বিরোধীদলীয় প্রেম
পর্ব – ১২
আফরোজা আক্তার
[দয়া করে কেউ কপি করবেন না]
বাবার বাসায় এসেই দরজায় খিল দেয় মাহা। মেয়েকে এইভাবে হুটহাট বাসায় আসতে দেখে আমিনা চমকে যান সাথে ভয়ও পান। তিনি কোনোভাবেই চান না মেয়ের কোনো বোকামির জন্য মেয়ের সংসার নষ্ট হয়ে যাক। তিনি বার কয়েক দরজা ধাক্কান কিন্তু মাহা দরজা খুলেনি। মোশাররফ সাহেব জমিজমার ভেজালে গ্রামের বাড়ি গিয়েছেন নয়তো এ নিয়ে তিনিও নানান প্রশ্ন করতেন।
মাহা বন্ধ ঘরে ফিরোজের সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গত দুইদিনে ফিরোজের সঙ্গে বন্ধুত্ব গাঢ় আকার ধারণ করেছে। মাহার দিক থেকে এটা শুধুই বন্ধুত্ব। সে অবশ্য ফিরোজকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে বিবাহিত। সঙ্গে এটাও জানিয়েছে এই বিয়েতে সে খুশি না। অনেকটা জোরপূর্বক তাকে এই বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।
বিকেলে ফিরোজের সঙ্গে দেখা করবে মাহা। ফিরোজই মাহাকে দেখা করার প্রস্তাব দেয়। সাত/পাঁচ না ভেবে মাহাও রাজি হয়। তাই ভার্সিটি থেকে সোজা বাবার বাসায় আসে মাহা। ভাবে এখান থেকেই বিকেলে বের হয়ে ফিরোজের সঙ্গে দেখা করে সন্ধ্যায় ওই বাসায় চলে যাবে সে। ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে শাশুড়িকে বাবার বাসায় আসার কথা আগাম জানিয়ে এসেছিল মাহা।
হঠাৎই ফোনটা ভাইব্রেট হতে শুরু করে। মাহা ফোন হাতে নিয়ে দেখে মিমির নাম্বারটা ফোনের স্ক্রিনে ঢেউ খেলছে। মাহা ফোন রিসিভ করে বলে, ‘হ্যাঁ। বল।’
‘কোথায় তুই?’
‘বাসায়। কেন?’
‘তোর তো বাসা এখন দুইটা। কোন বাসায় আছিস?’
‘ইয়ার্কি করিস না তো। আমার বাসা একটাই। আর আমি এখন আমার বাসাতেই আছি।’
‘বড়রা বলে, মেয়েদের নিজের বাসা বলতে কিছু হয় না। মেয়েদের হয় বাবার বাসা, নয় শ্বশুর বাসা, আর নয়তো স্বামীর বাসা। বয়সকালে হয় সন্তানের বাসা।’
মিমির কথা শুনলে ইদানীং মেজাজ বিগড়ে যায় মাহার। কর্কশ ভাষায় মাহা বলে, ‘বাবার বাসায় আসছি। বিকেলে ওই বাসায় চলে যাব।’
‘দেখা করে গেলি না যে।’
‘তুই তো নিজেই ব্যস্ত থাকিস।’
‘তুই দেখা না করে চলে গেছিস এখন বলছিস আমি ব্যস্ত ছিলাম। অদ্ভুত!’
‘কিছু বলবি তুই?’
