#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৭
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি(লেখিকা)
বইমেলায় মানুষ গিজগিজ করছে। এত মানুষ দেখে রাহি’র খুব অস্বস্তি হয়। রাহি বেশি মানুষের মধ্যে থাকতে পারে না। হুট করে এত মানুষ দেখে খুব সাবধানে হেঁটে যাচ্ছে। রাহি সবার পিছনে, সামনে যে যার মতো হেঁটে চলেছে। রাহি আনমনা হয়ে হাঁটছে। কোনো একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। এত এত মানুষ তারপরেও আবার শাড়ি পরে এসেছে সব মিলিয়ে বিপাকে পরে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে এক সময় কারোর সাথে ধাক্কা লেগে যায়। রাহি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যেতে যায়। ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে চিৎকার করে ওঠে।
হঠাৎ রাহি’র চিৎকার শুনে পিছনে ফিরে তাকায় জারির সহ বাকি তিনজনে। সবার মুখে আতংকের ছাপ। জারির চেচিয়ে বলে ওঠে,
” রাফিয়া!
রাহি যখন বুঝতে পারে সে নিচে পড়ে নি তখন চোখ পিটপিট করে তাকায়। চোখ মেলে তাকানোর পর তার সামনে সুদর্শন যুবক কে দেখতে পায়। যে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছে তাকে। রাহি কোথায় হুশ আসতেই তড়িঘড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে তাকাতেই দেখতে পায় অধিকাংশ মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ততক্ষণে জারির রা চলে আসে রাহি’র কাছে। জারির এসেই প্রশ্ন করে,
” তুমি ঠিক আছো রাফিয়া?
রাহি জারিরের দিকে তাকায়। রাহি যখন বুঝতে পারে তাকে কেউ ধরে ফেলেছে তখন একমুহূর্তের জন্য ভেবেছিলো জারির তাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছে কিন্তু চোখ মেলে তাকানোর পর অন্য পুরুষ কে দেখে মুহূর্তেই তার ভাবনা জলে পরিণত হয়েছে। রাহি মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলে। তারপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,
” ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি না বাঁচালে এত মানুষের ভিতরে আমাকে লজ্জায় পড়তে হতো। সবার সামনে অপমানিত হতে হতো। থ্যাঙ্কুউ সো মাচ ভাইয়া। থ্যাঙ্কুউ সো মাচ৷
ছেলেটা মুচকি হেসে জবাব দেয়,
” ওয়েলকাম! ওয়েলকাম। আপনাকে বাঁচাতে পেরে আমি অনেক হ্যাপি। কিন্তু এত সুন্দর একটা মেয়ের মুখে ভাইয়া ডাক কি মানায়? লাস্টের কথা টা বিড়বিড় করে বলে। তারজন্য কেউ শুনতে পায় না। রাহি বলল,
” কিছু বললেন।
ছেলেটা মুচকি হেসে বলে, না না কিছু বলিনি। রাহির পাশ থেকে রিতু বলে,
” আপনি রাহিপুর সম্মান বাঁচিয়েছেন। তারজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
রাহি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা এক পলক রাহি’র দিকে তাকিয়ে ফের রিতুর দিকে তাকিয়ে বলে,
” রাহি কে রাফিয়া কে? মানে আপনি বলছেন রাহি, আর ওনি (জারির কে দেখিয়ে) বলছেন রাফিয়া। তাহলে আমি বুঝবো কেমন আসলে রাহি কে আর রাফিয়াই বা কে?
রিতুর পাশ থেকে রাফি দাত কেলিয়ে বলে, আমি রাফি! রাফির কথায় রিপ্তি হেসে ওঠে। উপস্থিত সকলেই মিটিমিটি হাসছে। আর রাহি কে বাঁচানো ছেলেটা বোকা বোকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আসলে তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রাহি বিষয় টা বুঝতে পেরে বলল,
” আমি আপনাকে বলছি, আমার নাম রাফিয়া রাহি। ও আপনাকে রাহি বলছে আর জারির আপনাকে রাফিয়া বলছে। আর রাফি আমার ভাই ক্লিয়ার।
ছেলেটা মুচকি হেসে বলে,
” ক্লিয়ার। আর হ্যা মিস রাহি একটু দেখে শুনে চলাফেরা করবেন। ভিড়ের মাঝে অনেক মানুষ আছে বোঝেনই তো।
” জ্বি অবশ্যই। বাট আপনার নামটাই তো জানা হলো না। আপনার নাম কি ভাইয়া?
” জুনাইদ আহমেদ। আল্লাহ চাইলে আমাদের আবার দেখা হবে। আসি তাহলে।
ছেলেটা চলে যায়। আর সেখান থেকে সবাই চলে আসে নির্ধারিত জায়গায়। বইয়ের অনেক অনেক স্টল। প্রিয় লেখক লেখিকার বই। মেলায় আসা প্রত্যেকে তাদের প্রিয় লেখক লেখিকার বই পড়ছে।
রাহি একটা স্টলের কাছে এসে বেছে বেছে একটা বই নেয়। বইয়ের উপরে মোটা মোটা অক্ষরে লেখা বইয়ের নাম ,
বৃষ্টি বিলাস
লেখক: হুমায়ূন আহমেদ
রাহি বই টা খুলে ভিতর থেকে কয়েক পৃষ্ঠা দেখে। তারপর চোখ আটকে যায় একটা লাইনে। লাইনটা ছিল,
ভালোবাসা, এক অদ্ভুত অনুভূতির অপর নাম। যা কখনো কাউকে বলে কয়ে আসে না। কখনো কখনো সেটা হঠাৎ করেই চলে আসে, আবার তেমন করে হঠাৎ করেই চলে যায়। কার যে কখন, কাকে ভালো লেগে যেতে পারে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। প্রথমে যাকে দেখে বিরক্তি ভাব চলে আসে হয়তো তার জন্যই পরে অনুভূত হয় এক ধরণের আবেগ কিংবা ভালোবাসা।
এতটুকু পড়ে রাহি মৃদু হাসে। আসলেই ঠিক কথা, ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না। রাহি’র পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল জারির। জারিরও উঁকি দিয়ে লাইন গুলো পড়ে। তখন জারিরের চোখের পাতায় ভেসে ওঠে এক অপরুপ নারীর চেহারা। জারির তাকে কখনো দেখেনি। সবসময় দুর থেকে দেখেছে, জারিরের খুব ইচ্ছা একদিন তাকে দুচোখ ভড়ে দেখবে। তার নরম গাল দুটো আলতো হাতে ছুয়ে দেখবে। জারির ভাবনায় চলে গিছিল, রাহি’র ডাকে ভাবনার ছেদ পড়ে।রাহি বলল,
” আপনি কখন আসলেন।
জারির ভাবনা থেকে বেড়িয়ে এসে বলল,
” এই তো একটু আগে।
” ওহ।।
জারির আশেপাশে তাকিয়ে রাহি কে জিজ্ঞেস করে,
” বই নেবে না।
” হ্যাঁ, বইমেলায় এসেছি বই না নিলে হয়।
” কোন বই টা নেবে, হাতে যেই টা আছে ওইটা নেবে।
” উহু, এটা নিলে মন্দ হয় না।
” আচ্ছা আর যে যে বই ভালো লাগে সে গুলোও নিতে পারো। রাহি মুচকি হেসে স্টল থেকে হুমায়ূন আহমেদের আরেকটা বই নেয়। জারির দুটো বইয়ের দাম মিটিয়ে দু’জনে চলে আসে রিতুদের কাছে। জারির রিতু রিপ্তি রাফি তিনজন কেউ বই কিনে দেয়। তারপর আরো কিছুক্ষণ সেখানে ঘুরাঘুরি করে বইমেলা থেকে বের হয়। জারির সবাইকে নিয়ে রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য বের হয়। রেস্টুরেন্টে থেকে খাবার পাট চুকিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।
_______
রাত আটটা। রাহি রা সবাই একটু আগেই বাসায় ফিরেছে। বাসায় এসে যে যার মতো ফ্রেশ হতে চলে যায়। রাহি রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে যায়।
জারির ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসে। ফোনের ওয়াইফাই কানেক্টেড করে ফেসবুকে ঢুকে। ফেসবুকে ঢুকার সাথে প্রথমেই একটা স্ট্যাটাস দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। হৃদি চৌধুরীর পেজ থেকে একটা পোস্ট জারিরের সামনে পড়ে। সেখানে লেখা ছিল,
❝ আমি নিতান্তই ক্ষুদ্র একজন গায়িকা। নিজের অনুভূতি গুলো গান গেয়ে প্রকাশ করি। গান আমার নেশা, যে নেশা চাইলেও আমি কাটিয়ে উঠতে পারি না। বাংলাদেশে এসে আজ প্রথম বার বইমেলায় গিছিলাম, পরিবেশটা এত ভালো লাগছে বলার বাইরে। এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছি আজ। ভিড়ে মাঝে নিজেকে মিলেয়ে দিয়েছি। আমি গর্বিত, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। অ্যাই এম সো লাকি। অ্যাই লাভ মাই বাংলাদেশ। ❞
~হৃদি চৌধুরী ~
পোস্ট টা কয়েক মিনিটের হলেও হাজার হাজার লাইক কমেন্ট পড়ে। অনেকে অনেক কথা লিখেছে। কেউ কেউ লিখেছে, আপু আপনি যদি আগে বলতেন তাহলে আপনার সাথে দেখা করতে পারতাম। এমন অনেক কমেন্ট। জারির সবসময় হৃদি চৌধুরীর পোস্ট দেখে কিন্তু কখনো কোনো মন্তব্য করে না। কিন্তু আজ কি মনে করে লিখল,
” তোমাকে দেখার এক অদম্য ইচ্ছা। আল্লাহ যদি চায়, তাহলে অবশ্যই আমাদের দেখা হবে ইন শা আল্লাহ।
কমেন্টটা করার সাথে সাথে রিপলে আসে, ইন শা আল্লাহ।
জারির হৃদি চৌধুরীর রিপলে পাওয়ায় খুশিতে গদগদ করে ওঠে। জারির আবারও কমেন্ট করে বাট সেখান থেকে কোনো রেসপন্স আসে না। রিপলে না পাওয়ায় মুখটা বেজার করে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর রাহি রুমে আসে। জারিরকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
” কি হয়েছে আপনার, মুখ গোমড়া কেন?
রাহি’র কোথায় চমকে ওঠে জারির। বোকা বোকা হেসে বলে, কই, এই যে হাসছি বলে দাঁত কেলিয়ে হাসে। রাহি সেটা দেখে মনে মনে হাসে। তারপর একটু শব্দ করে হাসতে হাসতে কিছু না বেলকনিতে চলে যায়।
রাহি’র যাওয়ার পানে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে জারির। রাহি কেন হাসল , সবটা মাথার উপর দিয়ে গেলো। জারির অবুজ দৃষ্টিতে এখনো তাকিয়ে আছে।
চলবে ইনশা আল্লাহ