#বুঝে_নাও_ভালোবাসি।
#ফাহমিদা_তানিশা
পর্ব ০৫+০৬
নির্ঝর একবার রাগী দৃষ্টিতে আরওয়ার দিকে তাকিয়ে দাদার কাছে আসলো।আরওয়া বুঝতে পারছে না নির্ঝর হঠাৎ এতো রাগ দেখাচ্ছে কেনো?সে আবার কি করলো?
নির্ঝর আসতেই আরমান চৌধুরী দুজনের হাত নিয়ে মিলিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন তখনি নির্ঝর হেঁচকা টান দিয়ে হাতটা সরিয়ে নিলো। আরমান চৌধুরী বোকার মতো একবার নির্ঝরের দিকে তাকালেন আবার আরওয়ার দিকে তাকালেন।আরওয়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। নির্ঝর আর এক মিনিটও না দাঁড়িয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। আরমান চৌধুরী অসহায় চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন।মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বের হচ্ছে না।আরওয়ার জীবন নিয়ে তিনি বেশ সন্দিহান।
আরওয়াকে আরমান চৌধুরী আর নির্ঝরের মা,চাচি সবাই মিলে বরণ করে ভেতরে ঢোকালো। আশরাফ চৌধুরী দূর থেকে সব দেখছেন। মনে মনে তিনিও বেশ চিন্তিত। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ না করেই তিনি এতো জটিল এক সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন স্ত্রীকে কী জবাব দিবেন তিনি বুঝতে পারছেন না।তার উপর ছেলের এমন উদ্ভট আচরণ তার চোখে পড়েছে। গাড়িতে বসে তিনি সবটা পর্যবেক্ষণ করেছেন। মাথা কাজ করছে না তার।
আশরাফ চৌধুরী আর কিছু না ভেবে নিজের রুমে গেলেন। টেনশনে কিছুই ভালো লাগছে না তার।ধীর পায়ে খাটের একপাশে গিয়ে বসলেন। তখনি তার স্ত্রী মিসেস রুমানা রুমে ঢুকলেন। শান্ত চোখে একবার নিজের স্বামীর দিকে তাকালেন তারপর চোখ নামিয়ে নিলেন। স্ত্রীকে দেখে আশরাফ চৌধুরী আবার উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পায়ে রুমানার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। অসহায় মুখ করে বললেন,”তুমি কি খুব রেগে আছো আমার উপর?”
আশরাফ চৌধুরীর কথায় তার স্ত্রী হাসলেন। তারপর বললেন: রেগে যাবো কেনো?
_এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে না জানিয়ে তাই।
রুমানা একটু জোরে হেসে দিয়ে বললেন: সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি তুমিও তো জাস্ট আমাকে সাহায্য করেছো।
_মানে?
_মানে কিছুই না। আমার ছেলেটা যে এতো দিন পরে বিয়ে করেছে তাতেই আমি খুশি।
_আমিও তো এই ভেবে খুশি হয়েছিলাম কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না নির্ঝর বিয়েটা মেনে নিয়েছে।ও আরওয়ার সাথে মিস বিহেভ করছে তা আমি বুঝতে পারছি।
_বাদ দাও।এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি বলে দিবো ওকে।
_শুধু তুমি বললে তো হবে না। আমাকেও কিছু বলতে হবে।এক কাজ করো।নির্ঝরকে গিয়ে বলো আমি ওকে ডেকেছি।
_আচ্ছা বলছি।
মিসেস রুমানা এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।তিনি জানেন ছেলেকে কোথায় পাওয়া যাবে। নির্ঝর শুধু রুমেই থাকে।তাই তিনি সোজা নিজের রুম থেকে বের হয়ে নির্ঝরের রুমের উদ্দেশ্যে গেলে। রুমে গিয়ে দরজা নক করতেই নির্ঝর জিজ্ঞেস করলো:কে?
_আমি বলছি।
_কেনো এসেছেন?চলে যান।
_তোমার বাবা তোমাকে ডাকছে। বেরিয়ে এসো।
_কি বলবে উনি আবার?
_আমি তো জানি না। বেরিয়ে এসো। এভাবে আজকের দিনেও রুমে বসে থাকলে কি হয়?
_আমার আপনার মুখ দেখতে ইচ্ছে করছে না।তাই এখানে বসে আছি।
_আমি যা করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি। বুঝতে চাইছো না কেনো?
_বাহ্!আরো কতো কি বলবেন আপনি।আমিও শালা বলদের বাচ্চা।
এই বলে নির্ঝর দেওয়ালে একটা ঘুষি দিলো।তার মা রুমের বাইরে থেকে স্পষ্ট বিষয়টা বুঝতে পারলেন।তিনি বুঝতে পারছেন না এই মূহুর্তে কি বললে নির্ঝর শান্ত হবে। তবু একটু দম নিয়ে বললেন: এভাবে দরজার এপাশ-ওপাশে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বললে লোকজন শুনবে। তুমি বেরিয়ে এসো। তোমার বাবা ডাকছে।আমি চলে যাচ্ছে।
নির্ঝরের মা আর দাঁড়ালেন না। দ্রুত পায়ে অন্যদিকে চলে গেলেন।তখনি নির্ঝর বেরিয়ে আসলো।তার হাতটা আগে থেকেই ব্যান্ডেজ করা ছিল। এখন বেশ ব্যাথা লাগছে। দ্রুত পায়ে বাবার রুমে গেলো নির্ঝর। শান্ত গলায় বললো: আমাকে ডেকেছেন?
_হ্যাঁ।তোমার সাথে কিছু কথা আছে। এখানে বসো।
নির্ঝর বসলো না। ছোট গলায় বললো: বলেন,কি বলতে চান।
_দেখো,আরওয়ার সাথে গতকাল রাতে যা যা হয়েছে সবটা একটা এক্সিডেন্ট তা নিশ্চয় আমার চেয়ে ভালো তুমি জানো। মেয়েটাকে আমি জন্ম থেকে দেখছি। খুব ভদ্র,নম্র শান্তশিষ্ট মেয়ে সে।ওর সাথে যা যা হয়েছে কিছুতেই ওর দোষ নেই। মানুষ ওর চরিত্র নিয়ে কথা বললে তারা ভুল করছে।আমি জানি আমার ভাগ্নির চরিত্র সম্পর্কে। তুমি কি এই কারণে ওকে ছোট করছো বারবার?
নির্ঝর বাবার কথায় না সূচক মাথা নাড়লো। আশরাফ চৌধুরী ছেলের মাথার দিকে তাকিয়ে আবার বললেন: তাহলে ঠিক কি কারণে তুমি আরওয়াকে ইগনোর করছো?
নির্ঝর বাবার কোনো কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে আছে। আশরাফ চৌধুরী একই প্রশ্ন দুইবার করলেন কিন্তু নির্ঝর চুপ।পরে আশরাফ চৌধুরী বুঝতে পারলেন এর উত্তর হয়তো নির্ঝরের নেই বা নির্ঝর উত্তরটা দিতে চাইছে না। আশরাফ চৌধুরী এবার প্রসঙ্গ পাল্টালেন।এক পলক ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন: মনে রাখবে,আরওয়া তোমার ফুফির মেয়ে মানে আমার ভাগ্নি। আমার সাথে আমার বোনের সম্পর্কটা কতোটা গভীর তা তো খুব ভালো করেই জানো। তোমাকে নতুন করে বলতে হবে না।এমন কোনো কাজ করবে না যার জন্য আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়। এখনের আগ থেকে যা যা করেছো আরওয়ার সাথে সব বাদ দিলাম। কিন্তু নেক্সটে যেন এমন কোনো সমস্যা না হয়। মাইন্ড ইট।
নির্ঝর কোনো জবাব দিলো না।তা দেখে আশরাফ চৌধুরী আবারো বললেন: তোমাকে বারবার বলছি আমাদের ভাই-বোনের সম্পর্কটা যেন তোমার কারণে নষ্ট না হয় এটা মাথায় রাখবে।আরওয়ার সাথে কোনো ধরনের মিস বিহেভ করবে না।এটা আমার রিকোয়েস্ট।
নির্ঝর ছোট গলায় বললো: চেষ্টা করবো।
কথাটা বলেই নির্ঝর বেরিয়ে গেলো।
এদিকে আরওয়া রিস্তাদের রুমে আছে।রিস্তা আর তিস্তা নির্ঝরের চাচাতো বোন। নির্ঝরদের ফ্যামিলি জয়েন্ট ফ্যামিলি।তাদের বাবারা দুই ভাই। নির্ঝরের ছোট চাচার মেয়ে রিস্তা আর তিস্তা। নির্ঝরের ছোট চাচা বেঁচে নেই।রিস্তা,তিস্তার সাথে আরওয়ার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তাই তারা আরওয়াকে ওদের রুমে বসিয়েছে। কিছুক্ষণ পর নির্ঝরের বড় ভাবি এসে আরওয়াকে নিয়ে গেলো। নির্ঝরের সাথে ভাবির সম্পর্কটা খুব বেশি গভীর নয়। দুজনের মাঝে দূরত্ব আছে বেশ।তাই ভাবি আর নির্ঝরের রুমে ঢুকলেন না। শুধু আরওয়াকে রুমে পাঠালেন।
নির্ঝর তার বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।আরওয়াকে দেখে সে ওঠে দাঁড়ালো।তা দেখে আরওয়া মনে মনে বেশ খুশি হয়েছে। কিন্তু আরওয়ার ক্ষণস্থায়ী খুশিকে কষ্টে রুপান্তর করে নির্ঝর বেলকনিতে চলে গেলো।নির্ঝর চলে যাওয়ার পর আরওয়া বিছানায় বসে পড়লো। চুপচাপ বিছানায় বসে আছে সে।কি করবে বুঝতে পারছে না।একা একা বসে থাকতে থাকতে আরওয়ার ভীষণ ঘুম আসছে। বসে বসে সে ঝিমুচ্ছে।
একটু পর নির্ঝর আসলো বেলকনি থেকে।হাতে থাকা ল্যাপটপটা টেবিলে রাখলো। বিছানায় থাকা ফোনটা আর একটা বালিশ তুলে নিয়ে সে সোজা ফ্লোরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আরওয়া সব ঘুমঘুম চোখে পর্যবেক্ষণ করছে।সে কি নির্ঝরকে থামাবে?নির্ঝর কি তার কথা শুনবে?শুনবে না কখনো।তাই তাকে কিছু না বলা এখন বুদ্ধির কাজ।আরওয়াও চুপচাপ শুয়ে পড়লো বিছানায়। মনে মনে একটু লজ্জা লাগছে তার।যার বিছানা সে ঘুমাচ্ছে ফ্লোরে আর সে মহারানীর মতো করে পুরো বিছানা জুড়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।কিছুই করার নেই আর। যেহেতু অনেকক্ষণ ধরে ঘুম আসছিল তাই বিছানায় শুতেই সে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে ঘুম ভাঙলো ফজরের আজান শুনে। ধীরে-সুস্থে বিছানা থেকে নামতেই দেখলো নির্ঝর ফ্লোরে নেই। তার মানে নির্ঝর তার আগে ঘুম থেকে উঠে গেছে। আচ্ছা নির্ঝর কি একবার তার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে ছিল? একবারের জন্যও কি নির্ঝর আরওয়াকে আড়চোখে দেখেনি?আরওয়া হাসলো। কিন্তু এটা সুখের হাসি নয়, দুঃখের হাসি। কয়জন মেয়ের ভাগ্য এমন হয়।যে মানুষটা তাকে ভালোবাসা শিখিয়েছিল ঠিক সে মানুষটা আবার তাকে ইগনোর করছে। ভালোবাসার জ্বালে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মারছে।গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো আরওয়ার। সামনে থাকা বেলকনিতে তাকাতেই দেখলো নির্ঝর রাগী দৃষ্টিতে কোনো এক দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তার দিকে নয়। মানুষটা সারাদিন এতো রাগ নিয়ে থাকে কেন?আরওয়া উত্তর পায় না। দ্রুত চোখ মুছে সে উঠে দাঁড়ালো। ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজটা পড়ে নিলো। নির্ঝর এখন রুমে নেই।সে হয়তো মসজিদে গিয়েছে।
আরওয়া ধীর পায়ে রুম থেকে বের হলো। তার উদ্দেশ্য রিস্তা-তিস্তার রুমে যাবে। কিন্তু রুম থেকে বের হতেই আরওয়া দাঁড়িয়ে গেলো। নির্ঝরের বড় খালা আসছেন তার দিকে।এই মহিলাকে আরওয়া বেশ ভয় পায়।এই মহিলাকে নয়। মহিলার কথাগুলো কে আরওয়ার বেশ জঘন্য লাগে। সবসময় রাগী গলায় কথা বলেন সে। মধুর কন্ঠে কথা বলতে পারে এমন কোনো যোগ্যতা তার ডিকশনারিতে নেই।তাই আরওয়া এই মহিলাকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু আজ একদম কাছাকাছি চলে আসায় পালানোর আর কোনো সুযোগ পেলো না আরওয়া। মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো:আন্টি, কিছু বলবেন?
_তোমাকে তো অনেক কিছু বলতে চাই। তুমি কি শুনতে পারবে?
_জি পারবো।
_দেখো,নির্ঝর কখনো তোমাকে মেনে নিবে না। তোমার মতো লো-ক্লাসের মেয়ের সাথে ওর যায় না। একেবারেই যায় না। তুমি আর তোমার মামা একটুও বোঝার চেষ্টা করছো না।এটাই হচ্ছে আপাতত সমস্যা। শোন মেয়ে,যতো দ্রুত পারো এখান থেকে কেটে পড়ো। তোমার ঠাঁই এখানে হবে না।
নির্ঝরের খালা কথাগুলো শেষ করার আগেই তার মেয়ে মিতা এসে হাজির। একবার আরওয়াকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করলো মিতা। তারপর বললো:মা, কাকে কি বোঝাচ্ছো?ওর যদি বোঝার কিছু থাকতো তাহলে গতকাল রাতেই সব বুঝে যেতো। বেচারা সারাটা রাত বেলকনিতে কাটালো যাতে ওর সাথে রুম শেয়ার করতে না হয়। তবুও যদি আমাদের নতুন ভাবির একটু লাজ-লজ্জা হয় তাহলে আরকি।
আরওয়া অবাক হয়ে মিতার দিকে তাকিয়ে আছে।কতো সুন্দর করে সে কথাগুলো বললো।এভাবে কথা বলতে তার একটুও লজ্জা লাগলো না। কথাগুলো ভাবতেই আরওয়ার পায়ের নখ থেকে মাথা পর্যন্ত যেন সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবু হজম করলো। আসলেই তার কথায় যুক্তি আছে। তাদের তিনজনকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্ঝরের মা মিসেস রুমানা আসলেন।আরওয়াকে হেসে বললেন: উঠে গেছো ঘুম থেকে? আচ্ছা আর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নাও। এখনো বেশি বেলা হয়নি।
মিসেস রুমানাকে থামিয়ে দিয়ে তার বড় বোন বললেন: বাহ্! রুমানা, খুব বেশি মাথার উপর তুলছিস দেখছি। কিছুদিন পর তোর মাথার উপর উঠে নাচবে। তখন বুঝতে পারবি।
_সেটা আমি দেখে নিবো আপা। তোমার এসব নিয়ে ভাবতে হবে না।
_তুই কি বুঝতে পারছিস না?পরে গিয়ে বিপদে পড়বি।
_আপা থাক না এসব কথা।আরওয়া,তুমি রুমে যাও।
মামির কথায় আরওয়া রুমে গেলো।সে চায় না এদের মাঝখানে থাকতে তখর চেয়ে রুমে একা একা বসে থাকা বেস্ট।আরওয়া রুমে যেতেই মিসেস রুমানাকে তার বড় বোন বোঝানো শুরু করলেন। সাথে বোনের মেয়ে মিতাও আছে। তাদের মা-মেয়ের ধারণা, মিসেস রুমানাকে পটাতে পারলেই তারা সফল।নির্ঝর তো আগে থেকেই দূরত্ব মেইনটেইন করছে। এখন শুধু তার মা’কে দলে আনতে পারলেই হলো।মিতা বললো:দেখো খালামনি, তোমার ছেলে আরওয়ার সাথে কখনো সুখী হবে না।দেখলে তো তার অবস্থাটা।
_আমি বুঝবো আমার ছেলে কার সাথে সুখী হবে আর কার সাথে সুখী হবে না। তাছাড়া বিয়েটা যখন হয়ে গেছে এই বিষয়ে কোনো কথা বলার দরকার নেই আর।এই বাড়িটা আমার শ্বশুরের।তার মানে আরওয়ার অধিকার তোমার চেয়ে অনেক বেশি। তুমি এসবে কথা বলতে আসলে একটু অদ্ভুত লাগে।তাই এসবে কথা বলিও না। ঠিক আছে?
মিতা তার খালার কথায় বোকা বনে গেলো। মানে, তাকে ছোট করে আরওয়াকে বড় করে দেখা হচ্ছে?এটা কিভাবে সম্ভব?সে কখনো এমন অবস্থা মেনে নিবে না। বড়লোক বাবার একমাত্র সুন্দরী মেয়ে।এতো চেষ্টা করেও নির্ঝরকে পটাতে পারেনি আর সেই নির্ঝরকে তার সামনে থেকে আরওয়ার মতো বোকাসোকা মেয়ে বিয়ে করে নিবে আর সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে তা কখনো হতে পারে না।দেখিয়ে ছাড়বে সে আরওয়াকে। তার বিশ্বাস নির্ঝর আরওয়াকে কখনো মেনে নিবে না। হয়তো আরওয়া তা বুঝতে পারছে না।কিন্তু মিতা ঠিকই বুঝতে পারছে। তবে বিয়েটা যখন হয়ে গেছে তা ডিভোর্সের পর্যায়ে নিয়ে যেতে বেশ সমস্যা হবে। যেখানে তার খালা আরওয়াকে সাপোর্ট করছে সেখানে তো ডিভোর্স মানেই দুঃস্বপ্ন। তাহলে উপায়?মিতা মনে মনে উপায় বের করে নিলো।একটা দাঁত কেলিয়ে হাসি দিলো।
কিছুক্ষণ পর নির্ঝর বাসায় এসেছে। তাকে দেখে মিতা দৌড়ে আসলো। মুচকি হাসি দিয়ে বললো:হেই, কেমন কাটলো রাত?
নির্ঝর চোখ তুলে মিতার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো। কপাল কুঁচকে বললো: তোমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে আমার রাত কেমন কেটেছে সেটা?
_আরে কৈফিয়ত হবে কেনো? জানতে চাচ্ছি আরকি।এতো রাগ দেখানোর কি আছে?
_আমি এমন রাগ দেখায়।দেখতে ইচ্ছে করলে দেখবে তা না হলে দূরে থাকবে।অযথা কানের কাছে মশা-মাছির মতো ঘ্যানঘ্যান করতে আসবে না।জাস্ট অসহ্য।
নির্ঝর কথাগুলো বলে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলো।তার রুমটা দ্বিতীয় তলায়।রুমে ঢুকে বেশ জোরে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো। আকস্মিক আওয়াজ শুনে আরওয়া চমকে গিয়ে তাকালো। নির্ঝরকে দেখতে পেয়ে সে চুপসে গেল।এতো জোরে দরজা লাগানোর কি আছে? সারাদিন এতো উগ্র মেজাজ নিয়ে থাকার কি আছে?আরওয়া বুঝতে পারে না। নির্ঝর খাটের একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। হয়তো রাতে খুব একটা ঘুম হয়নি।তাই এখন আবার ঘুমাতে যাচ্ছে সে।আরওয়া তা বুঝতে পেরে রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে গেলো। রাতে নির্ঝর যেহেতু তাকে স্পেস দিয়েছে এখন তাকেও তো সেইম কাজটা কথা উচিত।আরওয়া চলে যেতেই নির্ঝর মাথা তুলে তাকালো সেদিকে।এক পলক তাকিয়ে সে শুয়ে পড়লো আবারো।
আরওয়া বেলকনিতে গেলো। এখানে প্রায় ছয় বছর পর আসছে সে। নানুর বাড়িতে রোজ আসা হতো তার। কিন্তু নির্ঝরের রুমে বা বেলকনিতে আসা হতো না তার। প্রায় ছয় বছর আগে এসেছিল লাস্ট।বেলকনিটা আগের মতোই আছে।আরওয়ার বেশ ভালো লাগলো বিষয়টা দেখে। মুচকি হাসি দিলো একবার। মনটা যেন একটু প্রশান্তি পেলো। মনে মনে ভাবলো, এখনো নির্ঝরের হৃদয়ের কোনো এক অংশে তার নামটা আছে। তাহলে নির্ঝর এমন করছে কেনো?সে কি চায়?আরওয়া ভেবে কোনো উত্তর পায় না। নিরুপায় হয়ে একবার নির্ঝরের দিকে উঁকি মারে। নির্ঝর ঘুমাচ্ছে আরাম করে।আরওয়া ধীর পায়ে নির্ঝরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এক পলক তাকিয়ে থাকলো সে নির্ঝরের দিকে। আসলেই নির্ঝরকে রাগী দৃষ্টিতে মানায়। এখন শান্তশিষ্ট ছেলের মতো ঘুমিয়ে আছে দেখে আরওয়ার মনে হচ্ছে নির্ঝরকে রাগী দৃষ্টিতে আরো বেশি সুন্দর লাগে।আরওয়া একটা মিষ্টি হাসি দিলো।আলতো করে নির্ঝরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। তারপর দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। মনে মনে ভাবলো,নির্ঝর যদি জেগে থাকে তাহলে কি হবে?আবার মাথায় আসলো, নির্ঝর জেগে থাকলে তার এমষ কান্ডে নিশ্চয় তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো। নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আরওয়া রেহাই পেলো নির্ঝরের হাত থেকে।
আরওয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই নির্ঝর শোয়া থেকে উঠে বসলো। একটা জয়ের হাসি দিয়ে সে খিলখিলিয়ে হাসলো। ভাগ্য ভালো তার এখনো ঘুম আসেনি। ঘুমিয়ে পড়লে এতো সুন্দর স্মৃতিটা মিস হয়ে যেতো। নির্ঝর আবার শুয়ে পড়লো।
আরওয়া রুম থেকে বেরিয়ে এসেই নানা ভাইয়ের সাথে আড্ডায় মেতে আছে।তার সাথে রিস্তা তিস্তাও আছে।তিনজনেই নানার সাথে গল্পগুজব করছে।তখনি নির্ঝরের মা মিসেস রুমানা আসলেন আরওয়াকে ডাকার জন্য।আরওয়া সাথে সাথে তার সাথে গেলো।আরওয়াকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন:নির্ঝর কোথায়?
_ঘুমাচ্ছে।
কথাটা শুনে মিসেস রুমানা আরওয়ার হাতে একটা কফির মগ ধরিয়ে দিলেন। শান্ত কন্ঠে বললেন:নির্ঝরকে ডেকে দাও আর কফি দিয়ে আসো।
মিসেস রুমানার কথায় অবাক হয়ে আরওয়া বললো:আমি ডাকবো?
_হ্যাঁ।আর কে ডাকবে?যাও যাও দিয়ে এসো।
আরওয়া ধীর পায়ে নির্ঝরের রুমের দিকে গেলো। রুমে ঢুকতেই দেখলো নির্ঝর শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।আরওয়া অবাক চোখে তাকালো।এক ঘন্টার মধ্যে সে ঘুমালো কখন আবার উঠলো কখন?মাথা কাজ করছে না আরওয়ার।তার মানে কি নির্ঝর ঘুমায়নি তখন।আরওয়া চোখ বড় করে করে তাকালো। নির্ঝরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তা দেখে আরওয়া গিয়ে নির্ঝরের সামনে কফির মগটা দিলো। দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে আসলো সে। নির্ঝর আড়চোখে একবার বিষয়টা দেখে মনে মনে হাসলো।
আরওয়া বের হয়ে একটু যেতেই খুব জোরে কিছু একটার শব্দ হলো। নির্ঝর কয়েকটি চিৎকার শুনে দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে সে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
চলবে….