গল্পের নামঃ- #ভালোবাসার_নতুন_প্রনয়ণ
লেখিকাঃ- #konika_islam (sanju)
part:15
এখন পরিবেশ শান্ত থাকলেও কিছু সময় আগেও এখানে ছোটখাটো সুনামি বয়ে গিয়েছে। হূরকে এই অবস্থায় দেখে একরকম পাগল অবস্থায় ছিল এরিশ। এরিশকে এতটা অশান্ত আগে কখনোই দেখা যায়নি। বরাবরই রাগ জিদ বেশি থাকলেও খুব সুন্দর ভাবেই সে সবটা সামলায়। হঠাৎ করেই একটা চড় বসিয়ে দেয় এরিশ মৃধার গালে। উপস্থিত সবাই অবাক। এরিশ বলে
” হূরের সাথে তোর কি সমস্যা আমি জানি না। কিন্তু হূরের আজ কিছু হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
আলাইনা এক কোনে তার মায়ের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। হূরের দিদুন বলে
” আহহ এরিশ কি হচ্ছে?? এরিশ খুব স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে
” দিদুন আমি ভালে করেই জানি এটা মৃধার একার কাজ না। এতে তুমিও মৃধাকে সাহায্য করেছ। মৃধা কেঁদে সত্যিটা বলে দেয়
” আমি কিছু করেনি সব ছিল দিদুনের প্লান। দিদুনই বলেছিল হূরকে তারা মামাবাড়ি চট্টগ্রামে সময় মতো পৌঁছে দিবে। আর হূর আসার পর সবাই হূর হূর করে বেড়াও আমাকে তো কেউ চিনে না। যা করেছি ভালো করেছি। দিদুন চুপ। সিফাত এরিশের মাকে বলে
” মামি মৃধাকে এখান থেকে নিয়ে যাও এরিশ কখন কি করে বসে বলা মুশকিল। আর এটা হসপিটাল। দিদুন আর মৃধাকে নিয়ে আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।
সিফাত ওদের নিয়ে চলে যায়। সবাই ভাবছে মানুষ এমন কিভাবে করতে পারে। যেই রুমে হূরের চেকাপ হচ্ছে সেই রুমের দরজায় এরিশ জোরে লাথি দিয়ে চিৎকার করে বলে
” এতো সময় লাগে???? কি করছে এরা!! ঘুমাচ্ছে নাকি?? বালিশ পাঠাবো!!! এরিশের বাবা এরিশ কে ধমক দিয়ে বলে
” এরিশ কি হচ্ছে এইসব?! এরিশ ও বলে
” সব তোমার আদরের দুলালির জন্য হয়েছে। হূরের বাবা এরিশের কাঁধে হাত রেখে বলে
” শান্ত থাক।
__________
হূর চোখ মেলে তাকাতেই দেখে মাথার উপর সাদা ছাঁদ ধীরে ধীরে উঠে বসে। রুমের চারপাশ জানান দিচ্ছে এটা হসপিটাল। মাথা টা বেশ ব্যাথা করছে। হাত দিয়ে বুঝতে পারে মাথায় ব্যান্ডেজ করা। কালকে রাতের কথা মনে পরে হূরের সে তো একটা রুমে বন্দী ছিল। হূরকে উঠে বসতে দেখে নার্স গিয়ে সবাইকে বলে হূরের সেন্স ফিরেছে। একে একে সবাই এসেছে হূরকে দেখতে। দেওয়াল ঘড়ি টার দিকে হূর তাকিয়ে দেখে দুপুর ২ টা বাজে। সবাই হূরকে ঝেকে বসে আছে। তখনই সবাইকে চুপ করিয়ে হূরের কাছে গিয়ে বসে আলাইনা। আর সবাইকে বলে
” তোমরা সবাই বাইরে যাও আপির সাথে আমার কথা আছে। হূরের মা বলে
” আলাইনা হূর আপ্পিকে রেস্ট করতে দাও। আলাইনা বলে
” রেস্টের কথা বাদ দিয়ে বাসায় গিয়ে রোস্ট করে নিয়ে আসো। আমার কথা আছে বললাম না।সবাই দুই বোনকে একা ছেড়ে বাইরে চলে আসে। আলাইনা হূরকে জড়িয়ে ধরে বলে
” তুমি জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমরা সবাই?? বিশেষ করে এরিশ ভাইয়া। হূর আলাইনকে বলে
” এরিশ ভাইয়া কোথায়?? আলাইনা বলে
” পাপা আর কাকাই মিলে বাসায় পাঠিয়েছে। জানো এই মৃধা নামক ফাজিল কিড়াকে এরিশ নামাক প্যারিস ভাইরাস খুব ভালো ভাবেই জব্দ করেছে। ঠাস ঠাস। হূর আলাইনার কথা বুঝতে না পেরে বলে
” মানে বুজলাম না। আলাইনা মাথায় হাত দিয়ে বলে
” আচ্ছা আমি কি ইংলিশ বলছি?? আমি বলেছি এরিশ ভাইয়া মৃধা আপুকে মেরেছে। ভালোই করেছে। তোমাকে ঐ ইস্টোর রুমে বন্ধ করে রেখেছিল। ফাজিল মহিলা, না না এখনো মহিলা হয়নি সবে তো ১৭ কিন্তু ১ বছর পর হয়ে যাবে। যাই হোক কিছু খাবে? নার্স কে ডাকবো খারাপ লাগছে ??? হূর বলে
” না না। হূর বুঝতে পারে এইসবের পিছনে মৃধার হাত। আলাইনা বলে
” আচ্ছা তুমি থাকো আমার খুদা লেগেছে। আমি খেয়ে আসি। আর হ্যা এরিশ ভাইয়ার সাথে বাসায় চলে এসো কেমন। দেখি বাইরে কি অবস্থা। এদের নিয়ে পারিনা সবাই এক মেয়েকে নিয়ে পরে আছে৷ অন্য দিকে যে আমি একজন আছি সে খায়ল কি আছে?? মিসেস, সায়াদ কে বলতে হবে আমার বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করো।
বলেই কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায় আলাইনা।
_____________
বিকেল ৪ টা হবে। বেডে আধশোয়া হয়ে বসে আছে হূর,পাশে অহি আর আর তিথি।।তিথি অনর্গল কথা বলে চলেছে,,আজ এতো বকবক কিভাবে জরছে বুঝতে পারছি না।।হঠাৎই কেউ একজন প্রচন্ড জোড়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো,,,।। এরিশ একপ্রকার দৌড়ে ভেতরে ঢুকলেও হূরকে বসে থাকতে দেখা মাত্র থেমে গেলো এরিশ, । কিছুক্ষণ হূরের তাকিয়ে থেকে,,,হূরের কাছে এসে হূরকে জড়িয়ে ধরে। কপালে একটা ডিপ কিস করে বলে
“চল,,,
হূর তো অবাকই সাথে অহি আর তিথিও অবাক,,,এর মধ্যেই সবাই রুমে প্রবেশ করেছে।।বড় বাবইকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিন্দুমাত্রও অবাক হন নি বা কেউই হয়নি।
“কি হলো চল, ওপপস্ তুই তো হাঁটতে পারবি না।
কথাটা বলেই কোলে তুলে নেয় হূরকে,,,হাতে স্যালাইন লাগানো ছিলো,,,টানে,,ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো হূর।।।এরিশ ভ্রু কুচকে হূরের হাতের দিকে তাকায়, এরিশ বেশ জোরেই বলে
“আমি বলেছিলাম না ওকে এসব না লাগাতে?
এক মিনিটও থাকতে দিচ্ছি না,ও আমার সাথেই থাকবে। এখানে তোর থাকতে হবে না। আমার হূরপরি আমার সাথে থাকবে আমি দেখে রাখবো।
এরিশের চিৎকারে সবার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো হূরের,, নার্সরা এসেও হাজির,,,লোকটা কি আসলেই পাগল টাগল হয়ে গেছে নাকি??।এরিশ আবার হূরকে সাবধানে বেডে বসিয়ে দিয়ে, ধীরে ধীরে হাতটা হাতে নিয়ে দেখে। কেমন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে উনাকে। তখনই বড় বাবা এরিশকে ধমক দিয়ে বলে
” এরিশ পাগলামোর লিমিট থাকে। তুমি বাচ্চা না। আর হূরের জন্য কোনটা ভালো সেটা ডক্টর রা তোমার থেকে ভালো জানে। এরিশকে উদ্দেশ্য করে হূর বলে
” আমি ঠিক আছি। তখন এরিশ একটু সান্ত হয়। হূরকে কিছু না বলেই বাইরে চলে যায় এরিশ। হূরের বাবা নার্সকে ডাকে।
__________________
ক্লান্ত বিকেলের শেষ প্রহর চলছে। সূর্যের সুনালী আলো ছড়িয়ে পরেছে চারদিকে। জানলা দিয়ে হালকা বাতাসে দুলছে পর্দা গুলো। নিরব পরিবেশ খুব একটা যে খারাপ লাগছে হূরের তা কিন্তু না। ভালোই লাগছে হূরের। এরিশের বাচ্চামির কথা মনে পড়তেই হাসি পাচ্ছে। আচ্ছা এরিশ কি সত্যি হূরকে চায় নাকি এইসব শুধু ক্ষনিকের আসক্তি যা কিছুদিন পর কেটে যাবে। আজকাল হূর একটু বেশি ভাবছে এরিশ কে নিয়ে। হুটহাট কেমন কাছে চলে আসে। কথায় রাগ, জিদ, ভালোবাসা সবই থাকে। কখনো আদরে মাখা সেই হূরপুরি ডাক। কখনো এখান থেকে যা রাগ মিশ্রিত কন্ঠ। এইসবের মাঝে হঠাৎ করেই কেউ সেখানে আসে । হূর উৎসুক হয়ে তাকায় সেই দিকে। হূর ভেবেছে হয়তো তার ভাবনার মানুষটাই এসেছে।কিন্তু না নার্স এসেছে। হূরকে একবার দেখে চলে যায়।
_________
রাতে ৯ টা দিকে এরিশ হূরকে খায়িয়ে দিচ্ছে। সবাই বাসায় চলে গিয়েছে, এরিশই সবাইকে বাসায় যেতে বলেছে। এরিশ থামা থামি নেই একের পর এক চামচ করে সুপ দিয়ে যাচ্ছে হূরের মুখে, দম নেবার সময় অব্দি পাচ্ছে না বেচারি, হূর এতে চরম বিরক্ত। কারণ সে বরাবরই নিজের হাতেই খায়।
হাতে বেশ খানিকটা জায়গা কেটে যাওয়া আর তখন কার করা এরিশের পাগলামির জন্য হাত এখন ব্যাথায় মুভ করতে পারছে না। উপর দিকে এরিশও চরম বিরক্ত। একটা নার্স এসে দাঁড়িয়ে আছে। একেতো কিছু করছে না তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই রকম দাড়িয়ে থাকাতে বেশ বিরক্ত আমাদের এরিশ মহাসয়। নার্সকে উদ্দেশ্য করে এরিশ বলে
” আপনি এখানে এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন? কাজ নেই নাকি!? নার্সটা একটু ভ্যবাচেকা খেয়ে বলে
” না স্যার আসলে তা না। মেম এর খাবারের পর উনাকে ঔষধ দিতে হবে। উনি কি আপনার Wife?? এরিশ বলে
” আপনার কি তাতে?? নার্সটা বলে
” না মানে,, এমনি। আপনি কি সিঙ্গেল?? এরিশ এবার রেগে বলে
” না আমার বউ আছে। এই যে কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে। আর এতো প্রশ্ন কেন? আপনি জার্নালিস্ট নাকি আমি আসামি কোনটা?? আজব!!
নার্সটা এরিশের এমন কথা শুে চুপসে যায় হূরের বেশ মজাই লাগছে ব্যপারটা। নার্সটা বলে
” সরি, স্যার আসলে আমি সেটা মিন করিনি। এরিশ বলে
” আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না আপনি চলে যান আমি ঔষধ খায়িয়ে দিব। নার্সটাও আর কথা বারায় না।
খাওয়া শেষে এরিশ ঔষধ দেখছে কোনটা এখন খেতে হবে৷ হূর এরিশকে বলে
” এতটা সময় কোথায় ছিলেন? এরিশ হূরের দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে
” কেন মিস করছিলি নাকি?? হূর কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় এরিশের কথায় কিন্তু নিজেও কমনা তাই সেও বলে
” আমি আপনাকে কেন মিস করতে যাবো? কিন্তু একটা কথা কি জানেন?? এরিশ ইশারায় বলে “কি”? হূর হাই তুলতে তুলতে বললো
” নার্সটা হয়তো আপনাকে লাইক করেছে। আপনাদের মানাবেও অনেক। সুন্দর জুটি। এরিশ হূরের কথা শুনে হূরের দিকে তাকিয়ে বলে
” আমার বউ আছে৷। দুইদিন পর বিয়ে করব ১ মাস পর বেইবি কোলে নিয়ে ছবি তুলবো তারপর দেওয়ালে টানিয়ে রাখব। আর ছবির কোনে লেখা থাকবে মেডফর ইচ-আদার…। ডাফার একটা, আরেকটা কথা বলবি তোকে জানলা দিয়ে নিচে ফেলে দিব।
হূর ভেংচি কেটে আরেক দিকে তাকায়। এরিশ তা দেখে হেসে নিজের কাজে মনযোগ দেয়।
________________
অপর দিকে বাসায় মৃধা আর দিদুনকে সবাই ইচ্ছে মতো কথা শুনচ্ছে, মৃধা, দিদুন কেউ কিছু বলতেও পারছে না।
চলবে।