ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৯২+৯৩

0
1080

#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো

(৯২)
তামিমের ফোনে কল এসেছে। রোজীকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়া হয়েছে। খবরটা পেয়েই ছুটলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে ফিরোজ খানকে তুলে নিলো ক্লাব থেকে। ফিরোজ খান টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তামিম শক্ত হাতে গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ঘুরাচ্ছে।
লাবিবা, তামিম, ফিরোজ পর পর এসে দাঁড়ায় হসপিটালে। রোজীর নরমাল ডেলিভারী হয়েছে। সোহানার কোলে ছোট্ট রাজকুমার। আধখোলা চোখে ঘুমুচ্ছে। ফিরোজ খান দেখেই বলে, ‘ সোহানা আমার নাতি দেখি চোখে খোলে ঘুমায়। চোর আর আমার বাড়িতে চুরি করতে পারবেনা। মালিক জেগে আছে ভেবে লেজ গুটিয়ে পালাবে। ‘
‘সোহানা রাগ দেখালো। এতোক্ষনে আসার সময় হলো। কখন ফোন দিয়েছি। ‘
‘ আরে গাড়ি তো তামিমের কাছে ছিলো। দাও আমার নাতিকে দাও। কানে আজান দেই। ‘
ফিরোজ খান কোলে নিয়ে কানে আজান দিলো। নাতিকে নিয়ে আহ্লাদ করলো। তামিম তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। আঙুলে টান পড়াতে চকিয়ে ঘাড় ঘুড়ালো। রোজী হাত ধরেছে তার। তামিম রোজীর দিকে তাকিয়ে প্রসস্ত হাসলো। বুকের উপর হাত গুটিয়ে তুলে দিয়ে শিউরে বসলো। মনে হলো রোজী কিছু বলবে। বললোনা। তামিম নিশ্চিন্ত হলো রোজী ঠিক আছে ভেবে। দাদা দাদী নানা নানীর আহ্লাদ শেষ হবার নয়। প্রথম নাতি বলে কথা। তামিম আর না পেরে লাবিবাকে বললো, ‘ আমার ছেলেকে একটু দেখাও। ‘ লাবিবা মুচকি হাসলো। এগিয়ে গিয়ে ফিরোজের কোল থেকে কোলে তুলে নিলো। সোহানা বললো, ‘আমার দাদুভাই কার কাছে গেছে হ্যা? ছোটমার কোলে গেছে তাইনা?ছোটমার কোলে।’ লাবিবা বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকালো। অবিকল তামিমের কপি। কি সুন্দর ছোট ছোট হাত পা। রোজীর মা বললো, ‘ দেখেছো ছোটমার কোলে গিয়ে কেমন টুকুর টুকুর করে তাকিয়েছে। কি দেখো নানু ভাই? ছোটমা?হ্যা?’
লাবিবার ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো। তাল কি সামলাতে পারলো? ঝটপট তামিমের হাতের উপর বাচ্চাটা রেখে ব্যালেন্স রাখলো। আনাড়ি তামিম এতো ছোট বাচ্চা প্রথম কোলে নিচ্ছে।
‘ কিভাবে কোলে নিয়েছিলে পাপা? পড়ে যাবে তো। ‘ রোজী ধরতে চাইলো কিন্তু উঠতে পারলো না। সোহানা ধরে নিয়ে সুন্দর করে গুছিয়ে তামিমের কোলে দিলো। তামিম ছেলের সাথে কি কথা বলবে ভেবে পেলো না। রোজীর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে দুজনে একসাথে ছেলের সাথে কথা বলতে লাগলো। ছেলে যে তাকিয়েছে আর চোখ বন্ধ করার নাম নেই। কিভাবে তাকিয়ে থাকে!
ওদের একসাথে ছবিও নেওয়া হলো। মা বাবা আর ছেলে। লাবিবা রোজীর ভাইয়ের ফোনে জুম করে ছবিটা দেখতে লাগলো। কি হাসিখুশি ! তাঁদের কতো সুখী দেখাচ্ছে। লাবিবা বার বার দেখলো। তার ভীষন ভালো লাগছে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় নাতি হবার আনন্দে জনমহলে পার্টিতে আরো বেশি মিষ্টি বিতরণ হলো। ছবিটা তানভীরকে পাঠিয়ে টেক্সট করলো, ‘ একজন সন্তান স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের পূর্ণতা দান করে। আপনি আমি অপূর্ণ। ‘
‘ আমার পূর্ণতা তুমি। আমার অর্ধাঙ্গীনি। ‘ রিপ্লাই আসলো। লাবিবার ইচ্ছে করলো ফোনটা এখানেই আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলতে। কিন্তু না। রাগ,জেদ, ঔদ্ধত্য কখনো সমাধান খুঁজে আনে না। লাবিবা মনে মনে বললো, ‘ আল্লাহ আমাকে সহ্যশক্তি দাও। ধৈর্য্য দান করো। ‘ রিপ্লাই বক্সে জানতে চাইলো,
‘ আব্বু আপনাকে বাঁধা দিয়েছে তাইনা?’
‘ আব্বুর কথা রাখো। তুমি নিজে বুঝে নাও তোমার অবস্থান। সময় তোমার অনুকূলে নাকি প্রতিকূলে। আমি এবং আব্বু তোমার ভালো চাই। ‘
‘ আমি ভালো নেই। ‘
‘ বাচ্চা চাইতো? দেখো আমাদের বাড়িতে নতুন অতিথি এসছে। ছোট মা হয়েছো তুমি। আরো কোনো কষ্ট আছে?’

