ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৯০+৯১

0
1654

#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো

(৯০)
‘ পাগলামি না করলে চলে না তাইনা? কতদিন থেকে চলছে এসব?’
এক ধমকেই লাবিবা থরথর করে কাঁপতে থাকে। দেয়ালের সাথে মিশে গিয়ে তাকিয়ে আছে কমটের দিকে। ফ্লাশটা দেবার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এভাবে ধরা পড়বে ভাবতে পারেনি। ওয়াশরুমের দরজায় চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে তানভীর। লাবিবার সাহস হলোনা সেদিকে চোখ তুলে তাকাবার। তানভীর চোখ মুখে খিচে ধমকালো, ‘ এনসার মি ফুল গার্ল। ‘
লাবিবা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো। নিভু নিভু কন্ঠে কোনভাবে বললো,
‘ খান সাহেব আমার মনে হয় বাচ্চা হবে না। ‘ তানভীর তৎক্ষনাত রাগের মাথায় বেরিয়ে গেলো। লাবিবাকে কিছু বললোনা। একবারো বুঝতে চাইলোনা লাবিবার কথাটা। কতোটা যন্ত্রনায় আছে লাবিবা। বুকে হাত রেখে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টানলো। এক্ষুনি মনে চ্ছিলো আরেকটু থাকলে দম আটকে মরে যেতো। সাহস লাবিবার বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুন। তবুও বিশেষ বিশেষ জায়গায় ভয়ে গুটিয়ে যায়। লিমিটেশন পার করলে যা হয়। অনেক সময় পর লাবিবা সাহস করে গুটি গুটি পায়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। পুরো রুমে বেলকনিতে তানভীরকে খুঁজলো। নিচে এসে পুরো বাড়ি খুঁজলো। বাড়ির বাইরেও ঘুরে দেখলো। তানভীর নেই। অথচ গাড়িটা আছে। গাড়ি ছাড়াই বেরিয়ে গেলো নাকি? রোজীকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ উনাকে দেখেছো?’
‘ কই নাতো। ‘
লাবিবা অপেক্ষা করলো। বড় সড় একটা বাজপাখি যাবে আজ তার খান সাহেবকে বোঝাতে। না বুঝিয়ে উপায় নেই। ঠিক মতো বোঝাতে পারলেই হলো। মনে মনে লাবিবা কথা গুছিয়ে নিতে লাগলো। কিন্তু সারাদিন গেলো তানভীরের দেখা নেই। সোহানা খেয়াল করলো লাবিবা আজ কিছু খেলোনা। তাই জিজ্ঞেস করলো,
‘ মন খারাপ?’
‘ না। ‘
‘ গ্ৰামে যেতে চাইছো?’
‘ না। ‘
‘ কি হয়েছে আমার মা টার?’
লাবিবা উঠে গিয়ে সোহানার পাশে বসলো। ঢুক গিলে বললো, ‘ মামুনি তোমার ছেলে তো আসছেনা। ‘
‘ বাইরে লাঞ্চ করেছে বোধহয়। ‘
‘ তাই বলে সারাদিনে একবারো আসবে না?’
‘ এখন তো অনেক কাজ মা। ছেলে তো আমার এক কাজ নিয়ে থাকে না। কতো দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে মাথার উপর। নির্বাচনের আছে মাত্র মাস দুয়েক সময়। এ দুমাস বাড়ির পুরুষদের বাসায় তেমন পাবে না। ‘
‘ আসবেনা?’
‘ রাতে চলে আসবে। চিন্তা করোনা। আমি ক্লাবে যাচ্ছি। তুমি কি আমার সাথে যাবে?’
‘ ক্লাবে তোমার কি কাজ মামুনী?’
‘ আমার সাথে এসো। নিজ চোখেই দেখবে জানবে। তুমি চাইলে আমার সংস্থায় জয়েন করতে পারো।আমি চাই তুমি জয়েন করো। কাজ শেখো। সময় যেতে যেতেই চালাক চতুর হয়ে উঠবে। ঠিক, ভুল, মানুষের কারসাজি সবই ধরতে পারবে। তোমার আব্বু আম্মু মানুষের মাঝে ঠিকভাবে মিশতে না দিয়ে একেবারে বোকা বানিয়ে রেখেছে। এবার তো বাইরে বেরিয়ে এসো। কে জানে আমার জায়গা একদিন তোমাকেই নিতে হবে। ‘
‘ তোমার ছেলে কি সত্যি রাজনীতিতে ক্যারিয়ার গড়বে?’
‘ সেটা সময় দেখা যাবে। আপাতত তানভীর আমাদের কলেজের হেড আর ইস্পাতের বিজনেস চালাচ্ছে ‌। পাশাপাশি বাবার সাথে পলিটিক্সেও আছে। তবে সবার ধারণা ফিরোজ এর পর তানভীরই পার্টিতে লিড করবে।’
‘ তোমার কি কাজ মামুনী?’
‘ আমিও পার্টির একজন নেত্রী। আমার মহিলা সংস্থা লিড করছি। এতে পলিটিক্সে প্রভাব পড়ছে। সমাজে সাহায্যের হাত যে বাড়াবে মানুষ তারই আনুগত্য করবে। তুমি কি যাবে?’
‘ আজ শরীর ভালো লাগছে না। অন্যদিন তবে। ‘

তানভীর রাতে নিজের বাসায় আর ফিরলো না। ফিরলো শ্বশুড়বাড়ি। বউয়ের প্রতি রাগটা তার বিন্দু মাত্র কমেনি। সামনে পেলে যখন তখন থাপ্পড় মেরে দিবে। শ্বশুড়বাড়িটাকেই সে আপাতত সেফ ভাবছে। ডিনার শেষ করে তানভীর গিয়ে বসলো ইসমাইলের পাশে। ইসমাইল তাকে বসতে বলেছে। জামাই মেয়ে ছাড়াই এসেছে তাও রাতে থাকছে ব্যাপারটা তার মোটেও ভালো লাগছে না। রহস্য রহস্য গন্ধ পাচ্ছে। রয়ে সয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আব্বা কি কোনো গন্ডগোল পাকাইছো? সামনে ইলেকশন। কি হয়েছে বলোতো? ‘
তানভীরের মেজাজ আরো খারাপ হলো। যতটুকু পারলো নিজেকে সামলে নিলো। হিটলার শ্বশুড় তার সব সময় বাঁশের উপর রাখে। পান থেকে চুন ঘষলেই হলো। ভালো কথা ভালোভাবে কখনোই চিন্তা করবেনা। ত্যাছরা ত্যাছরা কথা তার মুখে লেগেই থাকে। তানভীর সোফাতে ঘাড় ছেড়ে দিলো। শান্ত হয়ে বললো,
‘ আব্বু। পলিটিক্স এতোটাও খারাপ না। ‘
‘ সেটা কি আমি জানিনা? পলিটিক্স কি সেটা পরদে পরদে আমার চেনা। ‘
সাবিনা এসে জোড়া দিলেন, ‘ তোমার আব্বু ছিলো এলাকার নেতা। ব্যবসা বাণিজ্য ফেলে দিনরাত পার্টির পেছনে পেছনে ঘুরছে। ঘরের ধানের গোলা থেকে ধান বেঁচছে আর জনগনের কল্যাণে ব্যয় করেছে। লাস্টে যখন দেখলাম হাত আমার ফাঁকা তখন আমি বাঁধা দিলাম। কত কি করে যে এই পার্টি থেকে আলাদা করছি তা আমিই জানি। দেবর দুইটা মোটেও হেল্প করে নাই। ভাই নেতাগিরি করলে তাদের ও সুবিধা। আমার টা আমি বুঝছি। একে না সরাতে পারলে আজ হাতে থালি নিয়ে রাস্তায় নামতে হতো । ‘
তানভীর শ্বশুড়ের গুপ্ত পরিচয় জানতে পেরে ভ্রু কুচকালো। এই ব্যাপার তাহলে। তানভীর চট করে সোজা হয়ে বসলো।
‘ আব্বু তাহলে বলা যায় আপনি সব ব্যাপারেই পরাজিত। ‘
‘ কি বলতে চাও?’
‘ আপনি রাজনীতি তে আম্মুর কাছে পরাজিত। মেয়েকে নিয়ে জামাইয়ের সাথে লড়াই করলেন সেখানেও পরাজিত। এখন আপনার মেয়ে আপনার বিশ্বাসে ঘোল খাওয়ানোর পরিকল্পনা করছে এখানেও মনে হচ্ছে আপনি হবেন ই পরাজিত। ‘
‘ খোলসা করে বলো। কি করেছে আমার মেয়ে?’
‘ অবাধ্যতা। আমি ভেবেছিলাম আপনার মেয়ে ইনোসেন্ট। সেটা না। একেবারেই না। সে গভীর জলের মাছ। একেবারেই আমার ভুল ধারণা। ‘
‘ তানভীর কি করেছে আমার মেয়ে? যত্ন নিয়ে সুশিক্ষায় বড় করেছি মেয়েকে। আমি অহেতুক কোনো অভিযোগ শুনবোনা। ‘
সাবিনা মৃদু ধমক দেয়। ‘ আহ। তুমি এতো হাইপার হয়ে যাচ্ছো কেনো? আমি কথা বলছি। তুমি চুপ থাকো। ‘
তানভীরকে বলে, ‘ বাবা তোমরা ঝগড়া করেছো? আমার অবুঝ মেয়ে একটু বুঝিয়ে নিয়ে ঝগড়ার মিটমাট করে ফেলো। ‘
‘ ঝগড়া হয়নি। আমি ঝগড়া করবোও না। বড় অবাধ্য মেয়ে আপনার। তার সাথে আমার কথাই বলা উচিত না। ‘
চট করে উঠে তানভীর চলে গেলো। সাবিনার ডাক শুনলো না। রাতটা কাটলো ইসমাইলের বড্ড টেনশনে। মেয়ে জামাই ঝগড়া করে আলাদা আছে এটা তো মেনে নেওয়া যায়না। সকাল বেলা ইসমাইল গেলো তানভীরকে বুঝাতে। তার আগেই তানভীরের বাসার ড্রাইবার এসে কলিংবেল চাপলো। তানভীরের যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে হাজির। সকাল সকালই তানভীর সব ড্রাইভারকে দিয়ে নিয়ে এসেছে। এদিকে লাবিবা ফোন দিয়ে সাবিনার কাছে কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে। সাবিনা জিজ্ঞেস করে, ‘ জামাই এসব কেনো করছে? ‘
‘ আমি বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম তাই রাগ করে চলে গেছে। ‘
পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো ইসমাইল। বাচ্চার কথা শুনে মোড়ে মোড়ে চটে গেছে। ইশারায় বলে, ‘ বোঝাও মেয়েকে। আমার বাচ্চাটাই তো এখনো বড় হলোনা। কেমন কান্না জুড়ে দিয়েছে মায়ের কাছে। সে নাকি আবার বাচ্চা নিবে। ‘
লাবিবা ইসমাইলের সাথে কথা বলতে চায়। সাবিনা ফোনটা দেয়না। নিশ্চিত রাগারাগি করবে মেয়ের সাথে। এদিকে লাবিবা সাবিনাকে আরো টেনশন ধরিয়ে দেয়।
‘ আম্মু আমার মনে হয় বাচ্চা হবে না। অনেক দিন থেকে ট্রাই করছি। আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো না। ‘
সাবিনার হাত পা কাঁপতে থাকে শুনে। মেয়ে কি বলে? এখন এই জামাই শ্বশুড়কে বোঝাবে কি করে? পরদিন সাবিনা চলে যায় লাবিবাকে নিয়ে পরিচিত এক গাইনী ডাক্তারের কাছে। আশ্চার্যজনক ভাবে তানভীর সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। একটা প্রেগন্যান্ট মেয়ের পাশে ওয়েটিং রুমে বসে আছে। সাবিনা জিজ্ঞেস করে,
‘ মেয়েটা কে?’
লাবিবা খেয়াল করে দেখলো। চেনা চেনা লাগে। পরে মনে হলো একে সে দেখেছিলো একদিন তানভীরের সাথে।‌ তানভীরের খুব কাছের ফ্রেন্ড। তানভীর নিজের ফ্রেন্ডদের মাঝে লাবিবাকে খুব একটা টানে না। লাবিবার ফ্রেন্ডদের মাঝেও আসে না। শুধু খেয়াল রাখে এই যা। আসলে সব সম্পর্কের এক একটা আলাদা প্লেস আছে। আছে আলাদা আলাদা দায়িত্ব, কেয়ার, গুরুত্ব। মিলিয়ে ফেললেই সমস্যা দেখা দেয়। দেখতে দেখতেই একজন চার নাকি পাঁচটা হবে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে এলো। মুহুর্তেই উপস্থিত সাত আটজনের মিষ্টি খাওয়া শুরু হলো। তানভীর ও হাত দিয়ে তুলে একটা কালোজাম মুখে পুরে দিয়েছে। ভাব সাব এমন যে আরো খাবে। লাবিবা থেমে থাকবে কেনো? সাবিনাকে বললো, ‘ আম্মু তুমি সিরিয়াল দিয়ে আসো। আমি তোমার জামাইয়ের সাথে কথা বলে আসি। ‘
লাবিবা গিয়ে তানভীরের পাশে বসে পড়লো। তানভীর তাকালো না। তবে সে থেমে গেলো। হাত গুটিয়ে শান্ত হয়ে রইলো। ওদের ছোট্ট মিষ্টি পার্টিতে লাবিবাও জয়েন করলো। প্যাকেট থেকে মিষ্টি নিয়ে তানভীর কে দেখে দেখে খেতে লাগলো। লাবিবাকে দেখে তানভীরের ফ্রেন্ড হৈ হৈ বাঁধিয়ে দিলো।
‘ আরে ভাবী সাহেবা যে। শালা তোকে তো তোর বউ চোখে হারাচ্ছে। ‘
প্রেগন্যান্ট মেয়েটা বললো, ‘ তারপর বলো লাবিবা হাজব্যান্ড ছাড়া কেমন লাগছে?’
তার মানে সবাই এরা জানে? কিভাবে কথা বলছে! লাবিবার রাগ হলো। তানভীর কে চুপচাপ দেখে। আরেকজন লাবিবার গাল টেনে দিয়ে হেসে বললো,
‘ এখানে কেনো এসেছো? ডাক্তার দেখাতে? বোকা মেয়ে। ‘
লাবিবার নিজেকে হাসির পাত্র মনে হচ্ছে। ওরা যদি তাকে নিয়ে হাসতে পারে তাহলে লাবিবারো উচিত নিজেকে নিয়ে হাসা। দেখা যাক তাঁদের মুখের হাসি কতক্ষন পর্যন্ত শোভা পায়। বন্ধু মহলে বেফাঁস কথা বলাই যায়।
লাবিবা একটা মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে জমিয়ে বসে।
‘ কি করবো বলুন আপনাদের বন্ধু তো কয়েক রাত থেকে বাড়ি ফিরে না। কোথায় না কোথায় যায়! যদি অসুখ বাঁধিয়ে ফেলে। তাহলে তো _
‘ মোটেই না। কি বলছেন ভাবী? আমাদের বন্ধু মোটেই সেরকম না। ‘
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে একজন প্রতিবাদ করে উঠে।
‘ কিরকম না? ‘
‘ আপনি যা ভাবছেন মোটেই সেরকম না। ‘
লাবিবা চট করে তানভীরের কপালে হাত রাখে।
‘ দেখুন অলরেডি কপাল গরম লাগছে। আর আপনি বলছেন অসুখ বাঁধবে না। লোহার শরীর নাকি?’
লাবিবার কথা আর এক্সপ্রেশনে বন্ধুরা বোকা বনে গেলো।
‘ আরে ভাবী। এই কথা। আমরা ভাবলাম কি না কি। ‘
তানভীর সাবধানী বাক্য আওড়ালো।
‘ গাইস। হসপিটাল এটা ভুলে যাস না। ‘
‘ হুম। সাথে আবার তাও প্রেগন্যান্ট মহিলা। ‘
চোখ রাঙাতেই তানভীর মুখ ঢেকে বলে উঠে,
‘ রাগ দেখাস কেন? মামাই তো বানাবি। বাবা তো না। ‘
পিঠের উপর ধুপ ধাপ পড়ে। ‘ বাপ হইতে মন চায় তোর বউকে বল যা। এই লাবিবা এই বাঁদরকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যাও। বাপ হোক বুঝবে ঠেলা। ‘
লাবিবা হাসি হাসি মুখে বলে,’ কেনো আপু? আমার তো ভালোই কাটছে জামাই ছাড়া।’
তানভীরের বাকি ফ্রেন্ডরা হা করে তাকিয়ে থাকে,
‘ তানভীর তোর বউ একমুখে দু কথা বলে দেখা যায়। ‘
‘ আপনাদের থেকে মাত্রই শিখলাম ভাইয়া। ‘
তানভীর শান্ত কন্ঠে বললো, ‘ বাসায় যাও। বাহিরে থেকো না। ‘
‘ বাহিরে থাকা আপনার কাজ আমার না। ফ্রেন্ড কে নিয়েই হসপিটালে এসে বসে থাকুন। আর আপু কনগ্ৰাচুলেশনস। আপনার সুস্থ সবল বাচ্চা হোক। আমার হাজব্যান্ড আপনার বিশেষ খেয়াল রাখবে। কারণ তার তো বাবা হবার ক্ষমতা নেই তাইনা? দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাবে। ‘
তানভীর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। ফ্রেন্ডদের সামনে অপমানে মুখটা থমথম করে। এতো বড়ো কথা নন্সেস মেয়েটা কিভাবে মুখে আনে? আঙুল দেখিয়ে বলে,
‘ এক্ষুনি আমার সামনে থেকে চলে যাও। তোমাকে পরে দেখে নিবো আমি। ‘
লাবিবা মিষ্টি প্যাকেট ছুড়ে মেরে । দ্রুত গতিতে পা ফেলে। তানভীর ডেকে উঠে,
‘ ঐদিকে কোথায় যাচ্ছো?’
‘ ডাক্তারের কাছে। ‘
‘ বাসায় যাও। তোমার মর্নিং ড্রিংকসে প্রতিদিন মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছি আমি। যত যাই করো লাভ হবে না। ‘
লাবিবার থমকে গেলো। কিন্তু পা থামালো না। শরীরটা যেনো দুর্বল হয়ে আসলো। একটা বারের জন্য তানভীরের দিকে ফিরে তাকালো না। সাবিনার কাছে গিয়ে আলগোছে ঘাড়ে মাথা রাখলো। শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো। সাবিনা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হলো? শরীর খারাপ করছে লাবি মা?’
লাবিবার দু চোখ বেয়ে অশ্রু ধারা গড়ালো। বুকের উপর পাথরটা সরে গিয়েছে তার। ছোট্ট মনে কতটা যন্ত্রনা নিয়ে দিন পার করছে। মাথায় নিয়েছে কত চিন্তা। শুধু ভয় হতো। সে বুঝি আর মা হতে পারবেনা। কাউকে বলতে পারতো না। তানভীরের সাথেও শেয়ার করার সাহস হতো না। ভালোবাসার রাত শেষে দু চোখে ঘুম ছিলো না। প্রসাধনীর ব্যবহার না হলে সবাই জেনে যেতো। কারো যদি সন্তান না চাই তাহলে তাই হোক। সে অন্তত সেই ব্যক্তির সন্তানের মা কোনদিন হতে চাইবে না।

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৯১)
কলেজের লাইব্রেরীর দিকে দুই বান্ধবী হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে। হাতে পাকাঁ বকুল। লাবিবা জিজ্ঞেস করলো,
‘ এটা খেতে কেমন লাগবে?’
‘ আমি কখনো খাইনি। তুই খেয়েছিস?’
লাবিবা ক্ষুব্দ চোখে তাকালো। মুখ খুলে একটা ঝাড়ি দিবে তার আগেই সামনে থেকে নাকিব ডেকে উঠলো,
‘ মেন্দি পায়ে দিয়ে হাটিস কেন? তোদের মেন্দি পায়ে দেবার সময় অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এবার আমার বউয়ের পালা। টাকা গুলো জমিয়ে রাখ। ‘
উর্মিলা ছোট ছোট চোখে তাকালো।
‘ তোর বউয়ের মেন্দি কেনার জন্য আমরা টাকা জমাবো কেনো? বউ কি আমাদের?’
‘ এতো হিংসুটে হয়ছিস কেন? বউ চাই তো? নাহয় তোদের এক রাত্রির জন্য বউ দিলাম। কাল রাত্রি নাকি কি পালন করে উর্মিদের গ্ৰামে সেই রাত্রির জন্য বউ দিয়ে দিলাম। দেখে শুনে রাখিস। আমার জিনিসে লোভ দিস না। তোদের ফিলিংস কোনটাতে আসে আমি তো আর জানিনা। ‘
‘ এমা! ছিহ! ওয়াক থু। সামনে থেকে সর কুত্তা। ‘
‘ ভাবটা দেখো কি করে! শালা ড্রামাবাজ। মেয়ে মানুষ এতো কিপ্টা এতো আমার জানা ছিলো না। তোরা দুইটা বাদ। তোদের আমার জীবনে কোনো প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন তোদের জামাই দুইটারে। একমাত্র শালা। তাঁদের কাছে আমার অনেক আবদার। ‘
‘ লোভী কথাকার। ‘
‘ লোভ না করলে কোনো কিছুই হাসিল করতে পারবিনা। তোদের জামাই এক আঙুল উপরে আছে। বাপরে কি লোভ! এতোদিন দেখে শুনে রাখলাম। সেজন্যই তো পিউর জিনিস কপালে জুটলো। জুটলো না জোর করে নিলো। বাপরে কি পাওয়ার! ‘
‘ বাজে কথা বন্ধ কর। ‘
লাইব্রেরি থেকে মোটা মোটা তিনজনেই প্রশ্ন ব্যাংক, জব সলুশন, বিসিএস এর জন্য বই কিনলো। অর্ধেক বই বইতে হলো নাকিবকে। লাবিবা অবশ্য কয়েকটা কমিয়ে দিতে চেয়েছিলো। নাকিব দিলো কয়েকটা ঝাড়ি।
‘ পারবিনা। মেয়ে মানুষ। হাড্ডি গুড্ডি ব্যাথা করবে। এইযে তোদের বই টানতেছি প্রক্সি দিতেছি তোদের জামাইকে বলে দিবি আমার প্রতি সব সময় থ্যাংকফুল যেনো থাকে।’
‘ বকুল খাবি?’
‘ রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়া। কি বকুল খাইতে কস মুখের সামনে থেকে সরা। ‘
‘ সামনে তোর বিয়ে। তুই খাওয়া। ‘
‘ চাকরী না পাইলে বিয়ে নাই। খালা তার মেয়ে দিবোনা।’
‘ আমরা তোর খালার মেয়েকে এনে দিবো টেনশন নিস না। ‘
‘ দোয়া কর দোস্ত। তোরাই শেষ ভরসা। ‘

নতুন উদ্যমে পড়া শুরু করেছে লাবিবা। তার লক্ষ্যই এখন নিজের ক্যারিয়ার গড়া । যত সময় পাড় হয় ততো বুঝতে পারে কতটুকু গাফিলতি করেছে। হেলায় ফেলায় সময়কে নষ্ট করেছে। লাইনচ্যুত জীবন সত্যিই পথ হারায়। সেই পথের দিশারী তার ব্যক্তিগত পুরুষ এবং জম্মদাতা। সেদিন তানভীরকে বাড়িতে দেখে লাবিবা ফিরেও তাকায়নি। মনের উপর দিয়ে যা গেছে তাতে বাইরে নরমাল থাকলেও ভেতরে ভেতরের শক্ত হওয়া এতো সহজ ছিলো না। তানভীর সিড়িতে উঠতে উঠতে বললো,
‘ উপরে আসো। ‘
সোহানা লাবিবার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলো। লাবিবা চুপচাপ উঠে তানভীরের পেছনে হাঁটলো। ঘরের দরজা লক করে তানভীর ঘুরে তাকালো। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো লাবিবাকে কিছু বলবে। যা বলবে ধীরে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলার পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু লাবিবার থমথমে মুখটার দিকে তাকিয়ে তানভীর মুখ থেকে একটা কথাও বের করতে পারলো না। শত চেষ্টা করেও পারলো না। লাবিবার গালে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া অশ্রু রেখা। তানভীর পায়ে ধপ ধপ আওয়াজ তুলে লাবিবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। লাবিবার নরম আঙুলগুলো হাতের আঙুলের ভাজে তুলে নিলো। তানভীরের ভাব সাব বুঝে লাবিবা তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসলো। তানভীর কিছু বলতে পারছেনা দেখে নিজেই বললো, ‘ খান সাহেব, আই এ্যাম সরি আপনাকে তখন খুব খারাপ ভাবে অপমান করার জন্য। ‘
তানভীরের অপরাধ পূর্ণ দৃষ্টি দেখে লাবিবা আবারো বললো, ‘ এবং আমি আবারো সরি আপনার এই কর্মের জন্য কখনো ক্ষমা না করতে পারার জন্য। ‘
তানভীর লাবিবার গালে হাত রাখলো। কপালে ভালোবাসার গাঢ় স্পর্শ দিলো। বললো, ‘ ক্ষমা করো আমাকে জান। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। সব কিছুর জন্য একটা নির্দিষ্ট টাইম আছে। আমরা দুজনে একসাথে বেবী প্ল্যানিং করবো ঠিক আছে?’
‘ আপনি নিশ্চিত থাকুন। আমি শুধু এখন আমাকেই নিয়ে ভাববো। নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করবো। ঘন্টা দুই আগেও আমি বোকার মতো বেবীর জন্য কেঁদেছি। কিন্তু এখন আমার বুদ্ধি খোলে গিয়েছে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি। আমি বেবী নিবো না। ‘
‘ তুমি যে নিজের ভালোটা বুঝতে পেরেছো এতেই আমি হ্যাপি। ‘
কিন্তু সত্যিকার অর্থেই দুজনেই জানে দুজনের মনের কথা আর মুখের কথা এক নয়। তানভীরের এই আচরণে লাবিবা তানভীরকে খুব একটা দোষ দিতে পারেনা। তানভীর পুরুষ মানুষ। সন্তানের প্রয়োজনীয়তা যতক্ষন অনুভব না করবে ততোক্ষন তার মনে অনুভূতি জন্মাবে না। সন্তানের আগমনের খবর যতক্ষন না পাবে বা সন্তানকে কাছে না পাবে ততোক্ষন সেই সফট কর্ণার তার থেকে আশা করা অসম্ভব। এক্ষেত্রে ভোক্তভোগী লাবিবা নিজেই। সে চেয়েছিলো মা হতে। সে টেনশন নিয়ে গেছে। সব থেকে খারাপ লাগার বিষয় একটাই কোনো সাপোর্ট পায়নি। তানভীর দিনের পর দিন লাবিবার দুঃচিন্তা ,কষ্টের সাথী হয়ে গেছে কিন্তু তাকে বের করার চেষ্টা করেনি। যে যন্ত্রনা বয়ে চলেছে তানভীর তাকে তা থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বের করেনি। লাবিবা এটা ডিজার্ব করেনা। দিনশেষে আমরা যে মানুষগুলোর বুকে নিজেকে সপে দিই,মানষিক শান্তি খুঁজি, ভরসা করি সেই মানুষগুলো যখন চুপচাপ তামাশা দেখে তখন হাহাকারের জগতে ঢুবে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। তবে তানভীর সেই মুহূর্তে হেল্প করেছে। লাবিবাকে ফ্রাসটেশনে পড়তে দেয়নি। পাঠিয়ে দিয়েছে গ্ৰামে। বাবা মার কাছে। লাবিবা সেই মুহূর্তে অনুভব করে নিজের বাবাকে। মানুষটা প্রতিনিয়ত চিন্তা করে যাচ্ছে কিভাবে লাবিবার ভবিষ্যত সুন্দর হবে। কি করলে লাবিবা ভালো থাকবে। দায়িত্ব গুলো যেনো একটু একটু করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। লাবিবাকে নিয়ে যাচ্ছে যেখানেই যাচ্ছে। যা করছে লাবিবার হাতেই করাচ্ছে। কই আগে তো কখনো এরকমটা হয়নি।বাবার আদরের মেয়ে বুক থেকে মাথা তুলতে দেয়নি। বাইরের দুনিয়াকে যতক্ষন পাশে থেকেছে দেখতে দেয়নি। আবরণের মাঝে বড় হওয়া লাবিবা আজ বাবার সঙ্গী। লাবিবা মনোভাব পাল্টে গেলো। রোমাঞ্চিত হলো। তার বাবা তাকে বড় মনে করছে। লাবিবা বুঝতে পারলো তার দায়িত্ব অনেক। শ্বশুড়বাড়ি বাবার বাড়ি করেই তার সময় যেতে লাগলো। এসময়ে তানভীরকে খুব কমই কাছে পেলো। তানভীর যেনো ছেড়ে দিয়েছে তাকে এক মুক্ত মঞ্চে। সেখানে যেমন ইচ্ছে তেমন বাচো। তানভীর যেমন লাবিবাকে সময় দিতে পারে না লাবিবাও তেমন তানভীরের জন্য পাগলামো করে না। মিটিং মিছিল হরতাল করেই চলছে রাজনৈতিক পরিবারের জীবন। লাবিবা ভেবেছিলো তামিম হয়তো এসবের বাইরে। কিন্তু না। বাবার পাশে তানভীরের আগে তামিমকেই আগে দেখা যায়। রোজীর ডেলিভারী ডেট কাছে এসেছে। তাতে কি? তামিম যথাযথ সময় দিয়ে উঠতে পারছেনা। সোহানা খানকে বাড়িতে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। স্বামীর জন্য তিনি দিন রাত খেটে যাচ্ছেন। একপ্রকার বাধ্য হয়েই রোজীর মাকে খান বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রোজী সেদিন কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়েই ছিলো তামিমের দিকে। মা হওয়ার সময়টিতে মাকে পাশে ঠিক কতটা প্রয়োজন পড়ে তা একমাত্র মেয়েরাই জানে। দীর্ঘ কয়েকমাস পর মাকে জড়িয়ে ধরে রোজী সেদিন গলা কাঁপিয়ে কেঁদেছে। এই কান্না মোটেই কষ্টের নয়। ছিলো সুখের কান্না। তার অনাকাঙ্খিত প্রাপ্তির কান্না। মাকে সারাদিন বসে সেসব শুনায়। রোজীর মায়ের চোখ থেকে জল গড়ায়। মাথায় হাত রেখে মেয়ের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করে যায়।

টেবিলে দুই কনুই ঠেকিয়ে মাথার দুপাশের চুল খামচে ধরে অনবরত পড়ে যাচ্ছে লাবিবা। আশেপাশে কি হচ্ছে তার খেয়াল নেই। তানভীর এসেছে প্রায় মিনিট দশেক হলো। পাশে দাঁড়িয়ে তাকেই দেখে যাচ্ছে। খোলা চুল গুলো খামচে ধরে বইয়ের উপর যেভাবে ঝুঁকছে হটাৎ করে কেউ দেখলে নিশ্চিত পাগলী মনে করবে। দিন দুনিয়া হুস খেয়ে এই মেয়ে পড়তে বসেছে তানভীর বুঝতে পারলো। একে নিজ দায়িত্বে নাড়িয়ে দিতে হবে।
বললো, ‘ রাণী সাহেবা আজ আপনার রেজাল্ট বেরিয়েছে। ফাস্ট ক্লাস পেয়েছেন আপনি। ‘
লাবিবা থমকে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তানভীরকে দেখলো। বললো, ‘ ও আচ্ছা। ভালো হয়েছে। ‘
আবার পড়তে শুরু করলো। তানভীর অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘ তুমি জানতে?’
লাবিবা পড়তে পড়তেই বললো, ‘ আব্বু আশেপাশে মিষ্টি বিলিয়ে শেষ করেছে। ‘
তানভীর বিরবির করলো, ‘ বাহ ! ভেরি ফাস্ট। ‘ তবে লাবিবা করছেটা কি? তানভীর এসেছে। এখন এভাবে পড়ার মানে কি? তানভীর একটা মিষ্টি এনে লাবিবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। লাবিবা চিবুতে লাগলো। শেষ করেই বললো, ‘ এটা কি?’
‘ মুক্তাগাছার মন্ডা। ডু য়্যু লাইক ইট?’
‘ কতটুকু এনেছেন? ফ্রিজে তুলে রাখুন। একটাও খাবেন না। ‘
গ্লাস থেকে এক চুমুক পানি পান করে লাবিবা আবার পড়তে লাগলো। তানভীর মহা বিরক্ত এবার। কদিন পর এলো? ছয় দিন পর। বউ তো পাত্তাই দিচ্ছে না। এতো রাগ! সাইড থেকে নিচু হয়ে লাবিবার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। লাবিবা চেচালো, ‘ দেখছেন না পড়ছি। একদম ডিস্টার্ব করবেন না। ‘
তানভীর গলায় চুমুক দিলো। ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ রাণী সাহেবা নেভার ফরগেট আই এ্যাম য়্যুর মাস্টার। ‘
তানভীরের ভালোবাসার অত্যাচারে লাবিবা হার মানলো। কাঁধ ফিরিয়ে দু হাতে জড়িয়ে ধরলো। তানভীর চেয়ার থেকে লাবিবাকে আলতো ভাবে কোলে তুলে নিলো। কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বললো,
‘ অনেক নাকি রাগ আপনার। সারাদিন থেকে না খেয়ে আছেন। ‘
‘ আম্মু বলেছে না? মিথ্যা কথা। ‘
‘ একদম সত্যি কথা। ঠিক কাজই করেছেন। আপনি এতো ভালো রেজাল্ট করেছেন তার পরেও বাড়িতে কেনো খাবেন? আপনাকে নিয়ে এই অর্জনটাকে সেলিব্রেট করা উচিত। ‘
‘ আপনিও আমাকে আপনি বলে ডাকবেন?’
‘ মানী মানুষকে মানাতে ডাকতে হয়। আপনি যে আমার রাণী। বাট আই এ্যাম সরি রাণী এখন আপনাকে নিয়ে বাইরে যাওয়া আমার পক্ষে পসিবল না। চলুন আমরা বাড়িতেই সেলিব্রেট করি। ‘
‘ যদি না করি?’
‘ আপনি করবেন কারণ আপনার সাহেবের আবদার আপনি ফেলতেই পারেন না। ‘
‘ কোল থেকে নামান ‌। ‘
‘ বউটা হালকা হয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে। খবরদার আমার কোলবালিশের তুলো যদি কমে আমি কিন্তু মেনে নিবো না। ‘
‘ নতুন কোলবালিশ কিনে আনবো। চলবেনা?’
‘ তুমি যদি বলো তবে দৌড়বে। ‘
লাবিবা তানভীরের চুল টেনে ধরে।
‘ খুব শখ তাইনা?’
‘ কি শুরু করেছো? এতোক্ষন নিজের চুল টানলে এখন আমার চুলের দিকে নজর দিয়েছো। বিছানায় বসোতো। কদিন থেকে চুলে চিরুনি করোনা? এরকম আঠা আঠা হয়ে আছে কেনো?’
‘ ভেজা চুল বেঁধে রেখেছিলাম। ‘
‘ কথাও তো একটু একটু নাকে আসছে। ভেজা চুল বেঁধে ঠান্ডা লাগিয়েছো। ‘
তানভীর লাবিবার চুলে চিরুনি করে দেয়। হাতের মুঠোয় চুল উঠে আসে কয়েকটা। ফ্রিতে কয়েকটা বকা শুনে লাবিবা।’ খবরদার আর এইভাবে ভেজা চুল বেঁধে রাখবেনা। পড়নের গাউনটার মরা কালারটাও তানভীরের পছন্দ হয়না। আলমারি থেকে বেছে বেছে চকচকা কড়া মেজেন্টা কালার কাঞ্জিপুরাম বের করে আনে। এই সময়ে এই শাড়িটা পড়তেই বাধ্য হয় লাবিবা। তানভীরের প্যারায় সোনার সিম্পল গহনা গুলোও গায়ে তুলে। যেগুলো এবাড়িতে আসার পর খুলে রেখেছিলো লাবিবা। পরিপূর্ণ একজন বউ হয়ে তানভীরের পেছন পেছন ছাদে পা রাখে। তানভীরের হাতের মুঠোয় হাত লাবিবার। সেখানে আগে থেকেই টেবিল চেয়ার পেতে বসেছিলো ইসমাইল,সাবিনা আর ছোট কাকা। লাবিবা দেখেই তানভীরের হাত ছেড়ে দৌড় দেয়। ছোট কাকা হাসতে হাসতে হাত তুলে লাবিবার মুখ আঁজলা ভরে মাথার উপর চুমু খায়।
‘ অবশেষে ঘর থেকে বের হলো আমার আম্মা। ‘
‘ কখন এসেছো?’
‘ জামাইয়ের গাড়ি করেই তো এলাম শহর থেকে। শুনলাম রেজাল্টের টেনশনে নাকি সারাদিন মুখে কিছু পড়ে নাই আমার আম্মার। তাই তো জামাই রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার আনালো। ছাদে বসে চল একসাথে খাই আমরা। ‘
লাবিবা গিয়ে বসলো ইসমাইলের পাশে। তার পাশের চেয়ারটা তানভীরের জান্য ছেড়ে দিলো সাবিনা। খাবারের আইটেম দেখে লাবিবার ক্ষিধে বেড়ে গেলো। সাবিনা খাইয়ে দিলো লাবিবাকে। নিজেও খেলো। তানভীর আড়চোখে বার বার তাকিয়ে দেখলো লাবিবাকে। দিব্যি মায়ের হাতে খেয়ে যাচ্ছে। আর তানভীর কতদিন বউয়ের হাতে খায়না। কাটা চামচে টুংটাং শব্দ তুললো। লাবিবা বোধহয় বুঝলো তানভীরের অসুবিধা। একটু খেয়েই সে বসে রইলো। খাওয়া শেষে সবাই চলে গেলো নিচে। ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা হবে। লাবিবা কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে দিলো তার প্রায় সবগুলো ব্লাউজ ই এখন পিঠকাটা। ছাদের দরজা লাগিয়ে দিয়ে এলো। তানভীর টেবিল থেকে দূরত্বে বসে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। লাবিবা প্লেট হাতে বসলো তার উরুর উপর। তানভীরের মুখে চামচ ছাড়া হাত দিয়ে ফ্রাইড রাইস তুলে দিলো মুখে। লাবিবা জানে এছাড়া খাবে না। তানভীরের হাতজোড়ার আনাগোনা লাবিবা উন্মুক্ত কোমড় পিঠে। দৃষ্টি মায়ার ভান্ডার ঐ মুখ পানে। কপালে গোটা গোটা ঘাম। তানভীর আদর মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
‘ জান তোমার কি গরম লাগছে?’
‘ খাওয়ার পর একটু গরম লাগে। আজ বাতাস ও নেই। পাতলা একটা শাড়ি পরা উচিত ছিলো। ‘
তানভীর লাবিবার নাকের ডগা থেকে আঙুল দিয়ে ঘাম মুছে দেয়। লাবিবা হাত সরিয়ে দেয়।
‘ কি শুরু করলেন? তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করুন তো। শরীরটা ভালো লাগছে না। আমি নিচে যাবো। ‘
‘ সারাদিন না খেয়ে থাকার ফল এটা। তুমি অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো দিন দিন। একদম আমার কথা শুনো না। ‘
তানভীর লাবিবাকে কোলে নিয়েই নিচে নামলো। রাত তখন প্রায় বারোটা। লাবিবা ঘামছে দেখে শাড়িটা চেঞ্জ করে দিলো। বুকের উপর নিয়ে শুয়ে রইলো। লাবিবা ঘুমিয়ে পড়লেও নামালো না।
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা