বিষ করেছি পান পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
525

#বিষ_করেছি_পান(২৬)

(কপি করা নিষেধ)
মা। তোমার লাল বেনারসী টা দিবে? যেটা তুমি বিয়েতে পড়েছিলে। আর তোমার গহনা গুলোও।
— পড়বি?
— তুলির বোনের আকদ হবে। সেখানে আমরা সব বান্ধবীরাই যাবো। বলেছে সবাই সবার মায়ের বেনারসী শাড়ি পড়বে। আমিও পড়বো। নতুন দুলাকে কনফিউশনে ফেলতে হবে।
— তুলির বোনের আকদ?কোই জানিনাতো? তা হলে আমাদের তো ফোন করতো! দাওয়াত দিতো!
— অনুষ্টান হচ্ছেনাতো।এমনি ঘরোয়া আয়োজন। আপু আমাদের খুব ভালোবাসে। তাই বাইরের বলতে শুধু আমরাই যাবো। তোলে দেবার সময় দাওয়াত দিবে।
— কখন আকদ হবে?
— কাল রাতে। মা আমি কিন্তু সেখানে থাকবো।
— একদম না। তোর বাবা মানবেনা।
— তু্লির কথা বলবে। তাহলেই মানবে। একটা রাত ই তো। সকাল সকাল চলে আসবো দেখো ।
ছুটি লাফিয়ে উঠে। রিতীকে জড়িয়ে বলে,
— আপু আমিও যাবো। আমাকেও নিয়ে যাও।
— পরের বার। এখন না।
— এখন গেলে কি হবে?
— না গেলেই বা কি হবে? আমার বান্ধবীর বোনের বিয়ে। তোর তো না।
— আপু তুমিও কিন্তু আমার বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়ে..….
এটুকু বলেই চুপসে যায় ছুটি। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। রিতী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মায়ের পিছু পিছু গিয়ে আলমারি থেকে শাড়ী বের করে আনে। সোনার গহনা গুলো রুম্পা বের করলে রিতী কিছু একটা ভেবে না করে দেয়। রেড স্টোনের বড় একটা সীতাহার বের করে নেয়। শাড়ী সীতাহার এক করে বলে,
— বাহ! বেশ ভালোই মানাবে।
রুম্পা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
— জামাই কি করে রে? চাকরী নাকি ব্যবসা?
জামাই কিছুই করেনা। বখাটেগিরি করে ঘুরে বেড়ায়। মারামারি করে। মদ খায়। গাজা খায়। মেয়েদের অসম্মান করে। তোমার মেয়েটাকেও কলঙ্ক মাখাচ্ছে।
– কিরে? জামাই কি করে?
মায়ের ধাক্কায় ধ্যান কাটে রিতীর। মিনমিনিয়ে বলে,
— জামাই কিছুই করেনা। বাবার অনেক টাকা পয়সা সম্পত্তি আছে।
— বাবার মতই থাক। তাই বলে ছেলে কিছু করবে না? কর্ম ছাড়া ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিলে কখনো সুখ শান্তি হয়না বুঝলি? বউয়ের যে কোন কিছু প্রয়োজন হলেই বাবার কাছে গিয়ে হাত পাততে হয়। সংসারে দাম থাকেনা। দেখেশুনে গার্ডিয়ানরা কিভাবে এরকম একটা ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে?
রিতী মনে মনে বলে, ‘ ছেলে যদি টানে মেয়ে যদি যায় তাহলে গার্ডিয়ান কি করবে মা? পারবা কিছু করতে? আজ হোক কাল হোক কাল তোমার মেয়েকে কলঙ্কিত করেই ছাড়বে। তোমরা কিছুই করতে পারবেনা। ‘

পরদিন দুপুর নাগাদ রিতী মা বাবা তমালকে বলে ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।তুলির বোনের বিয়ের কথা শুনে ছানোয়ার ও আর আটকায় না।তুলি রিতীর সব থেকে কাছের একজন বান্ধবী। দীর্ঘ বারো বছরের বন্ধুত্ব তাদের। একেবারে অন্তপ্রাণ। রুম্পা ছানোয়ার ও তুলিকে বেশ স্নেহ করে। পথিমধ্যে ছুটির সাথে দেখা হয়। স্কুল থেকে ঝিমার সাথে ফিরছে। রিতী ঝিমাকে জিজ্ঞেস করে,
–বাঁধন ভাই আজ নিতে আসেনি?
— না। ভাইয়া আজ হসপিটালে গিয়েছে সুমি আপুকে দেখতে।
— ভাবী ডাকিস না? ভাইয়ের বউ তো হয়েছে।
— নাহ। কয়দিন পর তো আর ঐ নামমাত্র সম্পর্ক থাকবেনা। শুধু শুধু ভাবী ডেকে একচুয়েলি যে আমার ভাবী হয়ে সারাজীবন থাকবে তার ঘটে অভাব ফেলতে যাবো কোন দুঃখে?
— এমনভাবে বলছিস যেনো সুমি ভাবী কোন অন্যায় করে ফেলেছে?
— উহু। অন্যায় করেনি। পূণ্য ও করেনি। বরং আমার ভাইয়ের জীবনে অভিশাপ ডেকে এনেছে।
— এভাবে বলেনা ঝিমা। এগুলো মা দাদীদের কথা।
— আমি জানি বিয়ে জীবনে বরকত ডেকে আনে। রিযিক বাড়ে। উন্নতি হয়। সুখ বয়ে আনে। কোথায় কিছুই তো হচ্ছেনা বরং তার উল্টোটা হচ্ছে। আমার ভাই দিন দিন কষ্ট পাচ্ছে,সংসারে অশান্তি হচ্ছে, অনেক অনেক টাকা খোয়া গেছে এটাকে কি বলবে? কোন কথাই আপনা আপনি উঠে আসেনা। কিছুটাতো সত্যি থাকে।
— ভাইকে যেতে দিলি কেনো? ধরে রাখতে পারলিনা?
— আমার ভাইতো নিষ্ঠুর নয়। মানবিকতা দায়িত্ত্ব কোনটাই সে অশ্বীকার করতে পারবেনা।
রিতী ছুটির দিকে তাকায়। একমনে ঠোঙা থেকে নিয়ে বাদাম চিবুচ্ছে। এদিকে কান ই দিচ্ছেনা। ঝিমার কথায় কোন প্রতিভঙ্গিও প্রকাশ পাচ্ছে না। তাহলে কি ছুটির মোহ কেটে গেলো? বাঁধন নামের পাগলামিটা থেমে গেলো? ছুটি কি বোঝদার হয়ে গেলো? ভেবেই শান্তি অনুভব করে রিতী। মুচকি হেসে ছুটিকে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। ছুটিও বাদামের ঠোঙাটা ঝিমার হাতে দিয়ে রিতীর পাঠে হাত রাখে। রিতী ছুটির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
— যা। সাবধানে বাড়ি যা।
— পার্লার থেকে সাঝবে?
— নাহ। তুলি সাজিয়ে দিবে।
— অনেক গুলো ছবি তুলবে।
— আচ্ছা।

তুলি দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা থেকে এক শাড়ি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছেনা। রাগে দুঃখে শাড়ি না পড়েই বসে থাকে। রিতী এসে দেখে সারা বিছানায় তুলির শাড়ী ছড়িয়ে আছে আর মাঝখানে তুলি বসে রাগে ফুসফুস করছে। রিতীকে দেখেই বলে,
— এতোক্ষন লাগে! নে এবার আমার শাড়ি পরিয়ে দেয়। আমি কিছুতেই পড়তে পারছিনা।
— আন্টিকে বললেই তো পড়িয়ে দিতো।
— মা মায়ের কাজে আছে। বলেছিলাম বকে পাঠিয়ে দিয়েছে। তুই না চেয়েছিস মায়ের শাড়িতে ছবি তুলতে এখন তুই শাড়ি পড়িয়ে দে।
— বিছানা থেকে নেমে দাড়া। তোর সাজ কমপ্লিট হলে আমাকে হেল্প করবি।
রিতী তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দেয়। হাত খোপা করে আসার সময় নিয়ে আসা দুটো বেলির মালা থেকে একটা পরিয়ে দেয়। তুলি আগেই সেজেছিলো। এবার রিতীকে সাজিয়ে দেয়। লাল বেনারসী, কড়া লাল লিপস্টিক, সীতাহার, খোঁপায় বেলীর মালা পড়ে দুজনকেই অন্যরকম লাগছে। যা তারা নয়। অবিবাহিত মেয়ের মাঝে বিবাহিত একটা ভাব চলে এসেছে। তুলি আয়নায় দাঁড়িয়ে বলে,
— বাহ রিতী!আমাদের তো দারুন লাগছে।
— হুম। বউ বউ লাগছে। জানিস তুলি মনটানা খুব বিয়ে বিয়ে করছে।
তুলি খিল খিল করে হাসতে থাকে। ‘ সাজন কি ঘর আয়ে..সাজন কি ঘর আয়ে..’ গাইতে গাইতে টেনে নিয়ে ছাদে চলে আসে। দুইজনে কয়েকটা সেল্ফি নিতেই তুলির বড় বোন চলে আসে। তুলি রিতীকে অনেক স্টাইলে ছবি তুলে দেয়। পুরো বিকেল দুই বান্ধবী মজা করে সন্ধ্যার আগে রিতী তুলির বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ফোন অন করতেই দেখে সোহাগের তিপ্পান্নটা
এস এম এস। রিতী দেখেনা। সোহাগকে কল দিয়ে নিজের স্থানের কথা বলে। সোহাগ দশ মিনিটের মাথায় গাড়ি নিয়ে হাজির হয়। গাড়ি আজ বাদল ড্রাইভ করছে। সোহাগের ঈদ লেগেছে। উত্তেজনায় আর গাড়ি ড্রাইভ করতে পারেনা। তাই বাদলকে ড্রাইভ করতে বলে ব্যাকসিটে বসেছে।গাড়ি থামতেই রিতী গাড়িতে উঠে বসে। সোহাগ রিতীকে দেখে বাকমূর্তি হয়ে যায়। চোখ বড় করে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টি যেনো কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে। রিতী সোহাগের দিকে না তাকিয়ে সামনের ফ্রন্ট মিররে চোখ রাখে। সোহাগ ফুল স্লীভ শার্ট পড়েছে। ফর্সা গায়ে কালো গোলাপের মতো লাগছে। চুলগুলো সেট করায় মাত্রাতিরিক্ত হ্যান্ডসাম লাগছে। এমন পুরুষ কে না চায়? সবাই সৌন্দর্যের পাগল। কিন্তু ভেতরটা যে নর্দমার মতো নোংরা।সোহাগ ঢোক গিলে মৃদু স্বরে ডাকে
— পিরিতি?
— হুম?
— শাড়ী পড়ছো কেনো?
— আপনার জন্য।‌সুন্দর লাগছে না?
— মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এতো সুন্দর কেনো? রিয়েক্ট দিতে ভূলে গেছি। পিরিতি?
— হুম?
— তুমি কি সিউর? আসলেই! এতো সহজে? বিশ্বাস হচ্ছেনা। পিরিতি! তুমি এতো সুন্দরী!
রিতী সোহাগের দিকে তাকায়। সোহাগের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে। অথচ গাবিতে এসি চলছে। রিতীর তাকানোতে সোহাগ হাঁসফাঁস করছে। মনে মনে প্রমোদ গুণে রিতী।
— ঘামছেন কেনো? আমাকে বেশী হট লাগছে বুঝি ?
সোহাগ উত্তর দেয়না। জোরে শ্বাস ফেলে রিতী।
— বিশ্বাস করুন। আমি আপনার কাছে এসেছি। মুক্ত হতে এসেছি। আমাকে না পাওয়া পর্যন্ত আপনি আমাকে ছাড়বেননা আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি। আপনার চাওয়া পূর্ণ করে নিজেকে মুক্তি দিতে এসেছি।কি দিবেন না মুক্তি?
মৌন মুখে বাদলের দিকে তাকিয়ে আছে সোহাগ। বাদল একটু পর পর পেছন দিকে তাকাচ্ছে। মুখে লটকে রয়েছে নোংরা হাসি। রিতীকে দেখার পর থেকেই অস্থিরতা অনুভব করছে সোহাগ। কোন কিছুই তার স্বাভাবিক লাগছেনা। একটা চক্রে ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। কেনো হচ্ছে,কেনোইবা হবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। সোহাগ অল্পস্বরে রিতীকে বলে বসে,
— গা ঢেকে নাও।
রিতী আড় চোখে তাকায়। সোহাগ কি একটু বেশি ঘামছে? নাকি আগেরটুকুই আছে? মেলাতে পারেনা। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে সব ঠিকঠাক। তাহলে? সোহাগ আবার বলে,
— শাড়ি ঠিকঠাক করে বসো।
রিতী আরেকদফা নিজেকে দেখে। ঠিকই তো আছে। সোহাগের কথা বিরক্ত লাগে তার। হুট করেই সোহাগ রিতীর ধারে চেপে বসে।পেছন থেকে শাড়ি টেনে কাঁধ সহ ঢেকে দেয়। রিতী চমকে তাকিয়ে থাকে। কি হলো এটা? ভাবনার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সোহাগ শান্ত গলায় বলে,
— বাদল সামনে দেখে ড্রাইভ কর। এক্সিডেন্ট যেনো না হয়।
— জি ভাই। বলে বাদল হাসিমুখে ড্রাইভ করতে থাকে। গন্তব্যে পৌঁছার আগেই গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থেকে নেমে সোহাগকে ও নামায়। বাদল ও নেমে আসে। সাইনবোর্ডে ‘ কাজী অফিস’ নামটা দেখে সোহাগ রিতীর হাত টেনে ধরে।
— কোথায় যাচ্ছো? আমরা রিসোর্টে যাবো । এখানে কেনো?
— আপনার চ্যালাদের ডাকুন। কাজী অফিসে যাবো।
এবার সোহাগের বাঁধ ভেঙে যায়। রাগ উঠে যায় মাথায়। শক্ত করে রিতীর হাত ধরে ঝাঁকায়।
— এই মেয়ে? কি শুরু করেছো কি তুমি? সোজা রিসোর্টে যাবো কাজ সারবো বাড়ি চলে যাবা। কাজী অফিসে কি? বেনারসী পড়েছো, রং চঙ মেখে সেজেছো এসবের মানে কি? ঘোল খাওয়ানোর চেষ্টায় আছো? খেলা হচ্ছে না? আমাকে বল পেয়েছো?
— বিয়ে করবেন না আমায়?
— এই মেয়ে এই? তোমাকে আমি কখনো বলেছি বিয়ে করবো? কিসের বিয়ে? শোনো একদম ফাঁসানোর চেষ্টা করবেনা আমাকে। চলো।
— যাবোনা আমি। আমাকে বিয়ে করবেন আপনি। আজ এক্ষুনি। সাক্ষী হবে আপনার চ্যালা ফ্যালারা।
— আমি তোমাকে বিয়ে করবোনা। বিয়ে করার কথাটা আসছে কোই থেকে?
— আমি চেয়েছি তাই আসছে। আপনার মনের শান্তির জন্য আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। আমার নিজের পবিত্রতা রক্ষার্থে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন। তারপর আপনার সাথে আমি রিসোর্টে যাবো। তার আগে নয়।
— পিরিতি জেদ করেনা।
— জেদ না। এটা আমার চাওয়া। ভয় পাবেন না। আপনার মতো খারাপ লোকের সাথে আমি কখনোই সংসার করবোনা। আর এই বিয়ে কেউ জানবেনা।আমি সব সময় চেয়ে এসেছি যে ব্যক্তি প্রথম আমার পানিগ্ৰহণ করবে সে একমাত্র আমার স্বামীই হবে। সংসার না করলেও বাসরটাতো হবে। আপনার চাওয়ার মূল্য দিতে পারি আমার চাওয়ার কি কোনো মূল্য হবে না?
— খবরদার আমাকে ভুলানোর চেষ্টা করবেনা।
— বিয়েটা করুন নয়তো আমি আজ এখান থেকে যাবোনা।বউ সেজেই বেরিয়েছি। আপনি বিয়ে না করলে অন্য কাউকে বিয়ে করে চলে যাবো। আমাকে কেউ রিজেক্ট করবেনা। ভেবে দেখুন।
— দেখ পিরিতি মাথা খারাপ করবিনা। আমি তোর সাথে রাত কাটাতে আসছি। বিয়ে করতে না।
— আমিও তাই করতে আসছি। বিয়েটাও করতে হবে। নয়তো আপনার চ্যালাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করে নিবো।তারপর আপনার চোখ ফাঁকি দিয়ে দূরে কোথাও চলে যাবো। আপনার খবর ওদের‌ জানা আছে। আপনি আমাকে খুঁজেও পাবেন না। ওরা নিশ্চয় আমাকে অসম্মান করবেনা।
— দূর শালি একটা কথা কবিনা। জাহান্নামে যা।তোরে আমি বিয়া করমুনা।
বাদলের হাত থেকে গাড়ির চাবি কেড়ে গাড়ি নিয়ে রাগের মাথায় সোহাগ চলে যায়। রিতী হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। সন্ধ্যা সাতটা পয়ত্রিশঁ। কাজীর সামনে গিয়ে বসে। কাজী জিজ্ঞেস করে,
— কনে আপনি।বর কে?
রিতী পেছনে তাকায়। একসাথে দাঁড়িয়ে আছে সোহাগের ছয়জন চ্যালা। চোখ মুখ লোভে চকচক করছে। এতোক্ষন সোহাগ রিতীর সব কথাই শুনেছে। রিতী নিশ্চয় এখন তাদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করতে বলবে। রিতীকে চোখ দিয়ে দুজন ইশারাও দিয়ে দিলো। রিতীর প্রায় কান্না চলে এলো। এ কাদের মধ্যে ফেসে গেলো? শেষ রক্ষা আল্লাহ করবেনা তার? ভীষন অসহায়ত্ব বোধ করতে লাগলো। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে লাগলো। ভেবেছিলো এদের কথা বললে সোহাগ তাকে বিয়ে করবে। সে তো না করেই চলে গেলো। এখন রিতী ফিরতে চাইলেও কি পারবে? এই লোভাতুর দৃষ্টি কি তাকে আড়াল করতে চাইবে? বুক কেঁপে উঠে রিতীর। ধলা দৌড়ে রিতীর পাশে এসে বসে পড়ে। রিতীর হাতখানা খপ করে ধরে বলে,
— রিতী আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি। তোমাকে আমি বিয়ে করবো। তারপর শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাবো।কাউকে দেবোনা তোমাকে। আজীবন সংসার করবো। প্রমিজ। কাজী সাহেব বিয়ে পড়ান।
রিতীর মাথা ঘুরিয়ে উঠে। হাতটা টেনে ছাড়িয়ে নিতে গেলে ধলা আরো জোড়ে ধরে রাখে। বাদল এসে বলে,
— রিতী তোমার মতো একটা সুন্দর মেয়েকে ধলার মতো আবাল ছেলে বিয়ে করতে পারেনা। আমার দিকে তাকাও। কতটা সুদর্শন পুরুষ তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
পেছন থেকে বলে উঠে,
— তোর থেকে আমরা দেখতে ভালো আছি। তোর বাপের তো কিছু নাই। আমার বাপের বড় রাইস মিল আছে।
এক পর্যায়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া শুরু হয়। হাতাহাতি পর্যায়ে চলে যায়। রিতীর শরীরটা ভীষণ দুর্বল লাগে। দুহাতে মাথা চেপে টেবিলের উপর ঘাড় এলিয়ে দেয়। কাজী চিৎকার করে উঠে,
— ঝগড়া থামান। আপনারা আসল বরকে ফোন দিন কনে সেন্সলেস হয়ে গেছে।
ফোন দেওয়া হয় সোহাগের নাম্বারে। সব থেকে ছোট চ্যালাটা বলে,
— ভাই আপনার পিরিতীকে বিয়ে করা নিয়ে ওঁদের মারামারি লেগেছে। ধলা বাদল কেউই ছাড়বেনা আপনার পিরিতিকে।

চলবে,

#বিষ_করেছি_পান(২৭)

(কপি করা নিষেধ)
রাগে গজগজ করতে করতে তিন কবুল বলে দেয় সোহাগ। সাইনটা করার সময় দুহাতে মাথা চেপে ধরে। মাথা থেকে হাত সরিয়ে কপালে দু আঙুল দিয়ে ঘষে। ইন করে আসা শার্ট টা টান মেরে ইন খুলে ফেলে। বেল্ট খুলতে গিয়ে আবার বেঁধে ফেলে। কাজী অফিসে কাজীর ডেকে নেওয়া চারজন সাক্ষী একসাথে চিৎকার করে উঠে। মহিলা সাক্ষীটি বলে,
‘ এসব কি হচ্ছে?স্যার আপনার কি গরম লাগছে? বেল্ট খুলে ফেলছেন কেনো?’
‘ এখনো খুলিনি ওকে? ‘ দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দেয় সোহাগ। মাথা নিচু করে আড় চোখে রিতীর দিকে তাকায়। রিতীর ঠোঁটে মিটি মিটি হাসি।

রিতী যখন চোখ বন্ধ করে টেবিলে মাথা রাখে তখনি কাজী চিল্লিয়ে উঠে সেন্সলেস হয়েছে বলে। সোহাগকে ফোন দেওয়ায়। রিতী ভেবেছিলো সোহাগ আসবেনা। রিতী যা করেছে সোহাগকে বোঝার জন্য। মাঝে মাঝে কেউ কেউ কাউকে ভালোবাসলে বুঝতে পারেনা। তবে তাদের ব্যবহার হয়ে যায় অদ্ভুত। কাল রাতে রিতী আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। আহামরি সে কেউ না। তবে সোহাগের চোখে কেনো সে রুপে অনন্যা?অন্য কারো চোখে তো না। সোহাগের কথা বার্তা আচরণ রিতীকে ভাবনার গভীরে টেনে নিয়ে যায়। সেই ভাবনার সত্যতা যাচাই করতেই তার এতো আয়োজন। সাথে এটাও ভাবনায় এসেছে যে সে যদি স্বেচ্ছায় অবৈধ ভাবে সোহাগের কাছে যায় তাহলে তার আখিরাতে জায়গা হবেনা। আর যদি ধর্ষিতা হয় তাহলে সমাজে জায়গা হবেনা । আর এদুটোর কোনটাই যদি না হয় তাহলে সোহাগের হাত থেকে মুক্তি পাবেনা। রিতীর ভাবনার ইতি টেনেছে। ধারণা গুলো মিথ্যে হয়েছে। সোহাগ রিতীকে কখনো ভালো চোখে দেখে না। যদি দেখতো তাহলে এখানে একা ফেলে চলে যেতো না। সোহাগের মতো ছেলেরা নোংরামোকে সাহসী কাজ ভাবে আর বিয়েকে পায় ভয়। একটা মাত্র রাত আর এখন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ রাত দুটোর মাঝে হাজার হাজার তফাত। তবে রিতীকে এখান থেকে বেরোতে হবে। কিভাবে বেরোবে? উপায় খুঁজে পায়না। চিন্তায় দম বন্ধ হয়ে আসে। ফোন করার দশমিনিটের মাথায় রিতীর চিন্তায় জল ঢেলে সোহাগ এসে উপস্থিত হয়। বাদলেরা ইতি মধ্যে ঘুষি খেয়ে একেকজনের নাক ফাটিয়ে ফেলেছে। সোহাগ তাদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে টেক্সিতে করে হসপিটালে পাঠায়। ফিরে এসে কাজীকে বিয়ে পড়াতে বলে রিতীর পাশে ধপ করে বসে পড়ে। কাজী সাক্ষী ম্যানেজ করে। যারা সাক্ষী দিতে এসেছিলো তারাতো হসপিটালেই চলে গেছে। প্রথমে রিতীকে কবুল বলতে বললে রিতী ঘোরের মাঝেই কবুল বলে দেয়। সোহাগ রিতীকে বিয়ে করবে এটা মোটেই ভালো বিষয় নয়। রিতী একটু আগে ভেবেছিলো আজ থেকে সোহাগ নামের কেউ তার পথে আর আসবেনা। আর এখন ভাবছে সোহাগ নামটা ছাড়া কেউ তার পথে থাকবেনা। রিতী নিজের ভাগ্যের টার্ন দেখে নিজেই মুচকি হাসে।যা সোহাগের শরীরে জ্বলন ধরায়। সজোরে হাতটা মুঠো করে টেবিলে বারি দিতেই কাজী সহ সবাই হকচকিয়ে যায়। রিতী দাঁত বের হেসে ফেলে। সোহাগ রিতীর দিকে ঘুরে বসে।

— ইচ্ছে করে এগুলো করছিস তাইনা? আমাকে অপদস্ত করা? গেইম খেলছিস আমার সাথে? তোর মতো মেয়ের সাথে থাকা যায় বিয়ে না।

সোহাগের কথায় রিতীর হাসি বন্ধ হয়ে যায়। মুহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে। সোহাগের মুখের সামনে মুখ এনে বলে,
— আমার মতো মেয়ে মানে কি বলতে চান?এই আমার মতো মেয়ের জন্যই কিন্তু আপনি এতোটা ডেস্পারেট। আমি পবিত্র। আপনার ঘরের বউ হয়েই আপনার কাছে যাবো পতিতা হয়ে নয়।

রিতীর রক্তিম চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনা সোহাগ। চোখ বন্ধ করে নেয়।
— আমাকে ফোর্স করোনা পিরিতি। আমি কিন্তু তোমাকে শেষ করে দিবো।

— আমিও আপনার হাতে শেষ হতে চাই। দেখবো স্ট্যামিনা কেমন আপনার।

সোহাগ কাজী সাহেবের দিকে তাকায়। রিতীর দিকে আঙুল তুলে বলে,
— কাজী সাহেব আমি এই মেয়েটাকে চিনিনা। এই মেয়ে আমার পিরিতি কিছুতেই হতে পারেনা। এই মেয়ে অন্যকেউ। এই বিয়ে হবেনা।

কাজী সাহেব নাকোচ করে বলে,
— আপনাদের বিয়েটা একটা ঝামেলার কান্ড। কি হচ্ছে আমার অফিসে? একটু আগে বললেই চলতো। বিয়ে তো পড়ানো হয়ে গেছে। রেজিস্ট্রি পেপারে সই করে দিন বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে যাক।

— রিজিস্ট্রি পেপারে সই না করলেও চলবে।

— কিন্তু আপনাকে করতে হবে। যা হচ্ছে তাতে বুঝতে পারছি এই মেয়েটার কপালে দুঃখ আছে। আপনি সই করুন। আইন ছাড়া বেআইনি কাজ আমি কিছুতেই করতে পারবোনা।

— আপনি কিন্তু আমাকে চিনেন না কাজী সাহেব।

— আপনার পাওয়ার কতটুকু তা আমার দেখা হয়ে গেছে। পুরুষ মানুষ বাইরে বাঘ হলেও বউয়ের কাছে আজম্ন বিড়াল হয়েই থাকে। এখন সইটা করুন।

সোহাগ ভীষণ অপমান বোধ করে। সাক্ষী চারজন ও সোহাগকে ফোর্স করে। সোহাগ সই করতে করতে রিতীকে বার বার সাবধান করে,
— আজ রাতটাই। যাস্ট আজ রাত। কেউ যদি ক্ষুনাক্ষরেও এই বিয়ের কথা না জানতে পারে। পিরিতি লাস্ট ওয়ার্নিং তোমার এই গেম আজকেই শেষ করবে।

রিতী চুপচাপ শুনে। কাজীর টাকা দিয়ে বেরোনোর সময় সাক্ষী মহিলাটি রিতীকে বলে,
— শোন নতুন বউ। তোমার স্বামী মোটেও পুরুষ মানুষের কাতারে পড়ে না। ছেলেগুলো তোমাকে নিয়ে এমন টানা হেচড়া করলো আর এই ছেলে এসে ওদের উত্তম মধ্যম না দিয়েই সাদরে হসপিটালে ভর্তি করলো! পুরুষ মানুষ কে বিশ্বাস করোনা। তোমার না ক্ষতি করে দে।ভালো মানুষেরা তো এখন নারী পাচারো করে। সাবধানে থেকো।

মহিলার কথা শুনে সোহাগ তেড়ে যায় মহিলার দিকে। ধাক্কা দিয়ে বলে,
— ঐ আমি আপনাকে কথা বলতে বলেছি? আমি নারী পাচার করি? আপনাকে পাচার করবো। আপনার ঘরে মেয়ে বউ নাই? বাড়ি যান। কাল থেকে আর মুখটাও দেখতে পারবেন না। শেষ করে দিবো আমি।

সোহাগ পাগলের মতো বিহেভিয়ার দেখে লোকগুলো টেনে হেঁচড়ে বের করে দেয়। রিতী সোহাগের শার্ট ধরে এনে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দেয়। নিজে বসে বলে,
— সরাসরি রিসোর্টে যাবেন। কি খেয়ে এসেছেন? ছিহহ?

— খেতে আর দিলি কই? রুপ দেখিয়ে আমার ভাই ব্রাদারদের মাথা নষ্ট করে দিলি। তখন যদি না আসতাম তো একেকজনের মাথা ফেটে যেতো। এখন তো মাত্র নাক ফেটেছে।
সোহাগের কথায় রিতী হো হো করে হাসতে থাকে। সোহাগ ড্রাইভ করছে আর রিতীর অট্টোহাসি মুখ বুঝে সহ্য করছে। একহাতে রিতীর মুখ চেপে ধরে বলে,
— আল্লার ওয়াস্তে চুপ কর। তোর হাসি আমার সহ্য হচ্ছেনা।
— আমার হাসি দেখলে বুঝি আপনার পাগল পাগল লাগে?
— তোর কি আমাকে ভয় লাগছেনা? কলিজা কাঁপছে না?
— ভয় কেনো লাগবে? কি করবেন আমার সাথে? আমি তো আপনার ই।
— তুই কিছুতেই আমার পিরিতি হতে পারিস না।
— পিরিতি বুঝি আপনার? এক রাতের জন্য?

সোহাগ রিসোর্টে এসে রিতীকে না নিয়েই বেরিয়ে যায়। রিতীও নেমে পিছু পিছু দৌড়ে আসে। সোহাগ রুমের লক খুলেই বারান্দায় চলে যায়। রিতী রুমের সবগুলো লাইট অন করে দেয়। ব্যাগটা রেখেই বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসে। মাথায় পানিও ঢালে। গ্লাসের পানি টুকু এক চুমুকে শেষ করে নরম বিছানায় বসে। টাওয়েলে মাথা মুছতে মুছতে রুমটাকে দেখতে থাকে। সিম্পল একটা রুম। দুপাশে ক্যাবিনেট,একটা ফ্রিজ,একটা টেলিভিশন,একটা সোফা,একটা ভ্যানিটি, একটা খাট। খাটের উপর গোলাপ দিয়ে লাভ শেইপ করা। খাটের দুপাশে রজনীগন্ধার দুটো বুকে। দারুন সুন্দর স্মেল আসছে নাকে। রিতী সোফায় টাওয়েল মেলে দেয়। বিছানায় বসে ভাবতে থাকে সে কি ঘুমোবে? বাসর রাতে কি কেউ ঘুমায়? বাসর রাতে স্বামীর আদর নেয়। সোহাগ কি তাকে আদর করবে? নাকি জানোয়ারের মতো ছিঁড়ে খাবে? নানান রকম চিন্তায় রিতীর ঘুম ক্ষিধে দুটোয় চলে যায়। নিজের অবস্থান সে চিন্তা করছে। অনান্য সময় হলে সে ভয়ে লেপ্টে যায়। আর আজ তার বিন্দুমাত্র ভয় লাগছেনা। এইযে সোহাগ নামের লোকটা কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে শেষ করতে আসবে তবুও ভয় লাগছে না। বরং অদ্ভুত একটা অনুভুতি খেলা করছে নিজের মধ্যে। এরপর কি হয় সে দেখতে চায়। কিন্তু সোহাগ রুমে আসেনা। রিতীর কৌতুহল ও দমে না। প্রকৃতি যে অশান্ত হয়ে উঠেছে তা রিতী জানেনা। যখন দেখলো বারান্দার দরজাটা মেলে দিয়ে সোহাগ দাঁড়ালো তখনি দেখতে পেলো বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।রুমের ভেতর থেকে বুঝা যায়না। বৃষ্টির ছিটায় সোহাগের শার্টে লেগেছে। হালকা ভিজেও গেছে। সোহাগ দরজা লক করে রিতীর দিক না তাকিয়েই সোফার উপর ছড়িয়ে রাখা টাওয়েল টা নিয়ে মাথা সহ ভেজা শার্টের উপরিভাগ মুছে। পিঠের দিকে চেপে চেপে মুছতে না পারলে রিতী সেচ্ছায় এগিয়ে যায়। টাওয়েলে হাত রাখতেই সোহাগ সরে দাঁড়ায়। ভেজা চুলে বেনারসীতে মোড়ানো মেয়েটিকে তার চোখে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগে। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করে উঠে। শরীর তেগড়ে উঠে। ধপ ধপ পা ফেলে রিতীকে দুহাতের বাঁধনে বেঁধে ফেলে। রিতী স্বাভাবিক। সে জানে এটাই হবে। মন থেকে খারাপ লাগাগুলো ঠিকরে উঠে। তবুও নিজেকে শক্ত রাখে। রিতীর শক্ত হয়ে থাকা দেখে সোহাগ ভ্রু কুঁচকে ফেলে। মুখের উপর মুখটা এনে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।রিতী নিরুত্তর। নিজের মাঝে অচেনা অনুভূতি সঞ্চার করে। লডাই করতে থাকে প্রতিনিয়ত সেই অনুভূতির সাথে। সোহাগ রিতীর কোমড় চেপে ধরতেই রিতীর টনক নড়ে। হালকা ব্যথায় উহ করে উঠতেই সোহাগের চোখে চোখ পড়ে। সোহাগ চোখ দুটো এখন বেশ শান্ত দেখাচ্ছে। রিতী মুচকি হাসে।
— মি. সোহাগ! রাত কিন্তু ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে। মনে রাখবেন সকাল অব্দি আর মাত্র ছয় ঘণ্টা আছে। মাত্র ছয়ঘন্টা। আপনার তৃষ্ণা মিটবে? শান্তি পাবেন আপনি?

সোহাগ রিতিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— এই মুহূর্তে আমার সব থেকে বড় অশান্তির নাম তুমি। আচমকা এমন ধাক্কায় রিতী পিছিয়ে যায়। সোহাগের কথায় বড্ড হাসি পায়। শান্তির হাসি। সোহাগ যতোটা অশান্তিতে ভুগছে রিতীর ঠিক ততোটাই শান্তি লাগছে। দুহাত বাড়িয়ে দিয়ে লাস্যময়ী ভঙ্গিতে বলে,
— সামনেই আছি করে নিননা শান্তি।
— তুমি রিতী কখনোই হতে পারো না। রিতী তোমার মতো জোর করে বিয়ে করবেতো দূর আমার সামনেই আসবেনা। কারণ রিতী আমাকে সহ্য ই করতে পারেনা।
— কে বললো? আমি বলেছি কখনো? বলিনি। আপনি কি ভেবেছিলেন শুধু আপনার আমার প্রতি ইন্টারেস্ট আছে জন্যেই আমি এখানে? উহু। আপনাকে আমার বেশ ভালো লাগে। আপনার ঐ লোভাতুর জোড়াচোখ,চাপ দাঁড়ি, সিগারেট খাওয়া কালো ঠোঁট, চওড়া কাঁধ উপপপসস! পাগল হয়ে যাই আমি।
— ফ্লাটিং করবেনা আমার সাথে পিরিতি।
— আপনার থেকেই তো শিখলাম। না করলে কি চলে?আমাকে নাকি আপনার নায়িকাদের মতো লাগে? চোখে জ্বালা ধরানো সুন্দরীদের মতো লাগে? আপনার সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে।
— তোমার এই মুহূর্তে আমার কাছে বিষাক্ত লাগছে।
— জেনেশুনে বিষ পান করতে চেয়েছেন আপনি। আমি করাবো সেই বিষ পান আপনাকে।
রিতী একটানে শাড়ির আঁচল ফেলে দেয়। সোহাগ চিৎকার করে উঠে।
— পিরিতি ডোন্ট। না পিরিতি। বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
— আপনার সাথে সময়টা কাটাবো বলে এসেছি। চোখ ধাঁধানো রুপ থাকতেও এভাবে অপমান করতে পারেন না আমার সাথে। কাছে আসুন।
রিতী হাত বাড়িয়ে দেয়। সোহাগ মাথা চেপে সোফায় বসে পড়ে। চুল টানতে টানতে বলে,
— আমাকে ছোবার চেষ্টাও করোনা পিরিতি।
— আপনাকে ছোবার পূর্ণ অধিকার আমার আছে।
রিতী এগুতে নিলেই সোহাগ ধাক্কা দিয়ে রিতীকে বিছানায় ফেলে দেয়। বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে,
— আমার সাথে এতো বড় খেলা খেলার স্পর্ধা তোমার কি করে হলো পিরিতি?
— যে যেমন তার সাথে তো তেমনভাবেই খেলা উচিত তাইনা? আপনার চ্যালারা কখন আসবে? সোহাগ আমি না আসলেই অনেক হট। আপনি একা পারবেন তো? নাকি এখনি ডাকবেন আপনার সাগরেদদেরকে?
পাশে সাজানো ফ্লাওয়ার ভাসটা সোহাগ স্বজোরে ফ্লোরে ছুঁড়ে মারে। রিতীর দিকে আঙুল তুলে বলে,
— আমাকে জালিয়ে কি পাচ্ছিস তুই এভাবে? আর একটা কথা বলবিনা বলে দিলাম তোকে।
— শুধু শুধু রাগবেন না সোহাগ। আপনার হাতে মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় আছে। তারপর আর কোনদিন পাবেন না আমাকে।
— ভয় দেখাচ্ছিস?
— এ রিসোর্টে কি আগের এরকম কোনো রেকর্ড আছে?
ভয়ে ঢুক গিলে সোহাগ। রিতী কি করতে চাইছে? সোহাগের ভয়ার্ত মুখ দেখে রিতী শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠে। বড্ড সুখ সুখ ফিল হচ্ছে। একসময় ঘুমিয়ে পড়ে।সোহাগ রিতীর ধারে কাছে এগোয় না। ভয়ে আতঙ্কে চুপসে থাকে। সারারাত ছটফট করে ভোর চারটার দিকে রিতীর কাছে এগিয়ে যায়। অন্যদিকে চোখ রেখেই শাড়ির আঁচল দিয়ে রিতীকে মুড়িয়ে নেয়। পাঁজাকোলা করে ঘুমন্ত রিতীকে কোলে তুলে রিসোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসে। রিতীর বাটন ফোনে কল দিয়ে ছুটিকে দরজা খুলে দিতে বলে। এতো ভোরে ছুটি সোহাগের কোলে রিতীকে এই অবস্থায় দেখে আকাশ থেকে পড়ে। বুকের মধ্যে ভয় চেপে ধরে। নানারকম প্রশ্নেরা আনাগোনা করে। সোহাগ রিতীকে নিয়ে গিয়ে তার রুমে শুয়িয়ে দেয়। ছুটির মাথায় হাত রেখে বলে,
— আপুকে দেখে রাখবে। সব সময় চোখে চোখে রাখবে। কোন প্রশ্ন করবেনা। কোনো ঝামেলা করতে চাইলে আমাকে জানাবে।

চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা~

#বিষ_করেছি_পান(২৮)

(কপি করা নিষেধ)
হসপিটালে এসে বাদলদের ইচ্ছামতো পেটাতে থাকে সোহাগ। ধলা গোঙাতে গোঙাতে মা চেপে ধরে। সোহাগ থুতনি চেপে ধরে মুখের সামনে আনে।
— তোদের বলেছিলাম আমার পিরিতি কে বিয়ে করতে চাইতে? বলেছিলাম আমি? কেনো পারাপারি করলি? বিয়ের চুলকানি উঠেছে তোদের না? চুলকানি ছাড়াচ্ছি তোদের।
মাথাটা ধরে বাদলের মাথার সাথে বারি মারে। বেচারাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ সোহাগ এসে আরো খারাপ করে দেয়। কেউ কিছু বলতে পারছেনা। দোষটা যে তাদের সেটা হারে হারে বুঝতে পারছে। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ এদিকে আসার সাহস পাচ্ছেনা। সোহাগকে হারে হারে চেনে। এর আগেও অনেকবার মারামারি করে রোগী ভর্তি করিয়ে গেছে সোহাগ। এটা নতুন নয়। তবে হসপিটালে ভেতরে এসে মারামারি এই নতুন। বাদল বলে,
— ভাই মাফ করে দেন। আমরা না বুঝে একাজ করে ফেলেছি।
— চুপ শালা ফকিরের পুত। তোদের জন্য আজকে আমার এই অবস্থা। তোরাই দায়ী।
— কি করবো ভাই? বড্ড লোভ লাগছিলো সুন্দরীকে দেখে।
— শালা তোর জিহবাই আর রাখবোনা আমি। কুত্তাগিরি ছুটাবো আজকে তোর।
মুখের ভেতর হাত চালান করে জিহবা ধরে মোচর দিতেই বাদল বীভৎস চিৎকার করে উঠে। ব্যথায় মুখটা অন্ধকার হয়ে তৎক্ষনাৎ মুর্ছা যায়। সোহাগ এতোটা ভংঙ্কর রুপ আজ অব্দি প্রকাশ করেনি যে যাদের ভাই বলে বুকে টেনে নেয় তাদের উপর পাষন্ডের মতো আচরণ করছে। উপায় না পেয়ে হসপিটালের মালিক সোহাগের বাবাকে ইনফর্ম করতে বলে। সবকিছু শোনে রমিজউদ্দিন অফিস ফেলে হসপিটালে চলে আসে। রমিজউদ্দিন হসপিটাল কর্তৃপক্ষের কাছে মাফ চেয়ে নেয়। ছেলে পুলেদের চিকিৎসা করতে বলে শক্ত হাতে সোহাগকে নিয়ে বেরিয়ে আসে। বাড়িতে এনে সোহাগকে জিজ্ঞেস করে,
— কি সমস্যা? কি করেছে তোমার ছেলেপুলেরা? কেনো মারছো তাদের?
— ওরা অন্যায় করেছে আব্বা।
— কি অন্যায় করছে সেটাইতো জানতে চাইছি। বলো কি করেছে?
— আমি বলতে পারবোনা আব্বা।
— কেনো পারবেনা? তুমি কি আমার মান সম্মান কিছু রাখবেনা? যাদের নিয়ে তোমার শক্তি তাদের তুমি এভাবে প্রহার করো।‌এরা তোমার থেকে চলে গেলে তোমার জন্য আমার নতুন বডিগার্ড আনতে হবে। কে জানে তারা তোমার ক্ষতি কামনা করবেনা? তুমি যেভাবে সব জায়গায় গুন্ডামি করে বেড়াও তুমি কখনোই একা চলতে পারবেনা ‌।
সোহাগের রাগ হয়। নিজের উপরেই রাগ হয়। উত্তর দিতে ইচ্ছে করে,আব্বা এই ভালোমানুষেরপোরাই যে আমার কত বড় ক্ষতি করতে চাইছিলো আপনি জানেন না। আমার নিঃশ্বাস টাইনা ছিঁড়তে চাইছিলো। আমার পিরিতিরে নিয়া আমার নাকের ডগার উপর দিয়ে ভ্যানিস হতে চাইছিলো। আমার অশান্তি বাড়াতে চায় এরা। কিন্তু মুখ থেকে এর একটা কথাও বের করতে পারেনা। তেজ নিয়ে বলে,
— আমার কাউরে লাগবোনা। আপনের পোলা একাই একশ আব্বা।

রিতী ঘুম থেকে উঠে বারোটা নাগাদ। চোখ খুলেই রুম্পার কথা কানে আসে। ছুটিকে তাড়া দিচ্ছে,
— তোর আপুকে উঠতে বল। আর কতো ঘুমাবে? খেয়ে আবার ঘুমাক। নিশ্চয় সারারাত ঘুমাই নাই। বান্ধবীরা সব একজায়গায় হয়েছিলো না? ঘুমাবে কি করে?
— তুমি যাও মা। আমি ডাকতেছি।
রুম্পা চলে যেতেই রিতী উঠে বসে। আশপাশ চোখ বুলিয়ে নিজেকে পরখ করে নেয়। ছুটির দিকে প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকে। ছুটি উঠে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসে। রিতীর সামনে বসে বলে,
— তুমি কি বিয়ে করে এসেছো আপু? সোহাগ ভাইকে?
ছুটির প্রশ্নে রিতী অন্যদিকে তাকায়। ছুটি নিজে থেকেই বলে,
— ভোরে তোমাকে সোহাগ ভাই দিয়ে গিয়েছে। আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম কিছুটা। আমার ধারণাই সত্যি তবে? এবার আমি সোহাগ ভাইকে কি ডাকবো আপু?
— দুলাভাই ডাকবি।
— আমার কতগুলো টাকা লস হয়ে গেলো আপু। ভীষণ মন খারাপ করছে। তোমাদের আমি আবার বিয়ে দিবো।
— আর কোন বিয়ে হবেনা। সব শেষ হয়ে গেছে।
— কিভাবে হলো? তোমাদের তো বাসর এখনো হয়নি আপু। তোমার শাড়ি ব্লাউজ একদম ঠিকঠাক পড়া ছিলো।
ছুটির কথায় রিতী বিরক্তি প্রকাশ করে।
— ছুটি যাতো। ভালো লাগছে না এখন আমার।
— বিয়েটা কেনো করলে আপু?
— তোর জন্য করলাম। তোর তো খুব পছন্দ সোহাগকে। আর সোহাগ ও দেখলাম তোকে খুবই স্নেহ করে। এইরকম ভাবে কেউ করবে কিনা জানিনা। আর আমার জন্য তোর যেনো কোন ক্ষতি না করার চেষ্টা করে সেজন্য করে নিলাম। এখন এখান থেকে যা।
ছুটির চোখ চকচক করে উঠে। খুশিতে বাকবাকুম হয়ে বলে,
— ব্ল্যাকমেইল? ব্ল্যাকমেইল করে তোমাকে বিয়ে করেছে তাইনা? আপু!! তুমি কি বোকা! দুলাভাই কখনোই আমার কিছু করবেনা। মাঝে মাঝে আমি অনুভব করি দুলাভাই তোমার থেকেও আমাকে বেশী ভালোবাসে।
— তোর দুলাভাই কোনদিন কাউকে ভালোবাসবে না।
— কে বললো?এইযে তোমাকে এতো যত্ন করে এনে শুইয়ে দিয়ে গেলো তোমাকে একদম বাজে ভাবে টাচ করলোনা ভালোনাবাসলে কি এমন করতো?
— সেতো ভয় দেখিয়েছি জন্য। তবে দেখিস এবার ঠিক আমার পায়ে পা রাখবেনা।

কথাটা সত্যি হয়ে যায়। সোহাগ সত্যি সত্যি আর রিতীর ধারে কাছে আসেনা। ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করলেও আগের থেকে বেশ কম। রিতী সেদিকে কান মুখ নাড়ায় না। নিজের ভেতরের অস্থিরতাও অনুভব করেনা। ভীষণ শান্তি লাগে। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী হয়ে পড়ে। হোস্টেলে না গিয়ে বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করে।এরিমধ্যে রিতীর রেজাল্ট দেয়। গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। ছানোয়ারের খুশি যেনো আর ধরেনা। যদি সামর্থ্য থাকতো মেয়েকে আকাশের চাঁদ টাও যেনো এনে দিতো। পুরো কলোনিতে মিস্টি বিতরণ করা হয়েছে। ঈদ লেগেছে। ছুটি জমানো টাকায় রিতীকে একটা কুর্তি কিনে দিয়েছে। ছানোয়ার রিতীর লেখাপড়ার কড়া নজরদারি করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তিনি। এবার মেয়েকে ঢাবিতে দেখতে চান।

রিতীর রেজাল্টের খবরটা সোহাগের কানে ঠিক চলে যায়। খবরটা দেয় রিতীর কলেজের প্রফেসর। ঢেকে নিয়ে বলে,
— তোমার গার্লফ্রেন্ড তো গোল্ডেন পেয়েছে। আর তুমি তো পাসটাই দিতে পারলেনা। একেই বলে কপাল। বাদরের গলায় মুক্তোর মালা।
সোহাগের রাগ হয় প্রচুর। তবে রিতীর রেজাল্ট শুনে ভালো লাগছে। টেস্টের রেজাল্ট পেয়ে মেয়েটা কি কান্নাইনা করেছে। এখন নিশ্চয় অনেক খুশি হয়েছে। সোহাগ ভাবে কিছু একটা দেওয়া উচিত মেয়েটাকে। ছুটির স্কুলে গিয়ে ছুটির জন্য অপেক্ষা করে। ছুটিকে ডাক দেয়। ছুটি এতো দিন পরে সোহাগকে দেখে চোখ আকাশে উঠে । ঝিমাকে রেখেই ছুটি দৌড় দেয়। সোহাগের দিকে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে মারে। কোথায় ছিলেন? কেনো আসেননি? দেখা কেনো দাওনি? আরো অনেক প্রশ্ন। সোহাগ হাত তুলে ছুটিকে থামিয়ে দেয়। ছুটি থামে। তবুও ছলছল চোখ করে অভিযোগ টা করেই বসে,– আপনি আমার অনেকগুলো লস করিয়ে দিয়েছেন দুলাভাই।
দুলাভাই!! ডাকটা যেনো সোহাগের মগজে গিয়ে লাগে। ছুটিকি সব জানে? প্রশস্ত হাসে সোহাগ। হাতের গোলাপের তোড়াটি ছুটির দিকে বাড়িয়ে দেয়।
— তোমার আপুকে দিবে। ভালো রেজাল্টের জন্য ছোট্ট গিফট।
— আপু কি নিবে?
— নিবে।
— কেনো নিবে?
— গিফট যে কেউ দিতে পারে। অতি ঘৃণিত ব্যক্তির গিফটও সবাই ছুঁয়ে দেয়।
— আপু আপনাকে ঘৃণা করে?
— করে। তোমার আপু সবসময় আমার দিকে ঘৃণার চোখে তাকায়।
— আপনি কি ভালোবাসার চোখে তাকান?
— আমি তোমার আপুকে ভালোবাসিনা। তোমার আপুর প্রতি আমার মোহ কাজ করে। তুমি বুঝবেনা।
— আমি সব বুঝি। বিয়েটাতো হয়েছে। আপুর সাথে সব ঠিকঠাক করে সংসার কেনো করছেন না?
— ছোটদের এতো বড় বড় প্রশ্ন করতে নেই।
— এটা আমার নয় প্রশ্নটা আপুর।
— পিরিতি প্রশ্ন করেছে?
সোহাগ একটু অবাক হয়। ছুটি উপর নিচ মাথা নাড়ায়।
— হ্যা। ছুটি মিথ্যা বললো। প্রশ্নটা আসলে তার। রিতী সোহাগকে নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্নই রাখেনি। সোহাগ থমথমে গলায় উত্তর দেয়,
— আমি তোমার আপুর হাজবেন্ড হবার যোগ্য না।
— আপুর পার্টনার হবার যোগ্য?
— দুইটা দুই জিনিস ছুটি। গার্লফ্রেন্ড অথবা পার্টনার সবাই হতে পারে। হাজব্যান্ড সবাই হতে পারেনা। হাজব্যান্ড হতে হলে অনন্ত এক শেড উপরে যোগ্যতা থাকতে হয় । আমি তোমার আপুর একশেড নিচেও নেই। গোড়াতেও ভিরতে পারিনা। তোমার আপুর জীবন আমার সাথে নয়। ফুলগুলো আর উত্তরগুলো দিয়ে দিও।
— ছুটি ফাও ফাও কোন কাজ করেনা।
— কি কি লস হয়েছে লিস্ট করে রাখবে। আমি সব পুড়িয়ে দিবো। একমাত্র শালিকার ব্যাপার বলে কথা!
সোহাগ পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে ছুটির হাতে ধরিয়ে দেয়। ছুটিতো টাকাটা পেয়ে খুশিতে পাগল প্রায়। রিতীকে গিফট দিতে গিয়ে ছয়শ টাকা তার পকেট থেকে গেছে।এখন পেলো পাঁচশ টাকা। আরো একশ টাকা বাকি আছে। সেটা অন্যসময় ছুটি ঠিকই তুলে নিবে। এই পাঁচশ টাকা আজি পার্সোনাল ব্যাংকে ফেলবে বলে ঠিক করে। সোহাগ ছুটিকে রিকশা ঠিক করে দেয়। ছুটি ঝিমার উদ্দ্যেশে পেছন দিকে তাকায়। বাঁধন এসেছে। এতোক্ষণ ছুটির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। ছুটি তাকাতেই ঝিমাকে নিয়ে বাইক ছোটায়।

ছুটি ফুলের তোড়া খানা রিতীর বিছানার উপর রাখে। একটা চিরকুট ও রেখে দেয়। যাতে লেখা
” For you Bou”
রিতী তোড়া খানা পেয়ে চিরকুট টা পড়ে। ছুটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
— সোহাগ দিয়েছে?
— না। দুলাভাই দিয়েছে।
— ফুল কেনো দিলো? কিছু বলেছে?
— বলেছে। দুলাভাই তোমাকে ভালোবাসে না। তবে মোহে পড়েছে। তোমার যোগ্য নয় তাই তোমার সাথে সংসার করবেনা।
— গাধাটার তাহলে বুদ্ধি খুলেছে?
— একটু একটু।
রিতী হাসে। ফুলগুলোর পাপড়ি ছিঁড়ে ওড়নার আঁচলে তুলে নেয়। আজ সে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে গোসল করবে। ফ্রিতে পাওয়া গোলাপগুলো কেনো নষ্ট করবে? দুধ হলে ভালো হতো। কিন্তু মা দিবে না উল্টো বাজারের দুধের দাম তুলে চেঁচামেচি করবে। সুন্দর হওয়া আবশ্যক।

আমি গতকাল গল্প দিতে পারিনি কারণ আমার হাতে ফোন বেবীটা ছিলোনা। তাই আগামীকাল আরেকটা পর্ব দিবো তবুও তোমরা মনখারাপ করে থেকোনা।
চলবে,
লাবিবা তানহা এলিজা~