রাগে গজগজ করতে করতে ডাটা অফ করে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলো। যতবার ই এই কথা তুলে ততোবার ই এভাবে মেকাপ দেয়।

বাচ্চার নাম নিয়ে বাঁধলো বিপত্তি। একেকজন একেক নাম রাখে। রোজীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। বাচ্চার ছয়দিন চলছে। আকিকা দেওয়া হবে বেশ বড় বড় ছাগল দিয়ে। তানভীর আকিকার দিন ভাতিজাকে কোলে তুললো। পিতৃসুলভ একটা অনুভুতি তাকে ঘিরে ধরলো। পাপা পাপা বলে মুখের ফেনা তুলে ফেললো। যাকে ডাকে সে শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। একদম শান্ত শিষ্ট। খান বাড়ির প্রথম সন্তান। আকিকায় নাম রাখা হলো ফারুখ ইকবাল তাফিফ খান। ফিরোজ খানের নাতি তামিম খানের পুত্র তানভীর খানের ভাইপো তাফিফ খান। তাফিফের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হলো। চুল অনুযায়ী রুপাও দেওয়া হলো। বাড়িতে সবাই ব্যস্ত। লাবিবা একটু পর পর দৌড়ে আসছে আর ডাকছে,
‘ আমার পাপা কই? পাপা।’
তাফিফ চোখ ঘুরিয়ে লাবিবার দিকে তাকায়। ছোট মুখে আদর দিয়ে আবার কাজে যায়। রোজীকে কিছুই করতে দেওয়া হয়না। সে অনেকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শরীর দুর্বল।

ড্রয়িংরুমে পুরুষদের আড্ডা বসেছে। ফিরোজ খান দুই বেয়াইকে বললো, ‘ বেয়াইয়ের এলাকার সব ভোট আমিই পাবো কি বলেন বেয়াই?’
রোজীর বাবা হে হে করে উঠলো। ‘ তাইতো বেয়াইসাব। আমি থাকতে আমার এলাকার একটা ভোট ও বাইরে যেতে দিবো না। ‘
ইসমাইল এতে বেশ বিরক্ত হলো। এখন কি সে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? ভোট অন্যকাউকে দিলে পাকড়াও করবে? আরেক বেয়াই তো বেশ লাফালাফি করছে। নমিনেশন দিবে আগামীকাল। সেজন্যই আরো বেশি উৎসুক সবাই। ইসমাইল বললো,
‘ বেয়াই নমিনেশন আগে দিক। আমরা তারপর কাজ শুরু করবো। ‘
‘ পার্টি থেকে নমিনেশন আমাকেই দেওয়া হবে বেয়াই সাব। আমার ধারে কাছে কেউ নাই। ‘
ইসমাইল এর এসবে একদমি মন নেই।সে তো আছে আত্বীয়ের খাতিরে। যতটুকু করা প্রয়োজন করবে। বাড়িতে এতো বড় অনুষ্টান তার মধ্যে জামাই তার সামনে দিয়ে ঘট ঘট করে হেঁটে চলে গেলো। ফিরোজ খান দুইটা বেটা বানিয়েছে বটে। কাজের বেটা একদম! রক্ত গরম। কর্মট বটে। প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন। চাকরীর পাশাপাশি পুরো দলটাকে লীড করছে। নিঃসন্দেহে ইসমাইল এমন ছেলে খুঁজে পাবেনা। কিন্তু যখন উঠে মেয়ের জীবনের প্রশ্ন তখন মনের মধ্যে একটা ভয় অনবরত কাজ করবেই।

