#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (২৩)
হুযাইফা মাইশা
মাস দু’একের মতো সময় গড়াল। দিন যাচ্ছে ভালোয় ভালোয়। ইয়াদ-ঊর্মি প্রেমটা কিছুটা ভিন্ন। দু’জনে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মেডিকেল শেষ হলে, কথাবার্তা শেষে কোনোদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। প্রথম প্রথম ঊর্মি লজ্জা পেলেও বর্তমানে ঊর্মি ইয়াদের সঙ্গে মিশে গেছে। ছেলেটা তার মনের কথা, অভিমান সব বুঝে যায় চট করে।
পূর্ণতা ইদানীং বেশ ভার্সিটি মিস দিচ্ছে। সপ্তাহ খানেক পর তার এক্সাম। অথচ, সে এখন এত ঘন ঘন মিস দিচ্ছে! বর্ষা ভিডিও কল দিয়েছে একটু আগে। চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করে,
‘ ভার্সিটিতে আসিস না কেন?’
‘ আমার ভালো লাগেনা ইদানীং। কাল যাব, দেখি।’
পূর্ণতা সবে ঘুম থেকে উঠেছে। সে রাত জেগে পড়েছে। এখন বাজে আড়াইটার মত। ফজরের দিকে ঘুমিয়েছে। ইয়াভকিন কতো জোর করল তাকে ঘুমানোর জন্যে! কিন্তু পূর্ণতা শুনেনি। শরীর ভালো না তার ইদানীং। কেমন কেমন যেন লাগে। সেজন্য সকাল বেলা ভার্সিটিতে যেতে চায়না। ঘরে বসেই পড়ছে ভীষণ। রাতে ইয়াভকিন শেষমেশ রেগেমেগে ঘুমিয়েছে। সে নাকি পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে, নইলে তার ঘুম আসবেনা— কথাখানা শুনে পূর্ণতা হেসে ফেলেছিল। বিশ্বাস করেছে যদিও। কিন্তু ইয়াভকিনের বিরু’দ্ধে গিয়ে সারারাত পড়েছে, তাই ইয়াভকিন রাগ করেছে। সকালে নাশতাটাও বোধহয় খায়নি। পূর্ণতার জন্য শুধু এক কাপ কফি বেডের পাশে রেখে গেছে।
‘ নওশিনের বিয়ের ঠিক হবে, মনে হয়। আজকে দেখতে আসবে। দুই পরিবারই রাজি বলতে গেলে। সব ঠিক থাকলে, বিয়ের ডেট ঠিক করবে। আমাদের যেতে বলল। তোকে ফোন দিত, কিন্তু ওর ফোনে টাকা ছিল না। তাই আমাকে বলতে বলল। যাবি? মেয়েটার নাকি অস্বস্থি হচ্ছে! আমরা গেলে নাকি সাহস পাবে।’
বলতে বলতে হেসে ফেলল বর্ষা। পূর্ণতা নিজেও হাসলো,
‘ আমরা গেলে সাহস পাবে?’
‘ কি জানি!’
‘ কখন যেতে বলল?’
‘ সন্ধ্যার দিকে।’
‘ তুই যাস বরং। আমি যাবনা। ইয়াভকিন দিবেন না।’
‘ কেন?’
‘ একা যেতে দিবেনা তো।’
‘ তাহলে আমিও যাবনা।’
‘ তুই চলে যা। মেয়েটা এত করে বলেছে। পরে রাগ করবে!’
‘ তুই বরং দুলাভাইকে বলে দেখ একবার।’
‘ আচ্ছা, গেলে জানাবো।’
কল কেটে দিল পূর্ণতা। চুলগুলো হাত খোঁপা করে উঠে বসল। ফোন হাতে নিল আবার। ইয়াভকিনের নাম্বারে কল দিলেও রিসিভ হলোনা। গুটিগুটি অক্ষরে তাই ম্যাসেজ দিল,
‘ এক্ষুনি কল ব্যাক না করলে, আমি গিয়ে আবার ওই আগের বাসাটায় উঠব, সব নিয়ে। কেউ ফেরাতে পারবেনা চাইলেও।’
মিনিট পাঁচেকের মাথায় কল এল। রিসিভ করতেই ঝাঁঝাল কণ্ঠ ভেসে এল,
‘ তোমার এত সাহস! ঠ্যাং ভেঙে দিব একদম।’
‘ সে ভাঙ্গবেন নাহয়, আসবেন কবে সেটা বলুন?’
