বেসামাল প্রেম পর্ব-৩৬+৩৭

0
112

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৬
প্রতিটি সন্তানের করা অন্যায়, ভুল, পৃথিবী শুদ্ধ অপরাধ মাতৃ হৃদয়ে অতি সহজেই ক্ষমা পেয়ে যায় ৷ তাই তো হৈমীর থেকে পাওয়া আঘাত, হৈমীর করা অপরাধ সব ভুলে গিয়ে কন্যাস্নেহে হঠাৎ মরিয়া হয়ে ওঠল হামিদা৷ সকল রাগ, অভিমান ভুলে গিয়ে মাহেরকে আদেশ করল, একটিবার হৈমীর কাছে যেতে৷ তার ছোট্ট আদুরে বাচ্চাটাকে দেখে আসতে। মায়ের আদেশ পেয়ে কলেজ থেকে বেশ কিছু দিন ছুটি নিল মাহের৷ সূচনাও গোছগাছ শুরু করে দিল। আগামীকালই তারা ঢাকা যাবে। মাহেরকে নিয়ে এ প্রথম কিছুটা দূরে যাবে বেড়াতে। এতেই সে মহাখুশি।
সন্ধ্যার পর হামিদা সূচনাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠাল। তিনি হৈমীর জন্য এক ব্যাগ জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছিল৷ সেটা সূচনাকে বুঝিয়ে দিল। সূচনা মুগ্ধ হলো মেয়ের প্রতি মায়ের এই ভালোবাসা, যত্নটুকু দেখে৷ সে কখনো মায়ের ভালোবাসা পায়নি।
তাই হৈমীর প্রতি হামিদার এই যত্নটুকু তার হৃদয় শীতল করে দিল৷ হামিদা সব কিছু বুঝিয়ে দেয়ার পর এবার সূচনা আর মাহেরের প্রসঙ্গে এলো। সূচনাকে নিজের পাশে বসতে বলে শান্ত গলায় বলল,
-” বাড়িতে ইদানীং মন টেকে না। হৈমীটা নেই, টিশার ওখানে থেকে থেকে অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। ”

সূচনা ধীরস্থির চোখে তাকিয়ে রইল শাশুড়ির দিকে। সে ঠিক কী বলতে বা বোঝাতে চাচ্ছে বোধগম্য হলো না। হামিদা বুঝতে পেরে খোলাসা করেই বলল,
-” দেখো মা আমার বয়স হচ্ছে। তোমার শশুর নেই, আমি বড়ো নিঃসঙ্গ মানুষ। এই নিঃসঙ্গতায় মন মেজাজ ঠিক থাকে না। হৈমী চলে যাবার পর থেকে তোমার সঙ্গেও আমি স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারি না। স্বাভাবিক হতে চাইলেও পারি না। কোনো কিছুতে মন স্থির রাখতে পারি না। শান্তি পাই না। বয়স হয়ে যাচ্ছে, বুড়ো হচ্ছি। বুড়ো মানুষ আর বাচ্চাদের এক কাতারেই ফালানো যায়। এই বয়সে এসে মন ঠিক করার জন্য, সঙ্গ দেয়ার জন্য কোনো বুড়োকে ধরতে পারি না। তাই ভাবছি তোমরা যি এবার একটা নাতির ব্যবস্থা করে দাও আমাকে। বাকি দিনগুলো তার সঙ্গে হেসে, খেলে পার করে দিতে চাই। শরীরটাও ইদানীং ভালো যায় না। আমার বংশে জোয়ানকি মরা বুঝলা। টিশার মা তো খুব অল্প বয়সেই রোগে পড়ে মারা গেল। আমিও রোগ নিয়ে পঞ্চাশ ছুঁয়েছি। আর কতদিন আছি জানি না৷ তোমার আর মাহেরের কাছে আমার এখন একটাই চাওয়া, ওপারে যাওয়ার আগে আমার বংশের প্রদীপ দেখে যেতে চাই। ”

সহসা সূচনার গাল দু’টো রক্তিম হয়ে ওঠল৷ হাত, পা অসাড় হয়ে এলো। পাশাপাশি বুকের ভিতর কিঞ্চিৎ কষ্ট বোধ করল এই ভেবে, তার শাশুড়িও অন্য সব শাশুড়িদের মতো ছেলে বউয়ের কাছে ছেলে সন্তান চায়? এটা তো আল্লাহ প্রদত্ত জিনিস। সে নাতি, নাতনি চায় এটা বললে হয়তো তার অনুভূতি এ মুহুর্তে অন্যরকম সুন্দর হতো। ঢোক গিলল সূচনা। তার চোখ, মুখের অবস্থা দেখে হামিদা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
-” কী ভাবছ? নাতি চেয়েছি বলে কি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হলে? আমি ছেলে, মেয়েদের আলাদা চোখে দেখি না৷ ছেলে আর মেয়ে দু’টোর গুরুত্বই আমার কাছে সমান৷ শুধু তোমার প্রথম সন্তান ছেলে হোক এটা চাই, তাই বলে মেয়ে হলে যে আমি অসন্তুষ্ট হবো তা নয়৷ যাই হোক সবেতেই খুশি হবো। তবে ছেলে এলে মনে এই ভেবে স্বান্তনা পাবো যে তোমার শশুর এসেছে। ”

পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল হামিদা৷ সূচনা টলমল চোখে তাকিয়ে রইল। শেষ কথাটা শুনে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। কষ্ট হলো শাশুড়ির নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে, শশুরের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পেরে। মুহুর্তেই মনে প্রশ্ন জাগল, এ পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীরা কতগুলো বছর একসঙ্গে সংসার করে। কতগুলো রাত একে অপরের সঙ্গে মিশে কাটায়। একে অপরের বাচ্চার মা, বাবা হয়। কত-শত সুখ, দুঃখের স্মৃতি গড়ে তুলে। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাটিয়ে দেয় অনেকগুলো বসন্ত। এরপর যখন হুট করে সৃষ্টি কর্তা তাদের মধ্যে চিরবিচ্ছেদ ঘটায়! এ বিচ্ছেদ কী মেনে নেয়া যায়? এ বিচ্ছেদ কী সহনশীল হয়? কীভাবে পারে মানুষ, মানুষ হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে? শাশুড়ির যে যন্ত্রণাটা সে অনুভব করার কথা ভাবতেই পারছে না৷ সে যন্ত্রণা শাশুড়ি ভোগ করছে! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠল। মনে পড়ল দাদিনের কথা। তার দাদান মারা গেছে আজ প্রায় বিশ বছর। অথচ তার দাদিন আজো দাদানের কত স্মৃতি ধরে বেঁচে আছেন৷ কথার ফাঁকে দাদানের কত পছন্দ, কত অপছন্দ, স্বভাব, আচার-আচরণ নিয়ে গল্প করে। একজন নারী একজন পুরুষকে ধারণ করে একাকী বার্ধক্যের কতগুলো বছর কাটিয়ে দিচ্ছে। হামিদাও সেই পথেরই পথিক। হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ল সূচনা। হঠাৎ হামিদা জিজ্ঞেস করল,
-” শোনো খুব তাড়াতাড়ি আমি সুসংবাদ শুনতে চাই। আজকের পর যেন আর ওষুধ, টষুধ খেয়ো না৷ আমার কথা কী তুমি বুঝতে পারছ? ”

সূচনা লজ্জা পেল। মাথা নত করে মনে মনে বলল,
-” আপনার ছেলের সঙ্গে আমার সেই সম্পর্কই হয়নি যার জন্য ওষুধ টষুধ খেতে হবে। ”

মুখে বলল,
-” আসলে মা, উনি চান আমার পড়াশোনাটা শেষ হোক। ”

-” পড়াশোনা শেষ হোক মানে? আজকালকার খবর তোমরা রাখো? পড়াশোনা করে করে বাচ্চা নিবা না। এরপর আর বাচ্চা হবেই না। তাছাড়া তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। টিশা যদি এই বয়সে মা হয়ে পড়াশোনা চালাতে পারে তুমি পারবে না? তোমার তো মা নেই ভালো মন্দ জ্ঞান দেবার মানুষও নেই। আমার কথা শোনো একটা বাচ্চা নিয়ে নাও। ওর দেখাশোনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি যতদিন বেঁচে আছি কোনো সমস্যাই হবে না। পড়াশোনা করো, মাহের চায় তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও। আমার আপত্তি নেই। শুধু একটা বাচ্চা নাও এরপর যা খুশি করো। ”

সূচনা মাথা কাৎ করল। হামিদা আরো অনেক কিছুই বোঝালো তাকে৷ সে শুধু মাথা নেড়ে সবেতে সম্মতি দিল।
_______
পরেরদিন সকাল সকাল মাহের, সূচনা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রুদ্র তাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে৷ সে গাড়ি করেই দুজন যাচ্ছে ব্যস্ত শহর ঢাকাতে। পাশাপাশি দু’জন বসে অথচ দুজনের দৃষ্টিই জানালার বাইরে৷ মাঝে মাঝে মাহের আড়চোখে তাকাচ্ছে সূচনার দিকে। গতরাত থেকে সূচনা অনেক বেশি চুপচাপ। এই নীরবতার অর্থ কী এখনো টের পায়নি৷ প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি। এই যে এত সুন্দর করে সাজগোজ করে পাশে বসে আছে, তবুও কত কমতি মুখটায়। কারণ এই মুখে হাসি নেই। মাহেরের মনে হয় সূচনার সুশ্রী মুখে গম্ভীর্যতায় চেয়ে মৃদু হাসিটা বেশি মানায়। কিন্তু মেয়েটা খুব কম হাসে। মাঝে মাঝে নিজেকে ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ স্বামী অনুভব হয়৷ কারণ সে তার স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে অনেক বেশি অক্ষম। সূচনার দিকে নম্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে আক্ষেপ করছিল সে। জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আচমকাই মাহেরের দিকে তাকাল সূচনা৷ তৎক্ষনাৎ দু’জনই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সূচনা নড়েচড়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। মাহের না পেরে আবারো জিজ্ঞেস করল,
-” আপনার কী হয়েছে সূচনা? বলুন আমায়। ”

ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে সূচনা জবাব দিল,
-” বলব। ”

-” কখন? ”

-” বাসায় গিয়ে। ”

কিছুটা স্বস্তি পেল মাহের। বউ নিয়ে এ প্রথম লং জার্নিটা উপভোগ করতে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল। বলল,
-” আপনার হাসিটা আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু আফসোস আপনি বছরে একবার হাসেন। ”

থতমত খেয়ে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল সূচনা৷ জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অল্পখানি হাসল তাও লুকিয়ে। মাহের জহুরি চোখে তা দেখে নিয়ে বলল,
-” আমি যা ভালোবাসি তাতেই আপনি লজ্জা পান৷ এটাই আমার আফসোস, এটাই আমার দুঃখ। ”

ফিরে তাকাল সূচনা। তার কথাগুলোকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আবদারে ঘেরা একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
-” কাঁধে মাথা রাখি? ”

তৎক্ষনাৎ উত্তর মাহেরের,
-” আমাদের মাঝের দেয়ালটাকে দৃঢ় না করে ভাঙার চেষ্টা করুন সূচনা। আমার কাঁধে মাথা রাখার জন্যও অনুমতি চাইছেন? এতগুলো মাসে আমরা এতটুকুই আপন হয়েছি? আপনাকে আমি এরজন্য শাস্তি দিব। যে শাস্তি আপনাকে আর কখনো এমন প্রশ্ন করার সাহস দেবে না। ”

সূচনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্মুখে স্থির দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল মাহের৷ সূচনা দুরুদুরু বুকে, অস্বস্তি মনে সন্তর্পণে তার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজল। নরম সুরে বলল,
-” আপনার মতো মানুষ যদি আমায় শাস্তি দেয়, সে শাস্তি অবশ্যই আমি গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখি। ”

মুচকি হাসল মাহের। বিরবির করে বলল,
-” ম্যাডাম আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার জন্য কী অপেক্ষা করছে। আই বিলিভ দ্যাট ধৈর্যের ফল খুবই সুমিষ্ট হয়। সব কিছুর জন্য শুকরিয়া সৃষ্টিকর্তা এবং রুদ্রকে। ”
_____
হৈমীর অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না৷ উত্তেজনায় সকাল থেকে ঠিকঠাক খেতেও পারেনি সে৷ দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো এসে পৌঁছায়নি মাহের, সূচনা। এদিকে খিদের জ্বালায় পেট চুঁইচুঁই করছে রুদ্রর৷ কিন্তু খেতে পারছে না হৈমীর জন্য। ইদানীং সে হৈমীর প্রতি কিছুটা যত্নশীল হয়েছে। মনের ভিতর কিছু সুন্দর, স্বচ্ছ অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। সে মনে করে এটা আল্লাহ প্রদত্ত অনুভূতি। কারণ হৈমী তার স্ত্রী। তার প্রতি এমন অনুভূতি আসাটা স্বাভাবিক। হৈমীর প্রতি তার যত্নের প্রথম ধাপ শুরু হয় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেই৷ কারণ সে অনুভব করেছে সর্বপ্রথম হৈমীকে ঠিকঠাক খেতে শেখাতে হবে। মেয়েটা খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বড্ড উদাসীন। সারাদিন প্যাকপ্যাক করে কথা বলবে, গাপুসগুপুস করে ফাস্টফুড খাবে আর শরীর খারাপ করে হায় হতাশ করবে। শরীরে চড়ুইয়ের সমানও মাংস নেই৷ দুদিন আগে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে নিয়ে গিয়েছিল হৈমীকে, ফুচকা খাওয়াতে। ফুচকা খেয়ে গাড়িতে ওঠার পূর্বে এক বৃদ্ধকে নজরে পড়ল। ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসে আছে। নিজের ওজনটা মাপা উচিত মনে করে ওজন মাপল৷ ৮৭ কেজি ওজনের বিশালদেহী পুরুষ সে। তার ওজন মাপা শেষে হৈমীকে মাপতে বলল। যেখানে তার ওজন ৮৭ কেজি সেখানে হৈমীর ওজন মাত্র ৪৪ কেজি। নিজের তুলনায় নিজের বউয়ের ওজন দেখে রীতিমতো লজ্জায় বাকহারা হয়ে গিয়েছিল সে। নিজেকে নিজেই ভয়ানক গালি দিয়ে বসেছিল। গালি শুনে হৈমী বরাবরের মতোই উচ্চারণ করল, ছিঃ। ব্যস রেগে গিয়ে ওর দুগাল চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” অ্যাঁই ওজন নিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াও, বড়ো বড়ো ডায়লগ ঝাড়ো, লজ্জা লাগে না? ভয় হয় না? এই, তোমাকে নিয়ে তোমার কোনো আইডিয়া আছে? আমার পাশে ঘুমাও কীভাবে? তোমার হাড্ডিগুলো ভর্তা হয়ে যাওয়ার ১০০% সম্ভাবনা আছে সেটা জানো? ”

ভয় পেয়ে হৈমী সমান তালে দুদিকে মাথা নাড়াল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলল,
-” জানবে কী করে ইডিয়ট একটা! ”

এরপর থেকে হৈমীর খাওয়া, দাওয়ার ব্যাপারে তার যত্নের পরিমাণ চার গুণ বেড়ে গেছে। হৈমী খেয়াল করেছে রুদ্র তাকে ছাড়া কিছুদিন যাবৎ খাবার খায় না। পাশাপাশি তার পছন্দ, অপছন্দের বেশ গুরুত্বও দিচ্ছে। টিশার কাছে এসব শেয়ার করায় সে বলেছে রুদ্র হয়তো ধীরেধীরে পালটে যাবে, তার স্বামীর মতোই এক সময় বউকে ভালোবেসে দিওয়ানা হয়ে যাবে। চোখেও হারাবে। প্রথমে টিশার কথা বিশ্বাস করে খুশি হয়েছিল হৈমী৷ কিন্তু টুকটাক যত্নের পাশাপাশি রুদ্রের গম্ভীরতা, কঠিন আচরণ, পাশাপাশি অসহ্যরকম সন্দেহ ধাচের ব্যবহারে নিরাশ হয়েছে। এই যে ভাই, ভাবির জন্য অপেক্ষা করে উত্তেজনায় সে ছটফট করছে। ওদিকে রুদ্র গম্ভীর মুখে, বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে কাউচের ওপর বসে আছে। একবার শুধু বলেছিল লাঞ্চ করে নিতে৷ হৈমী তাকে একাই করে নিতে বলায় সে চোয়াল ফুলিয়ে বসে আছে।

হৈমীর ছটফটানির মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রুদ্রর ধৈর্য্য কমতে লাগল৷ এক সময় সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে নিজ হাতে খাবার বেড়ে খাবারগুলো রুমে নিয়ে এলো। দাঁতে নখ কাটতে কাটতে হৈমী বলল,
-” আরেকবার ফোন করুন না ভাইয়াকে। ”

চোখ গরম করে রুদ্র বলল,
-” চুপচাপ এখানে এসে বসো এবং খাবারগুলো শেষ করো। ”

হৈমী বিরক্ত চোখে তাকাল। তেজ দেখিয়ে বলল,
-” আমার খিদে নেই, আপনার মতো খাওয়ার এত শখও নেই। ”

মেজাজ বিগড়ে গেল রুদ্রর। টি টেবিলের ওপর খাবার গুছিয়ে রেখে ওঠে এলো সে। হৈমীর বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে বসাল কাউচের ওপর৷ চট করে নিজেও পাশে বসে পিছন দিয়ে এক হাতে হৈমীর কোমর চেপে ধরল। হুকুম করল, ভদ্র মেয়ের মতো নিজে খেতে এবং তাকে খাওয়িয়ে দিতে। হৈমী প্রথমে অবাধ্যতা করলেও রুদ্রর হাতের বেহায়া স্পর্শে মিইয়ে গেল। রুদ্রর ভয়ানক থ্রেটও পেল,
-” কথা না শুনলে আমার এই সাতাশি কেজি ওজন দিয়ে আজ তোমার চুনোপুঁটি শরীরটাকে একদম পিষে ফেলব। কেউ বাঁচাতে পারবে না। একদম মে’রে গুম করে দিব। ”

ভয় পেয়ে ঢোক চিপল হৈমী। মনে মনে রুদ্রকে অসংখ্য বকাঝকা করে খাওয়িয়ে দিত শুরু করল। কিন্তু নিজে এক লোকমাও মুখে তুলল না। তার এক জেদ সে ভাই, ভাবি এলে খাবে৷ পৃথিবী উল্টে গেলেও রুদ্রর কথা আজ সে শুনবে না। রুদ্র ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাল তার সঙ্গে খেতে, পরে না হয় ওদের সঙ্গে আবার খাবে৷ কিন্তু হৈমী শুনল না অবাধ্যতা করল। তার এই অবাধ্যতায় ত্যাড়া রুদ্রও ত্যাড়ামি শুরু করে দিল। চোখ, মুখ শক্ত করে প্লেট থেকে খাবার তুলে হৈমীর মুখের সামনে ধরল। জেদ করে হৈমী চোখমুখ শক্ত করে মুখ বন্ধ করে রইল। রুদ্র ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে শেষে বলল,
-” তুমি যেই ত্যাড়ামি, জেদি স্কুলের স্টুডেন্ট, আমি সেই ত্যাড়ামি, জেদি স্কুলের হেডমাস্টার ওকে ডার্লিং, হা করো। ”

বাক্যটি শেষ করেই বা’হাতে হৈমীর দুগাল চেপে ঠোঁটজোড়া ফাঁক করে ভাতের লোকমা মুখে ঢুকিয়ে দিল। হৈমী যেন খাবারটা ফেলে না দেয় তাই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কড়া ধমক দিয়ে বলল,
-” বেশি বাড়াবাড়ি করছ হৈমী। তুমি এতটাও বাচ্চা নও যে স্বাভাবিক বিষয় বুঝতে পারো না। লিমিট ক্রস করবে না। গিলো, খাবারটা। ”

হৈমী কিছু বলতে চাইল। রুদ্র ভয়ানক রেগে এবার শক্ত ধমক দিল,
-” অ্যাঁই গিলে যা বলার বল। মেজাজ খারাপ করবি না। ”

চলবে…

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৭
গোধূলি বিকেল। পশ্চিমাকাশে গাঢ় কমলা বর্ণের সূর্যটা নিভু নিভু৷ ফুরিয়ে গেল আস্ত একটা দিন। নেমে এলো সন্ধ্যা। ঠিক যেভাবে রাত ফুরিয়ে ভোরের আগমন ঘটে। সেভাবেই দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামল। জানান দিল রাত্রির আগমনী বার্তা। দিন ফুরায়, রাত ফুরায়, ফুরিয়ে যায় এ জগতের মানুষগুলোও। এ বেলা নবজাতকের জন্ম হচ্ছে তো ও বেলা কোনো না কোনো প্রবীণ, প্রবীণার মৃত্যু হচ্ছে। ফুরিয়ে যাচ্ছে এ পৃথিবীর আলো বাতাসে বেড়ে ওঠা, হেসে খেলে জীবন পারি দেওয়া মানুষগুলো। এ জগতের সবকিছুই ফুরিয়ে যায়। জড়ো বস্তু থেকে শুরু করে জীব সব কিছুরই অন্তিমকাল রয়েছে। সবই যদি ক্ষণস্থায়ী হয় তবে এ পৃথিবীতে দীর্ঘস্থায়ী কি কিছুই নেই? আছে কী? ভালোবাসা নামক অনুভূতিময় কোনো শব্দ? বুকের বা পাশে ডানহাতটা চেপে ধরল মাহের৷ সেখানে ধিকিধিকি শব্দ হচ্ছে। এক ঘুমন্ত সুশ্রী মুখের তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তার কাঁধে। শিহরণ জাগাচ্ছে রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সেকেণ্ড কয়েকের মাঝেই গন্তব্যে এসে পৌঁছাল তারা। কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে থাকা সূচনাকে ডাকল কয়েকবার৷ ক্লান্ত দেহে নরম চোখে তাকাল সূচনা। মাথা তুলে হাই তুলতে তুলতে সরে বসল। মাহের আলতো হেসে বলল,
– ” নামতে হবে, পৌঁছে গেছি। ”

বাক্যটি কর্ণগোচর হতেই সূচনার সকল অবসাদ নিমিষেই দূর হয়ে গেল। চোখের পলক পড়ল ঘনঘন। আশপাশে নজর বুলিয়ে সন্তর্পণে এক ঢোক গিলল। ফের মাহেরের পানে তাকিয়ে নরম সুরে বলল,
-” অনেকদিন পর লং জার্নি করেছি তো তাই কিছুটা দুর্বল ফিল করছি, সে থেকেই এমন ঘুমিয়ে গেছি। ”

মৃদুভাবে হাসল মাহের৷ গাড়ি থেকে নামার পূর্বক্ষণে বলল,
-” রিলাক্স চার, আপনার দ্বারা চার, পাঁচটা খু'”ন হয়ে যায়নি। এভাবে অপরাধ বোধে ভুগবেন না। ইট’স ওকে। একটা লং জার্নি, আপনার মাথা আমার কাঁধে, আপনার ঘুমন্ত সুশ্রী মুখে আমার চোখ, ব্যাপারটা দারুণ ছিল আ’ম এনজয়িং। ”

মাহের বেরিয়ে রুদ্রকে কল করল। সূচনা কিছুক্ষণ লজ্জা মিশ্রিত মুখে বসে রইল। শ্বাস-প্রশ্বাস চলল ঘনঘন৷ নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে দু’মিনিটের মাথায় নামল সে। সঙ্গে সঙ্গেই মুখোমুখি হলো রুদ্রর। সে কিছু বলার পূর্বেই, বোনের দুর্বল মুখশ্রীতে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রুদ্র বলল,
-” বেশি খারাপ লাগছে মনে হয় চল চল রেস্ট নিবি। ”
________
অনেকদিন পর ভাইকে কাছে পেয়ে আহ্লাদে ভেসে গেল হৈমী৷ সারাটাক্ষণ খুশিতে গদগদ হয়ে রইল। মুখ থেকে হাসি সরে না, কথা ফুরোয় না। কোনোরকমে রুদ্র শুধু সন্ধ্যায় নাস্তাটুকু করাতে পেরেছিল। নাস্তা করে সূচনা শুয়ে আছে, মাহের হৈমীর সঙ্গে গল্পে মগ্ন। এক পর্যায়ে মাথা ধরে গেল সূচনার। টের পেয়ে হৈমীকে মাহের বলল,
-” হৈমী মা যে যে জিনিস পাঠিয়েছে দেখেছ? ”

উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে হৈমী বলল,
-” ইস, দেখাই হয়নি। ওগুলো আমাদের ঘরে রাখা। আমি গিয়ে দেখি? পরে আবার আসব। ”

মাহের সম্মতি দিলে হৈমী ছুটে বেরিয়ে গেল। ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে সূচনার কাছে এসে বসল মাহের। জিজ্ঞেস করল,
-” অনেক বেশি খারাপ লাগছে ? ”

মাথা যন্ত্রণায় কান্না পেয়ে গেল সূচনার। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে ওঠে বসল সে। বলল,
-” হৈমী চলে গেছে? ওকে একটু বলবেন আমার চুলে বিলি কেটে তেল দিয়ে দিতে। আসলে যখনই ব্যথা হতো দাদিন এভাবে তেল দিয়ে দিত। এতে বেশ আরাম লাগে। ”

রুগ্ন মুখটা দেখে বড্ড মায়া হলো মাহেরের। বলল,
-” আমিই পারব। তেল কোথায় বলুন দিয়ে দিচ্ছি। ”

দুই হাঁটু আড়াআড়ি ভাঁজ করে মাহেরের সামনে বসল সূচনা৷ ছোট্ট একটি বাটিতে তেল ঢেলে পাশে রাখল। মাহের তার পেছনে বসে বেশ যত্ন নিয়ে চুলে বিলি কেটে তেল লাগাতে শুরু করল। আরাম পেয়ে চোখ বুজল সূচনা। দুচোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অজস্র নোনাপানি। মাথা যন্ত্রণা নাকি সৌভাগ্য এই নোনাপানির উৎস কী জানা নেই তার। শুধু জানে বড়ো সুখ সুখ লাগছে। এত শান্তি পৃথিবীর আর কোথাও বোধহয় নেই। এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। কী নরম, কী মিষ্টি এই অনুভূতি! যে অনুভূতিতে সিক্ত হয়ে অন্তঃকোণে বয়ে গেল শীতল স্রোত। এই ভাগ্য এতকাল কোথায় লুকিয়ে ছিল তার?

রুমের দরজা খোলা। রুদ্র এসেছিল সূচনাকে জিজ্ঞেস করতে সকালবেলা কী খাবে তারা? বোন, বোন জামাইয়ের যত্নের কোনো প্রকার ত্রুটিই সে রাখতে চায় না৷ মা নেই, বাবা নেই তো কী হয়েছে সে একাই যথেষ্ট। কিন্তু এটুকু জিজ্ঞেস না করেই ফিরে গেল নিজের রুমে। দু-চোখ ভরে দেখা বোনের সুখে কিঞ্চিৎ বাঁধা দিতেও মন সায় দিল না। প্রাণভরে শুধু চায় এই সুখটা অটুট থাকুক। যতকাল এ পৃথিবীতে তার বোনের অস্তিত্ব থাকবে ঠিক ততকাল।

টুকটুক করে মায়ের পাঠানো জিনিসগুলো বের করছিল হৈমী। রুদ্র বিছানায় বসে ভাবছে কিছু অথচ তাকিয়ে আছে হৈমীর পানে। হৈমী নিজের মতো করে সব বের করে দেখে জিনিসপত্র গুছিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দিল। বিশটার মতো বড়োই বার্মিজ আচার শুধু বিছানার সাইট টেবিলের ড্রয়ারে রাখল। দু’টো নিজের কাছে রেখে একটি ছিঁড়ে খেতে খেতে রুম ছাড়তে উদ্যত হলো। অমনি কাঠখোট্টা স্বরে রুদ্র বলল,
-” কোথায় যাচ্ছ? ”

চঞ্চল পা আচমকা থামিয়ে, আচার খেতে খেতে ঘাড় ঘুরিয়ে হৈমী বলল,
-” বুঝেন না কোথায় যাচ্ছি, জিজ্ঞেস করার কী আছে ? ”

ভেঙচিয়ে কথাটা শেষ করল সে। বিরক্ত মুখে রুদ্র বলল,
-” এদিকে এসো। ”

মৃদু পায় এসে হৈমী দাঁড়াল তার সামনে। সে জিজ্ঞেস করল,
-” এখন ওদের কাছে যেও না। লং জার্নি করেছে রেস্ট করুক। গল্প করার জন্য অনেক সময় পাবে কাল থেকে। ”

কথাটা যুক্তিসঙ্গত। তাই মান্য করল হৈমী। সিদ্ধান্ত নিল বেলকনিতে গিয়ে আয়েশ করে বার্মিজ খাবে পাশাপাশি রাতের আকাশ দেখবে, তারা গুনবে, শহরে বিল্ডিং দেখবে। তবুও এই নুন হীন পান্তা ভাতের সামনে বসে থাকবে না। তার সিদ্ধান্তটি বেশিক্ষণ স্থির রইল না। রুদ্রের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত পালিয়ে বিভ্রান্ততে পরিণত হলো।

-” কী খাচ্ছ এটা? ”

-” আপনি এটা চেনেন না? ”

বার্মিজের প্যাকেট একটু এগিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল হৈমী৷ রুদ্র নাক ছিটকে বলল,
-” দেখে তো তেমন ইম্পরট্যান্ট কিছু মনে হচ্ছে না যে চিনতেই হবে। বা চেনা বাধ্যতামূলক। ”

তীব্র অপমানে গাল ভার হয়ে গেল হৈমীর। তেজ দেখিয়ে বলল,
-” এটা বার্মিজ, বড়ই দিয়ে বানায়। একটার দাম দুইটাকা করে। অনেক টেস্টি… আমি আর টিশা একসঙ্গে থাকলেই এটা খাই। কী যে মজা। এটা কীভাবে খেলে সবচেয়ে বেশি মজা লাগে জানেন? পানিতে ভিজিয়ে। বুঝতে পারলেন না তাইনা, আচ্ছা বোঝাচ্ছি, এটার ভিতর হালকা পানি দিয়ে মাখোমাখো করেও খাওয়া যায়। আবার বাটিতে কয়েকটা প্যাকেটের আচার ঢেলে পানি দিয়ে একটু লবণ, মরিচ গুঁড়ো দিলেও জোশ লাগে। ”

হৈমীর জিভে জল চলে এলো। রুদ্র চোখ, মুখ অস্বাভাবিক কুঁচকে তাকিয়ে রইল। কর্কশ কণ্ঠে বলল,
-” অস্বাস্থ্যকর খাবার এটা। ”

মেজাজ খারাপ করে হৈমী বলল,
-” ধূর ব্যাটা! স্বাস্থ্য, অস্বাস্থ্য বুঝি না। জিভে যা অমৃত লাগে তাই খাই। ”

মুহুর্তেই জিভে কামড় পড়ল তার। রুদ্রর ভরাট মুখে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বার্মিজের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” একবার টেস্ট করেই দেখুন ছাড়তে চাইবেন না। ”

তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠল রুদ্র। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” এসব বাজে খাবার আমি খাই না। তোমাকেও নিষেধ করছি এসব খাবে না। এগুলো খেলে অসুখ হবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। ”

মুখ ভেঙিয়ে হৈমী বলল,
-” দেখুন এটা আমার খুব প্রিয়। এটা আমি ছাড়তে পারব না৷ প্রয়োজনে আপনাকে ছেড়ে দিব! ”

কথাটা বলেই দু পা পিছিয়ে গেল হৈমী। রুদ্র ঘাড় বাম দিক ডান দিক বাঁকিয়ে তার দিকে গাঢ় চোখে তাকাল। বলল,
-” পিছিয়ে গেলে যে কথাটা বলে ভয় লাগল? ”

-” না মানে ইইয়ে। ”

বাঁকা হেসে চুলগুলো দু’হাতে ব্যাকব্রাশ করে নিল রুদ্র। কয়েক কদম এগিয়ে হৈমীর কাছে চলে গেল। শান্ত কণ্ঠে বলল,
-” লিসেন, বার্মিজ খাও, ঘাস, পাতা, শামুক, নর্দমার কীট যা পারো খাও। শুধু নিজে সুস্থ থাকো, ওজন বাড়াও। তোমার এই চুয়াল্লিশ কেজি ওজন আমার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ”

ভ্রু কুঁচকে গেল হৈমীর। সুক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল,
-” আমার ওজনের সঙ্গে আপনার ঘুমের কী সম্পর্ক?”

-” জানি না। ”

বলেই সরে দাঁড়াল রুদ্র। হৈমী বার্মিজ খেতে শুরু করল আবারো৷ রুদ্র হাঁপ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে কিছু একটা বলল। যা দেখে হৈমী বলল,
-” বকার হলে উঁচু গলায় বকুন, নিচু গলায় বকে বাহাদুরির কিছু নেই। ”

চরম বিরক্ত হয়ে চট করে হৈমীর বাহু চেপে ধরল রুদ্র। হাত থেকে বার্মিজ ফেলে দিয়ে ধমকে বলল,
-” ফ্রিজে জুস আছে, ফল আছে কেটে খাও। এটা বাদ। ”

চোখ কটমট করে হৈমী বলল,
-” আমার বার্মিজ! ফেলে দিলেন! আপনি একটা অসহ্য। আপনি বড্ড বাড়াবাড়ি করছেন। কী শুরু করেছেন? আমার ওজন কি খুব কম নাকি আপনার ওজন অনেক বেশি। আপনি একটা মটু! নিজের লজ্জা ঢাকতে আমার সাথে ভেজাল করছেন৷ নিজের হাতির শরীরের দিকে নজর না দিয়ে আমার বিড়ালে শরীরে কুনজর দিচ্ছেন, হাতি বানাতে চাচ্ছেন আমাকে। কী ভেবেছেন আমি চালাকি বুঝি না? সব বুঝি আমি, হাড়ে হাড়ে বুঝি। এসব করে করে আমাকে হাতির মতো মোটা বানাবেন। যাতে কোনো ছেলে আমাকে দেখে পছন্দ না করে। আমার রূপ, সৌন্দর্য স্বাস্থ্যের নিচে চাপা ফেলতে চাচ্ছেন।
সব বুঝি সব। ”

হৈমীর কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও ক্রোধকে বেশি প্রাধান্য দিল রুদ্র। চটে যাওয়া মেজাজে বলল,
-” ওকে ফাইন, এই লিরলিরে শরীরে তুমি কতটুকু সহ্য করতে পারো তাই দেখব। ”

বড়ো বড়ো চোখ করে হৈমী বলল,
-” মানে! ”

বাঁকা হেসে রুদ্র বলল,
-” সংসার, পড়াশোনা, স্বামী সোহাগ সব সামলাতে হলে শারীরিক, মানসিক সবদিক থেকে সবল থাকতে হয় ডার্লিং। দুর্বল লোকদের এসব সহ্য হয় না। ”

-” আপনি আমাকে দুর্বল বলে অপমান করছেন? ”

আচমকা হৈমীর খুব কাছে এসে দাঁড়াল রুদ্র। কানের কাছে ঠোঁট ছুঁয়ে ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
-” কতটা সবল তা তো দেখেই ছাড়ব। ”

চলবে..