ভাঙা পাঁজরে বসন্ত পর্ব-২২

0
12

#ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
#সানা_শেখ
#পর্ব_22

শিকদার ফ্যামিলি নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। তুরা মন মরা হয়ে তাকিয়ে আছে বাবা-মা আর ভাইয়ের দিকে। তূর্যর একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না বোন কে রেখে যেতে। এত গুলো বছর পর বোন কে কাছে পেয়েছিল আবার এত দ্রুত বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিল।

ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সোফায় বসে বোনের পাশে। বোন কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে বোনের এক হাত মুঠো করে ধরে।

“মন খারাপ করে থাকবি না পরী, আমি কয়েক দিন পর পর আসবো তোকে দেখতে।”

তুরা ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বলে,

“আমি তোমাদের সাথে চলে যাব ভাইয়া।”

“হেই পাগল এখন বিয়ে হয়ে গেছে না, এখন থেকে এখানেই থাকতে হবে। কয়েক দিন পর আসবো তোদের নিতে।”

“আজকে যাই?”

“আজকে যেতে দেবে না, যেতে দিলে কি রেখে যেতাম!”

তুরা ভাইয়ের বুকে মুখ গুঁজে বলে,

“তোমাদের ছাড়া ভালো লাগে না আমার।”

তূর্য কিছু বলতে না পেরে বোনের মাথায় হাত বুলায়।
মুক্তা শিকদার মেয়ের অন্য পাশে বসেন। তুরা কে নিজের দিকে টেনে এনে জড়িয়ে ধরেন। আজকের আগে একটা রাতও মেয়ে কে দূরে রেখে থাকেন নি।
সব সময় মেয়ের আশে পাশেই থেকেছেন।

প্রেম করে বিয়ে করার সুবাদে দুজনেরই পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন। দুজনের পরিবার মেনে নেয়নি ওনাদের দুজন কে। বিয়ে পড়িয়েই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন তুহিন শিকদারের বাবা। শত্রুর মেয়ে কে কোনো ভাবেই মেনে নেবেন না। মুক্তা শিকদারের ফ্যামিলিরও একই অবস্থা। তারাও শত্রুর ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেন না। মুক্তা শিকদার কে অন্য জায়গায় বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও পারেনি, তুহিন শিকদারের বেলায়ও একই অবস্থা। শেষে দুই পরিবার দুজন কে বিয়ে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল। এত গুলো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেউ মেনে নেয়নি।
পরিবারের সাথে যোগাযোগও নেই আর।

জিনিয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তুর্যর দিকে। জিনিয়ার মা ব্যাপার টা লক্ষ্য করেন। সকাল থেকে বেশ কয়েক বার খেয়াল করেছেন জিনিয়া তূর্যর দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়ের মতিগতি বুঝতে আর বাকি নেই তাঁর। তূর্যর দিকে তাকান ভালো ভাবে। বডি শেফ, হাইট, ওয়েট, গায়ের রঙ নির্ভানের মতোই। কথা না বললে চোখ মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। কথা বলে অনেক সুন্দর করে আর গুছিয়ে। বাচ্চাদের অনেক ভালোবাসে। দেখতে মাশা আল্লাহ।

তুরার বাবা-মা ভাই সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আগায় বাইরের দিকে। নিদ্রা দৌড়ে গিয়ে তূর্যর এক পা জড়িয়ে ধরে। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায় তূর্য। ঝুঁকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে নিদ্রা পায়ের সাথে ঝুলে আছে।
এরা মামাতো-ফুপাতো দুই ভাই বোন শুধু ওর পায়ের সাথে আর গলার সাথে ঝুলে যায়। নিদ্রা কে কোলে তুলে নিয়ে হাসি মুখে বলে,

“কি হয়েছে মামা?”

“আমি যাব তোমার সাথে।”

বিভা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

“কোথায় যাবে? আমরা কেউ যাব না আজ। নেমে আসো মামার কোল থেকে।”

নিদ্রা তূর্যর গলা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“না, আমি মামার সাথে যাব।”

“এখানে বড় মামা আছে তো।”

“বড় মামা তো একটু পরেই অফিসে চলে যাবে।”

নির্ভান ভাগ্নি কে নিজের কোলে নেওয়ার চেষ্টা করে বলে,

“মামা আজ অফিসে যাবে না, আসো আমার কাছে।”

“সত্যি বলছ?”

“হ্যাঁ।”

নিদ্রা নির্ভানের কোলে চলে আসে। তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলে,

“মামা তুমি আবার আসবে কিন্তু।”

“আসবো তো মামা, তুমি সবাই কে নিয়ে যেও আমাদের ফ্ল্যাটে।”

“আচ্ছা।”

তূর্য ভিরান কে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে বাবা মায়ের সাথে আগায়।
ভিরান তুরার পাশে গিয়ে বসে। নির্ভান ভাগ্নি কে নিয়ে সোফায় বসে।

তূর্য যেতে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়, জিনিয়া দ্রুত পায়ে সরে চলে যায় সিঁড়ির দিকে। এতক্ষণ মেইন ডোরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।
তূর্য সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।

জিনিয়ার মা মেয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বড় বোনের দিকে তাকান। বোন কে টেনে নিয়ে তাঁর রুমের দিকে এগিয়ে যায়।

“কী রে এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেন?”

“তুরার ভাই তূর্য বিয়ে করেছে?”

“না, বিয়ে করলে তো বউ আসতো এখানে।”

“আমি বোঝাতে চাইছি এনগেজড নাকি।”

“না।”

“কী করে?”

“দেশের বাইরে থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছে কয়েক মাস আগে। এখন উচ্চ পর্যায়ের জব হয়েছে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে। জয়েন করেনি এখনো, কয়েক দিন পর জয়েন ডেট। তুই এসব কেনো জানতে চাইছিস?”
___________

তুরা কে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে নির্ভান, তূর্য আর তুহিন শিকদার। ওদের সাথে এসেছে ভিরান।

আজকে প্রথম তুরার পায়ে কৃত্রিম পা লাগানো হবে। তুরার পায়ের ক্ষত পুরোপুরি ঠিক হয়ে গেছে।
তুরা সহ সবাই ভীষণ এক্সাইটেড। খুশিতে আর উত্তেজনায় তুরার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।

তুরার পায়ে মেটালের কৃত্রিম পা লাগানো হয়। নির্ভান তুরার হাত ধরে দাঁড় করায়। এত গুলো দিন পর নিজের দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়াতে পেরে তুরা যেমন খুশি তেমন নার্ভাস। ঠিক ভাবে হাঁটতে চলতে পারবে তো এই কৃত্রিম পা পড়ে?

“তুরা হাঁটো।”

তুরা মুখ তুলে নির্ভানের মুখের দিকে তাকায়। নির্ভান আবার হাঁটতে বললে তুরা বাম পা টা আগে আগায় তারপর ডান পা টা আগায়। এত গুলো দিন পর ডান পায়ের উপর ভর করায় ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে না তুরা। কাত হয়ে পড়ে যেতে নিলেই নির্ভান দুহাতে আগলে ধরে দ্রুত। তূর্য ভিরান কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পাশেই। ও নিজেও তুরা কে ধরার জন্য দ্রুত এগিয়ে এসেছিল।

“আমি ধরে আছি, আস্তে আস্তে হাঁটো।”

ডান পাশ থেকে নির্ভান তুরার হাত টা শক্ত করে ধরে রাখে যেন আবার পড়ে না যায়। তুরা প্রথম যখন হাঁটতে শিখেছিল তখন ওর হাত ধরে হাটা শিখিয়েছিল ওর বাবা-মা আর ভাই। আজকে দ্বিতীয় বারের মতন হাঁটতে শেখাচ্ছে ওর হাজব্যান্ড।

অল্প কিছুক্ষণ নির্ভান কে ধরে হাঁটার পর একা একাই হাঁটতে শুরু করে আস্তে আস্তে।
কারো সাহায্য ছাড়া একা একা নিজের পায়ে হাঁটতে পেরে তুরার মুখে বিস্তর হাসি ফুটে উঠেছে। খুশিতে জ্বলজ্বল করছে ওর চেহারা। হাসি মুখে বাবা, ভাই, হাজব্যান্ড আর ছেলের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে।
ভিরান ধস্তাধস্তি করে তূর্যর কোল থেকে নেমে দ্রুত গতিতে ছুটে আসে তুরার কাছে। তুরার এক হাত শক্ত করে ধরে হাঁটতে হাঁটতে হাসি মুখে বলে,

“আম্মু তুমি একা একা হাঁটতে পারছো এখন।”

তুরা ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে। হাসপাতালের করিডোর ধরে হাঁটতে হাঁটতে মা ছেলে তিন জন কে ফেলে অনেক দূর চলে গেছে। তূর্য পেছন থেকে ডাক দেওয়ায় ঘুরে এগিয়ে আসে আবার আস্তে আস্তে।

নির্ভান ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। আর কোনো সমস্যা নেই তুরার। কিছু দিন হাঁটলেই হাটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে তারপর দৌড়াতেও পারবে। ছেলে কে কোলে নিয়েও হাঁটতে পারবে।

নির্ভান ছেলে কে কোলে তুলে নেয়। অন্য হাত দিয়ে তুরার এক হাত ধরে তারপর আগায় বাইরের দিকে।
পাঁচ জন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসে।

চৌধুরী বাড়ির গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে নির্ভানের গাড়ি। তুরা নিজের পাশের ডোর খুলে দিতেই ভিরান লাফিয়ে নেমে দাড়ায়। নানি আর দাদির দিকে দৌড়ে যেতে যেতে খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,

“নানু-দাদু আম্মু হাঁটতে পারে এখন।”

তুরা গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায়। মুক্তা শিকদার মেয়ের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করেন। তুরা নিজেও এক পা এক পা করে মায়ের দিকে আগায়।
মুক্তা শিকদারের চোখ দুটো পানিতে টুইটুম্বর হয়ে গেছে। মায়ের সামনে এসে দাঁড়াতেই চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। তুরা মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিতে দিতে বলে,

“কাদঁছো কেন আম্মু?”

মুক্তা শিকদার মেয়ে কে জড়িয়ে ধরেন।

তূর্য মাকে ধরে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে সবাই।
___________

আজ তূর্যর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে চৌধুরী ফ্যামিলি আর শিকদার ফ্যামিলি। মেয়ে দেখতে যাবে বললে ভুল হবে, বলা যায় বিয়ের পাকা কথা বলতে যাবে।

জিনিয়ার সাথে তূর্যর বিয়ের পাকা কথা হবে আজ। এই বিয়েতে জিনিয়ার ফ্যামিলিই আগে এগিয়েছিল। মেয়ে দেখতে সুন্দর আবার ভদ্র সভ্য তাই কেউ অমতও করতে পারেনি। তূর্যর প্রথম প্রথম পছন্দ না হলেও জিনিয়ার সাথে দেখা করে কথা বলার পর পছন্দ হয়।

নির্ভান জোর করে তুরা কে শাড়ি পরিয়ে দেয়।
হালকা করে মেকআপও করে দেয়।
এই নির্ভান কোন কাজ টা করতে পারে না এটাই শুধু ভাবে তুরা।

তুরা কে পুরোপুরি তৈরি করিয়ে দিয়ে ছেলে কেও তৈরি করিয়ে দেয় তারপর নিজে তৈরি হয়। আজকেও বাপ ছেলের সেম ড্রেস, সেম হেয়ার স্টাইল।

“পাপা তুমি দেখে আসো তোমার দাদু দের হয়েছে কিনা।”

ভিরান মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নির্ভান তুরার সামনে এসে দাঁড়ায়। তুরা আগে থেকেই দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিল। নির্ভান কে নিজের সামনে এভাবে দাঁড়াতে আর তাকাতে দেখে শুঁকনো ঢোঁক গিলে নেয়। এই লোকের মতলব মোটেও সুবিধার লাগছে না।

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

“ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলতে?”

“কী?”

“তোমাকে।”

বড় বড় চোখ হয়ে যায় তুরার। বিস্ময় নিয়ে বলে,

“মানে কী বলছেন এসব?”

“চোখের সামনে এমন টসটসা বউ থাকলে কোন হাজব্যান্ড নিজেকে সামলাতে পারবে বলো! আমি কিভাবে এখনো নিজেকে সামলে রেখেছে এটা ভেবেই তো আশ্চর্য হয়ে যাই।”

লজ্জায় কুঁকড়ে যায় তুরা। বদ লোক টা সব সময় ওকে লজ্জা দেয়। নির্ভান তুরার থুতনিতে হাত রেখে মুখ উঁচু করে ধরে বলে,

“কিছু করলামোই না এখনই এত লজ্জা পাচ্ছ? স্ট্রেঞ্জ।”

“লজ্জা দেন কেন?”

“কোথায় লজ্জা দিলাম? কিছু করার আগেই তো তোমার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। বিয়ের এত গুলো দিন পেরিয়ে গেল অথচ তোমার কাপাকাপি গেল না।”

“দূরে সরুন।”

“এই দূরে সরুন, দূরে সরুন বলেই তুমি এখনো আমাকে দূরে রেখেছ। অন্তত একটা দিন তো বলতে পারো কাছে আসুন।”

তুরা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলে,

“আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।”

“এত বড় অপবাদ দিও না, আমি এখনো পুরোপুরি সভ্য একটা ছেলে।”

“ভিরান চলে আসবে।”

“ভালো কথা মনে করিয়ে দিলে। আমি ভিরান কে তো বাইরে পাঠালাম এই কারণে যেন দুটো চুমু খেতে পারি এই গোলাপি অধর জোড়ায়। ভুলেই গিয়েছিলাম তোমার কাপাকাপি দেখে।”

“এই না, একদম না।”

নির্ভান তুরার ঠোঁটের দিকে আগানোর আগেই ভিরান পাপা পাপা বলে ডাকতে ডাকতে রুমে প্রবেশ করে। বেচারা নির্ভানের আর চুমু খাওয়া হয় না। দ্রুত সরে যায় বউয়ের কাছ থেকে। উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে বির বির করে বলে,

“এই মা ছেলে আমার রোমান্সের শত্রু। একজন কাছে যেতে দেয় না আরেক জন কাছে যাওয়ার আগেই মাঝখানে বাধা হয়ে আসে।”

“পাপা চলো।”

নির্ভান ঘুরে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলে,

“হ্যাঁ চলো।”

তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তুরা মুচকি মুচকি হাসছে। নির্ভান চোয়াল শক্ত করে বলে,

“চলো।”

তুরা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। শাড়ির কুচি এক হাতে ধরে আস্তে আস্তে হেঁটে রুম থেকে বের হয়।

গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতেই তূর্যর গাড়ি ছুটে আসে ওদের কাছে। কথা বার্তা বলে দুই গাড়ি আগায়।
_________

খাওয়া দাওয়া শেষে বিয়ে পাকা পোক্ত হয়। বিয়ের ডেট পড়েছে সামনের মাসের পনেরো তারিখ শুক্র বার। আর আজকে মাত্র ছাব্বিশ তারিখ।

নির্ভান তূর্য কে ঠেলে ঠুলে সোফা থেকে উঠিয়ে জিনিয়ার সাথে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়।

সংকোচ বোধ করলেও জিনিয়ার পেছন পেছন ওর রুমে আসে তূর্য। কোনো কথা না বলে উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে থাকে। জিনিয়া পেছন থেকে মৃদু স্বরে বলে,

“পিঠ দেখানোর জন্য রুমে আসলেন?”

তূর্যর হাত ঘামছে। কি কথা বলবে এখন? যা বলার আগেই তো বলা হয়ে গেছে।

“আমি দেখেছি আপনার গাঢ় নীল রঙের পাঞ্জাবির পেছন টা সুন্দর, এখন সামনে টাও দেখান।”

তূর্য ঘুরে দাঁড়ায়।

দুজন একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
দুজনেরই হার্ট বিট বেড়ে গেছে।

“আপনি এত চুপ চাপ থাকেন কেন?”

তূর্য গম্ভীর স্বরে বলে,

“কোথায় চুপ চাপ থাকি?”

“একটা কথাও বলছেন না যে, আবার উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। লজ্জা পাচ্ছেন?”

তূর্য জিনিয়ার দিকে আগাতে শুরু করে। জিনিয়া ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে, যখন একে বারে কাছে চলে আসে তখন পেছাতে পেছাতে বলে,

“এভাবে আগাচ্ছেন কেন?”

তূর্য আগের মতোই গম্ভীর স্বরে বলে,

“বেশি কথা বলতে বলো না, ধরে কিন্তু খেয়ে ফেলবো এখনই।”

“মা…. মানে? কী… কী খাবেন?”

“এত সাঁজতে বলেছে কে? আবার শাড়িও পড়েছ। আমাকে পাগল করার ধান্দা তাইনা? বেশি তাকাতে বললে আর কথা বলতে বললে আজকেই ধরে নিয়ে চলে যাব।”

জিনিয়া হা করে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। এই লোক তো ওর ধারণার পুরো উল্টো টা। কি বজ্জাত লোক, কিভাবে থ্রেড দিচ্ছে। জিনিয়া তো ভেবেছিল লজ্জায় বোধহয় কথা না বলে উল্টো ফিরে দাঁড়িয়ে আছে।

তূর্য জিনিয়ার একদম কাছে এসে দাঁড়ায়। জিনিয়ার পেছানোর মতো আর জায়গা নেই। তূর্য এক আঙুল দিয়ে জিনিয়ার থুতনি উঁচু করে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে,

“তুমি আমাকে যেমন ভেবেছো আমি মোটেও তেমন নই। সম্পর্ক টা হালাল হলে বুঝতে পারবে আমি কেমন।”
____________

জিনিয়া দের বাড়ি থেকে ডিনার সেরে নয়টা নাগাদ বের হয় সবাই। ভিরান এবার তূর্যর কোলে বসেছে ওদের গাড়িতে। আজকে মামার বাসায় যাবে, মামার সাথে থাকবে। নির্ভানও খুব বেশি জোর করেনি নিজের সাথে নেওয়ার জন্য। তুরা জোরাজুরি করলেও ভিরান যায়নি ওদের গাড়িতে। আজকে মামার সাথে থাকার ভূ’ত ভর করেছে মাথায়। যখন যা মনে আসে তাই করতেই হবে ওকে।

দুই গাড়ি এক সাথে স্টার্ট দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।

নির্ভান ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে আড়চোখে তুরার দিকে তাকায় কয়েক বার। গাড়ির ভেতর খুব বেশি আলো না থাকায় তুরার দৃষ্টিতে পড়ে না।

বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে গাড়ি। গার্ড গেট লাগিয়ে দেয়। নওশাদ চৌধুরী আর মেরি চৌধুরী আগে আগে এগিয়ে যান। তুরা নেমে নির্ভানের জন্য অপেক্ষা করে। নির্ভান গাড়ি পার্ক করে রেখে এসে তুরার হাত ধরে ভেতরের দিকে আগায়।

নওশাদ চৌধুরী আর মেরি চৌধুরী নিজেদের রুমে চলে গেছেন সোজা। আর নিচে আসবে বলে মনে হয় না।

তুরা সোফায় বসে। পানি পিপাসা পেয়েছে এই টুকু রাস্তা আসতে গিয়েই। জিনিয়া দের বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে পানি পান করেনি, খাবার খেয়ে মাত্র দুই ঢোঁক পানি পান করেছিল।

পানি চাইলে মেড পানি এনে দেয়। নির্ভান পাশের সোফায় বসে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।
নির্ভান মেড কে গিয়ে শুয়ে পড়তে বলে, সকাল সকাল আবার উঠতে হবে।

মেড চলে যায় রুমের দিকে। নির্ভান কথা শেষ করে নিজেও পানি খায় কিচেনে গিয়ে। কিচেন থেকে বেরিয়ে দেখে তুরা ফোনে কথা বলছে। আম্মু আম্মু ডাকায় বুঝতে পারে মুক্তা শিকদার কল করেছেন।

ফোন রাখতেই নির্ভান সোফার কাছে এগিয়ে আসে। তুরার দিকে তাকিয়ে বলে,

“রুমে চলো।”

তুরা বলে না কিছু। নির্ভান এগিয়ে গিয়ে মেইন লাইট গুলো অফ করে দিয়ে নাইট ল্যাম্প গুলো জ্বালিয়ে দেয়। তুরা কে সোফা ছেড়ে উঠতে না দেখে সোফার দিকে এগিয়ে আসে আবার। পেছনে দাড়িয়ে বলে,

“কী হলো? রুমে চলো।”

তুরা মুখ তুলে তাকায় নির্ভানের মুখের দিকে। নির্ভান ক্ষীণ খন তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করে দুই হাতে তুরার মুখ আগলে ধরে খপ করে চেপে ধরে ওষ্ঠ জোড়া। নিজের ওষ্ঠে নির্ভানের প্রথম ওষ্ঠের ছোঁয়া পেয়ে ছটফটিয়ে ওঠে তুরা। বেশ কিছুক্ষণ পর তুরা কে ছেড়ে দেয় নির্ভান। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতের উল্টো পাশ দিয়ে নিজের ওষ্ঠ জোড়া মুছে নেয়।

হঠাৎ পেছন থেকেই সোফার উপর লাফিয়ে উঠে যায়। তুরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আবার তুরা কে চেপে ধরে সোফায় শুইয়ে ফেলে।
বেশ কিছুক্ষণ পর আবার ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ান। তুরা কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,

“আজকে যতই কাপাকাপি করো, মুক্তি নেই আমার কাছ থেকে। আজকে ভিরানও নেই, তাই অজুহাত দেওয়ারও কিছু নেই।”

তুরা কিছু বললেও নির্ভান কানে তোলে না। রুমে এসে তুরা কে বেডে শুইয়ে দিয়ে দ্রুত ডোর লক করে দেয় ভেতর থেকে। গায়ের শার্ট খুলতে খুলতে বেডে উঠে যায়।
তুরার শাড়ি খুলে ফেলে নিজেই। দ্রুত হাতে জুয়েলারী গুলো খুলতে খুলতে বলে,

“মোটেও বাধা দেবে না কিন্তু।”

চলবে…………