বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০৬

0
2

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব৬
#তামান্না_আনজুম_মায়া
আচমকা তরীর হাত মুচড়ে ধরলো ফারাবী,ঘটনার আকষ্মিকতায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলো তরী।বাকিরা অবাক হয়ে তাকালো সামান্য ভাইয়া ডাকায় ফারাবী এভাবে রেগে গেলো কেনো?
তন্ময় বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছে তরীর মুখের দিকে, হয়তো কিছু একটার হিসাব মিলাতে ব্যস্ত।
তার মধ্যেই ফারাবী চিবিয়ে চিবিয়ে বলে

,,চলো আমার সাথে বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার কি হই!
জামাইয়ের বয়সী একটা ছেলেকে ভাইয়া ডাকতে লজ্জা করে না।

অয়ন,তামিম ভেবাচেকা খেয়ে গেছে এমন কথায়।
অয়ন চিল্লিয়ে বলে
,,এ ভাই কেউ আমার মাথায় পানি ঢাল।আমার মাথা ঘুরছে, ভন ভন করছে,কি শুনলাম আমি।এ কে, আমার বন্ধুরে কেউ ফেরত এনে দে!কে এই জি*ন পরী এটা ফারাবী হতে পারে না।

তন্ময় মৃদু ধম ক দিয়ে বললো
,,এই নাটক কম কর।তরা এখনো মেয়েটাকে চিনতে পারছ নাই?

ফারাবী সন্দিহান দৃষ্টি ফেললো তন্ময়ের উপর।তন্ময় উৎসুক ভাবে তাকিয়ে আছে

তন্ময় ভ্রু উঁচিয়ে বললো
,,এই তুমি তরী না? ওই দিনের মেয়েটা!

তরী ফারাবীর থেকে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো

,,বাহ আপনার স্মৃতি শক্তি তো প্রখর কিন্তু যার চিনার কথা সেই চিনতে পারেনি!

,,তন্ময় তুই ওরে আগে থেকে চিনতি?
ফারাবীর কথায় এবার বিরক্ত হলো তন্ময়, সত্যি কিছু মনে নেই এই ছেলের!তন্ময় ফারাবীর হাত ধরে টেনে বললো
,,চল তোকে মনে করিয়ে দিচ্ছি।তুই আগে মেয়েটার হাত ছাড়।

ফারাবী তরীর দিকে শাসানোর ভঙ্গিতে তাকিয়ে চলে গেলো।
মিরা হা হয়ে দেখলো সব দর্শকের মতো,কি থেকে কি হলো,ফারাবী কে তো সবাই ভাইয়া না ডাকলে বিরক্ত হতো আর এই মেয়ের বেলায় কি বললো,জামাইয়ের বয়সী ছেলেকে কেনো ভাই ডাকছে কি আশ্চর্য!কে এই মেয়ে।
তরী নিপার হাত ধরে নিয়ে চলে গেলো ক্লাসের দিকে,এই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে কোনো শান্তি নেই,পরবর্তী দুই বছর যে পাবে না তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
——
ফারাবী জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,সামনে তন্ময়, তামিম,অয়ন।তন্ময় বাকি দুজন কেও জিজ্ঞেস করলো
,,তোরাও কি মনে করতে পারছিস না মেয়েটা কে?
দুজনই না সূচক মাথা নাড়লো।ফারাবী রেগে বললো ভনিতা না করে তাড়াতাড়ি বল।

,,তোদের কি মনে আছে যেদিন স্বপ্নার সাথে ফারাবীর কথা কাটা’কাটি হলো।সেদিন ফারাবীর রাগে উন্মা*দ প্রায় অবস্থা, জীবনে প্রথম গিয়ে ম*দ খেয়েছে পরে নিজেকে সামলাতে পারছিলো না।ঘোরের মাঝে বার বার স্বপ্না স্বপ্না করছিলো।শা*লা যে কতো মাতা*ল হয়েছিলি তা আজ বুঝলাম।

,,কেনো কি এমন হয়েছিলো সেদিন?

,,তুই যে স্বপ্নাকে জোর করে তুলে আনতে গিয়েছিলি এখন তো কিছু মনে থাকবে না তোর।

,,হ্যাঁ মনে আছে স্বপ্নাকে তুলেও এনেছিলাম, কিন্তু পরে কি হয়েছে জানি না!

,,কচু তুমি স্বপ্না কে তুলে এনেছো!
তন্ময়ের কথায় বার কয়েক নেত্রপল্লব ঝাপটালো তিনজন,ফারাবী সরু চোখে তাকালো,মিন মিন করে বললো
,,কি বলতে চাচ্ছিস?ক্লিয়ার করে বল।

তন্ময়ের এই মুহুর্তে মন চাইলো এমন বন্ধুর মাথা
ফা টিয়ে দিতে।দাঁত পিষে বললো

,,কেমনে তুই এতো বড় দলের সভাপতি হইলি এটা নিয়ে আজ আমার সন্দেহ হচ্ছে।

,,ওই শা*লা ঝেড়ে কাশ তো আগে।এমনিতেই তরীও প্রথম দিন থেকে কি সব উল্টা পাল্টা বলে যাচ্ছে,এখন সব কিছু বুঝতে হবে আমার!

,,তরীর সাথে তোর আবার দেখা হলো কেমনে?আংকেল তো ওইদিন তোর থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছিলো ওরে!

,,আব্বু!আর তরী?পুরো কাহিনি বল তন্ময়।

অয়ন,তামিম দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না।

,,ওইদিন তুই স্বপ্নার বদলে তরীকে তুলে নিয়ে গেছিলি ভুল করে,তার পর রুমে নিয়ে কি করছছ জানি না।তোরে অনেক আটকানোর চেষ্টা ও করছিলাম, শুনলি তো না উল্টো একটা মেয়ের সম্মান হানী করছিলি তুই!

ফারাবী ধাপ করে বসে পড়লো এক পাশে,চুল খামচে ধরলো নিজের, সে নিজের অজান্তে না জানি কি কি করেছে তরীর সাথে!জীবনে মেয়েদের সাথে কথা বলা তো দূর চোখ তুলে তাকাতো না সে,আর একটা মেয়ের সম্মান নষ্ট হয়েছে তাও ওর জন্য। ফারাবী চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে রেখেছে।তন্ময় বুঝতে পারছে বন্ধুর অবস্থা, সেদিন যেহেতু আটকাতে পারেনি এখন আর বললেও তো মেয়েটার সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারবে না।

চার জনই চুপচাপ বসে আছে। ফারাবী চোখ বন্ধ করেই বললো
,,কি কি করেছি তোরা কি বলতে পারবি?নিজেকে এতোটা অপ রাধী কোনো দিন লাগেনি।তরী হয়তো কোনো দিন আমাকে ক্ষমা করবে না,আমি একটা যা তা,কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললাম নিজের।আব্বু তো এসেছিলো সেদিন কিছু বলেননি তিনি?

তন্ময় চুপ রইলো কিছুক্ষণ

,,আংকেল তো মেয়েটাকে, রুম থেকে নিয়ে এসেছিলো, তবে মনে হয়েছিলো তুই তেমন কোনো অস ভ্যতা করিস নি।তার পরও আংকেল যদি সময় মতো না আসতো তো হয়তো আরো খারা প কিছু ঘটতো।আংকেল তো তোকে দুইটা থাপ্পড় ও মেরেছিলো, সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াও মেয়েটাকে নিজে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলো।তার পরের ঘটনা আংকেল ছাড়া কেউ জানে না।কিন্তু তোর তো দেখছি কিছুই মনে নেই!

ফারাবী বোতল থেকে পানি নিয়ে চোখে মুখে ছিটালো, নিজেকে এতোটা ছোট লাগছে, সে কিনা একটা মেয়ের সাথে,,আর ভাবতে পারলো না,স্বপ্না হোক বা অন্য কেউ তাই বলে এমনটা কি ভাবে করলো, এতোটা অমানু*ষিক কাজ করে নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না এখন।তরী সামনে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবে? ক্ষমা তো চাইতেই হবে,এট এনি কস্ট!
ফারাবী উঠে দাঁড়ালো,হেঁটে যেতে লাগলো
পেছন থেকে ডাকলো তন্ময়

,,কোথায় যাচ্ছিস মাথা ঠান্ডা কর,সবাই মিলে তরীর কাছে মাফ চাইবো, বুঝিয়ে বলবো।

,,না আমি এখনই কথা বলবো ওর সাথে।

তন্ময়,তামিম,অয়ন এগিয়ে আসলো,বুঝিয়ে বললো, ভার্সিটেতে সিনক্রিয়েট করার কি দরকার,তরী রেগে যাবে স্বাভাবিক, এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।

