#ভালোবাসতে_চাই
#পর্বঃ১৬
#ফারজানা_আক্তার
মুখ ফুলিয়ে একটা রুমের বিছানায় বালিশ জড়িয়ে বসে আছে রিক্তা, শিশির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্ড দেখছে।।
~আ আপনি খুব পঁচা, আমাকে এভাবে টানতে টানতে আনলেন কেন?
নাক টানতে টানতে বলে রিক্তা।
~আরে আজব তো কান্না করছো কেন? এই অচিন দেশে একা যাবে টা কোথায় তুমি? একটা কথা মাথায় রেখো এখন তুমি আমার দায়িত্ব, তাই তুমি চাও বা না চাও তুমি আমার সাথেই থাকবে।
এটা বলেই গটগট করে শিশির বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এখানেও একটা ছোট্ট বেলকনি আছে, রিক্তা ধীরপায়ে বেলকনির দিকে এগুলো, মাশাআল্লাহ এতো সুন্দর এই শহরটা, আমরা কত তলায় আছি কি জানি, মনে হয় ১০তলায়, তাইতো এতো সুন্দর ভাবে সব দেখা যাচ্ছে, আহ্ এতক্ষণে মনটা ফ্রেশ হলো।
শিশির রুমে এসে দেখে রুমের কোথাও রিক্তা নেই, ওয়াশরুমে যায় দেখে সেখানেও নেই, কোথায় গেলো আবার, উফ্ পাগল করে দিবে আমায় মেয়েটা।
‘
‘
‘
হঠাৎ বেলকনি থেকে হালকা কাশির শব্দ ভেসে আসে শিশিরের কানে, আর বুঝতে বাকি রইলো না রিক্তা কোথায়।
~খাবার এনেছি, খেতে আসো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে
~আপনি খেয়ে নিন, খাবোনা আমি
~এবার কিন্তু রাগ কন্ট্রোল করা সম্ভব হবেনা আর আমার পক্ষে, একটু নয় অনেক বেশিই বাড়াবাড়ি করছো তুমি।
ভয় পেয়ে যায় রিক্তা, চুপচাপ এসে খাবার নিয়ে সোফায় বসে খেতে থাকে, ক্ষিদেও পেয়েছে কিনা খুব।
শিশির আর কিছু না বলে চুপচাপ নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
‘
‘
‘
রাত ১টা, শিশির চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, ঘুম আসছেনা আজ শিশিরের চোখে। রিক্তা ঘুমের মধ্যেই শিশিরের গায়ে হাত পা সব তুলে দেয়, মুচকি হাসে শিশির। এই তোমার রাগ? এতক্ষণ তো আমার সাথে কথাই বলছিলে না আর এখন সব হাত পা আমার উপর, বেশ ভালো তো। শিশির মুচকি হেসে নিজের সাথে জড়িয়ে নেই রিক্তাকে। এই দেশে তেমন একটা শীত নেই। আর বাংলাদেশে তো মোটেও নেই।
‘
‘
‘
সকালে রিক্তা ঘুম থেকে জেগে দেখে সে শিশিরের বুকে, ফট করে উঠে যায় রিক্তা। জেগে যায় শিশিরও।
~কি হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে শিশির।
~কিছুনা
বলেই রিক্তা উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে এসে সোজা বেলকনিতে চলে যায় রিক্তা।
স্নিগ্ধ সকাল, মায়াবী দৃশ্য, এক কাপ চা হলে মন্দ হতো না। ঝিরিঝিরি বাতাসে গায়ের লোম কাড়া হয়ে যাচ্ছে রিক্তার। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে রিক্তা। শিশির এসে ফট করে কোমর জড়িয়ে ঘাড়ে থুতনি রাখতেই কেঁপে উঠে রিক্তা। চোখ বন্ধ করে রিক্তার চুলের ভাজে মুখ ডুবিয়ে শিশির বলে “আরো বেশি ভালোবাসতে চাই পাগলিটাকে”
চুপ হয়ে আছে রিক্তা।
~আজ সব বলবো, প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।
লাফিয়ে উঠে রিক্তা, সত্যি আজ সব বলবেন?
~হুম
একটু জোরেই জড়িয়ে ধরে রিক্তা শিশিরকে। এখনো কিছু বলিনি, শুধু বলবো বলতেই এতো খুশি, কিন্তু সব শোনার পর মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে যাবে যতটা না খুশি হয়েছো।। রিক্তাকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে ভাবতে থাকে শিশির।
‘
‘
‘
চা নাস্তা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা বিচে যায় ঘুরতে, সেখানে সমুদ্রের পানির সাথে ছোট্ট বাচ্চার মতো খেলা করছে রিক্তা, আর মুগ্ধ নয়নে দেখছে শিশির।
এখন বলুন।
হঠাৎ শিশিরের হাত জড়িয়ে বলে উঠে রিক্তা, শিশির মোটেও প্রস্থুত ছিলোনা। তবুও নিজেকে সামলিয়ে শিশির বলে “চলো ওইদিকে বসি” একটা বড় পাথর দেখিয়ে বলে শিশির।
‘
‘
‘
শুনতে চাও তো, তবে শুনো।
আমি তিনবছর আগে লন্ডনে পড়ালেখা শেষ করি, আমি দেশে ফিরবো তখনই আব্বু আমায় কল করে বলে কানাডা আমার নামে ২টা হোটেল দেওয়া হয়েছে, এতোদিন আব্বু দেখাশেনা করেছে কিন্তু এখন থেকে আমাকেই সব দেখতে হবে।। পড়া শেষ করতে না করতেই দায়িত্ব তুলে দেয় ঘাড়ে, রাগ উঠে যায় আমার তাই আর দেশে না গিয়ে সোজা কানাডায় চলে গেলাম। সাথে নিবিড়কেও নিলাম।
~নিবিড়??
ভ্রু কুঁচকে বলে রিক্তা।
হ্যাঁ নিবিড়, আমরা লন্ডনে একসাথে পড়াশোনা করতাম আর সেই সুবাদে ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কানাডায় আসার পর আমার ২টা হোটেল থেকে একটা দেখাশোনার দায়িত্ব ওকে দিলাম, সাথে ওকে ম্যানেজারের চাকরিও দিলাম, কিন্তু এতেই ওই লোভি টার মন ভরেনা। ধীরে ধীরে ও বিভিন্ন চক্রান্ত করতে থাকে, প্রচুর বিশ্বাস করতাম বলে কখনো সন্দেহ করিনি ওকে। ঠিক এক মাস পরে দেখা হয়,আমাদের স্নেহার সাথে, স্নেহা নাকি ২বছরের জন্য একটা পার্সোনাল কাজে আসছিলো কানাডায়, কিন্তু কখনো বলেনি পার্সোনাল কাজটা কি।
~ওয়েট ওয়েট, মাঝখানে দু’বছর স্নেহার কোনো খুঁজ খবর পাওয়া যায়নি, হঠাৎ উধাও হয়ে গেছিলো সে, পরে এই একবছর ধরে আবারো নতুন করে যোগাযোগ করে সবার সাথে কিন্তু বিয়ের পর।
হুটহুট করে রিক্তা শিশিরকে বলে সব।
হ্যাঁ ওই দুইবছর ও কানাডায় ছিলো। নিবিড়ের সাথে ওর আগে থেকেই পরিচয় ছিলো যা আমি জানতাম না। স্নেহা নতুন করে আমার সামনে নিবিড় এর সাথে বন্ধুত্ব করে আর আমার সাথেও। আমাদের হোটেলেই থাকতো স্নেহা ফ্রী তে। এভাবে ঘুরাফেরা আড্ডা মাস্থিতে চলতে লাগলো আমাদের জীবন। বাড়ির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম আমি, সপ্তাহে একবার বাবা মায়ের সাথে কথা বলতাম আমি।
এইটুকু বলেই হাঁপিয়ে যায় শিশির, রিক্তা দ্রুত ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দেয় শিশির কে,
ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নেই শিশির। রিক্তা হা হয়ে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। এর আগে আর কখনো শিশিরের মুখে এতো হতাশার ছাপ দেখেনি রিক্তা। শিশিরের এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে রিক্তা।
একদিন নিবিড় আমার সাথে প্রচুর ঝগড়া বেঁধে দেয়, আমি নাকি স্নেহাকে ওর থেকে কেড়ে নিচ্ছি। আমার নাকি সব আছে তাই আমার টাকার গরম, ওর নাকি কিচ্ছু নেই। টাকার লোভ দেখিয়ে স্নেহাকে নাকি আমি আমার করতে চাচ্ছি। স্নেহা এসব শুনে দেশ ছাড়তে চাইলে আমি আটকায় ওকে। আমিও জানতাম স্নেহা আমার প্রতি দুর্বল আর আমি এটাও জানতাম যে নিবিড় স্নেহাকে ভালেবাসে, তাই স্নেহার অনুভূতি গুলোকে তেমন পাত্তা দিতাম না আমি, আজ স্নেহা নিবিড়ের সাথে আছে শুধুমাত্র আমার কথা রাখার জন্য। শেষ দেখায় স্নেহাকে আমি বলেছিলাম যত যাইহোক নিবিড় কে যাতে সে ছেড়ে না যায়, আর সেদিন স্নেহা কাঁদতে কাঁদতে আমাকে প্রমিস করেছিলো সে কখনো নিবিড় কে ছেড়ে যাবেনা।
~আচ্ছা আপনার মনে কি স্নেহার জন্য কখনো কিছুই ছিলোনা?
নাহ, তবে ভালো লাগতো ওকে খুব, কিন্তু সেটা বোঝে উঠার আগেই হয়ে গেলো আরেক কান্ড।
রিক্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কি কান্ড??
আমি একমাসের জন্য দেশে গিয়েছিলাম, একমাস দেশে থেকে আবার যখন কানাডার মাটিতে পা রাখলাম তখন থেকে শুরু হলো আমার জিবনে নতুন ঝড়।
আমি এয়ারপোর্ট থেকে সোজা সেই হোটেলে গিয়েছিলাম যে হোটেলে সেইদিন তোমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে সেখান থেকে ওই হোটেলে গেলাম যেই হোটেলের দায়িত্ব নিবিড়কে দিয়েছিলাম, সেখানে পা রাখতেই থমকে যায় আমার পা, নিজের চোখকে আর কানকে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না কিছুতেই।।
একটানে কথাগুলো বলে থামে শিশির, রিক্তা শিশিরের কাঁধ থেকে মাথাটা হালকা তুলে বলে “তারপর কি হয়েছিলো? কী এমন দেখেছেন সেখানে? আচ্ছা আগে পানি খেয়ে নিন। রিক্তা ২বোতল পানি কিনে নিলো।
রিক্তা তার হলুদ রঙের শাড়ির আঁচল দিয়ে শিশিরের কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে দিয়ে একটা চুমু খায় কপালে, শিশির এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নেই রিক্তাকে, ঢেউগুলো এসে পাথরের সাথে বারি খেয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দু’জনের পা গুলো, রিক্তা শাড়িটা পা থেকে একটু উপরে তুলে নেই আর শিশির জিন্সের পা গুলো ভাজ করে ফেলে।
রিক্তা নিজের হাতে পানি পুরে দিলো শিশিরের মুখে।
পানি খেয়ে শিশির বলতে শুরু করলো ” নিবিড় একদিন আমাকে খাবারের সাথে নেশা মিশিয়ে দিয়ে______
#চলবে