#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো
(৭৬)
সন্ধ্যা সাতটার পর আকাশ এসে পৌঁছালো কটেজে। উর্মিলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। উর্মিলা ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদছে। নাকিবের হাতে বড় সড় একটা লাগেজ। সিমেন্ট বসানো সরু রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে আসছে। উর্মিলার ফ্যাচফ্যাচানি তার সহ্য হচ্ছে না। বিরক্তি নিয়ে বললো, ‘ এই তুই চুপ করবি ? শালা মেয়ে মানুষ মানেই স্বার্থপর। স্বার্থ ছাড়া এরা কিছুই বুঝে না। ‘ খবর পেয়ে তানভীর লাবিবা কটেজ ছেড়ে বেরিয়ে এলো। উর্মিলা রিসিপসনে চেয়ারে বসে কাঁদছে দেখে লাবিবা গিয়ে তাকে ধরলো। লাবিবাকে দেখেই উর্মিলা আকাশের হাত ঝাড়া দিয়ে লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। লাবিবা উর্মিলাকে থামানোর চেষ্টা করলো। আকাশ বললো, ‘ ভাবী ওকে দেখবেন। ভাইয়ের সাথে কথা আছে। আসছি। ‘
আকাশ তানভীরের দিকে সামনে আগায়। দুজনে কথা বলতে বলতে উত্তর দিকে হাঁটতে থাকে।
লাবিবা উর্মিলাকে বলে, ‘ শান্ত হ। কি হয়েছে কি আমাকে বল। কি এমন হলো যে তোকে তুলে আনতে হলো?’
নাকিব ফোড়ন কাটলো, ‘ এই লাব্বু এইটাকে আমাদের ফ্রেন্ড কে করেছে রে? শালা মাইয়া একটা স্বার্থপর। একটা মাস প্রেম করলি। কতগুলা টাকা খাইছে আকাশ ভাইয়ের থেকে বলদা পাইয়া জানস? প্রত্যেকটা দিন রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে ফাস্ট ফুড খাইতে খাইতে ঢুম হয়ছে। মুটি কথাকার। আর যেই না তার বাপে গ্ৰীণ কার্ড পোলা পাইছে ওমনি এই স্বার্থপর নাচতে নাচতে আংটি বদল করতে বসে পড়ছে। একে তুলে আনবোনাতো কি করবো বল?’
‘ আসলেই উর্মি?’
‘ আরে বুঝছি তোর উড়তে হবো কদিন ফুর্তি করছোস। তো ক্ষতি পূরণ দিবি না? শালা মাইয়া অভিশাপের ডর ভয় নাই? আংটি পরানোর আগে যা এতোদিন খাইছোস সেই টাকা গুলা দিয়ে যদি বলতি আর কোনো দাবী দাওয়া নাই,সরি তাহলেই তো সমাধান হয়ে যেতো। দেনাপাওনা শোধ। অভিশাপ দিলেও গায়ে লাগতো না। আমার কথাটাতো মানলি না। ফ্রিতে কারো উপকার করতে নাই। ‘
‘ ঐ তুই চুপ করবি? কুত্তা তুই খবর পাস করছিস তাইনা?’
উর্মিলা বেজায় চটেছে নাকিবের উপর। লাবিবা মুখে আঙুল চেপে ধরলো। ‘ চুপ থাক। আমাকে কথা বলতে দে। ‘
উর্মিলার হাতটা হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
‘ দেখ তোর অমত থাকলে তুই না বলতে পারিস। কিন্তু আমার মনে হয়না কেউ তোর কথার দাম দিবে। তোর নিজের ব্যবস্থা নিজেই করতে হবে। আমি বা নাকিব কিছু করতে পারবো বলে মনে হয়না। তোদের স্যার এই ব্যাপারটায় আছে। বের হওয়ার রাস্তাটা ঐ দিকে। যদি সুযোগ পাস বেরিয়ে যাস।চাইলে এখনো বেরিয়ে যেতে পারিস। নাকিব ওকে কিছু টাকা দিয়ে দে। ‘
উর্মিলা চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
‘ দিবেনাতো। আমি জানি দিবেনা। আমার কথা শোনার মতো কেউ নেই। সবাই তোরা ঐ আকাশ বাতাসের পক্ষে। আমাকে বলছিস চলে যেতে আবার ঐ আকাশ বাতাস কে বলবি ধরে নিয়ে আসতে। তোদের আমি চিনিনা ভেবেছিস? বাথরুমে যাবো। ‘
‘ ৪ নাম্বার রুম। চাবি নিয়ে যা। ‘
উর্মিলা চলে গেলে নাকিব ইশারা করে বলে, ‘ দেখছিস তোর বান্ধবীকে? আল্লাহ এদের কি দিয়ে বানাইছে? এতো ড্রামা কিভাবে করতে পারে ? ‘
তানভীর লাবিবাকে ডেকে বললো, ‘ উর্মিলাকে রেডি করিয়ে দাও। একটু বাদে কাজী আসবে। ‘
‘ আজ ই বিয়ে হবে?’
