বুঝে নাও ভালোবাসি পর্ব-১০

0
6

#বুঝে_নাও_ভালোবাসি।
#ফাহমিদা_তানিশা

পর্ব ১০

নির্ঝর একটু পর তিস্তাকে ডাক দিলো। ইশারায় একবার তার কাছে যেতে বললো। তিস্তা‌ও নির্ঝরের কথামতো নির্ঝরের দিকে গেলো।

তিস্তা কাছে আসতেই নির্ঝর চুপিচুপি বললো: এখন তো হাসপাতালে আছি। হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার পর আমাদের দুজনের সেটিংটা করিয়ে দিস। তাহলেই হলো।বুঝলি?
তিস্তা রাগী গলায় বললো:না বুঝিনি। আগে এটা না বলে রাগ দেখাতে গেলে কেনো? এখন সরি বলতে হবে।সরি বলো তাড়াতাড়ি।

নির্ঝর তিস্তার দিকে একবার তাকিয়ে “সরি” বলে দিলো। তিস্তা বুঝতেই পারেনি নির্ঝর এতো দ্রুত সরি বলবে।এতো ট্যারা একজন মানুষ সরি বলতে বলার সাথে সাথে সরি বলে দিয়েছে। অদ্ভুত তো বটেই! তিস্তা হাসলো। তারপর বললো: ইটস্ ওকে ব্রো।

আর‌ওয়ার মা আর‌ওয়ার সব রিপোর্ট চেক করে নিয়েছেন।সব রিপোর্ট পজেটিভ দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আর‌ওয়াকে ডিসচার্জ করা যায়। কেবিনে এসে নির্ঝরকে বললেন: রিপোর্ট সব ঠিক আছে। এখন কি ডিসচার্জ করে দিবো?
নির্ঝর হেসে বললো:জি অবশ্যই।
আর‌ওয়ার মা আর তিস্তা মিলে সব কিছু গুছিয়ে নিলো।নির্ঝর‌ও তাদের কিছু কিছু কাজে সাহায্য করলো।সব কাজ শেষ করে তারা আর‌ওয়াকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলো।

আর‌ওয়া এখনো হাঁটতে পারছে না।তার পায়ে এখনো ব্যান্ডেজ আছে।আরো কয়েকদিন তাকে রেস্টে থাকতে হবে। হাঁটাচলা করতে নিষেধ আছে।হুইট চেয়ারে বসিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে নামানো হয়েছে। এখন গাড়ি পর্যন্ত যেতে হলে তাকে হাঁটতে হবে। আর‌ওয়া চেষ্টা করছে তিস্তাকে ধরে হাঁটার কিন্তু পারছে না। হঠাৎ নির্ঝর পেছন থেকে এসে আর‌ওয়ার হাত ধরে ফেললো। কোনো কথা না বলে তাকে কোলে তুলে নিলো। নির্ঝরের আচমকা এরুপ কাণ্ডে বেশ অস্বস্তি লাগছে আর‌ওয়ার। কিন্তু মনে মনে ভাবছে ভালোই হয়েছে।এমনেও হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আর নির্ঝর কোলে নিয়ে তার কষ্টটা কমিয়ে দিলো। কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ছে এতো লোক তাদের দেখছে। নির্ঝর গাড়িতে নিয়ে গিয়ে আর‌ওয়াকে বসিয়ে দিলো।এবারো দু’জনের মাঝে কোনো কথা হলো না।

আর‌ওয়াকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে সে তিস্তাকে আর তার ফুফিকে গাড়িতে উঠতে বললো। পেছনে ফিরে দেখলো আর‌ওয়ার মা দাড়িয়ে আছেন। গাড়িতে উঠছেন না তিনি। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো: আপনি যাবেন না? গাড়িতে উঠছেন না কেনো?
_ভাবছি যাবো না।
_কেনো?
আর‌ওয়ার মা থাকলেন। একটু পর বললেন: আমার ইমার্জেন্সি প্যাশেন্ট আছে তাই যেতে পারছি না। তুমি আর‌ওয়ার খেয়াল রেখো।
_মানেটা কি?আপনি না গেলে কি হয়? ইমার্জেন্সি প্যাশেন্ট অন্য কোনো ডাক্তার দেখে নিবে। তাহলে তো হলো।
_থাক আমার যেতে হবে না। তুমি, রিস্তা আর তিস্তা খেয়াল রাখলেই হলো।

নির্ঝর বুঝতে পারছে না হঠাৎ তিনি যেতে চাইছেন না কেনো। শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো সে। কিছুই বুঝতে পারছে না।আর‌ওয়ার মা ধীর পায়ে আর‌ওয়ার কাছে গেলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো: সচেতন থাকিস যেন আর কোনো সমস্যা না হয়। হাঁটাচলা করার সময় সচেতন থাকবি। বেশি লাফালাফি করবি না।
আর‌ওয়াকে কথাগুলো বলে তিনি তিস্তার কাছে গেলেন। তিস্তার মাথাতেও হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন:আর‌ওয়াকে খেয়াল রাখিস।ও এখনো তো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। একটু হেল্প করিস ওকে।
তিস্তা হেসে বললো:ওকে ফুফি।এটা এভাবে বলতে হয় নাকি?

