ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৩৪+৩৫

0
2195

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৪)
তানভীর রুমে এসে দেখে লাবিবা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রুমের এক কোনায় বসে আছে। দু হাতে হাঁটু জড়িয়ে মুখটা পুরোপুরি উপুড় হয়ে গুঁজে দিয়েছে। মেঝেটা ভেজা। কিছুক্ষণ আগেই মনে হয় পরিষ্কার করা হয়েছে। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে লাবিবা একটা ঘাড় বাঁকা করে দেখলো তানভীর কে। আবার ঘাড়টা সোজা করে নিলো। তানভীর কয়েক সেকেন্ড পরখ করে ওয়াশরুমে গেলো। একদম সাওয়ার নিয়ে তবেই বের হলো। সারাদিনের ক্লান্তি সাওয়ার নিয়ে দূর হলো। টাওয়ালে চুল মুছতে মুছতে খালি পায়ে এসে লাবিবার সামনে দাঁড়ালো। লাবিবা মাথা তুলে সদ্য সাওয়ার নেওয়া তানভীরকে দেখেই আবার চোখ নামিয়ে নিলো। উদোম গায়ে প্রসস্ত কাঁধের সহিত গম্ভীর্যভাবে দাঁড়িয়েছে। গা থেকে বডি ওয়াশের মিষ্টি স্মেল নাকে আসছে।ফ্লোরে তানভীরের ফর্সা পা জোড়া। লোপকূপের উপর বিন্দু বিন্দু জল জমেছে। লাবিবা দৃষ্টি গুটিয়ে নিলো। হাঁটুর ভাঁজে আবার মুখ ঠেকালো। তানভীরের নিশ্চুপ উপস্থিতিতে তার মনে উথাল পাতাল শুরু হয়েছে। বুকটা দুরুদুরু করছে। কি করবে? এখনো রেগে আছে? আবার মারবে? এবার মারলে লাবিবা আর সহ্য করবেনা। যখন তার তিন বছর বয়স তখন নাকি বাবা মেরেছিলো। সেটাও লাবিবার শোনা কথা।তারপর মা ছাড়া কেউ তার গায়ে হাত তুলে নি। বড় হবার পর মাও যা বকা দেয় কখনো আর মারে না। আর আজ তানভীর কতগুলো থাপ্পড় দিলো। ব্যথায় গাল টন টন করছে। কানের নিচে জ্বালাও করছে। এতো ব্যথা লাবিবার কখনো লাগেনি। অভিমানে লাবিবার ঠোঁট ভেঙে এলো। ভেতর ভেতর ফুপালো। কিছু সময় বাদে নিজের সামনে তানভীরকে বসা অবস্থায় অনুভব করলো। শান্ত কিন্তু দৃঢ় গলার আওয়াজ পেলো।
‘ লাবিবা। ভেজা ফ্লোর ছেড়ে বিছানায় গিয়ে বসো। উঠে আসো।’
লাবিবা চুপ থাকলো। অভিমানে আরো আরো চেপে গেলো। তানভীর দুপাশে মাথা নাড়িয়ে হাত ধরলো।
‘ উঠো। ‘
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিলো। অন্যদিকে মুখ ঘুরালো।
‘ এখানেই ভালো আছি। ‘
তানভীর বুঝলো এভাবে উঠবে না। জোর পূর্বক দুই হাত চেপে ধরলো। উপর দিকে টেনে ধরলো। লাবিবা কাঁচুমাচু করে তানভীরের হাতের মুঠো থেকে শক্তি লাগিয়ে ছাড়িয়ে নিলো। মুখ তুলে গজগজ করে বললো,
‘ বললাম না এখানে ভালো আছি? ‘
তানভীর আবার এগোলো,
‘ কথা শোনো। ঠান্ডা লেগে যাবে। ‘
‘ লাগবেনা। ছাড়ুন আমাকে। ‘
‘ আরে ভাই ছাড়ুন না আমাকে। আমার আপনাকে সহ্য ই হচ্ছে না। ‘
‘ আমাকেই সহ্য করতে হবে। ‘
‘ লাগবেনা আমার। ‘
‘ বুঝেছি সোজা কথায় উঠার মানুষ তুমি নও। হাত আমার বাকাতেই হবে। ‘
লাবিবার মুড়ে ধরে টেনে পাঁজাকোলে নিয়ে নেয়। লাবিবা চেঁচায়, ‘ ছাড়ুন আমাকে। ‘
‘ ছাড়ার জন্য ধরিনি। বাঁধার জন্য ধরেছি। বাধবো তোমাকে। তার আগে চুপটি করে বসো। ‘
‘ বসবোনা আমি। ‘
তানভীর লাবিবার কথায় কান দেয় না। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ফাস্ট এইড বক্স খুলে। লাবিবা এর মধ্যেই নেমে যেতে চায়। তানভীর এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আবার বিছানায় বসায়। লাবিবাকে এক হাতে জড়িয়ে আরেক হাতে গাল স্পর্শ করে। লাবিবা মাথা পিছিয়ে নেয়। তানভীর বিরক্ত হয়। আবার টেনে নেয় নিজের দিকে।
‘ দেখি দেখতে দাও। ‘
‘ লাগবেনা দেখা। ‘
‘ দেখতে দাও আমাকে। স্পট পড়ে যাবে। ‘
‘ আপনার কি তাতে? জুতো মেরে গরু দান করতে আসছে। ‘