‘ হুম। ‘
‘ একটু সময় দিলে হয়না? উর্মিলা কাঁদছে। ‘
‘ বাসর টা হয়ে যাক। শালীকার কান্না এমনিতেই থেমে যাবে। ‘
‘ কি আজব কথা! বুঝার চেষ্টা তো করুন উর্মিলার মনের অবস্থাটা। ‘
‘তোমারই বান্ধবী তো। তুমি যেমন বাসরের জন্য কাঁদছিলে তোমার বান্ধবীও তেমনটাই কাঁদছে । রাতটা যেতে দাও সকালে সব ঠিক হয়ে যাবে। ‘
তানভীরের যাওয়ার পথে লাবিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।
‘ আমি কবে বাসরের জন্য কাদঁলাম ?’
উর্মিলাকে আকাশী কালার বেনারসী পড়ানো হয়েছে। বেনারসীর কালার দেখেই উর্মিলা আবার ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না শুরু করেছে। খুব সপ্ন ছিলো একদিন লাল টুকটুকে বউ সাজবে। আকাশ বাতাস এই হালকা রং দেখে নিজের উপর ই রাগ হচ্ছে। আকাশ নামের ছেলের সাথে কেনো এতোদিন ডেট করলো? করলো তো করলোই নামটা চেঞ্জ করে দিতো তাহলেই তো হয়ে যেতো। আকাশ আউট লাল ইন। তাহলেই লাল টুকটুকে বউ হবার সপ্ন পূর্ণ হতো। আকাশী বেনারসীর সাথে ডায়মন্ড কাট জুয়েলারি তে উর্মিলাকে ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু উর্মিলার নিজেকে একদমি ভালো লাগছে না। যেখানে সে সারাজীবনের কড়া সাজ এই একদিনেই দিবে বলে ভেবে রেখেছিলো সেখানে এই লাইট মেকাপ শাড়ি অসহ্য লাগছে। উর্মিলাকে সাজানোর পর লাবিবা ফিস ফিস করে বলে,
‘ দূরসম্পর্কের জা, আজ আপনাকে দেখে আমার দূর সম্পর্কের দেবর একদম ফিট খাবে। ‘
‘ চল ঐটাকে মেরে গুম করে দিয়ে আমরা চলে যাই। ‘
‘ কিহ? এসব চিন্তা তোর মাথায় আসে কোথা থেকে?’
‘ আমার তো মাথাই নেই। আমি পাগল। নয়তো কি এই আকাশ বাতাসের চক্করে পড়ি? ‘
‘ আয়নাতে তাকা। ‘
‘ তুই তো জানিস আমার কত শখ ছিলো গাঢ় কড়া সাজে সাজার।
‘ দেখ আগে। বল খারাপ কি? বরং অন্যরকম একটা লুক চলে আসছে। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। ‘
উর্মিলা থম ধরে বসে থাকলো। তার কিছুই ভালো লাগছে না। লাবিবার দিকে ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে থাকলো। বাহির থেকে নাকিব দরজায় নক করলো। লাবিবা গিয়ে খুলে দিলো। উর্মিলাকে দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়লো এমন এক্সপ্রেশন দিলো।
‘ লাব্বু, এটা কে? আমাদের বান্ধুবী কই ? ‘
উর্মিলা কটমট করে তাকালো, দুই আঙুল দিয়ে ইশারা করলো, ‘ তোর চোখ গেলে দেওয়া উচিত। ‘
নাকিব হাসতে হাসতে ফোন বের করলো। ‘ আয় বান্ধুবী তোকে হারানোর শোকে কয়েকটা ফটো নেই। ‘
নাকিবের দুই পাশে দুই রমনী দাঁড়িয়ে। নাকিব ফোনের ক্যমেরায় তাকিয়ে থেকেই বললো, ‘ একটা তো আকাশের পরী হয়ে আছে আরেকটারে লাগতাছে ফ্যাসফ্যাসা সাদা ভুত। যা মুখের মধ্যে রং মেখে আয় ছবি ভালো আসে না। ‘
‘ না আসলে ওমনেই তুল। আজকে আকাশের পরীই মূখ্য। ‘
উর্মিলা বললো ,’ বক্সে দেখ তোর শাড়ির কালার লিপস্টিক আছে। আর কাজল টা আমাকে দে আমি দিয়ে দিচ্ছি। ‘
‘ কি দরকার?’
