#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২৮
বিশাল ঝড়ের পরে প্রকৃতি যেমন শীতল, শান্ত, একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যায়। আবসারের বাড়ির অবস্থাও ঠিক তেমনি। এতো গুলো মানুষের বসবাস তার মধ্যে অনেক আত্মীয়- স্বজন কালকে চলে গেলেও কিছু কিছু রয়ে গেছে। তবুও এই বাড়ি একেবারেই নিশ্চুপ।
তাছাড়া মিথির খোঁজ পাওয়া গেছে। সকাল হতে না হতেই ইব্রাহিম ছুটে এসেছে। আবসারের হাত জাপটে ধরে বলেছে, — জহির বড় অপরাধ করে ফেলেছে ভাইজান। পোলাপান মানুষ। রক্ত গরম। বিয়ের নাকোচ সে মানতে পারে নি। তাই বিথীকে তুলে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ভুলে মিথিকে নিয়ে গেছে। এখন সে কি করবে? একতো পুরো গ্রাম ছড়িয়ে গেছে। তার মধ্যে বাপের কেলেঙ্কারি। এই মেয়ের তো মরা ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। তাই সে নিজ দায়িত্বে তাদের বিয়ে পরিয়েছে। এখন আপনি যে শাস্তি ইচ্ছে দেন। আমি মাথা পেতে নেব। তবে কথা দিচ্ছি আপনার বাড়ির মেয়ের কোন অসম্মান আমার বাড়িতে হবে না।
অলি আবসার কিছু বলেনি। শান্ত চোখে ইব্রাহিমের দিকে তাঁকিয়েছে। এই শান্ত চোখের ভাষা ইব্রাহিম বুঝে নি। বুঝে নি বলেই আবসার যে এই প্রথম তার হাত নিজের থেকেই ছাড়িয়ে নিয়েছে, সে খেয়াল করেনি। সে তাঁকিয়ে ছিল। সেই তাঁকানোর মাঝেই আবসার শুধু বলেছে, — আমি জহিরের সাথে কথা বলতে চাই। তাকে একটু আসতে বলো।
জহির বাড়িতে আসতেই মুনিয়া হামলে পড়ল। এলোপাথাড়ি কয়েকটা থাপ্পড় মারল। রমিজ মুনিয়ার জামাই তাকে ধরে ফেরালো। জহির একা আসেনি তার সাথে এসেছে জামিল। জামিল হালকা হেসে বলল, — ভুল করছে ভুলের প্রশ্চিত ও করছে। তোমার বাপের মত তো আর বউ পুলাপান রাইখা আকাম কুকাম করে নাই। ফ্রেশ পুলা। এমন পোলা হারিকেন হাতে খুঁজলেও পাইবে না । তাই হাত, পা, মুখ একটু কম চালালে বড়ই খুশি হই মা। হাজার হোক ছোট বোনের জামাই। ছোট বোন ঘর সংসারতো করবো এর সাথেই। তাই একটু মাথায় আদব লেহাজ রাখলে ভালো হয় না মা?