তানভীর লাবিবার থুতনি চেপে ধরে মুখ উঁচু করে। দু পাশে গাল দুটো আলতো করে ছুয়ে দেয়। লাল হয়ে আছে পুরো মুখ। যেনো গরম ভাব বের হচ্ছে। নাকে মৃদু ঘাম ও জমেছে। অথচ শরীর ঠান্ডা। তানভীর লাবিবাকে টেনে কোলে বসালো। মাথায় হাত লাগাতেই লাবিবা আরো একবার চিৎকার করে উঠলো। দুহাতে তানভীরের হাত সরানোর চেষ্টা করলো। তানভীর ওকে আশ্বস্ত করলো, ‘ আমি সুন্দর ভাবে করবো ‘ । সাবধানে পিন খুলে খুলে হিযাপ ছাড়িয়ে নেয়। চুলের কাঁটাটা খুলে নিতেই ঝড়ঝড় করে পিঠময় ছড়িয়ে পড়ে। রক্তিম ফেসে কেশবতীকে দেখে তানভীরের ভেতরে কি হচ্ছে তা লাবিবা জানে না।‌ যদি জানতো তাহলে এখন অন্তত চুপ করে থাকতো। বার বার ছটফট করে তানভীরকে আর ক্ষত বিক্ষত করতো না। মাথায় তো হাতটাও দেওয়া যাচ্ছে না। রাগের মাথায় এতোটা জোরে ধরেছে বুঝতে পেরে তানভীরের ও খুব খারাপ লাগছে। তানভীর সহজে রাগে না। তবে রাগলে হুস থাকে না। এসব রাগ খুব খারাপ হয়। এইযে তার বউটাকে মারলো, ব্যথা দিলো! হাতে হাতে লালন পালন হওয়া আদরের মেয়েকে কোনদিন কেউ মেরেছে কিনা এটাতেও ডাউব্ট আছে। আর সে এতোটা হাইপার ছিলো যে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টাও করলোনা। তানভীর আলতো ভাবে গালে ঠোঁট ছোয়ালো। লাবিবা সাথে সাথে মাথা সরিয়ে নিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদতে লাগলো। তানভীর বুঝলো বেশ অভিমান হয়েছে তার বউটার। নরম সুরে ডাকলো, ‘ লাব্বু। সোনা বউ । একটু স্থির থাকো আমি গালে মলম লাগিয়ে দিচ্ছি। প্রমিজ একটুও ব্যথা দিবো না। ‘
এতো আদুরে ডাকে লাবিবার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে গেলো। মুখে আওড়ালো, ‘ লাগবেনা। ব্যথাও দিবে আবার মলম ও লাগাতে আসবে। ‘
‘ আমার বউ আমি যা ইচ্ছা করবো। চুপ থাকো। দেখি মুখটা ওদিকে ঘুরাও। ‘
‘ উঁহু জ্বলে। ‘
‘ একটু পরেই ঠান্ডা লাগবে। ‘
‘ আমি বাসায় যাবো। ছাড়ুন। ‘
‘ কেনো এটা বাসা না?’
‘ আপনার বাসায় থাকবো না। আপনি আমাকে মেরেছেন।আমাকে কখনোই ভালোবাসেন নি।আজ আপনার সাথে জড়িয়ে গেছি দেখে আমার দিকে নজর রাখেন। রাজনৈতিক মানুষ আপনি। নিজের দিকে যেনো কেউ কাঁদা ছুঁড়তে না পারে সেজন্য আমার সাথে আজ এমন করলেন। ‘
‘ তুমি শুধরাবে না তাইনা? ভালোবাসি তো। সত্যি বলছি অনেক ভালোবাসি বউ।
‘ লাগবে না আমার আর আপনার ভালোবাসা। গরু খাক ঐ ভালোবাসা। আমার লাগবেনা। ‘
‘ কি চাও তুমি?’
‘ বাসায় চলে যাবো আমি। আপনার কাছে থাকবো না। অনেক চেয়েছি আমি। বিনিময়ে অবহেলা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। আজ যখন চাইছিনা তখন কোথা থেকে আসে আপনার ভালোবাসা? ছেড়ে দেন আমাকে। কারো সাথে কথা বললেই তার সাথে রিলেশনে যাওয়া হয়না। যে মানুষ টা আমি আপনার জন্য পাগল সেই আপনি কিভাবে ভাবতে পারেন এসব কথা? আপনার মানসিকতা এতো খারাপ কেনো? একটা মানুষ কে চিনবেন তার সম্পর্কে জানবেন তাকে বুঝবেন তারপর তাকে সন্দেহ করবেন। প্রথম থেকেই আপনি আমার বিপরীতে থাকেন। আমি আপনাকে চেয়েছি। আপনার বিপরীত আচরণ কে নয়। আমি মেনে নিতে পারবো না কখনো। ‘
‘ আমি তোমাকে নিয়ে প্রচুর জেলাস লাব্বু। সত্যিই জেলাস। ফাহাদ না এলে হয়তো জানতে পারতাম না। তোমার কাছে যদি মনে হয় আমি বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি তাহলে আমি সরি। তোমার কি চাই বলো? সব তোমাকে দিয়ে দিবো। আমার অর্থ সম্পদ,ব্যাংক ব্যালেন্স ফ্ল্যাট বাড়ি গাড়ি‌‌ সব তোমাকে দিলাম তবুও আমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষকে তোমার পাশে দেখতে চাইনা।‌ তুমি আমার বউ লাবিবা। তোমার ভালো চাওয়াই আমার প্রধান কাজ। তোমার চরিত্রে দাগ পড়ুক এটা আমি কখনোই চাইনা। ‘
‘ এতো কথা বলছেন কেনো মেরে টেরে? আগে তো কোনদিন বলেননি। আমার লাগবেনা আপনার ভালো চাওয়া।’
‘ তাহলে লাগবে টা কি? কি পেলে তুমি তোমার জেদ দেখানো বন্ধ করবে? এই রুমটাতো তোমার লাগবে তাই না?’