‘ দে না!’
উর্মিলা লাবিবার চোখে চিকন করে কাজল টেনে দিলো। হট পিংক লিপস্টিক দেবার পর লুকটাই যেনো পাল্টে গেলো। সাদা হিজাবটাতে উর্মিলার জুয়েলারি বক্স থেকে খুজে পিংক স্টোনের ব্রুজ লাগিয়ে দিলো।
‘ এই বার ঠিক আছে। জলদি আয়। ডি এ সেলার আনছি সাথে। বাইরে লাইট ফিট করে নিউ কাপলদের পিক নিবো। ‘
‘ তোর ডি এ সেলার এর লেন্স ভালো না। ‘
‘ আরে বড় ভাইয়ের টা ধার নিয়ে আসছি। পালিয়ে বিয়ে তাতে কি? সুন্দর সুন্দর পিক দেখিয়ে দুই দুলাভাইয়ের থেকে এডভ্যান্টেজ পেতে হবে না? না হলে আমার এতোদূর আসাই বৃথা। ‘
রিসিপসনের সামনে টেবিল চেয়ার পাতা হয়েছে। বর বউকে সেখানে নিয়ে সামনা সামনি বসানো হয়েছে। আকাশের গায়ে সাদা শেরওয়ানি। কিন্তু আজ অন্যরকম লাগছে। সেদিন ট্রায়াল রুমে যেরকম দেখেছিলো সেরকম নয়। বেশ পরিপাটি,চাহনীটা তীক্ষ্ণ।উর্মিলা চোখ নামিয়ে নিলো। উর্মিলার বাহিরটা শান্ত কিন্তু ভেতরে উত্তেজনায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে বিয়ে করতে হবে সে কি ভেবেছিলো কখনো? কেনোই বা বাবার কথা শুনে আজকেই আংটি পরতে রাজি হয়ে গেলো আর কেনইবা এই আকাশ বাতাসকে গলায় ঝুলাতে গেলো? তার শান্তির জীবনে শনি লাগলো। উর্মিলার আবার কান্না শুরু হলো যখন সে নিজের বড় বোন আর বোন জামাইকে তার বিয়েতে দেখতে পেলো। বোনকে দেখা মাত্রই জড়িয়ে ধরে হাউমাউ জুড়ে দিলো। উর্মিলার বোন জামাই বিরক্ত হলো। ‘ আহ! কি শুরু করলে তোমরা? বললাম না ওর সামনে কান্নাকাটি করবে না? ‘
উর্মিলা তার বোনকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপু আব্বু আম্মু আসে নাই? আমার কোনো দোষ নেই জানো?’
‘ আব্বু আমাদের পাঠিয়েছে। পরে আমরা আব্বুকে বোঝাবো। কেঁদে কেঁদে মেকাপ নষ্ট করিস না। ‘
আকাশ উর্মিলার বিয়ে হয়ে গেলো। বিয়েতে উর্মিলার পক্ষে সাক্ষী হলো তার বোন আর দুলাভাই। আর আকাশের পক্ষ থেকে আকাশের বাবা আর তানভীর।
নব দম্পতির জন্য দোয়া শেষ করে খাবার সার্ভ করা হলো। কাজীকে বিদায় করে উপস্থিত গুরুজনরা বেরিয়ে পড়লো বাড়ির উদ্দেশ্যে আকাশ উর্মিলাকে রেখে। তানভীর তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু কেউ থাকেনি। সব ঝামেলা শেষে তানভীর লাবিবাকে খুঁজতে লাগলো। বিয়ের চক্করে বউটার কথাই তার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। লাবিবাকে ফোনে রুমে না পেয়ে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে পেলো রিসোর্টের বাইরে।
‘ SOHANA COTTAGE ‘ কে ব্যাকগ্ৰাউন্ডে রেখে চারজনে একে একে পিক নিচ্ছে। তানভীরের চোখ আটকে গেছে লাবিবার হাসিতে। আরে! তার বউ এই মডেলের হাসি কবে দেওয়া শিখলো? এতো সুন্দর লাগছে হাসিতে! আসলে তার বউটাকেই ভীষন সুন্দর লাগছে। প্রাণবন্ত দেহে হট পিংক লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটের হাসিতে রুপজোছনা উপচে পড়ছে। ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে তানভীর সবার উদ্দেশ্যে বললো,
‘ তো এবার ফটোসেশন শেষ করা হোক। অলরেডি এগারোটা বেজে গেছে। ‘
‘ এখনো তো তেমন পিক ই নেওয়া হলো না। ‘
‘ দিনের আলোতে সুন্দর আসবে। ওকে? ‘
লাবিবাকে বললো, ‘ নিউ কাপল কে বাসর ঘরে দিয়ে আসো। ‘
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে উর্মিলা আকাশ কে নিয়ে ওদের জন্য সাজানো কটেজের দিকে গেলো। নাকিব তানভীরের পাশে এসে ছবিগুলো কেমন আসছে দেখতে লাগলো। তানভীর নাকিবের পিঠে হাত রাখলো। নাকিব তানভীরের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে আবার ক্যামেরায় ঢুব দিলো। তানভীর জোরে শ্বাস নিলো। নাকিবকে নির্দিধায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ তো নাকিব কি সিঙ্গেল? ‘
‘ না স্যার। ‘
‘ মেয়েটা কে?’