,,আচ্ছা তরী আর তোর কথা শুনে মনে হলো তোরা আগে থেকে দুজন কে চিনিস,কিন্তু তোর তো ওই দিনের কিছু মনেই নেই।
তন্ময়ের কথার উত্তর দিলো না ফারাবী মৃদু হেসে বললো
,,কালকে বাসায় আসবি,সব বুঝতে পারবি তখন।আর তরীকে কাল সব বুঝিয়ে বলতে হবে।না হয় মাথা খেয়ে ফেলবে মহিলা আমার!

,,,আরে ভাই পুরো কথা তো শেষ করে যা,,,

,,ক্লাসে আয়, এখন কিছু বলতে পারবো না,আমার বাপ যে একটা জিনিস এখন বুঝলাম।

———
ক্লাস শেষ করে দাড়িয়ে আছে তরী,এই লোক যে সব জায়গায় এমন ত্যাড়ামি করে জানা থাকলে আসতোই না এর সাথে।পনেরো মিনিট ধরে দাঁড় করিয়ে কোন রাজ কার্য সারতে গেছে।
বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেললো।
মিরা তরীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে বললো

,,এই মেয়ে দাড়িয়ে আছো কেনো?

,,সখ জেগেছে তাই।

তার মধ্যে ফারাবী এসে দাড়ালো সামনে,তরী রাগে গজগজ করে বললো
,,আমি আপনার নামে আজই মায়ের কাছে বিচার দিবো,ব দ লোক আমার পা ব্যাথা করছে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে!

ফারাবী তাকালো একবার পাশে থাকা মেয়েটির দিকে, এই মেয়ে এক বছর অনেক জ্বা লিয়েছে,এবার সময় এসেছে একটু টাইট দেওয়ার।
ফারাবী তরীর দিকে হাত বাড়িয়ে বললো

,,সরি সরি জান!আর কখনো এমন করবো না।

তরী ভুত দেখার মতো চমকালো,এ তো ভুতের মুখে আইতুলকুরসি!
সরি বলছে তাও ফারাবী,কতো কিছু শুনতে হবে জীবনে।

তরী কে তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো
,,আরে উঠো তাড়াতাড়ি, দেরিতে ফিরলে দিদুন দুজনকে একসাথে কথা শুনিয়ে দিবে।

তরী মুখ ভেংচি কাটলো,উঠে বসলো বাইকে এবার নিজ থেকেই কাঁধে হাত রেখেছে।ফারাবী তরীর এক হাত টেনে নিয়ে নিজের পেটের কাছে রেখেছে তরী তাকালো আশেপাশে কি করছে কি এই লোক রাস্তার উপর।মিরা কে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কেমন লজ্জা পেয়ে গেলো।তরী ফারাবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে মিন মিন করে বলে

,,রাস্তা ঘাটে লু*চ্চামি শুরু করছেন কেন?হাত ছাড়ুন আমার সব সময় অস*ভ্যতা!

,,আমার এতো ঠেকা পড়েনি বুঝলা,ওই মেয়েটাকে দেখানোর জন্যই এতো কিছু।

,,আর কাউকে পান নি এসব করার জন্য, আপনার নাটকের অংশীদার আমি হতে পারবো না।

ফারাবী বাইক স্টার্ট করে দিয়েছে ততোক্ষণে তরী এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে কাঁধে হাত রাখলো শুধু।

তরী কে ফারাবী বাইকে চড়ে যেতে দেখে তামিম দৌড় লাগিয়েছে,পার্টি অফিস যাওয়ার কথা এক সাথে বললো কি এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করে আসছে,এই তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ!
তন্ময়,অয়ন তখন এসে দাঁড়িয়েছে গেইটে।
তামিম কে দৌড়াতে দেখে বললো

,,কি হলো তোর আবার পা গলা কুকুরের দৌড়ানি খাইলি নাকি?

,,তার থেকেও বড় কিছু!

তন্ময় বললো কি হয়েছে বল তাড়াতাড়ি

,,ফারাবী আসলে মানে ওর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে তরী কে বাইকে করে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।

তন্ময় রেগে বললো এই অয়ন এর জন্য পাবনার একটা টিকিট বুক কর জলদি, উল্টো পাল্টা স্বপ্ন দেখছে দিন দুপুরে!

,,বিশ্বাস কর ভাই না হয়, ওই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস কর।আমিও দুইবার চোখ ডলে কনফার্ম হয়েছি,তরী আর ফারাবীর মধ্যে নিশ্চিত কিছু আছে।দুইটায় মিলে আমাদের বোকা বানাচ্ছে।

তন্ময় বললো কাল সকালে দেখা যাবে এখন চল আগে কাজ শেষ করতে হবে ফারাবী যেহেতু বলেছে পার্টি অফিসে আসবে তার মানে আসবে।
*****
একটা সামান্য মেয়েকে তুলে আনতে পারলি না, কি জন্য রেখেছি তোদের। ওই মেয়েকে চাই আমার, ফারাবী কে বশ করতে হলে ওই মেয়েকে চাই।

,,জ্যাক পাটোয়ারী!

হঠাৎ আগন্তুকের মুখে নিজের নাম শুনে চমকালো কিছুটা। লোকটি দৃশ্যমান হতেই ভ্রু কুঁচকে কপালে ভাজ পড়লো তার।মুখে বললো

,,নাজিম তুই!

,,চিনতে পেরেছিস দেখছি।তা নিজের মেয়েকে তুলে আনতে এতো কাঠখড় পো ড়াতে হচ্ছে কেনো তোর!মেয়ে মানুষ হচ্ছে বোকা,যেভাবে নাচাতে চাইবি সেভাবেই পাড়বি।শক্তি দিয়ে যে কাজ পারা যায় না বুদ্ধি আর কিছু নাটকীয়তা দিয়ে অতি সহজে করা যায়।

,,আমার মেয়ে মানে কি বলতে চাস তুই!

,,কি ভুলো মন তোর,বউ কে টপকে দেওয়ার সাথে সাথে মেয়েটাকে ও ভুলে গেছিস?

,,ওই মেয়ে এখনো বেঁচে আছে?

,,শুধু বেঁচে নেই এখন তোর পরম শত্রু ফারাবীর একমাত্র বউ!

,,ঘরের শত্রু বিভীষণ!আমার রক্ত হয়ে শত্রুর সাথে হাত মিলিয়েছে।

বি কট বি’শ্রি ভাবে হাসলো নাজিম নামক লোকটি
,,তুই এখনও বোকাই থেকে গেলি জামাল।

চল তোকে বুঝিয়ে দেই কিভাবে কোন গুটি কখন চালতে হবে।
_____
পার্টি অফিসে বসে আছে,শুভ আবির সাথে তন্ময়।ফারাবীকে সাথে নিয়ে ঢুকলো তামিম অয়ন।

,,শুভ জানালো জ্যাক পাটোয়ারীর আসল নাম জামাল আহমেদ। সে একা নয় তার সাথে আরো অনেকে জড়িয়ে আছে,একজন মহিলা ও আছে এর পিছনে, মহিলাটির কি সম্পর্ক জ্যাকের সাথে তা এখনো জানা যায়নি।

তবে খুব দ্রুতই নিজেদের কাজে নামবে তারা।

,,জ্যাকের মেয়ের খোঁজ পেয়েছিস কিছু?

,,না!মেয়েটার সাথে জ্যাকের কোনো যোগাযোগ ছিলো না বলে ধারনা করছে মাহিন সরকার তার ইনভেস্টিগেশন অনুযায়ী মেয়েটা পরিবার থেকে পৃথক!
মনে হয় না মেয়েটা ক্ষ তিকারক।

ফারাবীর কপালে ভাজ পড়লো,কঠিন কন্ঠে বললো

,,শয়তা নের রক্ত ভালো হবে কি করে। খোঁজ লাগা মেয়েটার ডিটেইলস চাই আমার!এমপি সাহেব খুব চিন্তায় আছেন, এমনিতেই শহরে অনেক ধ্বং সলীলা
চালাচ্ছে ওই জ্যাক।একবার হাতের কাছে পাই ছাড়বো না কিছুতে, পায়ের নিচে রেখে পিষে ফেলবো কু*ত্তাটাকে।
********
সায়েবা শেখ রুমে ঢুকলেন তরীর,আয়রা, শিখা, সানায়া মিলে আড্ডা দিচ্ছে।

