#বৈরী_বসন্ত ২৯
লেখা – আয্যাহ সূচনা
-“ভালোবাসো আমায়?”
আরিভের বক্ষস্থলের ঠিক মধ্যিখানে মাথা রেখে আছে নাফিয়া। দেহের অর্ধেক ভারটুকু তার বুকেই। দেহের সংস্পর্শে এসে মেয়েটি নীরব। চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়া নিবিড়ভাবে অনুভব করছে। ক্ষণেক্ষণে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে দেখা গেল।
আরিভ জবাব পেল না। তাই পুনরায় প্রশ্ন ছুঁড়ে,
-“জবাব দিচ্ছো না যে?”
বুকের ডান পার্শ্বে আঙুলের সাহায্যে আঁকাঝুঁকি করতে করতে নাফিয়া লাজুক সুরে জবাব দিল,
-“জানেন না বুঝি?”
-“জানি, তবে তোমার কন্ঠে শুনতে চাই। কন্ঠ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।”
নাফিয়া কোনো টালবাহানা করল না এবার। আরিভের গলায় এক হাত পেঁচিয়ে জবাব দিল,
-“বাসি।”
আরিভকে লম্বাটে নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেল। অনুভব করল নাফিয়া তার বুকের ওঠানামা। মুখ একবার তুলে তাকাল আরিভের দিকে। সে তো আগে থেকেই তার দিকে চেয়ে। নাফিয়ার গালে আলতো হাত বুলিয়ে আরিভ বলতে লাগল,
-“জীবনে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আসে নাফি। সেটি বিশ্বাস করো তো?”
হুট করেই কথার কারণ বোধগম্য হল না নাফিয়ার। আরিভ মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
-“করো তো?”
-“করি, কিন্তু আপনি এসব কেন বলছেন?”
-“সতর্ক করছি। কখন কোন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয় সেটাতো বলা যায় না।”
নাফিয়া নড়েচড়ে জবাব দিল, – “তা ঠিক।”
-“ধরো তোমার সামনে ভয়ংকর কোনো পরিস্থিতি এসে দাঁড়াল। তুমি ভেঙে পড়বে নাকি শক্ত হয়ে মোকাবেলা করবে?”
আরিভ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তাকে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো তুলে ধরার আকুল প্রচেষ্টা। মানসিকভাবে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে তার। হুট করেই অপারেশনের বিষয়টি সামনে এলে নাফিয়া বইতে পারবে না এই বিষাদের ভার। ভেঙে পড়বে সাথে সাথেই।
নাফিয়া ভাবনা চিন্তার জন্য সময় নিল। তারপর জবাব দিল,
-“মোকাবেলা হয়তো করতে পারতাম না…”
-“পারতে না কেন?”
চট করে প্রশ্ন করে বসে আরিভ। নাফিয়ার কথাটি শেষ হতেও দিল না। নাফিয়া আরিভের দাড়ি টেনে দিল। বিরক্তির সুরে বলে উঠল,
-“উফ! কথা শেষ করতে দিবেন তো?”
-“আচ্ছা সরি। বলো।”
-“বলছি আমি একা হলে হয়তো মোকাবেলা করতে পারতাম না। এখন আমার পায়ের নীচের জমিন শক্ত মনে হয়। ঢাল হয়ে পাশে দাঁড়ানো আপনি আমাকে দুর্বল হতে দিতে চান না।”
ম্লান হাসির রেখা ফুটে আরিভের অধরে। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না হাসিটা। সামনে যে এক লম্বা যুদ্ধ বাকি। নাফিয়াকে জানাতে হবে, তার অপারেশন করাতে হবে।
-“আচ্ছা বউ, আমি পাশে থাকলে তুমি যেকোনো কষ্ট, দুঃখ, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে?”
-“কেন পারব না? অবশ্যই পারব।”
-“শিউর তো? ভেঙে পড়বে না তো?”
বাচ্চাদের মত করে বোঝাচ্ছে আরিভ তাকে। যেন সে একেবারেই নির্বোধ। তৈরি করছে তাকে আসন্ন ঝড়ের জন্য। তবে নাফিয়ার এবার সন্দেহ হতে শুরু করল। আরিভ হুট করেই এসব কথা কেন বলছে? নাফিয়া বুক থেকে মুখ তুলল। উঠে বসল পা গুটিয়ে। আরিভের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল,
-“আপনি এসব কথা বলছেন কেন? কিছু কি হয়েছে?”
আরিভ ভনিতা করে হেসে বলল,
-“কি হবে? আমি শুধু জানতে চাইলাম।”
-“শুধু উত্তরটাই জানতে চান তো?”
