#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৯(অন্তিম পর্বের ১ম খন্ড)
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে। রাহি আর জারিরের সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয় নি। হবেই বা কি করে জারির তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। জারির খোঁজ নিয়ে দেখেছে, হৃদি চৌধুরী ১৪ ফেব্রুয়ারী যশোরে কন্সার্ট করবে। খবর টা পেয়ে জারির দুমিনিট নিরব হয়ে যায়, তবে যখন হুশ আসে যশোরে তার মামা বাড়ি তখন ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। তখনই তার রুমে আসেন হালিমা চৌধুরী, তিনি এসে বললেন,
” বাবু তোর মামা ফোন করছিল তোকে আর বউমা কে যেতে বলছে। তোর কি সময় হবে যাওয়ার।
মা’য়ের কথা শুনে একটা কথায় মাথায় আসে সেটা হলো ” এ যেন মেঘ না চাইতেই জল ” জারির খুশি হয়ে মুখ ফসকে বলে ফেলে,
” আমি তো তোমার কাছে এই কথায় বলতে যাচ্ছিলাম মা।
” হঠাৎ, ব্যাপার কি?
” তেমন কিছু না মা। আসলে অনেক দিন মামা বাড়ি যাওয়া হয় না তাই আরকি।
” আচ্ছা বুঝছি। তাহলে রাহি মামনি কে বলে তোরা বেড়িয়ে পর।
মা’য়ের কথা শুনে হাসি মুখে রাহি’র কাছে যায় আর কথা টা বলে, রাহিও হ্যাঁ।
তারপর রেডি হয়ে দু’জনে বেড়িয়ে পরে সেদিন সকাল নয়টায়। জারির রিপ্তি কে যাওয়ার কথা বললে, যাবে না বলে। সামনে তার পরীক্ষা। সেজন্য আর জোর করে না। দুজনেই বের হয়। তার পর বাসে উঠে পরে। এভাবে গাড়ি পাল্টিয়ে পাল্টিয়ে দীর্ঘ সাত ঘন্টা জার্নি করে পৌঁছে যায় যশোর জেলায়। যশোর শহরেই জারিরের মামা বাড়ি। রাহি আগে এত পথ বাস জার্নি করে নি। আসার পথে বার কয়েক বমিও করছে। সবটা জারির নিজে সামলিয়েছে। এত পথ জার্নি করার ফলে অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে রাহি। জারির বাস থেকে নেমে রাহিকে নিয়ে রিকশায় ওঠে। রিক্সা নিয়ে সোজা মামার বাসার উদ্দেশ্য যায়। দশমিনিটের মধ্যে পৌঁছে যায় নির্ধারিত জায়গায়। বাসার কলিং বেল বেজে উঠেলে দরজা খুলে দেয় জারিরের বড়ো মামি। দরজা জারির আর তার বউকে দেখে হাসি মুখে ভিতরে আসতে বলে। রাহি ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভিতরে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। রাহি কে ক্লান্ত দেখে জারিরের ছোটো মামি বলেন,
” জারির বউমা কে নিয়ে রুমে যা। ওকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে, সাথে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। জারির হ্যাঁ বলে একটা রুমে নিয়ে যায়। মামা বাড়ি আসলেই যে রুমটায় জারির থাকে সেখানে। জারিরের দুই মামা, বড়ো মামার এক ছেলে এক মেয়ে, মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে, আর ছেলেটা বিদেশ থাকে। আর ছোটো মামার দুই মেয়ে এক ছেলে, ছেলেটা সবার ছোটো।
বিকাল চারটা বাজে। জারির আর রাহি দুজন কোনো রকম দুপুরের খাবার খেয়ে রুমে এসে বিশ্রাম নেয়। রাহি বিছানায় শুলে জারির রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। জারিরের মামার বাসা তিনতলা। উপরের দুই তলা ভাড়া দেওয়া। আর নিচ তলায় তারা থাকে। জারির ছাদে চলে যায়।
__________________
সন্ধ্যা সাতটা। ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে সবাই। জারিরের মামারা কেউ বাসায় ছিলেন না। একটু আগে আসছেন তাই কথা বলছে। মামা রা ফ্রেশ হতে চলে গেছেন। শুধু বসে আছে জারিরের বড়ো মামার মেয়ে মালিহা আর ছোটো মামার মেয়ে শিলা, শিলার বড়ো বোন শশুর বাড়ি, শিলার ছোটো ভাই তামিম। এখানে সবার বড়ো জারির তারপর মালিহা। এখন মালিহার কথা হলো কাল ভ্যালেনটাইন্স ডে, সেই উপলক্ষে সবাই ঘুরতে বের হবে। রাহি ইন্টারনেটে দেখছে যশোর জেলাকে ফুলের রাজ্য বলা হয়। কিন্তু সে তো আর বলতে পারে না গদখালি যাবে। রাহি এই প্রথম যশোরে আসছে তাই সে জিজ্ঞেস করে,
” কোথায় যাবেন আপু।
” ভাবছি তোমাদের সবাইকে নিয়ে গদখালি যাব। তোমরা তো কখনো যাওনি। তাই তোমাদের সবাই কে নিয়ে সেখানে যাব।
রাহি মনে মনে খুব খুশি হয়। তবে মুখে প্রকাশ করে না। জারিরও হ্যাঁ বলে, আর শিলা তো সেখানে যাবে বলে দুপায়ে খাড়া হয়ে আছে। তাই কথা অনুযায়ী কাল সকালে বের হবে। তারপর রাতের ডিনার করে ঘুমাতে চলে যায়।
_____
সকাল দশটায় যশোর শহর থেকে গদখালির উদ্দেশ্য বের হয় পাঁচ জন। যশোর শহর থেকে গদখালি যেতে লাগছে দেড় ঘন্টা। তারা অটোতে করে আসছে। গদখালি পৌঁছায় সাড়ে এগারো টায়। অটো থেকে নেমে গদখালির ভিতরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করার পর রাহি’র মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। চার দিকে শুধু ফুল আর ফুল। এত এত ফুলের বাগান যা আগে কখনো দেখেনি রাহি। রাহি’র মুখে চমৎকার হাসি। যা আড়চোখে দেখে জারির। জারির মেয়েদের জন্য ফুলের দোকান থেকে তাজা ফুলের ব্যান্ট কিনে দেয়। রাহি মালিহা শিলা তিনজনে মাথায় ফুলের ব্যান্ট দেয়। তারপর টিকিট কেটে পার্কের ভিতরে ঢোকে। প্রথমে তার গোলাপ বাগানে যায়। সেখান থেকে ঘুরে ঘুরে চলে আসে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে। জারির সবাইকে ছবি তুলে দেয়। মালিহা জারির আর রাহি’র জোর করে ছবি তুলে দেয়। এভাবে তারা প্রতিটা ফুলের বাগানে যায়। এত এত ফুল দেখে ইমোশনাল হয়ে যায় রাহি। ফুলের প্রতি রাহি’র খুব নেশা। রাহি ফুলে খুব ভালোবাসে! তারপর তারা চলে যায় পানিসারা পার্কে। গদখালির সবচেয়ে ফেমাস ছাতা। ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে তার ছবি তোলে। এত এত মানুষ যার জন্য অস্বস্তিতে পরে রাহি। পা ফেলার জায়গা পর্যন্ত নেই। তারপরও আজ ভ্যালেনটাইন্স ডে। সব জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে। দেখে বুঝার উপায় নেয় কারা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড আর কারা হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ। রাহি খেয়াল করে এখানে পুলিশ সেনাবাহিনী পাহারা দিচ্ছে । বিষয়টা রাহির ভালো লাগে। ঘুরাঘুরি শেষ করে গদখালি থেকে বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়। সবাই অনেক্ক্ষণ ছিল ওখানে। গরমে বেহাল অবস্থা তরপরও অনেক মানুষ। বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল চারটা বেজে যায়। বাসায় ফিরে যে যার মতো ফ্রেশ হতে চলে যায়। রাহি ফোন টা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে চলে যায় আর জারির ফ্যান চালু করে ফ্যানের নিচে বসে।
জারির শার্ট খুলে ফেলে শুধু গ্যান্জি পড়া তার। গা থেকে ঘাম ঝরছে। আজ খুব রোদ যার কারণে বেশি গরম লাগছে। হঠাৎ করে একটা শব্দ হয়, যা শুনে জারির পাশে ফিরে তাকায়, দেখে রাহি’র ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসছে। জারির কি মনে করে ফোনটা হাতে নেয়, তবে যা দেখে তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হাত থরথর করে কাঁপছে! এটা সে কি দেখছে!
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙে জারিরের। দ্রুত হাত থেকে ফোনটা বিছানায় রেখে উঠে দাড়ায়। তারপর রাহি কে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। জারিরের হাবভাব কেমন একটা লাগল রাহি’র কাছে। তবে সেটা আমলে নেয় না।
—————————
রাত আটটা। রাতের ডিনার করে ড্রয়িংরুমে বসেন সকলে। তখন জারির তার মামা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” মামা আমি আজ রাতে একটু বের হবো। আসতে একটু দেড়ি হবে । বাসার গেইট টা একটু খুলে দিও।
” আচ্ছা সে না হয় দিলাম। বাট রাতে কোথায় যাবি। আর ফিরতে ফিরতে কয়টাই বা বাজবে।
” একটু দরকার আছে মামা। ফিরতে একটা বাজবে।
” এত রাত! আচ্ছা ঠিক আছে। তবে সাবধানে বাবা।
” জ্বি মামা।
__________________
রাত সাড়ে এগারো টা। যশোর স্টেডিয়াম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারপাশে বিভিন্ন রকমের লাইটিং করা। চারপাশ মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছে হৃদি চৌধুরীর কনসার্ট দেখার জন্য। ছেলে মেয়ে রা ভিড় জমিয়েছে। মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে হৃদি চৌধুরী চলে আসবেন।
*****
জারির রাত এগারোটা চল্লিশ মিনিটে বাসা থেকে বের হয়। তারপর চলে যায় নিজের গন্তব্যে।
***
রাত বারোটা। হৃদি চৌধুরী একটু আগেই এসেছে। রাত ঠিক বারোটায় স্টেজে ওঠে। সবার সাথে কিছু কথা বলে, গান গাওয়া শুরু করে।
~°~
Betahasha dil ne
Tujhko hi chaaha hai
Har dua mein maine
Tujhko hi maanga hai
Tera jaana jaise
koi badua
Tera jaana jaise
koi badua
Door jaaoge jo tum
Mar jayenge hum
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
Tumhe dekhte hi
ankhen ho jaati nam
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
Hua ye kya hashar mera
Judaa hua sabar mera
Main tere bin ek lamha
Kyun kabhi na jiya
Raat bhar ashqo ne
tujhko pukara hai
Har dua main maine
tujhko hi maanga hai
Tera jaana jaise
koi badua
Door jaaoge jo tum
Mar jayenge hum
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
Tumhe dekhte hi ankhen
ho jaati nam
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
Nasha tera dil ko laga
Dena nahi mujhko daga
Main teri aadat ka maara
Hai kya meri khata
Tere bin namumkin
Apna guzara hain
Har dua mein maine
Tujhko hi maanga hai
Tera jaana jaise
koi badua
Door jaaoge jo tum
Mar jayenge hum
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
Tumhe dekhte hi
ankhen ho jaati nam
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam o
Sanam teri kasam
গান গাওয়া শেষ হলে চারপাশ থেকে করতালির আওয়াজ পাওয়া যায়। তারপর হৃদি চৌধুরী স্টেজ থেকে নেমে আসে। হৃদি চৌধুরীর এসিস্ট্যান্ট গাড়ি নিয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছে। হৃদি চৌধুরী চারপাশ টা ভালো করে লক্ষ্য করে সামনের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু বেশিক্ষণ যেতে পারে না তার আগেই পিছন থেকে হাতে টান পরে। হৃদি চৌধুরী পিছনে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে। পিছনের মানুষ টাকে সে এখানে এভাবে আশা করেনি। পিছনেের মানুষ টা অতি আগ্রহ নিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_১০( অন্তিম পর্বের শেষ খন্ড )
