#ভাড়াটে_মরশুম
|সূচনা পর্ব|
লাবিবা ওয়াহিদ
দুইদিন যাবৎ আব্বা আমার সাথে কথা বলেন না। সকালে অফিস যাওয়ার আগে ছুটে ছুটে নাস্তা বানানোর সময়েও আব্বা আবদার করেন না বলে, “আরেক কাপ চা-টা বানিয়ে দিয়ে যা।”
আমারও আর অভিযোগ করতে করতে দেরী হওয়া সত্ত্বেও আরেক কাপ চা বানানো হয় না। ব্যাপারটা খেয়াল করিনি সেভাবে। অফিস, টিউশনির ভারে আজকাল শরীর যেন চলতে চায় না। বিছানা কিংবা আরামের স্পর্শ পেলেই কেমন দু’চোখ ভরে ঘুম নেমে আসে। ইচ্ছে করে দুই পা মেলে দিয়ে চোখ বুজি। মাসের শেষ, দুদিন সরকারী ছুটি। এই ছুটিতে দেখা গেল অবসর পেলাম। নয়তো ইদানীং ছুটি পেলেও কেন যেন অবসর মিলত না। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও আজ ঘুম দ্রুত ভেঙে গেল। ওইযে, প্রতিদিনকার দ্রুত ওঠার অভ্যেস। তবে অনুভব করলাম রাতের ঘুম বড্ড ভালো হয়েছে। তরতাজা, স্বচ্ছ অনুভূতিতে মন-মস্তিষ্ক ভরপুর। নাস্তা বানানোর সময়ে খেয়াল করলাম আব্বা কেচি গেটের তালা খুলছেন। ফজরের নামাজ আব্বা মসজিদেই পড়েন, এরপর হাঁটাহাঁটি করে, কারো না কারো সাথে গল্প জমিয়েই ফিরেন। আমি চায়ের পাতিলের ফুটন্ত পানিতে নজর রেখে আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, “চায়ের সাথে কী দেব আব্বা?”
আব্বা ভীষণ খাদ্যরসিক মানুষ। তিনি সব ভুললেও খাবারের কোনো পদ ভুলেন না। হাতে টাকা থাকলে পারেন না রোজ রোজ বাজারটা তুলে আনতে। এমন কী রান্নাঘরে কোন তাকে, কোন বয়ামে কী থাকে তাঁর সব মুখস্থ। কোনো কিছু শেষ হলেই আব্বা সময় নেন না, সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “স্ট্রিট বেকারীর ঝালটোস্টটা খাই না কতদিন। আনিস ত, বিকালে চায়ের সাথে খাব।”
কিন্তু উনার শুধু সমস্যা একটাই, তিনি রান্না করতে জানেন না। এখানে অবশ্য ভিন্ন গল্প আছে। আম্মা ভীষণ ভালো রান্না করতেন। আম্মার হাতের রান্নার লোভে তাঁর কখনো রান্না শেখার প্রয়োজনই পড়েনি। তিনি আরও বলতেন, “আমি রান্না শিখলে তো বিরাট সমস্যা। অভিমানের সময় গাল ফুলিয়ে না রেঁধে ঘরে বসে থাকবে। খুদা পেলে বলবে নিজে রেঁধে খাও। এখন তো রান্না পারি না বিধায় অভিমান দূরে ঠেলে হলেও আমার জন্য রাঁধে, এই অনুভূতি জানেন কত প্রবল?”
আম্মা জানতেন আব্বার এই ধরণের অযুহাত। খুব লজ্জা পেতেন আব্বার কাণ্ডে। লজ্জায় আব্বা মুখী হতেন না আম্মা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মায়ের লাল মুখটা দেখতাম, কী যে আদুরে লাগত। তখন আমার বয়সটাই বা কত ছিল, আট কী নয়? আম্মা দ্রুত চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, আব্বাও রান্না শিখলেন না। থেকে গেলেন পুরানো রবিন মালেক হয়ে। তবে এখনকার রবিন মালেকের গায়ে বয়সের ছাপ পড়েছে, বুকে শূন্যতা বেড়েছে, সম্ভবত বিষাদও।
আব্বার সাড়াশব্দ না পেয়ে আমি তাকালাম, আব্বার দিকে। কেচি গেটের ভেতরেই একটা চেয়ারে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছেন, মুখজুড়ে পরিচিত সেই স্বচ্ছতা নেই। সেখানে জমেছে যেন বিষণ্ণতা। আমি হাতের কাজ ছেড়ে আব্বার দিকে ছুটলাম। আব্বার ধারে যেতেই দেখলাম তাঁর সাদা পাঞ্জাবি, কিছুটা পুরানো হয়ে যাওয়া লুঙ্গিটা ধুলোবালিতে মাখোমাখো। আমি দ্রুত করে সেসব ঝেড়ে দিলাম ব্যস্ত হাতে। আব্বা অস্বাভাবিক শান্ত চোখে দেখলেন। জিজ্ঞেস করলাম,
–“ধুলো কেন আব্বা? কী হয়েছে? তুমি ঠিক আছ?”
শেষ প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গেই বাবার বা হাতের কবজির খানিকটা ছিলে যাওয়া অংশ দেখে আমি আঁতকে উঠি। দ্রুত আব্বাকে টেনে ভেতরের রুমে নিয়ে গেলাম। দুই রুমের ছোট্ট ফ্ল্যাট। তিনতলা এই বাড়িটা আমাদের নিজস্বই। তবে আব্বার ভাইদের সাথে ভাগে ভাগে। ভাগে আমরা নিচতলা পেয়েছি। দুইটা ইউনিট, আরেকটা ফ্ল্যাটে আপাতত তালা দেওয়া। আমাদের বাড়িতে কখনো ‘টু-লেট’ প্লেট ঝুলে না। তাই সহসা কেউ বুঝতে পারে না নিচের ঘরটা খালি নাকি ভাড়ায় আছে। আব্বা ভীষণ বুঝে শুনে ভাড়া দেন, নিজে ভাড়াটে খুঁজে আনেন। আবার নিজেই ভাড়া ছাড়া ভাড়াটে চালান। কেন যেন আমাদের ভাড়াটে কপালে কালো দাগ আছে। আজ অবধি একজন ভাড়াটেও ঠিকঠাক ভাড়া দেয়নি, প্রত্যেকেরই এক দুইবার গ্যাপ গেছে। খোঁজ নিলে জানা যেত প্রবল আর্থিক সমস্যা।
আব্বা তাঁর ক্ষতের যত্ন করতে দিলেন না আমায়। কেমন যেন বারবার গুটিয়ে নিচ্ছেন হাত। আমি শক্ত করে শাসনের সুরে বললাম, “দেখি হাতটা।”
আব্বা এবার আর হাত গুটালেন না। আমি ক্ষত পরিষ্কার করতে করতে ফুঁ দিচ্ছি। বুকটা এখনো থরথর করে কাঁপছে। পথে-ঘাটে কিছু হলো নাকি আব্বার সাথে? আব্বার মতো ঝুট-ঝামেলাহীন মানুষের সাথে কেই বা কী করবে। জীবনে আব্বার থেকে লোকে টাকা মে*রে খেলেও কখনো শারীরিক ক্ষতি করেনি। কিন্তু তবুও ত, মনের কোণের ভয়টা জোরালো হয়েই থেকে যায়। আব্বাকে নরম গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
–“কী করে পড়ে গেছ?”
আব্বা তার মোটা চশমার ফাঁকে আমাকে দেখলেন, মুখটা এখনো তাঁর বিবর্ণ। থমথমে গলায় বললেন, “কোথায় যেন পায়ে পাথর ঠেকল, টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেছি।”
আমার ভীষণ খারাপ লাগল। বাবা আমার আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। যেন আমার যতটুকু জানা দরকার, ততটুকু ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন। আমিও দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর প্রশ্ন করলাম না। আব্বার প্রিয় প্রসঙ্গে ফিরলাম, “বললে না তো কী খাবে?”
আব্বা আমাকে অবাক করে দিয়ে জবাব দিলেন না। আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রান্নাঘরে ছুটলাম। আব্বার উত্তরের অপেক্ষায় তাঁকে না খাইয়ে তো আর রাখা যায় না। আব্বাকে যথাসময়ে চা দিয়ে আমি নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আব্বা তেলের খাবার পছন্দ করেন না, তবে মাঝেমধ্যে খুব শখ করে পরোটা খান। আলুর চপ, বেগুনী, পিঁয়াজু খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। এই ভাজা-পোড়া খাবারের ইচ্ছেটা হঠাৎ হঠাৎ উদয় হয়, আর অন্যবেলায় তেলের নামও শুনতে চান না। আজ আব্বার মন বিষণ্ণ বলে রুটি, আলুভাজি করলাম। অন্যান্য ভাজি করতে নিলেও তা না করে আম্মার স্টাইলে ডালও বানিয়ে ফেলি চটপট। আব্বা বলেন আমি নাকি রান্নায় মায়ের হাত পেয়েছি।
আব্বা প্রতিবারের মতোই চুপ করে খাবার গিলছেন। কিন্তু আব্বার স্বভাবে চুপচাপ থাকাটা সাজে না। আব্বার এই কয়েকদিনের বেখেয়াল আচরণও আজ রান্না করতে গিয়ে ভীষণ ভাবিয়েছে আমাকে। আমি খাবারের মাঝে ডাকলাম, “আব্বা?”
আব্বা তাকালেন না। আমি আবার ডাকলাম, “আজকে আমার ছুটি আব্বা, আরেক কাপ চা করে আনব? তুমি যে কয়বার বলবা ততবারই আনতে পারব।”
আব্বা গম্ভীর গলায় বললেন, “লাগবে না।”
“বাজার আনো তবে। পছন্দের মাছ, গোরুর মাংস, সবজি যা খুশি আনো। আমি আজ রেঁধে দিব তোমাকে।”
আব্বাকে এবারও অস্বাভাবিক দেখাল। প্রফুল্ল ভাব এবারও তাঁর মুখে দেখতে পেলাম না। চেয়ার ছেড়ে নড়লেনও না। আব্বা এবারও শক্ত গলায় বললেন, “মাসের শেষ।”
আমার হতাশা কাজ করল ভীষণ, আব্বা কখনোই টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা করেননি। চিন্তা করলেও কখনো বুঝতে দেননি। কিন্তু তবুও ঘরে বাজার মাসের শেষদিনেও আসত। কীভাবে কীভাবে জানি না, হয় আব্বুর লুকানো সেভিংস দিয়ে নয়তো কারো থেকে ধার নিয়ে। তবুও আব্বার মুখ সবসময় হাস্যোজ্জ্বল থাকত। আব্বা যে এবার শক্ত অভিমান করেছেন, নিশ্চিত না হয়ে পারলাম না। আম্মা যাওয়ার পর কখনো এতটা অভিমান করতে দেখিনি আব্বাকে। যেখানে আমরা দুজন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল সেখানে মান-অভিমানটা আসেনি কখনো।
অগত্যা, আমার কিছু হাতখরচের টাকা খরচ করে বাজার-সদাই আনলাম দুই হাত ভরতি করে। আব্বা তখন সোফায় বসে, ব্যস্ত কণ্ঠে কারো সাথে কথা বলছে। আব্বার কথায় বুঝলাম তিনি হন্য হয়ে ভাড়াটে খুঁজছেন। এতটা উদ্বীগ্ন কখনো হতে দেখিনি তাঁকে। আব্বা তাঁর বাটন ফোনটা কান থেকে রাখতেই জিজ্ঞেস করলাম, “ভাড়াটে নিয়ে উদ্বীগ্ন কেন এত? আগে তো এত ব্যস্ত হতে দেখিনি তোমায়, আব্বা।”
আব্বা এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন। ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত দেহে আব্বার এই এড়ানো আর মানতে পারলাম না। ঘটঘট শব্দে সিলিংটা চলছে। আমি সিলিং-এর একদম নিচে বসলাম। কপালে আঁচলের বিচরণ চালিয়ে আব্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমার সাথে কেন কথা বলছ না আব্বা? আমি কী কোনো দোষ করেছি?”
“দোষ? সেটা তো আমি করেছি।”
আমার ভ্রু কুঁচকে যায়, “মানে কী?”
“সহজ হিসাব— তোর ঘাড়ে বসে খাচ্ছি, চলছি। লোকে বলে মেয়েকে বিয়ে দেই না তার কামাই করা টাকা খাওয়ার জন্য। তুইও তো আমার ওপর চরম বিরক্ত। লাগবে না আমার কারো পয়সা, আমি নিজে ভাড়া দিয়ে চলতে জানি।”
আমি আহত হলাম আব্বার এহেম চিন্তা-ধারা নিয়ে। বুঝলাম, কেউ না কেউ ভালোই কানপড়া দিয়েছে। এছাড়া উপলব্ধি করেছি, কাজের চাপে আমিও নিজের অজান্তে আব্বার সাথে বিরক্তি প্রকাশ করে ফেলেছি। এ নিয়ে অনুতপ্ত অনুভব হলো ভীষণ, আব্বাও তো একসময় কত খেটেছে, কিন্তু কখনো আমাকে বিরক্তি দেখায়নি। বরঞ্চ সবরকম পরিস্থিতিতেই আমাকে শুনেছে, আমাকে সময় দিয়েছে। দুইদিনের আমি কতটুকুই বা পারলাম আব্বার মান রাখতে?
–“কিন্তু আব্বা, আমার তো কোনো অভিযোগ নেই। আমি বিয়ে করব না।”
–“বিয়ে করবি না মানে কী? করতে ত হবেই, আজ নাহয় কাল।”
–“কালকের কথা ভেবে আজ তবে কেন দুঃখ পাচ্ছ?”
আব্বা চুপসে গেলেন। আব্বা কখনোই আমার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লাগেনি। তিনি বোধ হয় এটাই ভুলে বসেছিলেন যে আমারও বিয়ে, ঘর-সংসার করতে হবে। কিন্তু আমিও যে আব্বাকে এত দ্রুত ছেড়ে যেতে চাই না। আমি চলে গেলে আমার আব্বাকে কে দেখবে? কে আব্বার অভিমান, অভিযোগ শুনবে, কেই বা আব্বার আবদার মেটাবে?
ঘণ্টাখানেক পর আব্বা আচমকা বললেন আগামীকালই নাকি ভাড়াটিয়া আসবেন। আমি যেন ঘরটা পরিষ্কার করে আসি। আমি মাথা নাড়িয়ে রান্না, দুপুরের খাবার সেরেই চলে গেলাম বদ্ধ ঘরে। এই ফ্ল্যাটটাও আমাদের ফ্ল্যাটের মতোই ছোটো। জায়গায় জায়গায় দেয়ালের রং খসে পড়েছে, বদ্ধ ঘরেও ধুলোবালি জমেছে। কোথাও কোথাও মাকড়শার জ্বালও দেখা যাচ্ছে। আমি দ্রুত হাতে সব পরিষ্কার করলাম। বাথরুমটা আগামীকাল বুয়াকে দিয়ে ধোঁয়াব, রান্নাঘর আগেই ধুঁয়ে রাখা হয়েছিল। একা হাতে আমার কাজ শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে যায়। আব্বা প্রায়ই এসে ঘুরে গেছেন, আমিই ধুলোবালিতে তাকে বেশিক্ষণ থাকতে দিইনি।
পরেরদিন সকাল থেকেই ভীষণ বৃষ্টিপাত শুরু হলো। থেমে থেমে বাতাস আর মুষুলধারে বৃষ্টি। আব্বার মতো বাইরে ঘোরা মানুষ ঘরে হাত-পা আটকে আছেন, বৃষ্টির ওপর তিনি বেজায় বিরক্ত। তাঁর কাশু টঙের চা খাওয়ার অভ্যেস। সেখানে চা খেতে আর পারলেন কই? বৃষ্টির দাপটে উঠানেও দাঁড়ানো যাচ্ছে না। শরীর, মাথা ভিজে একাকার হয়ে যায়। আব্বা তো ধরেই নিলেন আজ নতুন ভাড়াটিয়া আর আসবে না। আমিও আব্বার ভাবনায় দ্বিমত করলাম না, যা বৃষ্টি না আসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে একজন আসল। হাতে মস্ত বড়ো নীল পলিথিনের বস্তা, আর নিজে ভিজে একাকার। তিনি কেচিগেটের সামনে এসেই ডাকল আমার আব্বাকে। আমি ভালো ভাবে লক্ষ্য করে বুঝলাম এটা একজন যুবক। আব্বা হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এসে ওনাকে দেখেই চিনে গেল। আমাকে তালার চাবি ধরিয়ে দিতেই আমি কেচিগেট খুলে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক তার ভেজা চুপচুপে গা আর পলিথিনের বস্তাটা নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল। বুঝতে বাকি রইলো না এটাই আব্বার সেই ভাড়াটিয়া। আব্বা ওকে পলিথিনটা রাখতে বললে সে পলিথিন বাইরে রেখেই খুলে ফেলল, আমি ততক্ষণে তার ঘরের তালা খুলে দিলাম। তিনি আমার সাহায্যে পলিথিনের ভেতরকার তোষক, বালিশ, চাদর, এক দুইটা জামা-কাপড় সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ঢুকাল নিজের নতুন, ছিমছাম ফ্ল্যাটে। আব্বা আমাকে বললেন,
–“প্রিয়াঞ্জনা, চা করে আন তো।”
আমি ভেতরে চলে গেলাম। ভদ্রলোক ততক্ষণে বাইরে দাঁড়িয়েই নিজের ভেজা কাপড় ছাড়িয়ে শুকনো কাপড় গায়ে দিয়েছে। রান্নাঘর থেকেই শুনতে পেলাম সে বলছে, “এই ভিজে কাপড় পরে ভেতরে গেলে ঘর নোংরা হয়ে যেত চাচা। ভাগ্যিস আশেপাশে আমার মান-সম্মান হরণ করার মতো কেউ ছিল না। আপনিও তো স্পেস দিলেন চাচা।”
আব্বার হাসির শব্দ শুনলাম, যাক। কোনো এক অজুহাতে আব্বা হেসেছেন তো। আব্বা জিজ্ঞেস করলেন, “ছাতা আনোনি কেন শরৎ বাবা?”
শরৎ নামের ভদ্রলোক তখন হতাশ গলায় বলল,
–“ছাতা মাথায় করেই আসছিলাম চাচা। আমার সেদিনের কেনা ছাতাটা, শালার বাতাস উড়ায় নিয়া গেল।”
আবারও আব্বার হাসি শোনা গেল। আমার এবারের ভাড়াটেকে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, ইনিও আব্বাকে চরম ঠকাবেন। এও দেখা যাবে কোন কোন মাসের ভাড়া জমিয়ে রেখেছে। হতাশায় আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।