-“হ্যাঁ।”
-“একদম ভেঙে পড়ব না। আপনি থাকলেই চলবে… উহু আপনি বাবা মা সবার থাকতে হবে।”
আরিভ মনে মনে ভাবল, সবাই তো আছে। কিন্তু তার সহ্যের সীমাটুকু বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া এখনও শিরীন বেগম আর আতাউর সাহেবকে কিছুই জানানো হয়নি। তাদের কেমন প্রতিক্রিয়া হবে? তারা যদি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে না নেন?
আরিভের মস্তিষ্কে এলোমেলো চিন্তারা যন্ত্রণা দিতে শুরু করল। ঠিক তখনই কপাল জুড়ে উষ্ণতা নেমে আসে। কোমল ঠোঁটের ছোঁয়া পাওয়া মাত্রই আরিভ তাকাল লাজুক মুখখানার দিকে। নাফিয়া ঝটপট কাঁথা মুড়ি দিয়ে অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পড়ে। নত গলায় বলে,
-“এত চিন্তা করবেন না তো আমাকে নিয়ে। আমি ঠিক আছি, ভালো আছি, সুখে আছি। বেশি চিন্তা করলে কপালে ভাঁজ পড়ে যাবে।”
আরিভ এক মুহুর্ত ব্যয় করল না। মন আনচান করে উঠল নাফিয়ার কাছাকাছি যাবার। একহাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো নাফিয়াকে। ঠিক যতটা শক্ত করে ধরলে বুকে প্রশান্তি খেলে, ঠিক ততটা শক্ত করে। মসৃণ চুলে মুখ গুঁজে বলল,
-“আমার সকল চিন্তা তোমাকে নিয়ে। একটাই তো বউ, সেটিও ভীষণ আদরের।”
________
তীর্যক সূর্যের আলো চোখে পড়তেই নড়েচড়ে উঠল নাফিয়া। মুখে এক বিরক্তিভাব। এই রোশনি তার সাধের ঘুমকে নষ্ট করছে। আলো শুভ্র মুখে পড়তেই মুখমন্ডল কুঁচকে উঠে। ডেস্কে বসে থাকা আরিভ ছায়ার মতো কাজ করল। নিজের দেহের সাহায্যে সূর্যের আলোকে বাঁধা দিল তার প্রিয়তমার মুখে স্পর্শ করা থেকে। আরাম পেল নাফিয়া। মুখটা স্বাভাবিক হয়ে এল।
আরিভ হুট করেই চেয়ার টেনে বিছানার দিকে নিয়ে আসে। নাফিয়ার গালে হাত রেখে ভারী আওয়াজ তুলেই বলল,
-“সূর্যের আলো তোমায় স্পর্শ করছে, সেটিও আমার সহ্য হচ্ছেনা।”
নাফিয়ার ঘুম পাতলা। কথাটি কান অব্দি গেল। কাঁথা মুড়িয়ে আরাম করে শুয়ে বলল,
-“হিংসুটে!”
আরিভ হেসে উঠে। হাত সরিয়ে পুনরায় ডেস্ক এর কাছে এসে বসে। ল্যাপটপের বোতাম চেপে বড়সড় একটি এপ্লিকেশন লিখল। দশ দিনের লিভ চায় সে অফিস থেকে। কারণটাও দেখিয়েছে। তার স্ত্রীর অপারেশন আর তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার জন্য। সে অনিশ্চিত ছুটি পাবে কিনা। তবে না পেলেও অফিস যাবে না সে।
ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘরের বাইরে চলে যায় আরিভ। ভোররাতে আতাউর সাহেব ফিরেছেন। আরিভ নিজেই দরজা খুলে দিয়েছে তাকে। নিশ্চয়ই বাবা মা উভয়েই এই সময় জেগে উঠেছে। এটাই মোক্ষম সুযোগ তাদের সবটা জানানোর। নাফিয়া ঘুম থেকে ওঠার আগেই।
সকাল আটটায় ছেলেকে ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে থেকে অনেকটা অবাক শিরীন বেগম। যে ছেলে অফিস যাওয়ার ত্রিশ মিনিট পূর্বে হন্তদন্ত হয়ে উঠে সে আজ এত সকালে?
-“আজ সূর্য কোন দিক থেকে উঠল?”
আরিভ বুঝতে পারেনা মায়ের কথা। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
-“মানে?”
হাতে থাকা চাদর ভাঁজ করতে করতে শিরীন বেগম জবাব দিলেন,
-“মহারাজ আজ এত সকালে উঠে গেলেন যে? তাই ভাবলাম আজ সূর্যটা বোধহয় উল্টো দিক থেকে উদয় হয়েছে।”
পরিস্থিতি আগের মত হলে হয়তো আরিভ মুখ কুঁচকে নিত। মা তাকে খোটা দেয় কেন এই বিষয় ভেবে ভেংচি কেটে উঠত মেয়েদের মত। আজ তেমন কিছুই হলো না। চশমার আড়াল থেকে আড়চোখে মা ছেলের কথা শুনছিলেন।
-“কথা ছিল আম্মা।”
ছেলের মুখ শুকনো লাগছে। বিছানার ঠিক বরাবর থাকা বেতের সোফায় বসে শিরীন বেগম হাত তুলে ডাকলেন আরিভকে। বললেন,
-“আয়, বোস এদিকে।”
আতাউর সাহেব হাতের নিউজপেপারটা ভাঁজ করে মনোযোগী হলেন স্ত্রী এবং ছেলের দিকে। আরিভ এগিয়ে আসে। এসেই অদ্ভুত কাণ্ড ঘটাল। সেই ঠিক ছেলেবেলার মত পা ভাঁজ করে বসে পড়ল জমিনে। বিনাবাক্যে মাথা এলিয়ে দিল শিরীন বেগমের কোলে। ভারী বুক নিয়ে বলে ফেলে,
-“অস্থির লাগছে মা, কিছুই ভালো লাগছে না…”
আতাউর সাহেব ও শিরীন বেগম একে অপরের দিকে তাকালেন। হুট করে হলো কি ছেলেটার? শিরীন বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথায় হাত রাখলেন আরিভের। চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করলেন,
-“কি হয়েছে? কেন অস্থির লাগছে?”
পুরুষকে মাঝেমধ্যেই শক্ত বস্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। সমাজে প্রচলিত কথাও আছে তাদের জন্য, ‘ পুরুষ কখনও কাঁদে না ’ অথবা ‘ পুরুষের কাঁদতে নেই ’। দুটো বাক্যের মধ্যে পৃষ্ট হয়ে পুরুষ মন অনুভূতিশূন্য হয়ে উঠে। আরিভের বেলায় সেই নিয়ম ভেঙে গেল। ভেঙে ফেললো সে। ডুকরে কেঁদে উঠল সে, কান্নার তালে পুরুষালি শক্ত দেহটি কেঁপে উঠে। শিরীন বেগমের চিন্তার মাত্রা তরতর করে বেড়ে উঠে। আতাউর সাহেব বিছানা ছেড়ে নেমে এলেন। আরিভের পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
-“কি হয়েছে বাবা? আমাদের বল, যদি কিছু হয়েও থাকে আমরা সমাধান করার চেষ্টা করব।”
শিরীন বেগম বিচলিত হলেন। দুহাতে ছেলের মুখখানা তুলে দেখলেন। এই কয়েক মুহূর্তে চোখজোড়া এত রক্তিম হলো কি করে? তিনি বলে উঠেন,
-“এই আরিভ? কি হয়েছে তোর? তুই কাঁদছিস?”
-“আমি কি নাফিয়াকে হারিয়ে ফেলব আম্মা? আমি ওকে হারাতে চাই না, আমি ভালোবাসি ওকে। হারাতে চাই না।”
-“তুই কিসব যা-তা বকছিস? কেন হারিয়ে ফেলবি?”
-“আম্মা, নাফি…”
-“কি হয়েছে নাফির?”
-“ওর হাতে ইনফেকশন, ভয়াবহ রকমের ইনফেকশন। ডক্টর বলেছেন ইমিডিয়েট অপারেশন করতে।”
-“হ্যাঁ। অপারেশন করাবো তাহলে।”
-“অপারেশন করালে যে ওর অর্ধেক হাতটাই আর থাকবে না আম্মা।”
আরিভের চোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। থামছেই না কিছুতে। বাচ্চাদের ন্যায় মায়ের কোল ঘেঁষে বসে। শিরীন বেগম, আতাউর সাহেব উভয়েই নিস্তব্ধ। আরিভ বলে উঠল,
-“তুমি.. তোমরা কি ভুল বুঝবে? নাফিয়ার হাতটুকু না থাকলে তাকে ছেলের বউ হিসেবে অযোগ্য ভাববে? প্লীজ এমনটা ভেবো না। আমি নাফিয়াকে ছাড়া বেঁচে থাকতে পারব না।”
নির্বাক দুই শ্রোতা আতাউর সাহেব আর শিরীন বেগম। দুজনের মধ্যেই শব্দের সংকট। কোনো প্রকারের সিদ্ধান্তে আসতে প্রস্তুত নয় তাদের উভয়ের মস্তিষ্ক। মাত্র যা শুনল সেটি বিশ্বাস করতেও সময়ের প্রয়োজন।
-“আম্মা… আমি নাফিকে সংসার সামলাতে সাহায্য করব। আর পাঁচ দশটা সংসারের মতই আমাদের সংসার হবে। ওকে ভুল বুঝবে না তো?”
শিরীন বেগম কোনো জবাব দিচ্ছেন না। আরিভ মায়ের হাতজোড়া চেপে ধরলো। বলল,
-“আম্মা তুমি কি ভাবছো আমার জীবন নষ্ট হচ্ছে? যদি ভেবে থাকো, তুমি ভুল ভাবছো। আমার জীবন নষ্ট হয়নি বরং সুখের হয়েছে। আমি ওই মেয়েটির সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছি। ওর হাতের কারণে আমি এই দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসতে পারবো না। প্লীজ!”
উৎকণ্ঠা আরিভ। বড্ড অস্থির। শিরীন বেগম ছেলের দিকে তাকালেন। আলতো করে চড় দিলেন গালে। ভ্যাবাচ্যাকা খেল আরিভ। শিরীন বেগম মুখ শক্ত করে বললেন,
-“আমাকে কি অমানুষ ভাবিস? আমার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ব নেই? মায়া নেই? দয়া নেই?”
-“এসব কি বলছো?”
-“আজ নাফির জায়গায় আমার নিজের মেয়ে হলে আমি ফেলে দিতাম? তুই নিজে থেকেই ভেবে নিয়েছিস তোর মা দজ্জাল মহিলা তাই না? শুধু ছেলের কথা ভাববে? এই চিনিস নিজের মা’কে?”
আরিভ দুদিকে মাথা দুলিয়ে জবাব দেয়, – “না মা…”
-“তুই এটাই ভেবেছিস? ওইটুকু একটা মেয়ে। জীবনের উপর দিয়ে কতই না ঝড় গেল। আবার ঝড় আসছে তার জীবনে। আমি পাষণ্ড মহিলা নই আরিভ।”
আরিভ সাথে সাথে শিরীন বেগমের পা জড়িয়ে ধরল। বলল,
-“ক্ষমা করো আমাকে প্লীজ। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আমি টেনশনে অনেককিছু ভেবে ফেলেছি।”
-“পায়ে ধরছিস কেন? ছাড়!”
-“মায়ের পায়ে ধরাতে কোনো ক্ষতি নেই। তুমি আমাকে কয়েকটা চড় দাও, আমি মেনে নিব। আমি তোমাকে বুঝতে ভুল করেছি। যা শাস্তি দেবে মেনে নিব।”
-“বাচ্চামো করিস না আরিভ। পা ছাড়।”
-“ক্ষমা করেছো?”
-“করেছি।”
পেছন থেকে আতাউর সাহেব ছেলের পিঠে হাত রেখে বললেন,
-“তুমি অপারেশনের ব্যবস্থা করো। টাকা লাগলে আমি তোমার বাবা এখনও বেঁচে আছি।”
-“বাবা…”
-“তুমি কাঁদলে বউমাকে কে সামলাবে? যাও বউয়ের কাছে।”
শিরীন বেগম থামালেন আরিভকে। বললেন,
-“নাফি জানে?”
আরিভ হতাশ স্বরে বলল,
-“জানলে কি আর স্বাভাবিক থাকতো?”
-“এখনও জানাসনি?”
-“সাহস পাচ্ছি না আম্মা।”
আতাউর সাহেব বললেন,
-“আজই জানাও, তবে খুব সাবধানে। বুঝিয়ে নিবে আগে। ওর মানসিকভাবে প্রস্তুতির একটা ব্যাপার আছে।”
আরিভের বুকটা কেমন যেন ধ্বক করে উঠে। জানানোর সময়টা যত কাছে আসছে অশান্তি ততই বাড়ছে। কি হবে? কিভাবে সামলাবে নাফিয়াকে? তার প্রতিক্রিয়া কি হবে? আরিভ ভারী নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। ঘর থেকে বেরিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠল,
-“ভাঙতে দিব না তোমাকে। ভেঙে গেলে গড়ে নিব নিজের মতো করে।”
চলবে…
#বৈরী_বসন্ত ৩০
লেখা – আয্যাহ সূচনা
-“আমার কথা রাখবে?”
আমার কথা রাখবে বাক্যটি অসম্পূর্ণ, কোনো ভাবার্থ বহন করছে না। নাফিয়া লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে বিছানায় হাত গুটিয়ে বসে আছে। আরিভের চোখ গেল তার ডান হাতে। নীলচে রং মেখেছে যেন কেউ। এতটা ইনফেকশন ছড়িয়ে গেল? অস্বাভাবিকভাবে অস্থির হয়ে উঠতে চলেছিল আরিভ। নিজেকে সামলালো। দম ফেলল দ্রুত।
আরিভের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে নাফিয়া শুধায়,
-“কি কথা রাখব?”
-“আমি এখন যা বলব, সেটা তোমার ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে নাফিয়া এবং মানতে হবে।”
আরিভের কণ্ঠস্বর নরম নয়, বরং দৃঢ়। রেগে আছে কি? নাফিয়ার মনে প্রশ্ন জাগলো। আরিভের সাথেই যতই দুষ্টুমি করুক তার রাগের সময় নাফিয়া চুপসে যায়। এবারও তাই হলো। মাথা দুলিয়ে বলল,
-“শুনব… মানবোও।”
-“মন থেকে বলছো?”
-“হ্যাঁ।”
বেশি দেরি করা যাবেনা। একদমই না। আজ সন্ধ্যায় ভর্তি করাতে হবে নাফিয়াকে। নিজেকে শক্ত করার সাথে সাথে কন্ঠস্বরটাকেও শক্ত করল আরিভ। সে জানে নাফিয়া তার এই রূপটাকেই ভয় পায়। এই মুহূর্তে আরিভ তাকে যত আদুরে ভঙ্গিতে বোঝাবে নাফিয়া তত ভেঙে পড়বে। আরিভ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
-“তুমি জানো তোমার হাতের ব্যাপারে আমি উদাসীন। তোমার হাত কাজ করলো কি করলো না এতে আমার আর আমার পরিবারের কিছুই আসে যায়না।”
-“জানি।”
-“আমি তোমাকে, তোমার সত্তাকে ভালোবাসি। জানো তো?”
-“জানি।”
-“তোমার বাহ্যিক সৌন্দর্যে আমি বিমোহিত হলে কখনোই তোমাকে বিয়ে করতাম না।”
বোকার মত চেয়ে রইল নাফিয়া। লোকটার কি হলো? এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে কেন ঘুম থেকে তুলে? আরিভ বলল,
-“তোমার অনুপস্থিতি আমাকে অস্থির করে তোলে। তোমার অস্তিত্বকে ভালোবাসি আমি। মনে পড়ে তোমার কন্ঠ শোনার জন্য কতটা আনচান করতাম?”
-“হুম।”
-“এবার আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো।”
-“বলুন।”
-“তোমার কোনো অঙ্গ না থাকলেও তোমার প্রতি ভালোবাসা কোনোদিন কমবে না। প্রশ্নই উঠে না কমে যাওয়ার। বলতে পারো আমি তোমার পাগল প্রেমিক।”
নাফিয়ার মুখখানা নিচু হয়ে গেল। লজ্জা পাওয়া উচিত নাকি ভয়? বুঝতে পারছে না সে। আরিভ বলল,
-“আগামীকাল তোমার হাতের অপারেশন।”
নিচু হয়ে থাকা মুখটা তুলে তাকালো নাফিয়া। চক্ষুজোড়া গোলগোল হয়ে উঠেছে। কি বললো আরিভ? আরিভ ফের বলে উঠল,
-“তোমার হাতে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে। তাই অপারেশন করতে হবে।”
নাফিয়ার মস্তিষ্কে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কপালের মধ্যিখানে ভাঁজ পড়ল। আগামীকাল অপারেশন, অথচ সে কিছুই জানেনা। অবাক সুরে কিছু জানতে চাইবে তার পূর্বেই আরিভ বলে উঠল,
-“অপারেশন তোমার করাতে হবে নাফিয়া। নয়তো ইনফেকশন ছড়িয়ে যাবে পুরো শরীরে। আমি ওয়ার্ন করছি কান্নাকাটি চলবে না। বি ব্রেভ!”
-“আমার অপারেশন আর আমি কা…”
-“না তুমি কাঁদতে পারবে না। তুমিই বলেছো আমি সাথে থাকলে তুমি সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে। তোমার আর দুর্বল হওয়া চলবে না নাফিয়া। তুমি যদি দুর্বল হও, কেঁদে ফেলো তাহলে আমাকে হারাবে। তুমি যতবার কাঁদবে আমি ততবার নিঃশেষ হতে থাকব। আমি তোমার অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি। তোমার সব দুঃখগুলোকে কেড়ে নিয়ে সুখ দিয়েছি তোমাকে। এবার বলো কাঁদবে? আমাকে কষ্ট দেবে? নাকি বাকিটা জীবন আমার সাথে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে কাটিয়ে দিবে? চয়েজ তোমার। দূর্বল হবে নাকি আমার জন্য শক্ত হবে?”
আরিভের দৃঢ় বাক্যগুলো নাফিয়াকে কষ্ট দিল না বরং চিন্তিত করে তুলল। তার মস্তিষ্কে অপারেশনের ভয়ের চেয়ে বেশি আরিভকে কষ্ট দেওয়ার ভয় কাজ করছে। নাফিয়া অনুভব করল তার মাঝে ভয়ের লেশটুকু নেই। যা আছে সমস্তটাই আরিভের প্রতি চিন্তা। তার কথাগুলো মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিছু সময়ের ব্যবধানে নাফিয়া উঠে দাঁড়ায়। আরিভ আলমারি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় কাপড় বের করে হসপিটাল ব্যাগ রেডি করছে। নাফিয়া উঠে গেল। পিঠে হাত রাখল ব্যস্ত আরিভের। আরিভ ঘুরে তাকায়নি, সেভাবে থেকেই বলেছে,
-“আমি তোমার কান্না দেখতে চাই না, নাফি! আমার সহ্য হয় না। প্লীজ বাহিরে গিয়ে কেঁদে এসো।”
নাফিয়া আরিভের বাহু টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল। তার হাতে থাকা ব্যাগ টেনে নেয় নাফিয়া। পাশে রেখে আরিভের আঙুলে ভর করে কাছে আসে। একহাতে লোকটিকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরা সম্ভব হয়না। তারপরও চেষ্টা করল। আরিভের উষ্ণ বুকে মাথা পেতে বলল,
-“দেখুন আমার ভয় একদম করছে না। ছোট্ট একটা অপারেশনইতো।”
আরিভ চমকায়। নাফিয়া কান্না করছে না, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক তার কণ্ঠস্বর। বরং নিজেকে শক্ত দেখাচ্ছে। আরিভ নাফিয়ার মাথায় হাত রাখল। নাফিয়া আদুরে ভঙ্গিতে বলে উঠল,
-“আমার ডান হাতটা তুলে আপনার গলায় রাখুন। আপনাকে পুরোপুরি জড়িয়ে ধরতে চাই, দুহাতে।”
আরিভ নাফিয়ার ডান হাতটা ধরল আলতো করে। ঠিক তখনই মস্তিষ্কে তীরের মত এসে বিধে গেল এই কথাটি, আজকের পর এই হাতটা সম্পূর্ণ থাকবে না। এই হাতের আঙুলের ভাঁজে আঙুল রাখা হবেনা, হাতের তালুতে চুমু খাওয়া হবেনা। আরিভের নিঃশ্বাস যেন আটকে আসার উপক্রম। নাফিয়াকে যা জানানো হয়েছে সেটি অর্ধ সত্য।
_________
আরিভের হাতটি খামচে ধরে আছে নাফিয়া। হাসপাতাল তার একদমই পছন্দের নয়। হাসপাতালের আশপাশ দিয়ে গেলেও সেই পুরোনো ভয় তাকে তাড়া করে। তবে আজ এসেছে, ভয় কাটিয়ে আরিভের কথা রাখতেই এখানে উপস্থিত। মনের মাঝে ভয় উঁকি দিচ্ছে বারেবারে। ঠিক ততবারই আরিভের হাতে চাপ পড়ছে। আরিভ বুঝল, নাফিয়ার আঙুলের ভাঁজে আঙুল রেখে আশ্বস্ত করলো তাকে।
পাশেই আছেন সিদ্দিক সাহেব এবং আতাউর সাহেব। রেশমা বেগম এবং শিরীন বেগমকে বাড়িতেই রেখে আসা হয়েছে। হাসপতালে অযথা ভিড় করার কোনো মানেই হয়না।
সিদ্দিক সাহেব মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
-“মা, একদম ভয় পাবে না। দেখো তোমার দুই বাবা এখানে আছে। আরিভও তোমার পাশে আছে। তোমার কোনো ভয় নেই।”
নাফিয়া মাথা দোলায় বুঝবার ভঙ্গিতে। বিড়বিড় করল,
-“ভয় তো যায় না, কি করবো?”
সিদ্দিক সাহেব আবার বললেন,
– “জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসে মা। এই পরিস্থিতিগুলো মানুষকে মজবুত বানায়। আজকের পর আমার মেয়ে আরও শক্ত হবে। আর তোমার হাত না….”
সিদ্দিক সাহেবের কথা কেটে আরিভ বলল,
-“বাবা, ওকে ক্যাবিনে নিয়ে যেতে হবে। আসুন, বাকি কথা ওখানেই হোক।”
সিদ্দিক সাহেব বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই নিলেন। কিন্তু আরিভের মনে হয়। সাবধানে থাকতে হবে, প্রতিটা বাক্য অতি সাবধানতার সাথে বলতে হবে নাফিয়ার সামনে। পুরো সত্যটা তার অজানা।
ক্যাবিনে নিয়ে আসা হলো নাফিয়াকে। ডক্টর এসেছেন চেক আপ করতে। কিছু টেস্ট এর জন্য ব্লাডও নিয়ে গেলেন। যতক্ষণ চেক আপ চলেছে ঠিক ততক্ষণ আরিভের দিকে চেয়ে ছিল নাফিয়া। একটা সেকেন্ডের জন্য নজর সরায়নি। এই মানুষটি তার ঢাল।
আরিভ সবকিছু ঠিকঠাক করে আতাউর সাহেব এবং সিদ্দিক সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
-“আপনারা বাড়ি চলে যান। আমি আছি নাফির সাথে।”
দুজনেই একত্রে নাকচ করে। কিন্তু আরিভ তাদের বুঝিয়ে বলল। একটি ক্যাবিনে এত মানুষ এলাও করেনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অযথা রাত জেগে এখানে বসে থাকার কোনো মানে হয়না। আরিভ বলল,
-“আগামীকাল ৮টায় চলে আসবেন।”
গড়িমসি করে বাধ্য হয়েই চলে গেলেন দুজনে। যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না। আরিভ নাফিয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঠিকঠাক করে নাফিয়ার পাশে এসে বসল হাসিমুখে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-“আ’ম প্রাউড অফ ইউ।”
নাফিয়া অবুঝ ভঙ্গিতে শুধায়,
– “কেন? কেন? প্রাউড কেন?”
-“নিজের ভয়কে দূরে সরিয়ে শুধু আমার জন্য তুমি অপারেশন করতে রাজি হয়েছো, তাই।”
নাফিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলো খানিকটা। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ পড়তে দিচ্ছেনা কিছুতেই। একটু সরে গিয়ে বলল,
-“আমার পাশে ঘুমোবেন।”
আরিভ জবাবে বলে উঠে,
– “বেড ছোট। তোমার সমস্যা হবে।”
-“উহু! একদম সমস্যা হবেনা না।”
“আমি সোফায় ঘুমিয়ে পড়ব, বউ। আপনি এখানে আরামে ঘুমোন।”
-“নাহ! আপনি আমার অভ্যাস খারাপ করে ফেলেছেন। আমার পাশেই ঘুমোতে হবে আপনার।”
-“আচ্ছা? তা শুনি, কি অভ্যাস খারাপ করলাম আপনার?”
-“জানেন না বুঝি? আপনার বুকে মাথা না গুঁজলে আমার ঘুম হয়না। আসুন, শুয়ে পড়ুন।”
কি অবলীলায় বলে ফেলছে কথাগুলো। আরিভের ঠোঁটের কোণে আপনাআপনি হাসির রেখা ফুটে উঠে। নাফিয়া আজকাল লজ্জা কম পায়। কাছে থাকতে চায় আরিভের।
-“আমি কাছে থাকলে কেমন অনুভব করো?”
সময় ব্যয় না করেই নাফিয়া জবাব দিল,
-“অন্যরকম স্বস্তি পাই। আগে সেটা পেতাম না। আপনি জড়িয়ে ধরলে আমার ঘুম আসে জানেন?”
ফিক করে হেসে উঠে আরিভ। বোকা মুখখানা দেখে মায়া হলো ভীষণ। জবাবে বলল,
-“ঘুম আসে? আমি ভাবলাম প্রেম প্রেম পায়? খুবই আনরোমান্টিক তুমি।”
-“বউদের রোমান্টিক হতে নেই। সেটা স্বামীদের ডিপার্টমেন্ট।”
-“আচ্ছা? তাহলে আমার ডিপার্টমেন্টে আমি কেমন স্টুডেন্ট? ফার্স্ট ক্লাস?”
-“আপনি একটা নির্লজ্জ স্টুডেন্ট!”
-“আরেকটু নির্লজ্জ হবো নাকি?”
নাফিয়ার মুখ কুঁচকে এল। কথার অর্থ বুঝবার সাথে সাথে আরিভের দুষ্টু মুখের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাল। শাসিয়ে বলল,
-“এটা হাসপাতাল। একদম অভদ্রতা করবেন না এখানে।”
হুমকিতে দমে গেল আরিভ। তবে হাসলো শব্দ করে। তার চেয়ে বয়সে ছোট মেয়েটি তাকে হুমকি দিচ্ছে।
_____________
আরিভের রাতটা কেটেছে নির্ঘুম। এক মুহূর্তের জন্য চোখ বুঁজতে পারেনি। সারারাত নাফিয়া আরাম করে আরিভের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়েছে এই হাসপাতালের ছোট্ট বেডে। বিড়ালছানার মত লেপ্টে ছিল তার দেহের সাথে। আরিভ সেই নিষ্পাপ মুখ দেখে কাটিয়েছে পুরোটা রাত। নানান চিন্তায় মগ্ন হয়ে কখন ভোরের আলো ফুটল, সেদিকে ইয়াত্তা নেই।
আরিভ উঠে গেল। রুম ভালোভাবে লক করে ডাক্তারের ক্যাবিনে গিয়ে হাজির হয়। খুব সকাল সকাল এসেছেন ডাক্তার। আজ সার্জারি আছে তার। একটু পরই নাফিয়াকে ফাইনাল চেকআপের জন্য নেওয়া হবে।
-“আপনার ওয়াইফ দেখছি ভীষণ স্ট্রং। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম সে অপারেশন করতে রাজি হবেনা।”
আরিভ তাচ্ছিল্য করে হাসল। বলল,
-“সে পুরো সত্যটা জানেনা ডক্টর।”
ডাক্তার অবাক হলেন। জানতে চাইলেন, -“মানে?”
আরিভের অসহায় মুখমন্ডল আর চিন্তা ভরা মস্তিষ্ক। মুখ নামিয়েই জবাব দিল,
-“নাফিয়া শুধু জানে ওর অপারেশন। কিন্তু হাত…”
বাকি কথা বলতে পারলো না আরিভ। ডক্টর বুঝে নিলে বাকি অংশ। তিনি বললেন,
-“আপনি ভুল করছেন। তাকে জানানো উচিত, আফটার অল এটা তার জীবন।”
-“তার জীবন আমার সাথে জড়িত।”
-“তারপরও মিস্টার আরিভ।”
-“আমি নাফিয়াকে সুস্থ রাখার জন্য যেকোনো রিস্ক নিতে রাজি। আমি ওর হাসবেন্ড, আমার অধিকার আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। তাই আমি এই সিদ্ধান্তে এসেছি যে, নাফিয়াকে ফুললি সেন্সলেস করা হবে অপারেশনের সময়। আর…”
-“আর?”
-“আরেকটা রিকোয়েস্ট করতে এসেছি।”
-“সেটা কি?”
-“আমাকে ওটিতে এলাও করবেন, প্লীজ। আমার বউটা ভয় পাবে নয়তো। আমি ওর পাশে থাকতে চাই।”
-“এটা কিভাবে সম্ভব মিস্টার আরিভ? আমরা এইভাবে কাউকে এলাও করতে পারি না ওটিতে।”
আরিভ হাত জোড় করল। কাতর কন্ঠে বলে উঠল,
-“প্লীজ স্যার! আই বেগ ইউ। আমার স্ত্রী ভয় পাবে। আমি ওকে সাহস দিতে চাই। দয়া করে না করবেন না।”
লোকটার অবস্থা নাজেহাল। কেঁদেছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ডক্টর বুঝে উঠতে পারলেন না কি করবেন? তারপরও বললেন,
-“আমি দেখছি ব্যাপারটা।”
-“প্লীজ ডক্টর।”
-“আমার অথরিটির সাথে কথা বলতে হবে।”
নাফিয়ার ফাইনাল চেকআপ চলছে। এখনও হাতটি ছাড়েনি নাফিয়া। কেমন যেন হাঁসফাঁস করছে। কিন্তু আরিভকে বুঝতে দিতে চাইছে না। ব্লাড প্রেশার লেভেল চেক করে তাকে রেডি করা হলো ওটির জন্য। নাফিয়া হাত খামচে ধরে বলল,
-“ভ.. ভয় করছে…”
-“আমি আছি, তোমার সাথেই আমি যাব। একদম ভয় পাবেনা।”
-“সত্যিই আপনি যাবেন?”
-“হ্যাঁ বউ।”
রেশমা বেগম অশ্রু ফেললেন কয়েকদফা। শিরীন বেগম সামলে নিলেন তাকে। আরিভ আশ্বস্ত করল বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে। সাদিফ আর জোহানও এসেছে।
অবশেষে অপারেশন থিয়েটারে হাজির হলো নাফিয়া। যত সময় পেরোচ্ছে, নাফিয়া ঠিক তত শক্ত করে আরিভের হাতটা মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রেখেছে।
ইনজেকশন পুশ করার সাথেসাথে নাফিয়া বলে উঠল,
-“আমি ঠিক হয়ে যাব তো?”
-“হবে বউ, অবশ্যই হবে। এই দেখো আমি তোমার পাশে। কিচ্ছু হবেনা। বিশ্বাস করো তো আমায়?”
-“ক… করি।”
-“আমি সবসময় আছি, প্রতি মুহূর্তে তোমার পাশে আছি।”
এনেস্থেসিয়ার প্রভাবে ধীরেধীরে নিস্তেজ হয়ে এলো নাফিয়ার শরীর। চোখ বুঁজে ফেলল। আরিভ হাত ছাড়ল না তার। সঙ্গেসঙ্গে কপালে ঝুঁকে চুমু খেল শক্ত করে। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু দানা। নিচু স্বরে বলল,
-“আ’ম সরি জান। আ’ম রিয়েলী সরি।”
চলবে….