে ওঠে। হোয়াটসএপে এসেছে কলটি। অফিসেও ডাটা অন করাই থাকে। হাতের কলমটি ডেস্কের ওপর রেখে ফোন হাতে তুলে নেয়। ফোনের স্ক্রিনে চির-পরিচিত নাম্বার আর ছবিটি দেখে তার বুক কেঁপে ওঠে। অস্বাভাবিকভাবে তার হাত-পাও কাঁপছে উত্তেজনায়। এতদিন বাদে রাসেল কেন ফোন করেছে?

চলবে…

#বিরহের_নাম_তুমি
#পর্ব_২৯
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________
৭৪.
প্রলয়ঙ্করী ঝড় কেমন হয় আদতে জানা নেই ভূমির। তবে সে মনের ভেতর, বুকের ভেতর ঠিক এরকমই একটা ঝড়ের আভাস অনুভব করতে পারছে। নিজেকে তার বড্ড এলোমেলো লাগছে। সে ফোন রিসিভ করে না। তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে। কোন প্রয়োজনে সে আজ ফোন করেছে? কতদিন ভূমি এই মানুষটিকে ছাড়া আছে? ২৬ দিন? হ্যাঁ, ২৬টা দিন সে এই মানুষটির থেকে অনেক দূরে। তবে আজ এতদিন বাদে কেন তার মনে পড়ল ভূমির কথা?

ফোনটা কেটে যায়। আবারও একই রিংটোনে ফোন বেজে ওঠে। ফোন রেখে দেয় ভূমি ডেস্কের ওপর। হ্যাঁ, এবার সে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ফোন রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণ স্থির হয়ে বসে থেকে মনকে ধাতস্থ করে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনে। কাজটা কঠিন তবে অসম্ভব নয়। বাস্তবতার পদতলে যখন কেউ পিষ্ট হয়ে যায় তখন তার কাছে সকল কঠিন কাজই সম্ভব হয়ে পড়ে। এইযে রাসেলের ফোন আসা মাত্র তার মনের ভেতর উচাটন শুরু হয়েছে। বুক কাঁপছে দুরুদুরু। মনের মাঝে হাজারও প্রশ্ন। তবুও সে রাসেলের কলটিকে উপেক্ষা করছে। কাজটা তার জন্য আসলেই সহজ নয়। কেননা এখনও সে রাসেলকে ভালোবাসে এটা অন্তত নিজের কাছে অস্বীকার করার জো নেই।

এখানেও ভূমি নিজের শক্ত মনোবলের পরিচয় দেয়। ফোন সাইলেন্ট করে লিস্টের কাজে মনোযোগ বসায়। রাসেল তার অতীত। এই মানুষটি এক সময়ে তার প্রায়োরিটির শীর্ষে ছিল। আর আজ? আজ সে প্রায়োরিটির কোথাও নেই। যোগ্য নয় যে মানুষটা! তার চেয়ে শত শত গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কাজ। সে লিস্ট করার কাজ কমপ্লিট করে ফোন হাতে নেয়। পাঁচ বার ফোন করেছিল রাসেল। ভূমি এবার নিজ থেকেই কল করে। রিং হচ্ছে। তিনবার রিং হতেই ওপাশ থেকে রাসেল ফোন রিসিভ করে গম্ভীর কণ্ঠে বলে ওঠে,’লাইনেই তো ছিলেন, তাহলে ফোন রিসিভ করেননি কেন?’

ভূমি তাচ্ছিল্য করে হাসে। শ্লেষের সঙ্গে বলে,’আজ হঠাৎ আপনি বলছ যে? আর কত নাটক করবে? যাই হোক, আমি এত ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে পারি না। বহুদিনের অভ্যেস তো! তাই তুমি করেই বলছি।’
ভূমির কথার টোন শুনে ভড়কে যায় রাসেল। এত উৎফুল্ল কেন ওর কণ্ঠস্বর? এত তেজ! এত শক্ত মনোবল! ওপাশ থেকে নিরবতা পালন করায় ভূমি নিজেই বলে,’তুমি ফোন কেন করেছ?’
রাসেলও এবার তুমি করেই সম্বোধন করে বলল,’রিসিভ কেন করোনি? দেখোনি ফোন করেছি?’
‘দেখেছি। তবে রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করিনি। ব্যস্ত ছিলাম।’
‘ব্যস্ত?’
‘খুব অবাক হচ্ছ যে! অফিসে আছি তাই ব্যস্ত।’
‘তুমি চাকরী করো?’ রাসেল অবাক। ভূমি অট্টহাসি দিয়ে বলে,’কেন? তুমি কি ভেবেছিলে তোমার বিরহে ভূমি ধুকে ধুকে মরবে?’

রাসেল চুপ হয়ে যায়। চুপ থাকে ভূমিও। নিরবতা ভেঙে রাসেল বলল,’ফোন করেছি দরকারে।’
‘জানি। দরকার ছাড়া তুমি ভূমিকে কল করবে না আমি সেটা জানি। বলো কী দরকার? ডিভোর্স লাগবে?’
রাসেল এবার তাজ্জন বনে যায়। ভূমির কথায় এত চাটুকারিতা কেন? ভূমি নিজেই বলল,’আমি নিজ থেকে ডিভোর্স দিতে পারব না। তোমার প্রয়োজন, সো তুমি বাংলাদেশে এসে ডিভোর্স লেটার আমায় দিয়ে যাও।’
‘তুমি দিলে সমস্যাটা কী?’
‘আমার তো তোমায় নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না। আর এমনও নয় আমি অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি। প্রয়োজন তোমার তাই কাঠখড় পোড়ালে তোমারই পোড়াতে হবে। আমার অত সময় নাই।’
রাসেল নিশ্চুপ। ভূমি বলল,’আর কিছু? আমার কাজ আছে।’
রাসেল আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো। তবুও কিছুক্ষণ ফোন কানের কাছে ধরে রাখে ভূমি। অনেকদিন পরে কণ্ঠটি শুনে তার কষ্ট, ভালো লাগা, খারাপ লাগা সবই অনুভূত হচ্ছে। ডিভোর্স! শব্দটা ভীষণ ভারী ভারী লাগে। কাগজের সম্পর্ক থেকে লাভই বা কী? মনের তো কোনো সম্পর্ক নেই। এইটুকু নামে মাত্র সম্পর্কও ছিন্ন হয়ে যাওয়া ভালো। ভূমি কাঁদে না। চোখ বন্ধ করে শুধু আল্লাহ্কে বলে,’আমায় ধৈর্য দাও আল্লাহ্, ধৈর্য দাও।’
_______
৭৫.
আদিল চোখমুখ শক্ত করে বসে আছে বাবা-মায়ের সামনে। চলতি মাসের দুই তারিখে একটা ভালো বেতনের চাকরী পেয়েছে সে। এখন সেও একজন প্রতিষ্ঠিত ছেলে। হয়তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ের প্রসঙ্গ তুলত না; তবে না তুলেও পারল না। সূচনার থেকে বারবার অবহেলা পেয়ে সে অতিষ্ঠি হয়ে পড়েছে। কাজে মন বসে না। ঐ বাকহীন মেয়েটা তাকে দিশেহারা করে তুলেছে। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও মেয়েটাকে ওর চাই-ই। একবার পেয়ে গেলে আর কখনো কাছ ছাড়া করবে না। একদম আষ্টেপৃষ্ঠে আগলে রাখবে।

আদিল বিয়ে করতে চায় শুনে প্রথম দিকটায় বাবা-মা দুজনই বেশ খুশি হয়ে যান। কিন্তু যখন জানতে পারেন, মেয়েটি সূচনা তখন তাদেরও গাঁইগুঁই শুরু হয়েছে। মেয়ের বান্ধবী হিসেবে তারা সূচনাকে বেশ ভালোবাসে, পছন্দ করে। কিন্তু তাই বলে ছেলের বউ! আসলে একমাত্র ছেলের বউ হিসেবে সব বাবা-মায়েরই আলাদা আশা, স্বপ্ন থাকে। উনারাও এর ব্যতিক্রম নন। সূচনার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যের কাছে আদিলের মতো সুদর্শন ছেলেটিকেও হয়তো কিঞ্চিৎ বেমানান লাগতে পারে। সেই হিসেবে সূচনা আদিলের জন্য পার্ফেক্ট ছিল। মেয়ের বাবার টাকা-পয়সা কিংবা সম্পত্তির প্রতি তাদের কোনো চাহিদা নেই। এখানেও তাদের কোনো সমস্যা ছিল না। সমস্যা ছিল শুধু একটা জায়গাতেই। সূচনা কথা বলতে জানে না!

আদিল এবার মায়ের হাতটি শক্ত করে ধরে বলল,’পৃথিবীতে কোনো মানুষই পার্ফেক্ট হয় না মা। আমাদের প্রত্যেকের মাঝেই কোনো না কোনো খুঁত রয়েছে। হয়তো আপাত দৃষ্টিতে সবার খুঁত আমাদের চোখে পড়ে না। সূচনার কথা বলতে না পারাটা ওর খুঁত কিংবা কমতি নয়। এটা আল্লাহ্’র ইচ্ছে। এখানে তো ওর কোনো হাত নেই।’
নুসরাতও এবার বাবার পাশে বসে বলল,’সূচনা কিন্তু মেয়ে হিসেবে খারাপ নয় আব্বু। যেমন সুন্দর দেখতে, তেমন সুন্দর ব্যবহার। কত ছেলে চান্স নিতে চেয়েছে, কিন্তু ও কাউকে পাত্তা দেয়নি। এমনকি ভাইয়াকেও তো ও ইগনোর করে। পড়াশোনাতেও অনেক মেধাবী। এত গুণ থাকতেও শুধু একটা সমস্যাকেই কেন তোমরা সবাই বড়ো করে দেখছ?’
‘আদিলকে ইগনোর করে মানে? সূচনার সাথে ওর সম্পর্ক নেই?’ জিজ্ঞেস করলেন মা। আদিল একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলল,’না, মা। ও তো বরাবরই আমায় এড়িয়ে চলে।’
‘তাহলে ওকে তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস কেন?’
‘কারণ ওর সাথে আমি রিলেশন করতে চাই না। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। খোঁজ-খবর নিয়েও দেখেছি ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। আর নুসরাতের মাধ্যমে যতটুকু জেনেছি, ও বাবা-মায়ের ভীষণ বাধ্য মেয়ে। ওর বড়ো বোনও বলেছে, যদি বাবা-মা রাজি হয় তাহলে সূচনার আপত্তি থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।’

বাবা এতক্ষণ চুপ করেই ছিলেন। এবার বললেন,’দেখ বাবা, তুই এখন বড়ো হয়েছিস। তোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। আর তুই কাকে বিয়ে করবি এটাও তোর ব্যাপার। আমরা শুধু খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব মেয়ে কেমন। এখন তুই যদি মন থেকেই সূচনাকে বিয়ে করতে চাস, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাও বলব, সিদ্ধান্তটা ভেবে-চিন্তে নিস। ঝোঁকের বশে বিয়ে করতে চাস না। এমনিতেই ওর বড়ো বোনের ওরকম একটা ক্রাইসিসের পর স্বাভাবিকভাবেই মনের ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে ওদের। চাই আমি চাচ্ছি না, আমার ছেলের দ্বারা মেয়েটা কষ্ট পাক।’
আদিল অভয় দিয়ে বলল,’আমি অনেক ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওর হাত ছাড়ব না।’
‘বেশ! তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। এখন তোমার মাকে জিজ্ঞেস করে দেখো, সে কী বলে।’
‘আমি আর কী বলব? সংসার ছেলে করবে, যদি ওরই আর কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে আমারও কোনো সমস্যা নেই।’ বললেন মা।

নুসরাত খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,’তাহলে আমরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি কবে?’
আদিল বলল,’মা এখন জাস্ট এঙ্গেজমেন্টের প্রস্তাব দেবে। ওর এইচএসসি পরীক্ষার বেশি দিন নেই আর। পরীক্ষা শেষ হলে তারপর বিয়ে। বুঝতে পেরেছ?’
‘বাব্বাহ্! এখনই কত চিন্তা।’ কথাটা পিঞ্চ মেরে বলল নুসরাত। আদিলের সঙ্গে টম এন্ড জেরির মতো ছোটোখাটো একটা ঝগড়াও হয়ে যায় দুজনের। ওদের কাণ্ড দেখে বাবা-মা হাসতে থাকে।
______
৭৬.
‘আচ্ছা সবচেয়ে দ্রুত কী চলে যায় বলো তো?’ প্রশ্নটি করে সুখী সূচনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সূচনা ফ্যালফ্যাল করে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকে।

সুখী দু’হাতে মুখ চেপে হেসে বলে,’পারলে না তো? সবচেয়ে দ্রুত চলে যায় সময়। এই দেখো না, আমি এখন একজন কলেজের ছাত্রী।’
সূচনার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুঁটে ওঠে। মেয়েটার বাচ্চা বাচ্চা স্বভাব সূচনার ভীষণ ভালো লাগে। নিজের কোনো ছোটো বোন না থাকলে কী হবে, সুখীকে সে আপন ছোটো বোনই মনে করে আসছে। দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট নিয়ে আলাদা থাকে ওরা। এক রুমে সূচনার বাবা-মা আর অন্যরুমে ফাতেমা, সূচনা, ভূমিকা, সাথী আর সুখী। সারাদিন সকলের ব্যস্ততায় কাটলেও রাতটা কাটে আনন্দে। এক সাথে রাতের খাবার খেতে খেতে সারাদিনের আড্ডা জুড়ে দেয় সকলে। রাত জেগে কিছুক্ষণ গল্প করা। এইতো জীবন!

বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে রয়েছে ভূমি। রাসেল ফোন দেওয়ার তিন মাস কেটে গেছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। রাসেল এখনও ডিভোর্স লেটার পাঠায়নি। তাহলে সেদিন সে কেন ফোন করেছিল? ফিরে আসতে চেয়েছিল কি? নাহ্! আসবে না সে ফিরে। অন্তত তার কণ্ঠ শুনে একবারের জন্যও ভূমির এটা মনে হয়নি। সে চিনে ফেলেছে মানুষটিকে। এখন সে সৌন্দর্যের মাঝে মত্ত। সুমির মাঝে মত্ত সে। করুণভাবে শ্বাস নেয় সে। হাতের ফোনটা তখন বেজে ওঠে। আদিল ফোন করেছে। আজ সে তার বাবা-মাকে নিয়ে আসছে সূচনাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। কথাটি সূচনা বাদে সবাই-ই জানে। সূচনাকে নিয়েই তার ভয় হচ্ছে। না জানি কেমন রিয়াক্ট করে।

আসলে বিয়ে নিয়ে যে শুধু সূচনার মাঝেই ভীতি রয়েছে, এমনটা নয়। বাবা-মায়ের ভেতরও একই ভয়। আর সবচেয়ে বেশি ভয় তো ভূমির মাঝে। তবে আদিলের সম্পর্কে সে বেশ কড়া নজরদারি করেছে। এরপরই না প্রস্তাব দেওয়াতে রাজি হয়েছে। তবুও মানুষের মন তো বলা যায় না! মনে মনে খুব করে চায়, আল্লাহ্ যেন সূচনার কপালে সুখ লিখে দেয়। সূচনা যে প্রথমে রাজি হবে না এটাও তার ভালো করেই জানা আছে। বাসার কলিংবেল বেজে ওঠে তখন। ভূমি যায় দরজা খুলতে। তার ধারণা ছিল আদিল এসেছে। কিন্তু সামনে দাঁড়ানো অচেনা একটা ছেলে।
‘কাকে চাই?’ জিজ্ঞেস করল ভূমি।
‘ভূমিকা নামে কেউ আছে এই বাড়িতে?’
‘আমিই ভূমিকা।’
‘এটা আপনার জন্য।’ একটা খাম এগিয়ে দিয়ে কথাটি বলল সে। ভূমি খামটি হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,’কী আছে এতে? কে পাঠিয়েছে?’
‘রাসেল।’
ভূমির বুকটা ধড়াস করে কেঁপে উঠেছে নামটা শুনে! মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,’রাসেল বাংলাদেশে এসেছে?’
‘জি। অনেকদিন আগেই এসেছে।’
‘ওহ।’
‘আসছি তাহলে আমি।’
‘জি, ধন্যবাদ।’
ছেলেটি চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ভূমি পিছু ডাকে। তার বেহায়া মনটা রাসেলের খবর জানার জন্য উতলা হয়ে পড়েছে। সে জিজ্ঞেস করে,’রাসেল এখন কোথায় আছে?’
‘সম্ভবত এয়ারপোর্ট।’
‘এয়ারপোর্ট!’
‘হ্যাঁ, আজই চলে যাচ্ছে আমেরিকায়।’

কেন জানিনা কান্নারা দলা পাকিয়ে গলায় আটকে আসছে। একটা ফাঁলা ঢোক গিলে সে। কষ্ট হচ্ছে আজ অনেকদিন বাদে। এমনভাবে সে কষ্ট অনুভব করে না বেশ ক’দিনই হবে। ভূমিকে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছেলেটি চলে যায়। ভূমির চোখ থেকে টুপ করে গড়িয়ে পড়ে দু’ফোঁটা অশ্রু। ঝাপসা ঝাপসা দৃষ্টিতেই সে খামটি খুলে। সাথে সাথে বুকটা হুহু করে ওঠে। ডিভোর্স পেপার! তাহলে রাসেল বাংলাদেশে এসেছিল ডিভোর্সের জন্যই? ভূমি দৌঁড়ে ছাদে চলে যায়। ফ্লোরে বসে শব্দ করে কান্না করতে থাকে। সে জানে না তার কেন এত কষ্ট হচ্ছে। এতদিন ধরে তো কাগজের সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্কই ছিল না দুজনের মাঝে। তাহলে আজ কেন এই কাগজের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ায় তার এতটা কষ্ট হচ্ছে? কাঁদতে কাঁদতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসে ফুঁপিয়ে নিঃশব্দে কাঁদে। তার ভেতরকার ভূমি তাকে বলছে,’তুমি কেঁদো না ভূমি। আজ না হয় কাল এটা তো হওয়ারই ছিল। মনে করো, আজ থেকে তুমি মুক্ত। আজ থেকে তোমার আর কোনো পিছুটান রইল না। আজই হোক ঐ মানুষটার জন্য তোমার শেষ কান্না। এরপর আর তুমি ঐ মানুষটার জন্য কাঁদবে না। তুমিও ভালো থাকবে ভূমি। তোমাকে যে ভালো থাকতেই হবে।’

চলবে…