#ব্রেকাপ_নাম্বার_সাতশো_তিন
#রূবাইবা_মেহউইশ
শেষ পর্ব(১৮+ সতর্কতা)
বিয়ের এখনো মাস পূর্ণ হয়নি রেশমির। হিসেব মতে সে এখনো বাড়ির নতুন বউ কিন্তু সেঁজুতির জন্য বাড়ির যে অবস্থা তাতে আপাতত তার নিজেকে বাড়ির নতুন বউ কম পুরনো পাকা গিন্নি ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। সংসার সামলানো থেকে সেঁজুতির জন্য বিয়ের যা কাজ, পাত্রপক্ষের সাথে কথা বলা, দেখা-সাক্ষাৎ সব দিকেই মনযোগ রাখতে হচ্ছে। এতে অবশ্য সে পরিবারের মধ্যমণি হয়ে উঠেছে এ কদিনেই। সাজ্জাদ বউ বলতে অন্ধ, শ্বশুর বউমা বলতে অজ্ঞান আর বিছানায় পড়ে থাকা শ্বাশুড়িরও অন্ধের যষ্টি হয়ে গেছে সে। শুধুমাত্র সেঁজুতির নজরে বিষকাঁটা। মন থেকে রাগ উবে গেছে সেঁজুতির কিন্তু সূর্যের সাথে কথা বলা ইগোতে বাঁধছে। এদিকে রেশমিও উঠে পড়ে লেগেছে পাত্র জোগাড়ে। ডাক্তার পাত্র সেই যে দেখে গেছে তারপর আর ফিরে আসেনি। পরে অবশ্য কর্পোরেট পাত্রের সন্ধান মিলেছে আর এটাই ফাইনাল। বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গেছে। হাতে মাত্র পনেরোদিন থাকায় সাজ্জাদ আর তার মা মিলে আত্মীয়ের লিস্ট করছে। সাজ্জাদের বাবা একাই লিস্ট অনুযায়ী দাওয়াত সারবেন। আর মেয়ের সকল কেনাকাটা, পার্লারের দৌড় সব রেশমি দেখছে। সেঁজুতির রাগে গা কাঁপছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই রেশমি এসে বলে গেছে, ‘ নাশতা করে তৈরি হও ননদিনী আমরা আজ পার্লারে যাবো।’
‘দূর হও আমার সামনে থেকে।’ দাঁত কিড়মিড়িয়ে রাগ জাহির করলো সে। বাবার সামনে ইনিয়েবিনিয়ে অনেক বলেছে এই বিয়ে ঠিক না করতে। মা নাছোড়বান্দা কিছুতেই এবার হাল ছাড়বেন না। নিজের অসুস্থতার অভিনয় করে বাবাকে আটকে দিয়েছে। এখন বাবা শুনছেই না তার কথা। অনেকটা বাধ্য হয়েই রেশমির সাথে পার্লারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল সে। রেশমিও চুপিচুপি সূর্যকে মেসেজ সেন্ড করলো, ‘সেঁজুতি পার্লারে যাচ্ছে রূপচর্চা করতে। বিয়ে তো কদিন পর।’
মেজাজ যেটুকু থম ধরা আকাশ হয়ে ছিলো সেটাও নষ্ট হয়ে গেল সূর্যের। সেও বাইক নিয়ে গেল রেশমির বলা পার্লারের সামনে।
মাথার ওপর গনগনে সূর্যের তাপে মগজ গলে যাওয়ার উপক্রম৷ সেঁজুতিরা এসে পৌছানোর আগেই এসে উপস্থিত সূর্য। আশেপাশে দাঁড়ানোর মত অনেক দোকানপাট আছে, শপিংমল আছে অথচ সূর্য ইচ্ছে করেই রাস্তার পাশে রোদ মাথায় করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সে আজ রোদের উত্তপ্ততার তেজে নিজের রাগকে দ্বিগুণ করার প্রতিজ্ঞা করেছে। রেশমিরা এসে পৌঁছুলো প্রায় বিশ মিনিট পর। ততক্ষণে সূর্যের ধারালো ফর্সা মুখটা লাল বর্ণের হয়ে গেছে, চোখ দুটোতে হলদেটে আগুনের ছাপ। বাড়ির গাড়িতে করে এসেছে সেঁজুতিরা। গাড়ি চিনতেই সূর্য এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা টানলো যে পাশে সেঁজুতি বসা।
‘বেরিয়ে আয়।’
সূর্যের এমন আকস্মিক সুম্মুখে আসা আর বলা বাক্য সেঁজুতিকে কিছুটা ভড়কে দিলো। সে একবার তাকালো সূর্যের দিকে। ভয়ে আঁতকে উঠল ভেতরটা তার। এমন অগ্নিরূপ সূর্যকে সে শেষ কবে দেখেছিলো ঠিক মনে করতে পারলো না। খুব সম্ভব অনার্সে ভর্তি হবার পর এক ছেলে সেঁজুতিকে প্রপোজ করতে এসে হাত ধরেছিলো। আর তখন সূর্য আচমকা সেঁজুতির হাত থেকপ সেই ছেলের হাত ছাড়িয়ে এভাবে তাকিয়ে ছিলো কয়েক সেকেন্ড তারপরই তো কি অঘটনটাই না ঘটালো। এক ক্যাম্পাস লোকের সামনে ধুমধামে মেরেছে ওই ছেলেকে। সে যেন বাঘের থাবা ছিলি নিরিহ মৃগছানার ওপর। সেঁজুতি গাড়ি থেকে বের হলো। ততক্ষণে রেশমিও বেরিয়েছে ; সে আবার বিশেষ অভিনয়ের প্রকাশ ঘটিয়ে প্রশ্ন করেছিলো, ‘আরেহ সূর্য তুই এখানে! কেমন আছিস ভাই?’
সূর্য পাত্তা দিলো না বোনের অভিনয়কে। সে সেঁজুতিকে আবার বলক, ‘বাইকে বস।’
‘বসবো না তুই বললেই হলো! দূর হ আমার চোখের সামনে থেকে।’
সেঁজুতির কথায় যেন তপ্ত মগজে আরেক দফা আগুন পড়লো। সে গর্জন করে উঠলো, ‘একটা কথা বলবি তো এই পাবলিক প্লেসেই তোকে খু/ন করে ফেলপ যাবো।’
রেশমি ভয় পাওয়ার মত মুখটা করে বলল, ‘কি হয়েছে ভাই তুই এমন করছিস কেন? যাও সেঁজুতি শুনে আসো আমার ভাইটা এমন করছে কেন?’
সেঁজুতি চুপচাপ বাইকের কাছে যেতেই সূর্যও বসলো বাইকে। মিনিট বিশেকের মধ্যে তারা পৌঁছে গেল বান্ধবী বিদিশার বাড়ি। বিদিশা তাদের কলেজ ফ্রেন্ড। ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেই তার বিয়ে হয়ে গেছে জন্মতিথি অনুযায়ী কি যেন সমস্যা দেখা দেওয়ায়। বিদিশা যাত্রাবাড়ী একটু ভেতরের দিকে থাকে। সূর্য বোধহয় আগে থেকেই কথা বলে রেখেছে বিদিশার সাথে। কলিংবেল বাজাতেই বিদিশা হাসিমুখে দরজা খুলে বলল, ‘চল চল ভেতরে তোদের রুম গুছিয়ে রেখেছি।’
বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো সেঁজুতি।
‘রুম গুছিয়ে রেখেছিস মানে? আর জিজু কই?’
‘তুই কি তোর জিজুর সাথে ডেট করতে আসছিস?’ বিদিশা হাসতে হাসতে বলল কথাটা। সেঁজুতি চমকে তাকালো সূর্যের দিকে। তারা ডেট করবে এজন্য নিয়ে এসেছে এভাবে বকে ধমকে! মাথা ভনভন করছে তার সূর্যের আচরণ কিছুই বুঝতে পারছে না। সূর্য আগেই ভেতরে ঢুকে বিদিশার গেস্ট রুমে ঢুকে গেল। এই ফ্ল্যাট বাড়িতে বিদিশা আর তার বর থাকে। শ্বশুর শ্বাশুড়িরা সবাই শিলিগুড়ি থাকে। তার বর ইন্ডিয়ান, কাজের সুবাদে এখানে আছে বছর কয়েক হলো। বিদিশারা বাঙালি তার বর কলকাতার বাঙালি সে হিসেবে দু বাংলাতেই তার যাতায়াত নিয়মিত। অনেকটা এ কারণেই বন্ধুদের সাথে যোগাযোগটা তার কম। কিন্তু আজকের সাক্ষাৎ সেঁজুতির জন্য বন্ধু আড্ডার নয় ডা বেশ বুঝতে পারছে। সূর্য ভেতর থেকে ডাকলো, ‘এ ঘরে আয় সেজুতি। বিদিশা পারলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিস তো।’
‘যা তুই আমি পানি নিয়ে আসছি’ বলেই বিদিশা মেইন দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরের দিকে গেল। শ্লথ পায়ে সেঁজুতিও গেল সে ঘরে যেখানে সূর্য।
গেস্ট রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সূর্য৷ সেঁজুতি ঘরে ঢোকা মাত্রই সে দরজা লাগাচ্ছিলে তখনি বিদিশা এলো পানি নিয়ে৷ সূর্য পানির গ্লাস নিয়ে বলল, ‘পরে দরজা খুলবো ডাকাডাকি করবি না।’ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল বিদিশা সূর্যের কথায়। টিপ্পনী কেটে বলল, ‘কি করবি রে দরজা লাগিয়ে! হায় ভগবান তুই কি এখনই সব করবি? প্রোটেকশন এনেছিস নাকি আনিয়ে দেবো?’
‘থাপ্পড় খাবি! ভাগ সামনে থেকে সব গুলা হারামি।’ ধমকে সূর্য দরজা লাগিয়ে দিলো। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেঁজুতি। কি বলবে বা করবে ভাবার আগেই সূর্য প্রশ্ন করলো, ‘ পাত্র পছন্দ হয়েছে?’
‘কিসের পাত্র?’ সূর্যের ধারালো, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কথা বলতে গিয়ে কেঁপে উঠলো সেঁজুতি। কি ভয়ানক চাহনি এই সূর্যের! যেন এক্ষুনি তাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিবে।
‘কোন পাত্র জানিস না? কার জন্য পার্লারে যাচ্ছিলি জানিস না?’
‘আমি দেখিনি পাত্রকে।’
‘না দেখেই বিয়ে করছিস? বাহ্ বাবা -মায়ের বাধ্য মেয়ে। আর আমার কথা কি ভেবেছিস? প্রেমই তো করেছিস এখন ব্রেকাপ কি মূল্য এই সম্পর্কের তাই না রে! এজন্যই বুঝি কাছে আসতে দিসনি কখনো? জড়িয়ে ধরা বারণ, ঠোঁটে ঠোঁট ছোয়ানো এমনকি হাতে হাত রেখে রোমান্টিকভাবে হাঁটারও সুযোগ দিস নি। কারণ, তোর তো প্ল্যান আগেই করা বিয়ে করবি তো বাপ মায়ের পছন্দের ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ারকে৷’
‘সূর্য! কি আবোলতাবোল বলছিস এগুলো?’ সেঁজুতির চোখে পানি চিকচিক করছে। ভেতরে বুঝি কোন আগুনের হলকা লাগলো এই মুহুর্তে। কি বলল সূর্য তাকে এগুলো! সে তো শুধু বিয়ের আগ পর্যন্ত পরিশুদ্ধ বন্ধুত্বটাকে চলমান রাখতে চেয়েছিলো৷ অভিমান হলো খুব আজ তার। সবসময় যে মানুষটা তার রাগ, জেদ বুঝতে পারে আজ সে তার মনের সৎ ইচ্ছেটাকে অসৎ বলে দিলো!
সেঁজুতি অভিমানে ভার হয়ে আর দাঁড়াতে চাইলো না। সে দরজার দিকে এগিয়ে লক খুলতে গেলেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো সূর্য।
‘কেন করছিস এমন তুই? আমরা তো কখনো এভাবে বিচ্ছেদ করবো বলে সম্পর্কে জড়াইনি সেঁজুতি। প্রতিজ্ঞা করেছিলি না শেষ সময় পর্যন্ত সাথে থাকবে তাহলে এখন কেন অন্য কাউকে কথা দিয়েছিস? এ বিয়ে হলে আমার মরা মুখ দেখতে হবে তোকে….’
সূর্যের হাত ছাড়িয়ে উল্টো ফিরে এবার সেঁজুতিই জড়িয়ে ধরলো সূর্যকে৷ দু পা উঁচিয়ে সূর্যে গলা পেঁচিয়ে ধরে তার ঠোঁটে ঠোঁট বসালো। দু চোখের পাতা বুঁজে টপাটপ গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা বেদনার তপ্ত জল। ছয়শো ত্রিশ নাম্বার ব্রেকাপের সমাপ্তি এখানেই হয়ে গেল সূর্য- সেঁজুতির৷
সন্ধ্যের পর থেকে সাজ্জাদের ঘরের সামনে ঘুরঘুর করছে সেঁজুতি। কোন ভাবেই রেশমিকে একা পাচ্ছে না সে। রাতের খাবারের পর বলল, ‘ভাবী আমার ঘরে একটু আসেন।’
রেশমি সব কাজ গুছিয়ে সেঁজুতির ঘরে যেতেই সেজুতি দরজা আটকে দিলো। রেশমি অবশ্য তাতে অবাক হলো না তেমন৷ সেঁজুতি বলল, ‘আপনি তো জানেন সব। আমি আর সূর্য দুজন দুজনকে কতোটা ভালোবাসি। প্লিজ ভাবি কিছু একটা করে বিয়েটা ভেঙে দিন। আমি জানি আপনি চাইলেই সব পারবেন।’
‘এসব কি বলছো সেঁজুতি? আর মাত্র চৌদ্দ দিন বাকি বিয়ের। দাওয়াত অলরেডি দেওয়া হয়ে গেছে অনেককে। আর তোমার মায়ের অবস্থা দেখেছো, বিয়ে ভাঙলে বাড়ির পরিস্থিতি কি হবে ভেবে দেখেছো?’
রেশমি কথা গুলো বলতে বলতে বাঁকা চোখে দেখছিলো সেঁজুতির ছটফটানো। সেঁজুতি অধৈর্য্য গলায় বলল, ‘কিছু হবে না ভাবী। আপনি ঠিক সামলে নিবেন আমি জানি।’
‘সূর্যের সাথে ব্রেকাপ করে অন্য কাউকে বিয়ে করার মত হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিলো। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আই এম স্যরি ডার্লিং।’
নির্লিপ্ত এক ভাব ধরে বেরিয়ে গেল রেশমি। সেঁজুতি সাথে সাথে সূর্যকে ফোন দিয়ে সবটা বলল। সূর্য ফোন দিলো রেশমিকে কিন্তু সে কল রিসিভ করলো না। উল্টো আজ সাজ্জাদের দিকে একটু অধিক মনযোগ দিয়ে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলো। রাত বাজে এগারোটার বেশি সাজ্জাদও মুখিয়ে ছিলো বউয়ের আদরের জন্য। কিন্তু বেচারার কপালে দুর্ভোগ তো বিশেষ ভাবে এসেছে বিয়ের রাত থেকে। সূর্যের ফোনকল বন্ধ হওয়ার নাম গন্ধ নেই। প্রথমে রেশমি ফোন সাইলেন্ট করে দিলো। কল রিসিভ না হওয়ায় মেসেজও দিলো অনেকগুলো। বোনের পক্ষ থেকে রেসপন্স না পেয়ে সে সাজ্জাদের ফোনে কল দিলো। অগ্যতা কল ধরতেই হলো রেশমির। ফোন নিয়ে বারান্দায় গিয়ে কথা বলতেই ছোট খাটো একটা তুফান বয়ে গেল দু ভাইবোনের মধ্যে। সে রাত সূর্য আর সেঁজুতির কাটলো নির্ঘুম৷ দুজনে বুদ্ধি করলো পালিয়ে যাবে। বিধিবাম, রেশমি অতি চালাক বলেই হয়তো সে টের পেয়ে গেল। চোখে চোখে রাখলো সেঁজুতিকে। সূর্যেরও জেদ ধরে গেল সেও একের পর এক প্ল্যান করতে লাগলো। দেখতে দেখতে হলুদের দিন ঘনিয়ে এলো। নিয়মনীতি অনুযায়ী হলুদ চলল মধ্যরাত পর্যন্ত। সূর্য, সেঁজুতির সব বন্ধু বান্ধবও হাজির হলো বিয়েতে সেই সাথে সূর্যও৷ স্টেজে কনে সাজা সেঁজুতির গাল বেয়ে গড়াতে লাগলো অশ্রুকণা, সূর্যেরও চোখ চিকচিক। সে একদফা রেশমিকে আলাদা পেয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো তাদের যেন পালিয়ে যেতে দেয়। রেশমি তার কোন কথায় পাত্তা দিলো বলে মনে হলো না। হলুদ শেষে এক প্রকার বন্দী করে রাখলো রেশমি। পরের দিন প্ল্যান করলো পার্লারে যাওয়ার পথে যে করেই হোক পালাবে তারা। সেঁজুতি সব গুছিয়ে পার্লারে যেতে তৈরি হলো। রেশমিও যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো তখনি তার শ্বশুর বলল, ‘বউমা তুমি পরে যেও পার্লারে। কিছু কাজ বাকি আছে।’
‘বাবা, সেঁজুতিকে নিয়ে পার্লারে যেতে হবে।’
‘ওর বান্ধবীদের বলো নিয়ে যাবে।’
সেঁজুতির বান্ধবী বলতে বিদিশা আর রিমি এসেছে। বিদিশা তো আগেই জানতো রিমিকেও বলা হলো তারা পালাবে। ব্যস, বান্ধবীরা খুশি খুশি নিয়ে বের হলো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেহমানরা আসতে লাগলো। সবাই খাওয়া দাওয়া করে অপেক্ষা করতে লাগলো কনে দেখার জন্য । অপরদিকে বর যাত্রীও রওনা দিয়েছে অথচ বর গায়েব। সবাই সেঁজুতির নাম্বারে কল দিয়ে বন্ধ পেলো। শুধু রেশমি জানতো সেঁজুতি সূর্যের সাথে তাই সে সূর্যকেও ফোন দিলো নো রেসপন্স।
রাত আটটায় সূর্য ফোন দিলো রেশমিকে৷
‘আমরা বিয়ে করে ফেলেছি আপা। বলে দিস সবাইকে।’
‘তারপর?’
‘জানি আপা রেগে আছিস কিন্তু আমি তো তোর ওপরই ভরসা করেছিলাম। তুই কিছুই করলি না উল্টো সেঁজুতির পরিবারকে হেল্প করলি তার অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে।’
‘বলা শেষ হয়েছে?’
‘হ্যাঁ।’
সূর্য হ্যাঁ বলতেই রেশমি কল কেটে দিলো।
রাত তিনটে বেজে বারো মিনিট। সেঁজুতিদের ফ্ল্যাটের কলিং বেল বেজে চলছে অনবরত। সাজ্জাদ উঠলো সবার আগে। রেশমি টের পেতেই বলল, ‘গেইট খুলবা না।’
এমনিতেও কেউ তেমন ঘুমায়নি সেঁজুতির চিন্তায়। তাই তার বাবা-মাও একসাথে ঘর থেকে বের হলো। সাজ্জাদ রেশমির কথা না শুনে সেই উঠে গিয়ে গেইট খুলল। বিয়ের আগ মুহূর্তে পালিয়ে যাওয়া মেয়েকে মধ্যরাতে ঘরের চৌকাঠে কোন ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে গেলে কোন মা বাবাই হয়তো ঠিক থাকতে পারবেন না। অথচ সেঁজুতির বাবা-মা তাদের দেখে নির্বাক এবং খুব স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে রইলো। সূর্য ভাবলো আগে শ্বশুরের পা ধরবে নাকি দুলাভাইয়ের। মাইরটা তো বোধহয় দুলাভাই দিবে মেয়ের ভাই বলে কথা। সূর্য এক পা শ্বশুরের দিকে দিয়ে আবার উল্টো ফিরে সাজ্জাদের দিকে যাচ্ছিলো। সেঁজুতি হঠাৎ পেছন থেকে তার কলার টেনে বলল, ‘আগে আব্বুর দিকে যা।’
‘কলার ছাঁড়, এত জোরে টানলে বোতাম ছিঁড়া যাইবো।’
‘তো তুই গর্দভের মত আব্বুর কাছে না গিয়ে আগে ভাইয়ার দিকে যাস ক্যান।’
‘আরেহ গাধী মাইর কি আঙ্কেল দিবো না ভাইয়া!’
সেঁজুতি আর সূর্যের তর্কাতর্কি দেখে এই মধ্যরাতেও যেন বাকি চারজন হতাশ হলো। কোথায় পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে পা ধরবে, কান্নাকাটি করবে তা না উল্টো আগের মতোই যাচ্ছেতাই অবস্থা! এদের প্রেম তো প্রেম কম কমেডি বেশি। পুরা টাইম কমেডি মাঝখানে স্যাডনেস শেষটাতে আবার কমেডি। পরিবারের সবাই বিরক্ত হয়ে আছে তবে অসুস্থ বলে সেঁজুতির বাবা- মা রেশমিকে বলল, ‘এদের আজকের মত রাত থাকতে দাও কাল বিদেয় করে দিও বউমা।’
দুজন চলে গেলেন ঘুমোতে। সাজ্জাদ রেশমির দিকে তাকিয়ে বলল, রাগ করো না বউ ওরা ঘরে যাক। এই তোরা তোদের ঘরে যা গর্দভেররা। বিয়ে তো তোদেরই ছিলো শুধু শুধু অনুষ্ঠান পন্ড করে ভাগলি কেন?’
সেঁজুতি আর সূর্য অবাক হয়ে তাকালো সাজ্জাদের দিকে। তারমানে, রেশমি এজন্যই সেঁজুতিকে পাত্র দেখায়নি কিন্তু কর্পোরেট অফিসের ইন্টারভিউ এর রেজাল্ট তো সূর্যের এখনো আসেনি।
রেশমি একবার তীক্ষ্ণ নজরে সাজ্জাদের তাকালো, ‘ব্রেকাপ’ বলেই সে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।
আঁতকে উঠল সাজ্জাদ আকুল গলায় বলল, ‘আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে বউ এখন কিসের ব্রেকাপ।’
দরজার ওপাশ থেকে রেশমি চেঁচিয়ে বলল, ‘এটা বিয়ের পরের ব্রেকাপ। কাল সকালেই আমি বাপের বাড়ি যাবো।’
সূর্য আর সেঁজুতি বোকা বনে গেছে। আর সাজ্জাদ কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘শুধু মাত্র তোদের জন্য আমার প্রত্যেকবার ব্রেকাপ হয়। কত চালাকি বুদ্ধি খাটিয়ে তোদের গলায় ছুরি রেখে বিয়েটা করলাম যেন এই ব্রেকাপ থেকে মুক্তি পাই না এখানেও এসে বাগড়া দিলি।’
সাজ্জাদের কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে দুজনে। সূর্য হঠাৎ শান্ত সুরে প্রশ্ন করলো, ‘এটা আপনাদের কততম ব্রেকাপ দুলাভাই?’
‘সাতশো তিন!’
বাকরুদ্ধ সূর্য আর সেঁজুতি পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে সমস্বরে বলল, ‘সাতশো তিন! আমাদেরও ক্রস করেছে এরা।’
সাজ্জাদ বলল, ‘বয়সেও তোদের ক্রস করা ব্রেকাপ কম হবে কেন?’
সমাপ্ত