বুকপকেটে তুমি পর্ব-০৩

0
17

#বুকপকেটে_তুমি
#লেখায়_জান্নাতুন_নাঈম
#পর্ব_৩

নীলাঞ্জনা ডেস্কে বসে টক শোয়ের জন্য প্রস্তুত হতে লাগলো। গেস্টকে কী কী প্রশ্ন করবে, সেই বিষয়গুলো প্রস্তুত করে নিচ্ছে।

হঠাৎ নীলাঞ্জনার ফোন বেজে উঠল। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন বলল, “আমি সরোয়ার। তুমি নিশ্চয়ই নীলা?”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমি নীলা নই। আমি নীলাঞ্জনা।”

সরোয়ার বলল, “আমি কি তোমাকে ভালোবেসে নীলা কিংবা নিলু ডাকতে পারি?”

নীলাঞ্জনা বলল, “অবশ্যই পারেন।”

সরোয়ার বলল, “ফ্রি আছো?”

নীলাঞ্জনা বলল, “না। আমার একটু জরুরি কাজ আছে। একটা টক শোয়ের আয়োজন করেছি, তার জন্য কাজ করছি।”

সরোয়ার বলল, “আমার বড় ভাইয়ের সাথে তাই না? তোমার ভাসুরই তো টক শোয়ের গেস্ট। টক শো শেষ হলে ভাইয়ার সাথে বাড়ি চলে এসো। তোমার আমার বিয়ের শপিং করেছি, দেখবে না?”

নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বলল, “এত তাড়াতাড়ি?”

সরোয়ার বলল, “না মানে আর মাত্র তো কটা দিন। এরপর তো আমাদের বিয়ে। তাই তাড়াতাড়ি কিনে ফেলেছি।”

দুপুর বারোটার মধ্যে নীলাঞ্জনা সবকিছু তৈরি করে নিল। নীলাঞ্জনা তার সিনিয়রকে সবকিছু দেখাল। সিনিয়র বলল, “সবকিছু ঠিকঠাক আছে, যদিও এই শোয়ের জন্য আমার মত ছিল না।”

নীলাঞ্জনা বলল, “তাহলে শোয়ের আয়োজন করলেন কেন?”

সিনিয়র বলল, “শোয়ের আয়োজন করেছে নুরুল ইসলাম খান সাহেব। তিনি বলেছেন এই টক শো করার জন্য।”

নীলাঞ্জনা বলল, “তাহলে টিভিতে কখন দেখানো হবে?”

সিনিয়র বলল, “লাইভের মাধ্যমে করা হবে। উপস্থাপনা যেন ভালো হয়। আমি জানি এভাবে লাইভে টক শোয়ের আয়োজন করা তোমার জন্য প্রথম। আশা করি তুমি ভালোভাবে সম্পন্ন করবে।

নীলাঞ্জনা রেগে বলল, “আমাকে না জানিয়ে সবকিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন?”

সিনিয়র বলল, “তুমি মানিয়ে নেও। এখানে আমার কোন হাত নেই।বসের আদেশ আমি কিইবা করতে পারি বলো”

নীলাঞ্জনা বলল, “হ্যা আপনারই বা কি দোষ দিব বলেন।”

সিনিয়র বলল, “তাহলে তৈরি হয়ে নেও”

দুপুর দুইটা বাজতে আর অল্প কিছু সময় বাকি। নীলাঞ্জনা শোয়ের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক করে নিল। সেলিম রহমান অফিসে এসে পৌঁছে গেছে। নীলাঞ্জনা বলল, “আশা করি আপনার আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি। শো শুরু হওয়ার আগে চা-কফি কিছু খাবেন?”

সেলিম বলল, “এই অসময়ে এই অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত কার ছিল?”

নীলাঞ্জনা বলল, “বসের।”

সেলিম বলল, “এটা একদম বাজে সিদ্ধান্ত। তবে উপস্থাপকের জায়গায় তুমি আছো বলে না করিনি।”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমি কি আপনার কাছে স্পেশাল নাকি?”

সেলিম বলল, “তুমি আমাদের বাড়ির বউ হতে যাচ্ছো। তাছাড়া, আমার কাছে স্পেশাল না হলেও আমার ভাই তোমাকে খুব ভালোবাসে।এর মানে কিন্তু এটা না যে তুমি আমার কাছে স্পেশাল নও”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমি ও চেষ্টা করবো আমার স্বামীকে ভালোবাসার। কিন্তু আমি এই বিয়েটা করছি শুধু বাবার কথা ভেবে।”

সেলিম বলল, “আমি জানি সব”

দুপুর দুইটা বাজে।

নীলাঞ্জনার টক শো শুরু হলো, কিন্তু মনে কিছুটা চাপ ছিল। যদিও সেলিমের সঙ্গে কথা বলে কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেছে, তবুও একটা লাইভ টক শোয়ের মধ্যে যদি কোন ভুল করে এই নিয়ে ভয় পাচ্ছে নীলাঞ্জনা।

নীলাঞ্জনা বলল, “আপনি দুবার নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। এখন তৃতীয় বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই মুহূর্তে কোন প্রতিপক্ষ কে আপনার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে আপনার মনে হয়?”

সেলিম বলল,‌ “অহংকার করবো না। তবে এই মুহূর্তে সেইরকম কেউ নেই। এবারেও আমি জয়ী হবো”

নীলাঞ্জনা বলল, “আয়ান চৌধুরী কে আপনার প্রতিপক্ষ হিসেবে কতটুকু শক্তিশালী মনে হয়?”

সেলিম বলল, “সে একটা সময় খুব ভালো অবস্থানে ছিল। জানি না হঠাৎ করেই তার কি হলো । আমি ছোট বেলায় তার খুব ভক্ত ছিলাম। আমি আমার জীবনের প্রথম ভোট আয়ান চৌধুরী কে দিয়েছি। আমার বাবাকে না দিয়ে।এই নিয়ে তিনবার অবশ্যই আমি আয়ান চৌধুরীর সাথে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি এবং দুইবার জয়ী হয়েছি। বর্তমানে তার দলের অবস্থান খুব বাজে”

নীলাঞ্জনা বলল , “খুব শীঘ্রই একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে গেছে । আমাদের বিরোধী দলের নেতা আয়ান চৌধুরী হঠাৎ করেই হারিয়ে গেছে। অনেকেই অনেক কথা বলছে আপনার কি মনে হয়? উনি কি পালিয়ে গেছে নাকি কেউ কিডন্যাপ করেছে?”

সেলিম বলল , “আমার মনে হয় না শুধু নির্বাচনে হারার জন্য এমন টা করবে। সেইরকম হলে গতবারের নির্বাচনে তার জয়ী হওয়ার কথা ছিল”

নীলাঞ্জনা বলল, “তাহলে কি মনে হয় কেউ কিডন্যাপ করেছে?”

সেলিম বলল, “হয়তো করছে। কিন্তু এই নির্বাচনের আগে কেনই বা কিডন্যাপ করতে যাবে এটা একটা অজানা। আমি উনার নিখোঁজ খবর পাওয়ার পর উনার ফেসবুক আইডিতে গিয়েছিলাম। একটা পোস্ট দেখলাম যেখানে প্রজেক্ট কে নিয়ে বলা হয়েছে। জানি না এই প্রজেক্ট কি ? আমার মনে হয় আয়ান চৌধুরীর নিখোঁজের পিছনে এর কোন যোগসূত্র আছে”

নীলাঞ্জনা বলল, “জী।তার ফেসবুক পোস্ট টা আমরাও দেখেছি।তার স্ক্রিনশট আমাদের কাছে আছে যদিও পরবর্তীতে কেউ সেটা ডিলিট করে দিয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি কেউ একজন আয়ান চৌধুরীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে। আমরা উনার আইডি ফেরত আনার চেষ্টা করছি।হয়তো কোন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তবে আয়ান চৌধুরী বলেছেন যে কিছু মানুষের মুখোশ উন্মোচন করে দিবেন।তারাই হয়তো উনাকে সরিয়ে দিয়েছে? আপনি যখন প্রজেক্ট কে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তখন আমি আপনার সাথে একটা কথা জানতে চাই?”

সেলিম বলল, “হ্যা বলুন কি জানতে চান?”

নীলাঞ্জনা বলল ,”আমি আপনার কাছে থাকা একটা টর্চার সেলের কথা জেনেছি। আপনার এই সেল রাখার কারণ কি? কাদের এই টর্চির সেলে রাখা হয়?”

সেলিম একটু ইতস্তত হয়ে পড়লো। নীলাঞ্জনা যে হুট করে এমন প্রশ্ন করে ফেলবে সেটা সেলিম বুঝতে পারে নি। সেলিম ভাবছে নীলাঞ্জনা টর্চার সেলের বিষয়ে জানালো কীভাবে? সেলিম উত্তর দিতে বেশি সময় নিল না। নীলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলল, “এইসব মিথ্যা অভিযোগ। আমাদের কোন টর্চার সেল নেই”

নীলাঞ্জনা বলল, “তাহলে সব মিথ্যা?”

সেলিম বলল, “অবশ্যই মিথ্যা”

নীলাঞ্জনা বলল, “দর্শক আপনারা যদি সেলিম রহমান কে কোন প্রশ্ন করতে চান তাহলে আমাদের হট লাইনে ফোন করুন। আমাদের হট লাইনের নাম্বার হলো ২০৭। আমরা এখন যাব ছোট্ট একটা বিরতিতে”

শো এক ঘন্টা যাবত চললো।শো শেষ করে নীলাঞ্জনা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলে। সেলিম তার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলো।বলল, “তুমি কি নার্ভাস?”

নীলাঞ্জনা বলল, “না। আমি ঠিক আছি”

সেলিম বলল, “আমার মনে হলো তুমি বোধহয় মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবে”

নীলাঞ্জনা বলল, “সত্যি বলতে আমার কাছেও এমন টাই মনে হয়েছিল”

সেলিম বলল, “আচ্ছা এই টর্চার সেলের বিষয়ে কোথায় জানলে?”

নীলাঞ্জনা বলল, “পাবলিক কমেন্ট থেকে।টক শোয়ের আয়োজন করা হবে বলে যেই পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে আমরা বলেছিলাম পাবলিক যেন তার মন্তব্য করে।বা গেস্ট কে কোন প্রশ্ন করার থাকলে বলতে পারে”

সেলিম বলল, “আমাদের কোন টর্চার সেল নেই। তবে আয়ান চৌধুরীর একটা গোপন ঘর ছিল আন্ডারগ্রাউন্ডে।শুনেছি ওখানে বিভিন্ন আলোচনা করা হতো।দশ বছর আগে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।সেখানে কাউকে টর্চার করতো কিনা জানিনা”

নীলাঞ্জনা বলল, “সম্ভবত আপনি যখন প্রথমবার জয়ী হোন তার পর থেকেই এটা বন্ধ”

সেলিম বলল, “হয়তো”

নীলাঞ্জনা বলল , “আপনি কি ওই জায়গার লোকেশন জানেন ? এমন ও হতে পারে যে আয়ান চৌধুরী ওই জায়গায় লুকিয়ে আছে”

সেলিম বলল, “শুনেছি ওর বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ডে।কোন বাড়ি সেটা জানি না। আচ্ছা চলো বাড়ি যাওয়া যাক তুমি ও আমার সাথে চলো। আমি নুরুল ইসলাম কে বলেছি শোয়ের পর তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাব”

নীলাঞ্জনা বলল, “আমার অনেক খারাপ লাগছে। চলুন তবে”

নীলাঞ্জনা গাড়িতে উঠে বসলো। সেলিম গাড়ি চালানোর ফাকে নীলাঞ্জনার দিকে আড়চোখে তাকাতে লাগল। সেলিম মনে মনে ভাবছে এইরকম একটা সুন্দরী মেয়ে তার ছোট ভাইয়ের বউ হতে চলছে।এই রকম সুন্দরী মেয়ে তো তার বউ হলেও পারতো।
নীলাঞ্জনা বলল, “কি ভাবছেন?”

সেলিম বলল, “তোমার কথাই”

নীলাঞ্জনা হেসে বলল, “তাই নাকি?”

সেলিম বলল, “অবশ্যই। তোমার সাথে যখন প্রথম দেখা হলো তখন তুমি সেলোয়ার কামিজ পড়ে ছিলে।লাইভের সময় শাড়ি পরা ছিল। এখন আবার সেলোয়ার কামিজ।”

নীলাঞ্জনা বলল, “কামিজের উপর শাড়ি পরে নিয়েছি।আসার সময় আবার খুলে ব্যাগে করে নিয়ে এসেছি। শাড়ি ব্যাগেই আছে। আমাদের প্রায় সময়ে এমন করতে হয়”

সেলিম বলল, “বাব্বা তোমার কি বুদ্ধি”

গাড়ি সেলিমের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। সেলিম একপাশে গাড়ি পার্কিং করিয়ে নিল। নীলাঞ্জনা গাড়ি থেকে নেমে বাগান টা ঘুরে ঘুরে দেখছে। সরোয়ার ছাদের উপর দাঁড়িয়ে আছে। নীলাঞ্জনা কে দেখে ছাদ থেকে হাত নাড়াচ্ছে। সেলিম বলল, “চলো ভেতরে যাওয়া যাক”

নীলাঞ্জনা বলল, “চলুন”

বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই সরোয়ার তাকে তার রুমে নিয়ে গেল বিয়ের জিনিস পত্র দেখাবে বলে। বিয়ের সাদা রঙের জামদানি শাড়ি রাখা।

নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বলল, “বিয়ের শপিং কি আপনি করছেন?”

সরোয়ার বলল, “ নেতা পছন্দ করে কিনছে?”

নীলাঞ্জনা বলল, “নেতার পছন্দের তারিফ করতে হয়”

সরোয়ার বলল, “হ্যা। ভাইয়ার চয়েজ অনেক ভালো। শুধু গার্লফ্রেন্ড চয়েজ করতে পারে না ঠিকমতো।”

নীলাঞ্জনা অবাক হয়ে বলল, “তোমার ভাইয়ের বিয়ে হয়নি?”

সরোয়ার বলল, “না। এখন অবশ্য সিঙ্গেল।দুই বছর ধরে কোন প্রেম পিরিতি করে না”

নীলাঞ্জনা বলল, “কেন?”

সরোয়ার বলল, “হয়তো বিশেষ কারো জন্য অপেক্ষা করছে”

(চলবে)