‘ দুসম্পর্কের খালাতো বোন। আমাদের কলেজেই ফাস্ট ইয়ার। জুয়োলজি। ‘
‘ সাইন্স? বাহ্। কতদিন হলো?’
‘ দু বছরের কাছাকাছি স্যার।’
‘ কতদূর এগোলো?’
‘ স্যার__’ নাকিবের ঝটপট উত্তরের গুলি থেমে গেছে তানভীর মনে মনে হাসলো। ছেলেটা অনেক কর্মট আছে বলতে হবে। বেশ হেল্পফুল। তানভীর সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ কতদূর এগিয়েছো? সব কমপ্লিট নাকি এখনো ইনোসেন্ট প্রেমিক হয়ে থাকার অভিনয়টা চালিয়ে যাচ্ছ?’
নাকিব লাজুক হেসে মাথার পেছনে হাত দিয়ে চুলকাতে লাগলো।
‘ স্যার মানে _ পুরোটা কমপ্লিট করতে পারিনি। সবাই চেনে তো, ধরা খাওয়ার চান্স বেশি। ‘
তানভীর নিঃশব্দে হাসলো। বললো, ‘ যাক ভালো হলো। বাচ্চা ছেলেদের মতো লজ্জা পাবে না। চলো তোমার বান্ধবী আর আমার কিছু ওয়াইল্ড কাপল পিকচার তুলে দিবে। ‘
‘ ওয়াইল্ড পিকচার!’ বিরবির করেই নাকিব ঢুক গিললো। তানভীর পিঠে চাপড় দিয়ে বললো, ‘ কাম অন ম্যান। তোমার ফটোগ্ৰাফিতে ঝোঁক দেখে ইচ্ছে করলো। তোমার থেকে বিশ্বস্ত কাউকে পাচ্ছি না। আজ নতুন কিছু এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাক। লাইট সামথিং। ‘ বলেই তানভীর চোখ টিপে দিলো।
নাকিব মাটির দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, ‘ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম স্যার। তারপর মনে পড়লো আমি একজন সুপার পসেসিভ হাজব্যান্ডের অফার এক্সেপ্ট করছি। ‘
‘ ক্যামেরা কার? ‘
‘ এক বড় ভাইয়ের। আমারটায় ভালো আসে না। ‘
‘ খুশি করতে পারলে নতুন একটা নিয়ে নিও।’
নাকিব অবাক হয়ে তাকালো। ঠোঁট ভিজিয়ে সিউর হতে চাইলো।
‘ ক্যামেরা?’