নমিনেশন ফিরোজ খানই পায়। এক এবং দুই নং আসনে শহর গ্ৰামের কোনায় কোনায় চলে হৈ হুল্লোড়। গাড়িতে গাড়িতে পার্টির লোক মিছিল করে বেড়ায়। তানভীর ভীষণ ক্লান্ত। তার ক্লান্তি ঘুচাতে পারে একমাত্রই লাবিবা। বাসায় এসে অনেক ডেকেও পেলো না। নিজেই খুঁজতে বেরোলো। তাকে পাওয়া গেলো নতুন অতিথির ঘরে। তাফিফ রোজীর কোলে। হাত পা নাড়িয়ে খেলছে। লাবিবা গায়ের জামা পড়িয়ে দিচ্ছে। তানভীর গিয়ে হাত পাতলো। ‘ আমার পাপা কি করে?’ তাফিফ ঘাড় উল্টে তানভীরকে দেখে। তানভীর কোলে তুলে আদরের আদরে ভরিয়ে দেয়। নামিয়ে দিয়ে লাবিবাকে বলে,
‘ আসোতো।‌’
লাবিবা বলে, ‘ ভাইয়া আসুক তারপর যাই। আপনি যান। আপু একা তো। ‘
তানভীর ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। লাবিবা তবুও উঠলো না। তানভীর বাধ্য হয়ে চলে গেলো। অর্ধ রাস্তা থেকে আবার ব্যাক করলো। পটাপট শুয়ে পড়লো লাবিবার কোলে। রোজী সাথে সাথে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। মুখ টিপে হাসলো। ভাবলো লাবিবাকে চলে যেতে বলবে। তানভীর লাবিবার হাত মাথার উপর দিয়ে বলে,
‘ চুল গুলো টেনে দাওতো। ‘ লাবিবা চুলে আঙুল চালনা করলো।
‘ এখানে শুয়েছেন কেনো? রুমে যান। এখানে আপু আছে তো। তাফিফ কোথায় শুবে? ‘
তানভীরের হেলদোল নেই। দুহাতে কোমড় জড়িয়ে উদরে মুখ ঢুবিয়ে দিলো। ঘুমু ঘুমু ভয়েজে বললো,
‘ জান। ভাইয়া এলে ডেকে দিও। ‘

তামিম রুমে এসে অভাবনীয় এক দৃশ্যের সম্মুখীন হলো। তার ছেলে ঘুমিয়ে আছে মায়ের কোলে। ছেলের চাচ্চু ঘুমিয়ে আছে ছোটমার কোলে। তামিম এসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষন এই দৃশ্যই দেখে গেলো। তামিম ও ভীষণ ক্লান্ত। ঘুমন্ত জাতির কাউকেই ডাকতে ইচ্ছে হলো না। তানভীর আর তাফিফের মাঝে ফাঁকা জায়গা। তামিম সেখানে পিঠ ছোয়ালো। ঘুমন্ত ছেলের হাতে চুমু দিয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।

ভোট প্রচারণায় ব্যস্ত সবাই। লাবিবা ব্যস্ত পড়া আর তাফিফকে নিয়ে। তাফিফ সকলের চোখের মনি। যেই যখনি বাইরে থেকে আসছে তাফিফকে না দেখে রেস্ট নিবে না। দাদীর কলিজা তাফিফ। যতটুকু সময় পান খাওনা নাওয়া বাদ দিয়ে সোহানা নাতিকেই কোলে নিয়ে থাকেন। তাফিফকে খাওয়ানো ছাড়া রোজীর কোনো কাজ নেই। সকলের আহ্লাদ দেখতেই সে ব্যস্ত। আর স্বামী ঘরে ফেরার পরে সারাদিন কি কি হলো সেগুলোই শুনে। ছেলেকে দেখার জন্য সবাই আছে। সে আছে তামিমকে সঙ্গ দেবার জন্য।

ভোটের আগের রাতে বাড়িতে ফিরলোনা কেউ। লাবিবা কয়েকবার তানভীরের ফোনে কল দিলো। তানভীর দেখলো কিন্তু তুললো না। অনেক ক্ষন পর দল থেকে একটু সাইডে চলে এলো। লাবিবাকে কল দিলো। ক্লান্তি মাখা গলায় ডাকলো, ‘ আমার রাণী সাহেবা। ‘
‘ কোথায় আপনি?’
‘ আপনার গ্ৰামের দুই গ্ৰাম পরে। ‘
‘ এতোদূর! সাথে কে আছে?’
‘ আছে। ছেলেবেলেরা আছে সাথে। ঘুমাওনা কেনো?গত রাতেও জেগেছো‌। ‘
‘ আপনার জন্য অপেক্ষা করছিতো। ‘
‘ আমি ফিরবোনা। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। ‘
‘ আসবেনা তো। একটু পর পর আমাকে কল দিবেন। কোথায় আছেন জানাবেন। ‘
তানভীর মৃদু হাসলো। মুখে পান। চিবুতে চিবুতে ঠোঁট সহ জিহবা লাল হয়ে গেছে। বা পাশে পিক ফেললো। মুখের পান টুকু পুরোটাই ফেললো। অন্য হাতে ফোন ট্রান্সফার করলো। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। বললো,
‘ জান জেগে থাকো। দোয়া করো। জয় আসুক বাড়ি ফিরে তোমায় নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবো। ‘