মুনিয়া স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। কালকে থেকে কত কথা যে শুনতে হচ্ছে এর কোন ইয়াত্তা নেই। তার শ্বশুর বাড়ির মানুষ চলে গেছে। তারাও যাওয়ার আগে দুনিয়ার অসন্তুষ্ট। কঠিন করে ছেলেকে বলে গেছে। দু- দিনের মধ্যেই ফিরে যেতে। এ রকম পরিবারে তাদের নাতিকে রাখতে চায় না। অথচ এখানে তাদের কোন দোষ নেই। তাঁদের ভেতরের কি অবস্থা কেউ কি বুঝতে পারছে। না, পারছে না। তারা তো কাটা ঘায়ে নুন ছিটাতে ব্যস্ত। এই পুরুষ শাসিত সমাজে সব দোষ যে নারীর। সে কেন তার স্বামীকে ধরে রাখতে পারল না।
রমিজ কিছু বলবে তার আগেই জহির শান্ত ভাবে বলল, — আপনি মারের আপা। অপরাধ করতে পেরেছি শাস্তি ভোগ করতে পারব না কেন? এর চেয়েও যদি বড় শাস্তি দিতে চান। দিন! আমি খুশি খুশি মাথা পেত নেব। এই শাস্তির সাথে মিথির কোন সংযোগ নেই। অপরাধ আমি করেছি মিথি না।
মুনিয়া ফুঁপিয়ে উঠল। কি হয়ে গেল তার বোনটার সাথে। সে আর দাঁড়ালো না। দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। মুনিয়া যেতেই জহির জামিলের দিকে কঠিন করে তাঁকালো। জামিল কে সে সাথে আনতে চাইনি। তবে তারা তাকে একা ছাড়বে না। সে দাঁতে দাঁত চেপেই অলি আবসারের রুমের দিকে গেল। জামিল অবশ্য আর এগুলো না। এই বুইড়াকে তার সহ্য হয় না।
জহির অলি আবসারের সামনে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। চোখে চোখ মেলানোর মতো সাহস তার হলো না। ছোট বেলা থেকে আসতে যেতে কত স্নেহ করেছেন। হাসি মুখে ডেকে কথা বলেছেন। আর তার বুকেই ছুরি তারা কত অনায়াসেই চালিয়েছে। আর বড় আব্বা? তাকে জহির বুঝতে পারছে না। বড় আব্বা যদি সত্যিই কাউকে সম্মান করে থাকে তা হলো এই সামনে বসা মানুষটাকে। এই মানুষটার এক শব্দে বড় আব্বা বিনা বাক্য ঘুরে দাঁড়িয়ে যায়। তাহলে হঠাৎ এমন কি হলো, যে তার প্রতি মনে এতো ক্ষোভ সৃষ্টি হলো।
এই মানুষটা কি জানে? তাকে ছাড়া এই বাড়ির প্রতিটা মানুষের ধ্বংশের নকশা বড় আব্বা এঁকেছেন। বিশেষ করে আজাদ। কিন্তু কেন?
অলি আবসার কিছুক্ষণ শান্ত চোখে তাঁকিয়ে রইলেন। তারপর সব সময়ের মত শান্ত ভাবেই বললেন, — বস।
জহির এগুলো তবে সে কোন চেয়ার বা খাটে বসল না। একেবারে গিয়ে বসল অলি আবসারের পায়ের কাছে। দু- পা জড়িয়ে হাঁটুতে মাথা রাখতেই তার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
অলি আবসার ফেরালেন না। ছুঁলেনও না। তবে আগের মতোই বললেন, — আমার নাতনীকে দেখ রেখো জহির। সে অবুঝ! দুনিয়া দারি ভালো মন্দের জ্ঞান তার এখনো হয় নি। যেভাবেই হোক দায়িত্ব নিয়েছো। আর যখন নিয়েছো সেই দায়িত্ব নিষ্ঠা ভাবে পালন করো।
— আমাকে মাফ করে দিন চাচাজান।
— উঁহু দাদাভাই। আমি মিথির দাদাভাই। তোমার সাথেও এখন আমার একটাই সম্পর্ক। তুমি আমার নাতনীর জামাই। আশা করি সেটা মাথায় রাখবে।
— আমাকে মাফ করেন দাদাভাই।
— ভুলের মাফ হয়। অপরাধের না। অরাধের হয় শাস্তি। তোমার শাস্তি তখনি মওকুফ হবে যখন আমার নাতনী আমাকে এসে হাসি মুখে বলবে, — আমি ভালো আছি দাদাভাই।
— আমি কথা দিচ্ছি দাদাভাই। মিথি ভালো থাকবে। আমি তাকে ভালো রাখব।
আবসার এবার জহিরের মাথায় হাত রাখলেন। রেখে বললেন, — আল্লাহ তোমার কথা রাখার তৌফিক দান করুক।
জহির এসেছে এই কথা বিথীর কানে গেল। সব সময় তেজ, অহংকার দেখানো বিথির আজ কোন প্রতিক্রিয়া হলো না। অন্য সময় হলে হয়ত মুনিয়ার মতো সেও ঝাঁপিয়ে পড়ত। তবে আজ সে নিস্তেজ, নির্বাক হয়ে বসে রইল।
