#বিষ_করেছি_পান(২০)
(কপি করা নিষেধ)
দুপর গড়িয়ে বিকেল।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা ছাড়িয়ে রাত হতে চললো এখনো রিতীর ফেরার নাম নেই। টেনশনে রুম্পা মৃদু শব্দে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছে।তমাল মা বোনকে চুপচাপ দেখে চলেছে।
ছুটি ছটফট করছে। একটু পর পর ছানোয়ার ফোন করলে কথা বলছে। ছানোয়ার গিয়েছে রিতীকে খুঁজতে। সঙ্গে আছে রতনের বাবা আর কাকা। ছানোয়ার ছুটির থেকে বার বার জেনে নিচ্ছে রিতী ফিরলো কিনা। মনে মনে দোয়া করতে লাগলো মেয়েটা যেনো তার সহি সালামতে এখনি বাড়ি পৌছায়। পৌছে ফোন দিয়ে বলে, বাবা তুমি কোথায় আমাকে খুজতে গিয়েছো?আমি বাড়িতে চলে আসছি। একটা অনুষ্টানে গিয়েছিলাম ফোন সাথে নেইনি তাই জানাতে পারিনি। কিন্তু সেই খবর শুনা ছানোয়ারের ভাগ্যে নেই। থানাতে ডায়রি লিখছে না। চব্বিশ ঘন্টা হবার আগে ডায়রি লিখেনা। থানার ভেতরে কিছু কনস্টেবল আড় চোখে ছানোয়ারকে দেখে মিটি মিটি হাসছে। এদের আর কি ? চব্বিশ ঘন্টা হবার আগেই একেকটা মেয়ের সর্বনাশ হবে তারপর এরা গিয়ে উদ্ধার করবে। আইনের মানুষ না আছে কোন দয়া না আছে খারাপ লাগা। উপরে উপরে সান্তনা দিবে। আইনের লোক!ভোক্তভোগীরা না কিছু বলতে পারবে না কিছু করতে পারবে। ঐ যে চব্বিশ ঘণ্টার তৈরীকৃত নিয়ম। এভাবে হবেনা। রতনের কাকা ব্যবস্থাটা করে। ছানোয়ারকে রাজি করিয়ে কয়েকটা নোট চুপিচুপি দারগার হাতে গুঁজে দেয়। ছানোয়ার শিক্ষক মানুষ। দেশ গড়াই তার লক্ষ্য। ঘোষকে যতই না বলা হোক না কেনো মেয়েকে ফিরে পাবার জন্য তার মাথা এই ব্যাপারে কাজ করলো না। ছানোয়ার ভেতরে ভেতরে শেষ প্রায়। সেদিন যেদিন রিতীকে সকালে দৌড়াতে দেখেছিলো সেদিন থেকেই তার মনে কু ডাকা শুরু। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে রিতীকে মাঝে মধ্যে মোরের সামনে বখাটে সোহাগের দল উতক্ত করতো। মেয়েকে এতো বার জিজ্ঞেস করার পরেও চুপ করে গেছে। বাচ্চা মেয়ে তার ভয় পেয়ে বাপকে বলতে পারেনি। নিজে নিজেই বিপদ কাটিয়ে উঠতে চেয়েছে। আদৌ কি পারলো? ছানোয়ারের এবার হাউমাউ করে কাঁদতে বাকি আছে। বড় মেয়ে সব বাবা মায়ের প্রথম পাওনা অন্তপ্রাণ। রতনের বাবা কাকাই সবটা দেখছে। ডায়রি লেখা হলোনা। তবে দুজন পুলিশকে কাজে নামিয়ে দেওয়া হলো। দারগা উঠে এসে ছানোয়ারকে জিজ্ঞেস করলো,
— আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
ছানোয়ার অকপটে সোহাগের নাম বলে দিলো। শুরু থেকে সবটা খুলে বললো। দারগা মাথা নাড়িয়ে নিজেদের কাজে লেগে পড়লো।
রাত দশটা নাগাদ রিতীকে উদ্ধার করা হলো শহরের কোনায় পুরনো এক বাড়ি থেকে। অন্ধকার রুমে আটকে রাখা হয়েছে তাকে। সোহাগের এর চ্যালার ফোন ট্র্যাক করে খুঁজে পাওয়া গেছে তাকে।সেই বাড়িতে বসেই ডুকে ডুকে মদ গিলছিলো ছয়জন। সোহাগ ভয়ঙ্কর চোখে তার চ্যালার দিকে তাকিয়ে হুংকার ছাড়ে। ব্রিশি ভাষায় গালি দিয়ে চিল্লায়
— তোকে আমি ফোন খুলা রাখতে বলেছিলাম বান্দীরপুত?এই খেয়াল নিয়ে কাম করতে আসো? বের হ এর থেকে তোর নাটবল্টু যদি আজকে আস্ত রাখি!
পুলিশ ধমক দিলে পুলিশের উপর ধমক দিয়ে উঠে। অকথ্য গালি দিয়ে বাবাকে ফোন করতে বলে। তাকে ধরে রাখবে এমন কোন মায়েরপুত নাই। কার হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়েছে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে। চাকরি খাবে পুলিশের। সোহাগের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা না থাকা গর্হিত অপরাধ হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবে।
প্রত্যেকটা রুম চেক করে ছোট্ট এক রুমে পাওয়া যায় রিতীকে। অন্ধকারেই বাবার অবয়ব দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। ফোনের ফ্ল্যাসলাইটে ছানোয়ার গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে। রিতীর গায়ে বোরখা নেই। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় গাঁয়ে বোরখা চাপিয়ে বেরিয়েছিলো। বোরখার নিচে পড়ে ছিলো আকাশী রংয়ের প্লাজুর সাথে হলুদ রংয়ের গেঞ্জি। এখনো তাই পরা। গাঁয়ে উড়না নেই। আত্মা ধুক করে উঠে ছানোয়ারের। খুঁজে খুঁজে বোরখা হিজাব এনে হিজাবের উড়নাটা গলায় চাপিয়ে দেয় রতনের বাবা। রিতীকে বাইরে বের করে আনা হয়। চোখে মুখে পানি দেওয়া হয় নরমাল হবার জন্য। পুলিশ কিছু জিজ্ঞেস করতে চায় রিতীকে। রতনের বাবা হাত জোড় করে।
— দেখছেন তো আমাদের মেয়েটা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। আপনারা কি জিজ্ঞেস করবেন? সব তো জানা আর নিজের চোখেই দেখলেন। প্লিজ আমাদের মেয়েকে যে অপহরন করেছে তার শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
পুলিশ গিয়ে গাড়িতে উঠে। সোহাগদের ছয়জনকে আগেই গাড়িতে উঠানো হয়েছে। রিতী স্বাভাবিক হতে কিছুক্ষন সময় নেয়। চোখ খুলে বাবার দিকে তাকায়। কিছুক্ষন উদভ্রান্ত বাবার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ কুঁচকে নেয়। বাবার চোখ মুখ ভীষন ক্লান্ত। সেই ক্লান্ত চোখে অসহায়ত্ত্ব ভর করেছে। রিতী তার কারনটা ধরতে পারেনা। দু বার বাবা বাবা ডাকলেও ছানোয়ার কথা বলেনা। চোখ দুটো ছলছল করে উঠে।সেই চোখ জোড়া দেখে রিতীর বুক ধক করে উঠে। তখনি খেয়াল হয় পাশে বসে কাকারা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কাকাদের দৃষ্টিও বাবার অনুরুপ। ছুটি একটু বোঝার চেষ্টা করেই মাথা ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ কিছুই হয়নি। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে তুলে। সে ঠিক আছে। এতোক্ষনের নিভু নিভু প্রাণ যেনো হাতের মুঠোয় চলে আসে। ছানোয়ার চোখ মুছে মেয়েকে বুকে জাপটে ধরে। শক্ত করে চাপ দেয় যেনো কলিজার ভেতর এক্ষুনি তুলে ফেলবে। কাউকে নাগাল পেতে দিবেনা। ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাবে। কাকা বলছে,
— রিতী ভয় পেও না মা। বাড়ি চলো। আমরা আছি সবটা দেখে নিবো।কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। কেউ কিছু বললে বলবে বান্ধবীর বাসায় ছিলে। এক্ষুনি ভুলে যাও। মাথা থেকে বের করে ফেলো। মাথায় চাপ সৃষ্টি হতে দিওনা। তুমি বুঝদার মেয়ে সব বুঝো।
রিতী তাই মানে। সবাইকে জানায় সে বান্ধবীর বাসায় ছিলো। রুম্পা ছুটিও তাই বলে। রিতীকে ভুলানোর জন্য ছুটি তো আছেই। সবটা ভূলে যেতে বলা যতটা সহজ ততোটা সহজ নয় ভুলে যাওয়া। বাইরে যতই দেখাক ভূলে গেছে ভেতরে ভেতরে তার রেশ ঠিকই রয়ে গেছে। মেয়েটা একটু একটু করে যন্ত্রনায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। পড়াশোনায় উদাসীনতা এসে গেছে। খাওয়া দাওয়া তার উচ্ছনে গেছে। রুম্পা টের পেয়ে মেয়ের যত্নে লেগে পড়েছে। ছানোয়ারও রিতীকে নিয়ে খোশমেজাজে মেতে থাকে। মুখে না বললেও বাবা মায়েরা যেনো সবই বুঝতে পেরে যায়। এর জন্যই তারা সবার উচ্চ আসনে স্থান পায়। রিতীকে পড়ার তাগিদ দিচ্ছে। সামনে বসিয়ে পড়াচ্ছে। রিতী বই সামনে নিয়ে থম ধরে বসে থাকলে এটা ওটা বলে মন ঘুরিয়ে পড়ায় মনোযোগ আনানোর চেষ্টা করছে। শেষমেশ এ ঘটনার রেশ ধরে মেয়ের রেজাল্ট যেনো না খারাপ হয় সেই ভয়ে আছে। রিতী কেমন মেধাবী তা সবারই জানা। জীবনে অনেক দূর পর্যন্ত পড়বে বলে এতো সপ্ন দেখা। এতোবড় একটা ঘটনা নিজের সাথে ঘটে যাবার পর কোন মেয়েই পারবেনা তৎক্ষনাৎ সেই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসতে।
সেই দিনটা আতঙ্কের চেয়েও যেনো বেশীই ছিলো।
স্টুডেন্টে ভরা ক্লাসে গিয়ে উপস্থিত হয় এক ছেলে। ছেলেটাকে রিতী চিনে। সোহাগের সাথে মোড়ের দোকানে মাঝে মাঝে চোখে পড়ে। ছেলেটা এসেই জানায় মিল্লাদের তবারক নিয়ে আসা হয়েছে। স্টুডেন্টদের মাঝে বিলিয়ে দিতে চায়। দুপুর বেলায় অনেকেই শুকিয়ে আছে। তবারকের কথা শুনে স্টুডেন্টরাও উত্তেজনায় ফেটে যাওয়ার মত অবস্থা। তুলি রিতীকে বলে,
— দোস্ত রিযিকের মালিক আল্লাহ। খুব ক্ষুধা লাগছিলোরে।
রিতী মৃদু হাসে। জনপ্রতি প্যাকেট দেওয়া হয়। গরম গরম দুটো সিঙ্গারা, দুটো পুরি, পাঁচ টাকার একটা কেক আর একটা ফান্টা। স্যার বলে,
— দশ মিনিট সময় দিলাম। তাড়াতাড়ি শেষ করবে। তারপর আমি পড়ানো শুরু করবো। স্যার ও চেয়ারে বসে খাওয়া শুরু করে। স্যারের জন্য দুই প্যাকেট দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুধা লাগায় রিতীও খেয়ে নেয়। খাবার সময় নেক আপ ঠিকই খুলতে হয়। তা দেখে ছেলেটা চলে যায় মৃদু হেসে। বাড়ি ফেরার জন্য তুলিকে বিদায় দিয়ে বের হতেই কেউ রিতীর পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে।আরো দুজন এসে হাত পা ধরে তুলে নিয়ে যায় একটা বাড়িতে। চোখ মুখ খুলে দিতেই চোখের সামনে পড়ে সোহাগকে। সে কি রাগ! কি ভয়ঙ্কর! হিযাপের উপর দিয়েই চুলির মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ছোট্ট একটা রুমে। জানালা দিয়ে ক্ষীন আলোয় রিতীর চোখে পড়ে সোহাগকে রক্তিম মুখ খানা। রাক্ষস বা শয়তান যাই বলো তার থেকে দেখতে কম নয়। ফর্সা মানুষের চোখ মুখ লাল হলে ভয়ঙ্কর জলন্ত আগুন লাগে । সোহাগ গর্জে উঠে,
— লুকোচুরি খেলা হচ্ছে আমার সাথে? যে রুপের আগুনে আমি তৃষ্ণা মেটাতে চাই সেই রূপ ঢেকে রাখার সাহস কোথায় পাস তুই? খোল খোল বলছি এসব।
একটানে বোরখার পাড় ধরে ছিড়ে ফেলে। গা থেকে ছাড়িয়েই ক্ষান্ত হয়। সামনের চেয়ারটা পড়ে রয়েছিলো। পায়ের আগা দিয়ে তুলে ফেলে ধপ করে রিতীর সামনে বসে। ফাটা বাঁশের মতো চিৎকার করে বলে,
— ঐ গেঞ্জিও খুল। তোর হায়াত শেষ। আজকে তোরে বাগে পাইছি। অনেক রিকোয়েস্ট করছি শুনস নাই। এই জীবনে যা না করিনাই আজকে তাই করতে হবো আমাকে। মেয়ে মানুষরে জোর করা আমার কোন কালেই পছন্দ না। কিন্তু আজকে তোরে আমি জোর করবো।আমি যাদের চাই তারা বেশীক্ষন আমার থেকে দূরে থাকতে পারেনা। আর তুই দেড়টা বছর থেকে আমারে নাকানিচোবানি খাওয়াইতাছোস। আজকের পর থেকে তুই হবি আমার গোলাম। তরে যেমনে যেমনে বলমু তেমনে তেমনে চলবি। কি হলো খুল।কথা কানে যায়না?
রিতীর মুখে কথা নাই। বুকের উপর আড়াআড়ি হাত রেখে ঠকঠক করছে কাঁপছে অনবরত। রিতীর কাপাকাপি সোহাগের বিরক্ত লাগে। ধমকে বলে,
— ঐ কাঁপা কাপি কমা। কমা কয়তাছি। শালী তুই কি কম্প মেশিন? স্থির হ বলতাছি। থাম। এক্ষুনি থামবি।
রিতী থামার নামে তৎক্ষনাৎ জ্ঞান হারায়। যখন চোখ খুলে তখন নিজেকে নিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে থাকে। ভাগ্যক্রমে এ যাত্রাই বেঁচে যায়। কিন্তু সোহাগের চেহারা মনে পড়লে বার বার কেঁপে উঠে।
রুম্পা এসে রিতীকে খাইয়ে দিয়ে যায়। পাশে বসে ছুটিও হা করে। কিছুদিন থেকে ছুটির ভালোই হয়েছে। নিজের হাতে আর খেতে হয়না। রিতীর সাথে সেও মায়ের হাতে খেয়ে নেয়। রুম্পা চলে যেতেই ছুটি ঝালে নাক টেনে বলে,
— বুঝলে আপু আমিও তোমার মতো একদিন গা ঢাকা দিবো। তারপর থেকে সবাই আমাকে তোমার মতো আদরযত্ন করবে।
— আমি গা ঢাকা দেইনা।
ছুটির কথায় রিতীর সোজাসাপ্টা উত্তর। দিন দিন রিতী কেমন রুড হয়ে যাচ্ছে।ছুটির ভালো লাগেনা। খুব ইচ্ছে করে প্রশ্ন করতে সেদিন কি হয়েছিলো? সোহাগ ভাই তোমার সাথে কি করেছিলো? সাহস হয়ে উঠেনা। কারণ রিতী আর হাসে না। রিতীর মুখে হাসি নেই মানে রিতীর মন ভালোনা। আর ভালো না মানে সোহাগকে তীব্র ঘৃণা এর একমাত্র কারন। ছুটি জানে কিছুটা। বাবার মুখে যতোটা শুনেছে ঠিক ততোটাই। তবে আসল ঘটনাটা নয় যেটা রিতী সোহাগ ছাড়া কেউ জানেনা। ছুটি সেসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। ফ্যানের দিকে দৃষ্টি রেখে আফসোস নিয়ে বলে,
— আপু তোমাকে বাবা মা কত আগলে রাখে আমাকে কেনো রাখেনা? আমার কি কখনো কষ্ট পায়নি?আমার দিকে কেনো সেভাবে নজর দেয়না?
— কারণ আমি চাইনা।
রিতীর কথায় ছুটি লাফ দিয়ে উঠে বসে। মুখ গোল গোল করে বলে,
— কেনো চাওনা?
— তোর জন্য আমি আছি। আর কাউকে লাগবেনা।
— কেনো লাগবেনা?
ছুটির এই একটার পর একটা বেহুদা প্রশ্নে রিতীর মেজাজ খারাপ হয়। তবুও ধৈর্য্য ধরে চেয়ার ঘুরিয়ে সরাসরি ছুটির মুখোমুখি হয়। কাট কাট গলায় বুঝিয়ে বলে,
— ধর তুই আমগাছে উঠার মতো এনার্জি পাচ্ছিসনা। কিন্তু তোর আমটা পাড়তে হবে এবং খেতে হবে। এখন না পাড়লে না খেলেও তোর কোন সমস্যা নেই। যখন এনার্জি হবে তখন পাড়বি বলে মনস্থির করে রেখেছিস। কিন্তু তোর বাবা মা তোকে এখনি ঠেলেই আমগাছে উঠিয়ে দিবে। কারন তারা তোকে নিয়ে বেশী সিরিয়াস হয়ে গেছে। আনান্য বিষয়ের থেকে আমটা পাড়া তাদের কাছে বেশী ইমপর্টেন্ট। কারন তোর এনার্জি দরকার। সেই আম পাড়বি আর তোকে তারা খাওয়াবে। সেই থেকে তোর এনার্জি হবে।ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোকে ঠেলে দিবে। নিজেদের ইচ্ছাতে তোকে চালাবে। সেসব বাদ দেই। এইযে দেখছিস বাবা মা আমাকে এতো পেম্পার করে এতে লাভ কি? তুই ভালোভাবেই জানিস এখনি আমার পেটে নাড়া দিয়ে উঠবে আর আমি গলগল করে সব বেসিনে ফেলে আসবো। আর বাবা যে এতো আমার মুখে হাসি ফুটাতে চেষ্টা করে আমাকে কিন্তু হাসাতে পারছেনা। কারন আমার হাসি আসেনা। এইযে তাদের এতো বাড়াবাড়ি আমার মাথায় চাপ লাগে। আমার অসহ্য লাগে। আমাকে কেনো তারা ছেড়ে দেয়না? আমার সময় প্রয়োজন। আমাকে সময় দিচ্ছে। আমি ঠিক হতে চাই। তাদের যত্ন ছাড়া আমি ঠিক হতে পারবোনা। তারা যা করছে আমার ভালোর জন্যই করছে । একটা সময় আমি তাদের যত্নে ঠিকই স্বাভাবিক হয়ে যাবো কিন্তু মাঝখানের এই দিনগুলো আমার কাছে কন্টকাকীর্ণ। এর থেকে যদি তারা আমাকে ছেড়ে দিতো, আমাকে মুক্ত করে দিতো, আমাকে আমার দুনিয়ায় ভালো থাকার সুযোগ দিতো তাহলে আমি শান্তিতে আরো তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারতাম। ছুটি আমার দম বন্ধ লাগছে। আমি আর রুমে থাকতে পারছিনা। আমি পড়াশোনা করতে পারছিনা। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি কাঁদতে পারছিনা। সেদিনের পর থেকে আমার কেনো কান্না আসেনা? পৃথিবীর সব বিষয়ে আলাদা আলাদা সলুশন থাকে। একটার সাথে আরেকটা মিলিয়ে দিলে হয়না। আমি আর পারছিনা। আমি সব বুঝি।বুঝেও নিজের জন্য কিছু করতে পারছিনা। কি করলে আমার বুকের উপর থেকে পাথরটা নামবে আমি জানি না। আমাকে হেল্প কর ছুটি। আমাকে পথ দেখা।
বলতে বলতেই রিতীর গা গুলিয়ে উঠে। পেটের ভেতর কিছুই যেনো হজম হয়না। দৌড়ে গিয়ে বেসিনে সব ঢালাও করে দেয়।
চলবে,
#বিষ_করেছি_পান(২১)
(কপি করা নিষেধ)
ছুটি বসে বসে অসহায় মন নিয়ে রিতীকে দেখে যায়। রিতী ফ্রেস হয়ে আসে। আগের মতোই বসে আবার বলতে থাকে,
— ছুটি তোর যে বিষয় নিয়ে মন খারাপ তা তোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও অন্যদের কাছে না। অন্যরা শুনলে টিটকারী দিবে হাসবে। বাবা মা শুনলে তোর গালে থাপ্পড় পড়বে। তোকে ঘর বন্দি করবে। তোর উপর নানান কিছু চাপিয়ে দিবে। একসময় সহ্য করতে না পেরে এই বয়সে ডিপ্রেশনে যাবি,স্বাস্থের ক্ষতি হবে নয়তো মরে যেতে ইচ্ছে করবে। ঠিক এই কারনেই আমি ঐ শয়তানটার কথা কাউকে বলিনি। এই সমাজে মেয়েদের দোষটাই প্রগড়। আমাকে ঐ শয়তানের হাত থেকে কে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে জানিস? বাবা আর সুবল কাকারা। রক্তের কোন সম্পর্ক নেই অথচ নিজের ভাতিজীর মতোই দেখে বলে আমার সম্মান এখনো অক্ষুন্ন আছে। অন্য কেউ আশে পাশের যাদের সাথে আমাদের তেমন খাতির নেই তাদের কেউ হলে আজকে বাবাও মাথা তুলে বাইরে হাটতে পারতোনা। হতে পারে আমি সুইসাইড করতাম। সবাই দোষটা আমাকেই দিতো। কারন আমি যুবতী সুন্দরী। আমার রুপ দেখেই ঐ বাখাটে গুলোর মাথা গেছে। ছয়জন ছিলো জানিস?আমাকে ছিড়ে খেতো। আমার সমস্যা আর তোর সমস্যা দুটো সেইম হলেও প্লট আলাদা।তুই ভালোবাসিস আমি বাসিনা। তোর ভালোবাসার ফুলের মতো পবিত্র আর আমার ঘৃণার মানুষ টা নীল বিষাক্ত। আমি জেনেশুনে বিষ পান করতে চাইনা। তুই আবেগে চলিস আমি চলিনা। তুই চেয়েও পাসনা আমি চাইইনা। তোর অনুভূতিটা সবার কাছে হাস্যকর। আর আমার টা ভয়ঙ্কর। মানুষের একটা একান্তই আশ্রয়স্থল লাগে জানিস?যে আশ্রয় তাকে ছায়া দিবে আড়াল করবে আগলে রাখবে। ভাইবোনদের ক্ষেত্রে বড় ভাই বা বোন হলো সেই আশ্রয়স্থল । তোর আছে তোর সুকপাল আমার নেই আমার কুকপাল। আমি খুব অভাববোধ করি জানিস? যে আমার কোন বড় ভাই-বোন নাই।আজ যদি কেউ একজন থাকতো তাহলে আমার সব কথা বাবা মাকে আগলাতে হতোনা। তাদের উল্টোধর্মী এই অত্যাচার গুলো সহ্য করতে হতোনা। বাবা মা অস্থির হয়ে থাকে সন্তানের কিভাবে ভালো হবে তাই তারা এসব করে। কিন্তু এই সময়ে সন্তানের উপর দিয়ে কি যায় তারা সেটা বুঝতে পারেনা। কারন তারা অনেক আগেই এই সময়টা পার করেছে আর অনুভুতি গুলো শূণ্যের কোঠায় পৌঁছিয়েছে। কিন্তু বড় ভাই/বোন সম্প্রতি এই সময়গুলো পার করে চলেছে। তাই ছোটদের মনের অবস্থা তাদের দায়িত্ব ভালোভাবেই নিজ হাতে তুলে নিতে পারে। চলার পথে সবাই সবার নিজ নিজ রোল প্লে করে। বাবা মা কখনো ভাইবোন হতে পারবেনা,ভাই-বোন কখনো বাবা মা হতে পারবেনা। সব কথা বাবা মার কানে দিতে নেই। এতে হিতে বীপরিতটাই বেশি হয়। তার ধকলটাও সামলাতে নয় সহ্য করতে হয়। আমি তোকে সেই পথে ছেড়ে দিবোনা। দু হাতে আগলে রাখবো।যেনো তোকে এই বিষয়গুলো ছুঁতে না পারে। আমি চাই তোর সবকিছু আমাতেই সীমাবদ্ধ হোক যতদিন না অন্যকেউ এসে আমাকে দায়িত্ত্বচ্যুত করছে। বাবা মার কানে যা দিতে হবে তা বুঝে শুনে ঠিকই দিয়ে দিবো। তোকে এটা নিয়ে আফসোস করতে হবেনা। ঘুমিয়ে পড়। আমার পড়া হবেনা।
ঘর ছেড়ে রিতী বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। এখান থেকে কোনাকোনি ভাবে ঝিমাদের বিল্ডিংটা দেখা যায়। ঝিমা বারান্দায় একা একা দাঁড়িয়ে আছে। বাঁধনের বারান্দায়। লাল নীল ফেইড়ি লাইটে আবছা বিষন্ন মুখখানা দেখা যাচ্ছে। হয়তো ভাইকে মিস করছে। হটাৎ ই কি থেকে কি হয়ে গেলো। আমরা যেরকম ভাবে ঝামেলা ছাড়া জীবন পাড় করার চেষ্টায় থাকি জীবন আমাদের সেভাবে চলতে চায়না। জীবনের একঘেয়েমিতা পছন্দ না। চলার পথে নিত্য নতুন সুধা পান করাই তার কর্ম।
________________
রমিজ উদ্দিন বাড়ী ছিলোনা। সেজন্য ই সোহাগকে জেল থেকে বের করতে দেড়ী হয়ে গেলো। শহরে না থেকে তিনি যা করতে পেরেছেন তাই ঢেল! সোহাগের গায়ে একটা আচর কাটতে দেননি। এমপি সাহেবের সাথে রমিজ উদ্দিনের গলায় গলায় ভাব।ল্যাংটা কালের বন্ধু। বেশী কিছু বলেনি। শুধু বলেছে যে,
— আমার পোলার গায়ে একটা আচর পরলে তোর সাথে জীবন মরন সম্পর্ক শেষ।
ব্যাস এই কথাতেই কাজ হয়ে গেছে। অনেক আগেই জামিন হয়েছে তবে সোহাগ বের হয়নি। বাবার জন্য জেলখানায় বসেই কাটিয়েছে। বাবাকে দেখাতে চায় দেখো আব্বা তোমার পোলা একটা মেয়ের লাইগা জেলে পচে মরছে। এবার কও তুমি সেই মেয়েরে এনে দিবা কিনা?নয়তো এ জীন্দাগী থাকবোনা। তবে তেমন কিছু ই হয়না। জেলে থাকতে থাকতে সোহাগের মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। বাবার দেখা পেয়েও কথা বলেনি। রমিজউদ্দিন থানায় এসে হায় হায় করতে করতে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে এসেছে। বাড়ি ফিরতেই সোহাগ সোহাগীর বুকে মুখ গুজেছে। জেল খাটতে খাটতে সে অশান্ত। তাকে একমাত্র মা ই শান্ত করতে পারে। রমিজউদ্দিনের কষ্টে কান্না পাচ্ছে। তার বংশের বাতির একি হাল দশা! মাথায় হাত বুলিয়ে সুধায়
— আব্বা ও আব্বা। আমি কি তোমারে সুখে রাখতে পারতাছি না? আমার সব কিছুই তোমার। তুমি যা চাইছো আজ পর্যন্ত আমি সব দিছি। আমার বড় সপ্ন ছিলো। একমাত্র পোলা আমার । তারে ডাক্তার বানামু। আমি হমু ডাক্তারের বাপ। আমার এই সপ্নটাও জলাঞ্জলি দিছি। তুমি পড়তে চাওনাই সেটাও মেনে নিছি। তুমি বাইক,গাড়ি চাইছো তাই দিছি। ব্যবসা সামলাবানা আমি নিজেই সামলাইতাছি, মদ খাও পার্টি করো আমি নিজে ব্যান্ডেড এনে দিছি। কত কত সুন্দরী মেয়ে তোমার কাছে নিজে সায় দিছি। এতো কিছুর পরে আমার সম্মানের কথাটা তুমি ভাইবা দেখলানা আব্বা? আমি তোমার আব্বা, তোমার দাদা, তোমার চৌদ্দ পুরুষ কোনদিন জেল কি জিনিস চোখে দেখে নাই আর তুমি বংশের মান সম্মান ডুবাইয়া দিলা। তুমি জানো আমি যখন তোমার জন্য তোমার এমপি চাচার কাছে ফোন দিয়েছি আমার মুখ থেকে কথা বেরোয়নাই। মাথা নিচু হয়ে আসছে। এমন কেন করলা আব্বা? বাপের মাথা কেন নিচে নামাইলা? আমার মুখটা কি তোমার একবার ও মনে পড়লো না?
— আমারে মাপ দেও আব্বা। আমার কিছু করার ছিলোনা।
— করার ছিলোনা? কোন মেয়ের জন্য তুমি জেলে গেছো এটা আমি মেনে নিবোনা? তোমার কি মেয়ের অভাব যে তুমি জোর করে জিম্মি করবা?
— আমি কি করবো আব্বা? ঐ মেয়ে কেন মানেনা? আমার মাথা খারাপ করে দিতাছে আব্বা। দেড়টা বছর থেকে ঘুরতাছি আমারে একটা চান্স দিলোনা কতোটা খারাপ লাগে জানো আব্বা? আমি ঘুমাইতে পারিনা খাইতে পারিনা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারিনা খালি মনে হয় এইযে সামনে দাঁড়ায়ে আছে মেয়েটা। দিনকে দিন টগবগ করে গোলাপের কলি ফুটতেছে তো ফুটতেছে।ধারনার বাইরে সুন্দর হয়ে যাইতাছে। চোখের সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতাছে। ওরে দেখলে আমি ঠিক থাকতে পারিনা। ইচ্ছে করে চাইপ্পা ধরে রাখি। ওরে হাতের মুঠোয় না পাওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাইতাছিনা। কি হয় একটা দিন আমারে দিলে? কতো খোসামত করলাম। ছেসরার মতো বললাম, পিরিতি তোমার রুপ আমার তৃষ্ণা মেটায়। তবুও আমার কথা শুনলোনা। তাই আমি রাগের মাথায় ওরে তুইলা নিয়ে গেছি। আমার অন্য কোন মেয়ে আর ভাল্লাগেনা। অনেক হয়ছে। ঐ মেয়ের জন্য আমি জেলে গেছিতো? তোমার মুখ নিচু হয়ছে! ওরে আমি ছাড়তাছিনা। এক্কেবারে ছাড়তাছিনা।
রাগে গজগজ করতে করতে সোহাগ রুমে চলে যায়। সোহাগী ডেকে বলে,
— খেয়ে যা আব্বা।
সোহাগের সাড়া না পেয়ে কাজের মেয়েকে বলে তাড়াতাড়ি খাবার বেড়ে আনতে। এতোক্ষন বাপ বেটার কথা গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রমিজউদ্দিন কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে। তর্জনী আঙুলে কপালে স্লাইড করতে করতে বলে,
— সোহাগী আমার পোলার কথা তো সুবিধার লাগলো না।
— তাইতো মনে হয়তাছে। আব্বা আমার এমন হাঁসফাঁস করে কে?
সোহাগীর কন্ঠে অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। রমিজউদ্দিন কি একটা ভাবে। কপাল থেকে আঙুল সরিয়ে হাঁটুতে রাখে। হু হু করে গম্ভীর ভাবে হাসে। সোহাগীর ভ্রু কুচকানো মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
— আমার পোলা অতিসত্বর প্রেমের বিষ পান করতে যাচ্ছে আমার ধারনা হয়। চিন্তা একটাই এই চক্করে মেয়েটার না বড়সড় কোন ক্ষতি হয়।
— তুমি দেখে রাখতে পারবানা?
— নাহ। বাপ হয়ে পোলার পেছনে গোয়েন্দা লাগাবো এমন বাপ আমি নাহ।
_____________________
ঝিমাকে আজ একবার আসতে বলেছিলো বাঁধন। বাঁধনের জানামতে ঝিমা এলে আর কেউ আসবেনা। হসপিটালে একজনের বেশী কেউ কখনো থাকেনা। যখন মা আসে তখন ঝিমা বাবা আসেনা। যখন বাবা আসে তখন ঝিমা মা কেউ আসেনা আবার যখন ঝিমা আসে তখন মা বাবা কেউ আসেনা। বাঁধনের মাথায় অন্য চিন্তা। হাত পা নাড়াতে সক্ষম এখন। কতো যে অপেক্ষা! নিজের সুস্থতা দেখে বাঁধন শান্তি পায়। যখনি সুমির কথা মনে পড়ে তখনি মনটা আফসোসে বিষিয়ে যায়। ঝিমা এলে প্রস্তাবটা অকপটে রাখে। তবে ঝিমা বিরক্ত হয়। কড়া গলায় বলে,
— মা বলেছে তোমাকে আর পেছন ফেরে না তাকাতে। সুমি আপুকে ভূলে যেতে।
বাঁধন মুচকি হাসে। ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বলে,
— ভাবী থেকে আপুতে চলে গেলি? বাহ। ভালোই উন্নতি।
— আমাকে ক্ষমা করো ভাইয়া। আমি মায়ের অবাধ্য হতে পারবোনা।
— তোকে মায়ের অবাধ্য হতে বলছিনা। কিন্তু আমি দেখতে চাইছি মা কেনো তোদের সবাইকে বাধ্য করছে। ঝিমা মা অবুঝপনা করলেও তুইতো অবুঝ না। সুমি আমার বিয়ে করা বউ। আমাকে তোরা আটকাতে পারিসনা।
— বিয়েটা বাদ হয়ে যাবে ভাইয়া। চিন্তা করোনা।
— কেনো বাদ হবে? সুমির কি জ্ঞান ফিরবেনা? অবশ্যই ফিরবে। ফিরতে হবে। আমি কেনো বিয়েটা বাদ করবো বলতে পারিস? তোরা চাইছিস বলে?
ঝিমা এক ধ্যানে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। ভাইয়ের বিষয়ে অনেক চিন্তা করেছে সে। যতবার ই হিসাব মেলাতে গিয়েছে ততোবার ই শূন্য মিলেছে। আর চিন্তা করতে পারছেনা। ছোট মাথা বিরোধ জানিয়েছে আর প্রেশার নিবেনা। ঝিমা বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসে হুইলচেয়ার হাতে। বাঁধন স্বস্তির শ্বাস ফেলে। ঝিমা বিনা বাক্য ব্যায় এ বাঁধনকে ধরে চেয়ারে বসায়। বাঁধনের এমন ব্যবহার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।তবুও চুপ থাকে। ভবিষ্যত এ কি হতে যাচ্ছে তা ভেবেই কপালে ঘাম জমে। সুমিকে দেখতে যাচ্ছে। কতগুলো দিন পর বিয়ে করা বউটাকে দেখবে। সেই বউ চুপ থাকবে। কথা বলবেনা। নড়াচড়া করবেনা। বাঁধনকে দেখবেনা।শুধু শ্বাস টানবে। এমন দৃশ্য দেখার জন্য ই বাঁধন একটু একটু করে এগুচ্ছে।
আইসিইউ রুমের সামনে একটা কিশোর সামনে পড়ে। ছেলেটা সম্পর্কে বাঁধনের শেলক হয়। সুমন নাম। বিয়ের আগে একদিন কথা হয়েছিলো। বিয়ের দিন খেয়াল করেনি। সুমন বাঁধনকে দেখেই সালাম দেয়। কাছে এসে জিজ্ঞেস করে,
— ভাইয়া ভালো আছেন?
— তোমার বোনের কি অবস্থা?
— জীবন আছে।
সোজাসুজি প্রশ্ন সোজাসুজি উত্তর। বাঁধন এগুয় সামনের দিকে। ঝিমা একপাশে দাঁড়ায়। সুমন হেল্প করে। অনুমতি নিয়ে বাঁধনকে ভেতরে যেতে দেওয়া হয়। ঝিমা আসেনি। বাঁধন যদি কোন রিয়েক্ট করে ঝিমা সেটা দেখতে পারবেনা। ঝিমা মনে মনে ভয় পাচ্ছে। কিন্তু আশ্চার্য জনক ভয়ের কিছুই ঘটে না। বাঁধন কোন রিয়েক্ট ই করেনা। বাধনের চোখ জোড়া ছল ছল করে উঠে। বোধহয় এক দু ফোঁটা গড়িয়েও পড়ে। আবছা দৃষ্টিজোড়া নিবদ্ধ হাত বিহীন জীবন্ত লাশের দিকে। যার কোন বোধবুদ্ধি নেই,বাকশক্তি নেই, পৃথিবীকে ধারন ক্ষমতা নেই। বাঁধনের ধারনাই ঠিক। তবে দুটো হাত ই যে থাকবেনা সেটা ভাবতে পারেনি। বাঁধন ভেবেছিলো হয়তো একটা পা নষ্ট হয়েছে নাহয় চোখ নষ্ট হয়েছে। তাই মা বাবা ঝিমা এরকম আচরণ করছে। সুমির সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিতে বলছে। বাঁধন এগিয়ে যায়। সুমির কাছাকাছি আসে। ফর্সা মুখখানা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ঠোঁট দুটো শুষ্ক হয়ে আছে। বাঁধনের মনে পড়ে বিয়ের দিন এই মুখখানা কি যে সুন্দর দেখাচ্ছিলো। মেকাপে সাজে ফুটন্ত গোলাপ এর মতো লাগছিলো। যে হাত জোড়া আজ নেই সেই হাত জোড়া দিয়েই তো ছেলেমানুষী ইচ্ছেটা পূরন করতে গিয়েছিলো। নিজে ড্রাইভ করে শ্বশুর বাড়ি আসবে। কি পাগলামী!অনুমতি পাওয়া মাত্রই নিষ্প্রাণ চোখ জোড়া হেসে উঠেছিলো। পুরোনো স্মৃতিগুলো নড়ে চড়ে উঠছে। বাঁধন খেয়াল করে তার বুকে কষ্ট হচ্ছে। সামনে জীবন্ত লাশের মতো পড়ে থাকা একসময়কার সুন্দরী চঞ্চল সুমি মেয়েটাকে দেখে তার কষ্ট বাড়ছে। আবার বাঁধনের চোখ ছল ছল করে উঠছে। বাঁধন আর নিজেকে এখানে রাখার ক্ষমতা রাখে না। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ঝিমাকে ঢেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসে। নিজের কেবিনে এসেও ছটফট করে।মাথার চুল খামচে পড়ে থাকে। ঝিমা ফুঁপিয়ে কাদে। নাক টেনে টেনে বলে,
— ভাইয়া তুমি জোরে জোরে শ্বাস নিবে? সবার সাথে দেখা করবে? মা কে ডাকবো?বাবাকে? না ডাকবোনা। তারা তোমাকে আরো হতাশ করবে। ভাইয়া আমার গ্যাং কে ডাকবো? শিপ্রুদেরকে?
— ছুটিকে সহ আসতে বল। এই মুহূর্তে আমার সবাইকে প্রয়োজন।
— ছুটি কি আসবে?
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা ~