বিষাদ বৃক্ষ পর্ব-৩৩

0
129

#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ৩৩

আনতারা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। নিষ্প্রাণ ভাবে। যেন আসার জন্যই আসা। কেন জানি কিছুই তাকে ছুঁতে পারছে না। তবুও বিথীকে সুস্থ দেখে তার ভালো লাগলো।

তাকে দেখে মুর্শিদার বোন মুখ বাঁকিয়ে বলল, — সংসার ডারে তো একেবারে খাইয়া শেষ করলা। এখন নাটক দেখতে আইছো,আহো! দূরে দাঁড়ায় আছো কেন? আরো সামনে আসো। মন ভরে দেখ।

আনতারার এখন আর তেমন ভাবান্তর হলো না। সে চুপচাপ তাঁকিয়ে রইল। তার নিজেরই এখন নিজেকে এমনই মনে হচ্ছে।

— দেখ দেখ কি বেশরম মাইয়া। কিভাবে তাঁকাইয়া আছে। বলি লজ্জা শরমের কি মাথা খাইয়া বইয়া আছো নি। নাকি দেখ! আর কি খাইয়া কইজা ঠান্ডা করা যায়। মাইনষে তো নিজের জামাইরেও ছাড় দেয়। তুমি তো তাও দিলা না।

আসাদ বিরক্ত মুখে শবনমকে বলল, — আনতারাকে নিয়ে তার রুমে যাও।

আসাদের খালা আরো তেতে উঠল। উঠে বলল, — কিসের রুম। বাড়ি থিকা বাইর কর এই অলক্ষীরে। যেইটুকু আছে সেটুকুও শেষ করব এই রাক্ষসী। আর তোর বউরে তো দূরেই রাখ। বংশের প্রথম বাতি আসছে। দুনিয়ার মুখ আর দেখতে দিব না।

মুনিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার মায়ের অবস্থা ভালো না। তার মধ্যে বাড়ির একটার পর একটা ঝামেলা ভালো লাগছে না। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলেই বলল, — খালা আপনি বড় মার কাছে যান। এমনিতেই ঝামেলা অনেক। আর বাড়িয়ে লাভ কি?

— তুমি চুপ থাকো মেয়ে। তোমার বাপের জন্যই আমার বোনের মেয়ের এই অবস্থা। আবার বড় বড় কথা। সংসার নাই, পুলাপান নাই, স্বামী নাই। শুধু দিন ভইরা বিছানায় চিৎ হইয়া শুয়ে থাকা। স্বামী আরেক জায়গায় মুখ দিব নাতো কি করবো? এখন আইছে এমনিতেই অনেক ঝামেলা। ঝামেলাডা লাগাইছে কেডা শুনি। এই সংসারের পেছনে খাটতে খাটতে আমার বোনের জীবন তেজপাতা। কি পাইলো আমার বোন?

মুনিয়া স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। আসাদ এবার ধমকে বলল, — খালা আর একটা কথাও না।

— কি কইবি তুই কইলে। বাড়ি থাইকা বাইর কইরা দিবি। দে। তগো বাড়ির উপরে এই মদিনা থু থু ও ফালায় না। এক বেজম্মা আনছে বাড়ির বউ কইরা। তার জন্য আবার সবার এতো দরদ। আরে দশ মাস দশ দিন যেই মায় পেটে রাখল। তার চিন্তা তগো মাথায় এক বারও আহে না।

— কি হইছে?

সবাই পেছনের দিকে তাকালো। আবসার আর আহমাদ দাঁড়ানো। তারা গিয়েছির এশার নামাজ পড়তে।

আসাদ বলল, — কিছু না দাদাভাই। তারপর শবনমের দিকে তাকিয়ে বলল — আনতারাকে রুমে নিয়ে যাও।

শবনম এগুবে তখনি মুর্শিদা বেরুলো। কঠিন ভাবে বলল, — এই অলক্ষী ভেতরে যাবে না।

মদিনা মুখ বাঁকিয়ে হাসলো। আসাদ বিরক্ত মুখে বলল, — মা একটু চুপ থাকবে।

মুর্শিদা অবস্থা পাগলের মতো। সে পাগলের মতোই বলল, — চুপ! একটা কথাও না। তারপর আহমাদের দিকে তাঁকিয়ে বলল, — সারা জীবন তো বাপের পোলা হইয়াই রইলেন। আজকে মুর্শিদার কথা শোনেন। এই মাইয়া যদি ভেতরে যায়, আমি এক্ষুনি এই বাড়ি থাইকা বের হইয়া যাবো। এখন আপনারা ঠিক করেন। কে বাড়িতে থাকবো, আমি না এই অপয়া।

আহমাদ এবার সত্যিই বিরক্ত হলো। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে টেনে ঝামেলাকে এতো বড় করার কোন মানে হয়।

আবসার দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফেলে মুর্শিদার দিকে এগিয়ে এলো। সব সময়ের মতো শান্ত ভাবে বলল, — আমার সিন্ধান্তে আমি কখনো অনুতপ্ত হয়নি। যখন যা ভালো মনে হয়েছে তাই করেছি। তবে একটা সিন্ধান্তে আজ পস্তালাম। সেটা হচ্ছে তোমাকে আমার বাড়ির বড় বউ করা। বড় বউদের সব দিক বিবেচনা করে চিন্তা ভাবনা করতে হয়। আমি ভাবতাম তুমি তাই করো। আসলে তুমি নিজের ছাড়া কাউকে নিয়ে চিন্তাই করোনি। ভালো! এটা তোমার সংসার। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি। তাই যে কোন সিন্ধান্ত তুমি নিতেই পার। তবে এটা কেন ভুলে যাচ্ছো, তোমার সংসার হলেও এই বাড়িটা আমার। এই বাড়িতে তুমিও যেমন, আনতারাও তেমন।

তাই এখানে কে থাকবে না থাকবে এই সিন্ধান্ত আমি নেব। অন্তত যতদিন আমি জীবিত আছি ততদিন তো অবশ্যই। আর তুমি তোমার সংসার, স্বামী, পুত্র তারপর মদিনার দিকে একবার তাঁকিয়ে বলল, — তোমার যত আত্মীয়- স্বজন আছে সবাই কে নিয়ে চলে যেতে পারো। আমার সমস্যা নেই। তবে হ্যাঁ! আমার বাড়িতে থাকতে হলে সবাইকে নিয়েই থাকতে হবে। না হলে বাকি তোমার ইচ্ছা।

মুর্শিদা স্তব্ধ হলো! স্তব্ধ হয়েই আহমাদের দিকে তাঁকালো। মদিনা হা হয়ে গেছে। মুর্শিদা মা এবার মুখ খুলল। তার টনটনে কন্ঠে বলল, — এইডা আপনে কইবার পারলেন বেয়াই। আজকে ওই দুই দিনের মাইয়ার কাছে আমার মেয়ে কিছু না। এতদিন যে এই বাড়ি ঘর জান দিয়ে আগলাইয়া রাখলো সেগুলো কিছু না। মন চাইলো আর খেদাই দিলেন। এই আপনের বিচার

— আমি তো আপনার মেয়েকে যেতে বলিনি বেয়ান। আমি বলেছি তার যেমন ইচ্ছা। তবে এই বাড়িতে থাকতে হলে সবাই কে একসাথেই থাকতে হবে। আল্লাহর কালাম সাক্ষী রেখে বিয়ে হয়। আর আল্লাহর কালামকে আপনাদের ফাজলামি মনে হয়? ইচ্ছে হলো মানলাম, ইচ্ছে হলো তাঁড়িয়ে দিলাম। সে আজাদের বউ, এই বাড়িতে আজাদের যতটুকু অধিকার তারও ততটুকুই অধিকার। এখানে আপনার মেয়ে কে হয় তাড়িয়ে দেওয়ার?

মুর্শিদা মা এবার আহমাদের দিকে তাঁকালো। তাঁকিয়ে বলল, — কেমন পোলা তুমি? নিজের পরিবাররে গলা ধাক্কা দেয়, এতো কথা শোনায় আর তুমি চুপচাপ দাঁড়ায় আছো? কোমরে হাড্ডি নাই নাকি?

আহমাদ বড় একটা শ্বাস ফেলল! ফেলে শুধু বলল, — আমি হাড্ডি ছাড়াই পোলা আম্মা। এখন না সেই আগে থেকেই। দেখেননি বাবা যখন আমাকে আপনাদের কালো, খাটো মেয়ের জন্য নিয়ে গিয়েছিল তখনও আমি এভাবেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন আপনার মেয়েও অলক্ষী, অপয়া, আবিকানোই ছিল। হাড্ডি থাকলে তো তখনি আওয়াজ তুলতাম। তখন তো আপনাদের সমস্যা হয়নি। আজ হবে কেন?

মুর্শিদা মার অপমানে তার কৃষ্ণ চেহেরায় আরো কালো ছায়া পড়ল। তারা জামাইকে নরম, কোমল, ভদ্র হিসেবেই এতদিন দেখে এসেছে। আজ যে এভাবে মুখ খুলবে সে ভাবেইনি।

আহমাদ শাশুড়ির কালো চেহেরার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল, — আবার বাবাই আপনার মেয়েকে আজ লক্ষী, ঘরনী, সংসারের কর্ত্রী বানিয়েছে। মনে করেন আনতারাও তেমন। সে আজ অলক্ষী, অপয়া থাকলেও একদিন আপনার মেয়ের মতোই হয়ে যাবে। বলেই আহমাদ পাশ কাটিয়ে মুর্শিদার সামনে গেল। তার দিকে তাঁকিয়ে নরম সুরে বলল, — আমি তো আজকাল তোমাকে চিনতেই পারিনা মুর্শিদা। আমাদের সেই মুর্শিদা কোথায় গেল। যে এক হাতে পুরো সংসারকে টেনে একজোট করে রেখেছিল। কই কখনো তো জালের মেয়ে, নিজের মেয়ে, তোমার বাবা, আমার ছেলে এসব আসেনি। আজ আসছে কেন?

মুর্শিদা উত্তর দিতে পারল না। সে হাঁটু গেড়ে সেখানেই বসে পড়ল। তার চোখের সামনে সেই বিয়ের আগের দিন ভাসতে লাগলো। বাবার বাড়িতেই কত অবাঞ্ছিত ছিল সে। যেই মাকে আজ মাথায় করে রাখছে। এই মা’ই উঠতে বসতে নানান কথা তো ভালোই গালি গালাজ পর্যন্ত করত। এমন মেয়ে পেটে রাখার জন্য নিজেকে নিজে কত অভিশাপ দিতো। যেই বোনের দুঃখে সে আজ বড় কাতর। সেই বোনই তার জন্য তাকে বিয়ে দিতে পারছে না বলে, ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলতো না। মানুষ সুখে থাকতে থাকতে দুখের দিন ভুলে যায়। সেই ভুলে যাওয়া দিনই তাকে আঙুল তুলিয়ে তার স্বামী দেখিয়ে দিল। তবে মুর্শিদা জানে এই লোকটা এতো বছরে তাকে কখনো অসম্মান করেনি। খারাপ আচরণ করেনিে। সে যেমন যেভাবে বলতো সব কিছু সে ভাবেই করত। আজ সব হারালো। একমাত্র নিজের জন্যই হারালো।

আহমাদ আনতারা দিকে তাঁকালো। তাঁকিয়ে বলল, — ঐ যে চুপচাপ মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। একবার তার দিকে শাশুড়ি হিসেবে না। একটা মেয়ে হিসেবে তাঁকাওতো মুর্শিদা। দেখতো তার দোষটা কোথায়? সেতো এই বাড়িতে নিজে আসেনি। আমরা তাকে নিয়ে এসেছি। এনে কি দিচ্ছি তাঁকে। নিজের সম্মান নিজের রাখতে হয় মুর্শিদা। এই মেয়েটা নিশ্চুপ,শান্ত কাথার পিঠে কথা জানে না। কিন্তু সম্মান সেটা কিন্তু জানে। জানে বলেই টু শব্দ তো ভালোই চোখ তুলে তাঁকায় না।অথচ তোমরা কি করছো? পরের বাড়ির মেয়ে এসেই সংসার ভাঙে না, অলক্ষী হয় না, অপয়াও হয় না। আমরা বানিয়ে ফেলি মুর্শিদা।

মুর্শিদা চোখ তুলে তাঁকাতে পারল না। আহমাদ আগের মতোই বলল, — আনতারার বাবা ছিল, মা ছিল। এর আগের সত্য মিথ্যা আমি জানি না। জানতে চাইও না। একটা মানুষের জন্য এইটুকু পরিচয় যথেষ্ট। তাই এ বাড়িতে এই সম্পর্কে কোন রকম কথা যেন আমি আর না শুনি । বলেই আহমাদ মুর্শিদা মাথায় হাত রাখল। রেখে কোমল সুরে বলল, — আমার বাবা কখনো তোমার সংসারে নাক গলায়নি। শুধু মাত্র একটা আরজি হাত পেতে ভিক্ষা চেয়েছিল। যে তোমাকে এতকিছু দিল, সে কি তোমার কাছে একটা জিনিস চাইতে পারে না? চেয়েছে বলে তোমার এতো ক্ষোভ। অথচো তার বাড়ি, ঘর, সংসার, সন্তান সব তোমাকে সে দিয়ে রেখেছে।

মুর্শিদা সাথে সাথেই চোখ তুলে শ্বশুরের দিকে তাঁকালো। আবসার ধীরে ধীরে রুমের দিকে যাচ্ছে। জীবন থাকতে এই মানুষটাকে অসম্মান করার কথা ছিল না। তো কি করলো সে?

— সংসারে ঝুট ঝামেলা থাকবেই। তার মানে এই না। একে অপরকে দোষারোপ করব, বাড়ি থেকে তাঁড়িয়ে দেব। বরং একসাথে সবাই তার মোকাবেলা করব। বলেই আহমাদ ভেতরে চলে গেল। আর মুর্শিদা চোখ বন্ধ করে দেয়ালে শরীর এলিয়ে দিলো।

আনতারা দাঁড়িয়ে আছে আগের মতোই। শবনম কোন দিকে যাবে দিশে পেল না। তবে মুনিয়া এগুলো। তারা কখনো মা, বড় মা এর তফাৎ করেনি। তো আজ কেন করবে? সে এগুতে গেলেই মদিনা বলল, — খবরদার বলে দিলাম। একদম ঢং করতে আসবে না। সবাই দলবেঁধে আমার বোনকে হেনেস্থা। তাঁড়ানোর পায়তারা ? এতো সোজা না। আমি মাতব্বর, চেয়ারম্যান কে ডাকবো। আমার বোনের পাপ্য জিনিস আমি দেখে ছাড়বো। বলেই মদিনা মুর্শিদাকে ধরতে গেল।

মুর্শিদা হাত উঠিয়ে আস্তে করে বলল, — আমারটা আমাকে বুঝতে দে মদিনা। মা, বাকি সবাইকে নিয়ে বাড়িতে যা।

মদিনা আবারো হা হয়ে গেল। মুনিয়া ঠোঁট টিপে হাসলো। এইতো তাদের বড় মা। সে হেসেই মুর্শিদাকে তুলল। তুলতে তুলতে বলল, — আপনি এই বাড়ি, এই সংসারে চাবি বড় মা। আপনাকে ছাড়া তা অচল। এখন বিপদের সময়। শক্ত হোন। সবাইকে আগলে রাখার দায়িত্ব আপনার। এমনকি আনতারাকেও। সেও আমাদের সংসারের অংশ বড় মা। তার দিকে আঙুল উঠা মানে আমাদের দিকেই উঠা। তাই সেটা দমন করো। সবার সাথে নিজের দিকে আঙুল নিজে তুলো না।

লোহার সিকের সামনে ইব্রাহিম দাঁড়াতেই আজাদ স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে এলো। হালকা হেসে বলল, — আপনি এখানে! কোন কাজ ছিল?

ইব্রাহিমও তার স্বভাব মতো শান্ত ভাবে বলল, — হুম ছিল। ভাবলাম এসেছি যখন দেখা করে যাই।

— শুনে খুবই খুশি হলাম। এত কষ্টের প্রয়োজন ছিল না।

— সমস্যা নেই। তো কিছু করতে বলছো না কেন? এসবতো আজকাল মামুলি ব্যাপার। খুন তো আর নিজের হাতে করোনি। টাকা দিলেই তো ফিনিস। কোর্টে উঠালে তো আবার আরেক ঝামেলা।

আজাদ হালকা হাসলো! হেসে বলল, — দেখি কি করা যায়?

— তোমার কিছু লাগবে? লাগলে বলো। আমি ব্যবস্থা করছি।

— জ্বি শুকরিয়া। আমার ব্যবস্থা আমি নিজে করতে পারি।

— ভালো। নিজের ব্যবস্থা নিজের করাই ভালো। বলেই ইব্রাহিম চলে যেতে নিল। আজাদ আবার ডাকলো। ইব্রাহিম ফিরতেই এক গাল হেসে বলল, — একটা খবর শুনলাম। আসলে সত্য মিথ্যা জানি না। শহরে আসা যাওয়া লেগে থাকলেও সেই ভাবে তো আর যাওয়া হয় না। তাই জিজ্ঞেস করছি। কিছু আবার মনে করবেন না তো?

— কি?

— আপনার শহরের গোডাউনে নাকি কয়েক হাজার ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। পুলিশ জব্দ করেছে। করে গোডাউন নাকি একেবারে সিলগালা। ঘটনা সত্য নাকি?

ইব্রাহিম শান্ত চোখে তাঁকিয়ে রইল। আজাদ সেই শান্ত চোখের দিকে তাঁকিয়ে আফসোসের সুরে বলল, — কপাল একই তারে বাঁধা বুঝেছেন দাদা ভাই। এক রাতে আমি এলাম চৌদ্দ সিকের ভেতরে আর ঐ দিকে গেলো আপনার গোডাউন। আর কি কি যেন করেন আপনি? ও হোটের হোটেল, আবাসিক হোটেল। সব কিছু ঠিক ঠাক দেখে শুনে রাইখেন। জানেন তো বাঘে ছুঁলে আঠারো আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। এক জায়গায় যেহেতু হাত পড়ছে , বাকি জায়গায় যেতে সময় লাগবে না।

— তুমি তোমার জন্য ভাবো আজাদ। আমার সব গেলেও আমি বাহিরে আর তুমি ভেতরে। ছত্রিশ ঘা আমার চেয়ে বেশি তোমার জন্য প্রযোজ্য।

আজাদ আবারো হাসলো। হেসে বলল, — অবশ্যই, অবশ্যই দাদা ভাই।

ইব্রাহিম আর দাঁড়ালো না। থানার বাইরে এসে দাঁড়ালো। তার শরীরে আগুন জ্বলছে। অবশ্য এই ছেলের হাসিই এমন। ভালো মানুষের শরীরও ফট করে জ্বলে উঠবে। সে দাঁড়াতেই জামিল তার পাশে এসে দাঁড়ালো। দাঁড়াতেই ইব্রাহিম বলল, — কাজ হয়েছে?

— হ হইছে। তবে এই পুলিশ দুনিয়ার হারামজাদা। সে লাফাইয়া লাখে যায়। আরে ব্যাটা খুনের আসামী ধরছোস। আজ হোক কাল হোক কোর্টে তো নিবিই। কিছু টাকা নিয়া তাড়াতাড়ি লও। তা না। তালবাহানা শুরু করছে।

— কবে নিবে?

— দুয়েক দিনের মধ্যেই ।

— এতো সময় কেন?

— সেটাইতো বুঝতেছিনা ভাই।

— সমস্যা নেই আমি দেখছি। তুমি শহরে রওনা দাও। সব না গুছিয়ে এখানে পা রাখবে না। এ জেলের ভেতরে থাকলেও চোখে মুখে কোন ভয় নেই। তার মানে সে সব সেট করেই ঢুকেছে। তাই সব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা কর।

চলবে……