বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় তুমি এসেছিলে পর্ব-০৭ এবং শেষ পর্ব

0
21

#বৃষ্টিভেজা_সন্ধ্যায়_তুমি_এসেছিলে
#আফসানা_মিমি
#শেষ_পর্ব

প্রায় দশমিনিট পর নীরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে কেবিন থেকে বের হয়ে আসলো। যাওয়ার পথে, লাবণ্যর দিকে তীর্যক দৃষ্টি ফেলতে ভুলল না। যেন লাবণ্যর জন্যই তার চোখের পানি। লাবণ্য দেখেনি ভাব নিয়ে ধ্রুবর কেবিনে প্রবেশ করল। পিছন থেকে নীরা চোখের পানি মুছে পালালো।

চোখ বন্ধ অবস্থায় ধ্রুব শুইয়ে আছে। হাতে লাগানো সেলাইন এক ফোঁটা করে শরীরে প্রবেশ করছে। ক্যানোলা লাগানোর অংশটুকু স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। লাবণ্য আলতো করে সেখানটায় ছুঁয়ে দিল। ধ্রুবর দিকে আঁড়চোখে একবার দেখল। এবার ধ্রুবর ফুলে থাকা শিরার উপর আঙুল ছুঁয়ে দিতে থাকলো। ধ্রুব চোখ বন্ধ করা অবস্থায় ছিল। আকস্মিক বলে উঠলো,” তোর জন্য এতো ভালো চাকরি চলে গেল, লাবন্নী।”

লাবণ্য চমকে উঠলো। এই তো! এই তো ধ্রুব তাকে লাবন্নী বলে ডেকেছে। তারমানে, ধ্রুব কী আগের মতো হয়ে গেছে? প্রশ্নটা মস্তিষ্কে আসতেই আনন্দে মন নেচে উঠলো। শিরার উপর থেকে হাত সরিয়ে ভাবুক সুরে বলল,” আমি কি করলাম?”

ধ্রুব চোখ খুলল। তার চোখে কি আছে লাবণ্য জানে না। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। ধ্রুব দেখল, লাজে লাবণ্যর গাল লাল টকটকে হয়ে আছে। ধ্রুবর চোখ সেখানেই আটকে রইলো। মোহিত হয়ে গলে যেতে চাইলো কিন্তু এতো সহজেই কী মনের ক্ষত মুছে যাওয়া সম্ভব? ধ্রুব বলল,” জানতে হবে না। আগামী সপ্তাহে তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। এবার বাড়ি যা। আমি ঠিক আছি।”

লাবণ্য কথা শুনলোই না। সে ঠায় বসে রইলো। টেবিলের উপরে রাখা ঔষধ পাতি নাড়াচাড়া করতে থাকলো। ধ্রুব দেখল, লাবণ্যর ভাবভঙ্গি অন্যরকম। যেনো ধ্রুবর সাথে মিশে যেতে চাইছে মেয়েটা। ধ্রুব তো এটাই চেয়েছিল। সকাল সন্ধ্যা মেয়েটা তার পিছু ঘুরঘুর করুক। ধ্রুব মনের না বলা কথা বুঝে নিক। ধ্রুবকে যত্ন করে ভালোবাসুক।

লাবণ্য টেবিলের উপরে থাকা ঔষধ ডাস্টবিনে ফেলে দিল।ধ্রুব তা দেখে বলল,” মুফতে পাওয়া ঔষধগুলো ফেললি কেনো? তোর মতো আমি অতো বড়োলোক নই যে, এতো ঔষধ কিনে খেতে পারব। এমনিতেই চাকরি চলে গেছে। এখন তুই কী এই ঔষধ কিনে দিবি?”

” সারাজীবন তোমাকে বসিয়ে রেখে চালাবো। তবুও কোনো পরনারীর পয়সা পকেটে গুঁজতে দিব না।”

ধ্রুব সুর টেনে বলল,” বাব্বাহ! আজ এতো অধিকার দেখাছিস যে?”

” আসল সোনা পেয়েছি, তাই!”

ধ্রুব চমকালো। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করল,” ধ্রুব থেমে যা! দুই এক কথাতেই গলে যাস না। তোর ভালোবাসা এখন অন্য কারো!”

ধ্রুব কপট রাগ দেখালো। দেয়ালের দিকে মুখ রেখে বলল,” খুব ঘুম পাচ্ছে। লাইট বন্ধ করে দিবি?”

