ভাগ্যলিপি পর্ব-০৭

0
1

#ভাগ্যলিপি(৭)
#মায়মুনা_সালসাবিল

জীবনকে কখনো কখনো সরল অংকের মতোই মনে হয়।পাতার পর পাতা ধরে হিসাব কষে শেষে
উত্তর মেলাতে গিয়ে হঠাৎ আমরা টের পাই—একটিমাত্র ছোট্ট ভুল পুরো সমীকরণকেই করে দিয়েছে মিথ্যে।অংকের ভুল ঠিক করা যায়,আবার শূন্য থেকে শুরু করা যায়।কিন্তু জীবনের অংকে
ফের শূন্যে ফেরার সুযোগ নেই।শুধু অনুতাপের আঁচে পুড়তে পুড়তে দেখি— ভুলে ভরা স্মৃতির বনপথ,
যেখানে প্রতিটি পাতা ফিসফিসিয়ে বলে—
“তুমি ফেরত যেতে পারবে না।”
কঠিন অংককে পাশ কাটিয়ে অন্য অংক বেছে নেওয়া যায়,কিন্তু জীবন! কঠিন মনে হলেও পাশ কাটানোর সুযোগ থাকে না, বেছে নেওয়া যায় না দ্বিতীয় কোনো জীবন।হাজার কষ্ট হলেও তোমাকে পাড়ি দিতে হয় ঠিক সেই পথেই যা সৃষ্টিকর্তা তোমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।

আমার পেটে বাচ্চা না থাকলে হয়তো বাবা-মা আবার কোনো পাত্র ঠিক করতেন। আমাকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগতেন। কারণ তারা তো বাবা-মা, সবসময়ই আমাদের ভালো চান। তাদের মনে হয়, মেয়েদের বিয়ে দিলেই জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।কিন্তু আদৌ কি কোনো সমস্যার সমাধান হয়? আমার তো মনে হয়, একজন ডিভোর্সি মেয়ের আবার বিয়ে হলে তাকে শ্বশুর-শাশুড়ি, পাড়া-প্রতিবেশী—সবার কাছ থেকেই কটু কথা শুনতে হয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় স্বামীর থেকেও তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
যদিও আমার তুরাব সবার থেকে আলাদা ছিল। শাওনকে ঘিরে, কিংবা অন্য কোনো কারণে, সে আমাকে কখনোই কোনো কটু কথা শোনায়নি।

আজকাল প্রায় সময়ই বাবা মাকে কাঁদতে দেখি। তারা কেনো কাঁদে কি কারণে কাঁদে জানি না।তবে আমার কেনো জানি কান্না আসে না আর। আর কতই বা কাঁদবো?না, আমি আর কাঁদবো না।
কিছুদিন পর তুরাবের বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনতে যাচ্ছি।কিন্তু যার বাচ্চা, তার কোনো খবরই নাই। নয় মাস আগে অফিসের কাজে বাইরে গেছে তো গেছেই, কিন্তু অফিসের কাজ আর শেষ হলো না জনাবের।আমাকে একা করে সারাজীবন এর জন্য হারিয়ে গেলো।

স্কুলের চাকরিটা আপাতত ছেড়ে দিয়েছি। এই অবস্থায় কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না।তুরাব নেই তো কি হয়েছে তার সন্তানকে তো এই নিষ্ঠুর পৃথিবীটা দেখাতে হবে,পৃথিবী তো আসলে নিষ্ঠুর নয়, নিষ্ঠুর হয় মানুষ।

আজকাল কেন জানি মেজাজটা ভীষণ রুক্ষ হয়ে গেছে। কারো কথা শুনতে ভালো লাগে না। কেউ ভালো কিছু বললেও অকারণে ছ্যাত করে উঠি, আর কেউ খারাপ কিছু বললে তো যেন তাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে।

আজ শাওনের মা এসেছিলেন। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন,
— “ঊষা মা, শাওনের ভুল হয়ে গেছে। সে না বুঝেই অন্যায় করেছে। প্লিজ, তুমি আবার ওর জীবনে ফিরে এসো। তোমার পেটের সন্তানসহ শাওন তোমাকে আবার বিয়ে করবে। ওর গার্লফ্রেন্ড টয়ার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। ও এখন শুধু তোমাকেই চায়, তোমাকেই আবার বিয়ে করবে।”

এমন একটা ভালো প্রস্তাব শোনার পরও আমার ভেতরে শান্তি এলো না। বরং মেজাজটা আরও বিগড়ে গেলো।হঠাৎ রাগে টেবিলের উপর রাখা একটা গ্লাস মেঝেতে ছুড়ে ফেললাম। গ্লাসটা ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। শাওনের মা একদম চমকে উঠলেন।

আমি হেসে বললাম,
— ভয় পাবেন না, আপনাকে কিছু করবো না। আমি তো শুধু এই ভাঙা গ্লাসটাতে করে পানি খেতে চাইছিলাম। এনে দিবেন একটু পানি?

শাওনের মা অবাক হয়ে বললেন,
— ভাঙা গ্লাসে পানি আনবো কিভাবে?

আমি ঠান্ডা গলায় জবাব দিলাম,
— ভাঙা গ্লাসে পানি আনা যায় না?

তিনি বললেন,
— না, যায় না।

তখন আমি চোখে অশ্রু নিয়ে বললাম,
— তাহলে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক আবার কোন লজ্জায় জোড়া লাগাতে এসেছেন? আপনাদের যদি সামান্য লজ্জা-শরম থাকতো, তাহলে আজ এরকম সময়ে আমার মতো অসহায় আর অভাগী মেয়েকে এরকম একটা নোংরা প্রস্তাব দিয়ে নতুন করে কষ্ট দিতে পারতেন না।

শাওনের মা কিছুক্ষণ নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর একপ্রকার অপমানিত হয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।ওনার সাথে এরকম আচরণ করায় নিজেই ভীষণ কষ্ট পেলাম। উনি তো আমাকে একসময় ভীষণ ভালোবাসতেন, স্নেহ করতেন। তাহলে আজ আমি এমন আচরণ করলাম কেনো?

ওই যে বললাম—আজকাল মেজাজটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে। ভালো কথাতেও ছ্যাঁত করে উঠি। অথচ আমি তো এমন ছিলাম না। ভীষণ শান্ত, সহজ-সরল মেয়ে ছিলাম আমি। সবাই বলতো, আমার মধ্যে অদ্ভুত এক সহনশীলতা আছে।তাহলে আজ আমি এমন হয়ে গেলাম কেনো?কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছি আমার সেই আগের আমিকে।

শাওনের মাকে এতো অপমান করার পরও শাওনের কোনো লজ্জা-শরম হলো না। আমার ছেলে আরিহান জন্ম নেয়ার পর এবার সে নিজেই চলে এলো। সঙ্গে নিয়ে এলো আরিহানের সুস্বাস্থ্যের জন্য দুধ আর আমার জন্য হরেক রকম ফল।

আরিহানকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলো সে।আরিহানের নরম গাল, ছোট্ট আঙুলে যেন বারবার ডুবে যাচ্ছিল শাওন। তারপর তার সঙ্গে একা একা অনেক কথা বলতে শুরু করলো।এবার শাওন আরিহানকে আমার মায়ের কোলে দিয়ে আমার জন্য অনেক সহানুভূতি প্রকাশ করতে লাগলো। তার মনের ভাব প্রকাশ করলো আমাকে নিয়ে। আমাকে নাকি এখনো সেই আগের মতোই ভালোবাসে।

টয়ার সাথে যেহেতু দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিলো, হঠাৎ সে আবার ফিরিয়ে আসায় সে আবেগে আপ্লূত হয়েই তাকে গ্রহণ করেছিলো।কিন্তু সে বুঝতে পারে নি আমি এতো টা কঠিন হবো।সোজা তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো।
আরও অনেক হ্যানত্যান কথাবার্তা বলতে লাগলো শাওন, যেগুলো শুনলে আমার মন গলে পানি হয়ে যাওয়ার কথা।

আমি শুধু শুনছিলাম শাওনের কথা, কিন্তু কিছু বলার মতো শব্দ বের হচ্ছিলো না মুখ দিয়ে। শুধু ভাবছিলাম—কি কথা বললে সে আর আমার কাছে এই রকম কথা বলতেও আসবে না, আর আমাকে ফেরত নেওয়ার কথাও ভাববে না।

— কি হলো ঊষা? কিছু বলছো না যে?

আমি বললাম,
— আমার এই দেহটার উপর নজর তো এক কাজ করো—আ*ত্মাটা বের করে এই দে*হটা নিয়ে যাও। আর যদি সেটা না করতে পারো, তাহলে তোমার যেটা দরকার, শুধু সেগুলোই কে*টে কে*টে বের করে নিয়ে যাও।

শাওন আমার এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো—
— এভাবে বলছো কেনো, ঊষা? তোমার কি মনে হয়, আমি শুধু তোমার দেহকে ভালোবাসি? এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি।মানুষের ভুল হতেই পারে। তুমিও তো ভুল করেছো, তুরাবকে বিয়ে করে। আমাদের ডিভোর্সের পর তুমিও বিয়ে করেছো, আর আমিও টয়ার সঙ্গে ছিলাম। আমরা দু’জনই সহজেই অন্যজনকে গ্রহণ করেছি।
কিন্তু এখন তোমার জীবনেও তুরাব নেই, আর আমার জীবনেও টয়া নেই। আমরা তো আবার এক হতেই পারি।

আমি তখন চিৎকার করে বললাম—
— তুমি কুকু*রের থেকেও অ*ধম! এজন্য বারবার তাড়িয়ে দেওয়ার পরও ঘুরঘুর করে আমার পিছু পিছু আসছো। কোন সাহসে তুমি তুরাবের সাথে নিজের তুলনা দাও? তুরাবের একটা চুলের যোগ্যও তুমি নও। তোমার যদি সামান্য ব্যক্তিত্ব থাকে, প্লিজ আর ঐ মুখটা আমাকে দেখাবে না। যে মুখটা দেখলে আমার বমি পায়!

শাওন হঠাৎ রেগে গিয়ে বললো—
— তোমার অনেক বেশি অহংকার, ঊষা। এর ফল ভালো হবে না, পরে তোমাকে পশ্চাতে হবে।এই বলে শাওন চলে যেতে ধরল।

— দুধ আর ফলগুলো নিয়ে যাও, শাওন। তোমার আনা ফল আমার বাড়ির কু*কুরও খাবে না।

শাওন রাগে কটমট করতে করতে বললো—
— নিজেকে কি যে ভাবো তুমি? আমি জাস্ট সহানুভূতির জন্য আবার ফিরে নিতে এসেছিলাম। তা না হলে এমন অখাদ্যর দিকে ফিরেও তাকাতাম না, যে অখাদ্য আর কোনো বাজারেও চলবে না।ভুলে যেও না তুমি দুই দুই টা বিয়ে করেছো আর এখন আবার একটা বাচ্চাও আছে।এখন কেউ আর বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে আসবে না।

আমি শাওনের কথা শুনে হঠাৎ হাসতে লাগলাম। কেন জানি, হাসি পাচ্ছিলো প্রচুর। হাসতে হাসতেই বলে ফেললাম—
— বুঝি না কিছু আমি, যে জিনিস বাজারে চলবে না, যার দিকে কেউ ফিরেও তাকাবে না সেই অখাদ্যের ওপর কিছু কিছু জানো**য়ারের এতো লোভ কেন হয়?

শাওন আর এক সেকেন্ড দেরি করলো না। দ্রুত বের হয়ে গেল রুম থেকে।

শাওন চলে যাওয়ার পর গলা ফাটিয়ে কাঁদতে লাগলাম। কাঁদা ছাড়া তো আমার জীবনে আর কিছু নেই। কিন্তু বেশিক্ষণ কাঁদতে পারলাম না, কারণ আমার ছেলেও কাঁদছে। নিজের চোখের পানি মুছে ছেলের কান্না থামানোর জন্য তাকে খাওয়াতে লাগলাম।

ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম—
— বাবা, আরিহান, বাপের মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী হইও। তবে কাউকে অনেক বেশি ভালোবেসে, তাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে জীবন্ত লাশ বানিয়ে কোথাও যেনো হারিয়ে যেও না।

আরিহানের ছয় মাস বয়স হতেই আমি আবার নিজের প্রতি একটু একটু করে যত্ন নিতে শুরু করলাম। তবে আমি বিধবার মতো সাদা শাড়ি গায়ে চাপালাম না। সাদা শাড়ি পড়লেই কি তুরাব আবার ফিরে আসবে?নাকে নাকফুল, গায়ে রঙিন শাড়ি—এই সামান্য সাজেই কিছু মানুষের চোখে যেনো আগুন ধরে গেলো। নানা রকম আজেবাজে কথা শুনতে হয় প্রতিদিন। তবু আজকাল আর কারো কথা গায়ে মাখি না।এখন আমি একেবারেই নিজের মতো করে চলাফেরা করি। কে কী বললো—তা নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই। আমার মনটা যেনো পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছে। কোথাও কোনো আলোড়ন ওঠে না, কেমন যেনো অসাড় আর অনুভূতিহীন হয়ে গেছে সবকিছু।

প্রাইমারিতে এক্সাম দিলাম, প্রিলিতে টিকে ভাইভাও দিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জবটা আর হলো না। এবার এজন্য প্রস্তুতি আরও ভালোভাবে নিতে লাগলাম। নিজের একটা ভবিষ্যৎ তো তৈরি করতে হবে, কেউ তো নেই আজ আমার পাশে।

বাবার শরীরও এখন অসুস্থ, ঠিকমতো আর কাজকর্ম করতে পারেন না। আমাদের জীবিকার একমাত্র ভরসা বাবার ছোট্ট মুদির দোকানটা, আর সেখানে এখন মা বসেন। এই নিয়েও চারপাশের মানুষের কত কথা!
“মহিলা মানুষ দোকানদারি করছে”—এই বলে নানারকম কটাক্ষ ছুড়ে দেয় সবাই।

আমরা যদি ঘরের মধ্যে না খেয়ে মরে যাই, তখন কি এই সমালোচক মানুষগুলো আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেবে?
না, দেবে না তো।
তাই এখন এসব কথায় কান দেওয়ার সময় নেই। আগে তো আমাদের পেটের ভাত জুটুক, তারপর না হয় অন্যের সমালোচনা নিয়ে ভাবব।

আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, কোনো ভাই-বোন নেই। এজন্যই তো বাবা-মা আমার জন্য এত দুশ্চিন্তা করেন। আমার মায়ের বিয়ের দীর্ঘ ছয় বছর পর আমি এসেছিলাম গর্ভে। সেদিন বাবা-মা ভীষণ খুশি হলেও আজ তারা আমার প্রতি অসন্তুষ্ট, আমার ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট।তবে তারা অনেক চেষ্টা করেছেন আমাকে সুখী দেখানোর জন্য। কিন্তু ঐ যে কথায় আছে—ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন। কপালে সুখ লেখা না থাকলে আমি কীভাবে জোর করে সুখী হবো?

আমার আরিহানকে দেখতে শ্বশুরবাড়ির কেউই আজ পর্যন্ত আসেনি। আমাকে তো তারা আগে থেকেই সহ্য করত না। আর এখন, তুরাব না থাকায় তাদের বিরক্তি যেন আরও বেড়ে গেছে।তাদের চোখে আমিই অপরাধী—আমার কারণেই তুরাব মারা গেছে।এরপর আরও নিষ্ঠুর কথা শুনতে হয়েছে আমাকে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছে—
“আসলে কি এই বাচ্চাটা তুরাবের?”
তুরাব মারা যাওয়ার এক মাস পরে আমি বুঝতে পারি আমি অন্তঃসত্ত্বা।

★★★

কে বলেছে, কেউ কাউকে ছাড়া বাঁচতে পারে না? আমি তো দিব্যি বেঁচে আছি। তুরাব মারা যাওয়ার পাঁচ বছর হতে চললো, অথচ আমি এখনো মরিনি।
সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি, ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি—দিন আমার ভালোই কেটে যায়। কিন্তু যখন রাত গভীর হয়, চারপাশে কোলাহল থেমে যায়, শুধু রাতের চাঁদটা একা জেগে থাকে—তখন তুরাবের কথা ভীষণ মনে পড়ে।
তিন-চার দিনের কথা বলে সে বের হয়েছিলো বাড়ি থেকে। তখন মনে হয়েছিলো—এই তিন-চার দিন তাকে ছাড়া আমি কীভাবে থাকবো! বুক ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। অথচ আজ, পাঁচ বছর কাটিয়ে দিলাম তাকে ছাড়া।এই পাঁচ বছরের প্রতিটা দিন প্রতিটা রাত আমি কিভাবে কাটিয়েছি তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবে না।
আসলে মানুষের জীবন এমনই—কাউকে ছাড়া কারো জীবন থেমে থাকে না। জীবন তার নিজের গতিতেই চলতে থাকে।

আরিহানকে এখন স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। আর আমি নিজে একজন কলেজের প্রভাষক। প্রতিদিন সকালে ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আমি আমার কলেজে যাই।
আমার বাবা আর বেঁচে নেই। এখন আমাদের সংসার শুধু আমি, আমার মা আর আরিহান—এই তিনজনকে ঘিরেই। মা-কে আর দোকানদারি করতে হয় না। আমার আয়ে দিব্যি সংসার চলে যাচ্ছে।
তবু বুকের ভেতর একটাই হাহাকার রয়ে গেছে—
আমার তুরাব কিছুই দেখে যেতে পারলো না। না তার নিজের সন্তানকে, না আমার আজকের এই অর্জনগুলোকে।

আজ আরিহানকে স্কুল থেকে নিয়ে আসার সময় হঠাৎ দেখি রেশমি ভাবি একটা রিকশায় করে কোথায় যেন যাচ্ছেন। আমি জোরে ডাক দিলাম—
— রেশমি ভাবি! রেশমি ভাবি!

কিন্তু রেশমি ভাবি যেন আমার কথা শুনতেই পেলেন না। বাধ্য হয়ে আমিও একটা রিকশা নিলাম, আর রেশমি ভাবিকে ফলো করতে লাগলাম।

তুরাব মারা যাওয়ার পর থেকেই হাবিব আর রেশমি যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে। এমনকি তারা বাসাও পরিবর্তন করে ফেলেছে। তাদের ফোনও সবসময় সুইচড অফ।

চলবে…..