‘নাহ। ভাবছিলাম ভেলপুরি খাব দু’জনে। তোকে ক্যাম্পাসে খুঁজলাম। পেলাম না। তাই ফোন দিলাম।’
‘আচ্ছা। রাখছি তাহলে।’
মাহা লাইন কেটে দেয়। মিমিও ফোনের স্ক্রিন অফ করে সামনের দিকে তাকায়। সা’দ দাঁড়িয়ে আছে মিমির বিপরীতে। মিমির ফোনটা এতক্ষণ স্পিকারে রেখে সা’দ মাহার কথাগুলো শুনছিল। মূলত আজ সা’দ মাহাকে ভার্সিটিতে দেখেনি। তাই মিমির কাছে খোঁজ নিতে এসেছিল। মিমি যখন বলল সে দুই ক্লাস করার পর মাহাকে দেখেনি তখনই সা’দ মিমিকে বলে মাহাকে ফোন করতে। সা’দের কথানুযায়ী মিমিকে মাহাকে ফোন দেয়।
সা’দ মিমিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলে, ‘তোমাকে একটা ক্যাডবেরি খাওয়াব।’
মিমি মুচকি হেসে বলে, ‘ক্যাডবেরি খাব না। এক প্লেট ফুচকা হলে মন্দ হয় না।’
‘ওকে ডান। এক প্লেট না। দুই প্লেট খেও।’
★★
বিকেলে ফিরোজের সঙ্গে দেখা করে মাহা। চন্দ্রিমা উদ্যানে দু’জন পাশাপাশি হাঁটছে আর কথা বলছে। ফিরোজকে বেশ লাগছে মাহার। ফিরোজ অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। মাহার মন বুঝতে এক মিনিটও সময় লাগেনি তার। কিছুটা সময় হাঁটার পর ফিরোজ মাহার কাছে খানিক এগিয়ে গিয়ে বলে, ‘ছবিতে যেমন দেখেছিলাম, বাস্তবে তুমি তার থেকেও সুন্দরী।’
ফিরোজের এমন কথায় মাহা হাসে। বলে, ‘আমি এতটাও সুন্দরী নই।’
‘নাহ। আমার কাছে তুমি অনেক সুন্দর।’
‘তাহলে বলব, আপনার দেখার দৃষ্টি সুন্দর।’
‘আমার এই দৃষ্টি কেবল তোমাকেই দেখছে মাহা।’
এমন কথা শুনে মাহা অবাক হয়ে তাকায় ফিরোজের দিকে। ফিরোজের মুখ থেকে এমন কথা সে সত্যিই আশা করেনি। ফিরোজের কথার পরিপ্রেক্ষিতে মাহা নীরবতা পালন করেছে কেবল।
সন্ধ্যার পর ওই বাসায় ফেরে মাহা। ঘরে এসে সা’দকে বিছানায় বসে থাকতে দেখতে মাহার মুখটা কালো হয়ে যায়। এই সময় সে সা’দ এই ঘরে আশা করেনি। সা’দ মাহাকে দেখেও না দেখার ভান করে। ড্রয়ার থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হয় মাহা। ঠিক তখনই মাহার হাতটা চেপে ধরে সা’দ। রাগান্বিত স্বরে সা’দ মাহাকে বলে ‘নেক্সট টাইম এমন হুটহাট বাবার বাড়ি যাবে না তুমি। কথাটা ভালো করে এই মাথায় ঢুকিয়ে নাও।’
সা’দের এমন আচরণে এবং কথায় রেগে যায় মাহা। মাহা পূর্বের মতোই সা’দকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু এবার সা’দ নিজেকে বেশ শক্ত করে দাঁড় করিয়ে রাখায় একচুলও নড়েনি৷ সে মাহার হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলে, ‘খবরদার। আমার সাথে গায়ের জোর দেখাবে না। প্রয়োজনে আমি যে কতটা হিংস্র হতে পারি তার প্রমাণ দেখাতে বাধ্য কোরো না আমায়।’
মাহা দাঁত কটমট করে বলে, ‘আমার লাগছে। হাতটা ছাড়ো।’
‘লাগুক। লাগার জন্যই তো ধরেছি।’
‘এই জাস্ট হেট ইউ।’
‘আমি তো একবারের জন্যেও বলিনি আই লাভ ইউ। সো রিল্যাক্স। আমি যা বললাম শুধু সেটা মনে রাখবে। নেক্সট টাইম হুটহাট কাউকে না জানিয়ে বাবার বাড়ি যাবে না।’
‘আমি মা’কে জানিয়েই গিয়েছিলাম।’
‘আমাকে জানিয়ে গিয়েছিলে? মা তোমার অভিভাবক নাকি আমি তোমার অভিভাবক? আজকের পর কোথাও গেলে আমার অনুমতি নিয়ে তারপর যাবে।’
মাহার মনে হচ্ছিল সা’দ তার চারপাশে গন্ডি তৈরি করে দিচ্ছে। সেই গন্ডি পেরুতে হলে সা’দের অনুমতি তার প্রয়োজন। কিন্তু সে তো এমন গন্ডির মধ্যে নিজেকে আঁটকে রাখতে চায় না। সা’দ মাহার হাতটা ছেড়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। মাহা দ্রুতগতিতে ওয়াসরুমে যায়। শাওয়ার ছেড়ে দেওয়ালে কয়েকটি ঘুষি মেরে মুখ চেপে চিৎকার করে কান্না করে। তখন মাহার মুখ থেকে শুধু একটা কথাই বের হয়।
‘আমি তোমাকে কখনও ক্ষমা করব না সা’দ। কখনোই না। ঘেন্না করি আমি তোমাকে। আই হেট ইউ। আই হেট য়।’
চলমান……………………………