লাবণ্যর মন খারাপ হলো। সে ভেবেছিল, কিছুক্ষণ ধ্রুবর সাথে গল্প করবে। ইনিয়েবিনিয়ে মনের কথা জানাবে। ধ্রুবকে বুঝাবে তাদের সম্পর্কে আসা উচিত। ধ্রুব তার মনোবাসনা পূরণ করতে দিল না। লাবণ্য লাইট বন্ধ করে দিল। ডাক্তার বলেছে, দুই ঘণ্টা লাগবে সেলাইন শেষ হতে। লাবণ্য এতোটুকু সময় বসে থাকবে।

ধ্রুব চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ঘুমানোর মিথ্যা ভান করে পরে রইলো। কিছুক্ষণ পর মাথায় কারো হাতের পরশ অনুভব করলো সে। বুজে থাকা চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলল ধ্রুব। এই প্রথম, লাবণ্য স্বইচ্ছায় ধ্রুবকে ছুঁয়েছে। ধ্রুবর ঢিপঢিপ মনে অস্থিরতা ছেয়ে গেলো।

ধ্রুবর সিল্কি চুলের গোঁড়ায় হাত পৌঁছাতেই লাবণ্যর শরীরে শিরশিরে ভাব প্রকাশ পেলো। লাবণ্য তবুও হাত সরালো না। মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি ঘুম চলো আসবে।
বেশিক্ষণ ধ্রুব ঘুমেট নাটক করতে পারলো না। চোখ খুলে লাবণ্যর ডান হাত চেপে ধরে বলল,” মায়া লাগাচ্ছিস কেনো, লাবণ্য? ”

লাবণ্য উত্তর দিল,” মেয়ে মানুষের মায়ায় কোনো খাদ থাকে না, ধ্রুব ভাইয়া।”

ধ্রুব অস্থির হয়ে গেল। ক্যানোলা লাগানো হাতখানা নাড়াচাড়া করতে শুরু করলো। লাবণ্য দেখলো, সেলাইনের পাইপ বেয়ে অনেকখানি র’ক্ত উঠে গেছে। লাবণ্য চিৎকার করে উঠলো,” নড়বেন না, ধ্রুব ভাইয়া।”

ধ্রুব সটান হয়ে শুয়ে রইলো। একদম নড়াচড়া বন্ধ করে। মনটাকে কিছুতেই বেঁধে রাখতে পারছে না। লাবণ্য সেলাই উঁচু করে ধরে স্বাভাবিক করলো। মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলল,” বেশি নাড়াচাড়া করলে আমি কিন্তু চলে যাব।”

ধ্রুব উত্তর দিল, চলে যা।”

লাবণ্যর অভিমান হলো। সে তবুও ঠায় বসে রইলো। ধ্রুব প্রকৃতির নিয়মের বাহিরে গেল না। সূচালো চোখ দিয়ে লাবণ্যকে অবলোকন করতে থাকলো।

——————

ধ্রুব সুস্থ হওয়ার পরের শুক্রবারে সাদিফকে বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না করার তাগাদা দিল। এমনিতেও সাদিফের মা, ধ্রুবকে খুবই পছন্দ করেন। খুশিতে ডগমগ হয়ে ভালোমন্দ রান্না করলেন। মিষ্টির আইটেম করলেন পাঁচ রকমের। লাবণ্য এতো আয়োজন দেখে চোখ কপালে। তখনো বুঝতে পারেনি এতো আয়োজনের মূল কারণ লাবণ্যর জীবনের সাথে জড়িয়ে।

দুপুর দুইটা নাগাদ ধ্রুব এসে উপস্থিত হলো। আজ ধ্রুব একা আসেনি। সাথে দুইজন পুরুষকে নিয়ে এসেছে। একজন লাবণ্যর প্রাইভেট শিক্ষক অন্তর, অপরজন কাজি। লাবণ্যকে অন্তরের সাথে বিয়ে দিবে। ব্যপারটি অদ্ভুত নয় কী? যাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া বোকামি ছাড়া কিছুই না।

লাবণ্য তখনো বিয়ের ব্যপারে কিছুই জানে না। ধ্রুব নিজেই লাবণ্যর ঘরে আসলো। তাগাদা দিয়ে শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,” তৈরি হয়ে নে, লাবণ্য।”

লাবণ্য ফ্লোরে বসে নেইলপালিশ দিচ্ছিল। আকস্মিক ধ্রুবর কথা শুনে হাত ফসকে নেইলপালিশ নিচে পড়ে গেল। সাথে সাথেই সাদা টাইলস লাল রঙে মেখে গেল। লাবণ্য জিহ্বা কে’টে উঠে দাঁড়ালো। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নেইলপালিশে পা ডুবালো। দরজার কাছাকাছি আসাতে পায়ের ছাপ বসে গেল সেই জায়গাটুকুতে। লাবণ্য সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ধ্রুবর কাছে এসে বলল,” কোথাও নিয়ে যাবে, ধ্রুব ভাইয়া? ”

লাবণ্যর সরল প্রশ্ন শুনে ধ্রুব মায়াভরা চোখে তাকালো। আজকের পর থেকে সরল মুখখানা দেখতে পারবে না ধ্রুব। আজকের পর লাবণ্যকে দেখার জন্য অধিকার থাকবে না ভাবতেই অন্তর কামড়ে ধরলো কিছু। ধ্রুব দেখলো লাবণ্যর মুখের চিরচেনা হাসি। সে উত্তর দিল,” মনে আছে তোর, লাবণ্য? আমার কাছে কিছু চেয়েছিলি? আমি আজ তোর সেই ইচ্ছা পূরণ করতে এসেছি।”

লাবণ্য বুঝলো না। মনেও করতে পারল না, তার বলা ইচ্ছের কথা। লাবণ্য শপিং ব্যাগ খুলে দেখলো। লাল রঙের জামদানী শাড়ি। ধ্রুবর কাছ থেকে কখনো শাড়ি পাওয়া হয়নি। কখনো কখনো ধ্রুব চকলেট, আইসক্রিম নিয়ে আসলেও পোশাক উপহার দেয়নি। আজই প্রথম। লাবণ্য শাড়ি দেখে প্রফুল্লচিত্তে বলে উঠলো,” আমার জন্য? আমি পরব? আমি কী তোমাকে মনের সেই ইচ্ছের কথাও বলে দিয়েছি?”

ধ্রুব উত্তর দিল না। ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেল। এদিকে লাবণ্য নিজেকে লাল রাণী সাজিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো। বসারঘরে ধ্রুবর পাশে অন্তরকে দেখে চমকাল। লাবণ্য ধীরপায়ে এগিয়ে এসে অন্তরের সামনাসামনি দাঁড়ালো। ধ্রুবর মনে হলো, কেউ তার কলিজা কে’টে নিয়ে চলে যাচ্ছে। নিশ্চয়ই লাবণ্য অন্তরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে! এই বুঝি ধ্রুবকে বলবে, ” আমার এই ইচ্ছে পূরণ করার কথা বলেছিলে, ধ্রুব ভাইয়া? আমি অনেক খুশি। ”

ধ্রুব আর ভাবতে পারল না। মাথা নিচু করে বসে থাকলো। এদিকে সাদিফের মায়ের মনও বিষন্ন। বাবা ছাড়া দুই সন্তানকে মানুষ করেছেন তিনি। মেয়ের জন্য ধ্রুবকে চেয়েছিলেন কিন্তু আশা পূরণ হলো না। ধ্রুব সমন্ধ এনেছে, উনার এখানে কিছু বলার নেই।

ধ্রুব হাজারে কথা ভাবছিল। তখনই তার কানে লাবণ্যর স্বর ভেসে আসলো,” আপনি এখানে কি করছেন, স্যার? আজ কোচিং নেই?”

অন্তর রাগে হিসহিস করে উত্তর দিল,” আমাকে সেই সুযোগ কেউ দিলে তো? এই লোকটার জন্য আমার আজকের টিউশনি মিস গেলো।”

সকলের চোখ ধ্রুবর দিকে আটকালো। সে থতমত খেয়ে বলল,” পাত্র ছাড়া বিয়ে হবে নাকি? তাই এভাবে নিয়ে আসছি।”

লাবণ্য পাত্র সম্বোধনটা দুইবার বিড়বিড় করে রিপিট করে বুঝার চেষ্টা করল, কোন পাত্রের কথা বলছে। যখন বুঝতে পারল তখন চিৎকার করে উঠলো, ” পাত্র মানে? কার পাত্র? কার সাথে বিয়ের কথা আলোচনা করা হচ্ছে? ”

ধ্রুব ভাবলো, লুকোচুরি করে কি লাভ! আসলকথা বলে দেয়া হোক। ধ্রুব বলতে শুরু করল,”তুই সেদিন আমার কাছে তোর পছন্দের মানুষটাকে চেয়েছিলি না! আমি তোর পছন্দের মানুষকে নিয়ে এসেছি। সারাজীবনের জন্য যেনো তোরা এক হয়ে যাস এজন্য!”

