#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো
(৮০)
সকাল সকাল নাকিবকে কল করা হলো। নাকিব স্কিনে দেখলো ও না কার কল। কানে ধরেই ছাগলের মতো বললো, ‘ কেএএএএএ?’
তানভীর হালকা কেশে বললো, ‘ নাকিব? ঘুমোচ্ছো?’
‘ স্যার, আসসালামুয়ালাইকুম। ‘
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কি ব্যাপার? তুমি তো আর দেখা করলেনা আমার সাথে। ‘
‘ স্যার আমি তো বিছানা থেকে উঠতে পারি না। ‘
‘ কি হয়েছে? এক্সিডেন্ট করেছো? ‘
‘ না স্যার বলা যাবে না। আপনাকে বললে মান সম্মান থাকবে না। ‘
‘ আচ্ছা। রেস্ট নাও। ওকে। ‘
তানভীর বুঝলো না এর আবার কি হলো? উর্মিলা আকাশকে আগেই জানিয়ে রেখেছে। তারা আসবে দুপুরের দিকে। তানভীর গাড়ি নিয়ে ছুটলো লাবিবার কাছে। লাবিবা যেনো তানভীরের অপেক্ষাতেই ছিলো। তানভীরকে দেখার পর তার মুখ থেকে হাসি সরছেই না। রাত বারোটা থেকে লাবিবার এই অপেক্ষা। ভেবেছিলো তানভীর ফোন দিবে। না হলেও একটা টেক্সট। হয়তো চলে আসবে। এই দিনটাতেই তার মানুষটাকে নিজের নামে করে নিয়েছিলো। ছোট্ট একটা কবুল বলে নিজেকে তুলে দিয়েছিলো তার হাতে। দুটি দেহ এক আত্তা এক প্রাণ। তানভীর আসার আগেও মন ভার করে বসেছিলো। কিন্তু রাগ হয়নি। অভিমানও হয়নি। সে তো জানেই মানুষটা এরকম। অভিমান করে কি লাভ? এইযে তার পুরো ফ্যামিলি আটকে রেখেছে। লাবিবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকেই দেখে চলেছে। তার খানসাহেব যখন বিনয়ের সাথে কথা বলে মনে হয় মানুষটা ভীষন কোমল স্পঞ্জের মতো। ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসিটা মনে হয় মেঘের কোনে একফালি রোদের ঝিলিক। গম্ভীর মোটা গলায় যখন কথা বলে বুকের ভেতর উথাল শুরু হয়। বার বার শুনতে ইচ্ছে করে। লাবিবার চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। বড় ভাগ্য করে মানুষটাকে সে পেয়েছে। জীবনে হয়তো কিছু অপূর্ণতা রয়ে যেতো যদিনা বছর খানেক আগে বিয়েটা না হতো। হৃদয়ের সল্প অনুভূতি তো আর মিথ্যে নয়। অস্বীকার করার উপায় ও নেই। কেউ যদি লাবিবাকে জিজ্ঞেস করে তানভীরের প্রেমে কখন পড়েছে? লাবিবা ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারবেনা। সে প্রেমে পড়েছে ক্ষনে ক্ষনে একটু একটু করে। মানুষটার উদাসীনতাই তাকে টেনে নিয়েছে তার কাছে। বাকিটা তার কেয়ার, ফ্রিডম আর ভালোবাসা। লাবিবা বুঝে পায়না এতো কেনো ভালোবাসে তাকে মানুষটা? লাবিবার মুখে অথচ চোখে জল। অদ্ভুত সৌন্দর্য ছড়ানো মুখটা তানভীরের চোখের আড়াল হলো না। একবার চোখে চোখ পড়লো। তানভীর রুপালীকে ডেকে কানে কানে কি যেনো বলে আবার চাচা শ্বশুড়দের সাথে গল্পে মশগুল হলো। কিছুক্ষন বাদে রুপালি লাবিবাকে রুমে ডেকে পাঠালো। লাবিবা যেতে চাইলো না। বললো পরে শুনবে। রতন হাত টেনেই নিয়ে গেলো। রুপালি ঝটপট দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো,
‘ জামা খুল। এই ব্লাউজ পরে নে। ‘
বিছানার উপর লাল কাঞ্জি শাড়ি আর নীল ব্লাউজ পরে আছে। লাবিবা হাতে তুলে নিলো। শাড়ির উপর হাত বুলিয়ে নিলো। ‘ কী সুন্দর! এই শাড়ি কে আনলো?’
