বৃষ্টিস্নাত তুমি পর্ব-২৫+২৬

0
369

#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (২৫)
হুযাইফা মাইশা

ইয়াভকিন অফিসে। ভার্সিটি নেই সেজন্য পূর্ণতা রান্নাবান্না সেড়ে আজ রাফিয়ার ফ্ল্যাটে এল। উনি একাই ছিলেন। পূর্ণতা আসায় বেশ খুশিই হলেন। বসিয়ে বললেন,
‘ তুমি দেখি এখন আর আসোনা!’
‘ কাজের জন্য আসতে পারিনা, আন্টি।’
‘ কি খবর তা বলো?’
‘ ভালোই আন্টি, আংকেল কোথায়?’
‘ উনি তো অফিসে। আর মেয়েটা কলেজে। সারাদিন একা থাকা লাগে, আমি বাপু ওতো একা থাকতে পারিনা। তুমি কি করে থাকো?’

মাথা হালকা নুইয়ে হাসলো পূর্ণতা। রাফিয়া সন্দিহান চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কোনো সুখবর টু-খবর নাকি?’
পূর্ণতা ভীষণ চমকে উঠল। হেসে বলল,
‘ জ্বি আন্টি।’
‘ আহহা! বললেনা! কয় মাস?’
‘ দুই।’
‘ বাহ! বেশ ভালো খবর! একা একা থেকোনা। কেউ আসবেনা?’
‘ হয়তো আসবে। নাহলে আমরাই যাব।’
‘ ঠিক ঠিক! এই সময় একা থাকার দরকার নাই। কি খাবে বলো?’
‘ কিছুনা আন্টি, আপনি শান্ত হয়ে বসুন। গল্প করি।’

রাফিয়া বসলেন। গল্পে মজলেন দু’জনে।

ইয়াভকিন ইদানীং দুপুরের দিকেই ফিরে। শত কাজ থাকলেও। বিশেষ মিটিং ছাড়া সে দেরি করেনা। আসার সময় রোজ কিছু না কিছু নিয়ে আসে। এইতো সেদিন! কোত্থেকে ছোট ছোট মেয়ে বাচ্চার জামা নিয়ে এসেছে এক ব্যাগ। সেসব দেখে পূর্ণতা বলেছে, ‘ এখনই এসব কেন? যদি ছেলে হয়?’
হেসে ইয়াভকিন বলেছিল, ‘ ছেলের জামাও এনেছি। টেনশন করোনা।’
বলতে বলতে সে আরেক ব্যাগ থেকে ছেলে বাচ্চার জামা বের করেছিল। পূর্ণতা হতভম্ব হয়ে বসেছিল কিছুক্ষণ।

ইয়াভকিন আজ পূর্ণতার জন্য শাড়ি নিয়ে এসেছে। ফেরার পথে একটা বড় মার্কেট আছে। সেখানে ঘুরে ঘুরে, বেছে বেছে একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি নিয়ে এসেছে। পূর্ণতা দরজা খুলতেই সেটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘ ধরুন বাচ্চার মা।’
‘ আবার কি?’
‘ খুলেই দেখো।’

বলে সে রুমে চলে এল। পিছু পিছু দ্রুত কদমে এল পূর্ণতা। ইয়াভকিন খেয়াল করে বলল,
‘ তুমি খামখেয়ালি হয়ে যাচ্ছ। আস্তে হাঁটো।’

হতভম্ব পূর্ণতা কিছু বললনা। এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো সে ভীষণ পছন্দ করে।

_

ঊর্মি দাঁড়িয়ে আছে। পেছনে বিশাল বড় মার্কেট। ইয়াদের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা যখন শেষ হয় তখন ঊর্মির ক্লাস থাকে। পড়ার চাপে ওতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই দায় ইয়াদের জন্য। যদিও সে থাকতে চায়। কিন্তু ঊর্মিই মানা করে। আজ দুজনেই ফ্রি। সেজন্য ইয়াদ আগেই কল দিয়ে এখানে আসতে বলেছে। ইয়াদ আসতে আরও দশ মিনিট লাগল। অগোছালো চুল গুছাতে গুছাতে, চ্যাক প্রিন্টের শার্ট গায়ে জড়িয়ে সে এসেছে। ঊর্মিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে বোকা হাসল। এতদিনে বুঝে গেছে, মেয়েটা সময় নিয়ে বেশ সচেতন। একটু হেরফের হলে কান্ড ঘটায়। যদিও তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি তার সাথে। তাও সে এগিয়ে এসে বলল,
‘ সরি, সরি। আর হবেনা লেট।’
‘ আচ্ছা।’

মেনে নিল ঊর্মি। ইয়াদ আরেকটু এগিয়ে এল। ঢোক গিলে বলল,
‘ হাত ধরি?’
‘ ধরুন।’

হাতটা ধরে নিল ইয়াদ। মুচকি হেসে বলল,
‘ তুমি এত ক’ঠিন হৃদয়ের অধিকারী কেন, ঊর্মি?’
‘ মানে?’
‘ এই যে নিজ থেকে হাত ধরোনা। ঘুরতে যেতে বলোনা,আমার প্রতি মায়াও দেখাও না। আমি কি জো’র করছি তোমায়, ঊর্মি?’

ঊর্মি চমকে উঠল। দু’হাতে ইয়াদের একহাত জড়িয়ে ধরল অজান্তেই। ব্যাপারটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দিনকে দিন সে ইয়াদকে আরও বেশি ভালোবাসছে। হয়তো লজ্জায় ব্যাপারটা প্রকাশ করছেনা। আরেকটু শ’ক্ত করে হাত ধরে বলল,
‘ এইযে ধরলাম, ঘুরতে তো পরেও যাওয়া যাবে। দুজনেরই তো পড়াশোনা আছে এখন। তাইনা?’
‘ বুঝেছি, এখন বলো! কোথায় যাবে?’

পেছনের বড় মার্কেটটা পেছনেই ফেলে ঊর্মি হাঁটা ধরল। বাধ্য হয়ে হাঁটা ধরল ইয়াদ। ঊর্মি যেতে যেতে বলল,
‘ আজ বরং অনেক্ক্ষণ হাঁটি? দামি দামি রেষ্টুরেন্টে গিয়ে বসে মজা পাইনা আমি। বাদাম খাবো নাহয়? চলুন! রাজি আছেন তো?’
‘ আছি তো। তোমার সব কিছুতেই আমি রাজি।’

চোখে চোখ রাখল ঊর্মি। আচমকাই লাজুক হেসে দৃঢ় করল হাতের বাঁধন।

_

সুখের সময় খুব দ্রুত বয়ে যায় বোধহয়। এই যে! দেখতে দেখতে ছয়টা মাস পেরিয়ে গেল। খুব দ্রুত চলে গেল সময়গুলো। পূর্ণতা ভেবে পায়না, এই তো সেদিন তার ইয়াভকিনের সাথে বিয়ে হলো। বিয়ের রাতে দু’জনে কথাও বললোনা। পরদিন ছুটে চলে এল শহরে। এরপর ক’দিন দূরে থাকল। তারপর হুট করে ফিরে এসে ভালোবাসাময় হয়ে উঠল জীবন। স্বপ্নের মতই তো সবকিছু লাগছে তার কাছে!

পূর্ণতা ভারিক্কি পেট সামলে উঠে বসতে চাইল। গ্রামের বাড়িতে এসেছে মাস খানেক আগে। সাত মাসে ডক্টর দেখিয়ে ইয়াভকিন নিয়ে এসেছে তাকে। সাথে সেও থাকছে। এর আগে অবশ্য হেনা, কাজল সকলেই ফ্ল্যাটে গিয়ে থেকেছেন কিছুদিন। খেয়াল রেখেছেন ভীষণ। এক্ষেত্রে ইয়াভকিনের কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। দিনকে দিন সে আরও উতলা হয়ে উঠছে। এখান থেকেই একদিন পর পর অফিসে যায়। বিশেষ দরকার না হলে যায়না। সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমেই সাড়ে। আজ যেতে হয়েছে। পূর্ণতা উঠে বসলো সাবধানে। একটু আগেও এখানে কাজল আর সায়মা ছিলেন। তড়িঘড়ি করে কি কাজে যেন ছুটে গেলেন। ভাবনার মধ্যেই রুমে ঢুকলেন শায়লা। শান্ত-শিষ্ট এ নারী পূর্ণতাকে ভীষণ পছন্দ করেন। হাতে উনার ট্রে, তাতে আলাদা আলাদা ফল ভর্তি। সেগুলো একপাশে রেখে বসলেন। ট্রে একটু দিয়ে বললেন,
‘ খাও, এসময় বেশি বেশি ফল খাওয়া দরকার! তুমি এত কম খাও! দুপুরেও দেখলাম একটু খেয়ে উঠে গেলা!’
‘ খাই তো বড় মা, বেশি খেলে বমি আসে।’
‘ এসব তো হয়-ই! তাও খাবা! বেশি বেশি! ধরো, এখন এগুলা খাও, দেখি।’

এগিয়ে দিলেন ফল। এক পিস আপেল মুখে নিল পূর্ণতা। পরপর আরও দু’টো পিস খেয়েই বলল,
‘ আর খাবোনা।’
‘ ওমা! ইয়াভকিন কি বলে গেছে জানো? সন্ধ্যা হলেই যেন তোমাকে এসব দেয়া হয়! ও না বললেও আমরা কি দিতাম না? আমাদের ছেলের বউ না তুমি?’
হেসে ফেলল পূর্ণতা,
‘ থাক বড় মা, উনি আসলে বকা দিয়েন নাহয়।’
‘ জানো? আমার পেটে যখন ইরিন, তখন তোমার বড় শশুর এক কান্ড বাঁধিয়েছিলেন। তখন পাঁচ মাস চলছিল, আচমকা ব্যথা উঠায় কি করবো বুঝে উঠতে পারিনি। তখনকার আমলে তো ভালো ডাক্তার ও ছিলোনা গ্রামে। আম্মাকে বললে তো বলতেন, এসব হয়-ই। তাই না বলে বিছানায় চুপচাপ শুয়ে শুয়ে কাঁদছিলাম। উনি কাজ থেকে এসে যখন দেখলেন, চিল্লা-চিল্লি করে যা করলেন! বড় ছিলেন তো, তাই ছোটরা সবাই ভয় পেত।’

কাহিনিখানা শুনে ভীষণ ভালো লাগলো পূর্ণতার। আরেক পিস আপেল তুলে দিলেন তার মুখে শায়লা। পূর্ণতা মানা করায় আর খাওয়ালেন না। শান্ত হয়ে বসে থাকার কথা বলে, উনি নিচে গেলেন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ইয়াভকিন চলে আসে এর আগেই। আজ এত দেরি হচ্ছে! পূর্ণতা পেট সামলে উঠে দাঁড়িয়ে আয়নার সামনে গেল। উঁচু পেট আর গোলগাল মুখশ্রীতে পূর্ণতার নিজেকে অদ্ভুত লাগে। মোটাও হয়েছে খানিকটা। কিন্তু বাড়ির সকলেই বলে, সে ঠিকঠাক মতো খায়না! শুকিয়ে যাচ্ছে! আশ্চর্য ব্যাপার।

‘ কি ব্যাপার? দাঁড়িয়ে আছ কেন এভাবে? শান্ত হয়ে বসো না কেন?’
আচমকা ইয়াভকিনের কণ্ঠ শুনে আয়নার ভেতর দিয়ে পেছনের ইয়াভকিনের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাল পূর্ণতা। পরপরই মাথা বাঁকিয়ে বলল,
‘ বসে থাকতে ভালো লাগেনা।’
‘ কিছু খেয়েছো?’
‘ মাত্রই খেলাম তো।’
‘ ক্ষিদে লেগেছে আর?’
ফুঁ’সে উঠে পূর্ণতা,
‘ আমি কি রা’ক্ষ’স?’
‘ আহহা! রাগো কেন, বউ? এই স্বভাব পরে আমাদের বাচ্চা পাবে! যদিও রাগলে তোমাকে ভারী সুন্দর দেখায়!’

ইয়াভকিনের ঠোঁটে চমৎকার হাসি। পূর্ণতা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। ইয়াভকিন এগিয়ে এসে ওর কপালের মাঝখানে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
‘ বিছানায় গিয়ে বসো। অনেক্ষণ দাঁড়িয়েছ, নিচে যাওয়ার দরকার নেই, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

পূর্ণতাকে বিছানায় বসিয়েই সে ফ্রেশ হতে গেল। খুব দ্রুত ফ্রেশ হয়ে চলে এল। খানিক্ষণ কথা টথা সাড়তেই ইশরাত উঁকি দিল রুমে। পূর্ণতা দেখে বলল,
‘ ইশরাত, কোনো দরকার?’
‘ গল্প করতে এসেছিলাম ভাবি।’

ইয়াভকিন উঠে যেতে যেতে বলল,
‘ তুই বোস তাহলে। আমি ওর খাবার নিয়ে আসি।’

ইশরাত হাসি মুখে এসে বসলো। ইয়াভকিন যেতে যেতে পূর্ণতার কণ্ঠ শুনল,
‘ আমার ক্ষিদে নেই এখন। আনতে যাবেন না দয়া করে।’
ইয়াভকিন শুনলোনা। পা বাড়াল নিচে।
ইয়াসিন সাহেব সোফায় বসা। বাকি দুই ভাই রুমে। খুব মনোযোগ দিয়ে নিউজ দেখছিলেন ইয়াসিন সাহেব। ইয়াভকিনকে নামতে দেখলেন হঠাৎ। বললেন,
‘ বাপ! এখন আসলা?’
‘ হ্যাঁ, বাবা।’
‘ অফিস কেমন চলে?’
‘ শাফায়াত না থাকলে যে কি হতো! ওর জন্যই ঠিকঠাক আছে সব। নাহলে আমার ব্যবসায় এতদিনে লাল বাত্তি জ্ব’লত।’

কাজল রান্নাঘর হতে বেরিয়ে এলেন খাবার হাতে। ইয়াভকিনকে দেখে বললেন,
‘ আমি পূর্ণতাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে আসি।’
ইয়াভকিন কিছু বলতে চাইলে কাজল তাকে থামিয়ে দিয়ে হেসে বললেন,
‘ চিন্তা করিস না। ঠিকঠাক মতোই খাইয়ে দিব।’
ইয়াভকিন মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘ যাও।’

ইয়াভকিন এরপর এসে বসল ইয়াসিন সাহেবের পাশে।

_

পরদিন রাতের কথা। ইয়াভকিন অফিসে যায়নি।
রাত নয়টার কাছাকাছি। পূর্ণতা শুয়ে ছিল এতক্ষণ। বারান্দার পাশটায় দাঁড়িয়ে আছে আপাতত। পাশে ইয়াভকিন দাঁড়িয়ে। বাইরে বেশ ঠান্ডা বাতাস বইছে। বারান্দার গ্রিল গলিয়ে সেসব ছুঁয়ে যাচ্ছে দুজনকেই। আচমকা পেটে হাত দিল পূর্ণতা। ধীরে ধীরে বলল,
‘ কিছু অনুভব করছি!’
‘ আমার বাচ্চা কি বেশি ন’ড়াচ’ড়া করছে?’
‘ অনেক!’

ইয়াভকিন ঝুঁকে এল। হাত রাখল পূর্ণতার পেটে। বলল,
‘ কবে আসবে ও?’

পূর্ণতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ কাতর স্বরে বলল,
‘ ব্যথা করছে ভীষণ!’

ইয়াভকিন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল,
‘ বেশি?’
‘ হু!’

দেরী করলনা ইয়াভকিন। পূর্ণতার হাত ধরে কোলে তুলে নিল। শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘ একটু সহ্য করতে পারবে? এক্ষুনি হাসপাতালে যাব!’

ব্যথায় অস্থির পূর্ণতা মৃদু আওয়াজ তুলে। ইয়াভকিন সাবধানে নেমে আসে। বাড়ির সকলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত ছিলেন না। ইশরাত ছিল শুধু। ইয়াভকিন আর পূর্ণতাকে এভাবে দেখে সে জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে ভাবির?’
‘ ব্যথা উঠেছে। মা-বাবাকে ডাক।’

ইশরাতের চেঁচানোতে সবাই জড়ো হলেন। ইয়াভকিন গাড়ির পাশটায় চলে গেছে ততোক্ষণে। পেছনের সিটে বসিয়ে দিল পূর্ণতাকে। কাজল তড়িঘড়ি করে উঠে বসলেন পূর্ণতার পাশে। দু’হাতে আগলে নিয়ে ইয়াভকিনকে বললেন,
‘ গালি জলদি চালা বাপ!’

ইয়াভকিন অস্থির হয়ে উঠল। গাড়ির চাবি নিল ইয়াসিন সাহেবের থেকে। ইয়াসিন সাহেব আসতে চাইলে মানা করে দিলেও। তবুও উনি উঠে গেলেন গাড়িতে।

হাসপাতালে পৌঁছাতে সময় লাগলনা বেশ। হাসপাতালটা বেশ ভালোই। গ্রামের ভেতর হলেও। চেয়ারম্যান হওয়ার স্বরুপ ডক্টররাও বেশ মান্য করেন ইয়াসিন সাহেবকে। তড়িঘড়ি করে পূর্ণতাকে অটিতে নিতেই ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠল ইয়াভকিন। কাজল ছেলের হাত ধরে বললেন,
‘ অস্থির হোস না, সব ঠিক থাকবে। ওর কন্ডিশন তী ভালো।’

খানিক পরে জানানো হলো, ডেলিভারিটা আজই হবে। আটমাস হলেও! ইয়াভকিন শান্ত হয়ে বসতে পারলনা। পরবর্তী পুরো চার ঘন্টা সে পায়চারি-ই করল। রাত তখন গভীর। দেড়টার কাছাকাছি। ভাগ্যিস ডক্টর ছিলেন তখন!

খানিক পরে অটির লাইট অফ হলো। বাচ্চার কান্নার মৃদু আওয়াজ কানে এসেছে একটু আগে। এরপর থেকে ইয়াসিন সাহেব, কাজল আর ইয়াভকিন; তিনজনেই উতলা হলেন আরও। উত্তে’জনায় ইয়াভকিন পায়চারি শুরু করল আবার। ডক্টর বের হলেন খানিক পরে। পিছু পিছু নার্স। নার্সের হাতে সাদা তোয়ালেতে মোড়ানো ছোট্ট বাচ্চাটা! মুখ দেখা না গেলেও হাতের ছোট্ট আঙুল দেখা যাচ্ছে। অন্যরকম অনুভূতি খেলে গেল ইয়াভকিনের মনে। শান্ত হলো সে। নার্স বাচ্চাটাকে সর্বপ্রথম তার কোলেই দিলেন। কাঁপা হাতে সে ছোট্ট বাচ্চাটাকে সামলাতে হিমশিম খেল প্রথমে। এরপর বুকের সাথে লাগিয়ে রাখল। সামলে নিল। ডক্টর মাস্ক খুলে বললেন,
‘ মেয়ের বাবা হয়েছেন, স্যার। আর আপনার ওয়াইফও আল্লাহ্’র রহমতে সুস্থ আছেন। একটু পর কেবিনে শিফট করে দেয়া হবে। তখন দেখতে পারবেন!’
বিড়বিড় করে শোকর আদায় করলেন কাজল। ছোট বাচ্চাটার দিকে তাকালেন ছলছল নয়নে। ফর্সা বাচ্চাটার গালদুটো রক্তিম। চোখ-দু’টো বন্ধ। কিন্তু হাত পা নাড়াচ্ছে। ইয়াভকিন প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
‘ আমার মেয়ে!’

চলবে।

#বৃষ্টিস্নাত_তুমি – (২৬)
হুযাইফা মাইশা

পূর্ণতার জ্ঞান ফিরল সকালে। কেবিনে শিফট করা হয়েছে বেশ আগেই। কিছুক্ষণ পিটপিট করে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে রইল। সব বুঝতে সময় লাগলো। যখন বুঝে উঠল, তখন আচমকা কানে আসে ইয়াভকিনের শান্ত স্বর,
‘ আমাদের মেয়ে…’

পূর্ণতা এবার তাকাল তার দিকে। পাশে দাঁড়িয়ে ইয়াভকিন। ক্লান্ত মুখশ্রীতে হাসি লেপ্টে আছে। কি চমৎকার সেই হাসি! পূর্ণতা কথা বলতে চাইল। ইয়াভকিন বাঁধা দিয়ে বলল,
‘ ওইযে,দেখো।’
পাশের দোলনাটায় ছোট্ট বাচ্চাটা শুয়ে। ঘুমোচ্ছে। পূর্ণতা বলল,
‘ ওকে একটু এনে দিন না!’

ইয়াভকিন ঢোক গিলে এগিয়ে গেল। বাচ্চাটাকে সাবধানে কোলে তুলে পূর্ণতার পাশে এসে বসে বলল,
‘ ওর হাত পা এত ছোট!’
‘ এর আগে বাচ্চা কোলে নেন নি?’
‘ কম নিয়েছি।’

হেসে ফেলে পূর্ণতা। আধশোয়া হওয়ার চেষ্টা করে। ইয়াভকিন কপট রেগে বলে,
‘ শুয়ে থাকো। ডক্টর না বলা অব্দি উঠবেনা।’
‘ আমার বাচ্চাকে কোলে নেবনা?’
অস্থির পূর্ণতার দিকে একপলক তাকাল ইয়াভকিন। বাচ্চাটাকে তার পাশে শুইয়ে দিল আস্তে করে। বলল,
‘ নেবে তো। সুস্থ হও।’
পূর্ণতা বাচ্চাটার দিকে তাকাল। একহাতে স্যালাইন গাঁ’থা তার। অন্যহাতটা দিয়ে বাচ্চাটার মাথা আলতো ছুঁয়ে দিল। কাঁপা হাত! অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে চোখ। ধীরে ধীরে বলে,
‘ ও দেখতে একদম আপনার মতো।’
‘ উহু, আমাদের মতো।’

ফারুক মির্জা পুরো পরিবারসহ আসলেন ইমতেহান বাড়িতে। ফারুক মির্জা বেজায় রেগে আছেন ইয়াসিন সাহেবের উপর। বাড়িতে ঢুকেই ইয়াসিন সাহেবকে বললেন,
‘ আমার নাতনী কি আমার বাড়ি যাবেনা?’
‘ নাতনীর নানা চলে এলে তার আর যাওয়ার প্রয়োজন আছে নাকি?’
ঠাট্টার স্বর উনার। ফারুক মির্জা ফোঁ’স করে বললেন,
‘ কেঁদে কুটে আসতে বললি। নাতনীর মুখের দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিলাম এবারের মত।’
প্রত্যুত্তরে হাসলেন ইয়াসিন সাহেব।

প্রান্ত মিষ্টির প্যাকেট গুলো রেখে বলল,
‘ পূর্ণতা আর বাবু আসেনি এখনো?’

‘ চলে আসবে। ইয়াজিদ গিয়েছে, ইয়াদ ঢাকা থেকে সোজা হাসপাতালেই চলে গেছে। একটু আগে বলল বের হয়েছে।’
কাজল নাশতা গুছিয়ে রাখলেন। হেনা উৎকণ্ঠা হয়ে বসে আছেন। উনার মতে, আগে হাসপাতালে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু ভাবনার মধ্যেই গাড়ির শব্দ কানে এল।
ছুটে গেলেন দরজার পাশে। পূর্ণতার নরমাল ডেলিভারি যেহেতু, সুস্থ হতে সময় লাগেনি বেশ। তাও তাকে বেশ অসুস্থ দেখাচ্ছে। ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে মুখ।

ইয়াদের কোলে বাচ্চাটা। উচ্ছ্বসিত হয়ে আছে সে। ইয়াজিদের কোল থেকে বাচ্চাটা একপ্রকার কে’ড়েই নিয়েছে। এজন্য ইয়াজিদের সঙ্গে তার ছোট-খাটো যু’দ্ধই লেগে যাচ্ছিল।
ইয়াজিদ পিছু পিছু এল। ইয়াদ বাচ্চাটাকে নিয়ে এল প্রথমে। এরপর আসলো ইয়াভকিন আর পূর্ণতা। পূর্ণতার হাতটা ওর হাতের মুঠোয়।

হেনা কোলে নিলেন বাচ্চাটাকে। তার থেকে আবার ফারুক মির্জা নিতে চাইলেন। এই কোল থেকে সেই কোল করতে করতে মেয়েটা কেঁদে উঠে। শেষমেশ সামলাতে না পেরে পূর্ণতার কোলেই তার ঠা’ই হয়।

_

প্রতিভা বেশ চঞ্চল হলেও আপনজন ছাড়া কারো সাথে সে বাকপটু নয়। একা একা পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ানো তার কাজ। বাড়ির পেছনে বড় বাগান। সেটায় গিয়ে বসে থাকে কখনো কখনো। এজন্য মায়ের কাছে বকুনি কম খায়না সে। তবুও এই অভ্যাস ত্যাগ করেনা।

‘ আমার মেয়ে কোথায়, দেখি?’

প্রতিভা ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। হাতের রঙপেন্সিল গুলো মাটিতে ফেলে সে ছুটে গেল বাবার কাছে। বাবা তাকে আগলে নিল। সে বাবার কাঁধে মাথা রেখে বলল,
‘ আজকে স্কুল থে-থেকে আসার সময় তোমার অফিসের সামনে দিয়ে এসেছি বাবা, কিন্তু আম্মু যেতে দেয়নি।’
‘ কেনো?’
‘ শরীর খারাপ করছিল আম্মুর। ড্রাইভার আংকেলকে কতোবার বলেছি গাড়ি থামাতে। তুমি ওদের বকে দিও।’
‘ আচ্ছা দেব, এবার বলো, এত বড় বাড়ি ছেড়ে তুমি এই সন্ধ্যা বেলায় বাগানে কি করছো?’
‘ এটাও তো বাড়ির মধ্যেই পড়ে। তাইনা?’

খিলখিলিয়ে হেসে উঠে প্রতিভা। ইয়াভকিন মুগ্ধ হয়ে মেয়ের হাসি দেখে। মেয়েটার হাসি অবিকল পূর্ণতার মতো। চোখ ঝাপসা হয় ওর! বিগত চার বছরে পাওয়া সুখগুলো হয়তো পূর্ণতা না আসলে ইহ জনমেও পেতনা।
মেয়েকে কোলে নিয়ে সে চললো বাড়ির ভেতর।
ফ্ল্যাট ছেড়ে এই বাড়িটা কিনেছে বছর চার এক আগে। প্রতিভার একবছর হয়নি তখন। এই এলাকাটাও নিরাপদ। বাড়িটাও বেশ। বিশাল বড়ো জায়গা বাইরের দিকে।

পেছন থেকে কেউ ঝাপটে ধরল আচমকা। পূর্ণতা কেঁপে উঠে। পরক্ষণে রেগে’মেগে খুন্তি উঁচিয়ে বলে,
‘ কাজ করতে দিন, সরুন।’

‘ এখন কিসের কাজ? তোমাকে না বললাম, আমি আসলে আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করবে।’

‘ রান্না করবোনা?’

‘ দুপুরে করোনি?’

মৃদু মাথা নাড়ায় পূর্ণতা। ইয়াভকিন ভ্রু কুঁচকিয়ে বলে,
‘ মানে দুপুরে খাওনি?’

‘ প্রতিভাকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আমিও ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। স্কুল থেকে আনার আগে আর রান্না করতে মন চায়নি।’

‘ আশ্চর্য, তুমি বড্ড অবহেলা করো নিজের ব্যাপারে।’

পূর্ণতা বোকা হাসে। ইয়াভকিন রেগে যায় তা দেখে। তাও শান্ত কণ্ঠে বলে,
‘ রান্না শেষ হলে আমার সাথে আসো।’

চুলো অফ করে পিছু পিছু ছুটে পূর্ণতা।
প্রতিভা ওর পড়ার রুমে বসে আছে। ওদিকে একবার উঁকি দিয়ে গেল পূর্ণতা। ফ্ল্যাটটা ছেড়ে আসার আগে রাফিয়া বড় আফসোস করছিলেন। যে কয়টা দিন প্রতিভা সেখানে ছিল, উনি রোজ আসতেন। বাচ্চাটাকে আদর করতেন।

ইয়াভকিন চেঞ্জ করে শান্ত হয়ে বসল। কাছে টেনে নিল পূর্ণতাকে। পাশে বসিয়ে বলল,
‘ এক্ষুনি খাবার নিয়ে আসো।’
‘ মাত্র চা খেয়েছি।’
‘ মেয়ের সামনে বকা খেতে চাও?’

ফুঁস করে উঠে পূর্ণতা। প্রস্থান ঘটায় গটগট পায়ে।

_

ঊর্মির ফোন পেয়ে বেশ অবাকই হলো পূর্ণতা। সে বর্তমানে গাড়িতে বসে। প্রতিভাকে আনতে যাচ্ছে। মেয়েটা এত পাকা! পড়াশোনা তো করেনা স্কুলে, শুধু যায় খেলতে। ঊর্মির কলটা কেটে গেল ভাবনার মধ্যেই। তড়িঘড়ি করে কল ব্যাক করল পূর্ণতা। ঊর্মি কল ধরেই টুকটাক কথা সাড়ল। এক পর্যায়ে শান্ত কণ্ঠে শুধাল,
‘ আচ্ছা, আপু? কোথায় তুমি?’

‘ প্রতিভাকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছি রে, বল কি বলবি?’

‘ ইয়াদ তোমার দেবর?’

পূর্ণতা চমকে উঠে। ঊর্মি কিভাবে ইয়াদকে চেনে? জিজ্ঞেস করল,
‘ হ্যাঁ, তুই চিনিস?’

ঊর্মি আচমকা ফুঁপিয়ে উঠে,
‘ ওর সাথে আমার সাড়ে চার বছরের সম্পর্ক আপু। অবাক হবে জানি, আমি নিজেও অবাক হয়েছি ইয়াদ তোমার দেবর জেনে। মাস চার এক আগে কথায় কথায় হঠাৎ জেনেছি। বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না ও তোমার দেবর।’

পূর্ণতা হকচকিয়ে উঠে,
‘ কাঁদিস না। কাঁদছিস কেন? সম্পর্ক তো ভালো কথা! ইয়াদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বিয়ের ব্যাপারটা আগা। আমার বা ইয়াভকিনের তো সমস্যা নেই। এভাবে বলছিস কেন?’

‘ আমি জানতাম, আম্মু মানবেনা। তুমি তো জানো আপু, আম্মু কেমন! প্রেমের বিয়েতে উনার যত বিরোধি’তা। প্রথমে আমি ইয়াদকে বলেছি ও বিষয়ে। এখন আম্মু আমার জন্য পাত্র দেখছে। আমি ইনিয়েবিনিয়ে বাবাকে বুঝিয়েছি আমার একজনকে পছন্দ। আম্মুর কাছে বলেছেন বাবা, উনি শক্ত হয়ে বলেছেন, আমার কেউ থাকলে যেন মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দেই তার চিন্তা। এসব উনি মানবেন না। কি করবো আপু? তুমি কিছু করো। ইয়াদকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা আমি আপু।’

একেবারে বলে থেমে গেল ঊর্মি। ফুঁপানোর শব্দ বাড়ল। পূর্ণতা হতভম্ব হয়ে গেল মূহুর্তেই। সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
‘ কাঁদিস না বোন। আমি আসবো তোদের বাসায়, খালামণির সাথে আমি কথা বলবো।’

কল রেখে দিল পূর্ণতা। প্রতিভাকে নিয়ে গাড়িতে উঠল আবার। প্রতিভা ব্যাগ রাখল পাশে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে বলল,
‘ আমরা কি বাবার কাছে যাব?’

‘ হ্যাঁ, মা। তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?’
মেয়ের মাথায় হাত রাখল পূর্ণতা। প্রতিভা খিলখিল করে হেসে বলল,
‘ লাগবেনা? কতো কাজ করি স-স্কুলে।’
‘ কি কাজ?’
‘ পড়াশোনা।’

ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল পূর্ণতা। প্রতিভার হাসির বেগ বাড়ল। মেয়েটা এত সুন্দর আর স্পষ্ট কথা বলে!

_

ইয়াভকিন বউ আর মেয়েকে অফিসে মোটেও আশা করেনি। প্রতিভা জেদ ধরলেও পূর্ণতা খুব জরুরী না হলে অফিসে আসেনা। ইয়াভকিনের কেবিনে ঢুকল প্রতিভা আর পূর্ণতা। শাফায়াত খবর দিয়েছে সে তারা এসেছে। ইয়াভকিনের চেয়ারটায় গিয়ে উঠে বসলো প্রতিভা। হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলল,
‘ তোমার অফিসটা বাসায় নিয়ে যাওনা কেন?’
‘ অফিস কিভাবে বাসায় নিয়ে যায়, মামনি?’
‘ এত বড় পড়ার টেবিল তো আমার নেই। তুমি এটা বাসায় নিয়ে যাবা?’
‘ যাব মামনি, এবার বলো কি খাবে?’
‘ জুস।’

‘ খবরদার, খালি পেটে এসব খেতে যাবেনা। তোমার টিফিন কই?’
মাঝখান থেকে কথা বলে পূর্ণতা। কপট রাগ দেখিয়ে ব্যাগ খুঁজে টিফিন বের করল। যা ভেবেছিল তাই, মেয়েটা টিফিন খায়নি। সে রোজ সকালে উঠে খেটেখুটে টিফিন রেডি করে, আর মেয়েটা খায়না।
টিফিন খুলে স্যান্ডউইচটা খেতে বলল প্রতিভাকে। প্রতিভা মুখ ফুলিয়ে বসে রইল। ইয়াভকিন অসহায় চোখে তাকাল। কিছু বলার পূর্বেই পূর্ণতা তার হাত চেপে ধরল। নিয়ে আসলো কাছে। কেবিনটা বেশ বড়। একপাশে চেয়ার টেবিল। অন্য মাথায় সোফায়। সোফায় ইয়াভকিনকে বসিয়ে সে বলল,
‘ কিছু কথা আছে!’
‘ বলো, এতো কিসের জরুরি তলব?’
‘ ইয়াদের সঙ্গে আমার খালাতো বোনের সম্পর্কে। প্রথমে দু’জনের কেউই জানতো এই আত্মীয়তার কথা। বড় খালামণি ভীষণ স্ট্রিক্ট! প্রেম ট্রেম বুঝেন না। ঊর্মির জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। ঊর্মি বেচারি বলেছিল ওর পছন্দের একজন আছে, কিন্তু খালামণি উনার কথায় অটল।’

সবটা শুনে বেশ অবাকই হলো ইয়াভকিন। বলল,
‘ ইয়াদ জানতেও দিলনা ওর এতো দিনের সম্পর্ক!’

মাথা নাড়ায় পূর্ণতা। বলে,
‘ আজ বিকেলে ওদের বাসায় যেতে চাচ্ছি।’
‘ আচ্ছা, যাবা, সমস্যা নাই তো।’

কিছু বলার পূর্বেই প্রতিভার কান্নার আওয়াজ কানে আসে। মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদছে। ইয়াভকিন ছুটে গেল। পিছু গেল পূর্ণতাও। মেয়েকে কোলে তুলে নিতেই প্রতিভা কান্না থামাল একটু। তবুও ফুঁপিয়ে উঠল। ইয়াভকিন চোখের পানি মুছে দিল,
‘ কাঁদছ কেন মা?’
‘ আমি স্যান্ডউইচ খাবোনা।’
‘ এই সামান্য ব্যাপারে কেউ কাঁদে? না খেলে খাবেনা, শুধু কান্না করো কেন?’
রেগে গেল পূর্ণতা। মেয়েটা আরো ফুঁপিয়ে উঠল। ইয়াভকিন কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
‘ পূর্ণতা, আমার মেয়ের সঙ্গে এভাবে কথা বলবেনা।’

রাগ যেন আরো বাড়ল পূর্ণতা। একেই ঊর্মি-ইয়াদের চিন্তায় মাথা ধরে যাচ্ছে ওর। সব কিছু বুঝতে, গুছাতে সময় লাগছে। খালামণির জেদের কারণে দু’টো জীবন নষ্ট হয়ে যাবে। কিছু একটা করতেই হবে। দ্বিতীয়ত এই বাপ মেয়ের কান্ড। মাথা ভনভন করে উঠছে ওর।

চলবে।