লাবণ্য অবাক হলো। অন্তরের দিকে একবার তাকালো। অন্তরও তার মতো তাকালো। ভ্রু যুগল কুঁচকে লাবণ্যর উদ্দেশে বলল,” এভাবে আমাকে অপমান না করলেও পারতে, লাবণ্য। আমি তোমাকে বোন ভেবেছিলাম, অথচ তোমার পরিবার!”

অন্তর রাগ করে চলে গেল। কেউ তাকে ফেরালো না। সাদিফ কপাল চাপড়াল। সাদিফের মা রান্নাঘরে চলে গেলো। কাজি কি করবে ভেবে না পেয়ে বলল,” আমি কি চলে যাবো?”

লাবণ্য উত্তর দিল, ” ডাকলেই চলে আসবেন। একসাথে সম্মানি দিয়ে দিব।”

কাজি চলে গেলো। লাবণ্য হনহনিয়ে ঘরের দোর লাগালো। বসার ঘরে একমাত্র হতভম্ব ধ্রুব বসে রইলো। সাদিফ পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে বসার ঘরে আসলো।ধ্রুবর পাশে আয়েশ করে বসে বলল,” থাপ্পড় কয়টা খেয়েছিস, গুনেছিস?”

ধ্রুব কটমট চোখে তাকিয়ে বলল,” ছেলেটার সাথে লাবণ্যর সম্পর্ক নেই, তুই আমাকে জানাসনি কেন?”

সাদিফের হাত থেকে চামচ পড়ে গেলো। পানসে মুখ করে বলল,” সব দোষ আমার? তোরই তো ইচ্ছে করছিল, প্রেমিকার মনের মানুষ খোঁজার জন্য। আমি কী আমার বোনের জন্য ছেলে খুঁজতে গিয়েছিলাম? ”

ধ্রুব মাথায় হাত রেখে ঝিম ধরে বসে রইলো। আগে পরের ঘটনা জোড় লাগিয়ে চমকে উঠলো সে। বসা থেকে উঠে সোজা লাবণ্যর ঘরের দরজায় করাঘাত করলো,” দরজা খোল লাবণ্য। কথা আছে।”

ভেতর থেকে লাবণ্যর জবাব আসলো,” তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই, ধ্রুব ভাইয়া। তুমি চলে যাও।”

ধ্রুব পুনরায় দরজায় করাঘাত করল,” আমার দম বন্ধ লাগছে। একটু কথা বলব। দরজাটা খুল, প্লিজ!”

লাবণ্য ফোলা ফোলা মুখ নিয়ে দরজা খুলল। নাক টেনে বলল, ” কি বলবে৷ বলো।”

ধ্রুব মনোযোগ সহকারে লাবণ্যকে দেখলো। লাবণ্য ধ্রুবর চোখে চোখ রাখছে না। তারমানে, কী দাঁড়ায়! লাবণ্য তাকে ভালোবাসে নয়তো?

ভাবাবনাটা মনে আসতেই শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। ধ্রুব কিছু বলছে না বলে, লাবণ্য দরজা আটকে দিতে চাচ্ছিল।ধ্রুব হাত দিয়ে দরজার হাতল আঁটকে দিয়ে বলল,” কিছু বলতে চাস?”

লাবণ্যর চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। সে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। ধ্রুবর বুকে হাত দিয়ে আঘাত করতে করতে বলল,” তুমি খুব খারাপ, ধ্রুব ভাইয়া। আমার মনের কথা একটুও বুঝো না। তুমি আমার সাথে এমনটা কীভাবে করতে পারলে। আমার বিয়ে হয়ে গেলে বুঝি বেঁচে যেতে? বলো! বলো।”

ধ্রুব মুচকি হাসলো। লাবণ্যর হাতজোড়া হাতের মুঠোয় ধরে বলল,” সেদিনের ধাক্কাটা সোজা বুকে লেগেছিল রে, লাবন্নী! শূন্য জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছে তো সেদিনই জেগেছিল বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় যেদিন তোকে প্রথম মনে ধরেছিল।”

লাবণ্য খুশিতে কান্না করে দিল। ধ্রুব চোখের পানি মুছে বলল,” ভালোবেসেছি বলেই ভালোবাসার মানুষটার সকল আবদার পূরণ করতে চেয়েছি। কে জানতো! আমার ভালোবাসার মানুষটা আমাকে চায়!”

লাবণ্য বলল,” আমি তোমাকে ক্ষমা করব না, ধ্রুব ভাইয়া।”

” বিয়ে করে ফেল৷ তবেই গর্দভটা শাস্তি পাবে।”

সাদিফের আওয়াজ শুনে দুজন আলাদা হলো। সাদিফ দাঁত বের করে হেসে বলল,” শুভকাজে দেরী করতে নেই। চল চল কাজি রেডি। ”

ধ্রুব ভাবল, সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। সে লাবণ্যর দিকে তাকালো। লাবণ্য মাথা নাড়িয়ে না করতে থাকলো। ধ্রুব শুনলে তো! লাবণ্যকে কোলে তুলে নিলো। লাবণ্য নিজেকে ছাড়াতে ভুলভাল বকলো কিছুক্ষণ।

কাজি বাড়ি পৌঁছাতে পারেনি। সাদিফ আবার ধরে নিয়ে এসেছে। মানুষটা খুবই বিরক্ত। ধ্রুব লাবণ্যকে নিয়ে সোফায় বসলো। মাথার ঘাম মুছে ফেলার নাটক করে বলল,” বেশ ভারী হয়েছিস তো! লাবণ্য? বিয়েটা হতে দে। আগে তোকে দিয়ে হাত টেপাবো।”

” আমি তোমাকে বিয়ে করব না, ধ্রুব ভাইয়া।”

ধ্রুব মুচকি হাসলো। ভ্রু নাচিয়ে বলল,” তুই বিয়ে করবি, তোর ভাই সহ বিয়ে করবে।”

সাদিফ মিষ্টি রেডি করছিল। ধ্রুবর কথা শুনে বিড়বিড় করল,” শালা কখন যেনো বলে উঠে, বোনকে ছেড়ে ভাইয়ের সাথে বাসর করব।”

ধ্রুব ও লাবণ্যর বিয়ে হয়ে গেলো। লাবণ্য কান্না করলো না। কান্না করার সুযোগ পেলো না। ধ্রুব এর আগেই জোর করে নিজের বাড়ি নিয়ে আসলো।

লাবণ্যদের বাড়ি থেকে ধ্রুবর ফ্ল্যাটে আসতে দশ মিনিট সময় লাগে। চার পাঁচ গলির পর ধ্রুবর বাড়ি। রিকশায় চড়ে নতুন বউকে বাড়ি নিয়ে এসেছে সে। লাবণ্য কৌতূহল হয়ে ধ্রুবর ফ্ল্যাট দেখছে। এতো সৌখিনতাময় বাসস্থান কখনো আগে দেখেনি। লাবণ্য ঘুরে ঘুরে দেখছিল। ধ্রুব লাবণ্যর পিছনে এসে দাড়াতেই ধাক্কা খেলো। লাবণ্য মাথা ঘুরিয়ে ধ্রুবকে দেখে বলল,” ধাক্কা খেলে কেনো? তুমি ইচ্ছে করে ধাক্কা খেয়েছো।”

ধ্রুব লাবণ্যর নাকে কামড় দিয়ে বলল,” ধাক্কা দিয়েছি বেশ করেছি। কি করবি?”

লাবণ্যর ঝগড়া করার ইচ্ছে হচ্ছে না। সে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরলো। ধ্রুব এহেন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না। সেও জড়িয়ে ধরলো। লাবণ্য মিনমিন করে বলল,” তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম বলেই দূরে সরে যাচ্ছিলাম কিন্তু মনটা বেঁধে রাখতে পারিনি।”

ধ্রুব চমকাল। জিজ্ঞেস করলো ভুল বুঝার কারণ। লাবণ্য বিস্তারিত বলল। সব শুনে লাবণ্যর গালে দাঁত বসিয়ে সেখানটায় চুমু খেলো, ” আজ থেকে তোর শাস্তি শুরু, লাবন্নী। অনেক কষ্ট দিয়েছিস। কড়ায় গন্ডায় সব শোধ করব।”

——————–

লাবণ্য শাস্তি পেয়েছে। ভালোবাসার শাস্তি। এখনো প্রতি বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় ধ্রুব বুকে শুয়ে রাখে লাবণ্যকে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দেয় অনায়াসে। লাবণ্য, ধ্রুবর বুকের উপর কান পেতে রাখে। হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ শুনে মুচকি হাসে। এভাবেই চলছে ধ্রুব ও লাবণ্যর জীবন।

সমাপ্ত