এই ফোনের পর আর কোনো ফোন এলো না। শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে এলো। এই আটটার দিকে সাবিনার ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। সাবিনা মেয়েকে তাড়া দিলো, ‘ লাবিমা উঠ। তাড়াতাড়ি উঠ। ‘
‘ আম্মু। একটু ঘুমাতে দেও। মাথা ব্যাথা করছে। ‘
‘ উঠ রে মা। মাথা ব্যাথা সেরে যাবে। একটা ট্যাবলেট খেলেই। তাড়াতাড়ি উঠ। ‘
লাবিবা উঠে বসে। চোখ কচলিয়ে তাকানোর চেষ্টা করে। সাবিনা একা দাঁড়িয়ে না। তার পাশে রোজীও দাঁড়িয়ে। রোজীর কোলে তাফিফ। আঙুল মুখে দিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। রোজী তাড়া দিলো,
‘ লাব্বু উঠ। চল একটু বাইরে যাবো। ‘
লাবিবা ঘুম ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।
‘ কোথায় যাবে? আজ ভোটের দিন। তোমার দেবর বলেছে বের না হতে। ‘
‘ ভাইয়াই ফোন করেছে তোকে নিয়ে বেরোতে বলেছে। ‘
‘ কি বলো? ফোন দিই তো। ‘
লাবিবা ফোন হাতে নিলো। তানভীরের নাম্বারে কল কল দিলো। দুইবার রিং হবার পর কল ধরলো ইসমাইল।
‘ আব্বু তোমার হাতে ওর ফোন?’
‘ হুম। তোমার আম্মুর সাথে আসোতো। ‘
‘ আব্বু কি হয়েছে? তোমার গলা এমন শোনাচ্ছে কেনো? ‘
‘ অনেক ক্লান্ত তাই। আয় রে মা। ‘
‘ খেয়েছো আব্বু? কিছু নিয়ে যাবো বাড়ি থেকে?’
‘ না। এমনি আসো। ‘
লাবিবা জামাটা পাল্টে নিলো। সাবিনার তাড়াতে মাথায় ওড়নাটা পেঁচিয়েই পার্স হাতে দৌড়ে গাড়িতে এসে উঠে বসলো। কোলে টেনে নিলো তাফিফকে। পুরো রাস্তায় তাফিফের সাথে খেলা করে কাটালো। গাড়ি যখন হসপিটালে ঢুকে তখন লাবিবার টনক নড়লো। লাবিবা সাবিনার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। সাবিনার চিন্তাযুক্ত মুখটা শুকিয়ে একটুখানি হয়ে গেছে। এসির হাওয়াতেও কপালে ঘাম জমেছে। লাবিবার চট করে মাথায় এলো, ‘ আব্বু। ‘ সাবিনা চকিতে তাকালো। বললো, ‘ তোমার আব্বু ঠিক আছে। ‘ লাবিবা শুনেও বিশ্বাস করলো না। গাড়ি থেকে নেমেই দৌড় লাগালো। এতোক্ষতে তার কাছে সব পরিষ্কার। ইসমাইলের গলা শুনেই বোঝা উচিত ছিলো। লাবিবা হসপিটালে ঢুকে ইমার্জেন্সির দিকে ছুটলো। আব্বু আব্বু বলে চিৎকার করতে লাগলো। হসপিটালের গলিতে জনে জনে দাঁড়িয়ে আছে পার্টির লোক। লাবিবা মনে মনে বলছে
‘ আল্লাহ আমার আব্বুর যেনো কিছু না হয়। আমার আব্বু যেনো ঠিক থাকে। ‘
ফাস্ট কামড়া পেরোতেই লাবিবাকে হাত ধরে নিলো ইসমাইল। ইসমাইলের সাদা পাঞ্জাবি পুরোটাই তাজা রক্ত লেগে রয়েছে। ইসমাইল লাবিবাকে চেপে ধরলো,
‘ এইতো আব্বু আমি আছি। ‘
‘ এতো রক্ত কোথা থেকে এলো?’
ভেতর থেকে তামিম চিৎকার করছে,
‘ ঘন্টা পার হলো আমার ভাইয়ের এখনো ট্রিটমেন্ট শুরু হয়নি কেনো?’
একজন ইসমাইলকে, ‘ আঙ্কেল ভাবীকে এখানে কে ডাকলো? ভাই তো দেখলেই রেগে যাবে। ‘
লাবিবার মাথা ব্যাথা চড়া হলো। ইসমাইলকে ছেড়ে ভেতরে দৌড় দিলো। ইসমাইল বাঁধা দিলো।
‘ ভেতরে যেও না। রক্তে ফোবিয়া আছে তোমার। ‘
লাবিবা ইসমাইলের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। না পেরে ধাক্কা দিয়ে ছুটে গেলো। তামিম লাবিবাকে টেনে ধরলো।
‘ ঐদিকে যেও না। ডক্টর আছে। এখানে দাঁড়াও। ‘
লাবিবা চিৎকার দিলো, ‘ খান সাহেব!’
অসুরের শক্তি যেনো শরীরে ভর করেছে। তামিম কিছুতেই আটকে রাখতে পারলো না। অন্য কেউ লাবিবাকে ধরার সাহসও পেলো না। তানভীর খানের বউয়ের গায়ে স্পর্শ করলে তার হাত আস্ত থাকবেনা। দরজায় দাঁড়িয়ে রক্তাক্ত শরীরটার দিকে তাকিয়ে লাবিবা শরীরটা ছেড়ে দিলো।

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৯৩)
বিরোধী পার্টি আগে থেকেই ওৎ পেতে রয়েছিলো। সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেনি। তানভীর যখন লাবিবার সাথে কথা বলার জন্য দলচ্যুত হয় সেখানে গ্ৰামের শুভাকাঙ্ক্ষী নামে কিছু লোক দলে যোগ হয়। অপরিচিত মানুষ গুলো টাকে টাকে থেকে কোপ দিয়েছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময়। সকাল সাতটা থেকে ভোট দেওয়া শুরু হয়েছে। তামিম ফিরোজ খান পার্টি অফিসেই আছে। তানভীর যাওয়ার পথে তাকে এট্যাক করা হয়। কোনভাবে জীবন নিয়ে দলের লোকের সাহায্যে বেঁচে ফিরেছে। ইসমাইল তানভীরকে দেখা মাত্রই আগলে নিয়েছে। তানভীরের রক্তে ভিজে উঠেছে সাদা পাঞ্জাবি। আহত তানভীর তখন ও শরীরে কতো তেজ! কই মাছের প্রাণ! যেখানে ইসমাইল তানভীরকে সাহস যোগাবে আশা দেখাবে সেখানে তানভীরই ইসমাইলকে সাহস যুগীয়েছে। সামান্য সাপোর্টেই হসপিটালে এসে পৌঁছেছে। ফিরোজ খান খবর পেয়ে পার্টি অফিস থেকেই খোঁজ নিচ্ছে। সোহানা খান ফিরোজ খানের কথা শোনেনি। ছেলের কাছে আসার জন্য বার বার পার্টি অফিসের বাইরে চলে এসেছে। তামিম তাঁদের আসতে দেয়নি। সে নিজেই সিকিউরিটি নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। রোজী জানতেই জানিয়েছে সাবিনাকে। সাবিনা দূর্বল হৃদয়ের মানুষ। সে লাবিবার জন্য হায় হায় করতে বসেছে। রোজী আর রোজীর মা তাকে সামলিয়েছে। সাবিনার মনে হয়েছে লাবিবাকে নিয়ে যাওয়া উচিত। ইসমাইলের সাথে তার বাক বিতন্ড ও শুরু হয়েছে । ইসমাইল না করার সত্বেও শোনেনি। রোজী যেভাবে বলেছে সে মতে তানভীরের জীবন বিপন্ন অবস্থা। শেষ দেখা কি মেয়েটা দেখতে পারবেনা? লাবিবা এখানে আসছে ইসমাইল বুঝতে পেরেছে। না করেও লাভ নেই। বাকিটা তাকেই সামলাতে হবে।

আহত অবস্থাতেও তানভীর দলের লোকদের বলছে,
‘ ভোটকেন্দ্রে আমাদের লোকদের সতর্ক কর। শালা একটা সিল ও যদি না মেরে নিতে পারে। ‘
‘ ভাই টেনশন করবেন না। আমরা থাকতে কোনো গন্ডগোল করার সাহস পাবে না। ‘
‘ ভেবেছে তানভীর খানকে ঘায়েল করে ফিরোজ খানের মাইন্ড ডাইভার্ট করে জিতে যাবে। জেতা এতো সহজ নাকি ?’
কন্ঠে তেজ নেই। নিভু নিভু আওয়াজ। শরীরে অসীম যন্ত্রনা। এই অবস্থায় লাবিবাকে মোটেই কামনা করেনি। চোখের সামনে সেন্সলেস হতে দেখেছে লাবিবাকে। তার শরীরেও জোর নেই।

লাবিবার যখন সেন্স ফিরে তখন সে খান বাড়িতে। ইসমাইল সাবিনাকে বকা ঝকা করে মেয়েকে সহ পাঠিয়ে দিয়েছে। যতটা সিরিয়াস সাবিনা ভেবেছিলো ততোটাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি তানভীর। তবে যতটুকু হয়েছে ততোটুকুও বেশি বয় একটু কমও বলা যায়না। লাবিবা সেন্স ফেরার পর নিজেকে নিজের রুমে পেলো। তার শিয়রেই বসে আছে সাবিনা । লাবিবা উঠে বসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। তানভীরের রক্তাক্ত সেই চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই পাগলামি করতে লাগলো। সাবিনা এবং রোজীর মা মিলেও তাকে সামলাতে পারছে না। তার আত্মচিৎকার বাড়ির বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। গেইটে দাঁড়ানো কেয়ার টেকার সহ বাড়ির প্রত্যেকটা কাজের লোক শুনতে পায়। শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো বাড়িতে।

তানভীরের পায়ে পিঠে ব্যান্ডেজ। মাথায় আঘাত লাগেনি বলে এ যাত্রায় বেঁচে গেছে ‌। জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষন আগে। একবার তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। সোহানা ছেলের শিউরে নরম সুরে ডাকে ‘ তানভীর? আমার বাবা। ‘
তানভীরের সাড়া নেই। ফিরোজ খান দশ মিনিট পর পর ফোন করছে। একদিকে কেন্দ্রে ভোট চলছে আরেকদিকে তার প্রাণ হসপিটালে পড়ে আছে। শেষ বয়সে এসে এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। চোখ বন্ধ করে বার বার দোয়া করে ক্ষমতাচ্যুত সে যেনো কোনভাবেই না হয়। কাপুরুষের মতো তার নিষ্পাপ ছেলেকে আঘাত করেছে এর বিচার সে করে তারপর মরবে। বয়স্ক শরীরে রাজনৈতিক রক্ত টলমল করে ফোঁটে। হানাহানি মারামারি করুক ফিরোজ খান লড়বে। তার অস্তিত্বে হাত দিলে আগুন ধরিয়ে দিবে। সোহানাকে ফোন দিলো,
‘ জ্ঞান ফিরেছে?’
‘ ফিরেছে। আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। ‘
‘ ওকে দেখে রাখো। আমার ছেলে। ‘
তামিম ফোনটা কান থেকে নিয়ে নিলো।
‘ হ্যালো পাপা। ভেঙে পড়োনা। ট্রিটমেন্ট করলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি মাদারগঞ্জের দিকে যাচ্ছি। ‘
‘ হুম। ভোট শেষ হতে ছয়টা বাজতে পারে। সিকিউরিটি সাথে রেখো। ‘
‘ হুম। ঠিক আছে। ‘

রাত আটটার মধ্যে প্রত্যেকটা ভোট কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ হলো। দুই আসনে পাঁচশত আটাশি ভোটে ফিরোজ খান জয় লাভ করেছে। চারিদিকে বিজয় উল্লাস শুরু হয়েছে। কর্মীদের মাঝে মিষ্টি , খিচুড়ি বিতরণ করা হচ্ছে। এতো বড় খুশির মুহুর্তে হাসি নেই খান বাড়ির মানুষদের মধ্যে। খান বাড়ির ছোট ছেলে আহত অবস্থায় হাসপাতালে। রাত বারোটায় ফিরোজ খান হসপিটালে পা রাখে। মাঝরাতে তানভীর চোখ খুললে তাকে নিজ মুখে খুশির খবরটা দেয়। সকাল বেলা ফিরোজ খান সোহানা বাড়ি ফিরে দেখে কোন কিছুই ঠিক নেই বাড়িতে। লাবিবা ঝড় বইয়ে দিয়েছে তাকে আটকে রাখা হয়েছে জন্যে। সোহানা বলে,
‘ চোখ মুখে পানি দিয়ে আসো। আমি দিয়ে আসছি তোমাকে হসপিটালে। ‘
লাবিবা ওয়াশরুমে চলে যায়। সাবিনা জিজ্ঞেস করে,
‘ কে আছে এখন তানভীরের সাথে? ‘
‘ বেয়াই আর নিতু আছে। বেইনি খাবারের ব্যবস্থা
করেন। সবাই ব্রেকফাস্ট করবে। ‘
সাবিনা নিজ দায়িত্বে জবেদার সাথে পরোটা ডিম ব্রেড টোস্ট তৈরী করলো। টেবিলে খাবার লাগালো। লাবিবা এসে দাঁড়িয়ে রইলো চেয়ারের কোণা ধরে। ফিরোজ খান বললো, ‘ বসো মা। কিছু মুখে দেও। ‘
লাবিবা হা না কিছুই বললো না। রোজী চেয়ার টেনে লাবিবাকে বসিয়ে দিলো। সাবিনা দুটো পাউরুটি মুখে খায়িয়ে দিলো। লাবিবার পেটে সয়লো না। গল গল করে বমি করে দিলো। গ্যাসের ট্যাবলেট খায়িয়ে জোর করে অর্ধেক পরোটা খাইয়ে দিলো। তামিম বললো,
‘ আমি দিয়ে আসছি ছোটবউকে। মম, পাপা রেস্ট করো।’
‘ বেয়াইকে বাড়িতে নিয়ে আসিস। রেস্টের প্রয়োজন। ছোটবউ আর নিতু তানভীরের কাছে থাকবে। ‘
‘ ওকে। ‘