‘ তোমার সোয়ামী। তাড়া আছে। তাড়াতাড়ি কর। ‘
‘ বেরোবো। ‘
‘ হুম। তোকে বিদায় করে আমাদের ও রেডি হয়ে নিতে হবে। দাওয়াত আছে। ‘
লাবিবা খুশি মনে আগে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।শ্বশুড়বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে বুঝে গেছে। সেজন্যই তো কাকা কাকী সবাই আজ এবাড়িতে। আর সে কিছু জানেই না?
লাবিবাকে শাড়ি পড়ানো হলো আটপৌরে করে। সফট ম্যাটেরিয়াল হওয়ায় গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। লাবিবা আয়নায় নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখলো। রুপালিকে বললো, ‘ ভাবী পেছনে কোমড় বেরিয়ে আছে। ‘
‘ এভাবে শাড়ি পরালে একটু বের হবেই। ‘
‘ তোমার ননদাই দেখলে আগুন ধরিয়ে দিবে। উপরে তুলে পিন আপ করে দাও। ‘
রুপালি কয়েল পিন আটকে দিলো কয়েকটা। সোনার গহনা পরালো যেগুলো সোহানা দিয়েছে লাবিবাকে। চুলগুলো কার্ল করে পেছনে ছেড়ে দিলো। গাঢ় কাজলের সাথে মুখে হালকা পাউডার দিয়ে কড়া লাল লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো। লিপস্টিক দেওয়ার সময় লাবিবা আনমনেই হেসে উঠলো। রুপালি জিজ্ঞেস করলো, ‘ হাসছিস কেনো?’
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে না করলো। কিছু না। কেনো হেসেছে বলা যাবে না। শাড়ির আঁচলের কোণা ধরে আয়নায় নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। রুপালি হাসলো। ‘ খুব আনন্দ তাইনা?’ লাবিবা উত্তরে মুচকি হাসি দিলো। কতটা আনন্দ সেটা লাবিবাই জানে। রুপালির সামনে প্রকাশ কেনো করবে? যার সামনে করার তার সামনেই করবে। রুপালি ড্রেস গুছাতে গুছাতে লাবিবার রেম্পশো দেখলো ঘরের মাঝে। মাথা নেড়ে বললো ‘ পাগলি মেয়ে ‘। রুপালি বের হবার সময় লাবিবা পিছু ডাকে। ‘ ভাবী। আমার উনাকে একটু পাঠিয়ে দিও তো। ‘ রুপালি মুখ বাড়িয়ে উঁকি দিলো।
‘ যে আড্ডা বসেছে! ননদাইকে আমি গিয়ে কিভাবে বলবো আপনার বউ ডাকে?’
‘ বাচ্চা পার্টি কই? একটাকে পাঠিয়ে দেও। বলবে খুব আর্জেন্ট। ‘
‘ দেখছি। ‘
মিনিট আটেক পর তানভীর রুমে আসে। লাবিবা ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। তানভীর লাবিবাকে দেখেই থমকে যায়। লাবিবা তানভীরের দিকে তাকিয়ে হাসে। মুখে হাসি রেখেই অভিমানী সুরে বলে, ‘ শ্বশুড়বাড়ি এসে যে প্রথমেই বউয়ের কাছে আসতে হয় সাহেব কি জানেন না?’
তানভীর পা বাড়ায়। দুহাত ধরে খাটে বসায় লাবিবাকে। কর্ণার থেকে মোড়া এনে লাবিবার সামনে বসে। লাবিবা ভ্রু একটু বাঁকা করে তাকায়।
‘ কি?’
‘ বসে থাকো। তোমাকে দেখতে দাও। ‘
‘ না দিলে?’
‘ আমি তো জানতাম আমার বউ সুন্দরী । মাথা খারাপ করা রুপ নিয়ে যে বসে আছে সেটাতো জানতাম না। ‘
‘ আচ্ছা?’