‘ ইয়েস ক্যামেরা। ‘
নাকিব খুশিতে কি করবে ভেবে পেলো না। শরীর দোলাতে দোলাতে ছুটলো তানভীরের পিছু। যেভাবেই হোক বান্ধুবীর জামাইয়ের দিল খুশ করতেই হবে তাকে।
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৭৭) [ মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত]
তানভীর যখন রুমে পৌঁছলো ততক্ষনে লাবিবা চলে এসেছে রুমে। ভেজানো দরজাটা খুলতেই দেখলো এক অপ্সরা শুয়ে আছে বিছানায় সাদা চাদরের উপরে। চুল গুলো ছড়িয়ে দেওয়া তা ফ্লোর ছুঁয়েছে। এক হাঁটু ভাঁজ করে উঁচুতে রাখা শরীরটা ঢেউয়ের সৃষ্টি করেছে। নেশাগ্ৰস্ত চোখে তানভীর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। তানভীর পায়ের কাছে এসে দাঁড়াতেই লাবিবা চোখ মেলে তাকালো। মুচকি হাসিটা বেশীক্ষন ধরে রাখতে পারলো না। তানভীরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দৃষ্টিবদ্ধ হয়ে অজান্তেই পুরো শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। লাবিবা সাথে সাথে লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। তার এই প্রেমিক পুরুষটা মাঝে মাঝে এমন দৃষ্টিতে তাকায় যে দৃষ্টিতে লাবিবা এফোড়-ওফোড় হয়ে যায়। তার স্থির থাকা দায় হয়ে পড়ে। তানভীরের দৃষ্টি তখন লাবিবার লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটের দিকে। লাবিবা বুঝে উঠতেই ডান দিকে মাথাটা ঘুরিয়ে নিলো। তানভীর দুষ্টু হেসে লাবিবার পায়ের কাছে বিছানায় হাঁটু গেঁড়ে দাঁড়ালো। আলতো স্পর্শে হাতে তুলে নিলো নরম পা। লাবিবার দৃষ্টি তখন তানভীরের উপর। কি করতে চাইছে সে? তানভীর লাবিবার চোখে চোখ রেখেই মুখটা পায়ের দিকে নামিয়ে নিলো । পায়ের তলায় ছোঁয়া লাগতেই লাবিবার সুড়সুড়ি লাগলো। পা টান দিতেই তানভীর হেঁচকা টানে গোড়ালি চেপে বুড়ো আঙুল পুরোটাই মুখে নিয়ে নিলো। লাবিবার দুর্বল পয়েন্ট গুলো একটা একটা করে আবিষ্কার করেছে তানভীর। সময়ে অসময়ে এভাবেই ঘায়েল করে সে তার রাণীকে। লাবিবা সহ্য করতে না পেরে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলো বিছানার চাদর। কোমড়টা বাঁকিয়ে দিতেই তানভীর ছেড়ে দিলো। একটা হাত বাড়িয়ে দিলো। ইশারা করে বললো, ‘ এসো। ‘ লাবিবা উঠে বসলো। তার চুল সহ ঘাড় আস্তে আস্তে আবদ্ধ হলো তানভীরের বাহুতে। বুড়ো আঙুলে থুতনি ছুঁয়ে উপরে তুলতেই চোখে চোখে প্রেমাদৃষ্টি একাকার হয়ে গেলো। তানভীর ধীরে ধীরে মুখটা এগিয়ে নিয়ে আসে। দু চোখের পাতায় চুমু এঁকে দিয়ে কপালে ঠোঁট চেপে ধরে। দীর্ঘ সময় নিয়ে চুমু দেয়। ধীরে ধীরে নেমে আসে ঠোঁটের কাছে। ঠোঁট জোড়া জোড়া ঈষৎ ফাঁকা হয়ে তানভীরকে আহব্বান জানাচ্ছে। তানভীর নিজেকে কন্ট্রোল করে নেয়। আলতোভাবে পাঁজাকোলে তুলে নেয় লাবিবাকে। বারান্দায় গিয়ে কাঠের রেলিং এর সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আশেপাশে কোথাও যেনো বৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড়ের উপর দমকা হাওয়ায় লাবিবার শাড়ির আঁচল উড়ছে। স্ট্রেট চুলো গুলো উড়ে তানভীরের চোখে মুখে লাগে। তানভীর আঁচল গলিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে লাবিবাকে। চুলের ঘ্রাণ টেনে নেয় নিজের মাঝে।
নাকিব ভেবেছিলো লজ্জা পাবে। এখন লজ্জার ল ও পাচ্ছে না। একের পর ক্যামেরায় ক্লিক দিয়ে যাচ্ছে আর দাঁত বের করে হাসছে। ফাস্ট ইয়ারে যখন ভর্তি হলো কথায় কথায় নাকিব বলেছিলো, ‘ বান্ধুবী তোর বাসর রাতে আমাকে ভিডিও কল দিস। কিছুই তো পারবিনা জানি। আমি ইন্সট্রাকসন দিবো তুই সে অনুযায়ী কাজ করবি। আমার বান্ধবী হয়ে যদি তুই আমার মান সম্মান ডুবাস, তোর বাড়িতে আগামী একবছর অন্ন ধ্বংস করার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নিবো মনে রাখিস। ‘
তারপর সে কি পিঠে ব্যথা! ধুম ধাম তবলা বাজিয়ে ছেড়েছে মেয়ে দুইটা। তিন দিন আর পিঠ নিয়ে নড়াচড়া করতে পারেনি। সেসব কথা মনে করেই নাকিব মুখ টিপে হাসছে।
চোখ বন্ধ করে সময় টা উপভোগ করছে লাবিবা। ঠান্ডার প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে শরীরে। এদিকে তানভীরের অবাধ্য হাতের বিচরণ ও বাড়ছে। মিশ্র অনুভূতিতে লাবিবা মরিয়া হয়ে উঠছে। কন্ঠ ভেঙে ভেঙে আসছে যেনো। দুবার চেষ্টা করে লাবিবা কোন ভাবে ডাকে,
‘ খা__খানন সাহেব!’
তানভীর ঘোরের মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেছে। নাকিবকে আঙুলে দেখিয়ে ইশারা করে, ‘ ডান ‘।
মুহুর্তেই লাবিবাকে ঘুরিয়ে কাঠের দেয়ালে চেপে ধরে। হাতের বুড়ো আঙুলে নিচের ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দেয়। লিপস্টিক না উঠে ছড়িয়ে পড়লো গালে। ঠোঁটের উপর ঠোঁট এনে বলে, ‘কে বলেছিলো ভিড়ের মাঝে কড়া লিপস্টিক দিতে? আপনার খান সাহেবের কন্ট্রোল করতে কষ্ট হয় রাণী সাহেবা জানেন না আপনি?’
নিচের ঠোঁটটি ঠোঁট দ্বারা টেনে ধরে। লাবিবা ব্যথায় মুখে ‘ আহ্ ‘ আওয়াজ করে। তানভীর মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে নিতে থাকে ঐ সুধা। লাবিবার কোমড় চেপে ধরে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে । আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দুই আঙুল দ্বারা নাকিবকে ইশারা করে বেরিয়ে যেতে। নাকিবের নজরে পড়তেই লজ্জা পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে দরজা টেনে দিয়ে যেতে ভুল করে না। ভুল তো তার আগেই হয়েছে। তানভীরের প্রথম ইশারা যে ছিলো ফিনিসড করার সেটা সে বুঝতেই পারেনি। নাকিব ভেবেছিলো কিস টিস কিছু হবে। আরো কিছুটা পাগলামো হবে। বাট ওভার পসেসিভ বান্ধুবীর জামাইয়ের ফটোশুট করছে সে ভুলতেই বসেছে। নাকিবের এখন নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে বলদ সেজে আসছে। রাগে দুঃখে ফোন দিলো গার্লফ্রেন্ড কে। গার্লফ্রেন্ড ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। নাকিবের ফোন পেয়ে উঠে বসে।
‘ হ্যালো। জান। ‘
‘ সিলেট আসছি। মেয়ে পছন্দ হয়ছে। হয় তোমার মাকে আমাদের কথা কালকের মধ্যে জানাবে নয়তো বিয়ে করে ঘরে বউ নিয়ে ঢুকবো। ‘
‘ হায় আল্লাহ! কি বলতেছো তুমি? রাতের বেলা নেশা টেশা করছ নাকি?’
‘ আমি করিনা। লাব্বু করে,উর্মিও করে জামাইয়ের সাথে মিলেমিশে। ‘
অবাক হয়ে বলে, ‘ আপু দুইটা না কতো ভালো ছিলো? কার পাল্লায় পড়ে গোল্লায় গেলো? ছি ছি কি সর্বনাশ! এই তুমি তাদের সাথে নেশা করতে বসোনিতো?’
নাকিব টপ করে ফোনটা কেটে দেয়। সুইচ স্টপ করে পকেটে পুরে। মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে। গার্লফ্রেন্ড তার এখন সারারাত ছটফট করবে। বাঁশের বেঞ্চির উপর শুয়ে পড়ে। আকাশে চাঁদ নেই। তবে তারা আছে। অসংখ্য তারা। নাকিব বড্ড সুখে আছে। তার সুখের প্রকাশ ঘটে গলায় সুর তুলে,
‘ এই হৃদয়ে জ্বলছে এক যাতন মোমবাতি ,
তুমি আগুন হয়ে পুড়ছো আমায় সারা দিবা রাতি ।
এ হৃদয়ে ফুটছে ফুল, প্রেমের বারোমাস
তুমি ফাগুন হয়ে রঙ ছোয়ালে মনেরো নীলাকাশ ।
আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই।
আমায় কতোটা ভালোবাসো সে কথাটা জানতে চাই। ‘
‘ আর আমি জানতে চাই এসবের মানে কি শালাবাবু? আমার প্রথম বিয়ের প্রথম বাসরে তোমার গার্লফ্রেন্ড কেনো ডিস্টার্ব করছে ? তাকে জানাওনি আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে?’
চোখের উপর ধরে রাখা ফোনে শ্যামলীর নাম্বার আর বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে আসা আকাশের কথায় নাকিব লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আকাশের দিকে তাকাতেই ঘাবড়ে গেলো। বেচারা আলু থালু পোশাকে বেরিয়ে এসেছে। রাগ আর অসহায় মিশ্রন নজরে তাকিয়ে আছে । এই মনে হচ্ছে নাকিবের গলা চেপে ধরবে আবার মনে হচ্ছে নাকিবের গলায় ঝুলে কান্নাকাটি শুরু করবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে নাকিব জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করলো। ফোনটা টুপ করে মুঠোয় নিয়ে বললো, ‘ দুলাভাই। দ্বিতীয় বার বিয়ে করার ইচ্ছে আছে? আগে বলতে পারতেন । বান্ধুবী আরেকটা পাতানো লাগবে দেখা যায় হে হে। ‘
‘ তোমার গার্লফ্রেন্ড কে বলেছো আমরা নেশা করছি?’
‘ হ্যা। ‘
‘ কিহ?’
‘ দুলাভাই ফোন আমার হাতে । আপনার ড্রিংকস ঐ দিকে। নেশাটা মনে হচ্ছে এখনো হয়নি। আগে এক প্যাগ সাবাড় করেন তারপর কথা হচ্ছে হে হে। ‘
‘ তোমার বান্ধুবী __’
‘ কড়া না?’
‘ নাকিব।’
‘ খুব ভালো মেয়ে। দুলাভাই সময় নষ্ট হচ্ছে। ‘
‘ তোমার গার্লফ্রেন্ড ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করছে। তার সাথে কথা বলে সব মিটিয়ে নাও। আর হে, আমার ফোনটাও রাখো। কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে। ‘
‘ দুলাভাই। অল দ্যা বেস্ট। ‘
আকাশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নাকিব বিরবির করে,
‘ মালটা খেপছে।’
শ্যামলীর নাম্বার থেকে আবার ফোন। নাকিব এই ফোনটাও সুইচ স্টপ করে রাখলো। নাকিবের এসব করতে ভালোলাগে। নাকিবের একমাত্র গার্লফ্রেন্ড শ্যামলী প্রথমে নাকিবকে পাত্তা দেয়নি। ছাগল বানিয়ে পেছন পেছন ঘুরিয়ে রাজী হয়েছে। তখনই নাকিব প্রতিজ্ঞা করেছে শ্যামলীর পরবর্তী দিনগুলো প্যারাময় দিন করে তুলবে। অতিরিক্ত ভালোবাসার অত্যাচারে মেয়েটাকে এভাবেই নখের আগালে নাচিয়ে ছাড়ে। শ্যামলী মাকে খুব ভয় পায়। তার বিয়ের জন্য দেখাশোনাও চলছে। কিন্তু নাকিবের কথা বলার সাহস করে উঠতে পারছেনা। একের পর এক ছেলেপক্ষ আসে আর নাকিবকে পাগল বানিয়ে ছাড়ে। ছেলেটা বাঁচার তাগিদে কলেজে এসে বাঁদরামি করে, সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে চলার চেষ্টা করে। মনের ভেতর একটা ভয় সব সময় নিয়েই সে মেতে থাকে। এবার এই সুযোগে যদি শ্যামলীর একটু সাহস বাড়াতে পারে।
ভোরের আলো ফুটবে বলে। লাবিবার ঘুম ভেঙে যায়। উঠতে যাবে হাত পা ঝিম ধরে আসে। পাশে হাত বাড়িয়ে দেখে তানভীর নেই। রুমের সুইচ টিপে পুরো রুমে চোখ বুলায়। সেখানেও নেই। গায়ে রাতের কম্বল পেঁচিয়ে ওয়াশরুমে যায়। লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে নামাজ আদায় করে নেয়। বারান্দা থেকে ভোরের পাহাড় দেখবে ভাবে। পর্দা সরিয়ে দিতেই তানভীরকে চোখে পড়ে। উদোম শরীরে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। হাতের আঙুলের ভাঁজে জলন্ত সিগারেট। মাঝে মাঝে ফুক দিয়ে বাতাসে ধোঁয়া ছাড়ছে । লাবিবা গিয়ে দাঁড়ালো তানভীরের পেছনে। লম্বা মানুষটার চওড়া পিঠে লাবিবার আঙুলের নখের দেওয়া আদর গুলো ভোরের স্বচ্ছ আলোতে হাইলাইট করছে। লাবিবা অদৃশ্য শান্তি অনুভব করে। কেনো যেনো তার মনে হয় এই মানুষটাকে নিজের হাতে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলতে। একান্তই নিজের ছাপ লাগিয়ে দিতে। তবে যেনো আরো শান্তি অনুভব হবে। এক বন্য প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে উঠতে। তানভীরের আগ্ৰাসী ভালোবাসায় নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে। তাজা লাল আঁচড় গুলোতে লাবিবা আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বুকের উপর হাতের বাঁধন রেখে। ভোরের নির্মল বাতাসে প্রাণ ভরে শ্বাস টানে। তানভীর একবার ঘাড় ঘুরিয়ে লাবিবাকে দেখে আবার বাইরে দৃষ্টি রাখে। লাবিবা পিঠ থেকে মাথা তুলে তানভীরের দৃষ্টি অনুযায়ী তাক করে। কটেজ নাম্বার ফোর। যেখানে উর্মিলা আকাশ রয়েছে। সেদিকে তানভীর কেনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে?