অবশ্য সে একা না। এ বাড়ির আরেক কোণে আরেকজনও বসে আছে তার মতোই একেবারে নিশ্চুপ, নির্বাক হয়ে। মিথির কথা সবাই জানে, বিথীর অবস্থা সবাই দেখছে। আমেনার পাশে সবাই আছে। কিন্তু এই বাড়ির এতো এতো ঝড়ের মধ্যে আনতারার ভেতরের ঝড় কেউ টের পেল না। এবার সে মুখ ফুলাইনি, কাঁদেও নি। জ্ঞান ফেরার পর থেকে একেবারে শান্ত। আর এখন সেই শান্ত ভাবেই খাবার ঘরে চুপচাপ বসে আছে।
আজাদ তার কাছে তো ভালোই এক বারের জন্য আর তার সামনেও আসেনি। নিজের সাফাই দেওয়ার জন্য কোন রকম কোন চেষ্টাও করেনি। সকাল হতেই নিজের মত বেরিয়ে গেছে।
বাড়ির কারো’ই মন মেজাজ ঠিক নেই। তাদের শ্বশুর পড়ে আছে নিশ্চুপ এক রুমে। বিয়ে বাড়ির সব ছড়ানো ছিটানো। আসাদ সারা রাত ঘুম তো ভালোই ভেতর বাড়িতে’ই আসেনি। সকাল থেকে লেগেছে সব কিছু গোছাতে। নিজেদের কষ্টের জন্য কি আর দুনিয়াদারি থেমে থাকে।
না থামে না। না থামে পেট। বাড়ির মানুষরা সব কষ্টে জর্জরিত হলেও আত্মীয় – স্বজন আছে তাদের তো আর না খাইয়ে রাখা যায় না। তাই শবনম নিজেই সব করল। তার নিজের শরীরও ভালো না। অতিরিক্ত চিন্তার কারণে, নাকি না খাওয়ার কারণে কে জানে। মাথা ঘোরা তো যেমন তেমন পেট মুরিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সে সেই অবস্থায়ই সব করল।
করে আনতারর দিকে তাকালো। আনতার কি হয়েছে সে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করে জ্ঞানই হারালো কেন? সে তো গিয়েছিল মিথি কে খুঁজতে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে এসেছে। এসে দেখে আনতারা বেঁহুশ হয়ে পরে আছে। তা থাক! আমরা সহজেই যেটা হজম করতে পারি আনতারা পারে না। অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। মেয়ে মানুষকে আল্লাহ পানির মত অসীম এক ক্ষমতা দিয়েছেন। পাত্র যেমন ই থাক গরম, ঠান্ডা, ভাঙা সব কিছুতেই সে পানির মতো নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আনতারাও পেরে যাবে। তবে সমস্যা হলো ইব্রাহিম ভাই। শবনম বোকা না। আনতারা বেহুঁশ হওয়ার পরে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা সে ইব্রাহিম ভাইয়ের মধ্যেই দেখেছে। অথচ তার এমন রুপ শবনম আজ পর্যন্ত দেখনি। সব সময় দেখেছে শান্ত নিশ্চুপ।
আনতারার জ্ঞান ফিরেছে অনেক পরে। তারাই ধরাধরি করে তার রুম পর্যন্ত এনেছে। আর এতো এতো ঝামেলায় সে আজাদ ভাইকে কোথাও দেখলো না। আশ্চর্য! অথচ আর কেউ না জানুক। সে জানে। আনতারা এ বাড়িতে পা রাখার পর থেকে তার প্রতিটা কদমের হিসেব আজাদ ভাই রেখেছে। আর এতো বড় ঘটনা ঘটল সে গায়েব? না তার মাথায় তো আর কিছুই কুলোচ্ছে না।
সে একটা গামছা ভিজিয়ে কপালে রাখল। আর এদিকে তার শরীল। এমন লাগছে কেন? সে বড় একটা শ্বাস ফেলল। তার দাদি বলত ” বিপদ আপদরা সাত ভাই বোন। তারা কখনো কোন বাড়িতে একা আসে না। হাত ধরাধরি করে একসাথে আসে ” শবনমের আজ তার দাদির কথা একবারেই সত্যি মনে হলো। আরো কি কি হওয়া বাকি আছে কে জানে।
সে গামছা ভিজিয়েই আনতারার পাশে বসলো। বসে বলল, — ছোট মার খাবারটা একটু ঘরে দিয়ে আসবে আনতারা। কাল থেকে পানিটাও গলা দিয়ে নামায়নি। এমনিতেই সুস্থ থাকে না। দেখতো একটু খাওয়াতে পার কি না। আমার শরীরটাও ভালো লাগছে না।
আনতারা সাথে সাথেই ফিরে তাকালো। শবনমের মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলল, — কি হয়েছে ভাবি ?
— তেমন কিছু না। মাথাটা ঘুরছে।
আনতারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তার নিজের কাজের প্রতি নিজেরই লজ্জা লাগলো। একটা অসুস্থ মানুষ এক হাতে সব করছে। আর সে চুপচাপ বসে আছে। সে সাথে সাথেই উঠল! খাবার নিয়ে ছোট মার রুমের দিকে এলো। দরজার পাশে বসে বসে মুনিয়া কাঁদছে। আনতারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে গেল। গিয়েই চমকে উঠল।
আমেনা নির্বিকার ভাবে খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে। তার চুল ছাড়া। সম্ভবতো গোসল করেছে। চুল থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে। আর তার গায়ে একেবারে সাদা একটা থান কাপড়।
আনতারা কি করবে বুঝতে পারল না। সে খাবার হাতেই যেভাবে এসেছে সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। আমেনা তার দিকে ফিরল না। না ফিরেই শুষ্ক কন্ঠে বলল, — এই থানটা আমার মায়ের। বিবধা ছিল। মরার পরে স্মৃতি হিসেবে এনেছিলাম। এতো তাড়াতাড়ি গায়ে জড়াতে হবে ভাবেনি।
আনতারার চোখে পানি চলে এলো। তার খুবই স্বল্প বুদ্ধি। কখন কি করতে হবে বুঝে উঠতে পারে না। তবে সে একটা জিনিস আজ খুব বুঝলো। মেয়েদের কোন মূল্য নেই। তার মূল্য হয় মেয়ে হিসেবে রুপে, বউ হিসেবে গুণে। সমাজের হিসেবে বংশ রক্ষায়। এই তিনটা থেকে একটা কম হলেই তুমি অকেজো। তোমার আর কোন মূল্য নেই। তাকে ছুঁড়া ফেলা হয় নর্দমায়।
সে আজ চোখের পানি ফেরালো না। সাইডের টেবিলে খাবার রেখে আমেনার সামনে গিয়ে আস্তে করে বলল, — আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি ছোট মা?
আমেনার গাল বেয়ে নীরবে পানি গড়িয়ে পড়ল। সেও চোখের পানি মুছল না। কিন্তু হাত বাড়িয়ে দিল। আনতারা ছোট পাখির মতো তার বুকে জড়িয়ে গেল। নিজের অজানা কষ্টে না আমেনার কষ্ঠে আনতারা বুঝলো না। তবে সে ফুঁপিয়ে উঠল।
আমেনাও কাঁদলো। মন ভরে ইচ্ছে মতো। কাঁদতে কাঁদতেই আনতারার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, — আমার মিথির একটু খবর নিও তো মা। কি অবস্থায় আছে কে জানে? সব কয়টা মেয়ের কপাল একসাথেই পুড়ল। তোমার চাচার জন্য পুড়ল বিথীর, বিথীর জন্য পুড়ল মিথির। আহারে জীবন। সাদাসিধে সুখে থাকলে এর মন ভরে না। এর তো চাই রঙ। আর রঙের জন্যই সে রঙের লাটিম ইচ্ছে মতো নাচায়।
বিথীর বিয়ে জন্য জহিরের মা চলে গিয়েছিল তার বাপের বাড়ি। এই মেয়ের বিয়ে নাকি আবার তারা খেতে যাবে। খাবারের অভাব পড়েছে তাদের ? ভাসুরের উপরে তারা কথা বলতে পারে না। তাই বাহানায় কেটে পড়েছিল। আজকে ফিরলো। ফিরে সে হতবাক।
তার একমাত্র ছেলে বিয়ে করেছে। আর তাকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি। সে আজকের জায়গায় যদি কালকে আসতো হয়ত কালকেও জানতো না। তার সেই দুঃখে বুক ভরে এলো। অথচ এই সন্তানকে সে মাথায় করে পেলেছে। মুখ দিয়ে বের করার আগে সব জিনিস মুখের সামনে এসে হাজির করেছে। বিয়ে করবে? সে জানলে অমত করতো? বিথীর মতো কালিকেই মেনে নিয়েছিল। আর একে মানতো না?
সে মনের দুঃখে মুখে আঁচল চেপে গুনগুনিয়ে কাঁদতে বসলো। ইকবাল বসে আছে বিরক্ত মুখে। তার ছেলের বিয়ে নিয়ে সমস্যা নেই। তবে একটা খটকা তার মনে। সেটাই কাঁটার মতো বিঁধছে। তবে বড় ভাইয়ের ভয়ে বড় ভাইকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। জীবনের এতো লম্বা সফরে ভাই অনেক পাপ’ই করেছেন তবে দুশ্চরিত্র না। টাকা পয়সা হলে ব্যাটা ছেলেরা অনেক কিছুই করে। তার ভাইয়ের এমন কিছু নেই। এমনকি মা কত চেষ্টা করেছেন বিয়ের জন্য। তাকে রাজি করানো যাইনি । অথচ এই শেষ বয়সে এসে এমন কিছু ভাবতেও তার গা গুলিয়ে আসছে।
জহির রুমে এসে দেখল মিথি খাটের এক কোণে চুপচাপ বসে আছে। এই বসে থাকা এখন থেকে না। কাল বিয়ের পর থেকে। না ঘুমিয়েছে, না খেয়েছে, না নড়েচড়ে বসেছে।
জহির বড় একটা শ্বাস ফেলেই একটু দূরুত্ব রেখে খাটে বসল। বসে নরম স্বরে বলল, — আমরা যতই পরিকল্পনা করি, বুদ্ধি খাটিয়ে নীল নকশা আঁকি। আসলে আমাদের উপরেও আরেকজন আছেন। তিনিও আমাদের মত নকশা আকেঁন। ভাগ্যের নীল নকশা। আর তার নকশার কাছে কারো পরিকল্পনাই টেকে না। কখনোই না। হয়ত এটাই আমাদের ভাগ্য ছিল। তাই এটা আমার মিনতি বলতে পারিস। সব ভুলে আমরা কি নতুন করে ভাবতে পারি?
মিথি হেসে ফেললো। এটাকে অবশ্য হাসি বলা যায় না। বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য বলা যেতে পারে। সে হেসেই চোখ তুলে জহিরের দিকে তাঁকালো।
জহির নিশ্বাস বন্ধ করে সেই টলমলো পানি ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। যেখানে পানি ছাড়াও আরেকটা জিনিস স্পষ্ট । সেটা এক রাশ ঘৃণা। এই ঘৃণা শুধু তার উপরে না। পুরো পুরুষ জাতির উপর। পিতা নামক পুরুষের উপর, সমাজ নামক পুরুষের উপর, আর সর্বশেষ জহির নামক নিকৃষ্ট এক পুরুষের উপর। আর এই ঘৃণা! এই মেয়ের এই এক জীবনে শেষ হবে না।
চলবে…..