ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
2365

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৬)
দুদিনের জ্বরে কাহিল লাবিবা। লাবিবার জ্বরের খবর পেয়ে ফ্লোরা এসেছে লাবিবাকে দেখতে। লাস্ট লাবিবার সাথে কথা হয়েছিলো চার দিন আগে। এরপর থেকেই মেয়েটা লাপাত্তা। ফোন করেও পাওয়া যায়নি। আজ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ফাহাদ সহ যাবতীয় ব্যপারটা। ফ্লোরা এ শহরে এই আসে এই যায়। কর্মক্ষেত্রের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু গিয়ে টিকতে পারেনা। দু তিন দিন হলেই ছটফট করে আবার ফিরে আসে তার ছোট্ট ফ্ল্যাটে। এখানে থাকলে তামিমের সাথে না থাকুক। দিন একবার হলেও তো দেখতে পারে। চোখের তৃষ্ণা মেটানো যাকে বলে। যদি চায় কাছে গিয়ে কথাও বলতে পারে। হসপিটালের সবাই এখন প্রায় ফ্লোরাকে চিনে। ফ্লোরার তামিমের কাছে যেতে অনুমতি নিতে হয়না। পরিচয় জিজ্ঞাসার্থে তামিম জানিয়েছে ফ্লোরা তার ওয়াইফ। এক্স শব্দটা মনে হয় উচ্চারণ করা হয়নি। তাইতো ফ্লোরাকে কেউ কেউ মেম,কেউ কেউ ভাবী বলেই ডাকে। যদিও ফ্লোরাকে দেখেনি তারা। সব সময় মাস্ক ক্যারি করে। ফ্লোরা যখন দূরে থাকে তখন দম বন্ধ হয়ে আসে। যখন কাছে আসে তখন ছটফট করতে থাকে। আগে অনেক ফ্রেন্ডস, সিনিয়রের সাথে ভালো রিলেশন থাকলেও ফ্লোরা ইদানিং সবার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। টাকা খ্যাতি তাকে সুখ দিতে পারেনা। সুখ দেয় তামিমের কন্ঠস্বর, তার উপস্থিতি। লাবিবাকে পেয়ে তার বেশ ভালোই কাটে। ফ্লোরা বিভিন্ন কথায় লাবিবাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করে ‌। খারাপ খারাপ কথা বলে যাতে লাবিবা রেগে যায়। নিজের যে একটা সুপ্ত রাগ রয়ে গেছে তানভীরের প্রতি সেটাও লাবিবার উপস্থিতিতে ফ্লোরা বুঝতে পেরেছে। সব কিছু মেনে নেওয়া ভূলে যাওয়া মেয়েটা জানতোই না এ কথা। সেটাও এখন পড়ে গেছে। তানভীর যে তার জীবনে কি এটা ফ্লোরা কোনদিন অস্বীকার করতে পারবেনা। তানভীর হচ্ছে ফ্লোরার জীবনে লাকি চার্ম। ফ্লোরা যখন যা চেয়েছে তানভীরের জন্য ই সম্ভব হয়েছে। এখনো ফ্লোরা যা চায় তানভীর ছাড়া সম্ভব নয়। জীবনের প্রত্যেকটা মোড়ে মোড়ে যখন এই একটা ব্যক্তির আঙুল ধরে দাঁড়াতে হয় তখন তাকে কোন স্থানে বসাতে হয় ফ্লোরা জানে। আর সেই ব্যক্তির একটা মাত্র হৃদয়হরিনী, সুখ লাবিবা নামের এই মেয়েটি। তার জীবনের দুঃখ কষ্ট গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা তো তার কর্তব্য। ছোট্ট মেয়েটার দিক নির্দেশনা দিতে গিয়ে তাঁকে কত খারাপ খারাপ কথা বলতে হয়েছে সে জানে। তবুও মেয়েটা তার কাছ ছাড়েনি। কি পেয়েছে? পেয়েছে কিছু খুঁজে? আজ লাপাত্তা হবার কারণ টা জানার পর তো তাই মনে হচ্ছে। এর ভেতরেও কিছু ঘটে।

ফ্লোরাকে দেখে সাবিনা বেশ অবাক হলো। ছোট খাটো প্রায় বেশ জনপ্রিয় মুখ ফ্লোরা। এতবড় মাপের একজন মডেল তার বাড়িতে হটাৎ! লাবিবার কথা জিজ্ঞেস করতেই হুস ফেরে। মেয়ে তার সোস্যাল মিডিয়ায় ছোট বড় ভালোই লোকজনের সাথে আলাপচারিতা আছে তার উপর ফ্লোরার অভিনয়ের ফ্যান বলা চলে। এইতো বছর পাঁচেক আগে যখন ফ্লোরার প্রথম টেলিফিল্ম বেশ জনপ্রিয়তা পেলো তখন লাবিবা খুশিতে বাকবাকুম হয়ে জানালো, ‘ জানো মা? এই মেয়েটা আমাদের জেলার মেয়ে। কী সুন্দর দেখতে! কী সুন্দর অভিনয়!’ সত্যি নিজ জেলা থেকে বড় মাপে কেউ পৌঁছলে তার প্রতি আলাদা একটা টান থাকে। সাবিনা লাবিবার অসুস্থতার কথা বলতে বলতে লাবিবার রুমে নিয়ে এলো ফ্লোরাকে। লাবিবা শুয়ে আছে। সাবিনা ডাকলো। ফ্লোরা এসে কপালে হাত রাখতেই লাবিবা চোখ মেললো। না এখন এতো জ্বর নেই। লাবিবা ফ্লোরাকে দেখে অসুস্থ মুখেই মিষ্টি একটা হাসি দিলো। ফ্লোরা নিজস্ব ধরনেরই বললো, ‘ স্ট্রং মানুষের নারী এতো দুর্বল! বিছানা নিয়েছে দেখছি। ‘
লাবিবা উত্তর করলো না। ফ্লোরাকে বেশ ভালো করেই চিনেছে। বাঁকা কথা লাবিবাকে না বললে যেনো লাবিবা কষ্ট পায়! লাবিবা মনে মনেই হাসে। উঠে বসে খাটের বোর্ডে হেলান দেয়।
‘ আপু। বসো। ‘ ফ্লোরা তার পেছনে সোফায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। পা বাড়িয়ে এসে কম্বল একটু সরিয়ে লাবিবার পাশেই বসে।
সাবিনা বলে, ‘ তোর ফ্লোরার সাথে আলাপ আছে আমাকে একদিন ও তো বললি না? এখানে যে আসছে সেটাও তো বললি না। ‘
‘ আমি জানতাম না। ‘
‘ কথা বল। আমি নাস্তার ব্যবস্থা করছি। তোর কাকীদের ফোন লাগাই। খবরটা দেই। ফ্লোরা মা তুমি কিছু মনে করোনা। একটু বসে যেও হ্যা?’
‘ আমার তাড়া নেই আন্টি। আপনার হাতে খেয়েই যাবো। ব্যস্ত হবেন না। ‘
‘ আচ্ছা আচ্ছা। ‘
সাবিনা দরজায় পা রাখতেই লাবিবা ডাকে,
‘ আম্মু। ‘
‘ হ্যা বল। ‘
‘ কাকী দের বলো ফ্লোরা আপু তামিম ভাইয়ের ওয়াইফ। আমার জা। ‘
‘ কিন্তু _’
লাবিবার হাস্যজ্জ্বল মুখে দেখে সাবিনা চুপ হয়ে যায়। ফ্লোরার দিকে তাকিয়ে হাসে। তারপর নিজ কাজে চলে যায়।
লাবিবার হাসিতে ফ্লোরার মুখের উপর কালো ছায়া পড়ে। বিনয়ী ভাবটা দূর হয়ে গম্ভীর হয়। সেই প্রসঙ্গে আর যায়না।
‘ শুয়ে আছো কেনো? হাঁটাহাঁটি করো। জ্বর তো নেই দেখলাম। একটিভ থাকো। শুয়ে থেকে যদি শরীরকে বোঝতে দাও তুমি অসুস্থ তাহলে শরীর আরো পেয়ে বসবে। ‘
‘ এতোক্ষন ড্রয়িংরুমেই ছিলাম। দিনে তেমন জ্বর থাকেনা। রাতে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসে। দুটো কম্বল চাঁপা দিয়েও হয়না। ‘
‘ তানভীর জানে?’
‘ না। কথা হয়নি তার সাথে। ‘
‘ কেনো? তুমি তো ওদের বাসায় থেকে এলে। লাবিবা সব তো মিটমাট হয়ে গেছে তাইনা?’
ফ্লোরার চোখে মুখে সন্দেহ। আবার জিজ্ঞেস করে,
‘ হয়নি? এখন প্লিজ এটা বলোনা এতো কিছু করেও তানভীরকে বাঁকাতে পারোনি। ‘
ফ্লোরা অধৈর্য্য হয়ে উঠে লাবিবার চুপ থাকাতে।‌ লাবিবার ফেসটা কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠে। অভিমানী সুরে প্রশ্ন করে, ‘ তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে আপু? উনি সত্যিই আমাকে খারাপ ভেবেছে। ‘
‘ তো কি ভালো হয়ে থাকতে চাও? জীবনে যদি ঐ ঘাড়ত্যাড়ার ভালোবাসা পেতে। তানভীর তোমাকে ভালোবাসে নি? এই লাবিবা বলেনি লাবিবা ভালোবাসি? অস্বির লাগছে উত্তর দাও। আমিতো ভেবেছি প্ল্যান কাজে লেগেছে। এখন তুমি আমাকে আশাহত করোনা প্লিজ। খান বংশের সব গুলা লোকের ঘাড় ত্যাড়া। পাগলের ডাক্তার এই বংশের না হলে সেই কবেই আমাকে নিজের কাছে নিয়ে নিতো। ব্যাটা এখনো ত্যাড়ামী করে যাচ্ছে। ‘
ফ্লোরার ছটফটানো দেখে লাবিবা আলতো ভাবে কাঁধ থেকে জামাটা নামিয়ে দেয়। আবার সাথে সাথেই তুলে নেয়। গালে ফুটে উঠে লজ্জা আভা। ফ্লোরা কি বলবে খুঁজে পায়না। খুশিতে উঠে এসে হালকা করে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে। লাবিবা ফ্লোরার কাঁধে মাথা রেখেই তার নামে অভিযোগ জানায় ‘ তুমি বলোনি কেনো তোমার দেবর একটা রাক্ষস?’
‘ আমি কিভাবে জানবো? তুমি যদি তোমার ভাসুরের কথা জিজ্ঞেস করো তাহলে আমি বলতে পারি সিমিলারিটি আছে। তোমার শ্বশুড়ের কথা বলতে চাইছিনা। ঐ বাড়ি যাও দুই দিনেই বুঝে যাবে। ‘
‘ কেনো? ‘
‘ বউ ছাড়া তারা কিছুই বুঝে না। এটা একেবারে হাতে কলমে প্রমাণিত। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না এরকম একটা মমেন্ট পার করার পরেও তানভীরের সাথে কেনো তোমার কথা হচ্ছেনা? ‘
লাবিবা ফ্লোরাকে ছেড়ে বসে।
‘ ফোন দিতে বলেছিলো। আমি দিইনি। মনে ছিলো না। গতকাল কল করেছিলাম বললো টাঙ্গাইল গিয়েছে কে যেনো মারা গিয়েছে জানাজায় অংশগ্ৰহন করতে।এটুকুই কথা হয়েছে। আর কোনো কথা হয়নি। ‘
‘ ফিরেনি?’
‘ জানিনা তো। ‘
‘ তুমি অসুস্থ। জানাও নি?’
‘ না।’
‘ আমি জানিয়ে দিচ্ছি। ‘
‘ কি বলবে? না না বলোনা আমার উপর রেগে আছে। ‘
‘ তো রাগ ভাঙাও। ‘
ফ্লোরা তানভীরকে কল করে কিন্তু কলটা রিসিভ হয় না। ছোট্ট একটা এস এম এস পাঠিয়ে দিয়ে লাবিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
‘ তোমার এতো রাগ কেনো আপু উনার উপর?’
‘ রাগ নাতো। ‘
‘ তাহলে এতো কঠিন কেনো? ‘
‘ কারণ আমি ভালোবাসা বঞ্চিত একজন মানুষ। তোমার মনে প্রশ্ন জাগে না লাবিবা আমি কেনো তোমার সাথে আছি? কেনো তোমার পথযাত্রী? কারণ আমার মতো তুমিও ছিলে ভালোবাসা চাওয়া একটা মানুষ। সামান্য কয়েকমাসের ভালোবাসায় কি অবস্থা করেছো নিজের লাবিবা! তোমাকে দেখেই বুঝা যায় তুমি কষ্টে আছো। তোমারো যে কষ্ট আমারো সেই কষ্ট। কিন্তু আমার কষ্টটা দীর্ঘকালের। তাই সয়ে গেছে কিন্তু ঠিক থাকতে পারিনা। আমি চাইনা আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা পরিবারের হয়ে তুমি কষ্ট পাও। ভালোবাসা হচ্ছে খোলা আকাশের মতো। তাকে মুক্ত করে দিতে হয়। কিন্তু সেই মুক্ত ভালোবাসা বদ্ধ হয় যখন একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর জীবন জুড়ে যায়। এই ভালোবাসা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। আছে চাওয়া পাওয়া। দুজনে একসাথে থাকো। দেখবে জীবন কত সহজ। মনে থাকবে প্রশান্তি। যেকোনো কাজে আগ্ৰহ পাবে। জোর পাবে। মন চাইলে বুকে মাথা রেখে কাঁদতেও পারবে আবার মন চাইলে দুইয়ে মিলে প্রাণ ভরে হাসতেও পারবে। সাময়িকী যত দূরত্বেই থাকোনা কেনো ভেতর থেকে বল পাবে। হ্যা একজন আছে। তুমি নিসঙ্গ নও। তোমার একজন আছে। ‘
‘ তামিম ভাই কি তোমার প্রথম প্রেম?’
‘ হ্যা। ‘
‘ প্রথম প্রেম খুব পোড়ায় আপু। ভোলা যায়না। স্যার আমার কাছে আসা প্রথম অনুভূতি। এইযে এতো অবহেলা! তুমি তো বার বার বললে এই পথ এগোবার নয়। সোজা হয়ে দাঁড়াতে। আমিতো কত চেষ্টা করেই সেই বেকেই বসলাম। আমাদের সম্পর্কে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমি সত্যিই জানিনা স্যার মন থেকে আমাকে ভালোবাসি বলেছেন কিনা? হতেও তো পারে একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গেছি কিছু করার নেই আর সেজন্যই আমাকে শক্ত করে বেঁধেছেন। কিন্তু আমি উনাকে ভালোবাসি। উনি আমার নিজস্ব পুরুষ। আমি উনাকে ছাড়বোনা। মৃত্যুর দু মিনিট আগেও যদি উনি একবার আমাকে মন থেকে ভালোবাসে তাতেও আমি স্বার্থক। মানুষ তো অভ্যাসবশত ও ভালোবাসে তাইনা?’
‘ এতো কনফিউজড তুমি এখনো?’
লাবিবা ফ্লোরার হাত দুটো মুঠোয় পুরে। ঢুক গিলে বলে,
‘ আমার ভীষণ ভয় করে আপু। ভালোবাসা কে যত্ন করে ভালোবেসে বুকে পুরে রাখতে হয়। তোমরাও তো দুজন দুজনকে ভালোবাসো। তাহলে এতোকাল ছন্নছাড়া কেনো? আমি পারবোনা আপু তোমাদের মতো করে জীবন কাটাতে। অনেক আগেই মরে যাবো। ‘
ফ্লোরার চোখ দুটো ভরে উঠে। মুখে লেগে আছে হাসি। চোখের জল গাল অব্দি ছুলেই তালুর উল্টোপিঠে মুছে ফেলে।লাবিবার হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে উত্তেজনার সাথে বলে, ‘ তোমাদের গ্ৰামে বলেনা সর্বগ্ৰাসী? অলক্ষী? আমি হলাম সর্বগ্ৰাসী । অলক্ষী হয়ে ঢুকেছিলাম সংসারে। প্রত্যেকের মন ভেঙে বেরিয়ে আসছি। নিজের সাথে সাথে একজনের জীবনটাও নষ্ট করেছি। দেখোনা ডিভোর্সের এতো বছর পরেও ও কোনো মেয়েকে নিজের জীবনে জড়ায়নি। দেবরকে দিয়েছি অপবাদ।’
‘ আমার উনার সাথে তোমার কি প্রব্লেম হয়েছিলো? কেনো তুমি উনাকে দোষী বানিয়েছিলে? আমার মুখ থেকে এই খারাপ বাক্যটা শোনার পর উনি কতটা কষ্ট পেয়েছিলো জানো? সবার কাছে আড়াল করলেও আমি ঠিকি উনার কষ্টটা বুঝে নিয়েছিলাম উনার মুখ দেখেই। আমাকে বলো আপু উনার সাথে তোমার কিসের শত্রুতা? ‘

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৭)
কলেজ লেভেলে শুরু হয় তামিমের সাথে আমার পথচলা। গোপনে গোপনে প্রেম ধীরে ধীরে তার প্রকাশ। বন্ধুরা জানতে জানতেই তানভীরের কাছে তামিম খায় ধরা। তানভীর তখন সুইজারল্যান্ড এ। তামিম ও ডাক্তারি পড়ার জন্য সেখানেই যায়। দু একদিনেই তানভীর আমাদের ব্যপারটা ঠাহর করে উঠতে পারে। কারণ তখন আমি বাংলাদেশে আর তামিম সুইজারল্যান্ড এ। তামিম যাওয়ার পর তো আমার পাগল প্রায় অবস্থা। প্রত্যেকটা সেকেন্ড ও বসে বসে গুণেছি। ক্লাস শেষে কখন এসে তামিম কল দিবে প্রহর গুনেছি। নিজের স্টাডি ফেলে তখন আমার তামিমকে ঘিরেই সব চিন্তা। বাইরের কান্ট্রি!বয়স কম। ফ্রেন্ডরা এতো এতো আজেবাজে কথা বলে যে আমি ভয়ে আড়ষ্ঠ হয়ে থাকি সব সময়। তামিমের সাথে যতক্ষন কথা হয় তামিম তামিমকে দিয়ে একের পর এক প্রমিজ করাই। উপদেশ তো আছেই। তামিম মোটেই রাগে না। বিরক্ত ও হয়না। শুধু হাসে। তাকে নিয়ে যে আমি এতো টেনশন করি এটা ভেবেই শান্তি পায়। এদিকে আমাকে নিয়েও তামিমের চিন্তার শেষ নেই। নামে মাত্র তামিমের গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সব জায়গায় পরিচিত আমি যখন একটার পর একটা বছর কেটে যায় তখন নানান সুপ্রস্তাব কুপ্রস্তাব আসতে থাকে আমার দিকে। আমি সেদিকে কান বাড়াই না। নিজের প্যাশন টুকটাক মডেলিং নিয়ে আর স্টাডি নিয়ে বিজি থাকি। আমার প্যারেন্টস ছিলেন স্বাধীনমনা। তাঁদের ধারণা আমি নিজেরটা নিজে বুঝতে শিখেছি। বুঝে শুনে পা ফেলবো। হলোও তাই। তামিমের মতো একজনকে চুজ করলাম। বাবা মা নিশ্চিত থাকলো। কিন্তু তামিমের ব্যস্ততায় আর আমার ব্যস্ততায় সম্পর্কটা কেমন যেনো পানসে হয়ে উঠলো। কিন্তু আমরা দু’জনেই দু’জনকে ভেবেই দিন কাটাই। শুধু সময় দেওয়া হয়না। চলতে চলতে বছর তিনেক যেতেই বাবা মা এই ফিকে হওয়া সম্পর্কটাকে আর আমলে নিলেন না। আমার ভুল ভেবে নিলেন। সাথে বিয়ে দিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত ও নিলেন। এতো তাড়াতাড়ি করছিলেন যে আমার মনে ভয় ঢুকে যায়। মূলত উনারা চাচ্ছিলেন আমি যেনো মডেলিং থেকে দূরে সরে আসি। উনারা মিডিয়া জগত কে একদমি নোংরা ভাবে নেয়। আমাকে সরিয়ে নেওয়াই লক্ষ্য। ততোদিনে তানভীরের সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তামিম তখন ক্যাম্পেইনে। আমাদের যোগাযোগ পসিবল না। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি সপ্ন আকাশচুম্বী। কিন্তু সমাজের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে এটাও সম্ভব হচ্ছিলো না যে এমপির বাড়িতে আমার জন্য তাদের বড় ছেলের নামে বিবাহের সম্বন্ধ নিয়ে যাওয়া। তামিম এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি। এসময় তো মেনে নেওয়া অসম্ভব।বাবা মা প্রথমে খুশি হয়েছিলেন ভেবেছিলেন তাদের কিছু করতে হবেনা। তামিম ই করবে যা করার। আমার সৌন্দর্য দেখে শ্বশুরবাড়ির লোক ঠিক আপন করে নিবে। কিন্তু যখন তামিম ই নেই তখন এই সপ্ন বহুদূর। আমার উপর যাদের নজর ছিলো ঝাঁপিয়ে পড়লো যেনো। বাড়ি ছাড়লাম। মামার বাড়িতে উঠলাম। অসহায় মুহূর্ত।‌ ঢাকায় চলে যেতে চাইলাম। মামা যেতে দিলেন না। পাগল হয়ে গেলাম আমি। তামিমকে ছাড়া আমার পক্ষে কাউকে গ্ৰহণ করা সম্ভব না। বাধ্য হয়েই আত্মসম্মান ভূলে তানভীরের কাছে সবটা খুলে বললাম। সাহায্য চাইলাম। তানভীর আমাকে আশ্বস্ত করার বদলে করলো উপহাস। বললো,
এতো এতো পাংখা তোমার! সবাইকেই বিয়ে করবে? একে একে করতে থাকো।বছর খানেক তো চলবে। শেষ বিয়েটা হলেও আমরা দুই ভাই দাওয়াত খেতে চাই।
আমি তখন কান্না ভূলে ফুসে উঠলাম। আমাকে সেখানেই‌ আবার আহত করলো। আমাকে বাজেট দেখালো। বিয়ের গিফটের জন্য। আমি আশাহত। একদম চুপ হয়ে গেলাম। শেষ ভরসাও শেষ। অনুভুতি শূন্য। বিয়ে ঠিক হলো। খাওয়া দাওয়া বাদ দিলাম। দুদিন বাদে আমার বিয়ে। সেদিন আমি জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর আমার সামনে লাগেজ দেওয়া হলো। মেরুন রংয়ের লাগেজ। আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। অনেক সময় পর মামাতো ভাবী এসে বললো, পার্লারের লোক চলে এসেছে। ছেলেমেয়েরা সব বাইরে যাও। এখন কনে সাজানো হবে। আমি মনে মনে হাসলাম। আমাকে শুলে চড়াতে সময় ও বুঝি এগিয়ে নিয়ে এলো। লাগেজ খুলে যখন একেরপর এক প্রোডাক্ট বের করছে আর বলছে, সব বিদেশি জিনিস। দেখিস একটাও যেনো এদিক সেদিক হয়না। তখন আমার টনক নড়লো। যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তার তো বিদেশী জিনিস আনার কথা নয়। নিজেই হাত লাগালাম। ম্যাক্সিমাম প্রোডাক্টের গায়ে সুইচ ট্যাগ। তখন আমার কলিজায় পানি এলো।আমি এক ছুটে বাইরে গেলাম। দেখলাম উঠোনে তানভীর দাঁড়িয়ে বড় একটা গাড়ির পাশে। তার পাশে আমার বাবা মামা। গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। হুট করে তানভীর আমার দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে আমার মামাতো ভাইকে ডেকে বললো, হুল্লোপার্টিকে তাড়াতাড়ি রেডি যেতে বলো। বসা থেকে উঠে গেলে বরের জুতো আর চুরি করতে পারবে নাকো। আমাকে হাতের আড়াল করে চোপ টিপ্পনি দিলো। আমার বুঝা গেলাম। যত তাড়াতাড়ি রেডি হবো ততো তাড়াতাড়ি তামিমের দেখা পাবো । ছুটলাম সাজগোজ করতে। বিয়ের শাড়ি গহনা পরে পুরো বউ! আন্দাজ করলাম এসব কিছু তানভীর দিয়েছে। এর বাজেট ই আমাকে বলছিলো। গহনা গুলো দিয়েছিলো তামিম। তামিমকে পাওয়ার জন্য এতোটাই উত্তেজিত ছিলাম যে ঘোরের মাঝেই বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ী চলে এলাম। সেখানে এসে জানতে পারলাম দুইভাই দেশে এসে বাড়িতে না গিয়ে সোজা আমাকে বিয়ে করে বাড়ি ফিরেছে বউ নিয়ে। তামিম আমার পাশে দাড়িয়ে রইলো। আমি ভয় পেয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিশাল ঝামেলা বাঁধলো। পাপা মম তো রেগে আগুন। আমাকে দেখলোনা পর্যন্ত। তানভীরকে তো যা নয় তাই বলে বকাবকি করছে। তামিম গেলে তাকে তো ছাড়লোই না। তামিম যখন ওর পাপা মমকে বুঝাতে ব্যস্ত তখন তানভীর এক আশ্চর্য কাজ করে বসলো। আমার হাত ধরে সোজা ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে। বরণ ছাড়াই আমার পদার্পণ হলো শ্বশুরবাড়িতে। একদম তামিমের রুমে গিয়ে নিয়ে হাত ছাড়লো। মুচকি হেসে বেরিয়েও গেলো। আমি তখন একা। বেশ কিছুদিন পর যখন তামিম এলো তখন পুরোপুরি ভাবে তামিম আমার। আমার স্বামী । দিক বেদিক না তাকিয়ে আমি তামিমকে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। এতো গুলো বছর আলাদা কাটানোর পর যেনো প্রাণ ফিরে পেলাম। কেউ কাউকে ছাড়লাম না। দরজায় নক পড়লো। তবুও আমি তামিমকে ছাড়লাম না। তামিম আমাকে নিয়েই দরজা খুললো। তানভীর দাঁড়িয়ে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, ‘ সরি ভাবী। এতো ঝামেলা পোহাতে হলো যে এদিকটা ভুলেই বসেছিলাম। এতো রাতে আর পসিবল হলো না । ‘
আমি তানভীরের হাত থেকে ফুলটা নিলাম। মাথাটা তানভীরের বুকে রেখেই তানভীরের যাওয়ার দিকে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাকিয়ে রইলাম।
পরদিন আমাকে সাজিয়ে গুছিয়ে আত্বীয় স্বজন সবার সামনে নেওয়া হলো। সদ্য বিবাহিত আমি দামী শাড়ি গহনায় রুপ যেনো ঠিকরে পড়ছিলো। চারদিক থেকে প্রশংশা কুড়ালাম। শ্বশুর তো মাশাআল্লাহ বলেই বসলেন। তারপর থেকে যে কোনো প্রয়োজনে তানভীর আমার পাশে থাকে ছোট ভাই হিসেবে। কিছুদিনের মধ্যেই দুই ভাই চলে যায়। ছয় মাস অন্তর অন্তর দুবার এলো তামিম। তামিমের অনুপস্থিতিতে আমার মডেলিং চললো দারুন ভাবে। তামিম ফিরে আসার পর তো হ্যাপিই ছিলাম। কিন্তু বাঁধ সাধলো কিছু কিছু ব্যপারে। আমার ড্রেস আপ, গ্ল্যামার, রাত করে ফেরা,সবার সাথেই হ্যাংআউট তামিমের ভালো লাগছিলো না। ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে টুকটাক টুকটাক করে বিস্তর ফাঁক সৃষ্টি হয়। আমার শ্বাশুড়ি এতো মনমালিন্য লক্ষ্য করে আমাকে বুদ্ধি দেয় বাচ্চা নেবার জন্য। না বললে প্রেশার দিতে থাকে। আমি তখন আমার সপ্নের দাড়গোড়ায়। সবাই এক নামে চিনে। একেরপর এক অফার আসতে থাকে। তানভীর ও তখন দেশে চলে আসে। তানভীরের কাছে গিয়ে ওর ভাইকে বুঝাতে বললে তখন তানভীর ও আমাকে এ পথ থেকে সরে আসতে বলে। ওদের টাকার অভাব নেই। আমি ভালোই থাকবো। কিন্তু আমার আমি যে একটা পরিচয় সেটা শেষ হয়ে যাবে। ড. তামিম খানের বউ আমার পরিচয় হবে ‌। আমার যে একটা নাম আছে সেই নামটাই ঢাকা পড়ে যাবে। আমি মনস্থির করতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকজন প্রডিউসার আমার সান্নিধ্য লাভের জন্য উঠেপড়ে লাগে। আমাকে আকাশ ছোঁয়া সপ্ন দেখায়। আমি আমার ক্যারিয়ারকেই চুজ করি। ডিভোর্স চাই তামিমের কাছে। তামিমের ভালোবাসা রঙিন আলোয় আমার চোখে পড়েনি। আমাকে তামিম তখনো ধৈর্য্য ধরে বুঝিয়ে গেছে।আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়নি। মানিয়ে গেছে। আর এদিকে আমার সপ্নের পথ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি তামিমকে জানালাম আমার একজনের সাথে ভাব হয়েছে। আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি। আর তাকেই বিয়ে করতে চাই ডিভোর্স দিয়ে। তামিম তখন হন্যে হয়ে সেই লোককে খুঁজে বেরিয়েছিলো শেষ করবে বলে। এদিকে একজন ডিরেক্টর যিনি তখন আমার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে এসেছেন তাকে সন্দেহ করা শুরু করে। তামিমদের হাতে অনেক পাওয়ার। এক দুই টা মানুষ কে গুম করে দেওয়া বা হাতের খেল। আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি। সন্দেহ কাতারে পাগল তামিম তখন আরেকজন ডিরেক্টর কেও টার্গেট করে।তাঁদের বাঁচাতে আর তামিমের হাত থেকে মুক্তি পেতে আমার মনে যা আসার নয় সেই কুচক্র ই সৃষ্টি হয়। ভাইয়ের মতো দেবরকে টুপ হিসেবে ব্যবহার করি। কারণ আমি জানি তানভীর কে কিছু করা হবেনা হয়তো দুই ভাইয়ের সম্পর্ক নষ্ট হবে একদিন ঠিকই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি মুক্তি পাবো। গভীর রাতে সুযোগ পেয়েই ঢুকে পড়ি তানভীরের রুমে। তানভীরের অভ্যাস উদোম গায়ে ঘুমনো। আমি গিয়ে শুয়ে পড়ি তানভীরের পাশে। চোখ বুজে ঘুমোনোর বাহানা দিয়ে থাকি। তামিম আমাকে না পেয়ে হন্যে হয়ে খুজে। সারা বাড়ি না পেয়ে যখন তানভীরের রুমে নক করে তখন তানভীর ঘুমের মাঝেই দরজা খুলে দেয়। আর তামিম দেখতে পায় আমি তানভীরের বিছানায় শুয়ে। সেদিন তানভীর সহ বাড়ির প্রত্যেকেই অবিশ্বাস চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। কিন্তু আমি দমে যায়নি। জোর গলায় বলেছিলাম তানভীরের সাথে আমার সব ধরনের সম্পর্ক আছে আর তামিমের কাছে ডিভোর্স চাওয়ার কারণ তানভীরকেই আমি বিয়ে করবো। তামিম এতো বড় আঘাত নিতে পারেনি। পরদিন ই ডিভোর্স ফাইল করেছে কোর্টে। দেনাপাওনা সব মিটিয়ে দিয়ে আমাকে ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাঁদের ভাইদের মধ্যে এক বিন্দুও মনমালিন্য হয়নি। তারা যেনো জানতো তারা আত্নিক মনষঃত্ত্বের দিক দিয়ে কতটা পবিত্র সমৃদ্ধ। মাঝখান থেকে ছিন্ন হলো আমার দিন। এতোটাই রঙিন দুনিয়াতে সপে ছিলাম যে কি হারিয়ে ফেললাম আমি বুঝতেও পারলাম না। নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল বসালাম। আমাকে কেনা হলো বেশ চওড়া দামে। আমি ভেবে নিলাম আমার মূল্য ঠিক এতোই। জাস্ট একজন ডিরেক্টরের সাথেই কাজ করে কুল পেলাম না। একের পর এক ড্রামাতে সাইন করলাম। হয়ে উঠলাম জনপ্রিয়। দেশ বিদেশে আমার ফ্যান। আমার খাতির যত্ন ছিলো বরাবরই স্পেশাল। আমাকে কাস্ট করলেই নাকি প্রডিউসার ইনভেস্ট করতে রাজি হয়। আমার মতো সুন্দরীদের যখন এফডিসির গেইটে পড়ে থাকতে দেখতাম অহংকার জেগে উঠতো মনে। এক থেকে অনেকজনের লোভনীয় অফার আসতে লাগলো। লোভী আমি এক প্রোডাকশনের আন্ডারে কতোই কাজ করবো? সাড়া দিতে চাইলাম তাদের ডাকে। ডিরেক্টর প্রডিউসার আমাকে ছাড়তে নারাজ। টাকার উপর টাকা ছুড়লো আমার উপরে। কিন্তু আমার ঐযে আকাশ ছোঁয়ার সপ্ন! প্রত্যেকটা প্রোডাকশনে কাজ করবো নিজের কর্তৃত্ব ফলাবো। ধরে রাখতে পারলোনা আমাকে। ঠিক ঐ মুহুর্তে ই আমি আমার স্থানটা আবিষ্কার করলাম। কাজের অফার তো ঠিকই আসে তার কমিশন হিসেবে দিতে হয় ডিরেক্টরকে কিছু ঘন্টা বা রাত। একের পর এক ইগনোর করতে থাকলাম। বিলাসিতায় মোডানো জীবন আমার কাজ বিহীন কয়েক মাসেই আর্থিক অভাবে পড়লাম। লাক্সারি ফ্ল্যাট ছেড়ে নরমাল ফ্ল্যাটে উঠলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি ফিল করলাম আমার জীবনে আমি একাই। আমার পাশে কেউ নেই। আমার পরিবার আমাকে ত্যাগ করেছে। আমার হাজব্যান্ড হাজব্যান্ড এর ফ্যামিলি আমাকে ত্যাগ করেছে আর অহংকারের কারণে আমি ত্যাগ করেছি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ফ্রেন্ডসদের । আরেকজন কেও আমি ত্যাগ করেছি। আমার ডিরেক্টর। যিনি শুধু আমার কাজটাই বরাবর চেয়ে এসেছেন। অন্য কিছু নয়। তার সাথে কত রাত কত জায়গায় আমাকে কাটাতে হয়েছে কিন্তু কখনো আমি তার থেকে অসম্মান হয়নি। সব হারা আমি একজন ডিভোর্সী। আমি ভেবেছিলাম আমার ক্যারিয়ার ই সব। তামিম কে আমি ভুলে গেছি। কিন্তু তাকে আমি ভুলতে পারিনি। হাজারটা প্রপোজাল এসেছে সামনে। কারো সাথে কথা বলা বা তাকে সেই নজরে দেখার রুচিটাও অভাব বোধ করেছি। আমি কারো ধারে কাছে যেতে পারিনি। নিজেকে বুঝিয়েছি আমি মুক্ত। আমি যাকে ইচ্ছে তাকে আমার জীবনে ইনভলভ করতে পারি। কিন্তু বার বার হেরে গেছি। আমার বিবেক আমার ব্রেইন আমাকে বার বার রিমেম্বার করিয়েছে আমি একজনের স্ত্রী। আমি তাকেই ভালোবাসি। অথচ আমি তখন ডিভোর্সী। ফিরে এলাম আমার সেই ডিরেক্টরের কাছে। কিন্তু আমার আর জায়গা হলোনা। কম কথা শুনিয়ে ইগনোর করে আমাকে সরে যেতে হয়নি! সেসবের জন্য ক্ষমাও চাইলাম। তিনি জানালেন ক্ষমার যোগ্য আমি নই। ছোটখাটো কাজ ধরলাম পেটের দায়ে। কিন্তু বড় কাজ হাতে পেলাম না। নিজেকে সেফ মনে হচ্ছিলো না। ভীষন ভাবে ভেঙে পড়লাম। আমাকে সাপোর্ট করার মতো কেউ নেই। প্রত্যেকটা দিন কাটে আমার হতাশায়। আর রাত কাটে তামিমের জন্য চোখে জল নিয়ে। তখন আমি তামিমের থেকে অনেক দূরে। তার সামনে আসার সাহস নেই। অধিকার নেই। আমার কর্মফল আমাকে পোড়ায় প্রত্যেকটা দিন। ভালোবাসার অভাবে আমি জড়জীর্ণ। একদিন দুই প্রডিউসারের একটা কাজে আমার ডাক পড়ে। গিয়ে দেখি সেই ডিরেক্টর। আমাকে দেখে উপহাস করতে ভুললো না যেনো। সুটিংটা ছিলো ইভটিজিং নিয়ে। কথায় কথায় শুনিয়ে দিলো মেয়েরা দুধের ধোয়া না। টাকা পেলে শরীর বিকিয়ে দিতেও ভাবে না। কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে যেনো আমাকেই বললো। আমি শিউরে উঠলাম। ছিহ এতোটা নিচে নেমে গেছি আমি? এতোটা খারাপ চিন্তা আমাকে নিয়ে? এতো গুলো বছর কাজ করলাম তিনি আমাকে জানেননি? চিনেননি? আমি আবার ভেঙে পড়লাম। মুখোমুখি হতে চাইলাম। সব ই তো গেছে। সম্মানটুকু ও হারাবো? এটা নাহয় আমার ই থাক। গিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সেই ডিরেক্টরের পাশের চেয়ারেই বসে তানভীর আর তামিম।‌ লাঞ্চে জয়েন হয়েছে একসাথে। লাঞ্চ টাইমে কাউকে এলাও করেনা। কিন্তু যেহেতু আমি পরিচিত আমাকে আটকানো হয়নি। সুন্দর ভাবে পৌঁছে গেছি ডাইনিং স্পেসে। আমাকে চোখ তুলে প্রত্যেকেই দেখলো। বিনিময়ে ছুড়লো তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি। সামনাসামনি তামিমকে দেখে আমি তখন ফ্লোরে বসে পড়েছি। চোখ থেকে ছল ছল করে জল গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু তামিম আমাকে একবারের জায়গায় দুবার মুখ উঁচিয়ে দেখার ইচ্ছা পোষন করলো না। জীবনের চরম সত্যের মুখোমুখি হলাম সেদিন। যে ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার করে আমি আমার পরিবার ছেড়েছি সেই পরিবার ই আমার ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করেছে। এইযে এতো এতো স্পেশাল আদর যত্ন সব সেই পরিবারের জন্যই। আমার ডিরেক্টর আর কেউ নন তানভীরের বেস্ট ফ্রেন্ড সৈয়দ হাসান। আর আমার প্রত্যেক ড্রামার প্রডিউসার আর কেউ নন আমার এক্স হাজবেন্ড তামিম খান। এইযে আমার এতোবছরকার সেফটি দানকারী আমার এক্স দেবর তানভীর খান। আমার এতো বিলাসীতা জীবন তাঁদের টাকায়। আমার কাজের পারিশ্রমিক এই টাকার অর্ধেক ও নয়। এইযে আমি তাদের দেওয়া সেফটি সার্কেলের বাইরে সেজন্য আমি চরিত্রহীন। অপবিত্র। ‘

চলবে __

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৩৮)
‘ আমি তামিমকে এবং তার পরিবার কে অনেক কষ্ট দিয়েছি। সোহানা মমকে তো আরো কষ্ট দিয়েছি। উনি মেয়ের মতো করে আগলে ছিলেন আমাকে। বউ নয় সেই বাড়িতে ছিলাম রাণীর মতো। নিজ দোষে আমি আমার সর্বস্ব শেষ করেছি। নিজের সুখ শান্তি নষ্ট করেছি। আজ আমি কাজ থেকে সরে আসতে চাইছি। কাজ ছাড়া আমার দিন চলে না। কেউ দু একটা টাকা এসে আমাকে দেয়না। বাঁচার তাগিদে আমি এই অভিশপ্ত পেশার সাথে লেগে আছি। যদি তামিম আমার হাতটা আবার ধরে। আমার দায়িত্ব নেয়। আমাকে আমার সংসার ফিরিয়ে দেয়। আমি শুধু ওকে ঘিরেই থাকবো। আর কোনো দিকে তাকাবো না। কিন্তু সেটা আর হবার নয়। আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। আমি আর করুনার পাত্রী নয়। আমি এখন উপহাসের পাত্রী। তামিম আমাকে সবার সামনে পরিচয় দেয় আমি তার স্ত্রী। এটা নিতান্তই আমাকে উপহাস করা। সে দেখতে চায় এই কথা শুনার পর আমার রিয়েকশন। আমার ছটফটানো। আমার চোখে আনন্দ অশ্রু। কিন্তু আমাকে প্রকাশ্যে আসতে দেয়না। আমার চেহারা দেখায় না কাউকে। আমাকে আবৃত হয়ে তার সাথে দেখা করতে হয়। সে লজ্জাবোধ করে আমাকে নিয়ে। আমি সবার পরিচিত। একজন ডিভোর্সী হিরোইন। আমাকে নিয়ে কত জলখেলা! সেই আমি স্বনামধন্য ডাক্তার তামিম খানের ওয়াইফ এটা নিশ্চয়ই খান বাড়ির জন্য লজ্জাজনক।‌ খান বাড়ির বউরা তাঁদের স্বামীর নিজস্ব সম্পদ। হাজার হাজার লোকের মাথা খারাপ করা কোনো মিডিয়ার হিরোইন নয়। আমার আকুতি দেখে তানভীর মুগ্ধ হয়। হাসে। সে চায় আমি আরো শেষ হয়ে যাই। তার নামে যে অপবাদ ছড়িয়েছি এটা আমার প্রাপ্য। সোহানা মম আমার মুখ দেখতে চায়না। এমপি সাহেব আমাকে চেনেনা। আত্বীয় স্বজন খালা মামা শ্বশুড় শ্বাশুড়ী আমাকে দেখে না দেখার ভান করে। নিজের বাবা মা আমাকে ত্যাগ করেছে। আমি এসবের ই প্রাপ্য। আমি নিঃস্ব লাবিবা। আমি নিঃস্ব। ‘
মুখে হাত চেপে ঢুকরে কেঁদে উঠে ফ্লোরা। ফ্লোরার কান্না দেখে লাবিবার নরম মনে ভীষন খারাপ লাগে। কাঁধে হাত রেখে শান্তনা দেয়, ‘ তুমি ভেঙে পড়োনা আপু। মানছি তুমি ভুল করেছিলে কিন্তু তুমি তো তোমার ভুলটা বোঝতে পেরেছো। আল্লাহর কাছে চাও। তিনি সব ঠিক করে দিবেন। ‘
ফ্লোরা মুখ থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে। চোখ মুছে লাবিবাকে বলে,
‘ শোনো লাবিবা একটা বিবাহিত মেয়ের সব থেকে বড় সম্পদ তার স্বামী। সব ভালোবাসা একমাত্র স্বামীর জন্য ই বরাদ্দ। আশ্রয় হলো স্বামীর ঘর। সপ্ন হলো স্বামীর সংসার। কর্ম হলো সন্তান লালন পালন। পরিচয় হলো সেই পরিবার এবং বংশ। আলাদা পরিচয় হলো সেই মেয়ের সাফল্য। সবকিছু মিলেই জীবন। এর মধ্যে অপশন হলো সাফল্য। এটা তোমার হলেও চলবে না হলেও চলবে। কিন্তু বাকি একটা ছাড়া তোমার জীবন অপরিপূর্ণ। তুমি যত বড় হবে ততো তোমার অভিজ্ঞতা বাড়বে। তানভীর তোমাকে ভালোবাসুক বা না বাসুক। তুমি তাকে ছাড়বে না। আর যাই হোক আমার মতো ভূল করোনা।স্বামীর মর্ম বুঝবে। স্বামী যদি তোমার হাতের মুঠোয় থাকে তাহলে কোনো ঝড় ই তোমাকে টলাতে পারবেনা। তুমি যে পরিবারে থাকবে সেই পরিবার একদিন আমার ছিলো। সেই পরিবারের পুরুষগণ বংশের গৌরব নিয়ে চলে। ব্যর্থ হতে পছন্দ করেনা। আমি ভেবেছিলাম আমি হয়তো একজনকে ব্যর্থ করেছি কিন্তু না আমাকেই তারা সমুদ্রে‌ ফেলে দিয়েছে। তাঁদের সাথে লাগতে যাবেনা। বরং যদি তাদের মায়ার তলে থাকতে পারো তারা তোমাকে বুকে তুলে রাখবে। তোমার জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করবেনা। আমি হয়তো আর এ শহরে থাকবোনা । জীবিকার জন্য ছুটতে হবে। তোমাকে আর সাহায্য ও করতে পারবোনা। শুধু মনে রাখবে স্বামী ব্যতিত একটা মেয়ে কিছুই না। তুমি যত বড় সেলিব্রেটি হও না কেনো তোমার সঙ্গিনীই থাকবে কন্ঠশীর্ষে। বুঝলে? ‘
‘ হু। ‘
সাবিনার ডাক পড়ে। বাইরে অনেক মানুষের কথা শোনা যাচ্ছে। ফ্লোরা বলে,
‘ তুমি শুয়ে থাকো। আমি সবার সাথে আছি। ‘
‘ আর শোনো। ‘
‘ হু?’
‘ একটু আগে যা বললে না? আমি তোমার জা? ভুল বলেছো। আমি তোমার জা ছিলাম। আর নেই। আর নয় হতে পারবো। তোমার ভাসুর আমাকে কখনো ক্ষমা করবেনা। প্লিজ আজ যা বলেছো বলেছোই। আর কোনদিন আমাকে এই পরিচয়ে পরিচয় দিবেনা। ‘
‘ আপু ‘
‘ তোমার জন্য ছোট্ট একটা গিফট আছে আপুর পক্ষ থেকে। নতুন জীবন শুরু করলে তো। গিফট না দিয়ে পারি?’
‘ কি গিফট?’
ফ্লোরা লাবিবার হাতে একটা প্যাকেট তুলে দেয়। এই প্যাকেটটা প্রথমেই লাবিবার চোখে পড়েছে। ফ্লোরা সঙ্গে করে এনেছে। ভেবেছিলো ফ্লোরার ই জিনিস। কিন্তু এখন জানলো এটা তার গিফট। ফ্লোরা মুচকি হেসে দরজা ভেজিয়ে দিয়ে চলে যায়। লাবিবা প্যাকেটের পিন গুলো খুলে। টকটকে অরেঞ্জ কালার সিল্ক জামদানি হাতে উঠে আসে। গোল্ডেন সুতোর কাজ। এত্তো সুন্দর! লাবিবার খুব পছন্দ হয়। শুধু শাড়িই দিয়েছে। আর কিছু দেইনি? লাবিবা প্যাকেটে হাত দিলো সুন্দর একজোড়া ঝুমকো বেরিয়ে এলো। অরেঞ্জ স্টোন আর পার্ল বসানো। লাবিবা শাড়িটির দিকে তাকিয়ে রইলো । অরেঞ্জ আইসক্রিমের মতো লাগছে। আইসক্রিম হলে এতোক্ষনে মুখ লাগাতো। মূহুর্তে ই লাবিবার আইসক্রিম ক্ষুধা লাগলো। অসুস্থতা কি সে ভুলেই বসলো। বিছানা ছেড়ে গুটি গুটি পায়ে হাজির হলো ডীপ ফ্রিজের সামনে। কিন্তু অরেঞ্জ কালার আইসক্রিম পেলোনা। পেলো লিচু ফ্লেভার আইসক্রিম। কিন্তু তার অরেঞ্জ কালার আইসক্রিম খেতে হবে। ভ্যানিলা আইসক্রিম একটা বাটিতে তুলে সেটা গলা অব্দি ওয়েট করলো। তারপর গলা আইসক্রিমে অরেঞ্জ ফুড কালার মেশালো। লিচু আইক্রিমে এপাশ ওপাশ ঢুবিয়ে যেইনা মুখে দিয়েছে ওমনি পেছন থেকে ছোট কাকী চিৎকার করে উঠে। হাত ফসকে আইসক্রিম ঢুকে যায় টেবিলের নিচে।
‘ কি খাচ্ছিস তুই? এই জ্বর শরীরে? আইসক্রিম! ‘
লাবিবা মুখটা মুছতেও পারলোনা কাকী চিৎকার করে বেরিয়ে গেলো ‘ ও ভাবী দেখে যাও তোমার মেয়ের কারবার। জ্বর মুখে আইসক্রিম খাচ্ছে । এখন ঠান্ডাটাও লাগাবে। ‘
‘ দেখো মেয়ের কান্ড। লাব্বু! আসছি আমি। তুই কি মানুষ হবিনা?’
ড্রয়িংরুমের সবাই খিলখিল করে হেসে উঠে। সাবিনা তেড়ে এসে দেখে লাবিবা নেই। এক দৌড়ে তখনি রুমে চলে আসছে। মাথাটা ভারী ভারী লাগছে। শরীরটাও কেমন জেনো লাগছে। মাথার চুল মুঠো করে ধরে বসেছে। সাবিনা এসে বলে, ‘ আবার জ্বর উঠছে?’
‘ না। গা কেমন করছে। ‘
‘ কাল ও তো গোছল করিসনি। আয় গা মুছে দেই। ভালো লাগবে। ‘
‘ আমি করে নিচ্ছি। ‘
‘ পারবিনা। ‘
‘ পারবো আম্মু। ‘
ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে ভেজা টাওয়েল দিয়ে ভালোভাবে গা মুছে নেয়। মাথায় পানি ঢেলে চুলগুলোও ভেজায়। বাইরে এসে চোখে পড়ে সাবিনার হাতে শাড়িটা।
‘ সুন্দর তো। কে দিলো?’
‘ ফ্লোরাপু। ‘
‘ ও। মেয়েটা ভালোই। বেশ মিশুক। কেনো যে ওরকম করলো! সেসব বাদ। আয় চুল মুছে দেই ভালোভাবে। ‘
‘ আস্তে। ব্যাথা দিওনা।’
সাবিনা চুল মুছে দিয়ে চলে যায়। লাবিবা শাড়িটার উপর হাত রেখে চোখ বুজে। ফ্লোরার কথাগুলো ভাবতে থাকে। কি করবে ও? সেতো স্বামীর মর্ম বুঝে। তবুও কেনো এতো দূরত্ব? দূরত্ব কোথায়? দূরে থাকলেই বুঝি দূরত্ব বাড়ে? কিন্তু তানভীর তো আছে লাবিবার হৃদয়ে। খুব কাছে। পুরো শরীর জুড়ে তার ছোঁয়া মিশে আছে। ফ্লোরা বলছিলো যদি তাদের মায়ার তলে থাকতে পারো তারা তোমাকে বুকে তুলে রাখবে। তোমার জন্য জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করবেনা। সেদিন রাতে তানভীরের কথাগুলো লাবিবা ভাবতে থাকে। কি পাগলামিটাই না করলো। নিজেকেই নাকি দিয়ে দিলো। লজ্জায় লাবিবা দু হাতে মুখ ঢাকলো। সেদিন তো এতো লজ্জা লাগেনি। একটুও লাগনি। এখন কেনো এতো লজ্জা লাগছে? সেদিন এতোটা জেদ দেখিয়েছিলো? নিজের কর্মে নিজেই লাবিবা অবাক হলো।

শেষ বিকেলে ফ্লোরা চলে যাবে বলে বিদায় নিতে লাবিবার কাছে এলো। সোফা থেকে ব্যাগ উঠিয়ে মুচকি হাসলো। সেল ফোনটা লাবিবার চোখের সামনে ধরলো।
লাবিবা জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি?’
‘ পড়ো। ‘
লাবিবা পড়লো। তানভীরের ছোট্ট মেসেজ ‘ কামিং। ‘
‘ তানভীর আসছে লাব্বু। তুমি তো না বলে খুব ভুল করে বসেছো। এখন তানভীর আসছে। তাকে সামলিও। ‘
‘ উনি তো আমার উপর রাগ করে আছে আপু। ‘
‘ তুমি অসুস্থ শুনেই রাগ চলে গেছে। তাড়াহুড়ো করে আসছে বলে। আমার কথা মিলিয়ে নিয়ো। ‘
ফ্লোরার কথায় লাবিবা আস্বস্থ হলোনা। তার টেনশন বেড়ে গেলো। এবার যদি অসুস্থ জেনে রাগ দেখায়? এতো রাগের পাল্লা লাবিবা কিভাবে সামাল দিবে? ফ্লোরা যখন চলে যাবে তখন হুট করেই লাবিবা ডেকে বসে।
‘ আপু? আম্মু কোথায়?’
‘ আন্টি তো কাকী দের সাথে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় গিয়ে ওয়েট করছে। ‘
‘ আপু। আমি না শাড়ী ভালোভাবে পড়তে পারি না। তুমি আমাকে এই শাড়িটা পড়িয়ে দিবে? ‘
লাবিবার চোখে মুখে হাসি। ফ্লোরাও বুঝে গিয়ে চোখে হাসে ‌। আদর করে ডাকে, ‘ আয় সাজিয়ে দেই তোকে।’
লাবিবা লক্ষী মেয়ের মতো এসে দাঁড়ায়। বিপত্তি বাঁধে ব্লাউজ নিয়ে। লাবিবার দুটো ব্লাউজ ছাড়া আর কোনো ব্লাউজ নেই। এখন কি হবে? লাবিবা চিন্তায় পড়ে যায়। ফ্লোরা বলে, ‘ আন্টির ও নেই? ইসস আমার ব্লাউজ ও আনা উচিত ছিলো তোমার জন্যে। ‘
‘ একটা উপায় আছে। ‘
‘ কি?’
‘ ছোট ব্লাউজ। ‘
‘ কেমন?’
‘ ছোট স্লীভলেস গেঞ্জি। ঐটাও না। মানে এই গেঞ্জি আমি জীম করার সময় পরি। ‘
‘ দেখাও দেখি। ‘
ফ্লোরা দেখে একদম স্লীভলেস ব্লাউজের মতো। মিটি মিটি হাসে। লাবিবাকে পড়তে বলে। লাবিবা যখন ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে আসে তখন ফ্লোরা আরো হাসে। লাবিবা লজ্জা পায়। হাত দিয়ে পেটে দাগ গুলো আড়াল করে। সহজ হবার জন্য জিজ্ঞেস করে,
‘ এসব দাগ কোন ক্রীমে যাবে আপু? আমাকে একটা ভালো ক্রীম সাজেস্ট করিও তো। ‘
‘ প্রয়োজন নেই। ‘
‘ না না আছে। তুমি দিও আমাকে। ‘
ফ্লোরা উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। হাসতে হাসতেই বলে,
‘ স্পট রিমুভার ক্রিম লাগিয়েই আর কি করবে? এমনি এমনিই যাক। এখন থেকে তানভীর মহাশয় তো প্রায়ই শরীরে ভালোবাসার দাগ লাগিয়ে দিবে। ‘
ফ্লোরার হাসি যেনো কমে না। লাবিবা সহজ হতে গিয়ে পড়ে আরো লজ্জায়। কান দুটো গরম হয়ে উঠে। ফ্লোরা সাজিয়ে দিয়ে চলে যাবার পর লাবিবা দৌড়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় এসে। পলাশ ফুলের কথা মনে পড়ে। নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়। অপেক্ষায় অধীর হয়। আজ তার খান সাহেব আসবে।

চলবে__