#বোকা প্রেমিকা
#লুৎফুন্নাহার আজমীন
#পার্ট১৫
প্রতিদিন সেই একই ভাবে বর্ষণকে ঘুম পাড়িয়ে জল রিশাদ আর সাদের ওপর নির্যাতন চালাতো।না খেয়ে থেকে নির্যাতন সহ্য করতে করতে করতে রিশাদ,সাদ দুর্বল হয়ে পরে।জল এমনটাই চেয়েছিলো।সে তার শ্বাশুড়ির থেকে শুনেছে চলে যাওয়ার আগে বলে বর্ষা ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতো না। ক্ষতস্থান গুলোতেও পচন ধরেছে।এই মুহুর্তে রিশাদ আর সাদের কাছে মৃত্যুই শ্রেয়।প্রতিটি মুহুর্তে ওরা নিজেদের মৃত্যু কামনা করছে।একটা মেয়ে যে এত ভয়ানক আর নির্দয় হয়ে পারে জলকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না রিশাদ সাদ।দেড়টা মাস ধরে জল অনেক নির্যাতন চালিয়েছে ওদের ওপর।জলেরও মনে হচ্ছে এবার ওরে মুক্তি দেওয়া দরকার।বাজার থেকে ধারালো ছুরি কিনে এনেছে জল।চকচকে ধারালো ছুরি।আলো পরলেই তার প্রতিফলন হয় ছুরিতে।
রাত তিনটা তেরো মিনিটে জল রিশাদের গলায় ছুরি চালিয়ে ওকে মুক্তি দেয়।চোখের সামনে বন্ধুকে এভাবে খুন হতে দেখে শিউরে ওঠে সাদ।গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে করতে সাদের চোখের সামনে মারা যায় রিশাদ।
” দেখেছিস?মৃত্যু কত ভয়ানক?”
কথাটা বলেই জল সাদের গলায় ছুরি চালিয়ে দেয়।ছটফট করতে করতে দুনিয়া ছাড়ে সাদ।জল গুনে গুনে রিশাদ,সাদের দেহকে ছয় টুকরা করে।রাতের আধারে বাগানে দেহাংশ গুলো পুঁতে দেয়।পুঁতে দেওয়া দেহাংশগুলোর ওপরে রক্ত লাল গোলাপ গাছ লাগায় জল।চারাগুলোর প্রতিটাতেই একটা করে গোলাপ ফুটে ছিলো।জল পৈশাচিক কন্ঠে বলে,,,
” জানোয়ার গুলোর রক্ত শুষে নিয়ে তোরা আরও লাল হয়ে ওঠ।আরও সুন্দর হয়ে ওঠ।ভয়ংকর সুন্দর।”
_____________
বর্ষণ জলের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন হয়নি।জল আগের মতোই বর্ষণের সাথে রুক্ষ আচরণ করে।এরমধ্যে জলের মা বাবা মারা যায়।জল খুব ভেঙে পরে।বাবা মারা যাওয়ায় জল মানসিক ভাবে খুব ভেঙে পড়ে।জলের বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী জলের বাবা মারা যাওয়ার পরে শাড়ি গয়নাগাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।বাবা মনে হয় বুঝতে পেরেছিলেন তার সময় নেই খুব একটা। মারা যাওয়ার আগে তিনি জলের জন্য একটা চিঠি লিখে গিয়েছিলেন।চিঠিটির প্রতিটা কথায় জল বাবার কাজের জন্য অনুতপ্ততা অনুভব করতে পারে।
ঠিকই বলতে তুমি।আমাদের অতীতটা সুন্দর ছিলো।খুব সুন্দর।অশান্তির কোনো ছায়া ছিলো না আমাদের জীবনে।আমি ফিরোজাকে বিয়ে করেই অশান্তির সূচনা করি।আমার জন্যই তোমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়।ফিরোজাকে বিয়ে করে যে আমি খুব সুখে ছিলাম তা কিন্তু নয়।অপরাধবোধে প্রতিটা রাত আমি ধুকে ধুকে মরেছি আর মরছিও।আমি জানতাম তুমি আমার জন্যই বাসায় থাকতে না।বেশিদিন বাঁচবো না মনে হয়।আমি মারা যাওয়ার পর দয়া করে তুমি এ বাড়িতে চলে এসো।
ইতি
তোমার বাবা নামক অপরাধী প্রাণী
জলের বাবার মৃত্যুর খবর শুনে জলের মা স্ট্রোক করে মারা যান।জল তার মাকে বাবার কবরের পাশে দাফন করার প্রস্তাব দেয়।কিন্তু জলের মায়ের স্বামী,আর জলের মামারা তাতে না কোচ করেন।জলের সেদিন খুব রাগ হয়।বিশেষ করে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ওপর।সেদিন রাতের আধারেই জল জলের মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকে খুন করে।বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে।আর মানুষজন ভাবে স্ত্রী হারানোর শোকে সে মারা গেছে।এই রকম পরিস্থিতিতে জল বর্ষণের সহযোগিতা কাম্য করেছিলো।কিন্তু সে পায় বিপরীত জিনিসটা।বর্ষণ আবার নতুন করে আদিবার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে এবং সফলও হয়।জলও বিষয়টা জেনে ফেলে।একেরপর এক এমন ধাক্কা পাওয়ায় জল মানসিকভাবে আরও বিকারগ্রস্থ হয়ে পরে।পাগলামি বাড়তে থাকে।তবে তা শুধু অন্ধকার ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো।বাবার অনুরোধ রাখতে জল পুরোনো বাড়িতে ফিরে যায়।জলের ঘরের পাশে এক বিশাল লাইব্রেরি ছিলো।জল বেশিভাগ সময় সেখানেই কাটাতে লাগে।এদিকে বর্ষণও নতুন ভাবে আসক্ত হয়ে যায় আদিবাতে।যা জল কিছুতেই মেনে নিতে পায় না।এভাবে জিততে জিততেও হেরে যাবে জল?তাও আদিবার কাছে?
_______
আজ ছুটির দিন।বর্ষণ বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে।জল সকালে উঠে ঘর ঝাড়ু দিতে গিয়ে কৌতুহল বশত বর্ষণের ফোনটা নেয়।ইনবক্সে ঢুকে আদিবা বর্ষণের চ্যাট পড়ে।চ্যাট পড়ে জানতে পারে আজ ওরা দেখা করতে যাবে। আগুনে ঘি ঢালার মতো জলের রাগ ক্ষোপ বেড়ে যায়।ফোনটা বর্ষণের পাশে রেখে জল নিজের ঘরে চলে যায়।আজ জল এর শেষ দেখেই ছাড়বে।এভাবে জিততে জিততে হেরে যাবে জল।সারাজীবন জল হেরেই এসেছে।শেষ বেলায় এসে জল ভেবেছিলো সে আদিবার কাছে জিতে গেছে। কিন্তু না সে হেরেই গেছে।আর হারতে আছেই সে।জল নিজের ঘরে গিয়ে চার পাঁচটা সিগারেট শেষ করে।এই প্রথম সে একসাথে এতগুলো সিগারেট খেলো।
বেশ স্বাভাবিক আচরণই করলো জল বর্ষণের সাথে।বর্ষণ তা আমলে নেয় নি।জলের স্বাভাবিক অস্বাভাবিক আচরণে সে বিরক্ত হয়ে গেছে।তাই এখন সেগুলোকে এড়িয়ে চলে।
বিকালের দিকে জল নিজের ঘরে গিয়ে শোয়।বর্ষণ এরই অপেক্ষায় ছিলো।বর্ষণ আলমারি থেকে জলের পছন্দের শার্টটা পড়ে।জল সজাগ ছিলো।পাশের ঘরে থাকায় বর্ষণের প্রতিটি পদক্ষেপ জল শব্দের মাধ্যমে আন্দাজ করতে পারে। বর্ষণ বেরিয়ে গেলে জলও ওর পেছন গাড়ি নিয়ে বের হয়।
ভার্সিটির কাছে একটা নির্জন মাঠ আছে।বর্ষণ আদিবা সেখানেই দেখা করে।আদিবা আগে থেকেই সেখানে বর্ষণের অপেক্ষায় ছিলো।বর্ষণকে দেখে সে উঠে দাঁড়ায়।
” কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো।”
” উইল ইউ মেরি মি আদিবা?”
হাত ধরে বলে বর্ষণ।আদিবা আকাশ থেকে পড়ে।ঝটকা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,,
” হোয়াট?তুমি বিবাহিত। তোমার বউ আছে।আমি কেন তোমায় বিয়ে করবো?”
” হ্যাঁ আমি বিবাহিত।আমার বউ আছে।কিন্তু আমি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।”
” একটা মেয়েকে তুমি বিনা কারণে কেন ডিভোর্স দেবে?একটা ডিভোর্সি মেয়ের সমাজে থাকা কতটা কষ্ট কর তুমি জানো?”
” ও সমাজ থেকেই বিচ্ছিন্ন।ওর মতো সাইকো মেয়ের সাথে সংসার করা যায়?”
” সেটা তোমার বিয়ে করার আগে ভাবা উচিত ছিলো বর্ষণ।একটা মেয়ের সংসার ভাঙার কারণ আমি কিছুতেই হতে পারবো না।”
” ওর সংসার ভাঙার কারণ ও নিজেই।এক বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।এখন পর্যন্ত ও আমায় স্পর্শ পর্যন্ত করতে দেয় নি ওকে।আমার চাহিদা নেই?”
” তো তুমি কি আমায় তোমার শারী* রিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিয়ে করছো?”
” তুমি শুধু আমার শারী*রিক নও মানসিক চাহিদাও আদিবা।”
” এসব তোমার মুখে মানায় না বর্ষণ।আমাকে বলা ত না ই ই। এগুলো তুমি জলকে বলো।আমাকে নয়।”
” প্লিজ আদিবা আমায় ফিরিয়ে দিও না।আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছি।”
আদিবার হাত ধরে অনুরোধ করে।এরই মধ্যে জল ওদের মাঝে আসে।দুজনকে এভাবে দেখে জলের মাথায় রক্ত চড়ে যায়।ট্রাংকুলাইজার সাথেই নিয়ে এসেছিলো জল।রাগে তৎক্ষনাৎ বর্ষণের ঘাড়ে ইঞ্জেকশন বসিয়ে ট্রাংকুলাইজার পুশ করে দেয়।বর্ষণ অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।আদিবা বেশ ভয় পেয়ে যায়।ও তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই জল আদিবাকেও অজ্ঞান করে ফেলে। দুজনকে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তোলে জল।
দুজনকে লাইব্রেরিতে নিয়ে যায় জল।চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধে বর্ষণকে।তারপর মুখে পানির ছিটা দিয়ে সে বর্ষণের জ্ঞান ফিরায়।চোখ মেলে বর্ষণ নিজেকে লাইব্রেরিতে আবিষ্কার করে।সামনে আদিবা বুকশেলফে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।পাশে জল।বর্ষণকে দেখেই জল মুচকি হাসে।বর্ষণ ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগে।
” কি হয়েছে সোনা?”
বর্ষণের দিকে ঝুঁকে বলে জল।বর্ষণ রাগে গজগজ করছে কিন্তু কোনো কথা বলছে না।জল আবার জিজ্ঞেস করে,,,
” এনি প্রবলেম?”
” তুমি আদিবাকে ওভাবে রেখেছো কেন?”
” রেখেছি রেখেছিই।তোমার কি?ও তো তোমার কিছু হয় না।অহ ভুলেই তো গেছি।ও তোমার প্রেমিকা।প্রেমিকা এভাবে পরে আছে দেখেই দুঃখে কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে?আমি যে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি কই তখন তো আমার জন্য এভাবে কষ্ট পাও নি!”
বর্ষণ জলের কথার উত্তর খুঁজে পায় না।জল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।বুকে দুঃখগুলো পাথর চাপা দিয়ে আবার বলে জল,
” দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে গেছো আমায়।ঠকিয়ে গেছো আমায়।কিচ্ছু বলিনি।বিয়ে করে নিয়েছিলাম নিজের করে তোমায় পাওয়ার জন্য।কিন্তু তাতেও আমি ব্যর্থ।তুমি শুধরে যাও নি।অনেক সুযোগ দিয়েছি তোমায়।আজ হয় আমি থাকবো নয় আদিবা থাকবে।কাকে চাও তুমি?”
বর্ষণ নিশ্চুপ।জল ধারালো ছুরি বের করে।চোখের পলকেই ছুরিটা চালিয়ে দেয় আদিবার গলায়।ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগে।বর্ষণ চিৎকার করে ওঠে।আসতে চায় সে আদিবার কাছে কিন্তু সে ব্যর্থ।জল যে তাকে শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে! আদিবার দেহটা শান্ত হয়ে গেলে জল ওর শরীর থেকে চামড়া আলাদা করে।বর্ষণ এই দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারায়।চামড়া ছাড়িয়ে জল এইবারও আদিবার দেহটাকে ছয় টুকরা করে।বর্ষণের সামনে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখে দেহাংশ গুলো।যেখানে বর্ষণ হেমোফোবিয়ায় আক্রান্ত।সামান্য রক্ত দেখলেই সে ভয় পেয়ে যায়।সেখানে তাজা রক্ত ঝড়া প্রিয় মানুষের দেহাংশ দেখে বর্ষণ প্যানিক অ্যাটাক করে।জল আবারও পানির ছিটা দিয়ে বর্ষণের জ্ঞান ফিরায়।বর্ষণের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,,,
” ডু ইউ লাভ মি?”
” আই হেট ইউ।আমি ঘেন্না করি তোমায়।তুমি এত নিচে নামতে পারো?ছি জল ছি।”
তীব্র ঘৃণা নিয়ে বলে বর্ষণ।জল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।বর্ষণের বাঁধন খুলে দেয় সে।রক্ত মাখা ছুরিটা বর্ষণের হাতে দিয়ে বলে,,,,
” আচ্ছাহ!যেহেতু তুমি আমায় ঘৃণায়ই করি তাই আমি মনে করি আমার বেঁচে থাকার কোনো দরকার নেই।কিল মি বর্ষণ।”
বর্ষণ চুপ।ওর হাত পা কাঁপছে।জল চিৎকার দিয়ে বলে,,,
” কাম অন বর্ষণ হিট মি,কিল মি।”
বর্ষণ এবারও চুপ।জল ছুরিটা বর্ষণের হাত থেকে নিয়ে পেটের ভেতর ঢুকিয়ে দেয় জল।ক্ষতস্থান দিয়ে স্রোতের মতো রক্ত বের হতে লাগে।তা দেখে বর্ষণ আবার প্যানিক অ্যাটাক করে।জল সে ক্ষত নিয়েই নিজের ঘরে যায়।গিয়ে ঘরের দরজাটা আটকে দেয় জল।
পরের দিন বর্ষণের জ্ঞান ফিরে।চোখ মেলে কাজের মহিলা,পুলিশকে দেখতে পায় বর্ষণ।জ্ঞান ফিরতেই কাজের মহিলার প্রশ্নের সম্মুখীন হয় বর্ষণ।
” ভাইজান!আপনে অজ্ঞান হইছিলেন ক্যা?আফা কই?আর এইন্না কার শইলের টুকরা?”
মহিলা আরও কিছু জিজ্ঞাস করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অফিসার তাকে থামিয়ে দেয়।কনস্টেবল এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় বর্ষণের দিকে।বর্ষণ ঢোক ঢোক করে সব পানি খেয়ে নেয়।তারপর পুলিশ তার কাছে গতকালের পুরো ঘটনা শুনতে চায়।বর্ষণ সব বলে দেয়।সবটা শোনার পর পুলিশ জলকে খুঁজতে লাগে।সারা লাইব্রেরি খুঁজে পুলিশ বর্ষার সেই ডায়েরীটা পায়।মানুষ নাকি গোপন অনেক কথা ডায়েরীতে লিখে রাখে।তাই পুলিশ তথ্য পেতে ডায়েরিটা পড়তে লাগে।পুলিশের পড়া হয়ে গেলে বর্ষণকে দেয় তারা ডায়েরীটা পড়ার জন্য।
৯-১১-২১
আজ রিশাদ,সাদকে খুন করলাম।বর্ষার ধর্ষকদের খুন করলাম।খুবই নির্মম ভাবে মেরেছি।যাতে বর্ষার কষ্ট গুলো ওরা একটু হলেও অনুভব করতে পারে।তারপর কেটে টুকরো টুকরো করে পুঁতে দিয়েছি।সেগুলোর ওপর লাল টুকটুকে গোলাপের চারা লাগিয়েছি।ওদের রক্ত শুষে গোলাপগুলো আরও সুন্দর হয়ে উঠুক।
১৫-১১-২১
বাবাকে হারালাম আজ।যদিও অনেক রাগ ক্ষোপ ছিলো মানুষটার ওপর।তারপরও বাবা তো!
১৭-১১-২১
বাবা-মার মধ্যে বিচ্ছেদ হলেও একেঅপরের প্রতি ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছিলো না বোধহয়। তাই মাও আমায় একা করে বাবার কাছে চলে গেলো।বাবা পাশে মাকে দাফন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের দ্বিতীয় স্বামী তা মানে নি।তাই শেষ করে দিই লোকটাকে।বালিশ চাপা দিয়ে মারি অথচ মানুষ ভেবেছে আমার মায়ের শোকে লোকটা মারা গেছে।হাস্যকর।
২০-১২-২১
আজ হয়তো আমার শেষ দিন এই দুনিয়ায়।পেটের ক্ষতস্থান থেকে অনবরত রক্ত ঝড়ছে।বিশ্বাস করেছিলাম বর্ষণকে কিন্তু ও এর ভার সইতে পারলো না।আদিবার সাথে সে বিয়ের পরও রিলেশনটা কন্টিনিউ করে।ভাগ্যিস সব জেনেছিলাম।হাতেনাতে ধরেছি দুটোকে।আদিবাকে মেরে বর্ষণকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ও আমায় ভালোবাসে কিনা।ও না বলেছে।মা-বাবার পরে ওকেই আপনজন ভেবেছিলাম সে যখন আমায় ঘৃণা করে তাহলে বেঁচে থাকার আমার দরকারটা কি?তাই শেষ করে দিলাম নিজেকে।ভালো থেকো বর্ষণ।আর আমায় ক্ষমা করে দিও।
ডায়েরীটা পড়ে বর্ষণ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।বর্ষার খুনীদের জল এভাবে শাস্তি দিলো তারপরেও বর্ষণ জলের সাথে এমন আচরণ করেছে।একটু ভালো থাকার জন্য সেই আদিবার হাত ধরতে চেয়েছিলো।কখনো ভেবে দেখেনি জল আদো ভাও আছে কি না!আজ এই পরিস্থিতির জন্য বর্ষণই দ্বায়ী।আদিবাকেও দুনিয়া ছাড়তে হলো জলকেও।শুধুমাত্র বর্ষণের জন্য।
পুলিশ রক্তের ছাপ অনুসরণ করে জলের ঘরের দিকে যায়।দরজা বন্ধ।ভাঙতে হবে।দরজা ভেঙে পুলিশ যা দেখে তারজন্য পুলিশ মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।পুরো ঘর রক্তে মাখামাখি।দেয়ালে লেখা জল,মা-বাবার সুখের সংসার।দুটো কংকালের মাঝখানে ঘুমিয়ে আছে জল।কংকাল দুটো জলের বাবা-মায়ের।ছোটবেলার মতো বাবা-মায়ের মাঝখানে ঘুমিয়ে আছে জল।বর্ষণ হুমড়ি খেয়ে পড়ে মৃত জলের ওপর।পুরো শরীর ঠান্ডা জলের।বর্ষণ জলকে জড়িয়ে কাঁদছে। কনস্টেবল বর্ষণকে সামলায়।বর্ষণ কাঁদছে।চিৎকার করে কাঁদছে।কিন্তু কান্নার আওয়াজ কারও কানে পৌঁছাচ্ছে না।না জলের কানে না আদিবার কানে।
সমাপ্ত