পূর্ণতার গলার স্বর নরম। এবার ইয়াভকিনের কণ্ঠ হতে রুক্ষতা কমল। কোমল কণ্ঠে বলল,
‘ তোমার শরীর ঠিক আছে এখন? রাতে না ঘুমালে তো আরও খারাপ হবে, বুঝোনা?’
‘ বুঝি তো, আসবেন কখন সেটা বলুন না!’
‘ ছয়টার দিকে। রান্না করেছ? আমি এসে খাব কিন্তু। তোমার হাতের রান্না ছাড়া খেতে এখন ভালো লাগেনা। যদি শরীর খারাপ লাগে তবে করার দরকার নেই।’
‘ শরীর ভালোই আছে। বলছি কি?’
‘ কি?’
‘ নওশিনের বাসায় যাব। ওর আজ বিয়ের ডেট ফিক্স হবে। যেতে বলেছে। না গেলে রাগ করবে খুব।’
ইয়াভকিন চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল। টাই ঢিলে করে বলল,
‘ আমি গিয়ে দিয়ে আসবো।’
‘ না না, আমি বরং রান্না করে রেখে দিয়ে যাই? চলে আসবো সন্ধ্যায়।’
‘ আমি ড্রাইভার পাঠাবো। ড্রাইভার আমার লাগেনা। তবুও অফিসের জন্য লাগে। ওর দিয়ে আসবে। বেশি কথা বললে যেতে পারবেনা।’
খানিক চুপ থেকে পূর্ণতা জবাব দিল,
‘ আচ্ছা।’
_
সেদিনই ঠিক হলো নওশিনের বিয়ে। পরীক্ষার শেষেই উঠিয়ে নিয়ে যাবে। পূর্ণতা কিছুক্ষন থেকে চলে এসেছিল।
আজ পূর্ণতাদের শেষ পরীক্ষা। সবগুলো পরীক্ষা ভালোভাবে দিলেও আজকে তার কেমন মাথা ঝিমঝিম করছে। রিকশায় যখন এসেছে, গরমে যেন মাথা ধরে যাচ্ছিল ওর। কোনোমতে পরীক্ষা শেষ করে, যখন দেয়ালে ঠে’স দিয়ে দাঁড়াল, তখন ব্যাপারটা লক্ষ্য করল বর্ষা। একহাতে ধরে বলল,
‘ শরীর খারাপ লাগছে?’
‘ হু। ইয়াভকিনকে কল দেই, দাঁড়া।’
বলে সে ফোন বের করল। ইয়াভকিনের নাম্বারে কল করে আসতে বললো। মিনিট বিশেকের মধ্যে সে গেটের পাশটায় আসলো। বর্ষা আর পূর্ণতা তখন সেখানে চলে গেছে। বর্ষাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠতেই মাথাটা আবার ঘুরে উঠল তার। টাল সামলিয়ে মাথা এলিয়ে দিল ইয়াভকিনের ঘাড়ে। ইয়াভকিন চকিত নয়নে তাকিয়ে তাকে আগলে নিল। ফ্ল্যাটে না গিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালের সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ল দুজনে। অযথা প্রশ্ন করলনা পূর্ণতা। আপাতত ডাক্তার দেখানোটাই শ্রেয়। ইয়াভকিনের হাত ধরে এগিয়ে গেল। হঠাৎ কি মনে করে একজন নার্সকে ওয়াশরুমের রাস্তা জিজ্ঞেস করে সেদিকে ছুট লাগাল। ইয়াভকিন ছুটল পিছু পিছু। ওয়াশরুমে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে সে ক্ষান্ত হল। শান্ত হয়ে দাঁড়াল। ইয়াভকিন পানি জোগাড় করে খাওয়াল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করল,
‘ আমি যা ভাবছি তা সত্যি হবে তো, পূর্ণতা?’
‘ তুমি কি, তুমি কি প্রেগন্যান্ট?’
থেমে থেমে কণ্ঠ ভেসে এল ইয়াভকিনের। প্রশ্নের উত্তরে কিছু বললনা পূর্ণতা। মাথা খানিক নিচু করে লাজুক হাসল। ইয়াভকিন তাকে ধরে ধরে নিয়ে গেল ডাক্তারের নিকট। ডাক্তার দেখিয়ে টেস্ট শেষ করে ফ্ল্যাটে ফিরল যখন, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
দুজনে ফ্রেশ হয়ে আসল। পূর্ণতা আলমারি খুলে কিছুক্ষণ কি যেন খুঁজল। না পেয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ফিরে এল ইয়াভকিনের কাছে। ইয়াভকিন ল্যাপটপ থেকে মনোযোগ সরায়। পূর্ণতা ধীর কণ্ঠে শুধায়,
‘ রিপোর্ট কখন আসবে?’
‘ কাল বিকেলে। আমি নিয়ে আসবো আসার সময়।’
পূর্ণতা মাথা নাড়ায়। উঠে যেতে চাইলে ইয়াভকিন আটকায়,
‘ এত চিন্তা করার তো প্রয়োজন নেই।’
পূর্ণতা জবাব দিল না। রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে দুজনেই আশাহত হবে ভীষণ। সেটা দুজনেই জানে। প্রকাশ করছেনা। বিশেষ করে ইয়াভকিন। ডাক্তার দেখানোর সময় এক চিলতে আশা যেন তার চেহারায় উঁকি দিচ্ছিল!
চলবে।
#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (২৪)
হুযাইফা মাইশা
আজ আসতে আসতে বেশ দেরী হয়েছে ইয়াভকিনের। তার অপেক্ষা করতে করতে পূর্ণতা ঘুমিয়ে গেছে। এক্সট্রা চাবি থাকায় কলিংবেল বাজাতে হলোনা ইয়াভকিনের। দরজা খুলে বাকি জিনিসপত্র গুলো সোফায় রেখে সে রিপোর্টটা নিয়ে রুমে গেল। পূর্ণতাকে ঘুমাতে দেখে হাঁফ ছেড়ে সে ফ্রেশ হতে গেল।
পূর্ণতার ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যার পর। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে সে পাশে বসে ল্যাপটপ চালানো ইয়াভকিনকে দেখল। কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে থেকে একটু দূরে গিয়ে কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
-‘ এ-এসে গেছেন?’
-‘ হু, অনেক আগেই।’
একটু ঢোক গিলে পূর্ণতা,
-‘ রিপোর্ট কোথায়?’
নজর ল্যাপটপ থেকে সরলনা ইয়াভকিনের। একহাতে বেড সাইডে রাখা রিপোর্টটা এগিয়ে দিল। পূর্ণতা তৎক্ষনাৎ নিলোনা। সময় নিয়ে তারপর ইয়াভকিনের হাত থেকে রিপোর্ট আনলো। খুলতেই নজরে আসলো, গুটিগুটি অক্ষরে লেখা, ‘পজিটিভ’ শব্দটা। মিনিট পাঁচ এক সে আহাম্মকের মত বসে রইল। ইয়াভকিন ততক্ষণে ল্যাপটপ সরিয়ে সোজা হয়ে বসেছে। গলা ঝে’ড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠা পূর্ণতাকে আগলে নিল। কাঁদুক না মেয়েটা! ওর নিজেরও খুশিতে কান্না আসছে! কিন্তু কাঁদছেনা! মেয়েটা নাহয় কাঁদুক!
-‘ কাঁদেনা, শান্ত হও। এত খুশিতে কেউ কাঁদে!’
কিছুক্ষণ পর বলল ইয়াভকিন। পূর্ণতার কান্না কমল কিছুটা। আচমকা হেসে বলল,
-‘ বাবা হচ্ছেন! আমি মা হচ্ছি, সত্যি?’
আবেশে চোখ বন্ধ করে পূর্ণতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ইয়াভকিন। পারলে মেয়েটাকে হৃদয়ের ভেতর ঢুকিয়ে রাখে!
হেনা খবরটা জানতে পেরেছেন পূর্ণতার কাছ থেকেই। দ্বিতীয়বার নানী হওয়ার খবরটা পেয়ে উনার খুশি দেখে কে! ফারুক মির্জা অত্যন্ত শান্ত এবং গম্ভীর স্বভাবের ব্যাক্তি হওয়া সত্ত্বেও খবরটা শুনে তিনি হুলুস্থুল কান্ড বাঁধালেন। ইয়াসিন সাহেবকে তৎক্ষনাৎ ফোন করলেন। ইয়াসিন সাহেব খবরটা পেয়েছেন একটু আগেই। ফারুক সাহেবকে কল করতে যাচ্ছিলেন উনি নিজেও। এর আগেই উনার থেকে ফোন পেয়ে রিসিভ করলেন। ফারুক সাহেব উত্তে’জিত হয়ে বললেন,
‘ দাদা হচ্ছিস! মিষ্টি পাঠাবো, পুরো গ্রাম খাওয়াবি পারলে।’
‘ তুই না হয় দ্বিতীয়বার নানা হচ্ছিস! কিন্তু যে আসবে সে এ বাড়ির প্রথম বংশধর। আমার প্রথম নাতি বা নাতনী। যেই হোক! তার আসার খবর পেয়েই আমি মিষ্টি আনতে বলেছি! তুই বরং তোর মিষ্টি গুলো পারলে নিজে খা, দেখিস, বেশি খেয়ে আবার অসুস্থ হোস না।’
ফারুক সাহেব হেসে ফেললেন। হাসলেন ফোনের ওপাশে থাকা ইয়াসিন সাহেবও।
পূর্ণতা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। রাত বাজে আটটা। একটু আগেই হেনার সঙ্গে কথা বলেছে। মিনিট কয়েক গড়াতেই কাজলের ফোন এল। ধরতেই বললেন,
‘ তোমার পরীক্ষা শেষ না?’
‘ হ্যাঁ, মা।’
‘ তাহলে গ্রামে এসে থাকো। এই সময় একা থাকবা না। ইয়াভকিন চলে যাবে অফিসে। একা কিভাবে থাকবা?’
‘ আমি গেলে উনি থাকবেন কি করে, মা?’
বলে জিহবায় কা’মড় দিল পূর্ণতা। আবার বলল,
‘ মানে, রান্না বান্না করে খাবেন কি করে? খালা তো আর আসেন না।’
হেসে ফেললেন কাজল,
‘ তাহলে আমি আসবো?’
‘ এত কষ্ট করার দরকার নেই মা। কয়দিন পর আসবো নাহয় আমরা?’
‘ কয়দিন পর কি? ইয়াভকিন কোথায়? ওকে ফোন দাও।’
ইয়াভকিনের কাছে ফোন দিতেই তাকে কাজল বেশ কয়েকটা উপদেশ দিলেন। ক’ড়া নজরদারিতে ব’ন্দি করার কথা বললেন পূর্ণতাকে। ইয়াভকিন মন দিয়ে শুনে গেল। বাইরে থেকে শান্ত হলেও ভেতরে সে এত অশান্ত!
ফোন রেখে সে রুম থেকে বেরিয়ে এল। সোফায় রাখা ব্যাগটা থেকে ফুলগুলো বের করল। রুমে ফিরে এসে দেখল, পূর্ণতা আলমারি হাত’ড়াচ্ছে। তাকে টেনে এনে বসিয়ে নিজেও পাশে বসল। বেলি ফুলগুলো হাতে দিয়ে কোলে শুয়ে পড়ল। আচমকা হেসে উঠে পূর্ণতা। ফুলগুলো নাকের কাছটায় নিয়ে ইয়াভকিনের কথা শুনে,
‘ মা কি বলেছেন, জানো?’
‘ যেতে বলেছেন!’
‘ এটাও বলেছেন, না গেলে উনি নিজেই চলে আসবেন। কি করা যায় বলো তো!’
‘ আমি যাব?’
মুখ তুলে চাইল ইয়াভকিন,
‘ তুমি গেলে থাকবো কি করে আমি?’
পূর্ণতার ঠোঁট প্রসারিত হলো আরও।
_
বর্ষা এসেছে আজ। আপাতত সে আর পূর্ণতা মুখোমুখি বসা। ইয়াভকিন অফিসে। বর্ষা শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ একা একা থাকবি কি করে?’
‘ কিছুদিন যাক, পরে ভেবে দেখব।’
‘ প্রথম প্রথম আরও বেশি সতর্ক থাকা দরকার।’
‘ জানি।’
কলিংবেল বেজে উঠতেই চমকে উঠে পূর্ণতা। বর্ষাকে বসতে বলে সে এগিয়ে যায়। দরজা খুলে ইয়াদকে দেখে সে চমকে উঠে আবার। ইয়াদ হাসিমুখে বলে,
‘ ভাবি, কেমন আছেন?’
‘ এইতো ভাইয়া, ভেতরে আসুন না।’
ইয়াদ ভেতর ঢুকল। ইয়াদ একাই মেডিকেল থেকে এখানে এসেছে। উল্টো দিকে এসেছে শুধু ভাই আর ভাবিকে দেখে যাবে তাই।
যেহেতু মেইন দরজা আর ড্রয়িং রুম একসাথে, সেহেতু তাদের বর্ষা দেখতে পাচ্ছে। সে চমকে উঠে সরে গেল। ইয়াদ অপ্রস্তুত হলো,
‘ ভাবি? ভাইয়া বাসায় নেই?’
‘ চলে আসবে একটু পর। বসুন।’
‘ ঠিক টাইমে আসিনি তাহলে।’
‘ সমস্যা নেই, ভাইয়ের বাসা তো আপনারও।’
বয়সে ইয়াদ পূর্ণতার থেকে কিছুটা বড়ই। ইয়াদ বসল একপাশে। বর্ষা নিজ থেকেই অন্য রুমটায় চলে গেল। ইয়াভকিন আসলো মিনিট দশ এক পর। এসে ভাইকে দেখে জড়িয়ে ধরল। পূর্ণতা ট্রে তে চা নিয়ে এসেছে সবে। সেগুলো রেখে একপাশে দাঁড়াল। ইয়াদ হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল,
‘ কালকে শুনলাম বাড়িতে নতুন মেহমান আসছে। তাই মেডিকেল থেকে চলে এসেছি। ভাইয়াকে বলিনি, সারপ্রাইজ দিব বলে।’
পূর্ণতা হাসলো। ইয়াভকিন টাই খুলে পূর্ণতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গা ছেড়ে বসল সোফায়। কিছুক্ষণ গল্প করল। পূর্ণতা গেল বর্ষার কাছে। মেয়েটা একা একা ফোন দেখছিল। পূর্ণতা গিয়ে বলল,
‘ চা দেই?’
‘ খেয়ে এসেছি রে। আমি বরং এখন যাই।’
‘ থাকনা কিছুক্ষণ!’
বর্ষা মানলনা। ইয়াভকিনের নিকট হতে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা সেড়ে সে বেরিয়ে গেল। ইয়াদ দুপুরের খাবার খেয়ে চলে গেল। যদিও সে খেতে চায়নি। সে এসেছিল কিছুক্ষণ তাদের দেখে চলে যাবে। বিকালে আবার ওর পড়া আছে।
ইয়াদ যেতেই রুমে আসলো ইয়াভকিন। খুব দ্রুত গোসল সেড়েছে আজ। চুলগুলো মুছেনি এখনও। পূর্ণতা সব কিছু ঠিক করে রুমে আসতেই ইয়াভকিন তোয়ালে টা তার দিকে দিল। বিছানায় বসে বলল,
‘ মুছে দাও।’
দ্বিরুক্তি না করে এগিয়ে আসলো পূর্ণতা। মুছতে মুছতে ইয়াভকিনের কথা শুনল,
‘ নড়ে? কিছু ফিল করো?’
ইয়াভকিনের দুহাত পূর্ণতার পেটে। পূর্ণতা হেসে ফেলল,
‘ এখন ফিল করবোনা। কয়েকমাস পর।’
‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।’
ইয়াভকিন অবিশ্বাস্যের স্বরে বলল। কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠা কণ্ঠটা লক্ষ্য করল পূর্ণতা। ইয়াভকিনের চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ আমারও।’
চলবে।