‘ খান সাহেব? ঐ কটেজে উর্মি আকাশ আছে। ‘
‘ হুম। ‘
বড্ড গম্ভীর স্বীকারোক্তি। আর কোন কথা নেই। লাবিবার ভেতরটা কেমন যেনো ছটফট করে উঠলো। কথা বাড়ালো,
‘ তাদের ফাস্ট নাইট ছিলো। ‘
কোনো উত্তর নেই। লাবিবা বেশিক্ষন থাকতে পারবেনা বুঝলো। সিগারেটের গন্ধ কড়া ভাবে নাকে লাগছে। তানভীর তো সচারাচর সিগারেট খায়না। যখন কোন বিষয়ে যন্ত্রনা অনুভব করে তখন ই এটা ধরে। এর আগেও কয়েকদিন সিগারেট খেতে দেখেছে লাবিবা। আর এও জানে লাবিবার কারণেই সিগারেট হাতে তুলে নিয়েছে তানভীর। তাহলে কি লাবিবার কোনো কারনে না খুশি হয়েছে? লাবিবা কি পারছেনা তার খান সাহেবকে সুখী করতে? লাবিবার বুকটা শূন্য অনুভূত হয়। ভয় ঢুকে যায় প্রাণে। কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
‘ খান সাহেব আমি কি কষ্ট দিয়েছি আপনাকে? আপনার হাতে সিগারেট কেনো? আপনি কি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত? আপনি বার বার ঐ ___ ‘ কথাটা আগানো সমীচিন নয় তাই থেমে গেলো। কিন্তু তার ভেতরে জানার যে উদগ্ৰীব তা ধীরে ধীরে বাড়তেই লাগলো। তানভীর আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে চারভাগের একভাগ শেষ করলো। তারপর লাবিবার দিকে ঘুরে তাকালো। তানভীরের মুখ থেকে ভুস ভুস করে সিগারেটের গন্ধ আসছে। কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে কয়টা সিগারেট শেষ করেছে লাবিবার জানা নেই। লাবিবা নাকে প্রেশার দিয়ে বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করলো। তানভীর মুখ থেকে কিছুটা ধোয়া লাবিবার দিকে ছাড়লো। লাবিবা পিছিয়ে যেতেই তানভীর হাত ধরে আটকালো। ধোঁয়ার দিকে দেখিয়ে বললো,
‘ এটার নাম কি জানো? যন্ত্রনা। একাকিত্বের সঙ্গী। ‘
লাবিবা তানভীরকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ আমি আছি। শুধুমাত্র আপনার সঙ্গিনী । ‘
তানভীর উজ্জ্বল হাসলো। পুড়ে শেষের পথে সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে লাবিবার মুখে চেপে ধরলো। চুলের খোঁপা তালুতে ঠেসে ধরে সমস্ত ধোঁয়া মুখের ভেতর ছেড়ে দিলো। লাবিবা কাঁশতে লাগলো। ছুটার জন্য ছটফট করলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। তানভীর ছাড়লো নিজের সময় মতো । লাবিবাকে দম নেবার সময় দিলো। এক হাতে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে আরেকহাত উর্মি আকাশের জন্য বরাদ্দকৃত কটেজের দিকে তাক করলো। অত্যন্ত ব্যাথাতুর কন্ঠে আওড়ালো ,
‘ ঐ কটেজটায় আজ আমার ভাইয়ের থাকার কথা ছিলো ‘
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা