#ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
#সানা_শেখ
#সূচনা_পর্ব
“আমার পাপার ওয়াইফ হবে তুমি? আমার পাপা অনেক ভালো, তোমাকে অনেক আদর করবে। তুমি দেখতে অনেক সুন্দর, কিউট আর ভালো। তোমাকে পছন্দ হয়েছে আমার। আমি তোমাকে আমার পাপার ওয়াইফ বানাবো।”
চার বছরের একটা ছেলের মুখে এমন কথা শুনে হা হয়ে গেছে তুরা, পুরো নাম “তুরা নূরতাজ”। বিস্ময়ে চোখ দুটো অস্বাভাবিক বড় হয়ে গেছে। সবে অষ্টাদশী পাড় করা যুবতী কন্যা তুরা, বাবার সাথে তার অফিসে এসেছে আজ। বাবা অফিসের কাজে বিজি তাই তুরা ঘুরে ফিরে অফিস টা দেখছিল। কিছুক্ষণ আগে ছেলেটির সাথে তুরার পরিচয় হয়েছে। কথাবার্তা বলার কিছুক্ষণ পরেই ছেলেটি এমন অদ্ভুত প্রস্তাব রেখেছে তুরার কাছে। ছেলেটি তুরার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“চলো তোমাকে আমার পাপার কাছে নিয়ে যাই।”
তুরা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেটির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“এসব তুমি কি বলছো ভিরান?”
ভিরান পেছন ফিরে মুখ তুলে তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কেন? তুমি আমার পাপার ওয়াইফ হবে না? আমার পাপা অনেক ভালো, আমাকে অনেক ভালোবাসে আদর করে, তোমাকেও ভালোবাসবে আদর করবে।”
তুরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,
“তোমার আম্মু এসব কথা শুনলে রাগ করবে, তোমাকে বকবে। তুমি তোমার পাপার কাছে যাও, আমি এখন আসছি।”
ভিরান তুরার জামা টেনে ধরে বলে,
“আমার আম্মু তো নেই, পাপা বলেছে আমার আম্মু অনেক অনেক দূরে চলে গেছে যেখান থেকে আর কখনও ফিরে আসবে না। আমি তোমাকেই আমার আম্মু বানাবো চলো আমার সাথে পাপার কাছে।”
ভিরান তুরার জামা ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ওর আব্বুর কাছে। তুরা ভিরানের হাত থেকে জামা ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,
“ভিরান ছাড়ো আমার জামা।”
সামনে থেকে গমগমে পুরুষালি গলার স্বর ভেসে আসে,
“ভিরান কি করছো এখানে? কখন থেকে খুজছি তোমাকে আমি। আমাকে বার বার এত টেনশনে কেনো ফেলো তুমি? আসো আমার কাছে।”
ভিরান তুরা দুজনেই চোখ তুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বলিষ্ঠ গড়নের সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকায়। পুরুষ টা কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। পরনে ফরমাল ড্রেস।
ভিরান পুরুষটির দিকে তাকিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলে,
“পাপা ওর নাম তুরা। দেখো দেখতে কি সুন্দর আর কিউট, একদম মুভি তে থাকা কুইন গুলোর মতন না দেখতে? তুরা কে আমি তোমার ওয়াইফ বানাবো পাপা। ওকে বাড়িতে নিয়ে চলো।”
ছেলের কথা শুনে শকড নির্ভান, পুরো নাম “নির্ভান চৌধুরী”।
কি বলছে এই ছেলে?
ভিরানের কথা শুনে তুরার চোখ মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে গেছে। একবার বাবা তো আবার ছেলের মুখের দিকে তাকায়। ভিরানের হাত থেকে জামা ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টো ঘুরে দৌড় দিতেই ধপাস করে ফ্লোরে আছড়ে পড়ে দুজনের সামনে।
ভিরান দৌড়ে এসে তুরার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করে বলে,
“দৌড় দিতে গেছো কেন? দেখলে তো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে। এত বড় হয়ে গেছো মাথায় বুদ্ধি হয়নি? আস্তে ধীরে হাঁটতে পারো না? পাপা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো তুমি? দেখছো না তোমার ওয়াইফ পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে? ওকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে চলো।”
ছেলের কথা শুনে নির্ভানের চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। নির্ভান খুব সহজে অবাক হয় না কিন্তু আজকে ছেলের কথা শুনে ভীষন অবাক।
অচেনা অজানা একটা মেয়ে কে ওর বউ বানিয়ে দিচ্ছে, আজব।
ভিরান বাবার দিকে তাকিয়ে বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে,
“পাপা তুমি আসবে নাকি ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে? তুরা ব্যাথা পেয়েছে ওকে তোলো এখান থেকে।”
নির্ভান ছেলে কে ডেকে বলে,
“ভিরান কি বলছো এসব উল্টা পাল্টা কথা? ওকে ছেড়ে আসো আমার কাছে। লাঞ্চ টাইম হয়ে যাচ্ছে।”
“তুরা কে কোলে নাও তুমি।”
তাড়াহুড়ো করে তুরা উঠে দাঁড়ায়। আবার দৌড় দেয়ার জন্য পা বাড়াতেই দ্বিতীয় বারের মতো ধপাস শব্দ তুলে ফ্লোরে আছড়ে পড়ে। মান সম্মান আজ সব শেষ। কোন দুঃখে এখানে চলে এসেছিল! ভাগ্য ভালো আশে পাশে আর কেউ নেই। দু’দুবার করে আছাড় খেয়ে তুরার অবস্থা নাজেহাল। এখন দৌড় তো দূরের কথা, হাঁটতেও পারবে না।
ভিরান বাবার হাত ধরে টেনে এনে তুরার সামনে দাঁড় করায়। নির্ভান কে দেখেই মুখ লুকানোর চেষ্টা করে তুরা।
ছেলের জোরাজুরিতে আর মানবতার খাতিরে অচেনা অজানা মেয়ে টা কে কোলে তুলে নিজের রেস্ট রুমে নিয়ে আসে নির্ভান। বেডে না বসিয়ে সোফায় বসায়। লজ্জায় অস্বস্তিতে তুরার মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক হয়ে যাক আর ও ভেতরে ঢুকে যাক। আজকের আগে এমন লজ্জায় অস্বস্তিতে কোনো দিন পড়তে হয়নি।
ভিরান গ্লাসে পানি ঢেলে তুরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“পানি খাও পাপার ওয়াইফ।”
আর পানি খাওয়া। এখন এখান থেকে পালাতে পারলেই তুরা বাঁচে। কি বিচ্ছু ছেলে ভাবা যায়? এই টুকুন একটা ছেলের কি পাকা পাকা কথা।
ছেলের কথা শুনে নির্ভানের কাশি উঠে যায়।
তুরা কে পানি না দিয়ে নিজের বাবা কেই পানির গ্লাস টা দেয় ভিরান। নির্ভান পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তুরার দিকে তাকিয়ে গুরুগম্ভীর গলায় বলে,
“নাম কি তোমার? এখানে এসেছো কিভাবে? আগে তো কোনো দিন তোমাকে দেখিনি এই অফিসে।”
তুরা মিনমিন করে বলে,
“আমি তুরা নূরতাজ। আব্বুর সাথে অফিসে এসেছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ এদিকে চলে এসেছি। আমি বাড়ি যাব।”
“যাও।”
তুরা উঠে দাঁড়ায়। পায়ের ব্যাথায় ধপাস করে আবার বসে পড়ে সোফায়। মুখ দিয়ে মৃদু আর্তনাদ বেরিয়ে আসে।
ভিরান তুরার কাছে এগিয়ে এসে এক হাত ধরে বলে,
“তোমার কষ্ট হচ্ছে তুরা? ব্যাথা করছে অনেক? আমার পাপার হার্ট না একদম রক হয়ে আছে। সেজন্যই তোমাকে কষ্ট পেতে দেখেও পাপার কষ্ট হচ্ছে না। পাপা ব্যাড বয়। তুমি কাদো তাহলে পাপা তোমাকে আদর করবে। পাপা তোমার ওয়াইফ কে আদর করো। আমি ব্যাথা পেলে যেভাবে তুমি আমাকে চুমু দাও সেভাবে তুরা কেও চুমু দাও।”
ব্যাথা পেয়ে না কাঁদলেও এই ছেলে আর কিছু সময় এমন উদ্ভট কথা বললে সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেলবে বেচারি তুরা। কোন পাগলের পাল্লায় পড়েছে!
ছেলের কথা শুনে নির্ভান অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। পর পর শকড, এই দিন দেখার জন্য চার বছর ধরে এত কষ্ট করে এই ছেলে কে বড় করেছে? শেষ পর্যন্ত বাইরের একটা মেয়ের সামনে ওর মান সম্মান ডুবিয়ে দিচ্ছে।
চলবে……….