‘ তো রাণী সাহেবা এতো আর্জেন্ট কি এর জন্যই?’
‘ আপনি আট মিনিট লেট করেছেন। ‘
‘ কারণ টা বলো তারপর যা শাস্তি দেবার দাও। ‘
লাবিবা ঝটপট উড়ে দাঁড়ালো। হাঁটুর উপর থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে তানভীরের কোলে বসে পড়লো। তানভীর কোমড় চেপে ঠিকঠাক করে ধরলো। দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ আপনাকে একটা কষে চুমু দিতে ইচ্ছে করছে। এটা হলো কারন। কিন্তু আমি কোনো চুমু টুমু দিবোনা। এটা হচ্ছে শাস্তি। ‘
তানভীর গাল বাড়িয়ে দিলো। ‘ দাও। ‘
‘ দিবোনা। ‘
‘ ইস দাওনা। ‘
লাবিবা দুষ্ট হাসলো। বাড়িয়ে দেওয়া গালে ঠোঁট স্পর্শ করলো। একটাতে হলোনা তানভীরের। অপর গাল বাড়িয়ে দিলে আরেকটা চুমু খেলো। ছোট কাকীর গলা পেয়েই লাবিবা রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পর পরই ঢুকলো ছোটকাকী আর পেছনে বাচ্চা শালা শালিরা।
‘ তানভীর বাবা আছোই যখন একটু অপেক্ষা করো আমরা এক সাথেই __’
ছোট কাকী আর কিছু বলতে পারলো না। হুটহাট গলার স্বর পাল্টে গেলো। চোখও নিচের দিকে নামিয়ে নিলো। কোন মতে তাড়াহুড়ো করে, ‘ আধাঘণ্টা থাকো একসাথেই বের হই। ‘ বলেই রুম ছাড়লো। সাথে বাচ্চাদের ও ধমকে বললো, ‘ চল চল এখান থেকে। ‘
বাচ্চারা তো গেলোই না উল্টে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
‘ দুলাভাই গালে লিপস্টিক লাগিয়েছেন কেনো?’
‘ দুলাভাই হামি দিয়েছে কে?’
‘ আমিও দুলাভাইকে হামি দিবো। ‘
‘ আমিও আমিও। ‘
তানভীর আয়নার সামনে চলে গেলো। দুই গালে দুটো লাল ঠোঁটের চিহ্ন। টিস্যু দিয়ে ঝটপট মুছে ফেললো। বেয়াদব বউ কাকী শাশুড়ির সামনে মান সম্মান লিক করে দিলো। ভাগ্যিস এই অবস্থায় বাইরে যায়নি। শালা শালিরা তো চুমু দিলোই সাথে এর পরের সময় গুলো তানভীর আর কাকী শ্বাশুড়ির সামনে পড়লো না। উপরন্তু এই খবর শ্বশুড়বাড়ির সবার কানে কানে চলে গেলো। সবাই আড়চোখে লাবিবার দিকে তাকাতে লাগলো। লাবিবা চেয়েছিলো তানভীরকে লজ্জা দিতে। এখন নিজের ফাঁদে নিজেই পড়ে গেলো। সাথে কবির তো আছেই গা জ্বলানোর জন্য, ‘ তুই যে শরমাস জানতামনাতো লাব্বু। ‘
‘ বড় ভাই,বড় ভাইয়ের মতো থাকো। তোমার লজ্জা তুমি দেখে রাখতে পারোনা?’
‘ মানুষ একটা অথচ রোল প্লে করতে হয় দুইটা। তোর তো গর্ব করা উচিত। ‘
ওদের কথার মাঝেই তানভীর বললো,
‘ নাকিবকে একটা কল দাওতো। কি যেনো হয়েছে ছেলেটার। ‘
‘ কি হয়েছে?’
‘ আমাকে বলেনি। তোমাকে হয়তো বলতে পারে। ‘
খান বাড়িতে নেমেই লাবিবা কল দিলো নাকিবের নাম্বারে। দুইবারে কল রিসিভ করেই নাকিব বলে উঠলো, ‘ দোস্তওওও। ‘
‘ ছাগল কোথাকার। ভ্যাবাস কেনো?’
‘ আমি আর নেই। ‘
‘ ইন্নালিল্লাহ। মরেই গেলি?’