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
হৃদি চৌধুরী চারপাশ টা ভালো করে লক্ষ্য করে সামনের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু বেশিক্ষণ যেতে পারে না তার আগেই পিছন থেকে হাতে টান পরে। হৃদি চৌধুরী পিছনে তাকিয়ে আঁতকে ওঠে। পিছনের মানুষ টাকে সে এখানে এভাবে আশা করেনি। পিছনেের মানুষ টা অতি আগ্রহ নিয়ে তার দিকে চেয়ে আছে। হৃদি চৌধুরী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই যার যার মতো বেড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের দিকে কারোর খেয়াল নেই। হৃদি এবার তার হাত ধরে রাখা ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার? আপনি কি জানেন না আমি কে?
ছেলেটা মুচকি হেসে জবাব দেয়,
” হ্যাঁ জানি তো , আপনি হৃদি চৌধুরী ওরফে বলে থেমে যায়…
” থামলেন কেন এনছার মি?
” দেখো ভনিতা না করে মুখ থেকে মাক্স টা খুলে ফেলো।
হৃদি চৌধুরী মেজাজ দেখিয়ে বলল, ফাজলামি করার জায়গা পান না মশাই। তারপর পা দিয়ে জারিরের পা’য়ে জোরে পাড়া দেয়। জারির ব্যথায় আহহ শব্দ করে হৃদি চৌধুরীর হাত ছেড়ে দেয়। আর এই ফাঁকে হৃদি চৌধুরী দৌড়ে পালিয়ে যায়।
হ্যাঁ হৃদি চৌধুরীর হাত ধরা লোকটা আর কেউ নয় জারির। জারির ব্যথায় পা ফেলতে পারছে না। উঁচু হিল দিয়ে পা’য়ে পাড়া দিলে ব্যথা না লেগে যায়। জারির সোজা হয়ে দাড়িয়ে হৃদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
” কত দুর যাবে তুমি? সেই ঘুরে ফিরে আমার কাছেই আসবেনে বলে খানিকটা উঁচ্চ স্বরে হেসে ওঠে জারির। তারপর দ্রত পায়ে তার বাইকের কাছে চলে যায়। বাইকে উঠে দ্রুত বাসায় রওনা হয়।
—————_————-
জারির একটুপর বাসায় ফিরে আসে কারণ এখান থেকে খুব বেশি সময় লাগে না। জারির রুমে এসে দেখে রাহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রাহি’র অভিনয় টা দেখে শুধু হাসে জারির। সবটা জানার পরেও যদি সেটা লুকিয়ে যায় তাহলে তো ব্যাপারটা মজার হয়। জারির দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে রাহি’র পাশে বসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফ্রেশ হতে চলে যায়। যা করবে কাল দেখা যাবে।
****
খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে যায় জারিরের। রাহি এখনো ওঠে নি। এখন ছয়টা বাজে, চারপাশটা অন্ধকার হয়ে আছে। জারির ফ্রেশ হয়ে সবে মাত্র বেলকনিতে গিয়ে দাড়িয়েছে, ঠিক তখনই তার চোখ গিয়ে পরে একটা হলুদ রঙা ব্যাগের উপর। জারির কৌতূহল নিয়ে ব্যাগের কাছে দাঁড়ায় তারপর ঝুঁকে সেটা হাত দিয়ে তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখে তারপর ভিতরে কি আছে দেখার জন্য ব্যাগটার চেইন খুলে হতবাক হয়ে যায়। মুখে ফুটে ওঠে হাসি, এবার প্রমাণ স্বরূপ ধরতে পারবে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রাহি’র জাগার অপেক্ষা করছে জারির।
*****
রাহি আড়মোড়া ছেড়ে বিছানায় উঠে বসে। রুমটা ঘুরে দেখে জারির আছে নায়,তারপর উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। পাঁচ মিনিট পর ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসলে জারির সাথে সাথে রুমে এসে রাহি’র মুখোমুখি দাঁড়ায়। জারির কে এভাবে দাড়াতে দেখে দু’কদম পিছিয়ে যায় রাহি। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি ব্যাপার এভাবে দাঁড়িয়েছেন কেন? এনি প্রবলেম?
জারির হাতে থাকা ব্যাগটা রাহি’র মুখের সামনে ধরে বলল, এটা কী ?
ব্যাগটা দেখে রাহি’র মাথায় হাত। এটা সে কি করল? রাহি কে কিছু বলতে না দেখে জারির ফের বলল,
” কি হলো কথা বলছো না কেন চুপ করে আছো কেন?
রাহি তর্জনী আঙুল হলুদে ব্যাগটার দিকে দিয়ে বলল, আপনি এটা পেলেন কেমনে?
” কেন বেলকনিতে, যেখানে তুমি রাখছিলে।
রাহি বেমালুম ভুলে গিছিল ব্যাগটা লুকাতে। তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছুই ঠিক ভাবে হয় না এটা তার প্রমাণ। রাহি’র ভাবনার মাঝেই জারির বলে ওঠে,
” এখনো অস্বীকার যাবে তুমি হৃদি চৌধুরী নয়?
” রাহি নিশ্চুপ (….)
” কি হলো কথা বলছো না কেন? নিজের মুখেই স্বীকার করো।
রাহি এবার খানিকটা চেচিয়ে ওঠে ওঠে,
” হ্যাঁ আমি হৃদি চৌধুরী, আমিই রাফিয়া রাহি। সব আমিই!
জারির শীতল চাহুনি তে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” তাহলে নিজের পরিচয় টা গোপন করে রেখোছো কেন? কেন সবার থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখছ?
” কারণ আমি নিজেকে সবার থেকে আড়ালে রাখতে ভালোবাসি। আমি কখনো চাই নি আমি পারসোনাল লাইফ আর প্রফেশনাল লাইফ এক হোক। নিজেকে ছদ্মবেশে রাখতে পছন্দ করি। আমি বাইরে বের হলে যাতে কেউ বলতে না পারে ওই দেখ হৃদি চৌধুরী যাচ্ছে। আমি সব সময় নরমালি জীবনযাপন করতে চেয়েছি। স্বাভাবিক চলতে চেয়েছি। আপনি যেহেতু জেনেই গেছেন সব, তাহলে লুকোচুরি করার কোনো মানে হয় না। আমার এই সত্য টা একজন ছাড়া কেউ জানত না আর এখন দ্বিতীয় জন আপনি হয়ে গেলেন। আমি চাই না আপনি কখনো কাউকে আমার ব্যাপারে বলেন। জাস্ট আড়াই টা মাস একটু কষ্ট করেন। তারপরই আমি চলে যাব, অনেক দুরে। যেখানে গেলে কখনো আমাদের দেখাই হবে না।
রাহি’র কথা’য় বুক ধক করে ওঠে জারিরের। দ্রুত মুখ চেপে ধরে বলে, খবরদার তুমি কখনো এইসব কথা বলবে না। শুনতে খুব বাজে শোনায়।
আকস্মিক স্পর্শ করায় কেঁপে ওঠে রাহি। জারির দ্রুত হাত সরিয়ে বলে, সরি।
দুজনের মাঝে চলে কিছুক্ষণ নিরবতা। দু’জন দুই দিকে ফিরে আছে। রাহি মনে মনে ভাবছে, জারির কিভাবে জেনে গেলো,আর এত তাড়াতাড়িই বা সত্যি টা সামনে আসল কেন?
ওই দিকে জারিরের মনে লাড্ডু ফুটেছে। প্রেয়সীকে এত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবে কল্পনা করেনি। আড়চোখে রাহি কে দেখে বারবার। কিন্তু জারিরের মনের ভিতরে ভালো লাগছে না। রাহি কি তাকে আদোও মেনে নেবে? প্রশ্ন টা মনের ভিতর থেকেই যাই।
****★****
সময় তার নিজের গতিতে চলছে, থেমে নেয়। রাহি আর জারির ঢাকা ব্যাক করছে গতকাল। জার্নি করে আসার ফলে রাহি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। তারজন্য আজ সারাদিন বিশ্রাম নিয়েছে। সন্ধ্যায় জারির বাসায় আসে। হাতে তার শপিং ব্যাগ, ব্যাগের ভিতরে কি আছে শুধু জারিরই জানে। জারির রুমে ঢুকে দেখে রাহি বিছানায় বসে ফোন দেখছে। জারিরের হাতে থাকা ব্যাগটা রাহি’র দিকে এগিয়ে দেয়।রাহি ফোন থেকে চোখ সরিয়ে হাতে থাকা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” কি আছে এটাই?
জারির মুচকি হেসে সুধালো,
” যা আছে তুমি দেখে নিও। আগামী কাল কে এটা পড়ে রেডি হয়ে আমার সাথে বের হবে। প্লিজ না কইরো না এটা আমার রিকুয়েষ্ট।
রাহি অবাক নয়নে তাকায়। জারিরের ভিতর অনেক পরিবর্তন খেয়াল করছে রাহি। তবে জারিরের কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলে না। জারির বেলকনিতে চলে যায় আর রাহি ড্রয়িংরুমে আসে দেখে সবাই বসে গল্প করছে। রাতের রান্না অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। রাহি কে দেখে হালিমা চৌধুরী বলেন,
” রাহি মামনি তুমি এখানে আসতে গেলে কেন রেস্ট নিতে পারতে? আমি রিপ্তি কে দিয়ে দু’জনের খাবার পাঠিয়ে দিতাম।
রাহি হালকা হেঁসে বলল, কি বলছেন আন্টি, আমি ঠিক আছি, সবার সাথেই ডিনার করব। রাহি মনে মনে ভাবে এ বাড়ির মানুষ গুলো খুব ভালো। তার অনেক কেয়ার করে। কিন্তু সে তো এ বাড়িতে বেশি দিন থাকতে পারবে না। জারির তাকে ভালোবাসে না, জারির অন্য নারী কে ভালোবাসে।
***
চৌধুরী পরিবারের সবাই রাতের ডিনার করতে খাবার টেবিলে বসেছে। হালিমা চৌধুরী আর তার জা দুজন খাবার সার্ভ করছেন। ডিনার শেষ হলে রাহি রুমে চলে আসে, বিছানায় গা টা এলিয়ে দেয়। তার একটু পর ই জারির রুমে আসে। বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফায় চলে যায়। দুজন এক বিছানায় থাকে না। দু’জন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
______________
বেলা এগারোটা। রাহি জারিরের দেওয়া প্যাকেট টা খুলে দেখে সেখানে একটা ব্ল্যাক কালারের শাড়ি তার সাথে সব ম্যাচিং জুয়েলারি। এগুলো দেখে রাহি থ হয়ে যায়, জারির তাকে এগুলো কেন দিলো?
অতঃপর সেগুলো পড়ে রেডি হয়। জারির রাহি’র রেডি হওয়ার অপেক্ষাতেই ছিল। রুমে এসে রাহি কে দেখে থমকে যায়। আপনাআপনি হাত বুকে চলে যায়। ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি ফুটে ওঠে। হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। রাহি পাশে কারো অস্তিত্ব পেয়ে ফিরে তাকায়। জারির কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পায়। রাহি কে লজ্জা পেতে দেখে লুকিয়ে হেসে তারপর রাহি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” চলো যাওয়া যাক।
রাহি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে। অতঃপর দু’জন বাসা থেকে বের হয়। উদ্দেশ্য তাদের অজানা। জারির বাইক নিয়ে বের হয়েছে, বাইকের পিছনে রাহি। জারির রাহি কে নিয়ে একটা পার্কে নিয়ে যায়। রাহি কে একটা বেঞ্চে বসিয়ে কোথাও একটা যায়।
জারির গেছে পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে তবুও এখনো আসছে না দেখে বেঞ্চ থেকে উঠে দাড়ায়। তারপর সামনের দিকে হাঁটে। চারপাশে অনেক মানুষ। রাহি হাঁটতে হাঁটতে খানিকটা সামনে এগিয়ে যায় কিন্তু মাঝপথে গিয়ে থেমে যায়। রাহি দেখে একটা বাচ্চা মেয়ে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে। বাচ্চা টার বয়স কতই বা হবে তিন বা চার। পিছন থেকে একটা ট্রাক আসছে। ট্রাক টা দেখে রাহি’র মাথায় হাত। রাহি কি করবে না করবে ভেবে কুল পাচ্ছে না। রাস্তায় সেরকম কাউকে দেখছে না যে তাকে বলবে। রাহি কিছু না ভেবেই সামনের দিকে দৌড় লাগায়। ট্রাক টা খুব নিকটে চলে এসেছে, রাহি বাচ্চাটার হাত ধরে টান দিয়ে সাইডে সরিয়ে দেয় কিন্তু রাহি নিজে সরতে পারেনি। বিকট শব্দে চারপাশ থমকে ওঠে। ট্রাক টা সাই সাই করে চলে যায়। চারপাশ থেকে মানুষ ছুটে আসে ঘটনাস্থলে।
জারির হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে হাসি মুখে পার্কে আসে কিন্তু রাহি কে যেখানে রেখে গিছিল সেখানে না পেয়ে ভয় পেয়ে যায়। কোথায় গেলো খোঁজার জন্য রাস্তায় দৌড়ে আসে। একটু দুরে অনেক ভিড় দেখে ঘাবড়ে যায় জারির। কি হয়েছে দেখার জন্য এগিয়ে যায়। দুর থেকে কালো শাড়ি পরিহিত নারী কে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে থমকে যায়৷ হাত থেকে ফুলের তোড়াটা রাস্তায় পড়ে যায়। জারির চিৎকার করে বলে ওঠে,
” রাফিয়াাাা……….
তারপর সব কিছু ফেলে দিয়ে দৌড়ে ছুটে যায় রাহি’র কাছে। সেখানে থাকা মানুষ গুলো অবাক হয়ে জারিরের দিকে তাকায়। জারির দৌড়ে এসে রাহি কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” এই রাফিয়া, শুনছো তুমি? আমার কথা তুমি শুনতে পারছো। প্লিজ চোখ মেলে তাকায়। এই হৃদি, আমার হৃদি আমার ভালোবাসা। প্লিজ একবার চোখ মেলে তাকাও না। দেখো আমি এসেছি। তোমার স্বামী এসেছে। পাশ থেকে একজন লোক বলে, মাইয়াডা আর বেঁচে নেয়, অকালেই মরলো মাইয়াডা। কি কপাল।
লোকটার কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় জারিরের। জারির হুঙ্কার ছেড়ে বলে, খবরদার কেউ ফাও কথা বলবেন না। আমার হৃদি বেঁচে আছে ও মরেনি। এই হৃদি তুমি প্লিজ রেসপন্স করো। প্লিজ হৃদি! তোমাকে তো বলাই হলো না আমি তোমাকে ঠিক কতটা ভালোবাসি। তুমি ই আমাকে বলছিলে আমি যাকে ভালোবাসি তাকে যেন বলে দেয় কিন্তু আমি তো আজ নিজের মনের কথা তোমাকে বলব বলে কত কিছু এরেন্জ করছি তুমি তো কিছুই জানো না। তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আমার এত এত প্লান সব বিফলে গেলো এটা তো হতে পারে না হতে পারে না।
জারির একটা অটোর সাহায্যে রাহি কে নিয়ে হসপিটালে যায়। কিন্তু ডাক্তার রাহি দেখেই বলে, সি ইজ নো মোর। ডাক্তারের কথা শুনে দুকদম পিছিয়ে যায় জারির। আসমান ভেঙে মাথায় পরে। ততক্ষণে হসপিটালে ছুটে আসে রাহির বাবা মা শশুর চাচা শশুর। রাহি মা কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছে। রাহি কে নিয়ে বাসায় আসে সকলে। পুরো চৌধুরী ভিলা আজ নিস্তব্ধ। সবার মাঝে শোকের ছায়া। রাহি কে আসর বাদ জানাজা শেষ করে কবর দেওয়া হয়। শুইয়ে দেওয়া হয় অন্ধকার কবরে। ।
গভীর রাত। পুরো বাড়িটায় কারো কথার আওয়াজ নেই। সবাই কেমন থমকে গেছে। রাহি’র এভাবে মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারেনি। সকালেও যে মেয়েটা সবার সাথে হেঁসে হেসে কথা বলেছে সেই মেয়েটা আর পৃথিবীতে নেই। মানতে কষ্ট হলেও এটাই বাস্তব। আসলে আমাদের কখন কোথায় কার মৃত্যু হবে কেউ জানে না।
অন্ধকার রাত। জারির চুপিচুপি তাদের গোরস্থানে আসে। রাহি’র কবরের পাশে হাটু গেড়ে বসে। জারির চিৎকার করে বলে, হৃদি এই হৃদি আমাদের জীবনটা এমন কেন? কেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলে? কেন আমায় একটু ভালোবাসার সুযোগ দিলে না। একদিন তুমিই বলেছিলে আমার সুখময় জীবনে আমি কেন #বিষাদময় করে দিলাম। আমি আজ বলছি, আমি সত্যি জানার পর কেন আমায় একটু ভালোবাসার সুযোগ করে দিলে না। কেন আমার জীবনটা #বিষাদময়_সুর করে দিলে। আমার বাকিটা জীবনই তোমার শূন্যতায় কাটবে। আমার জীবনে একটায় আফসোস রয়ে যাবে কেন আমি আগে জানতে পারলাম তুমিই আমার হৃদি। তোমাকে জড়িয়ে ধরে বলা হলো না তোমাকে অনেক ভালোবাসি! নিজের থেকেও বেশি! তোমার সাথে আমার বিয়ে হলো অথচ তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি, ওই যে পরনারীতে আসক্ত। সেই পরনারীই আমার অর্ধাঙ্গিনী। জীবনটা অদ্ভুত তাই না। যার জন্য তোমাকে অবহেলা করলাম। সুন্দরতম বাসর রাত টা নষ্ট করলাম। যার জন্য এতকিছু করলাম সেই তুমিই তো হলে। পরিশেষে একটা কথায় বলব, তোমাকে কোনো দিন ভুলতে পারব না, আর না তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারব। বাকিটা জীবন একাই কাটিয়ে দেব কেন জানো? কারণ তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি জান খুব। আল্লাহ তোমাকে জান্নাতুন ফেরদৌস নসিব করুক। এপারে এক হতে পারি নি তো কি হয়েছে পরপারে ঠিকই আমরা এক হবো। ভালোবাসি আমার হৃদি কে। ভালোবাসি জান!
[ সমাপ্ত ]