#বেহালার সুর
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২৫
আরাব আয়েশার চিৎকার শুনে দৌঁড়ে আসলো।।আয়েশাকে পড়ে থাকতে দেখে দ্রূত কোলে নিয়ে রুমে এসে বেডে শুয়ালো। আয়েশার কোনো হুঁশ নেই। জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারকে কল দেওয়া হলো। ডাক্তার এসে আয়েশাকে চেক আপ করল। মেডিসিন দিল। ইনজেকশন পুশ করলো। এরপর আরাবকে বলল
“আয়েশা তার চেহারার স্ট্রেস টা নিতে পারছে না। তাই নিজের চেহারা দেখে তার প্যানিক এটাকের মতো হয়ে গেছে৷ এসব রোগীদের মানসিক মনোবল বাড়ানোর জন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে। আর চোখে চোখে রাখতে হবে৷ কারণ এসব রোগীরা অনেক সুইসালডাল প্রবণ হয়ে পড়ে। আধা ঘন্টার মধ্যেই রোগীর জ্ঞান ফিরে যাবে। যদি জ্ঞান না ফিরে আমাকে আবার ইনফরম করবেন অথবা ডিরেক্ট হাসপাতালে নিয়ে আসবেন।”
কথাগুলো বলে ডাক্তার চলে গেল। লতা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আয়েশার মুখের এ অবস্থা সে নিজেই নিতে পারছে না সেখানে আয়েশা নিজের মুখ নিজে দেখে কী করে মেনে নিবে। পুতুলের মতো দেখতে মেয়েটার এ হাল মেনে নেওয়া বড্ড কঠিন। তার চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে। আল্লাহর কাছে কেবল আয়েশার মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্যই মনে মনে দোয়া করছে।
এদিকে আরাব আয়েশার পাশে বসে আছে। আয়েশার দিকে অপলল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়েশাকে দেখতে তার কাছে একদম অসুন্দর লাগছে না। বরং তাকে সবসময় তার কাছে সুন্দর লাগে। কেন আয়েশা এতটা ভেঙে পড়ছে সে জানে না। আয়েশাকে ছাড়া একটা মুহুর্ত কল্পনা করাও তার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে চায় আয়েশা অনেক বড়ো হোক। সে নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলুক তার চেহারা দেখে কেউ যেন তাকে জাজ করতে না পারে।
আধা ঘন্টা পার হয়ে গেল। আয়েশার জ্ঞান ফিরেছে। আরাবের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। আয়েশার কান্নার আওয়াজ শুনে আরাব বলে উঠল
“আয়েশা কাঁদছো কেন? কী হয়েছিল তোমার?”
আয়েশা কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল
“আমার চেহারা দেখে আমারেই ভয় লাগছে। কখনও যদি দৃষ্টি ফিরে আসে আপনার আমাকে দেখে আপনি ভীষণ ভয় পাবেন। তখন আর আপনি আমাকে এভাবে ভালোবাসতে পারবেন না। ঝড়ের মতো এসেছিলেন আমার জীবনে, আবার ঝড়ের মতোই চলে যাবেন। মাঝখানে ঝড়ের মাতাল হাওয়ায় আমি ভেঙে চুড়মাড় হয়ে যাব। ধ্বংস হয়ে যাব। আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই।”
আরাব আয়েশাকে বুঝিয়ে বলল
“চেহারার সৌন্দর্য অনেক সময় ঢাকা পড়ে মানুষের ব্যবহার, গুণ আর মানসিকতায়। মনে কুৎসিত রেখে যতই সুন্দর হও না কেন তোমাকে দেখতে কুৎসিত লাগবেই। আর মনকে প্রফুল্ল, প্রাণবন্ত রেখে বাহ্যিক সৌন্দর্য যতই কম থাকুক তবুও সৌন্দর্য ফুটে উঠে। আর একটা পর্যায়ে চলে গেলে সবাই তোমার গুণ দেখবে রুপ না। আর আয়েশা বয়সের সাথে সাথে সৌন্দর্য হারিয়ে যায় তবে গুণ মৃত্যুর পরও থেকে যায়। তুমি নিজেকে এভাবে গড়ো যেভাবে তোমার সৌন্দর্য ফুটে উঠবে গুণে। সবাই তোমাকে স্মরণ করবে ভালোবেসে। নিজেকে সামলাও। পরীক্ষাটা দাও। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে ফোকাস টা ঢাকা মেডিকেলে রাখো। সামনে সংসার আরও বড়ো হবে৷ একসাথে পড়তে হবে, সন্তান সামলাতে হবে, সে সাথে আমার মতো বুড়োরও দায়িত্ব নিতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে হবে নাকি? এত ঝড় পার হয়ে তোমাকে আমার করে নিয়েছি সামান্য বাহ্যিক সৌন্দর্যের কাছে সব হারিয়ে দিব? এটা কী করে সম্ভব আয়েশা? আবারও বলছি নিজেকে সামলাও। মনে রাখবে তুমি যদি তোমার ক্ষতি করো সেটা শুধু তোমার ক্ষতি করা হবে না সেটা আমারও ক্ষতি করা হবে। সুতরাং নিজের ক্ষতি করতে গিয়ে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। এ বয়সে এ ধকল নিতে পারব না।”
আরাবের কথা শুনে আয়েশা কেবল কাঁদল। আয়েশা কাঁদতে কাঁদতে আরাবকে জড়িয়ে ধরল। এ শান্তির জায়গাটা আয়েশা কখনও হারাতে চায় না। নিজের জন্য না হলেও আরাবের জন্য হলেও নিজেকে সামলাতে হবে তাকে।
আরও কয়েকদিন কেটে গেল। আজকে আয়েশা আবার কলেজ যাবে। আয়ান জেলে আছে। আয়েশা বেশ ভয়ে আছে এ চেহারা নিয়ে কলেজে গেলে কত বুলি না জানি তাকে সইতে হয়। গতবারে কিছু না করেও কত অপমান সহ্য করেছে। এবার হয়তো অপমানের পরিমাণটা আরও দ্বিগুণ হবে। তাই নিজেকে সবভাবে সে প্রস্তুত করে নিল। এরপর সরাসরি কলেজে যাওয়ার জন্য রওনা দিল।
কলেজে গিয়েই আয়েশার সকল ভুল ভেঙে গেল। ক্লাসের টিচার থেকে শুরু করে সকল ছাত্রছাত্রী তাকে ওয়েলকাম করার জন্য ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারা নিয়ে কেউ নাক শিটকাচ্ছে না। কোনোরুপ বাজে কথা বলছে না। সবাই আয়েশাকে কেবল সাহসী যুদ্ধা বলে সম্বোধন করছে। সবার চোখে আয়েশা একজন সাহসী নারী। যে নারী সকল প্রতিকূলতা পার হয়ে আবারও নিজের জীবন শুরু করতে চলেছে। সবার এত সংবর্ধনায় আয়েশার মন খুশি হয়ে গেল। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে ঠিক তবে সেটা আনন্দের। আয়েশার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী চৈতী আয়েশার দিকে এগিয়ে এসে বলল
“আয়েশা তোকে খুব মিস করেছি। এত বড়ো ধকল নিয়ে ফিরতে পারবি কখনও আশা করিনি। ভাইয়ার কাছ থেকে রোজ তোর খবর নিয়েছি। তোর জীবনের সাফল্য কী জানিস? ভাইয়াকে স্বামী হিসেবে পাওয়া। একটা দায়িত্বহীন ইয়ং ছেলেকে বিয়ে করার চেয়ে দায়িত্ব এবং চরিত্রবান বয়স্ক ছেলে বিয়ে করা ভালো। ভাইয়া তোকে যেভাবে আগলে রেখেছে একটা ইয়ং ছেলে কখনও সেটা করত না৷ আমি তোর আর ভাইয়ার জন্য অনেক প্রাউড ফিল করতেছি।”
আয়েশা চৈতীর দিকে তাকিয়ে মুখে কেবল হালকা হাসির লিরিক আনলো। আজকের এ ঘটনা তাকে সামনে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগাচ্ছে।
দেখতে দেখতে সময় কেটে গেল। আয়েশার মনোবল আয়েশাকে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগাচ্ছে। এর মধ্যে আয়েশার পরীক্ষাও হয়ে গেল। পরীক্ষা সে বেশ ভালো করে দিয়েছে। আশা করা যায় এস এস সি র মতো ইন্টারেও সে বেশ ভালো রেজাল্ট করবে।
আজকে তার পরীক্ষার রেজাল্ট। সকাল থেকে তার বেশ অস্থির লাগছে। আয়েশার অস্থিরতা দেখে লতা বলতে লাগল
“আপা পাশ করবেন, চিন্তা কইরেন না। ভালোভাবেই পাশ করবেন। শুধু শুধু এমন করতেছেন। এত পড়ছেন আপনি৷ আপনি যদি পাশ না করেন দুনিয়ার কেউ করব না। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
লতার কথা শুনে আয়েশার হালকা হাসিও পাচ্ছে। তবে চিন্তা আর অস্থিরতা যেন কাটছে না তার। যদি তার রেজাল্ট কোনো কারণে খারাপ হয় সে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। পাশ তো করবে সে জানে৷ তবে ভালোভাবে তাকে পাশ করতে হবে৷ এদিকে আরাবও আয়েশার অস্থিরতা দেখে বলতে লাগল
“আমিও কিন্তু এইচ এস সি তে একবার ফেইল করেছিলাম৷ তারপরও আমি সফল বিজনেসম্যান। আমার মতো গাঁধা জীবনে এতকিছু করতে পেরেছে। তুমিও পারবে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা তুমি তো আর আমার মতো ফেইল করবে না। সুতরাং তুমি আরও বেশি সাকসেস হবে জীবনে।”
আয়েশা আরাব আর লতার কথা শুনে বিরক্ত গলায় বলল
“আপনারা সবাই এমন করে বলছেন যেন, আমি মনে হয় ফেইল করেই বসে আছি। আরে বাবা বলতে পারেন রেজাল্ট ভালো হবে। তা ‘না বলে আপনি বলতেছেন ফেইলের স্টুডেন্টরা এই করেছে জীবনে, সেই করেছে জীবনে। এমনিতেই চিন্তায় মরে যাচ্ছি। আরও চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছেন।”
আয়েশার কথা শুনে আরাব চুপ হয়ে গম্ভীর একটা ভাব নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রেজাল্ট পাবলিশড হলো। আয়েশার শিক্ষিকা মিসেস মুর্শেদা বাসায় মিষ্টি নিয়ে এসে আয়েশাকে বললো
“কংগ্রাচুলেশনস আয়েশা। তুমি শুধু আমাদের কলেজে না বোর্ডে প্রথম হয়েছো। তোমার মতো স্টুডেন্টের জন্য আমাদের কলেজের নামটা উজ্জল হয়েছে। আমিও খুব প্রাউড ফিল করতেছি তোমাকে স্টুডেন্ট হিসেবে পেয়েছিলাম তাই। অনেক অনেক শুভকামনা। আগামি পথচলা সুখের হোক।”
আয়েশার চোখে মুখে আনন্দ অশ্রু। আরাব আয়েশার কাছে এসে বলল
“আমি তোমাকে বলেছিলাম নিজেকে এমনভাবে গড়ো কেউ যেন তোমাকে চেহারা দিয়ে নয় কাজ দিয়ে বিচার করে। আজকে নিশ্চয় তার প্রমাণ পেলে। আমি অনেক অনেক খুশি আয়েশা।”
আয়েশা কাঁদতে লাগল খুশিতে। তবে হুট করেই তার মাথাটা ঘুরতে লাগল। শরীরটা ভার হতে লাগল। খুশিটা যেন বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। এর আগেই সে জ্ঞান হারাল।
#বেহালার সুর
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ২৬
আরাব দ্রূত আয়েশাকে ধরে শুয়ালো। ডাক্তারকে কল দিয়ে আনালো ইমারজেন্সি। ডাক্তার এসে আয়েশাকে দেখল। আয়েশাকে দেখে আরাবকে পরামর্শ দিল সরাসরি যেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। লক্ষণ ভালো লাগছে না। আরাব ভয় পেয়ে গেল। শরীর কাঁপছে তার। নিজেকে সামলে নিল। তারপর দ্রূত আয়েশাকে নিয়ে হাসপাতালে গেল।
হাসপাতালে যাওয়ার সাথে সাথে আয়েশার কিছু টেস্ট করা হলো এবং আয়েশাকে অবজারভেশনে রাখা হলো। টেস্ট রিপোর্ট আসতে একটু দেরি হবে। এ দেরিটায় যেন আরাব সহ্য করতে পারছে না। প্রতিটা সেকেন্ড তার কাছে সহস্র বছরের মতো লাগছে। সে নিজেকে সামলাতে চেয়েও পারছে না। আয়েশার জ্ঞান এখনও ফিরে নি। চিন্তায় তার ভেতর কাঁপছে।
এক রাশ চিন্তা আর অশান্তিতে সারাটা দিন কাটল। ডাক্তার আরাবকে ডাকলো। আরাব ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল
“আয়েশা ঠিক আছে তো?”
ডাক্তার মিহির সাহেব আরাবকে বলল
“দেখুন বিষয়টা অস্থির হবার মতোই। তবে আপনাকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আয়েশার হার্টে ছোটো একটা ফুটা আছে। এটা হয়তো তার জন্ম থেকেই। হার্টের এ ফুটা সম্পর্কে আপনি নিশ্চয় জানেন?”
আরাব মাথা নেড়ে বলল
“আয়েশার দুটো সার্জারি হয়েছে। গুলি লাগার জন্য সার্জারিগুলো দ্রূত করতে হয়েছিল। আর সে সময় ডাক্তার এ বিষয়ে অবগত করেছিল। তবে তারা বলেছিল এটা স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে তেমন কিছু প্রয়োজন নেই।”
ডাক্তার মিহির আরাবকে বলল
“আরাব সাহেব এ জায়গাটাতেই ভুল হয়েছে। নিয়মিত চেক আপ নিশ্চয় করেননি?”
আরাব সাহেব মাথা নীচু করে বলল
“ঐ সময়টায় এত স্ট্রেস আর এত সমস্যা গিয়েছে বিষয়টা আমার মথা থেকেই চলে গিয়েছিল। ঘটনার প্রায় দু বছর পার করে ফেললাম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে একবারও আমার মাথায় আসে নি। আমার গুলি লাগার পর আমি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। সে সাথে আমার হালকা মেমোরি লসও হত। এসব রোগ, শোকের জন্য এ বিষয়টা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এখন কী কোনো সমাধান আছে? আয়েশার কান্ডিশন কী এখন ভালো? এজন্য যদি আয়েশার বড়ো কিছু হয়ে থাকে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। আপনি প্লিজ বলুন কী করব, কী করলে আয়েশা সুস্থ হবে?”
ডাক্তার মিহির আরাবের দিকে তাকালো। আরাব বেশ অস্থির হয়ে আছে। আরাবের অস্থিরতা দেখে তিনি আরাবকে আস্বস্ত করে বললেন
“আরাব সাহেব শান্ত হোন। রোগ আছে রোগের ট্রিটমেন্ট ও আছে। আয়েশার অবস্থা এখন ভালো। ছোটো একটা রিং পরিয়ে নিলেই হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আয়েশা একই সাথে গর্ভবতী। এ সময় রিং পরানোটা জটিল। আবার রিং পরাতে গেলে বাচ্চারও ক্ষতি হতে পারে। আর রিং না পরালে আয়েশার ক্ষতি হতে পারে। আপনাকে একটা সিদ্ধান্ত আমাদের দিতে হবে। আমরা আয়েশার রিং পরাতে গিয়ে যদি আয়েশার গর্ভপাত হয় এটা নিয়ে কোনোরকম আপত্তি জানানো যাবে না। আবার যদি বলেন রিং দেরি করে পরাবেন বাচ্চা জন্ম হওয়ার পর। তাহলে বলব এটা রিস্ক হয়ে যাবে আয়েশার জন্য। তার যে অবস্থা রিং না পরালে যেকোনো সময় তার মৃত্যু হতে পারে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার।”
আরাব কোনো চিন্তায় করলো না। সে ডাক্তারের হাত দুটো ধরে কনফিডেন্ট হয়ে বলল
“আমি শুধু চাই আয়েশা বেঁচে থাকুক। সন্তান যদি আল্লাহ দেয় আবার হবে। আমরা তো আর ইচ্ছা করে নিজের সন্তান খু/ন করছি না। পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে। আমার বাচ্চা লাগবে না আয়েশাকে লাগবে। আর আয়েশার যদি ভবিষ্যতে বাচ্চা না ও হয় আমার তাতে কোনো আপত্তি নেই। আমার এতিমখানার শত শত বাচ্চা বাবা, মা অভিভাবকহীন। তাদের নিয়ে বাকি জীবন পার করে দিব। এত চিন্তা করার কিছু নেই। আয়েশাকে বাঁচাতে আপনার যা করা লাগে করুন। টাকা পয়সা, যা লাগে সবকিছু আমি দিতে রাজি। শুধু আয়েশাকে বাঁচান।”
ডাক্তার মিহির আরাবের কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। এ প্রথম তার সামনে এমন একজন স্বামী যে কি’না কোনো চিন্তা ভাবনা দ্বিধা ছাড়া কেবল মাত্র তার স্ত্রীকে বাঁচাতে চাচ্ছে। তার কাছে তার স্ত্রীর জীবন সবকিছুর উর্ধ্বে। তিনি আরাবকে হালকা গলায় বললেন
“বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। ফিজিক্যাল কান্ডিশান স্টেবল হলেই আমরা অপারেশন করব। একজন গাইনোকলোজিস্টের সাথেও পরামর্শ প্রয়োজন। আপনি দোয়া করুন। আমরা কেবল চেষ্টা করতে পারি। রিজিকের মালিক আল্লাহ সে সাথে হায়াতের মালিকও আল্লাহ। কেবল মাত্র দোয়ায় পারে এ দুটো বাড়াতে।”
আরাবের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। সে করিডোরে বসে এক মনে আল্লাহকে বলছে
“হে আল্লাহ জীবনে অনেক পাপ করেছি, অন্যায় করেছি। তবে আমি যখন তওবা করে সে পাপ ছেড়েছি নতুন করে সে পাপে আর জড়াইনি। আমি জানি আমার পাপের ভান্ডার থেকে আপনার রহমতের ভান্ডার আরও বিশাল। আমি আমার জন্য তওবা ছাড়া দুনিয়াবী কিছু চাইনি। আজকে দুনিয়াতে শুধু আমি আয়েশার হায়াত ভিক্ষা চাই। আয়েশার রিজিক ভিক্ষা চাই। হে আল্লাহ দয়াকরে তার হায়াত এবং রিজিক ভিক্ষা দিন। আমার সকল হায়াত তাকে দিয়ে দিন। তার জীবনের পরিধি এত স্বল্প রাখিয়েন না। সে নিষ্পাপ। কখনও পাপ করতে দেখিনি। সবসময় আপনাকে স্মরণ করতে দেখেছি। শালীন ভাবে চলতে দেখেছি। সকালে সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতে দেখেছি। এরকম সুন্দর সকাল আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েন না৷ হে আল্লাহ আমার বুক ভার হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার ভারত্ব যে এত ভারী আমি আজকে বুঝতে পারছি। এ কষ্টের ভার আমি সইতে পারছি না।”
আরাব করিডোরে বসেই কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ কেঁদে মনটাকে শক্ত করে নিল। তারপর সরাসরি চলে গেল প্রসেসিং এ। সকল প্রকার কাগজ পত্রে সিগনেচার করে নিল সে। তার মধ্যে আয়েশার জ্ঞান ফিরেছে। নিজেকে স্বাভাবিক করে সে আয়েশার কাছে গেল। আয়েশার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল
“এখন কেমন লাগছে?”
আয়েশা হালকা দম নিয়ে বলল
“আগের থেকে ভালো। আচ্ছা আমার কী হয়েছে?”
আরাব নিজেকে স্বাভাবিক করল। আয়েশাকে এটা বলা যাবে না সে গর্ভবতী। কারণ এতে সে আরও বেশি হার্ট হবে৷ তাই আয়েশার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
“তেমন কিছু না। তোমার হার্টের সমস্যাটা ছিল সেটা বেড়েছে। এখানে আমারও গাফলতি ছিল। কারণ আমি তোমার এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে পারিনি। আজকের মধ্যেই তোমাকে রিং পরাতে হবে। এরপর তুমি একদম সুস্থ। কিছুক্ষণের ব্যাপার শুধু। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
আয়েশা আরাবের কথা শুনে কিছুটা ভয় চোখে বলল
“তাহলে আমার বাচ্চার কী হবে?”
আয়েশার মুখে বাচ্চার কথা শুনে আরাব চমকে উঠল।।ভাবতে লাগল সে কীভাবে জানল তার বাচ্চা পেটে। সে তো তাকে কিছু বলেনি। এমনকি সকল ডাক্তারও বিষয়টি তার থেকে হাইড করেছে। আরাব আমতা আমতা করে বলল
“বাচ্চা মানে?”
আয়েশার আরাবের দিকে তাকিয়ে বলল
“আমি প্র্যাগন্যান্ট। সকালেই জানতে পারি। কিট দিয়ে টেস্ট করেছিলাম। পরীক্ষার রেজাল্টের চিন্তায় বিষয়টা বলিনি। ইচ্ছা ছিল দুটো সংবাদ একসাথে দিব। তবে হুট করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমি বলতে পারিনি। দেখুন আমার যা হওয়ার হোক আমার বাচ্চার যেন কোনো ক্ষতি না হয়৷ আমার বাচ্চাকে আপনি প্লিজ বাঁচাবেন।”
আরাব আয়েশাকে ধরে বলল
“তুমি বাঁচলে বাচ্চা আরও নেওয়া যাবে। পরিস্থিতি যা সিদ্ধান্ত নিতে বলবে তাই নিতে হবে। নিজেকে সামলাও। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।”
কথাগুলো বলেই আরাব বাইরে চলে আসলো। আয়েশা কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে বলল
“হে! আমার রব। আমার জীবনে স্বজ্ঞানে আপনার নফরমানী করিনি৷ সবসময় নিজেকে পাপ মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি। তবুও আমরা মানুষ অজানা কত পাপেই করে ফলি। সে পাপ আপনি ক্ষমা করে দিন। ক্ষমা করে দিয়ে আমার সন্তানের হায়াত বাড়িয়ে এ দুনিয়ায় আনার ব্যবস্থা করে দিন। আমার সকল পাপ আপনি ক্ষমা করে দিন দয়াকরে।”
আয়েশাকে একটু পরে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো। অপারেশন শুরু হলো। আরাব কেবল অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন ডাক্তার এসে বলবে
আয়েশার সকল সমস্যা কেটে গেছে এ আশায় বসে আছে সে।
এর মধ্যেই একজন ডাক্তার থিয়েটার থেকে বের হলো। কিন্তু..
চলেব