‘ এখনো মরি নাই। তবে এই প্রেম আমাকে বাঁচতে দিবে না। ‘
‘ কি হয়েছে খুলে বল। ‘
‘ আম্মা মেরে হাড্ডি ভেঙ্গে দিছে। ‘ লাবিবা পানির বোতলে মুখ দিয়েছিলো। নাকিবের কথায় পানি নাকে মুখে চলে এলো। তানভীর সামনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো। দৌড়ে এসে লাবিবাকে সামলালো। লাবিবা বোতলটা তানভীরের হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ দোস্ত তুই কোন হসপিটালে?’
‘ গার্লফ্রেন্ডের হসপিটালে। মাথামোটা টাকে বলেছিলাম তার মাকে আমাদের বিষয়ে জানাতে। গাধাটা ভয়ের চোটে এসে জানিয়েছে আমার মাকে। তারপর আর কি! আমার মায়ের ভয়ংকর রুপ বুঝে নে। ‘
‘ সো সেড দোস্ত। তুই রেস্ট নে।তোর ভাগের রোষ্ট নাহয় অন্যকেউ খেয়ে নিবে। ‘
‘ কাউকে দিসনা প্লিজ। ফ্রিজে তুলে রাখ। ‘
‘ না না দোস্ত তোকে আমি বাসী খাবার খাওয়াতে পারবোনা। দরকার হলে তোর খেতেই হবেনা। তবুও তোকে আমি বাসী খাবার খাওয়াবো না। ‘
‘ আমার বাসী খাবার হজম করবো তাও তুই তুলে রাখ। দোস্ত শোন, দোস্ত।’
লাবিবা ফোনটা কেটে দিলো। তানভীর চিন্তিত সুরে বলল, ‘ বেশী অসুস্থ? ‘
‘ মনে হলোনা। ‘
‘ আসবে বললো?’
‘ লেজ ধরে টান দিয়েছিতো। ‘
কেক কাঁটার সময় নাকিব ঠিকঠাক হাজির হলো। তাও আবার গার্লফ্রেন্ড কে সঙ্গে নিয়ে। মেয়েটা শুকনো মুখে নাকিবের পাশে দাঁড়িয়ে আছে দেখে লাবিবা মুখ টিপে হাসলো। ভালোই টাইট দিয়েছে বুঝা গেলো। কেক কাটার পর লাবিবা খাবারের তদারকি করতে গেলো শ্বাশুড়ির সাথে। তানভীর নাকিবের থেকে আগের পিক গুলো নিলো। একেকটা দেখতে দেখতে মুচকি হাসলো।
‘ নাকিব ছবিটা দেখছি তুমি ভালোই তুলো। ‘
‘ প্যাশন স্যার। ‘
‘ টুকটাক কাজ শুরু করতে পারো। ক্যামেরা দিচ্ছি। আমার পার্মানেন্ট ফটোগ্ৰাফার হয়ে যাও। ‘
‘ অবশ্যই স্যার। ‘
তামিম এদিকটায় নাকিবকে দেখে তাড়া দিলো, ‘ নাকিব যাও যাও গিয়ে বসো। লাস্ট ব্যাচ এ পড়ে গেলে যে। ‘
‘ প্রব্লেম নেই স্যার।’
‘ ওকে যাও। মম আছে ডাইনিং এ। ‘
নাকিব চলে গেলে তানভীর তামিমকে দেখে হাসলো। তামিম ও হেসে এগিয়ে এসে হাগ করলো। কিছুসময় দুজনে এভাবেই রইলো। ছেড়ে তামিম জিজ্ঞেস করলো,
‘ খেয়েছিস?’
‘ তোমাদের সাথেই খাবো। ভাই আয়োজন টা দারুন ছিলো। ‘
‘ তোদের জন্য গিফট আছে। রুমে যখন যাবি দেখতে পাবি। ‘
‘ সুইজারল্যান্ড এর টিকেট?’
‘ জেনে গেছিস?’
‘ লাবিবার পাসপোর্ট করাতে তুমি বেশী এক্সাইটেড ছিলে তখনি বুঝেছি কিছু প্লেন করছো। ‘
‘ ছবির মতন একটা দেশ। কতো স্মৃতি পড়ে আছে আমাদের। লাবিবা শুধু অবাকই হবে। ‘
‘ তোমার ইচ্ছে করে না ভাবীকে স্মৃতিগুলোর সাথে পরিচয় করাতে? তারো অবাক হয়ে জানার দেখার অধিকার আছে। ‘
‘ আমি তার কথা এখন ভাবছি না । ভেতরে আয়। এখানে শুধু শুধু দাঁড়িয়ে থাকিস না। ‘
তামিম তানভীরকে রেখেই চলে যাচ্ছিলো। তানভীর পিছু ডাকলো, ‘ ভাই। থ্যাংকস। ‘
তামিম দাঁড়িয়ে পেছন ফিরলো। হেসে বলল,
‘ ওয়েলকাম। ‘
‘ কিন্তু এই ট্রিপটা আমি এখন নিবোনা। ফিরেছি একসাথে। বিয়েটাও করেছি একসাথে। হানিমুনে ও যেতে চাই একসাথে। ‘
তামিম কিছুক্ষন তানভীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। তানভীর সুদৃঢ় অথচ নিশ্চল। ঠোঁটের কোনায় লেগে রয়েছে মৃদু হাসি। তামিম বুঝলো এ সিদ্ধান্ত পাল্টাবেনা। বাধ্যে হয়েই মেনে নিলো। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
‘ ওকে দেখা যাবে। ‘
‘ তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে একটা ছোট্ট সারপ্রাইজ রয়েছে ভাই। ‘
তামিম হাসলো। জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি?’
‘ রুমে যাও পেয়ে যাবে। ‘
প্রিয় পাঠক আজ অডিও লাইভে আসবো রাত নয়টায়। আপনাদের সাথে কিছুক্ষন গল্প হবে। সকলের উপস্থিতি আশা করছি।
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৮১)
মি. হাম্মাদ এবং মিসেস হাম্মাদ তামিমের সামনে পড়াতে অসস্তিতে পড়ে গেলো। জোর পূর্বক স্বাভাবিক গলায় কথা পাড়লো, ‘ জামাই বাবা ভালো আছো?’
তামিম তার টিনেজার শেলকের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে জানতে চাইলো, ‘ আপনারা এখানে? ‘
‘ কিছু মনে করোনা বাবা। বেয়াই সাহেব নিজে গিয়ে আমাদের দাওয়াত করে এসেছেন। যদি না আসি বিষয়টা খুবই খারাপ দেখা যায়। ‘
‘ বের করে দেবার পরেও যে এসেছেন তার থেকেও বেশি খারাপ?’
‘ বাবা শোনো আমার কথা। অনুষ্ঠান বাড়িতে আত্মীয়দের অনুপস্থিতি লোকের চোখে বড্ড খারাপ দেখায় । আমরা মুরুব্বিরা এটা ভালো বুঝি তুমি এই জেনারেশনের তাই বুঝবেনা। ‘
তামিম তাচ্ছিল্য হাসলো। তার পরে পর পর কয়েকটি জেনারেশন চলে আসছে আর সে নাকি বুঝবেনা। শ্বশুড়ের সাথে তামিমের বয়সের ফারাক কতো হবে? দশ বছর? এর বেশি মনে হয়না। তামিম কথা বাড়াতে চাইলো না। সোজাসুজি বললো, ‘ পাপার কথায় এসেছেন ভালো করেছেন। এখন বেরিয়ে যান। দ্বিতীয়বার এবাড়ি মুখী হবার চেষ্টা করবেন না। ‘
‘ তোমার পাপার সাথে কথা বলেই যাবো। ‘
তামিমের এবার মাথা খারাপ হবার উপক্রম। পায়ের আওয়াজ তুলে হাজির হয় ফিরোজ খানের সামনে। ফিরোজ খান ছেলের চেহারা দেখে অতিথিদের থেকে একটু আলাদা গিয়ে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে,
‘ কি হয়েছে? ‘
‘ পৃথিবীর সমস্ত নির্লজ্জ ব্যক্তিদের ই কি আমার সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি হবে? এটাই কি লেখা আছে আমার কপালে? যদি তাই হয় আমি চাইনা এদের কাউকে। নতুন কোন সম্পর্ক ই চাইনা আমার। যা আছে তার থেকে বেরোতে চাই। ‘
ফিরোজ খান তামিমের কাঁধে হাত রাখলেন। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘ শান্ত হও । কি প্রব্লেম আমি পরে দেখছি। মাথা গরম করোনা। ‘
‘ তুমি ব্যবস্থা করবে কিনা?’
ফিরোজ খান কর্মরত একজনকে ডাকলেন,
‘ এই এদিকে দুটো চেয়ার দিয়ে যাও। ‘
ছেলেটা চেয়ার দিয়ে গেলে তামিমকে বসালেন। যতটুকু সম্ভব তামিমকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। তামিম বাবার কাঁধে চোখ বন্ধ করে স্থির আছে। ফিরোজ খান চিন্তায় পড়ে গেলেন। এদিকে সোহানার সাথেও তার মান অভিমান চলছে। তিনি বিচক্ষন মানুষ। কখন কি করতে হয় তিনি জানেন। এতে অন্যরা আপত্তি জানালেও তার কিছুই করার নেই। তার নিকট সঠিক যা মনে হবে তিনি তাই করবেন। বেশ সময় নিয়ে তামিমকে উঠিয়ে দিতে চাইলেন।
‘ তোমার রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। রুমে চাও ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও। ‘
‘ আমি ফিল করি পাপা আমি মেন্টালি সিক হয়ে পড়ছি। আমি স্ট্রং থাকতে পারিনা। এরকমটা হয়না যে যা হবার হোক আই ডোন্ট কেয়ার। মাথায় বিষয়গুলো বার বার উঠে আসে। ইচ্ছে করে একটু ভাবি এবার বিষয়গুলো নিয়ে। সাপোর্ট পাচ্ছিনা পাপা। ‘
‘ আই আন্ডারস্টেন্ড। তুমি ইদানীং হাইপার হয়ে যাও। প্রেশার ঠিক আছে তো? কাল ই চেকাপ করাবে। ‘
‘ করাবো। ‘
‘ আমি প্রে করি আমার ছেলে একদিন সুখী হবে। অনেক ধৈর্য্য ধরেছো। আরেকটু ধৈর্য্য ধরো। ‘
‘ হুম। ‘
‘ যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো। না খেলে তোমার মমকে বলে যাও খাবার পাঠিয়ে দিবে। ‘
‘ হুম। ‘
তামিম উঠে গেলো। যাবার সময় একবার সোহানাকে বলতে গিয়েও বললোনা। পেটে ক্ষিধে থাকলেও খেতে ইচ্ছে করলোনা। নিজের রুমে ফিরে এলো। দরজা খুলে লাইট অন দেখে ভাবলো নিজের ভুলে অন করে গেছে। মাথা ঘামালো না। খুব ক্লান্তি অনুভব করলো। চেঞ্জ করার এনার্জি ও বোধ হয় হলোনা। লাইট অফ করে দিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে পড়ে রইলো। চোখে ঘুম এলো না। কিছুক্ষন বাদেই মনে হলো তার পাশে কেউ আছে। ততোক্ষনে তানভীরের সারপ্রাইজের কথাও ভুলে বসেছে। অনুভব চাড়া দিতেই তামিম উঠে বসলো। বিছানার পাশে বক্স হাতড়ে রিমোট চাপতেই আলো জ্বেলে উঠলো। তামিমের পাশেই বসে আছে গোলগাল মুখের শীর্ণ স্বাস্থ্যের অধিকারী নারী। সাদা ফর্সা শরীরে বেবি পিংক কালার জর্জেট শাড়িতে আঁটসাঁট হয়ে বসেছে। পিট পিট চোখ তুলে তাকিয়ে আছে তামিমের দিকে। কোমড় সমান চুল গুলো আর নেই। অনেকটাই উপরে কাটা হয়েছে। কাঁধের দুই পাশে সামনে এনে রেখেছে। নেই ফ্যাকাশে রংটাও। একটু কি ওয়েট গেইন করেছে? সেরকমই লাগছে। পুরোটা না হলেও বেশ পরিবর্তন বোঝা যাচ্ছে। হাতটা নাড়তেই ডায়মন্ড কাটের চুড়ি গুলো মৃদু আওয়াজ করে। এই আওয়াজ শুনেই তামিমের ইন্দ্রিয় সচল হয়েছে।
তামিম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ঘোর ফিরতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রোজীও মাথা তুলে তামিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। অপেক্ষা তামিম কিছু বলবে। কিন্তু তামিম কথা বলছেনা। রোজীই মুখ খুললো। পাশে হাত রেখে বললো, ‘ বসুন। ‘
তামিম বসলোনা। দাঁড়িয়েই বললো, ‘ কখন এসেছো?’