,,এই তরী ফারাবী কোথায় গেলো আবার?
,,বললো কাজ আছে।
,,এই বাপ ছেলেতে আমাকে জ্বা লিয়ে মা রলো,সারাদিন রাজনীতি এতো যদি রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকবে, দিন দুনিয়া ভুলে, তো সংসার করতে কে বলেছিলো এদের।

তিনি চলে গেলেন কিছুক্ষণ চেচামেচি করে।

সন্ধ্যায় তরীর মনে হলো এর থেকে ভালো ছিলো সন্ন্যাসী হওয়া।বিয়ে করে সত্যি সে ফেঁ সে গেছে, ভেবেছিলো ফারাবী বাসায় না আসলে শান্তিতে থাকবে কয়েকটা দিন।না এর দিদুনটা তো আরো এক কাঠি উপরে কিসের নাকি প্রেম বাড়বে কাছাকাছি থাকলে।মহিলা যদি জানতো প্রেম না খুনো*খুনি হয়ে যাবে এক সাথে থাকলে।
জাহেরা শেখ এসে বললো
,,ফারাবী নাকি পার্টি অফিসের কাজ শেষে নিজের ফ্লাটে থাকে প্রায় সময়,এখন বিয়ে হয়েছে তাই তরী ও থাকবে ওর সাথে যতদিন ফারাবী থাকবে।
এটা শোনার আগে তরী কলা গাছের সাথে ফাঁ স দিলো না কেনো।
বাড়িতে এতোগুলা মানুষের সামনেই পারলে ভর্তা করে ফেলে, ওখানে একা একা কি করবে ভাবা যায়।
তরী না করতে ও পারছে না সন্দেহ করে বসবেন, প্রথম থেকেই কেমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেছেন তাদের উপর।

সায়েবা শেখ খাবার প্যাক করে দিচ্ছেন তরী যাতে নিয়ে যায় সাথে করে।তরীর হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে এখন।জয়নাল শেখ হেলেদুলে আসলেন সিঁড়ি বেয়ে সোফায় বসে ডাকলেন তরী মা

তরী এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো মুখটা একটু খানি হয়ে গেছে তার মুখ লটকি য়ে রেখেছে।আজব পরিবার সরাসরি সবাই বলছে যাও যাও বিয়ের পর একটু প্রাইভেট সময় কাটাতে হয় তো।আন্ডাস্ট্যান্ডিং ভালো হয়!

,, তৈরি তো তুই মা?

,,হ্যাঁ বাবা।
জয়নাল এগিয়ে গেলেন তরী পেছনে, খাবারের ব্যাগ এগিয়ে দিলেন কাজের ছেলেটি।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের আকাশের নিচে গাড়ি চলছে,বাড়ি থেকে দূরত্ব প্রায় আধঘন্টার।নিরবতা কাটিয়ে জয়নাল বললেন

,,বাবা হিসাবে কিছু কথা বলি রাগ করবি না তো মা?

তরী তাকালো মুচকি হেসে বললো

,,মা বলে ডাকছো আবার অনুমতি ও নিচ্ছো বাবা?

জয়নাল হাসলেন

,,ফারাবী আর তোর সম্পর্কটা ঠিক কেমন তা আমি জানি।সবার সামনে ভালো থাকার অভিনয় করে যাচ্ছিস দুই পাগ ল।একবার সত্যি সত্যি মন থেকে সব কিছু করে দেখ।ফারাবী ভালো নাকি খারা প তা নিয়ে কিছু বলতে চাই না আমি।এইটুকুই বলবো বিয়ে জিনিস টা পবিত্র এর শক্তি অনেক বেশি,ফারাবী টাকে বুঝাতে পারবো কিনা জানি না তবে তোকে বলবো চেষ্টা করে দেখ।সব কিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

তরী বাহিরের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।

গাড়ি থেকে নেমে ফ্লাটের চাবি হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন জয়নাল।সন্ধ্যা হয়েছে বেশিক্ষণ হয়নি তরী রুমে ঢুকলো দরজা খুলে,লাইট জ্বালাতেই ওর চক্ষু চড়কগাছ

,,এতো এলোমেলো কেনো সব কিছু?ছেলেটা আস্ত একটা খাটাশ!

চলবে….