ভাঙা পাঁজরে বসন্ত পর্ব-২৩ এবং শেষ পর্ব

0
14

#ভাঙা_পাঁজরে_বসন্ত
#সানা_শেখ
#পর্ব_23 (অন্তিম পর্ব)

সকালে নির্ভানের ঘুম আগে ভেঙে যায়। তুরা তখনো ওর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ। তুরার ভেজা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। নির্ভান এক আঙুল দিয়ে তুরার মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দেয়। মুখ নিচে নামিয়ে সারা মুখে ওষ্ঠ ছোঁয়ায়। বুকের সাথে আরেকটু চেপে ধরতেই তুরার ঘুম হালকা হয়ে আসে। ছটফট করে নির্ভানের বুক থেকে মুখ তুলে তাকায়। নাইট ল্যাম্পের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে নির্ভান ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে।
লজ্জা পেয়ে দ্রুত আবার মুখ গুঁজে দেয় নির্ভানের বুকে। নির্ভান এক টানে নিজের উন্মুক্ত বুকের ওপর তুলে নিয়ে বলে,

“সারা রাত ধরে এত আদর করলাম তার পরেও লজ্জা কমেনি? এখনো কাপাকাপি করছো দেখছি। লজ্জা আর কাপাকাপি কমানোর জন্য আরো আদর করতে হবে বুঝতে পেরেছি।”

তুরা নির্ভানের বুকে মুখ গুঁজে রেখেই বলে,

“নিচে নামান আমাকে।”

“কেন?”

“আমি নামব।”

“কিন্তু আমি নামাবো না।”

“এমন করেন কেন?”

“কেমন করেছি? এখন তো কিছুই করিনি। যা করার তাতো রাতেই করেছি।”

“আমি ভেবেছিলাম আপনি ভালো মানুষ।”

“আমি কখন বললাম আমি খারাপ মানুষ?”

তুরা আর কিছু বলে না। এই লোকের সঙ্গে কথায় পাড়া যাবে না।

“তুরা আমার দিকে তাকাও।”

“না।”

“তাকাও।”

তুরা মুখ তুলে তাকায়। লজ্জায় চোখ মুখ পালাই পালাই করছে। নির্ভান এক হাতে তুরার চুল গুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে ধরে রাখে। আরেক হাত দিয়ে টেনে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। নির্ভান কি করতে চাইছে বুঝতে পেরে দ্রুত নির্ভানের ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়। দুই হাতে নির্ভানের গলা জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।

“আর না।”

“কী না?”

“আপনি যা করতে চাইছেন?”

“কি করতে চাইছি আমি?”

“আমি জানি আপনি কি করবেন।”

“আশ্চর্য, কী করবো আমি?”

তুরা আবারো চুপ হয়ে যায়। নির্ভান তুরা কে নিচে ফেলে নিজে তুরার ওপরে উঠে যায়। জোর করে নিজের গলা থেকে তুরার হাত ছাড়িয়ে দেয়। তুরা দ্রুত কাত হওয়ার চেষ্টা করলে নির্ভান ওকে ধরে রেখে ওপরে ভর ছেড়ে দেয়।

“এখন বলো কি করবো আমি।”

তুরা শুঁকনো ঢোঁক গিলে বলে,

“ঠোঁটে আর চুমু খাবেন না।”

নির্ভান গা ঝাঁকিয়ে হেসে ওঠে। তুরার গাল টেনে বলে,

“আমি তো একটা কথা বলার জন্য তোমাকে টেনে মুখোমুখি করেছিলাম। এখন তুমি যখন চাইছো তখন তো খেতেই হবে।”

“এই না

তুরা পরের কথা গুলো বলার আগেই নির্ভান ওষ্ঠ জোড়া চেপে ধরে। বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে তুরার বক্ষে মুখ গুঁজে বলে,

“আমি একটু পর অফিসে যাব। ফিরতে ফিরতে রাত হবে বোধহয়। ভিরান কে নিয়ে রাতে ফিরবো একে বারে। এখন আর তোমাকে উঠতে হবে না। ঘুমিয়ে থাকো, সারা রাত তো ঘুমোতে পারোনি।”

“সারা দিন আমি একা একা থাকব?”

“দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবে, আর আম্মু তো আছেই।”

তুরা আর কিছু বলে না।

“শরীর ব্যথা করছে এখনো?”

“না, ভার ভার লাগছে।”

“ঠিক হয়ে যাবে, তুমি ঘুমাও আমি যাই। লাঞ্চের সময় কল করব।”

তুরার ওপর থেকে উঠে বেড থেকে নেমে দাড়ায়।
চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে ব্ল্যাঙ্কেট দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। বদ লোক সারা রাত একটুও ঘুমোতে দেয়নি। রাত জেগে খিদে পেয়ে গিয়েছিল। ভোর রাতে গোছল করার পর নির্ভান কিচেনে গিয়ে দুজনের জন্য নুডুলস রান্না করে নিয়ে এসেছিল। খেয়ে তারপর দুজন ঘুমিয়েছিল ফজরের পর।

নির্ভান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে তুরা ঘুমিয়ে গেছে আবার। অফিসে যাওয়ার জন্য একে বারে তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হয় নাইট ল্যাম্প অফ করে।

নিচে নেমে এসে দেখে ওর বাবা মা সোফায় বসে অপেক্ষা করছে ওর জন্য।
মেরি চৌধুরী ছেলের দিকে তাঁকিয়ে বলেন,

“তুরা ঘুম থেকে ওঠেনি?”

“উঠেছিল ঘুমিয়েছে আবার। খেতে চলো।”

মেরি চৌধুরী আর কিছু বলেন না। দুজন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ান।
নির্ভান হাতের ফাইল আর ল্যাপটপ সোফার উপর রেখে বাবা মায়ের সাথে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। নয়টার অধিক বেজে গেছে অলরেডী।
____________

তুরা বারোটা নাগাদ ঘুম থেকে ওঠে। কৃত্রিম পা পড়ে নিয়ে বেড থেকে নেমে দাড়ায়। চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে।

ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে দাড়াতেই চোখ পড়ে নিজের ঘাড়ে-গলায়। নির্ভানের দেওয়া প্রতিটা লাভ বাইট এখনো স্পষ্ট হয়ে আছে। দাগ গুলো এখনো মেশেনি। রাতের ঘটনা স্মরণ হতেই লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেয়। দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে দ্রুত। গত রাত থেকে যত লজ্জা পাচ্ছে এত লজ্জা এর আগে কোনো দিন পায়নি তুরা।
বদ লোক টা ওকে আরো লজ্জা দেওয়ার জন্য কত কিছু যে বলেছিল রাতে।

কিছু সময় পর মুখের ওপর থেকে হাত সরায়। আয়নার দিকে আর তাকায় না। ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে দাঁত ব্রাশ করতে শুরু করে।
চোখ তুলে আবার আয়নার দিকে তাকাতেই নিজের চেহারা দেখে নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।
লজ্জায় এখন নিচেও যেতে ইচ্ছে করছে না।

এক টার পর রুম থেকে বের হয়। ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে নিয়েছে ভালো ভাবে যেন কারো নজরে না পড়ে।

ড্রয়িং রুমে এসে শাশুরি মায়ের সাথে দেখা হয়। উনি রুমের দিকে যাচ্ছিলেন। তুরা কে দেখে বলেন,

“উঠে গেছো দেখছি, তুমি খাবার খেয়ে নাও আমি একটু পর খাব।”

“আব্বু?”

“অফিসে গেছে।”

তুরা আর কিছু না বলে ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে আসে। চেয়ার টেনে বসতেই মেড এগিয়ে এসে খাবার বেড়ে দেয়।

খাবার খেয়ে নিচে আর বসে না তুরা। সোজা রুমে চলে আসে। ফোনে রিং বেজে চলেছে। দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে ফোন হাতে তুলে নেয়। নির্ভান কল করেছে।

কল রিসিভ করে ফোন মুখের সামনে ধরে বিছানায় উঠে বসে। নির্ভান ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে হেসে বলে,

“কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ, কখন উঠেছ?”

“ঘণ্টা খানিক আগে।”

“খেয়েছ?”

“খেয়ে আসলাম।”

“কেমন ফিল হচ্ছে?”

“কেমন ফিল হবে?”

“খারাপ লাগছে?”

“ভালো লাগছে না।”

“আমি আসব?”

“কেন?”

“তোমাকে আদর করতে। আদর করলে অবশ্যই ভালো লাগবে।”

তুরার ইচ্ছে করলো নির্ভানের মুখের ওপর ঠাস করে কল টা কেটে দিতে।

“আপনি আগামী এক বছর বাড়িতে আসবেন না।”

“কেন?”

“আসবেন না।”

“আমাকে ছাড়া এক বছর থাকতে পারবে?”

“কেনো পারবো না? অবশ্যই পারব।”

“কিন্তু আমি তো পারবো না। আমি এক রাতও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”

নির্ভানের বলার ধরন দেখে তুরার চোখে মুখে লজ্জা ছড়িয়ে পড়ে আবার। নির্ভান তুরা কে লজ্জা পেতে দেখে বলে,

“এভাবে লজ্জা পেও না তো। তোমাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখলে রোমান্টিক মুড চলে আসে।”

তুরা কল কেটে দেয়। নির্ভান হেসে আবার কল করে। পর পর দুবার রিং হয়ে কেটে যায় রিসিভ করে না। নির্ভান ভয়েস মেসেজ পাঠায়,

“কল রিসিভ করো নয়তো আমি বাড়িতে চলে আসব।”

বাধ্য হয়েই কল রিসিভ করে তুরা। নির্ভান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে,

“দুপুরে খেয়েছেন?”

“খাবো একটু পর।”

তুরা বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেলো না। ফোনে কথা বলতে গেলে কথা ফুরিয়ে যায় দ্রুত।
নির্ভান নিজেই বলে,

“বিকেলে শাড়ি পরবে।”

“কেন?”

“শাড়ি পরলে অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগে তোমাকে। দেখতেও বড় বড় লাগে।”

“আমি শাড়ি পরতে পারি না।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি এসে পরিয়ে দেবো আবার।”

গত কালকের ঘটনা স্মরণ করে তুরা। দ্রুত দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,

“শাড়ি পরার দরকার নেই।”

“তাহলে কিছু পরারই দরকার নেই।”

কল কেটে দিয়ে অফলাইন হয়ে যায় তুরা। নির্ভান গা ঝাঁকিয়ে হেসে ওঠে। তুরা কি জানে ও লজ্জা পেলে ওকে কত আদুরে লাগে? লজ্জা রাঙা তুরা কে দেখতে তো নির্ভানের ভীষণ ভালো লাগে, তাইতো ইচ্ছে করেই বার বার লজ্জা দেয়। এই ছোট মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত মায়া, নেশা আর জাদু আছে যা নির্ভান কে ওর দিকে আকর্ষণ করে বার বার।

তুরা ফোনের স্ক্রিনে থাকা নির্ভানের ফটোর দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখের সামনেই লোক টা দিন দিন কিভাবে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে! নির্ভান আগে মোটেও এমন ছিল না। গুরুগম্ভীর নির্ভান যে নিজেকে এভাবে পরিবর্তন করে ফেলবে তা অকল্পনীয়।

এই বাড়িতে আসার পর প্রথম প্রথম তুরার অনেক খারাপ লাগতো কষ্ট হতো। নির্ভান অফিসে চলে যেত, ভিরান কিন্ডার গার্ডেনে। বারোটা পর্যন্ত তুরা স্বামী সন্তানের দেখা পেত না। মেরি চৌধুরী ওর কাছে থাকলেও তুরার মন ভালো হতো না। বাবার বাড়িতে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করত। বাবা-মা ভাই তিন জনের কথা অনেক বেশি মনে পড়ত। ভিরান বাড়িতে ফিরে আসলে অত বেশি খারাপ লাগতো না।

নির্ভান কল করলেই ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে কেঁদে ফেলত। নির্ভান হাজার টা কথা বলে তুরার কান্না বন্ধ করত। মন ভালো করার চেষ্টা করত। অল্প কিছুক্ষণ পর পর কল করে তুরার খোঁজ খবর নিত, এখনো নেয়।

বাবা-মা ভাইয়ের সাথে কথা বলতে গিয়েও একই কাজ করত। এত বেশি আবেগী এই মেয়েটা তা বলার মতো না। নির্ভান নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তুরা কে ভালো রাখতে, হাসি-খুশি রাখতে।
________________

সন্ধ্যার পর পর ভিরান কে কোলে নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে নির্ভান। তুরা কে দেখেই কোল থেকে নেমে দুই হাত প্রসারিত করে দৌঁড়ে আসে তুরার কাছে, জাপটে ধরে দুই হাতে।

“আম্মু কেমন আছো?”

“ভালো আছি আব্বু, তুমি কেমন আছো?”

“ভালো আছি। জানো মামার সাথে আমি কোথায় কোথায় গিয়েছিলাম আজকে?”

“কোথায় কোথায়?”

“পার্কে গিয়েছিলাম, রাইডেও চড়ে ছিলাম। অনেক মজা হয়েছে। তুমি আমি আর পাপা আগামী কাল কে আবার যাব। অনেক মজা হবে।”

ছেলে কে টেনে তুলে চুমু খায় তুরা। ভিরান মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে নিজেও চুমু খায়। ভিরানের গালের সাথে গাল ঠেকিয়ে তুরা বলে,

“তোমাকে আমি অনেক মিস করেছি আব্বু।”

“আমিও তো করেছি।”

“তাহলে আসোনি কেন আমার কাছে? কল করে যে বললাম চলে আসতে আসলে না কেন?”

“মামাই তো আসতে দেয়নি, বললো বিকেলে নিয়ে আসবে।”

“পাপা রুমে চলো চেঞ্জ করতে হবে।”

বাবার কথা শুনে মায়ের কোল থেকে নেমে দাড়ায়। নির্ভান তুরার দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে রুমে আসার জন্য। তুরা দেখেও না দেখার মতো করে বসে রইল। নির্ভান সরু চোখে তাকিয়ে থেকে ছেলে কে নিয়ে রুমের দিকে এগিয়ে যায়। এখন রুমে আসছে না ভালো কথা, রাতে কি ওর হাত থেকে বাঁচতে পারবে? রাতে কোথায় পালাবে? সেই নির্ভানের বুকেই আসতে হবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে প্রবেশ করে তুরা। নির্ভান শাওয়ার নিয়ে কোমরে টাওয়েল পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ভিরান নিচে দাদা দাদির সাথে গল্প জুড়ে বসেছে।

নির্ভান কে ড্রেস না পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,

“ড্রেস না পরে, টাওয়েল পরে এভাবে ফ্যাশন শো করছেন কেন?”

“বউ কে দেখাচ্ছি আমি কত হ্যান্ডসাম, ভালো ভাবে তাকিয়ে দেখো। এমন একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে তুমি এমন অবিচার কিভাবে করো?”

“আমি আবার কি করলাম?”

“এই যে ডাকলে কাছে আসো না। ধরতে গেলে ছুঁতে গেলে দূরে সরুন দূরে সরুন।”

“ড্রেস পরুন দ্রুত।”

নির্ভান টাওয়েল খুলে ফেলতে উদ্যত হয়। তুরা তাড়াহুড়ো করে বলে,

“আরেহ কি করছেন, আগে ট্রাউজার পরে নিন।”

“পরলেই হলো, আগে পরে কোনো কথা আছে!”

“আপনি তো ভারী নির্লজ্জ্ব হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।”

“হতে হচ্ছে, না হয়ে তো উপায় দেখছি না। নির্লজ্জ্ব না হলে দ্বিতীয় বার বাবা হবো কিভাবে?”

ব্যাস, হয়ে গেল। তুরা নিজের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। নির্ভান এগিয়ে এসে তুরার মুখের ওপর থেকে ওড়না টেনে সরানোর চেষ্টা করে বলে,

“বলেছি না আমার সামনে লজ্জা পাবে না। তুমি লজ্জা পেলে আমি নিজের কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাই।”

ওড়না টেনে সরিয়ে দেখে ইতি মধ্যেই চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। মুখ আগলে ধরে বেশ কয়েক টা চুমু খেয়ে বলে,

“তখন রুমে আসতে বললাম আসোনি কেন?”

“আম্মু ছিল তো তখন ওখানে। আম্মুর সামনে আপনার পেছন পেছন কিভাবে আসব?”

“আমাদের সামনে আব্বুর পেছন পেছন আম্মু যেভাবে রুমে ঢুকে যায় ঠিক সেভাবেই।”
_____________

রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে তুরা। একটু পরেই আসে ভিরান। বেডে উঠে তুরার কোলে বসে দুই পা দিয়ে তুরার কোমর পেঁচিয়ে ধরে। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আম্মু একটা বাবু এনে দাও না।”

এমন কথা শুনে তুরার মুখ অটোমেটিক হা হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না।।ভিরান আবার বলে,

“এক টা ভাইয়া এনে দাও তাহলে দুজন মিলে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলতে পারব। ও আম্মু এনে দাও না।”

কি আদুরে গলায় যে কথা গুলো বললো ভিরান। তুরা ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে বলে,

“তোমার পাপা কে বলো।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, বলে আসি।”

“এখন না পরে। এখন ঘুমাও।”

“না, এখনই বলব।”

এর মধ্যে নির্ভান প্রবেশ করে রুমে। ডোর লক করে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

“কি বলার কথা হচ্ছে?”

ভিরান মায়ের কোল থেকে উঠে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

“একটা বাবু এনে দাও।”

ছেলের কথা শুনে শকড নির্ভান। কি বলছে এই ছেলে? এর কাজই সব সময় উল্টা পাল্টা আবদার করা।

“পাপা।”

নির্ভান তুরার দিকে তাকায়। তুরা তাড়াহুড়ো করে বলে,

“আমি ওকে কিছু বলিনি। ও নিজেই এসে আমার কাছে বাবু চাইছে।”

ভিরান মায়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বাবার দিকে তাকায় আবার। আবদারের সুরে বলে,

“পাপা এনে দাও না একটা।”

“তোমার আম্মুই তো একটা বাবু, আরেক বাবু সামলাবে কিভাবে?”

“উম আম্মু বাবু না, আম্মু কত বড় হয়ে গেছে।”

“তোমার মাথায় এসব কে ঢুকিয়েছে?”

“কেউ না। একটা ভাইয়া হলে আমরা দুজন ফুটবল আর ক্রিকেট খেলতে পারব।”

“তুমি আরো একটু বড় হও সাথে তোমার আম্মুও আরেকটু বড় হোক।”

“আমি বড় হয়েছি তো, আম্মুও বড় হয়ে গেছে।”

“ভিরান সব সময় জেদ করবে না। তোমার আম্মু এখনো ছোট। তিন বছর পর ভাইয়া নাহয় বোন এনে দেব।”

“কথাই বলবো না তোমার সাথে।”

অভিমানে বাবার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে ঠাস করে শুয়ে পড়ে বালিশে। অভিমানী সুরে বলে,

“ওদের ভাই আছে, আমার ভাই নেই। ওরা ওদের ভাইয়ের সাথে খেলে, আমি খেলতে পারি না।”

আস্তে আস্তে বললেও তুরা আর নির্ভান স্পষ্টই শুনেছে সব কথা। কাদের কথা বলছে ভিরান, দুজনের একজনও বুঝতে পারছে না। নির্ভান ফ্রেস হয়ে এসে নাইট ল্যাম্প অন করে মেইন লাইট অফ করে দেয়। বেডে উঠে জোর করে ছেলে কে তুলে নেয় বুকের উপর। আদর করে বলে,

“পাপা রাগ করেছো কেন?”

ভিরান চুপ করে থাকে। নির্ভান আবার বলে,

“আচ্ছা ভাইয়া এনে দেব।”

ভিরান খুশি হয়ে মুখ তুলে বলে,

“সত্যি?”

“হ্যাঁ, কিন্তু একটু সময় লাগবে।”

“কত দিন?”

“এটা তো শিওর হয়ে বলতে পারছি না পাপা তবে খুব শীগ্রই। এই যে ধরো সাঁইত্রিশ বা আটত্রিশ মাস পর। শিওর এনে দেবো পাপা। আল্লাহ তায়ালা চাইলে তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে।”

ভিরান খুশি হয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরে। বাবার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলা কথা গুলো ওর ছোট্ট মস্তিষ্ক সেভাবে ধরতে পারলো না।

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি এনে দেবে কিন্তু।”

“ইনশা আল্লাহ, এখন ঘুমাও।”

“আম্মু আসো।”

তুরা এগিয়ে এসে নির্ভানের বাম বাহু তে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরে ভিরান কে সহ। নির্ভান দুহাতে দুজন কে আগলে রাখে।

বেশি সময় লাগে না ভিরান ঘুমিয়ে যায়। নির্ভান তুরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ। তুরা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নির্ভান বলে,

“এভাবে মাছের মতো চোখ খোলা রেখে কিভাবে ঘুমাও তুমি?”

তুরা চোখ মেলে তাকায়।

“কি বললেন?”

“মাছের মতো চোখ খোলা রেখে কিভাবে ঘুমাও সেটাই জিজ্ঞেস করলাম।”

“ঘুমালে আবার কারো চোখ খোলা থাকে নাকি?”

“অন্যদের থাকে কিনা জানিনা কিন্তু তোমার থাকে।”

“মিথ্যে কথা বলছেন আপনি।”

“একটুও মিথ্যে না, পুরোটাই সত্যি।”

“মিথ্যে কথা।”

“প্রমাণ লাগবে?”

“থাকলে দেখান?”

“আমার ফোন টা দাও দেখি।”

তুরা পাশ থেকে ফোন টা তুলে নির্ভানের হাতে তুলে দেয়। নির্ভান ফোন ঘেঁটে একটা পিক বের করে তুরার মুখের সামনে ধরে ফোন।

“এই যে দেখো। মাছের মতো চোখ খোলা রেখেই ঘুমাচ্ছ।”

তুরা ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ভীষণ অবাক হয়ে গেছে, নিজের চোখ জোড়া অর্ধ খোলা দেখে নয়, ফটো টা দেখে। বিস্ময় নিয়ে নির্ভানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই ছবি টা তো ওই দিনের মনে হচ্ছে। ওই যে একদিন রাতে কল করেছিলেন যে।”

নির্ভান তুরার ওষ্ঠ জোড়ায় চুমু খেয়ে বলে,

“হ্যাঁ এটা ওই দিনেরই ফটো। ওই রাতে নিজের অজান্তেই স্ক্রিন শট দিয়ে রেখেছিলাম।”

“মানে? আপনি আগে থেকেই

তুরা বাকি কথা বলার আগেই নির্ভান বলে,

“জানিনা কেনো এমন করেছিলাম সেদিন। আমি তোমার মায়ায় পড়েছিলাম আরো পড়ে, হয়তো বা আগেই পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি। সত্যি বলতে কখন পড়েছি আমি নিজেও জানি না। তুমি পুরোটাই মায়া, যেই মায়ায় আমাকে আবদ্ধ করে ফেলেছো আস্তে আস্তে।”

তুরা কথা না বলে নির্ভানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নির্ভান ভিরান কে পাশে শুইয়ে দেয় একটু দূরত্ব বজায় রেখে। ঘুরে তুরার ওপরে উঠে যায় সেকেন্ডের মধ্যে। এক হাতের উপর ভর করে অন্য হাত দিয়ে তুরার গাল ছুঁয়ে বলে,

“এই যে মৎস্য কন্যা, জাদু কন্যা, মায়াবী রানী যেই হও না কেন আসো দুজন রোমান্স করি।”

“ভিরান আছে।”

“ভিরান আছে এই অজুহাত দিয়ে কোনো কাজ নেই। ভিরান সকালের আগে আর ঘুম থেকে উঠবে না। ভিরান কি বললো মনে নেই! ভিরানের ভাই লাগবে, আর আমারও আদর লাগবে।”

তুরা কে কিছু বলার সুযোগ দেয় না নির্ভান। মুহূর্তেই দখল করে নেয় নরম গোলাপী ওষ্ঠ জোড়া। একটু ছটফটিয়ে শান্ত হয়ে যায় তুরা। দুই হাতে খামচে ধরে নির্ভানের টিশার্ট।

কয়েক মুহূর্ত পর তুরা কে ছেড়ে দিয়ে টিশার্ট খুলে মুখ ডুবায় তুরার ঘাড়ে। উন্মুক্ত পিঠে আঁচড় লাগতে শুরু করে তুরার নখের।

আবারো চার দেয়ালের ভেতরে ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যেতে শুরু করে দুজন।

~ সমাপ্ত ~