‘ সকালে। ‘
‘ কে নিয়ে এসেছে?’
‘ ছোট ভাইয়া। ‘
‘ তানভীর কে নিষেধ করতে পারতে। তুমি তো সুস্থ নও। এসময় এখানে আসা তোমার ঠিক হয়নি। ‘
‘ আমি ঠিক আছি। সমস্যা হচ্ছে না। ‘
‘ তোমার বাবা মার সাথে দেখা হয়েছে?’
‘ জি। ‘
‘ আমি যে তোমার তাদের সাথে যোগাযোগ রাখতে না বলেছি এটা নিশ্চয় জানিয়েছে?’
‘ জি। ‘
‘ তোমার কোনো কথা আছে এখানে?’
‘ আপনি যা বলেন।’
‘ ওকে। চলো তোমাকে দিয়ে আসছি। ‘
রোজী বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তামিমের দিকে তাকায়। ফের দৃষ্টি নত করে। চোখের কোণে কি পানি আসছে? তানভীর তো দিয়ে আসতেই চেয়েছিলো। রোজী একরাত থেকে যাবে বলেছে। সারাদিন তামিমের দেখা নেই। দু বার দূরে থেকে দেখলেও কাছে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। একবার দেখা দিয়ে যাবে না? দুটো কথা তো বলবে।
‘ কি হলো চলো তোমাকে দিয়ে আসি। ‘
রোজী ঘড়ির দিকে তাকালো। রাত হয়ে গেলেও তামিমের পক্ষে তাকে ঢুকানো ব্যাপার না। এমনিতেই আলাদা ভাবে কেয়ার করা হয় রোজীকে। এমপি সাহেবের পুত্রবধূ। ফেসিলিটি পায় অনেক। খাবারটাও অনান্য দের থেকে আলাদা আসে। বান্ডেলে টাকা সাবমিট করা হয় তার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে। রোজী আমতা আমতা করে বললো, ‘ শরীরটা খারাপ লাগছে।’
‘ এই শরীরে তোমার বেরোনো ই উচিত হয়নি। চলো এক্ষুনি হসপিটাল হয়ে তোমাকে রেখে আসবো। ‘
রোজী আয়নাতে নিজের দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,
‘ আপনি দেখেছেন একবার আমাকে? বাড়ির বড় বউ আমি। আত্মীয়-স্বজন যারা বাড়িতে আছেন তারা সকালে উঠেই নিশ্চয় আমাকে খুঁজবে। ‘
‘ সেম এক্সকিউজ। ‘
রোজী বুঝলোনা। জিজ্ঞেস করলো, ‘ কি বললেন?’
‘ তোমাকে কেউ খুঁজবেনা। ‘
‘ মামা খালু খালা সবাই জেনে গেছে?’
‘ কি?’
‘ এইযে আমার রিহাবে থাকার কথা। ‘
তামিম দমে গেলো। বড় শ্বাস ছেড়ে বললো,
‘ নাহ। ‘
ফজরের নামাজ সেড়ে তানভীর ছাদে পা রাখলো। কিছুক্ষন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে তারপর নামবে। আকাশে এখনো ভালোভাবে আলো ফুটে উঠেনি। এসময় রেলিং এ মাথা রেখে তামিমকে শুয়ে থাকতে দেখে তানভীর চমকালো। আকাশের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। পাশে তানভীর দাঁড়াতেই চোখ ঘুরালো। তানভীর নির্ঘুম চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে ফুস করে শ্বাস ছাড়লো। মাথার নিচে হাত রেখে সেও শুয়ে পড়লো তামিমের পাশে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ এখানেই ছিলে?’