লাবিবা কান্না থামিয়ে চোখ তুলে তাকায়। ভাঙ্গা গলায় উত্তর দেয়,
‘ লাগবেনা। ‘
‘ আমাকেও লাগবে না?’
লাবিবা নাক টেনে জবাব দেয়,
‘ আপনাকে দিয়ে আমার কি কাজ?’
তানভীর নিঃশব্দে হাসে। লাবিবার গলায় মুখ গুঁজে আওড়ায়,
‘ সেটা তুমিই জানো আমার জান। যাও দিয়ে দিলাম তোমাকে সব। আমার সমস্ত কিছুর অধিকার তোমাকে দিয়ে দিলাম। এই আমিটাকেও তোমাকে দিয়ে দিলাম। নাও আমাকে। আমার ভালোবাসা গ্ৰহণ করো বউ।
আমি তোমার তরে সপেছি এ প্রাণ
তোমার আঙিনায় ভিড়িয়েছি শুণ্য হস্তে
আমায় এবার স্থান দাও তোমার বরাদ্দকৃত
যত্নে রাখা তনু হৃদয় অন্তে।।
তোমার সকল অভিমান পড়ে যাক। অভিযোগ গুলো চেপে যাক। ভালোবাসাগুলো প্রস্ফুটিত হোক। জীবন জুড়ে ছড়িয়ে যাক। আই লাভ য়্যু জান। আই লাভ য়্যু সো মাচ। আই কান্ট লিভ উইথআউট য়্যু। প্লিজ নেভার ডোন্ট য়্যু ডেয়ার। ‘
তানভীরের আহাজারি তে লাবিবার চোখ থেকে শুধু জল গড়িয়ে পড়ে। তানভীর কে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে। যে কথাটা শোনার জন্য এতোগুলো দিন সে অপেক্ষা করেছে তানভীরের মনে নিজের জন্য জায়গা করতে চেয়েছে সে অবশেষে পেরেছে। অন্য কোনো সময় হলে হয়তো লাবিবা অনেক কিছুই করে ফেলতো আনন্দে কিন্তু প্রায় মধ্য রাতে এতো কাছে রয়েছে নিজের মানুষটা যার প্রতিটা বাক্যে তাকে ভালোবাসার দাবী জানাচ্ছে এই সিচুয়েশনে লাবিবা শুধুই কাঁদছে। এ কান্না কাঙ্খিত জিনিসটা পাওয়ার কান্না। যার সাথে জীবনের ভালো থাকাটা জড়িয়ে আছে। লাবিবা অনুভব করে গলায় তরল কিছুর অস্বিত্ব। তাহলে কি তানভীর কাঁদছে? লাবিবা কান্নার ফলে বসে যাওয়া গলায় ডাকে,
‘ খান সাহেব! ‘
সাথে সাথেই গলায় ভেজা ওষ্টের ছোঁয়া পায়। ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে সেই চুমুর বর্ষন। লাবিবা শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠে। তানভীরের উদাম পিঠে হাত ঠেকায়। কাতর স্বরে আবার ডাকে, ‘ খান সাহেব!’ তানভীর গলা থেকে মুখ তুলে তাকায়।‌ লাবিবার গলায় আলতো ভাবে হাত রেখে সরাসরি চোখে চোখ রাখে।
‘ তোমার ঠোঁটের এই কাঁটা‌ জায়গায় কি এখনো ব্যাথা জান?’
লাবিবা মাথা নাড়ায়। ব্যথা করছে না। সত্যি সত্যি এখন কোনো ব্যাথা লাবিবা অনুভব করছেনা। লাবিবার কথায় আস্বস্থ হয় তানভীর। মুচকি হেসে ‘ আই লাভ য়্যু জান ‘ বলে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। রাত যতো গভীরে যায় তানভীরের প্রসস্ত বুকের নিচে লাবিবা ছটফট করে। তানভীর আদরে আদরে ভরিয়ে তুলে লাবিবাকে। বার বার বলতে থাকে ‘ ভালোবাসি বউ। ভীষণ ভালোবাসি’ সারাটা রাত এক মুহুর্তের জন্য ও ছাড় দেয়না। নাজুক শরীরে তুফান উঠিয়ে সেই তুফান থামিয়েও ক্ষান্ত হয়না।

সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ লাবিবার নিভু নিভু চোখ। শরীর অসাড় হয়ে আছে। অর্ধচেতন মানুষটা তানভীরের বুকে গুটিসুটি হয়ে আছে। গায়ে বুক অব্দি সুন্দর করে পড়ানো সাদা টাওয়েল। ভেজা চুলগুলো বিছানায় ছড়িয়ে আছে। তানভীর নিজে ওকে সাওয়ার করিয়ে এনে বুকে নিয়ে শুয়েছে। সেও একটু ঘুমোবে। কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। চোখ মেলে লাবিবার দিকে তাকিয়ে থাকে। কপালে চুমু এঁকে বলে,
‘ ভালোবাসি শোনার জন্য তুমি যদি এতোটা ডেস্পারেট হতে পারো আমিও বলতে বলতে পাগল হতে পারি বউ। ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয়না বউ। ভালোবাসা অনুভব করতে হয়, ভালোবাসার মানুষ কে বুঝতে হয়, কখনো কখনো তার উপস্থিতিও যে তার প্রমাণ জেনে নিতে হয়।তুমি ভীষণ চালাক লাবি পাখি। সবই জেনেছো তবুও আমার মুখ থেকে কথাটা বলিয়ে ছাড়লে। সার্টিফিকেট চাই তোমার! আমার মুখের কথাই যথেষ্ট।

চলবে___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

৩৫(ক)
সকাল সকাল ইসমাইল বেরিয়ে গিয়েও খান বাড়িতে পৌঁছতে পারেনি। তার ডাক পড়েছে হসপিটালে। প্রচন্ড ক্রোধের সহিত তাকে শাসানো হয়েছে। এমনিতেই তানভীরের কাজকর্মে মাথায় রক্ত উঠে আছে তারমধ্যে আবার অনাকাঙ্ক্ষিত ফোনে অপমানিত হওয়া! রক্ত মাথায় নিয়ে বাইকের গতি বাড়িয়ে সদর হসপিটালে উপস্থিত হয় ইসমাইল। মাঝ রাস্তায় বাধা যখন পড়েছে সয়ে বয়েই যাওয়া উচিত মেয়ের কাছে। ইসমাইল কে দেখে ফাহাদের বাবা যা নয় তাই বলে অপমান করতে থাকে। এমনিতেই মাথা গরম তার উপর এই ফাহাদের বাবা যে কিনা তার মেয়েকে অপমান করেছে! চুপ থাকেনা ইসমাইল। রাগটা সে এখানেই সব ঝাড়ে। ফাহাদের বাবার তিনগুণ অপমান করে। ওয়ার্ডে শুয়ে থাকা ফাহাদ কে দেখে আঙুল তুলে শাসায়,
‘ আর কোনদিন যদি এই হারামজাদার ছায়া আমার এলাকায় বা আমার মেয়ের আশেপাশে দেখি আজতো আমার মেয়েজামাই ওর হাত মুখ ভেঙেছে আমি ওর কোমড় ডাস্টবিনে ভেঙে ফেলে রাখবো। ‘
রিসিপসনে গিয়ে মোটা অংকের চেক ছেড়ে আসে।
‘ যেহেতু আমার মেয়েজামাই এই অবস্থা করেছে সেহেতু ওর চিকিৎসার দায়িত্ব আমার। আর এটাই লাস্ট। ‘

রাগটা একেবারেই পড়ে গেছে ইসমাইলের। তানভীর তাহলে ঠিকই বলেছিলো। ব্যপারটা ভালোভাবে জানতে হবে। দুপুরের আগেই ইসমাইল বেয়াই বাড়ি এলো। আসার সময় দই মিষ্টি আনতে ভুললো না। মেয়ের শ্বশুড়বাড়ি যে অবস্থাতেই যাওয়া হোকনা কেনো খালি হাতে গেলে সম্মান থাকেনা।

বাবার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে লাবিবা। ইসমাইল আসার খবর জেনে নিতু ইসলাম ও আজ এ বাড়িতেই আছে। লাবিবার মাথায় বড় করে ওড়না দিয়ে ঘুমটা দেওয়া। মেয়েটা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভীষণ অসুস্থ লাগছে। ঘুমযে হয়নি এটাও বুঝতে পেরেছে। সেজন্য ওকে আর ডাকছে না। কিন্তু ড্রয়িং রুমে আড্ডা বসেছে। গল্পে মশগুল সবাই। আওয়াজ ও হচ্ছে। সবকিছুই যেনো নরমাল। কিন্তু ইসমাইলের বুকে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কানের পাশে লাল হয়ে ছিলো নজরে এসেছে। লাবিবা অবশ্য বুঝতে পেরেই ঢেকে নিয়েছে ‌। কিন্তু বাবার মন ঠিকই বুঝতে পেরেছে। লাবিবার শরীরের তাপমাত্রাও একটু যেনো বেড়ে গেছে। আত্বীয়দের সামনে ইসমাইল জিজ্ঞেস করতে পারলো না,
‘ লাবি মা জামাই কি তোকে মেরেছে?’