আর‌ওয়ার মা তিস্তার কথায় মুচকি হাসার চেষ্টা করলো। যদিও তার চোখমুখ বলছে অন্য কথা।চোখ দুটো দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি আর‌ওয়াকে একা ছাড়তে চাচ্ছেন না। কিন্তু সাথে যেতেও পারছেন না।তিনি যেন এক মহা বিপদে পড়ে গেছেন। নির্ঝর বুঝতে পারছে না তার এমন কাণ্ড। ঠিক কি কারণে তিনি যেতে চাইছেন না নির্ঝরদের বাসায়?

নির্ঝর গাড়িতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিলো।আর‌ওয়ার মা এখনো দাঁড়িয়ে আছেন এক জায়গায় আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন গাড়িতে বসে থাকা মেয়ের দিকে।আর‌ওয়া‌ও তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।

গাড়ি থামলো নির্ঝরদের বাড়ির সামনে।আর‌ওয়া নিজে নিজে নামতে চাইলেও এবারো নির্ঝর তাকে কোলে করে রুমে রেখে আসলো।রুম থেকে বেরিয়ে এসে সে বড় ভাবি নিশুর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করলো: মিতা কোথায়?
_ওরা তোদের বিয়ের পরের দিন চলে গেছে।
_কি বলছেন? কখন গেছে?
_আর‌ওয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরেই তারা বেরিয়ে গেছেন।আর‌ওয়াকে হাসপাতালে দেখতে যায়নি?
_মিতা আর‌ওয়াকে দেখতে যাবে? আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?
_আরে আমি পাগল হতে যাবো কেনো?মিতা যখন চলে যাচ্ছিল আমি ওকে থাকার জন্য বলেছিলাম।তো মিতা বললো ও আর‌ওয়াকে দেখতে হাসপাতালে যাবে।তাই তাকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে।তো আমি আর জোর করিনি।

নিশু ভাবির কথা শুনে নির্ঝর একটু হাসলো। তারপর বললো:ও আমার হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এসব বলেছে। কিন্তু আমি ওকে কিছুতেই ছাড়বো না।
নির্ঝরের কথায় তার ভাবি অবাক হয়ে গেলো। ভ্রু কুঁচকে বললো:কেন নির্ঝর?কি হয়েছে?
_কতো কি যে হয়েছে আপনাকে কি বলবো আর?
তখনি নির্ঝরের বড় ভাই নিহান আসলো।নির্ঝরকে দেখে জিজ্ঞেস করলো:কিরে দেবদাস? হাসপাতাল থেকে কখন এলি?

নিহানের মুখে দেবদাস ডাকটা শুনে নিশু হেসে দিলো।নিহান আগে থেকেই নির্ঝরকে দেবদাস বলে দুষ্টুমি করতো। যখন তাদের ছোট ভাই বিয়ে করে ফেললো তখন থেকে নিহান নির্ঝরের নাম দিলো দেবদাস। কারণ শুধু একটায়। নির্ঝর কোনো মেয়েকে পছন্দ করে না।নিশু হেসে বললো: এখন তো আর দেবদাস নেই সে। তুমি এবার দেবদাস ডাকাটা বন্ধ করো।
নিশুর কথায় নিহান হেসে বললো: হুম বন্ধ তো এবার করতেই হবে।বাই দ্যা ওয়ে,আর‌ওয়ার কি অবস্থা এখন?
নির্ঝর শান্ত গলায় বললো: ভালো আছে অনেকটা।
নিশু নির্ঝরকে থামিয়ে দিয়ে বললো:কি হয়েছে তো বললে না।
নির্ঝর থেমে বললো:থাক পরে বলবো।
এই বলে সে চলে গেলো।নিহান আর নিশু তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।তারা দুজনে কিছুই বুঝতে পারেনি।

নির্ঝর রিস্তার কাছে আসলো আবার। রিস্তা আর সে ব্যাচমেট।রিস্তার সাথে সে মুটামুটি মিশে।রিস্তাকে গিয়ে বললো:আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। তুই আর‌ওয়ার খেয়াল রাখবি। আমি এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসবো। ঠিক আছে?
_আচ্ছা যা। আমি আর‌ওয়ার সাথে আছি।

নির্ঝর আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে গেলো। গেইটে তার গাড়ি রাখা আছে আগে থেকেই। গাড়িতে বসে স্টার্ট দিলো।তার গন্তব্য মিতাদের বাড়ির দিকে। আজকে মিতাকে দেখিয়ে ছাড়বে সে। মনে মনে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে।এসব সত্যি করতে পারলেই সে সফল।

গাড়ি থামালো মিতাদের বাড়ির সামনে। দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গেলো।দরজা খোলা থাকায় সে সোজা ঢুকে গিয়ে মিতার রুমে গেলো।তার রুমের দরজায় নক করতেই মিতা দরজা খুললো।আচমকা নির্ঝরকে দেখে সে বেশ ঘাবড়ে গেছে। কাঁপাকাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো: তুমি হঠাৎ এখানে?
_কেনো?আসতে পারি না বুঝি?
_কখনো তো আসো না।তাই জিজ্ঞেস করলাম।
_কখনো আসার জন্য কারণ হয় না।তাই আসি না। আজকে আসাটা বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ায় আসতে হলো।
_মানে ঠিক বুঝলাম না।কি বলতে চাও?
_আর‌ওয়াকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলি কেনো? তোর সাথে এই প্ল্যানে আর কে কে আছে?
মিতা জানে না মতো মুখ করে বললো: আর‌ওয়াকে মারার প্ল্যান করেছিল কেউ?কি বলো? তোমাদের বাসায় গিয়ে আর‌ওয়াকে মারার মতো সাহস কার হতে পারে?
নির্ঝর মিতার কথায় হাসলো। গম্ভীর গলায় বললো: আমিও তো সেটাই বলতে চাই।যার এতো সাহস হলো তার মুখটাও তো আমার একটু ভালো করে দেখতে হয়।তাই কিছু না ভেবে সোজা তোর কাছে এলাম।

মিতা হাসার চেষ্টা করে বললো:কি যে বলো ভাইয়া,আমার কাছে এলে কেনো?আমি তো কিছুই জানি না ঠিকমতো।
নির্ঝর মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো: সত্যি করে বল।প্রথম এবং শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি।আর‌ওয়াকে মারতে চেয়েছিলি কেনো?

মিতা থতমত খেয়ে গেলো নির্ঝরের আচরণে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো:আমি কিছুই করিনি।
নির্ঝর জোরে চিল্লিয়ে বললো: আমার সাথে একদম মিথ্যা কথা বলবি না।একটা চড় দিবো সেটাই ইনাফ তোর মতো মেয়ের মুখ থেকে সত্যি বের করার জন্য। তাড়াতাড়ি বল।ন‌ইলে তোকে আমি খুন করতেও দ্বিধা করবো না। মাইন্ড ইট।

নির্ঝরের চিল্লাচিল্লি শুনে তার খালা আর বাড়ির বুয়া এলো।তার খালা তাকে দেখে অবাক হয়ে বললো:কি হলো নির্ঝর? হঠাৎ আমাদের বাড়িতে এসেছিস?তাও এসেই চিল্লাচিল্লি করছিস? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নির্ঝর খালার কথার উপর চিল্লিয়ে বললো:একশো বার আসবো আর একশো বার চিল্লাবো।ক্ষমতা থাকলে আটকাও আমাকে।
নির্ঝরের মুখ থেকে এমন কথা শুনে তার খালা চুপসে গেলো। নির্ঝর একটু থেমে মিতাকে আবারো প্রশ্ন করলো:মিতা সত্যি করে বল কেনো করেছিস?
মিতার মা বললেন:আমার মেয়ের যে করেছি তার কোনো প্রমাণ আছে?
নির্ঝর রাগী গলায় বললো: অবশ্যই আছে। নির্ঝর কখনো প্রুফ ছাড়া কথা বলে না। আমাদের বাসায় সিসি ক্যামেরায় পুরোটা আছে। এখন যদি আপনার স্বচক্ষে দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে আমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখে আসুন।

মিতা এবার ভয় পেয়ে গেলো।তার মানে নির্ঝর সব জেনেশুনে তার কাছে এসেছে। নির্ঝর আবারো প্রশ্ন করার আগেই মিতা বললো: হ্যাঁ আর‌ওয়াকে আমি মারতে চেয়েছিলাম।বেশ করেছি। বেয়াদব একটা মেয়ে।সে জানতো আমি তোমাকে পছন্দ করি তবু তোমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে তোমাকে।তাই ওকে আউট অফ দ্যা পৃথিবী করতে চেয়েছিলাম।কি করবে তুমি আমাকে?

নির্ঝর মিতার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।কতোটা বুক ফুলিয়ে সে কথাগুলো বলছে‌।বিন্দু পরিমাণ লজ্জাও লাগছে না তার। নির্ঝরের আরেকটা ইনফরমেশন দেওয়ার আছে সিউর হ‌ওয়ার জন্য।তাই শান্ত কন্ঠে বললো:তোর সাথে আর কে কে ছিল এই প্ল্যানে?
_আমার প্ল্যানে আমি অন্য কাউকে রাখবো কেনো?আমি একাই সব করতে পারি।আমি একাই সাকসেসফুল হতে পারি।
_আমার আম্মু নেই তো তোর সাথে?

চলবে….