‘ হুম। ‘
দুই ভাইয়ের ছোট্ট আলাপনের পর নীরবতা গ্ৰাস করলো। সূর্যের মিহি রোদ চোখে মুখে পড়লো। চোখ কুঁচকে নিলো। তামিম মুখের উপর হাত রাখলো। তানভীরকে একটা প্রশ্ন করে বসলো। স্বাভাবিক প্রশ্ন হলেও তানভীরের কাছে অদ্ভুদ শোনালো।
‘ সুখি হতে কি লাগেরে?’
‘ অনেক কিছু। এক্সপেক্টেশন যত কম সুখ ততো কাছে থাকে। ‘
‘ বলতে থাক। ‘
তানভীর একটু সময় নিয়ে বলতে থাকে, ‘ একটা ভালো ক্যারিয়ার প্রয়োজন। বংশের পাওয়ার ও সাইন রাখে অনেক ক্ষেত্রে। পকেটে আনলিমিটেড টাকা। সপ্নে সাক্সেস। ডিমান্ডিবল বাড়ি গাড়ি,বাইক। এটার্কটিভ পার্সোনালিটি। সাথে শখের নারী। ‘
‘ তুই কি সুখী?’
‘ হুম। এখন অব্দি সুখে আছি। আগামীতে সুখে থাকার জাল বুনে যাচ্ছি। ‘
‘ এক্সারসাইজ কর। আসছি।’
রোজী সকাল থেকেই আছে খালামনি , মামী শ্বাশুড়ির সাথে। তাঁদের একটার পর একটা ফরমায়েশ করে দিচ্ছে। জবেদা অন্যদিকে ব্যস্ত। সোহানা আসছে থেকে কথাই বলছেন না। লাবিবা শ্বশুড়দের ব্রেকফাস্ট টেবিলে তদারকি করছে। তামিম রাতে ঘুমোতে বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এখনো তার দেখা পাওয়া যায়নি। সোহানা কাজের মাঝেও রোজীর দিকে খেয়াল রাখছে। মেয়েটার শরীর করলেও বলবেনা। রাতে খায়নি। নিতু ইসলামকে বললে সাথে নিয়ে খেয়েছে। দুপুরে লাঞ্চ সেরেই সবাই চলে যায় নিজেদের বাড়ি। বাড়ি ফাঁকা হতেই সোহানা তানভীরকে বলে রোজীকে দিয়ে আসতে। যাওয়ার কথা শুনেই রোজীর গলা শুকিয়ে যায়। এদিক ওদিক অসহায় দৃষ্টি ফেলে। চোখ দুটো তামিমকে খুঁজে বেড়ায়। রোজী রেডি হয়ে নেয়। তার ছোট্ট লাগেজে মেসিডিন ই বেশী দেখা যায়। জবেদা লাগেজ গুছিয়ে দিতে গিয়ে মাথায় হাত দেয়।
‘ বড়ভাবী আপনে এতো গুলা বড়ি খান? ‘
‘ হুম। ‘
‘ বিরক্তি লাগেনা?’
‘ খেতেই হবে। ‘
‘ কেন যে নেশা টেশা করতে যান! ‘
রোজী উত্তর দিলো না। জবেদা শুকনো খাবার তুলে দিলো লাগেজে। সাথে রান্না খাবার ও রাতের জন্য। হালকা লাগেজ ভাড়ী লাগছে। নিচ থেকে তানভীরের ডাক এলো। তানভীর লাবিবা যাবে রোজীকে রেখে আসতে। রোজী জবেদাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তোমার বড়ভাইজান কোথায় গো?’
‘ দেখি নাই তো। ‘
জবেদা লাগেজ সমেত নামলো। পেছন পেছন রোজীও এসে দাঁড়ালো। মেয়েটার মুখে স্পষ্ট বেদনার ছাপ। তানভীর তাড়া দিতেই লাবিবা রোজীকে নিয়ে পা বাড়ালো। বাড়ির দরজায় মুখোমুখি হলো তামিমের সাথে। তামিমকে দেখেই রোজীর আঁখি টলমল করে উঠলো। তামিম লাগেজের উপর হাত রেখে বলল,
‘ ছোটবউ রোজকে নিয়ে ভেতরে চলো। ‘
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা