#ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
#সানা_শেখ
#পর্ব_8
আরো একটি রাত পার হয়ে নতুন ভোরের আগমন ঘটেছে। রাত টা ভালো ভাবেই কে টে গেছে।
ভিরান সকালে ঘুম থেকে উঠে বসে পুরো বেডে নজর বুলায়। আজকেও তুরা নেই, ওর পাপাও নেই।
বেড থেকে নেমে ডোরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে ডাকে,
“তুরা কোথায় তুমি? পাপা।”
নির্ভান রুমের দিকেই এগিয়ে আসছিল, ছেলে কে উঠে আসতে দেখে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে কোলে তুলে নিয়ে হাসি মুখে বলে,
“আমার পাপার ঘুম শেষ?”
ভিরান নিজেও হেঁসে বলে,
“হু, তুরা কোথায়?”
“তুরা একটু আগেই ওর বাড়িতে গেল, ওরো তো পড়াশোনা আছে। কলেজে যেতে হবে তুরা কে তাই চলে গেছে।”
“আমাকে নিয়ে গেল না কেন? আমি তুরার কাছে যাব।”
” এখন ওয়াশরুমে চলো, ফ্রেস হয়ে খেয়ে তারপর নিয়ে যাব।”
“তুরা না আসলে ফ্রেস হব না, খাব না, কিচ্ছু করবো না।”
“তুরার কাছে যাবে তো, তুমি এমন করলে তুরা রাগ করবে বলেছে।”
“তুরা কেনো রাগ করবে?”
“এই যে তুমি খেতে চাও না, লেখাপড়া করতে চাও না। কেঁদেকেটে অসুস্থ হয়ে পড়ো তাই। তুরা বলেছে তুমি এমন করলে ও আর আসবে না তোমার কাছে।”
“আমি এমন করবো না পাপা, তুমি তুরা কে আসতে বলো।”
“ফ্রেস হয়ে খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে তারপর যাবে তুরার কাছে।”
“এখন যাই!”
“তুমি তো গুড বয়, পাপার সব কথা শোনো।”
“পাপা।”
“হ্যাঁ পাপা বলো।”
“তুরা কে ছাড়া ভালো লাগে না।”
ছেলের মলিন গলার স্বর নির্ভানের ভেতর পর্যন্ত নাড়িয়ে তোলে।
ছেলে কে ওয়াশরুমে দাঁড় করিয়ে ছেলের ট্রাউজার খুলতে খুলতে বলে,
“তুমি তুরার জন্য এমন কেনো করো? ওরা তো বিরক্ত হয়ে যাবে আমাদের উপর। কাউকে এভাবে বিরক্ত করা ঠিক না পাপা।”
“আমি তো কাউকে বিরক্ত করি না পাপা। আমি তুরার কাছে গুড বয় হয়ে থাকি।”
“চলো আজকে আমরা অফিসে যাই।”
“অফিসে ভালো লাগে না, তুরার কাছে যাব। তুরার কাছ থেকে আদর খাব, ওর কিউট গালে চুমু খাব। তুমি চুমু খাবে? ওর গাল অনেক নরম আর সফ্ট।”
নির্ভান নিজের কপালে নিজেই দুটো চাপড় মা’রে। ওর ইচ্ছে করছে দেয়ালে মাথা ঠুকে ম’রে যেতে।
এমন ছেলে দুনিয়ায় আর কারো আছে? এই ছেলে কবে যেন ওকে রাস্তায় গনধোলাই খাওয়ায় উল্টা পাল্টা কথা বলে।
“পাপা কথা বলছো না কেন?”
“তোমার গলায় সমস্যা হয়েছে, ডক্টর কথা বলতে নিষেধ করেছে। কথা না বলে চুপ করে থাকো এখন।”
“তুরা কে নিয়ে আসো তাহলে চুপ করে থাকবো।”
নির্ভান দুই হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে।
সেই ঘুরে ফিরে তুরাতে গিয়েই থামছে এই ছেলে। কি আছে ঐ তুরার মধ্যে? গোলগাল ছোট্ট একটা মেয়ে, এই মেয়ে কে দেখে এত পা’গল হওয়ার কি আছে? হ্যাঁ নির্ভান না করতে পারবে না যে তুরা সুন্দরী না। তুরা যে কারো নজর কাড়ার জন্য যথেষ্ট সুন্দরী। উচ্চতা খুব বেশি না, পাঁচ ফুট বা পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি হবে। দুধে আলতা গায়ের রঙ, গোলগাল চেহারা, টানা টানা মায়াবী, সমুদ্রের মতো গভীর দুটো চোখ। চিকন নাক, ফোলা ফোলা দুটো গাল, গোলাপী ওষ্ঠদয়। প্রথম বার দেখে নির্ভানের নজরও আটকে গিয়েছিল। তুরার গলার স্বর চিকন, রিনরিনে, কথা বললে শুনতে ভালো লাগে।
ভিরান কে ফ্রেস করিয়ে হাফ প্যান্ট আর একটা টিশার্ট পরিয়ে দিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুম থেকে বের হয়।
ভিরান বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
“পাপা গলা ব্যাথা।”
“জোরে জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করো আরো।”
“বকা দিচ্ছ কেন?”
“আশ্চর্য বকা দিলাম কখন?”
“মাত… মাত.. মাত্র।”
নির্ভান হেঁসে ওঠে। ভিরান নিজেও হাসে।
ড্রয়িং রুমে আসতেই নওশাদ চৌধুরী আর মেরি চৌধুরীর সাথে দেখা হয়। ভিরান কে দেখে দুজনেই হেসে বলে,
“গুড মর্নিং দাদু ভাই।”
“গুড মর্নিং।”
“এখন কেমন ফিল হচ্ছে তোমার?”
নওশাদ চৌধুরীর কথা শুনে ভিরান কিছু বলার আগেই মেরি চৌধুরী বলেন,
“পা’গলের আবার মাথা ব্যাথা!”
দাদির কথা শুনে ভিরান বলে,
“কে পা’গল হয়েছে দাদু?”
“তুমি বাদে বাড়ির বাকি সবাই।”
ভিরান চোখ বড় বড় করে বাবা, দাদা, দাদি আর সার্ভেন্টের দিকে তাকায়। অবাক হয়ে বলে,
“সবাই পা’গল হয়ে গেছে? পাপা তুমিও পা’গল হয়ে গেছো?”
নির্ভান চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা ফুটিয়ে তুলে গম্ভীর স্বরে বলে,
“হ্যাঁ, কয়েক দিন ধরে তুমি আমাকে পা’গল বানিয়ে রেখেছ।”
ভিরান দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,
“না, আমি তো তোমাকে পা’গল বানাই নি।”
“বানাওনি? তোমার জন্য আমি রাতে ঘুমোতে পারি না, অফিসের কাজে মন বসাতে পারি না, ঠিক মতো খেতে পারি না।”
“আমি এসব করতে নিষেধ করিনি তোমাকে।”
“নিষেধ তো করোনি, কিন্তু তুমি যা সব করছো তাতে নিজে থেকেই করতে পারছি না।”
“আবার বকা।”
নির্ভান অবাক হয়ে বলে,
“আশ্চর্য তো, বকা কখন দিলাম?”
“এই যে কেমন করে বললে।”
নির্ভান বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আব্বু আমাকে নিয়ে পাবনায় রেখে আসো, আমি এখানে আর থাকতে চাই না। এভাবে চলতে থাকলে সত্যি সত্যিই পা’গল হয়ে যাব খুব দ্রুত।”
“পাপা তুমি পা’গল হয়ে গেলে তো আমাকে কা’মড় দেবে, খা’মচি দেবে। তুমি পা’গল হইও না।”
ইনোসেন্ট ফেসে আদুরে গলায় কথা গুলো বলে ভিরান।
নির্ভান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে বাবা মায়ের দিকে। দুজনেই ঠোঁট চেপে হাসছেন।
___________
বাবা কে দিয়ে ভিরান কে তুরা দের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় নির্ভান। যত দিন বাংলাদেশে আছে থাকুক তুরার কাছে। একবার দূরে গেলেই সব ভুলে যাবে। ভিসা আর টিকিট যত দ্রুত পাওয়া যায় তত ভালো।
নিজে সোজা অফিসে চলে আসে। অফিসে আসার পর তুহিন শিকদারের সাথে দেখা হয়। নির্ভান চোখ তুলে তুহিন শিকদারের দিকে তাকাতে পারছে না। কেমন যেন অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।
তুহিন শিকদারও যেন কেমন করছে। রাতে বসের কথা গুলো শোনার পর থেকেই এমন লাগছে ওনার।
এখন যেহেতু এই অফিসে জব করে আর নির্ভান এখন ওনার বস, নির্ভানের সামনে আসতে হবে, কথাও বলতে হবে।
________
অফিস শেষে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে নেয় নির্ভান। ল্যাপটপ, ফাইলস আর গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় বাবা মায়ের কাছে বলে।
গাড়িতে উঠে বসে সোজা চলে আসে তুরা’রা যেই ভবনে থাকে সেই ভবনের সামনে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে তুরার বেলকনির দিকে তাকায়, আজকে ওখানে কেউ নেই।
অন্ধকার হয়ে গেছে চারো দিকে, ল্যাম্প পোস্টের ঘোলাটে লাল আলো জ্বলে আছে। আলোর নিচে ছোট ছোট পোকা উড়ছে।
নির্ভান গ্লাস তুলে দেয় আবার। ল্যাপটপ, ফাইল খুলে অফিসের কাজ করতে শুরু করে। অফিসের কাজ এখানে বসেই করবে, ভিরান ঘুমিয়ে গেলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাবে।
গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে আছে নির্ভান। হঠাৎ গাড়ির জানালার গ্লাসে টোকা দেওয়ার শব্দ হয়। চোখ তুলে তাকাতেই দেখে তুহিন শিকদার দাঁড়িয়ে আছেন। গ্লাস নামিয়ে দেয় নির্ভান।
তুহিন শিকদার বলেন,
“স্যার ভেতরে চলুন।”
“না না এখানেই ঠিক আছি। ভিরান ঘুমিয়ে গেলে একটু কষ্ট করে ওকে নিয়ে আসবেন।”
“স্যার এভাবে গাড়িতে বসে কিভাবে কাজ করবেন? আমাদের একটা রুম খালি আছে, ওখানে বসে আরামে কাজ করতে পারবেন।”
“সমস্যা হবে না আমার। গাড়িতে বসে কাজ করার অভ্যাস আছে।”
জোরাজুরি করেও নির্ভান কে ভেতরে নিয়ে যেতে পারেন না তুহিন শিকদার। যদিও ওনারও ভেতরে নেওয়ার খুব একটা ইচ্ছে নেই, শুধু ভদ্রতার খাতিরে যাওয়ার জন্য জোর করলেন।
তুহিন শিকদার চলে যেতেই নির্ভান গ্লাস উঠিয়ে দেয় আবার। নির্ভান জীবনেও ভেতরে যাবে না। ভেতরে গেলে ভিরান ঘুমোনোর সময় ওকে তুরার সাথে ঘুমোতে বলবে। না ঘুমোলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবে, তার থেকে ভালো এখানেই বসে কাজ করুক আর ছেলের জন্য অপেক্ষা করুক। এমনিতেও নির্ভানের অন্যের বাড়িতে যাওয়ার স্বভাব নেই। খুব বেশি জরুরি প্রয়োজন না হলে অন্যের বাড়িতে কখনোই যায় না।
দশটার পর ঘুমন্ত ভিরান কে কোলে নিয়ে নির্ভানের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান তুহিন শিকদার। নির্ভান তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়। ছেলে কে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
“আপনাদের অনেক বড় ঝামেলায় ফেলে দিয়েছি আমরা। রোজ রোজ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের জন্য।”
“এভাবে বলে লজ্জা দেবেন না স্যার। আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না ভিরান কে নিয়ে। যথেষ্ট শান্ত স্বভাবের ছেলে ভিরান।”
“আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য।”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না স্যার, মানুষ তো মানুষের জন্যই।”
নির্ভান তুরার বেলকনির দিকে তাকায়, তুরা দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। নির্ভান কে তাকাতে দেখে তুরা সরে যায়।
তুহিন শিকদারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে নির্ভান। ছেলে কে কোলে নিয়েই গাড়ি ড্রাইভ করে। নওশাদ চৌধুরী আসতে চেয়েছিলেন কিন্তু নির্ভান নিয়ে আসেনি। এখন ঘুমন্ত ছেলে কে কোলে নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
___________
রাত বারোটার অধিক।
নির্ভান মাত্রই ঘুমিয়েছিল, ছেলের কান্না শুনে ঘুম ছুটে যায়। ছেলে কে বুকে আগলে ধরে আদর করে বলে,
“কি হয়েছে পাপা? এইতো আমি এখানেই আছি, কাদঁছো কেন?”
“তুরা কোথায়?”
“আছে, তুমি ঘুমাও।”
“আমি তুরার বুকে ঘুমাব।”
“পাপার বুকে ঘুমাও, পাপা আদর করছি তো।”
“না তুরার বুকে ঘুমাব।”
ভিরানের কান্না বাড়তে শুরু করে। নির্ভান শোয়া থেকে উঠে বসে। ছেলে কে শান্ত করে ঘুম পাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোনো ভাবেই ঘুমাচ্ছে না, তুরা তুরা বলে কেঁদেই চলেছে।
নির্ভান চুপ চাপ ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিভাবে ঘুম পাড়াবে এখন? অন্য কোনো দিন তো রাতে ঘুম থেকে ওঠে না। একবার ঘুমিয়ে গেলে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে। আজকে হঠাৎ এখনই উঠে গেল কেন?
“পাপা ঘুমাও।”
“তুরা কে এনে দাও।”
“তুরা ওর বাড়িতে রয়েছে, এখন মাঝরাত ওর কাছে যাওয়া যাবে না। আগামী কাল সকালে নিয়ে যাব, এখন ঘুমাও।”
ভিরানের কান্না কমার বদলে আরো বেড়ে যায়।
নির্ভান এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। বাবা মা কে ডেকেও কোনো লাভ নেই।
উপায় অন্ত না পেয়ে নিজের ফোন হাতে নিয়ে তুহিন শিকদারের ফোনে কল করে। রিং হওয়ার একটু পরেই রিসিভ হয়। ঘুম জড়ানো গলার স্বর ভেসে আসে ওপাশ থেকে।
“আসসালামু আলাইকুম, কে?”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আঙ্কেল আমি নির্ভান।”
নির্ভানের নাম শুনেই ঘুম পালিয়ে যায় তুহিন শিকদারের। এত রাতে কেনো কল করেছে?
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,
“হ্যাঁ স্যার বলুন।”
“বিপদে পড়ে এত রাতে আপনাকে কল করেছি আঙ্কেল। ভিরান ঘুম থেকে উঠে গেছে, তুরার জন্য কেঁদেকেটে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। ফোন একটু তুরা কে দেওয়া যাবে?”
“ঘুমিয়ে গেছে, একটু ওয়েট করুন দিচ্ছি।”
“ধন্যবাদ আঙ্কেল।”
ফোন দেখিয়ে ভিরান কে বলে,
“কান্না বন্ধ করো, তুরা ভিডিও কল দেবে এখন।”
ভিরান হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে,
“তুরা আসবে না?”
“এখন তো অনেক রাত রাস্তায় গাড়ি নেই। এখন ভিডিও কলে কথা বলো, সকালে ওর কাছে নিয়ে যাব।”
তুহিন শিকদার মেয়ে কে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তুরা ঘুম জড়ানো গলায় বিরক্তি নিয়ে বলে,
“কি হয়েছে আব্বু? এত রাতে ডাকছো কেন? ঘুম পাচ্ছে ঘুমোতে দাও, যাও এখন।”
“ঘুম থেকে ওঠ, ভিরান তোর সাথে কথা বলার জন্য কান্নাকাটি করছে।”
ভিরানের নাম শুনে শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,
“কোথায় ভিরান? দাও আমার কাছে।”
“চোখ মেলে তাকা আগে। ভিরান এখানে আসেনি, ফোনে কথা বল।”
“দাও।”
তুহিন শিকদার ফোন মেয়ের হাতে দিয়ে চলে যান নিজেদের রুমে।
তুরা ফোন কানে ধরে বলে,
“ভিরান।”
ওপাশ থেকে নির্ভানের গলার স্বর ভেসে আসে।
” ওয়েট, ভিডিও কল দিচ্ছি। তোমার রুমের লাইট অফ থাকলে অন করো।”
নির্ভানের গলার স্বর শুনে চমকে ওঠে তুরা।
কয়েক সেকেন্ড পরেই ভিডিও কল আসে।
তুরা বেড থেকে নেমে বড় লাইট অন করে আবার বেডে বসে কল রিসিভ করে।
ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ভিরানের ফোলা ফোলা ভেজা চোখ মুখ।
নির্ভান ফোন ছেলের মুখের সামনে ধরে রাখলেও নিজেও তাঁকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনে। তুরার চুল গুলো এলোমেলো, ঘুম জড়ানো চোখ মুখ। খুব কষ্ট করে চোখ দুটো খুলে রেখেছে। বেচারীর কাঁচা ঘুম টা ভাঙিয়ে দিল।
প্রায় দশ মিনিট ধরে ভিরান কে বোঝায় তুরা। নির্ভান নিজেও ছেলে কে বোঝায়। অবশেষে ছেলে কে বুকে আগলে ধরে শুয়ে পড়ে। ভিরানের পিঠ নির্ভানের বুকের সাথে ঠেকে আছে। ভিরানের সামনে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে রেখেছে ফোন। শুয়ে শুয়ে তুরার সাথে কথা বলছে এখন।
তুরা নির্ভানের শরীর দেখতে পেলেও মুখ দেখতে পাচ্ছে না। বুক পর্যন্তই ফোনের স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে।
নির্ভান তুরা কে উদ্যেশ্য করে বলে,
“তুরা তুমিও শুয়ে পড়ো। এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবে! ফোন বালিশের সাথে ঠেস দিয়ে রেখে ঘুমিয়ে যাও ভিরান ঘুমিয়ে গেলে আমি কল কে’টে দিব।”
শুয়ে পড়ে তুরা। নির্ভানের কথা মতো ফোন মুখের সামনে অন্য বালিশের সাথে ঠেস দিয়ে রাখে।
সময় গড়ায়। কথা বলতে বলতে, একে অপর কে দেখতে দেখতে ভিরান আর তুরা দুজনেই ঘুমিয়ে গেছে।
নির্ভান তাঁকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনে। দেখছে ঘুমন্ত তুরা কে। ফ্যানের বাতাসে তুরার ছোট ছোট চুল গুলো উড়ছে। তবে সেই চুল গুলো কে এখন আর আগের মতো হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে না তুরা। মুখের উপর পড়ছে আবার একাই সরে যাচ্ছে।
ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে থাকতে থাকতে নির্ভানের গম্ভীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
চলবে………