বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব-২১+২২

0
205

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২১
#লেখিকা: #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

– ‘লিসেন ভুল না থাকলে ওইদিন তোমার মতো থার্ডক্লাশ মেয়ের সাথে রাস্তায় বসে গল্প করতাম না। ওইদিন ভুল তোমারও ছিল আমারও ছিল। ভুল করেই দু’জনে দু’জনার সামনে চলে আসছিলাম। সেজন্য কিছুটা সময় তোমার সাথে বসে কথা বলে নিজের গিল্টি ফিলিংটা দমন করেছি। এর জন্য তুমি সব সময় আমার সামনে এসে আমাকে অপদস্ত করতে পারো না। এরপর এমন বিহেভ করলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। সব সময় নিজের যোগ্যতা হিসেব করে মানুষের সাথে কথা বলতে আসবে। আমার সামনে বারবার এসে আমার সময় নষ্ট করবে না। কথাটি মাথায় ঢুকিয়ে রাখো।’

উক্ত কথাটি বলে, রুহানির সামনে থেকে ইয়াসির হনহনিয়ে চলে যাচ্ছে। অশ্রুসিক্ত চোখে ইয়াসিরের যাওয়ার দিকে তাকাই আছে রুহানি। গলা ধরে আসছে, কণ্ঠনালি দিয়ে টুঁশব্দ টাও বের হচ্ছে না। দেশে আসার পর, শ্যামার পরিবার ছাড়া ইয়াসিরকে কাছের মনে হয়েছিল রুহানির কিন্তু ইয়াসির লোকটা সময়ের সাথে পল্টি নিলো। ভাবতে হাত পা অসাড় হয়ে আসছে রুহানির।

রেস্টুরেন্ট থেকে সকলে হাসিহাসি মুখ করে বের হল। আমান সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পূর্বে নাজিন কে বলে যায়, রাতে জেনো ও’কে কল দেয়। নাজিন মাথা নাড়িয়ে হা বোধক সম্মতি দেয়। আদনান, জুহি কে একটা রিক্সায় উঠিয়ে দিতে যায়। আহিল লাবণ্য কে বিদায় জানিয়ে বাইক নিয়ে চলে যায়। নিশান, আরিফ ওরা দু’জন সাইফের সাথে পার্কিং স্পটে চলে যায় গাড়ি নিয়ে আসার জন্যে, মেয়েরা সকলে একত্রিত হয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। এমন সময় রুহানি খেয়াল করল, একটা কালো গাড়ি থেকে নামছে ইয়াসির। চোখে পরিচিত কিন্তু নাম জানা নেই। লোকটাকে নামতে দেখে রুহানি ওর বন্ধু দেরকে একটু দাঁড়িয়ে থাকতে বলে, ইয়াসিরের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। ইয়াসিরের সাথে সাথে আরও দু’জন লোক গাড়ি থেকে নামে। ইয়াসির ও’দুজন লোকের সাথে কথা বলে এগিয়ে যাচ্ছে রেস্টুরেন্টের দিকে। রুহানি হঠাৎ ইয়াসিরের সামনে চলে আসে আকস্মিক ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে যায় ইয়াসিরের সাথের লোক দু’জন। তারা ইংলিশে ইয়াসিরের উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করে,

‘ এই মেয়েটা কে? হঠাৎ রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ালো কেন?’

ইয়াসিরের মেজাজ এমনিতে চাঙ্গে ওঠে আছে কোম্পানিতে একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এমপ্লয়ি গুলোর সাথে কথায় বনাবনি হয়নি। লোক দু’জন কে কিছু না বলে, ইয়াসির তার রাগ রুহানির ওপরে ঝাড়লো৷ রুহানিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুহানির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আশেপাশের লোকজন উৎসুকভাবে রুহানির দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে কোনো ফিল্মের শুটিং চলছে। শ্যামা রুহানির কাঁধে হাত রাখল করুণ কণ্ঠে বলে,

‘ উনি বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি। উনার সাথে হুটহাট রাস্তা ঘাটে কথা বলা যায় না। উনার সাথে কথা বলার জন্য আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট লাগে। উনার কথায় কিছু মনে করিস না। আসলে বড়লোক তো তাই অহংকারে পা মাটিতে পরে না।’

শ্যামার হাত কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে রুহানি প্রস্থান করল। সাইফ গাড়ি নিয়ে আসতে গাড়িতে ওঠে বসে। বড় গাড়ি হওয়ায় সকলে এক গাড়িতে জায়গা হয়ে গেলো। রাস্তায় হঠাৎ রুহানির কল আসে। ফোন হাতে নিয়ে ‘মাম্মাহ’ দেখে রুহানি গাড়ি ব্রেক করতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে উল্টো দিকে ঘুরে কল রিসিভ করে। অপরদিকে ইয়ানা মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে বুঝে যায়। অনুমান করতে পারে মেয়ের অবস্থা। কি হয়েছে জানতে চেয়ে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘ তোমার কণ্ঠে রেশ কেনো? তুমি কি কান্না করছো? কি হয়েছে মা কে বলো?’

‘ কিছু হয়নি মাম্মাহ তোমার কথা খুব মনে পরছে।’

‘ আমি তোমার মা রুহানি৷ আমাকে মিথ্যে বলে লাভ নেই। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যে আমি তোমার কণ্ঠ শুনে ধরতে পারি। কি হয়েছে বলো?’

গাম্ভীর্য কণ্ঠে কথাটি বলে ইয়ানা। মা’য়ের কথার পিঠে কিছুটা চুপ থেকে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে রুহানি ইয়াসিরের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত সব ঘটনা খুলে বলে। মেয়ের মুখের কথা শুনে বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে ওঠে ইয়ানার। গলা শুকিয়ে আসে। শুঁকনো ঢোক গিলে গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘ লোকটার নাম কী?’

রুহানি লোকটার সম্পর্কে কিছুই জানে না। নামটাও কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি। সে জন্য নাম কী বলতে পারল না। ইয়ানা স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,

‘ তোমার বাংলাদেশে থাকার প্রয়োজন নেই। যত তারাতাড়ি সম্ভব ফিরে আসো। ওখানকার মানুষ বড্ড সেলফিশ নিজের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছুই বুঝে না। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যে কাউকে আপন করে নিতে জানে ও স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দিতেও জানে। আমি চাইনা তুমি ওখানে থেকে এমন মানুষের সাথে আরও পরিচিত হও। ফিরে আসো বাচ্চা মা’র কাছে ফিরে আসো।’

নেটওয়ার্ক সমস্যা কলটা কেটে গেলো। ইয়ানার কথার পিঠে রুহানি আর কিছু বলতেও পারল না। কল কেটে যাওয়ার পর কয়েকবার কল দেয় ইয়ানা প্রতিবার বলে, সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

লেকে বসে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে ইয়াসির কথা বলছে দেখে ইয়াসিরের ড্রাইভার সঙ্গে সঙ্গে এ.স কে কল করে। তাকে জানায় ইয়াসিরের কথা। বড় বিজনেস ম্যান হওয়ার পাশাপাশি এ.স এর শত্রুর অভাব নেই। তারা সকলে চাইবে সুযোগ পেলে, ক্ষতি করার। ইয়াসিরের এমন নির্লোভ আচরণে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ.স। বাড়িতে এসে তার মামাকে বোঝায় এভাবে গার্ড ছাড়া বাহিরে যাওয়া সেভ না। তাছাড়া অপরিচিত কারো সাথে মেশা তো একদমই না। আরিশের কথা মাথায় রেখে ইয়াসির রুহানির সাথে দূর্ব্যবহার করছে। ইয়াসিরের ধারণা রুহানি ওদের শত্রু দলের একজন। ওর সাথে মিশে ওদের খবরপাচার করাই রুহানির ধান্দা।

.

দুই ঘন্টা আগে….

কোম্পানির অধিবেশনে যোগ দেন ইয়াসির। দুই সারিতে বসে আছে কোম্পানির ম্যানেজার ও এমপ্লয়ি। ইয়াসির কিয়দংশ চুপ থেকে শানিতকণ্ঠে বলল,

‘ আমি এ.স কে আমার ইন্ডাস্ট্রির সিও করতে চাই।’

ইয়াসিরের কথা শেষ না হতে মুখ থেকে কথা টেনে একজন বলে উঠল,’ স্যার! এ.স স্যারের ভীষণ রাগ আপনি কিভাবে উনাকে সিও বানাতে পারেন?’

লোকটার সাথে সঙ্গ দিয়ে আরও দুজন আপত্তি জানালো তারা আরিশকে সিও মানবে না। ইয়াসিন গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

‘ আমার কোম্পানির সিও আমি কাকে বানাবো এটা নিতান্ত আমার ডিসিশন। আর সেটা আপনারা মানতে বাধ্য।’

‘ আপনার ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি একা ডিসিশন নিতে পারবেন না স্যার। আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, এই ইন্ডাস্ট্রির ৫০% মিসেস ইয়ানার ও আপনার ৫০% আপনার। মিসেস ইয়ানাকে ছাড়া আপনি একা এই ইন্ডাস্ট্রির সিও এ.স কে নির্ধারণ করতে পারেন না।’

দ্বিতীয় সারি থেকে জিএম ওঠে দাঁড়িয়ে কর্কশকণ্ঠে কথাটি বলল। লোকটার কথার পিঠে কোনো কিছু বলতে পারল না ইয়াসির। কিয়দংশ নির্বাক নির্বাক্য বসে থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে চলে যায়। এ.স বদমেজাজি এটা ইন্ডাস্ট্রির সকলে জানে। এবং সে রেগে গেলে কি করতে পারে এটাও সবার জানা।

রুহানির মন খারাপ বন্ধু দের কি ভালো লাগে? উঁহু একটুও না। সবাই মিলে রুহানির মন ভালো করার চেষ্টা করছে। এমন সময় কলিংবেলটা বাজলো। দরজা খুলে দিতে একজন অপরিচিত লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। হাতে একটা পার্সেল নিশ্চয়ই ডেলিভারি ম্যান। রুহানিকে খুঁজছে, রুহানি আসতে একটা কাগজে সই রেখে পার্সেল টা রুহানির হাতে গুঁজে দিয়ে লোকটা দ্রুত পায়ে চলে যায়। পার্সেল হাতে রুহানি অবাক চোখে নাজিনের দিকে তাকাল। ভেতর রুম থেকে বাকিরা চটজলদি বেরিয়ে আসে। রুহানির হাতে পার্সেল দেখে পিঞ্চ মেরে কথা বলছে। রুহানি রাগি চোখে তাকাল। কর্কশকণ্ঠে বলল,

‘ আমি কি জানি এটা কে পাঠিয়েছে? কোথাও তো কারো নাম লেখা নাই। আমি কিভাবে জানবো আমার জন্য কে আর কেন এটা পাঠাইছে? সবাই এমন বোকা বোকা প্রশ্ন করছিস কেন? আশ্চর্য!’

বন্ধু বান্ধবী দের এক প্রকার হালকার উপরে ঝাপসা ধুয়ে দেয় রুহানি। রুমের মধ্যে ঢুকে পার্সেলের পেকিংটা খুললো। একটা চিরকুট সহ একটা ডালা প্যাকেজ। চিরকুট টা হাতে নিয়ে রুহানি দেখলো তাতে নিপুণ ভাবে লিখা,,

— ‘আমার পিচ্চি গোলুমলু হাতির বাচ্চাটা তোমার জন্য এই এতগুলা ভালোবাসা।’

চলবে… ইন শা আল্লাহ!

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ২২
#লেখিকা: #শারমিন_আক্তার_বর্ষা

‘রাত একটা বাজে চুপিচুপি ওই বাড়িতে যাওয়ার কি আছে? যদি কেউ দেখে চোর ভেবে পিটুনি দেয় তখন কও হবে?’

ত্যক্ত কণ্ঠে কথাটি বলে তাজ। একহাত মুঠ করে ধপ করে পাশে একটা চেয়ারে বসে পরল ওয়াসিফ। রাগারাগি করছে তাজ। এই রাতে আরিশের একা বেরিয়ে যাওয়া ভালো চোখে নিচ্ছে না তাজ। প্রবীর মৃদুস্বরে বলে,
‘জানি না ভাই। এ.স এর মাথায় কখন কি চলে?’

আমান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
‘আরিশ যদি রুহানিকে ভালোই না বাসে তাহলে এই মধ্য রাতে ওর সাথে দেখা করতে গেলো কেন?’

প্রবীর বলে,
‘হয়তো এটাও ওর কোনো প্লানিং এর মধ্যে পরে।’

ওয়াসিফ রাগী গলায় বলে,
‘একটা মেয়ের ফিলিংস নিয়ে মজা করায় আমি আরিশ কে সাপোর্ট করতে পারবো না। রাজেশ কে হাতেনাতে ধরার অন্য উপায় আমরা বের করতে পারবো। শুধুশুধু একটা মেয়েকে বিপদে ফেলার কি দরকার?’

প্রবীর ওয়াসিফের কাঁধের ওপর হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,
‘দেখ ভাই। তুই বা আমি আমরা কেউই আরিশের মুখের ওপরে কোনো কথা বলতে পারবো না। জানিসই তো ও যখন যে প্লান করে সেটা ১০০% ওয়ার্ক করে। এখন শুধু বসে বসে দেখার পালা, আরিশ শাহ আসলে রুহানি মেয়েটার সাথে কিভাবে খেলে? তবে যাই বলিস দাবার গুটি টা কিন্তু মাশা আল্লাহ। মেয়েটাকে গুটি না বানিয়ে বউ বানালে বেশ মানাতো।’

আমান মৃদুস্বরে বলে,
‘রুহানি মেয়েটা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন মেয়েটার ব্যবহার।’

প্রবীর, ওয়াসিফ, তাজ আমানকে ঝাপ্টে ধরে। পেটে পিঠে কয়েকটা কিল-ঘুষি দিয়ে বলে,
‘সা*লা নিজে তো একটা গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিয়েছিস। দেখলাম তো এতক্ষণ লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে লুতুপুতু প্রেম করছিলি।’

তাজ রাগী গলায় বলে,
‘আমাদের থেকে লুকাইলি কেন? বললে কি হত?’

প্রবীর বলে,
‘মেয়েটা কে?’

আমান লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। অস্ফুটে আওয়াজে বলে,
‘রুহানির বান্ধবী নাজিন।’

নাজিনের কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে যায়, প্রবীর, তাজ ও ওয়াসিফ। তিনজনে একসাথে বলে ওঠে,
‘ওই দ’জ্জা’ল মেয়েটা?’

আমান চোখ জোড়া ছোটছোট করে রাগী গলায় বলে,
‘ওই ও-কে একদম দজ্জাল বলবি না। তোদের হবু ভাবী হয়। ভাবী বলবি ভাবী।’

প্রবীর, ওয়াসিফ, আমান সশব্দে হাসি হেসে আমান কে আগের মতো ঝাপ্টে ধরে পিটুনি দিতে লাগে। আমান নিজেকে ছাড়িয়ে রুমের মধ্যে দৌঁড়াচ্ছে। আমান কে ধরার জন্য ওর পিছনে ওরা তিন বন্ধু ছুটছে।

ডেসিন টেবিলের ওপরে গিফটের প্রোডাক্ট গুলো রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে রুহানি। বারবার শুধু ইয়াসিরের ওর সাথে ব্যবহারের কথা মনে পরছে। সেজন্য রাতে খায়নি। এক কাত হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। যে দেখবে সে ভাববে মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। শ্যামা, নাজিন ওরা সবাই একবার করে রুহানিকে ডেকে গেছে। কিন্তু কারো ডাকে সাড়া দেয়নি রুহানি।

মধ্য রাত ঝুলন্ত বারান্দা দিয়ে পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠে আসে আরিশ। হুডি পরে আসছে, নাক পর্যন্ত ডাকা। বারান্দায় কোনে দরজা নেই। পর্দা হাত দিয়ে সরিয়ে রুমের মধ্যে চলে আসে। বেডের পাশে ছোট্ট টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে, কেননা একদম অন্ধকারে রুহানি ঘুমাতে পারে না। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকারে ওর ভয় লাগে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় রুহানি কে অমায়িক সুন্দর লাগছে।

রুহানির হাতের পাশে বসে আরিশ। রুহানির দু’পাশে হাত রেখে রুহানি নিজের দুইহাতের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। রুহানির মুখশ্রী থেকে আরিশ মুখশ্রী কিঞ্চিত পরিমাণ দূরে। আরিশের গরম নিঃশ্বাস রুহানির মুখে পরতে রুহানি নড়েচড়ে ওঠে। চোখ মেলে তাকাই। চোখের সামনে একটা হুডি ওয়ালা লোককে নিজের এত কাছে দেখে ‘আহহ’ বলে চিৎকার দিতে নিচ্ছিল রুহানি। আরিশ তার একহাত দিয়ে রুহানির মুখ চেপে ধরে। অন্য হাত দিয়ে হুডিটা মাথা থেকে খুলে ফেলে। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় রুহানি স্পষ্ট দেখতে পায় আরিশের মুখটি। চোখ জোড়া টমেটোর মতো বড়বড় করে তাকাই আরিশের দিকে। আরিশ রুহানির চোখ দু’টি দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। আরিশের হাসি দেখে কপাল কুঁচকানো করে রুহানি।

আরিশ হাসি থামিয়ে বলে,
‘চিৎকার করছো কেন? ভূত দেখেছো?’

রুহানি কথা বলতে পারছে না। আরিশের হাত তার মুখের ওপরে। রুহানি নড়বে তারও উপায় নেই। আরিশ রুহানির হাত দু’টো ধরে বালিশের ওপরে চেপে রাখছে। ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে মনে মনে রুহানি বলে,

‘আস্তো একটা গাঁধা। আমার মুখ চেপে ধরে জিজ্ঞেস করছে আমি ভূত দেখেছি কী না? হোয়াট ননসেন্স!’

আরিশ ভ্রু উঁচু করে শাসিত কণ্ঠে বলে,
‘আমি তোমার মুখের ওপর থেকে হাত সরাচ্ছি। তুমি কিন্তু ভুলেও চিৎকার করবা না। তুমি যদি চিৎকার করো তাহলে তোমার জন্য মোটেও ভালো হবে না। আমি আমার সঙ্গে করে সেলাই মেশিন নিয়ে আসছি। যদি ভুলেও চিৎকার করো আমি তোমার মুখ সেলাই করে দিবো।’

আরিশ রুহানির মুখের ওপর থেকে হাতটি সরাতে রুহানি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘আপনি বিজনেস ম্যান নাকি ডাক্তার?’

আরিশ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,
‘তোমার জন্য প্রেমিক!’

রুহানি রাগে দাঁত দিয়ে ঠোঁটে কামড় বসালো। বিছানার ওপরে একটা খাবারের ব্যাগ রাখে। ব্যাগ থেকে এক প্যাকেট বিরিয়ানি বের করে রুহানির সামনে রাখল। আঁড়চোখে দেখল, রুহানি রাগে ঠোঁট কামড়াচ্ছে।
রুহানিকে দেখে দুষ্ট হাসি দেয় আরিশ। বাম হাত রুহানির গালের ওপর রেখে নেশালো কণ্ঠে বলে,

‘আমি তোমাকে খু/ন করে ফেলবো রুহানি। এর পর যদি তোমার দাঁত দিয়ে আমার ওষ্ঠদ্বয়ে আঘাত হানো। তোমার এই নরম কোমল ঠোঁট দু’টোকে কামড়ে রক্তাক্ত করার অধিকার শুধু আমার।’

আরিশের দিকে ডেবডেব করে তাকাই রুহানি। অস্ফুটস্বরে বলে,
‘ফাইজলামি করছেন আপনি?’

আরিশ রাগে দাঁত কটমট করছে। একহাত রুহানির চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহানি ব্যথা পাচ্ছে। ওর একহাত আরিশের হাতের ওপর রেখে বিনয়ের সাথে বলে,

‘আমার ব্যথা লাগছে প্লিজ ছাড়ুন।’

আরিশ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে,
‘তোমার কি মনে হচ্ছে, এই মধ্য রাতে আমি পাইপ বেয়ে তোমার রুমে আসছি। তোমার সাথে ফাইজলামি করার জন্য? আমি কে তুমি জানো? এ.স এর জন্য হাজারও মেয়ে পরে আছে। চাইলে ২৪ঘন্টা মেয়েদের নিয়ে বিছানায় পরে থাকতে পারি। কিন্তু আমার সব মেয়েদের দেহের প্রতি লালসা নাই রুহানি। তোমাকে দেখার পর, আমার মন তোমাকে চায়। সব জায়গায় আমি তোমাকে খুঁজে পাই। আমার মন, শরীর সব কিছু শুধু তোমাকে চায়। মানে কি বুঝো তুমি রুহানি? আমি ভালোবাসি তোমাকে। ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলছি তুমি শুধু আমার। তোমার পুরো জীবন আমি আমার নামে লিখে দিয়েছি।’

বলেই রুহানির ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ লাগিয়ে দেয় আরিশ।

রুহানি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। হাত পা সমানে কাঁপছে। গলা শুকিয়ে আসছে। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। বুকের মধ্যে হার্ট জেনো জোরে জোরে বিট করছে। আরিশ বাম হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নিজ ওষ্ঠদ্বয় জোড়ায় হাত ছুঁয়ে দেয়। নেশালো কণ্ঠে জানতে চায়,

‘কেমন লাগলো?’

রুহানির ইচ্ছে করছে আরিশ কে মাথার ওপরে তুলে একটা আছাড় মারতে। একটা লোক এতটা নির্লজ্জ হয় কিভাবে? একে তো বিনা অনুমতি নিয়ে ও-কে চুম্বন করেছে। তার ওপর বেহায়ার মতো জিজ্ঞেস কেমন লাগছে? অসভ্য! রুহানি মনে মনে আরিশের পিন্ডি চটকালো। অস্ফুট আওয়াজে বলে,
‘আপনি খুব খারাপ।’

আরিশ রুহানির কোমড় চেপে ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহানির ঠোঁটের কাছে আরিশ তার ঠোঁট জোড়া নিয়ে ফিসফিসে আওয়াজে বলে,
‘জানু তোমার ঠোঁট ভীষণ নেশালো। আমি আবারও মত্ত হতে চাই ডুব দিতে চাই তোমার ঠোঁটে। হারিয়ে যেতে চাই তোমার ঠোঁটের নেশায়।’ বলে আবারও আরিশ রুহানির ঠোঁট জোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে নেয়। রুহানি বিছানার চাদর একহাতে খাবলে ধরে। অন্য হাতে আরিশের বুকের বা পাশে খাবলে ধরে। হুডির ওপর দিয়ে আরিশের বুকের বা পাশে রুহানির নখের আচর লেগে যায়।

চব্বিশ ঘণ্টা রুহানির ওপর নজর রাখে আরিশের লোকজন। তার ওপরেও রুহানির খবর শ্যামা আরিশকে জানায়। রুহানির মন খারাপ শুনে অস্বস্তি অনুভব করে আরিশ। সে সাথে শ্যামা এটাও বলে, রুহানি রাতে কিছু খায়নি ও দরজা ভেতর থেকে লক করে রাখছে।

অফিসের একটা মিটিং শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে রুহানির সামনে দেখা করতে আসে। আসার সময় বন্ধু দের কল দিয়ে জানিয়ে দেয়। বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে ওয়ান টাইম প্লেটে বিরিয়ানি ঢেলে দেয়। রুহানি খেতে চায় না। আরিশ নিজ হাতে খাইয়ে দিতে নেয়। রুহানি রাগে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

আরিশ দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
‘এখন যদি ভালোয় ভালোয় না খাও। তাহলে কিন্তু!’

আরোহী রাগী গলায় বলে,
‘তাহলে কিন্তু কি?’

আরিশ দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,
‘তুমি যদি আমার তোমার ঠোঁটের মধু বারবার খাওয়াতে চাও তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এই মধু তো আমার সারাক্ষণ খেতে প্রস্তুত।’

রুহানি বড়বড় চোখ করে শুধালো,
‘মানে?’

আরিশ কাঠকাঠ কণ্ঠে বলে,
‘হয় তুমি আমার হাতে খাবার খাবে নয়তো আমার চুমু খেয়ে পেট ভরাবে। নাউ ডিসিশনস আর ইউর’স।’

রুহানি রাগে ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বসে রইল। ইচ্ছে না থাকলেও খেতে রাজি হল। আরিশ মুচকি হেসে রুহানিকে ভালোবেসে খাইয়ে দিল।
খাবার শেষে গম্ভীর গলায় বলে,
‘এজন্যই বলে, সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে। আঙুল টা একটু বাঁকাতে হয়।’

রুহানি আরিশের কথার অর্থ বুঝতে পারিনি। মাথা তুলে আরিশের দিকে তাকাতে স্তব্ধ হয়ে গেলো। ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। রুহানি ও আরিশের চোখে চোখ পরতে আরিশ টুক করে একটা চোখ টিপ মারল। হা হয়ে তাকালো রুহানি। আরিশ ওঠে এসে রুহানির কপালে শুঁকনো এক চুমু দিয়ে বলে,
‘কখনো না খেয়ে নিজের শরীর কে কষ্ট দিবে না। আর যদি এরপর কখনো না খেয়ে থাকো তাহলে আমি এসে এভাবে চুমু দিয়ে খাওয়াবো। মনে থাকবে?’

রুহানি ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলে ডান দিকে মাথা কাত করে। যার অর্থ হ্যাঁ। রুহানির গালে হাত ছুঁয়ে কিয়ৎক্ষণ রুহানির মুখশ্রীর দিকে তাকাই রইল। আরিশের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে ফেলে। আরিশ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে এক পলক রুহানিকে দেখে যেভাবে আসে সেভাবে চলে যায়।

রুহানির মন বলছে, আরিশকে আঁটকে রাখতে যেতে দিতে একদম ইচ্ছে করছে না। এই মূহুর্তে আরিশকে দুইহাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে মন চাচ্ছে রুহানির। ভেবে পায় না রুহানি,লোকটা কেনো তাকে এত বেশি ভালোবাসে?

চলবে… ইন শা আল্লাহ