#বৈরী_বসন্ত ১০
লেখা – আয্যাহ সূচনা
মেয়েকে বেলা অব্দি ঘুমোতে দেখে অবাক রেশমা বেগম আর সিদ্দিক সাহেব। জমিলা বেগম দুয়েকদিন যাবত কোনো কথা বলছেন না। আজ গ্রামের বাড়ি যাবেন তারা। সিদ্দিক সাহেব মেয়ের ঘরে এলেন। পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন। বললেন,
-“নাফি? মা?”
ঘুমন্ত নাফিয়া নড়েচড়ে উঠল। হাতড়ে খুঁজল বাবার হাত। পেয়ে গেল বটে। নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ‘উম’ আওয়াজে সাড়া দিল। সিদ্দিক সাহেব বললেন,
-“বাবা গ্রামে যাচ্ছি। বিদায় দেবে না?”
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে চোখ খুলে তাকায় নাফিয়া। বাবা পাশে বসে আছেন। বাবার মুখখানা দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে। বলে,
-“কবে ফিরবে বাবা?”
-“এইতো সপ্তাহখানেক পর।”
-“দাদী?”
-“তোমার দাদীর মাইন্ড ফ্রেশ করতেই নিয়ে যাচ্ছি।”
-“তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু?”
-“হ্যাঁ ফিরব। আর শুনো তোমার জন্য টাকা রেখে যাচ্ছি আলাদা করে। তোমার যা ইচ্ছে কিনে খেও আর ক্যাম্পাসে যাওয়ার হলে সাদিফ অথবা জোহানকে বলবে।”
-“বাবা ক্যাম্পাসে তো আর…”
নাফিয়া বলতে বলতে থেমে যায়। এটা বলা যাবেনা। বাবা যদি অন্যকিছু ভাবেন? সিদ্দিক সাহেব মেয়েকে থেমে যেতে দেখে ফিরতি প্রশ্ন করলেন,
-“কি বলছিলে নাফি?”
-“না বাবা কিছু না। তোমার আর দাদীর যাত্রা শুভ হোক। দ্রুত ফিরবে আমি অপেক্ষা করব।”
মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে সিদ্দিক সাহেব বললেন,
-“নিজের যত্ন নিও, সাথে মায়েরও।”
সিদ্দিক সাহেব রওনা হলেন। নাফিয়ার একবার ইচ্ছে হল দাদীর সাথে দেখা করবে। কিন্তু ইচ্ছেটা অভিমানের তলে চাপা পড়ে গেল। তার দেওয়া কষ্টগুলো তাজা হল। খারাপ লাগে নাফিয়ার। দেখা করার ইচ্ছে হল না আর। সব চিন্তা ভাবনা একপাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম থেকে উঠল বিকেল দিকে। আজ অনেক সময় ঘুমিয়েছে। মায়ের মিথ্যে রাগ আর বকুনি খেয়েছে সামান্য। কিন্তু পরবর্তীতে মুখে তুলে খাইয়েও দিয়েছেন।
অলস দিন। পড়তেও ইচ্ছে হচ্ছে না আজ। কোনো কাজ নেই। বারান্দায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই। গেলেই আরিভের দেখা মিলবে। আপাতত সেটা চাইছে না সে।
-“তোমাদের ছাদে অপেক্ষা করছি। এক সেকেন্ডে হাজির হও।”
মেসেজটি পড়ে মুখ কুঁচকে গেল নাফিয়ার। কী সুন্দর আবদার? আবদার নাকি হুমকি? বললেই হল নাকি?
-“এক সেকেন্ড কেন? এক ঘন্টায়ও আসব না।”
-“আচ্ছা আমি নিচে আসছি তাহলে।”
-“সাহস থাকলে আসুন।”
-“আমার সাহস দেখতে চাইছো নাফি? এসে হাজির হলে তোমার মাকে কী বলবে আগেই ভেবে নাও।”
ভয় দেখাতে এক ফোঁটা ছাড় দেয়না লোকটা। দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নাফিয়া লিখল,
-“আসছি।”
নাফিয়া তেড়ে এল। এমনভাবে এগিয়ে আসছে যেন কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। ঝড়ের গতিতে এসে থামে আরিভের কাছে। কোমরে হাত রেখে রাগী সুরে বলে,
-“কী মজা পান আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে?”
আরিভ হাসছে। তার হাসি যেন আগুনে কেরোসিনের মতো পড়ল। গা জ্বলে যাচ্ছে নাফিয়ার। বলল,
-“আবার হাসছেন নির্লজ্জের মত।”
-“দেখেছ তোমাকে কী করে জব্দ করি?”
-“দেখতে চাই না। কী জন্য ডেকেছেন?”
-“প্রেম করতে।”
নাফিয়ার চক্ষু চড়কগাছ। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
-“আপনার সাথে যে প্রেম করবে তার জীবন ধ্বংস। আমি আপাতত আমার সুজলা-সুফলা জীবন নিয়ে সুখে আছি।”
-“আচ্ছাআআআআ।”
আরিভ সুর টেনে বলে উঠে। নাফিয়াকে রাগানোর পাঁয়তারা করছে। নাফিয়া আবার প্রশ্ন করল,
-“কী জন্য ডেকেছেন সেটা বলেন? আমার কাজ আছে।”
আরিভ তার পাশের জায়গা দেখিয়ে বলল,
-“বসো। দুটো সুখ দুঃখের আলাপ করি।”
-“আমার জীবনে দুঃখ নেই। আর সুখের আলাপ আপনার সাথে করব না।”
আরিভ ম্লান হাসে। নীরব চেয়ে রইল নাফিয়ার দিকে। নাফিয়ার হুট করেই মায়া হল। মুখ পেঁচার মতো করেই পাশে বসল। বলল,
-“শুরু করেন আপনার বয়ান। পাঁচ মিনিট দিলাম, এরপর চলে যাব।”
-“আচ্ছা।”
নাফিয়া অপেক্ষা করে। কিন্তু আরিভ কিছুই বলছে না। এক মিনিট, দুই মিনিট করে দশ মিনিট কেটে গেছে। আরিভ চুপচাপ, মুখ তুলে আকাশ দেখছে। নাফিয়া বলল,
-“আমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার মানে কী?”
আরিভ আকাশের দিকে তাকিয়েই বলল,
-“তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে বসে থাকতে?”
-“হ্যাঁ।”
-“চলে যাও তাহলে।”
মানুষের কণ্ঠস্বর অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়। যেমন এখন আরিভের আওয়াজ। মেয়েদের মত অভিমানী শোনাচ্ছে। নাফিয়া বসে রইল। মন মেজাজ বোঝার চেষ্টা করছে। বলল,
-“গেলাম তাহলে?”
আরিভ জবাব দিল না। নাফিয়া কী ই বা করবে? অনুমতিতো পেয়েছে চলে যাওয়ার। পা বাড়াল। পেছন থেকে সেই নিশ্চল হাতটা টেনে ধরে আরিভ। আতঙ্কিত হয়ে পেছনে হেলে আসে নাফিয়া। হাতখানা ধরে রেখেছে কিন্তু কিছুই অনুভব হচ্ছে নাফিয়ার। যেন হাতটা তার নয়, অন্যকারো। নাফিয়ার গোলাকৃতির নেত্রদ্বয় আরিভের হাতের দিকে।
গোমড়া মুখে, রুষ্ট কন্ঠে আরিভ জানতে চায়,
-“আমার সাথে তোমার এত কী সমস্যা? এমন বৈরী মনোভাব কেন?”
আরিভের কথা যেন কানে পৌঁছায়নি। নাফিয়া তার আর আরিভের মিলিত হাতজোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে। আরিভ হাতে ঝাঁকুনি দিল সামান্য। তারপরও কিছু অনুভব হল না।
-“বলো? কীসের এত বিদ্বেষ?”
-“হ্যাঁ?”
-“কানে শুনো না?”
-“হাত ধরেছেন কেন?”
-“ইচ্ছে হয়েছে, ইচ্ছেকে পূর্ণতা দিয়েছি।”
-“এভাবে কোনো মেয়ের হাত ধরা ভালো কাজ না।”
-“কোনো মেয়ের কোথায়? তোমার হাত ধরেছি। তুমি কিছু অনুভব করছো এই হাতে?”
নাফিয়ার মুখটা মলিন হয়ে এল। ঠোঁট উল্টে আসে। বলে,
-“নাহ পারছি না। আমি পঙ্গু আপনি জানেন না?”
-“চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব।”
ধমকে কেঁপে উঠল নাফিয়া। ঠোঁটে কম্পন ধরল। কেঁদে ফেলবে হয়তো। একে অনুভূতিশূন্য হাতটা দেখে হৃদয় কেমন যেন করছে, তার মাঝে আরিভের রামধমক।
নাফিয়ার ভীত রূপ দেখে বামহাতটাও আগলে নিল আরিভ। এবার অনুভব শক্তি জেগে উঠে। স্পর্শ বিদ্যুতের মতো দেহে প্রবেশ করল। চোখজোড়া আরও বিশাল আকৃতি ধারণ করে।
-“আবার হাত ধরেছেন।”
-“তো?”
-“ছাড়ুন। ভালো লাগছে না।”
-“এবার অনুভব করছো?”
নাফিয়ার কাছ থেকে কোনো জবাব আসেনি। চুপচাপ নিজেকে গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরিভ নিজেকে শান্ত করল। বলল,
-“বারবার নিজের দুর্বলতাকে বলে বেড়াও কী জন্য? মানুষ ভাববে তুমি সহানুভূতি চাও। সত্যিই কী চাও?”
-“না না চাই না।”
-“তুমি অন্ধ? কানে শুনো না? হাঁটতে পারো না? কথা বলতে পারো না?”
নাফিয়া মিনমিন করে বলল, -“পারিতো।”
-“আমাদের হাত দুটো। একটি চলে গেলে কিছুই আসে যায় না।”
-“অপয়া বলে যে?”
-“তোমার দাদী! ওই মহিলা আধ পাগল। এর একটা ব্যবস্থা করব আমি।”
-“ নাহ একদম না।”
-“তাহলে তুমিও নিজেকে দুর্বল ভাবতে পারবে না। যদি ভাবো তাহলে তোমার দাদীর কপালে দুঃখ আছে এই বয়সে।”
-“আচ্ছা ভাববো না।”
আরিভের আঙুলের ভাঁজে নিজের আঙ্গুল আবিষ্কার করল। তৎক্ষণাৎ তাকাল তার দিকে। কিন্তু বেশিক্ষণ চেয়ে থাকতে পারল না। চোখ নামিয়ে নেয় সঙ্গেসঙ্গে। লোকটা ভীষণ অদ্ভুত ব্যবহার করছে। ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে। নাফিয়ার রুহ কেঁপে উঠে ক্ষণিকের জন্য।
-“তুমি সুখী?”
-“হুম?… হ্যাঁ।”
-“তোমার এই ডান হাত তোমাকে প্রায়ই অসুখী করে তোলে?”
এই প্রশ্নের উত্তর দিল না নাফিয়া। বাম হাতে জোর খাটাল। ছাড়াতে চাইল হাত। আরিভ নাফিয়ার এত তোড়জোড় দেখে বলল,
-“আমি না ছাড়লে তুমি ছাড়াতে পারবে?”
-“আমার অস্বস্তি হচ্ছে।”
-“এটাকে অস্বস্তি বলেনা বোকা মেয়ে।”
-“যাই বলে। আপনি হাত ছাড়ুন। মানুষ দেখলে কী ভাববে?”
-“মানুষের ভাবনায় কার কী আসে যায়?”
নুয়ে যাচ্ছে যেন নাফিয়া। অস্বস্তি মাত্রা ছাড়িয়েছে। জমিনের দিকে তাকিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হাত ছাড়ার কোনো লক্ষণ নেই আরিভের মধ্যে। চোখ তুলে তাকাতেও ভীতি।
হাত ছাড়ে আরিভ। বলে,
-“যাও। কিন্তু আবার যখন ডাকব এক মুহুর্ত ব্যয় না করে এসে হাজির হবে।”
হাফ ছেড়ে বাঁচল নাফিয়া। সাত পাঁচ না ভেবে দৌঁড় লাগাবে এখনই। যাওয়ার আগে আরও একবার ঠান্ডা হুমকি দিয়ে বসে আরিভ,
-“আমার সাথে কথা বলবে না, মুখোমুখি হবে না এমন চিন্তা যদি মাথায় আসে তাহলে ঝেড়ে ফেলো দ্রুত। এটা অন্তত এই জনমে সম্ভব হবেনা তোমার জন্য।”
বুকে হাত রেখে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে জোহান। যা দেখল সেটি ভূত দেখার চেয়ে কম নয়। পাশের বাড়ি থেকে দূরবীন দিয়ে আশপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে এমন একটি দৃশ্য দেখল সেটি ভাবনাতীত ছিল। এক লাফে নিজের বাড়ির ছাদ থেকে নেমে নাফিয়াদের বাড়ির ছাদে দৌঁড় লাগায়। আরিভ সবে মাত্র বেরিয়ে যাচ্ছিল। সজোরে ধাক্কা খেল জোহানের সাথে। আত্মা উড়ে যাওয়ার উপক্রম জোহানের। শক্তপোক্ত মানুষের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথা ঘুরে গেছে।
-“কী সমস্যা তোর! দৌঁড় প্রতিযোগিতার প্র্যাকটিস করছিস?”
-“ভাই!” হাঁপাতে হাঁপাতে বললো জোহান।
-“কীহ!”
-“আপনি আর নাফিপু কী প্রেম করছেন?”
আরিভ চমকে তাকাল। পলক ঝাপটে বলল,
– “মানে?”
-“মানে কী? আপনিই তো আপুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন এতক্ষণ।”
এই ছেলেরই দেখার ছিল দৃশ্যটা। পুরোই মাঠে মারা পড়ল। আরিভ চুপ বনে গেল। জোহান আবার বলে উঠে,
-“আমি কিন্তু দেখে ফেলেছি।”
গালে থাপ্পড় পড়ে। জোহান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে আরিভের দিকে তাকাল। থাপ্পড়টা বেশি জোরে না দিলেও ব্যথা পেয়েছে জোহান। মুখ কুঁচকে বলল,
-“মারলেন কেন? আপনারা প্রেম করবেন আর আমি বললেই দোষ? আমাকে এটা বলেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যটা হলো কী করে? আপনারাতো এখন আরেকজনকে পছন্দও করতেন না।”
আরিভ তর্জনী আঙুল তুলে বলল,
-“বেশি কথা বলবি না। মুখ একদম বন্ধ।”
-“তাহলে কিছু টাকা লাগবে। এই মনে করেন ২/৩ হাজার। মাসের শুরু নিশ্চয়ই বেতন পেয়েছেন। আপনি মালপাতি দিলে আমি সারাজীবনের জন্য বোবা হয়ে যাব, প্রমিজ।”
পরপর আরও একটা থাপ্পর পড়ল। আরিভ জোহানের ঘাড় চেপে ধরে বলল,
– “কলেজ ফাঁকি দিয়ে যে রবীন্দ্র সরোবরে গিয়ে আড্ডা দেওয়া হয় সেটা তোর বাপ জানে? নাকি জানাব?”
ভয় পেয়ে গেল জোহান। হাত জোড় করে বলল,
-“ভাই ভাই বাবাকে বলবেন না প্লীজ।”
-“গিভ অ্যান্ড টেক পলিসির নাম শুনেছিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“তুই মুখ বন্ধ রাখলে ধরে নে আমিও বোবা।”
-“আচ্ছা ভাই ডিল ডান।”
______
সেদিনতো স্বপ্ন ছিল, তবে আজ বাস্তবে অসাধ্য সাধন করেছে। কোমল হাতজোড়া ছুঁয়ে দিয়েছে। মন আনচান করছিল, এই সুযোগটা খুঁজে বেড়াচ্ছিল। অবাধ্য ইচ্ছেদের পূর্ণতা দিতে নিজেই ছুটে গিয়েছে।
আরিভ বদ্ধ ঘরে শুয়ে নিজের উদ্দেশ্যেই বলে উঠল,
-“এরকম অবাধ্য হয়ে উঠল সামনের পথ কঠিন।”
উপলব্ধিটুকু স্পষ্ট। পরিষ্কার বুঝে উঠেছে, তার চিত্তের চাওয়া কী? প্রেম ভালোবাসারা যেন ঝাঁক বেঁধে ঝুঁকে আছে আরিভের আঙিনা জুড়ে। সবটাই আকস্মিক, অজান্তে। এখন যে মন খুব করে চাইছে সারাক্ষণ নাফিয়ার আশপাশে ঘুরে ফিরে বেড়াতে। হাতে হাত রাখতে, চোখে চোখ রেখে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে। এসব ইচ্ছেদের কী হবে? নাফিয়া কী মেনে নিবে তাকে প্রেমিক রূপে? নাকি একতরফা রয়ে যাবে?
-“নাফি তোমার কী খারাপ লাগছে? আম.. আমার মনে হচ্ছে এভাবে তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার হাত স্পর্শ করা উচিত হয়নি।
ফোন কানে নিয়ে নিশ্চুপ বসে আছে নাফিয়া। ছাদ থেকে নেমে ঠিক একই ভঙ্গিতে আছে সে। মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে আছে। আরিভের সেই সামান্য হাতে স্পর্শ কিশোরী মনে উথাল পাথাল ঢেউ খেলিয়ে যাচ্ছে। এরকম অনুভূতির শিকার আগে কখনই হয়নি সে।
-“সরি।” নত সুরে বলল আরিভ।
এবারও জবাব এল না। নাফিয়ার ধ্যান এসে ঠেকেছে ফোনের অন্যপাশ থেকে ভেসে আসা আরিভের অস্থির নিঃশ্বাসে। কণ্ঠের চেয়ে নিঃশ্বাসের আওয়াজ কানে বাজছে বেশি।
-“কিছুতো বলো!”
-“কী বলব?”
-“সরি বলেছি সেটা গ্রহণ করেছ?”
-“হুম।”
-“হু হা করবে না নাফি। স্পষ্ট বাক্যে জবাব দাও।”
-“গ্রহণ করেছি।”
-“তাহলে তোমার কন্ঠ এমন উদাস শোনাচ্ছে কেন?”
আবার চুপ হয়ে গেল নাফিয়া। নিজের হাতের দিকে তাকাল। কী বলবে? কী বোঝাবে? তার মস্তিষ্ক জুড়েই অগোছালো ভাবনারা এদিক ওদিক ছুটে চলেছে।
-“তোমার এই নীরবতা আমার ভালো লাগছে না। আবার আগের মত চঞ্চল হও। সামান্য হাতটুকুই তো ধরেছি…”
বলতে বলতে থেমে গেল আরিভ। নাফিয়া কথা চেপে রাখতে জানে না। মুক্ত করে বাক্য। সেটা যেমনই হোক না কেন। নাফিয়া নির্বোধের মত বলতে লাগল,
-“আমার কেমন অনুভূত হচ্ছে সেটাতো আমি নিজেই বুঝতে পারছি না। অযথা ছটফট করছি। অস্থির লাগছে আমার। স্থির থাকতে পারছি না সেই বিকেল থেকে। পর পুরুষের ছোঁয়ায় এমন কী থাকে? আমার বাবা আমার হাত ধরলে তো আমার অস্থির লাগেনা। এখন এলোমেলো লাগছে আমার।”
আরিভ হাসল। বলল,
-“ব্যাপার না ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। না হলে আমি করিয়ে ছাড়বো।”
-“আপনি কী এখন থেকে জোর খাটিয়ে হাত ধরবেন? ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।”
উদাস, এলোমেলো, নীরব নাফিয়া হুট করেই তেজি রূপ ধারণ করে। আরিভ সশব্দে হেসে উঠে আরেকদফা। বলে,
-“খারাপ হোক তাহলে।”
-“এগুলো বেহায়াপনা।”
-“হলাম বেহায়া। কী আসে যায়?”
-“আপনার আসে যায় না। আমার আসে যায়। আপনি দূরে থাকবেন আমার কাছ থেকে।”
-“সেটা সম্ভব না নাফি। এখন আরও সম্ভব না।”
-“আমি আপনাকে ধরা দিচ্ছি না।”
-“দেখা যাবে।”
চলবে…