আড়ালেও জিজ্ঞেস করতে পারবেনা। বিবাহিত মেয়েকে এসব জিজ্ঞেসা করা যায়না। কিন্তু মেয়ের শরীরের মতি গতি বুঝতে বেগ নিলো না। তানভীর ঘুমুচ্ছে। বাবার কথা শুনে লাবিবা আর ঘুমুতে পারেনি। গতকালের আনারকলি টাই পরে বাইরে চলে এসেছে।

বেয়াই আসার খবর পেয়ে ফিরোজ খান ও লাঞ্চে বাসায় ফিরেছে। ডাইনিং এ সবাই একত্র হয়েছে। লাবিবাও বসেছে বাবার সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে হাজির হলো ফিরোজ খান। লাবিবাকে দেখে একগাল হেসে নিলো। মাথায় হাত রেখে জানতে চাইলো,
‘ আমার মা ভালো আছে?’
লাবিবা সৌজন্য হাসলো,
‘ হ্যা পাপা। ‘
‘ রাগ পরেছে?’
‘ হ্যা পাপা। ‘
‘ তুমি তো টেনশন ধরিয়ে দিয়েছিলে। আমার বাদরটাকে সিরিয়াসলি বলে দিলাম রাগ না পড়লে প্রয়োজনে পা ধরে বসে থাকবে। ‘
লাবিবা গাল ফুলিয়ে বললো,
‘ আপনি কি আমাকে পাপের ভাগিদার করতে চান পাপা?’
‘ একদমি না। তুমি তো আমার মা। ‘
আশেপাশে তাকিয়ে নিতু ইসলামকে জিজ্ঞেস করলো ,
‘ তানভীর কোথায়?’
‘ পরে আসছে দুলাভাই। খাওয়া শুরু করুন।‌’
সোহানা ইসলাম সার্ভ করে দেয় নতুন বেয়াইকে। তানভীর একবার নিচে এসেই ইসমাইল কে দেখে ঘুরে যায়। লাবিবার অবশ্য চোখ এড়ায় না। নির্লজ্জ লোক! উদোম গায়েই চলে আসছে। লাবিবা ভেবেছিলো শার্ট আনতে গিয়েছে। কিন্তু খাবার শেষ করে সবাই রেস্ট করছে তখন ও তানভীর আসেনা। লাবিবাও উপরে যায়না। তার শরীরটা একদমি ভালো নেই। মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। সিড়ি দিয়ে উঠতে নামতেও কষ্ট হচ্ছে। তাছাড়া তানভীরকে ফেস করতেও অস্বস্থি হচ্ছে।এতোটা অস্বস্থি রাতেও হয়নি। সেতো এমনিতেই স্ট্রং ছিলো না। তার উপর যদি লোকটা এমন পাগলামী করে তাহলে কিভাবে ব্যালেন্স রাখবে? সারাটা রাত একটুও ছাড় দেয়নি। চেঞ্জ করার সময় চোখ দুটো বুঝে চেঞ্জ করেছে। নিজের দিকে তাকানোর সাহস অব্দি পায়নি।

গল্প করতে করতে বাগানে সবাই এসে বসেছে। লাবিবা যায়নি তাদের সাথে। সে সেখানেই চুপটি করে বসে আছে। মাঝে মাঝে চোখ ঘুরিয়ে এটা ওটা ড্রয়িং এরিয়াটা দেখছে। এই প্রথম সে শ্বশুরবাড়িতে। যেখানে আসার জন্য কত অপেক্ষাই না করেছে। আজ সে তার কাঙ্খিত জায়গায়। কিন্তু তার শরীর ভালো নাই। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। সোফায় কি একটু শোয়া যাবে? কেউ কিছু বলবে না তো? রুমেও তো তানভীর আছে। তানভীরের সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। লাবিবা কেমন যেনো অনুভূতি শূন্য হয়ে আছে। পিঠে মাজায় ভীষণ ব্যথা করছে। বসেও থাকতে যেনো পারছেনা। বাড়িতে থাকলে মায়ের সাথে এতোক্ষনে প্যানপ্যানানী ঘ্যানঘ্যানানী শুরু হতো। শ্বশুরবাড়িতে অসুস্থ শরীরটা নিয়েও সুস্থ থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে।

এতোক্ষণে তানভীরের দেখা মেললো। থ্রী কোয়ার্টার প্যান্টের পকেটে দু হাত দিয়ে শীষ বাজাতে বাজাতে আসছে। আবার উদোম গায়ে ফিরেছে। লাবিবা মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। মানুষটাকি বাসায় সব সময় শার্টলেস হয়েই ঘুরঘুর করে? লাবিবার মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া তানভীরের পছন্দ হয়না। একদম সামনে দাঁড়িয়ে একহাতে থুতনি ধরে আরেক হাতে পেটের সাথে মিশিয়ে নেয়। লাবিবার নাক ঠেকে একদম নাভি বরাবর। গতকাল রাতেই লাবিবা তার নতুন এক দুর্বলতার সহিত পরিচয় লাভ করেছে। লোমে আবৃত লম্বা শিরদাঁড়া হয়ে এসে সুগভীর এই নাভীতে মিলেছে। দু তিনবারের বেশি দেখতে পারেনি এখন নাক গুঁজে দিয়েছে। অন্যরকম একটা স্মেল আসছে। কাল থেকে এই স্মেলটাই তানভীরের গা থেকে লাবিবা পাচ্ছে। গালে লোমের ছোঁয়ায় লাবিবার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে আসে। তানভীর পকেট থেকে দুটো ট্যাবলেট বের করে। লাবিবার গাল চেপে ধরতেই হা করে। ট্যাবলেট দুটো মুখের ভেতর পুরে দিয়ে কাছেই টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে তুলে মুখে পানি ঢেলে দেয়। ভাবলেশহীন ভাবে বলে, ‘ শ্বশুরআব্বুকে গিয়ে বলে দাও তুমি যাচ্ছোনা। উনি চলে যাক। তারপর যত ইচ্ছা ততো প্রাণ ভরে আমার নেভেলস এর স্মেল নিও। শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ‘ মুখ ভর্তি পানি নাকে মুখে উঠে লাবিবা কাঁশতে থাকে। ট্যাবলেট পেটের মধ্যে চলে গেছে। লাবিবার মাথায় হাত দিয়ে আলতো করে কয়েকবার চড় দেয়।
‘ বাট্টি বাট্টি। সাবধানে পান করো। আমারটা থেকে তোমার নেভেলস এর স্মেল আরো কড়া। ঐটা আমার জন্যই সোনা। আফসোস নিজের টা নিজে নিতে পারবেনা। ‘
লাবিবা কি প্রতিউত্তর করবে ভেবে পায়না। আহাম্মকের মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকাই যেনো তার প্রধান কাজ।

চলবে __

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

৩৫ (খ)
শ্বশুর জামাইয়ের বৈঠক বসেছে। মূলত তানভীরকে খোঁজে বের করে জোর করে ইসমাইল সামনে বসিয়ে রেখেছে। তানভীরের মতি গতি ইসমাইল বেশ বুঝতে পেরেছে। সেও একদিন তানভীরের বয়সী ছিলো। লাবিবার শরীর খারাপ করছে ইসমাইল দেখেই বুঝতে পেরেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাবিবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেই শ্বাস পড়ে। তানভীরের উদোম গা দেখে ইসমাইল বেশ বিরক্ত হলো। বুকে পিঠে আচড়ের দাগ। ছেলেটা চাইছে টা কি? নির্লজ্জপনা দেখাচ্ছে। বাকি কথা রেখে ইসমাইল আগে এটাই জিজ্ঞেস করলো,
‘ তোমার কি শার্ট নেই আব্বু? ‘
‘ আছে। কিন্তু ট্রাস্ট মি আব্বু, আপনার মেয়ে বাড়িতে আছে বলে একটাও পরতে ভালো লাগছে না। ‘
ইসমাইল মনে মনে একটা বিচ্ছিরি গালি দিলো। কিন্তু মুখে হাসি হাসি ভাবটা ধরে রেখে বললো,
‘ কোনটা ভালো লাগবে আমাকে বলো। আমি পাঠিয়ে দিবো। ‘
‘ আমার জন্য এতো কষ্ট করতে হবেনা আব্বু। আপনি লাবিবাকে রেখে যান। ও একটু সুস্থ হোক আমি ওকে নিয়ে যাবো। ‘
মূল কথায় আসতেই ইসমাইল কোমড়ে হাত রেখে তানভীরের দিকে ঝুঁকে বসলো।
‘ তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো।‌ সাহস কি করে হয়? আমার মেয়ের গায়ে আমি ফুলের টোকা অব্দি কখনো পড়তে দিই নি। আমার মেয়ে যতই ভুল করুক তাকে শুধরে নিয়েছি বার বার। আর তোমার হাতে তুলে দিতে না দিতেই গালে দাগ বসে গেলো। মেয়ে আমার মাথা ঠেকিয়ে রাখছে সব সময়। তোমার থেকে আমি এটা কখনো আশা করিনি তানভীর। আর যাই হোক এটা বিশ্বাস ছিলো তোমার হাতে অন্তত আমার মেয়ে সেফ থাকবে। ‘
নিজের কৃতকর্মে তিরষ্কার পেয়ে মাথা নিচু করে থাকলো তানভীর। ইসমাইলের আরো রাগ বাড়লো।‌
‘ তোমাকে আমার মোটেও মেয়ের পাশে পছন্দ নয় তানভীর। তুমি জানো তার যথেষ্ট কারণ আছে । তবুও তুমি আমার মেয়ে জামাই। আমার মেয়ে আমার একমাত্র অবলম্বন। আমি চাই তুমি আমার মেয়েকে হ্যাপি রাখো সব সময়। কিন্তু তুমি নিজের রাগ সংবরণ করতে পারলে না? নিতু আপার থেকে শুনে তোমার প্রতি বিশ্বাস ভেঙে গেছে তানভীর। তুমি যতই আমার মেয়ের হাজবেন্ড হওনা কেনো মেয়ে কিন্তু আমার।‌আমি আমার মেয়েকে পুতুলের মতো করে বড় করেছি। মেয়ের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য প্রতিটা পদক্ষেপ হিসাব করে ফেলি। কিন্তু এবার তো মনে হচ্ছে হিসাবটা কষা ঠিক হয়নি। ‘
শ্বশুরের কথা শুনে তানভীর নির্দিধায় নিজের ভুল স্বীকার করে। প্রমিজ করে
‘ এরকম ভুল আর হবে না আব্বু। আমি সব ঠিক করে দিবো। ‘
‘ আমার মেয়ে ভয় পেয়ে আছে তানভীর।’
তানভীর ভাবে। তাইতো কথা তো বলেনি। এতো এতো কথা বলা মেয়েটা চুপচাপ হয়ে গেছে। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো একটিভিটিস ও দেখায় নি।
সত্যিই ভয় পেলো?
‘ ঐ ছেলেটাকেও হসপিটালে পাঠিয়ে ছেড়েছো। ওর বাবা যা নয় তা বললো। আমি চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। তোমার পাপার কানে কথাটা যায়নি। তুমি কন্ট্রোললেস এটা প্রায় সবাই জানি। আমার মেয়ে জানে না। ওর হার্ট দুর্বল।‌ ওর সামনে ওভার কিছু করবেনা। ‘
‘ ছেলেটাকে আপনার মেয়ে সুযোগ করে দিয়েছিলো আব্বু। ধীরে ধীরে ব্রেইন ওয়াশ ও করতো। আপনি তো আমার কথা বিলিভ করেননি। ‘
‘ হুম। তবে এরকম একটা কাজ না করলেও পারতে। ‘
‘ কি করবো আব্বু? বয়সটা আমার একটু বেশি তো । ‘
জায়গা মতো খোটাটা ঠিকই দিয়ে দিলো। এই ছেলেকে কিছু বললেও যেনো দোষ! ইসমাইল অন্য দিকে মুখ ঘুরালো।
ফিরোজ খান বের হবেন। তানভীর ইসমাইল কে দেখে এদিকেই আসছেন। জবেদা এসে দাড়া। হাতে ল্যাভেন্ডার কালার টি শার্ট। তানভীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে জানালো লাবিবা পাঠিয়েছে। লাবিবার কথা শুনে তানভীর টি শার্ট পড়ে নিলো। কিচেনের সামনে লাগানো গ্লাসে চোখ রাখলো। বাহ! হুয়াইট থ্রি কোয়ার্টার এর সাথে ল্যাভেন্ডার টি শার্ট বেশ মানিয়েছে তো। ড্রেস সেন্স নিয়ে বরাবরই খুঁতখুঁতে তানভীরের এই প্রথম এক চান্সে নিজেকে ভালো লাগলো। ফিরোজ খান এসে বললো,
‘ বেয়াইসাহেব আজ থেকে যান। একটা রাত মেয়ের বাড়ি থাকলে কিছু হবেনা। ‘
‘ মেয়েই তো তুলে দিলাম না বেয়াই সাহেব। আগে মেয়ে তুলে দেই তারপর এসে থাকা যাবে। ‘
‘ হ্যা সেটাই। মেয়ের বাড়ি মানে বাবার ও বাড়ি। একসাথে থাকবো। কোনো না শুনছি না। ‘
‘ সেতো অবশ্যই । অবশ্যই।‌ বিকেল হয়ে আসছে। এবার তাহলে মেয়েকে নিয়ে বেরোই। ‘
তানভীর নাকচ করে বসলো ।
‘ পাপা লাবিবা এখানেই থাকবে। ঐ বাড়িতে একা একা আমি আর পাঠাচ্ছি না। ‘
নিতু ইসলাম এসে শুনে ধমক দিলো,
‘ চুপ থাকো বেয়াদব। হুট করেই এরকম একটা কান্ড ঘটিয়েছো। এখনো বাড়ির বউ কে তুলে নিয়ে আসা হয়নি। বরণ করে চৌকাঠ পেরোনো হয়নি। জেদ করে নিয়ে আসলে লোকে শুনলে কি বলবে?’
সোহানা ইসলাম ও মুখ খুললো।
‘ তানভীর এতো পাগল হয়েও আমি যেখানে চুপ করে আছি অপেক্ষা করছি তখন তোমার বোঝা উচিত। কে জানে তোমাদের বিয়ের কথা? সবাইকে জানিয়েই বউ ঘরে তুলবো। তাছাড়া এ পরিবারের নিয়ম তুমি জানোনা? বউ তুলে আনার আগে বাড়ির বউ এ বাড়িতে পা রাখে না। সেখানে একটা রাত এলাও করেছি। ‘
‘ প্লিজ মম। তোমার দাদী শ্বাশুড়ী কি নিয়ম বলে গেছে সেই নিয়ম ধরে টেনো না। এসব সব ভ্যালুলেস নিয়ম আমি মানি না। ‘
‘ জেদ করে না তানভীর। এই কথা তোমার প্রতিষ্টানে এখন পাবলিশ হলে পাঁচজনের হাসির খোরাক তুমিই হবে। এমনিতেই তোমাদের মাঝে অনেক ডিস্টেন্স তার উপর স্যার স্টুডেন্ট এর ব্যপারটা নিয়ে মাতামাতির অন্ত থাকবে না। এই সম্পর্ক ঘুচুক। আর একটা বছর ওয়েট করো। ‘
‘ মম আমার গ্ৰামে যেতে প্রব্লেম হয়। এটা কেনো বোঝো না?’
‘ ম্যানেজ করে নাও বাবা। নিতু বউমাকে নিয়ে আয়। ‘
তানভীর যা বোঝার বুঝে গেলো। এরা কিছুতেই লাবিবাকে রেখে যাবে না। নিতু ইসলাম লাবিবাকে আনতে গেলে সোহানা বললো,
‘ বউমা রেসপন্স করলে আমি ম্যানেজ করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বউমাই থাকতে চাইছে না। ‘
তানভীরের মুখটা বড্ড অসহায় দেখালো। ফিরোজ খান বলে গেলো, ‘ আমি যাওয়ার পথে ড্রপ করে দিবো। ‘
ইসমাইল সেখানে বসেই মেয়ের জন্য অপেক্ষা করলো। সোহানা কিচেনের দিকে ছুটলো। উপস্থিত শুধু ইসমাইল এবং তানভীর। দুজনের মধ্যে নিরবতা চললো। তানভীর কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবলো । ইসমাইল কে জিজ্ঞেস করলো,
‘ চরের জমিগুলো শুনলাম বিক্রি করে দিচ্ছেন?’
‘ হুম। প্রয়োজন নেই। এতো দিক সামাল দিতে পারিনা। বিক্রি করার পর থানার ভেতরের বাড়ির কাজ ধরবো। ‘
‘ থানার ভেতরে বাড়ির কাজটা অফ আছে অফ ই রাখেন। কাচারিপাড়ায় যে নয় শতাংশ জমিটা আছে সেখানে কাজ ধরেন। তিনতলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুতলা কমপ্লিট করে রাখেন।‌ এখান থেকে বিশ মিনিটের হাঁটার রাস্তা। সুবিধা হবে আব্বু। ইচ্ছা করলেই যেখানে ইচ্ছা সেখানে মেয়ের সাথেই থাকতে পারবেন। বাড়ির ভেতরকার ডেকোরেটটা অনেকটা এবাড়ির মতো করতে চাই। যাতে আমার ফ্যামিলির কারো কোনো প্রব্লেম না হয়। দু বাড়িতে মিলেমিশে ই থাকতে পারে। লাবিবা চলে এলে আপনাদের একা রাখতে চাইছি না আব্বু। কাকাদের বাসাও অনেকটা দূর।‌ রিস্কের হয়ে যায়।‌ টেনশন নিতে চাইছিনা।‌ ‘
‘ ঐ বাড়িটার অর্ধেক কাজ হয়ে আছে। ‘
‘ থাক। পরে কমপ্লিট করা যাবে। আগে সদরে কাজ ধরুন। ক্যাশ যদি শর্ট পরে আমি তো আছিই। আফটার অল আপনিতো এটা অস্বীকার করতে পারবেন না বাড়ীটার মালিক আমিই। ‘
তানভীরের প্রস্তাবে ইসমাইল মৃদু হাসলো। ভালো লাগলো। আসল উত্তরাধিকারীর মতো কথা! এতো দিন ভাবনা ছিলো জামাই তার সম্পদের প্রতি উদাস হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জামাই নিজে থেকেই সবটা নিজের ভেবে নিয়েছে। ইসমাইলের আর নিজে থেকে আগ্ৰহ দেখাতো হলো না। ইসমাইল মাথা ঝুমালো।
‘ হুম। রাস্তার পাশে ফসলি জমিগুলো একসময় তোমাকে দেখিয়ে দিবো। সিদ্ধান্তটা তুমিই নিবে। মেইন প্লটের জায়গা আশেপাশে বড় দালানকোঠা হচ্ছে। যদি মনে হয় বিল্ডিং করবে তাহলে করো। বেশ ভাড়া চলবে।’
‘ কতটুকু জমি হবে আব্বু?’
‘ চার একর দুই কাঠা হবে। ‘
‘ অনেক! আমার বিল্ডিং অনেক থাকলেও ফসলি জমি নেই। ফসল ই হোক। ফ্রেশ খাবার পাওয়া যাবে। জমিটা কি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া? আমার দাদা শ্বশুড়ের?’
‘ ছিলো।এখন তোমার আম্মু আর লাবিবার নামে দলিল করে দিয়েছি।’
আলোচনার মাঝেই লাবিবা এসে দাঁড়ায়। ফিরোজ খান গাড়িতে অপেক্ষা করছে। তানভীর সহ সবাই যায় লাবিবাকে গাড়িতে তুলে দিতে। লাবিবা গাড়িতে উঠে বসলে তানভীর একপাশে ছড়িয়ে নেওয়া উড়নাটা গুটিয়ে নিয়ে কোলের উপর তুলে হাতের ভাঁজে গুঁজে দেয়। ঠিকঠাক ভাবে সিটবেল্ট লাগিয়ে বসে লাবিবা তাকায় তানভীরের পানে। তানভীর আগে থেকেই তার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টির পলক নেই। চোখে চোখে বলা হয় হাজারো কথা। তানভীর মুখটা একটু এগিয়ে নেয়। মৃদু স্বরে রাগ ঝাড়ে
‘ নিষেধ করেছিলাম।‌ করিনি?’
লাবিবা মাথা ঝুমায়। নিষেধ করেছে।‌
‘ না করলেনা কেনো?’
লাবিবা মুখে এঁটেছে। উত্তর দিবে না। তানভীর ঘাড়ে হাত দিয়ে একটা মোচড় দেয়। কট করে শব্দ হয়।
‘ যাচ্ছো যাও। পৌঁছেই ফোন দিবে। খান সাহেবের বউ অবাধ্যতা করলে খান সাহেব কিন্তু বউকে দিন রাত উপোস করাবে,একটুও আদর খাওয়াবে না। ‘

চলবে___