#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৬
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি( লেখিকা )
রাত জেগে কন্সার্ট দেখায় দেড়িতে ঘুম ভাঙে জারিরের। তাও আবার রাহি’র ডাকে। জারির আড়মোড়া ছেড়ে ঘুম থেকে উঠে, ঘুম ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
” কয়টা বাজে।
রাহি মৃদু স্বরে সুধালো,
” সাতটা বাজে। খুব বেশি দেড়ি হয়নি।
” ওহ। বলে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায় জারির। জারির যাওয়ার পর রাহি বিছানা গুছিয়ে নিচে চলে যায় জারিরের জন্য কফি আনতে। মিনিট পাচেক পরই ফিরে আসে রাহি, হাতে তার কফির মগ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কফিটা মাত্র তৈরি করা হয়েছে। হ্যাঁ রাহি নিজে কফি করে আনছে। রুমে এসে জারির কে দেখতে না পেয়ে প্রথমে ওয়াশরুম চেক করে সেখানে না দেখে চলে যায় বেলকনিতে। রাহি বেলকনির দরজার সামনে গিয়ে দেখে জারির বেলকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে। রাহি মুচকি হেসে বলে,
” আপনার কফি।
জারির সৌজন্য তার হেসে বলল, ধন্যবাদ কষ্ট করে কফি বানানোর জন্য। রাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কফিটা যে আমি করছি কিভাবে বুঝলেন?
রাহি’র প্রশ্নে জারির মুচকি হেসে বলে, মনে হলো কফিটা তুমিই করেছো। যেহেতু কফি তুমি নিয়ে এসেছো।
” কফিটা মম বা বাসার অন্য কেউ ই তো বানাতে পারে।
” অবশ্যই পারে। বলে গরম ধোঁয়া ওঠা কফির মগে চম্বুক দেয় জারির। জারির কফি খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে,
” তুমি কালকে কোথায় ছিলে রাফিয়া?
রাহি চমকে ওঠে জারির প্রশ্নে। তারপর চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
” এটা আবার কেমন প্রশ্ন জারির। আমি তো বাসায়ই ছিলাম।
” সেটা তো জানি বাট সারাটা রাত কোথায় কাটালে। আই মিন বাসার কেউ তোমাকে দেখেনি, তুমি যে রুমে না এসে অন্য কোথাও রয়েছো।
” প্যারা নিয়েন না। কেউ দেখেনি আমাকে। দেখার কোনো চান্সই নেই।
জারির রাহি’র প্রতিটা কাজেই খুব অবাক হচ্ছে। জারিরের না বলা কথা গুলো নিমিষেই খুব সুন্দর করে বুঝে যাচ্ছে। এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে! আদো কি সম্ভব! রাহি’র জায়গায় অন্য কেউ হলে কেঁদে ভাসাতো অথচ রাহি নিশ্চুপ থেকে হাসি মুখে মেনে নিচ্ছে। অন্য মেয়ে হলে জারিরের কাছে স্বামীর অধিকার চাইতো অথচ রাহি! কি আজব! জারির কল্পনা জল্পনা করতে করতে কফির মগ শেষ করে ফেলে। রাহি রুমের ভিতর গিছিল দুমিনিট পরে ফিরে এসে জারিরের কাছ থেকে মগ নিয়ে নিচে চলে যায়। রাহি’র যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে জারির।
———–
রাহি কিচেনে এসে কফির মগ নির্ধারিত জায়গায় রেখে মা’য়ের পাশে এসে দাড়ায়। রাহি’র মা আর ছোটো চাচি রান্না করছেন। রাহি কিছু সময় সেখানে থেকে রিতুর কাছে চলে যায়। রিতু আর রিপ্তি দু’জনে মেতে উঠেছে নানান গল্পে। রাহি দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থেকে হালকা কেশে বলল,
” দু’জনের কি নিয়ে কথা হচ্ছে শুনি একটু। রিপ্তি রাহি’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” ভাবিমণি, তুমি ওখানে দাড়িয়ে আছো কেন ভিতরে আসো?
রাহি ভিতরে আসতে আসতে বলে, এখানে না থেকে চলো সবাই মিলে ছাদে যায়। সেখানে মাদুর পেতে জমিয়ে আড্ডা দিতে পারব ।
” কথাটা মন্দ নয়! তাহলে চলো, বলে রিতু আর রিপ্তি দু’জনে খাট থেকে নেমে আসে। তারপর তিনজনে ছাদের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে। সিঁড়ির কাছে গিয়ে থেমে যায় রাহি। রাহিকে থামতে দেখে রিতু বলল,
” কি হলো থামলি কেন?
রাহি জবাব দেয়, তোরা দু’জনে গিয়ে বোস আমি আসছি। রিতু মাথা নাড়িয়ে ছাদে চলে যায়। আর রাহি নিজের রুমে চলে আসে। এসে দেখে জারির এখনো বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাহি পিছন থেকে গিয়ে বলে,
” এখানে একা একা বোরিং ফিল না করে, আমার সাথে ছাঁদে চলুন। ভালো লাগবে। আচমকা কথা বলায় কিছু টা চমকে ওঠে জারির। তবে নিজেকে সামলে হালকা হেঁসে বলে,
” চলো।
অতঃপর দু’জনে ছাদে আসে। রিতু আর রিপ্তি দু’জন এ ছাদে এসে মাদুর বিছিয়েছে। তারপর দু’জনে আসন পেতে বসে। তার কিছুক্ষণ পরই জারির কে নিয়ে ছাদে আসে রাহি।এসে দু’জনেই বসে পরে। চারজনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কথা বলছে রিপ্তি। রিপ্তি মেয়েটা খুব চঞ্চল প্রকৃতির। একাধারে কথা বলতেই থাকে। রাহি এই তিনদিনে যতটুকু বুঝতে পারছে, মেয়েটা মিশুকে। খুব সহজেই যে কারোর সাথে মিশে যায়। আর রিতু, রিতুও সেম প্রকৃতির তবে রাহি’র কথা শোনার পর থেকে কথা কম বলছে। তবুও যথা সম্ভব নিজেকে সবার সাথে মানিয়ে নিচ্ছে। রাহি আর জারির শুধু হ্যাঁ না উত্তর দিচ্ছে। এক পর্যায়ে রিপ্তি বলে ওঠে,
” ভাবিমণি, এখন তো ফেব্রুয়ারি মাস তাই না।
” হ্যাঁ তো।
” আরে ফেব্রুয়ারী মাসেই তো বইমেলা। জানো বইমেলায় হাজার হাজার মানুষ মানুষ, লেখক লেখিকা , অনেক বই পাওয়া যায়।
রিপ্তির কথার মাঝেই জারির বলল, তুই এত কিছু জানিস কি করে?
” কেন ফোন থেকে দেখছি। ভাবিমণি, তুমি নিশ্চয়ই বইমেলায় যাও নি।
” হ্যাঁ, আমি কখনো যায়নি।
” তোমার ইচ্ছে করে না যেতে।
রাহি কিছুক্ষণ ভেবে জবাব দেয়,
” অবশ্যই করে। কিন্তু কেন বলো তো ভ্রু কুচকে
রিপ্তি জারিরের দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইয়া ভাবিমণি কখনো বইমেলায় যায়নি। তুমি ভাবিমণি কে বইমেলায় চলো প্লিজ।
রিপ্তির কথায় চমকে যায়। চকিত দৃষ্টিতে একবার রাহি’র দিকে তাকায়। রাহি চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। রিপ্তির কথায় রাহিও আশ্চর্য হয়ে গেছে তবে সেটা প্রকাশ করে নি। রিতু জারিরের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলে দেখার জন্য। জারির আমতা আমতা করে বলে,
” আমি কেন? আর বইমেলায় যে তুই যেতে চাইছিস সেটা না বলে ভাবিমণির কথা বলছিস কেন?
জারিরের কথা শুনে রাহি জারিরের দিকে তাকায়। রাহি’র তাকানো দেখে রিপ্তি ফের বলে,
” তুমি ভাবিমণি কে নিয়ে যাবে না বললেই পারো। খামাকা আমাকে কথা শুনাচ্ছো।
” আরে আমি কখন বললাম তোর ভাবিমণি কে নেবো না।
দুই ভাই বোনের কথা শুনে রিতু মিটিমিটি হাসছে।
” রিপ্তি দুষ্টু হেসে বলে, তাহলে রাজি হচ্ছো না কেন?
” আরে তুই কথাটা এত জটিল করে ফেললি কেন? আমি তো তেমন কিছুই বলিনি। আর তুই।
আচ্ছা সবাইকে নিয়ে যাব।
” সত্যি বলে লাফিয়ে ওঠে রিপ্তি। রিপ্তির লাফানো দেখে রাহি খিলখিল করে হেসে ওঠে। রাহির হাসির শব্দ শুনে জারির রাহি’র তাকায়। জারির কে নিজের দিকে তাকাতে দেখে হাসি বন্ধ হয়ে যায় রাহি’র। নিচ থেকে খাওয়ার জন্য ডাক দেওয়ায় যে যার মতো ছাদ থেকে নেমে আসে। তবে কথা হলো, দুপুর তিনটায় তারা বাসা থেকে বের হবে বইমেলায় উদ্দেশ্য।
———-
দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে দুপুর। দুপুরের খাবার খাওয়ার পরেই সবাই যে যার মতো রেডি হওয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। রাহি সিম্পল সেজেছে। নীল রঙের শাড়ি পরেছে সে। জারির ব্ল্যাক শার্ট প্যান্ট পরছে। রাহি’র গোছানো শেষ হলে রিতুর কাছে আসে। রিতু শুভ্র রঙের জর্জেট থ্রি পিস পড়েছে, আর রিপ্তি শুভ্র রঙের সুতি থ্রি পিস পড়েছে। দু’জনকে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। রাহি রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
” মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ, কারোর নজর না লাগুক! মারাত্মক লাগছে দু’জনকে।
রিতু হাসতে হাসতে বলে, তোমাকেও কম সুন্দর লাগছে না সোনা।
আচ্ছা সাজগোছ শেষ হলে বেরোনো যাক। এখন না বেরোলে বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক লেট হয়ে যাবে কিন্তু। সবাই রাহি’র কথায় একমত হয়। রাহি’র একটাই চাচাতো ভাই রাফি। সেও যাচ্ছে বইমেলায়। পাঁচ জন বের হয় ঢাকা বইমেলায় উদ্দেশ্য। রাহি দের বাসা থেকে থেকে প্রায় চল্লিশ মিনিটেও বেশি সময় লাগে। সাড়ে তিনটার পরপরই পৌঁছে যায় সকলে। গাড়ি থেকে নেমে সবাই এক জায়গায় দাড়ায়। তারপর একসাথে মেলার ভিতরে ঢুকে। কিন্তু মাঝপথে গিয়ে রাহি চিৎকার করে ওঠে। রাহি সবার পিছনে ছিল। রাহি’র চিৎকার শুনে সবাই পিছনে ফিরে তাকায়।
চলবে ইনশা আল্লাহ