বিষাদময় সুর পর্ব-০৮

0
699

#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৮
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি

দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেছে। রাহি’রা ফিরে এসেছে চৌধুরী বাড়িতে। সবাই সবার মতো ব্যস্ত। এ বাড়িতে রাহি’র তেমন কোনো কাজ নেই। রাহি কে কিছু করতে হয় না। কারণ রাহি তারা কিছু করতে দেয় না। রাহি কিছু করতে চাইলে মানা করে দেয়, বলে, কিছু করতে হবে না। তুমি আগে সব কিছু শিখে নাও, তারপর করো। রাহি তখন মুচকি হাসে, মনে মনে তাচ্ছিল্যের হেসে বলে,

” যা আমার নয়, তা কখনো হবে আন্টি। আমি ক’দিনের অতিথি মাত্র। কাজ শেষ হলে কখন চলে যাব আপনারা ভাবতেও পারবেন না।

জারিরের রুমের বেলকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে রাহি। তার চোখ দুর আকাশের পানে। এখন পড়ন্ত বিকেল, পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। দেখতে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।

__________________________

সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে। রাহি আর রিপ্তি দু’জন জারিরের রুমে বসে ফোনে লুডু খেলছে। কালকে ফ্রাইডে, স্কুল বন্ধ এজন্য পড়তে না বসে তার ভাবিমণি র সাথে খেলতে এসেছে। রিপ্তি আসাতে রাহি’র ভালো লাগছে। রাহি’র নিরিবিলি থাকতে ভালো লাগে না। রিপ্তি এসে রাহি’র কাছে বায়না করে,

” ভাবিমণি চলো আমরা দু’জনে ছাদে গিয়ে খেলা করি।

রাহি শান্ত সুরে সুধালো,

” কি খেলা রিপ্তি?

” রিপ্তি ভাবুক হয়ে বলল, আরে আগে ছাদে চলো তো, তারপর দেখা যাবে কি করা যায়।

রিপ্তি র কথায় রাহি বুঝতে পারে, বেচারা কিছু না ভেবেই খেলতে এসেছে। রাহি মুচকি হেসে বলে,

” রিপ্তি এই ভড় সন্ধ্যেয় আমরা ছাদে না গিয়ে রুমে বসেই কোনো খেলা করি।

রিপ্তি অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, রুমে বসে কি খেলা করবে ভাবিমণি। তুমি কি রুমে দৌড়াতে পারবে।

রিপ্তির কথায় টাস্কি খেয়ে যায় রাহি। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, তুমি দৌড়ে কি খেলবে রিপ্তি?

” সেটা তো জানি না। এখনো ভাবিনি।

রাহি রিপ্তির কাধে হাত রেখে বলে,

” আমার কি আর সে বয়স আছে রিপ্তি। তুমি না হয় এখনো বাচ্চা, কিন্তু আমি তো বাচ্চা নয়। আরও এ বাড়ির বউ, তাহলে বলো আমি যদি দৌড়ায় আর তাই যদি অন্য লোকে দেখে তাহলে সবাই কি বলবে। আমাকেই তো খারাপ বলবে, আর তোমাদের পরিবার নিয়ে কথা বলেবে।

” তুমি ঠিকই বলছো ভাবিমণি। তার থেকে আমরা রুমে বসেই খেলা করি।

রাহি রিপ্তির গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল, এই তো গুড গার্ল। তারপর রাহি রিপ্তিকে লুডু খেলার কথা বলে। রিপ্তিও হ্যাঁ বলে। অতঃপর দু’জন মিলে খেলা শুরু করে।

প্রথম বার খেলা শেষ করে দ্বিতীয় বার আবার শুরু করে। আর তখনই জারির রুমে আসে,দুজনকে খেলা করতে দেখে কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। রিপ্তি ভাইকে দেখে খেলা বাদ দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

“———————-”

পাঁচমিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে জারির। রুমে এসে রাহি কে ফোন চাপতে দেখে আর ডিস্টার্ব করে না। রাহি জারির কে দেখে ফোন পাশে রেখে দেয়। জারির এসে বিছানায় বসে। রাহি জারিরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,

” আচ্ছা, আপনি কি করেন?

রাহি’র প্রশ্নে সহসা তাকায় জারির৷ তারপর জবাব দেয়,

” তুমি জানো না আমি কি করি?

” না।

জারির অবাক হয়ে বলল, আমার ব্যাপারে কি কি জানো?

” আপনার নাম ব্যতিত কিছুই জানি না।

” হোয়াটটট…? কিছু না জেনেই আমাকে বিয়ে করছো? তুমি এই যুগের বিয়ে, বিদেশের কালচারে বড়ো হয়েছো। তুমি একজন এডাল্ট পার্সন। আমার সম্পর্কে না জেনে কিভাবে বিয়ে করলে রাফিয়া?

জারিরের প্রশ্নে শান্ত শীতল দৃষ্টিতে জারিরের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়,

” বিশ্বাস! ভালোবাসা!

” মানে ?

” মানে সিম্পল! বিশ্বাস! ভালোবাসা থাকলেই সব সম্ভব! আমি আমার ড্যাড মম কে খুব বিশ্বাস করি এন্ড খুব ভালোবাসি! তারা আমার জন্য যা করবেন, আমি চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারি৷ তাদের প্রতি আমার এতটাই বিশ্বাস যে, বিয়ের মতো একটা ইম্পরট্যান্ট বিষয়ে কিছু না জেনে করে নিয়েছি। তাদের প্রতি আমারর এতটাই ভালোবাসা যে, তারা বলার পর আর না করতে পারি নি৷ ওই যে বিশ্বাস আর ভালোবাসা নামক দুটো শব্দ। সেখানেই আমি আটকে গিয়েছি। আমার বিশ্বাস! তাদের কোনো কাজে আমি ঠকব না। যদি না আল্লাহ চান।

” কিন্তু, তুমি তো ঠকে গেছো?

রাহি জারিরের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হেসে জবাব দেয়,

” একটা কথা কি জানেন?

” কি।

” আল্লাহ কিন্তু সব খেলায় জিতিয়ে দেন না। কিছু কিছু খেলা আছে যেগুলো আমরা হেরে যায়। আমরা চাইলেও শত চেষ্টা করেও জিততে পারি না। কেন বলুন তো?

” কেন?

” কারণ ভাগ্য বলেও একটা জিনিস আছে। আমার ভাগ্যে হয়তো এই ছিল। আমি কিছু মনে করি না, আর আপনি যে বলছেন আমি ঠকে গেছি। তাহলে বলব, আপনি ভুল!

” কেন?

” আচ্ছা আপনি আমায় একটা কথা বলুন তো?

” কি কথা।

” আপনি যদি দোকান থেকে কোনো পণ্য। অ্যাই মিন ধরুন, একটা শার্ট কিনলেন আর সেটা খুব সুন্দর হয়েছে। এজন্য সেম দেখে আরেকটা শার্ট কিনে আনলেন। বাট আনফর্চুনেটলি শার্ট টা ভালো হলো না৷ তাহলে কি বলবেন?

জারির থতমত খেয়ে যায়। পরে বলে, প্রথম টা ভালো ছিল বাট দ্বিতীয় টা ভালো হয়নি। দ্যাটস নরমাল।

” ইয়েস! আমার কাছেও তেমনি। তাদের চয়েস যে সব সময় ভালো হবে এমনটা না। এবারেরটা না হয় ভুল হয়েছে। সেজন্য আমি আমার ড্যাড মম কে দোষ দেব না। এটা আমার ভাগ্যের দোষ, কপালের দোষ। এখানে তাদের কোনো হাত নেয়। কিছুটা দম নিয়ে ফের বলে, আমি বিদেশের কালচারে বড়ো হয়েছি এটা ঠিক কিন্তু আমার মধ্যেও তো নিজের দেশের কালচার আছে৷ আমি বিদেশে বড়ো হয়েছি বলে এই নয় যে আমি অন্য আর পাঁচ টা মেয়ের মতো রাত নেয় দিন নেয় বেপরোয়া ভাবে বেড়াবো। আমি সব কিছু মেইনটেইন করে করি। বলতে পারেন আমি টাইম মেইনটেইন করে চলি। আর রইল আমার চালচলন। সেটা খুব সিম্পল, আমি সাধারণ মেয়েদের মতোই চলি। শালিন ভাবে চলি, শালীন পোশাক পড়ি।

রাহি’র কথা গুলো শুনে জারির হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। রাহি’র কথা গুলো অসাধারণ লেগেছে তার কাছে। কি সুন্দর গুছিয়ে প্রতিটা কথা বলল। জারির মুগ্ধ হয়ে শুধু শুনেছে। জারির কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখের সামনে তুড়ি মেরে বলল,

” এই যে মিস্টার, এমন হা হয়ে কি দেখছেন।

রাহির কথায় নড়েচড়ে বসে জারির। তারপর বলল, তুমি গুছিয়ে খুব ভালো কথা বলতে পারো রাফিয়া। যেকোনো পুরুষই তোমার কথার মায়াজালে আঁটকে যাবে৷ তোমার কথার প্রেমে পড়ে যাবে৷

” আপনিও কি আমার কথার প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি হেঁসে হেসে বলে।

জারির চমকে তাকায় রাহি’র দিকে। জারিরের তাকানো দেখে রাহি বলল, মজা করে বলছি, মাইন্ড করছেন নাকি।

“” না। জানো রাফিয়া, আমি একজনের মায়ায় নিজেকে ফাঁসিয়ে ফেলেছি।তার এ্যাটিটিউট চালচলন তার কথা বলা সব কিছু, তার এভরিথিং আমার সব ভালো লাগে। আর তুমি যে ভাবে কথা গুলো বলছো না, সেটা শুনে তার কথা মনে পড়ে গেছে। তার মায়াবি মুখ খানি চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

” খুব ভালোবাসেন তাই না।

” হ্যাঁ।

” সেও কি আপনাকে খুব ভালোবাসে।

” জানি না।

” কেন সে জানে না আপনি তাকে ভালোবাসেন ?

” না।

” হোয়াটট? কি বলবেন আপনি? তাকে বলেননি আপনি?

” কখনো বলার সুযোগ পায়নি।

” আপনার কথা গুলো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটু ক্লিয়ার করে বলবেন প্লিজ।

” আমি তাকে দুর থেকেই ভালোবেসে আসছি। কখনো তার সামনে যায় নি। বলতে পারো, তেমন সুযোগ হয়ে ওঠেনি৷ সে আমার থেকে অনেক দুরে থাকে। সে একজন সিঙ্গার। খুব ভালো গান করে। তার গানের কন্ঠ স্বর এত মধুর তুমি শুনলে তুমিও তার গানের প্রেমে পড়ে যাবে।

” ওহ নো কি বলেন। রিয়েলি।

” হ্যাঁ। সে কোথায় থাকে তাও জানি না। সবসময় ফোন থেকেই দেখি।

” সে দেখতে খুব সুন্দরী তাই না।

” সেটা জানি না, তবে আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মায়াবি বলতে পারো। আমি তাকে না দেখেই ভালো বেসেছি।

” বাহ! খুব ভালো লাভ স্টোরি। আমাকে কি তার ছবি একটু দেখানো যাবে মানে আপনার মনের রানি কে। আপনার প্রেয়সীকে।

জারির মুচকি হেসে ফোন বের করে তার ছবি দেখায়। ছবি দেখে রাহি বলে,

” মাশাল্লাহ খুব সুন্দর। তা আপনার মনের কথা বলছেন না কেন? অন্য কেউ তাকে পাবার আগেই বলে ফেলুন। না হলে পাখি উড়াল দিবে।

” কিন্তু কি করে বলব?

” আপনি তাকে ভালোবাসেন।নিজের করে পাওয়া জন্য আপনাকেই কিছু করতে হবে।

” হ্যাঁ, ঠিক বলছো। সে এখন বাংলাদেশেই আছে। তাকে আমার মনের কথা বলে দেবো৷

” বেস্ট অফ ল্যাক।

চলবে ইনশা আল্লাহ