তামিম রোজীর মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিয়ে তাফিফকে আদর করলো। গাড়ির চাবি হাতে বেরিয়ে গেলো।

হসপিটালে কেবিন নাম্বার জানার পর লাবিবা আচমকায় দৌড় দিলো। তামিম আটকালোনা। সাবধান করলো।
‘ আস্তে যাও। পড়ে যাবে। ‘
কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ডক্টরের সাথে কথা বলছে ইসমাইল। ঔষধের লিস্ট নিয়ে নিচতলায় চলে গেলো। কেবিনে ব্যস্ত পায়ে ঢুকতেই নার্স লাবিবাকে বাঁধা দিলো। ‘ আরে এভাবে ঢুকে যাচ্ছেন কেনো? পেশেন্ট আছে ভেতরে।’ ডক্টর ও ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। লাবিবা নার্সের বাধা দেওয়াতে বিরক্তি প্রকাশ করলো, ‘ যেতে দিন। পেশেন্ট আমার। ওকে? ‘
লাবিবার গলা শুনে নিতু বললো, ‘ লাবিবা মনে হয় এসেছে। ‘
তানভীর চোখ বুজে ছিলো। লাবিবার নাম শুনে দুর্বল কন্ঠে গলা বাড়ালো, ‘ ভেতরে আসতে দিন ওকে। ‘
লাবিবা গিয়ে একপাশে দাঁড়ালো। হাত পা তার রিতীমতো কাঁপছে। তানভীর উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পিঠে তার ব্যান্ডেজ। ঘাড় ঘুরিয়ে লাবিবাকেই দেখছে। নিতু ইসলাম লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ডক্টর চেকাপ করে চলে গেলে নিতু ইসলাম ও ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেলো। লাবিবা কে তানভীরের সাথে একা ছেড়ে দিলো। বাইরে এসে তামিমকে বললো, ‘ ওরা একা থাকুক। আমি ক্যান্টিনে যাচ্ছি ব্রেকফাস্ট করতে। ইসমাইল বেয়াই গেছে মেডিসিন নিয়ে আসতে। ‘
তামিম মাথা ঝুকালো। ইসমাইল ফিরে এলে বললো,
‘ আঙ্কেল মেডিসিন আমার কাছে দিন। আমি রেখে আসছি। আপনি বাসায় চলুন। আপনার রেস্ট দরকার।’
‘ আমি চলে গেলে এখানে কে থাকবে? ‘
‘ খালামনি আছে। লাবিবাও এসেছে। ‘
‘ ওকে কেনো এনেছো? কান্নাকাটি করবে। ‘
‘ করবেনা। চুপ আছে। ‘
তামিম দরজা একটু হালকা খোলে লাবিবাকে বললো,
‘ প্যাকেটটা নিয়ে যাও। আর এখানেই থেকো। প্রয়োজনে খালামনিকে ফোন দিও। সাত তলায় আছে। ‘
‘ আচ্ছা। আব্বু বাসায় যাও। ‘
‘ সাবধানে থেকো। ‘
লাবিবা মাথা দুলালো। দরজা টেনে টেবিলে প্যাকেট রাখলো। তানভীর বললো, ‘ কোথায় ছিলে? রাতে পেলাম না কেনো?’
‘ আপনার কাছে আসতেই দিলো না তো। ‘
খালামনিকে একটা কল দাও তো।
‘ এখনি?’
‘ হুম। ‘
লাবিবা কল ধরিয়ে দিলো। তানভীর নিতুকে বললো,
‘ মনি কাউকে দিয়ে লাবিবার খাবার পাঠিয়ে দাও তো। তুমি বাসায় চলে যাও। ফ্রেস টেস হয়ে দুপুরে এসো। ‘
লাবিবা চেয়ার টেনে সুবোধ বালিকার মতো বসলো। কিছুক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপনার পিঠে লেগেছে? ব্যাথা আছে এখনো?’
‘ তো ব্যাথা থাকবেনা তো আরাম লাগবে?’
তানভীরের মেজাজ চটে আছে। লাবিবা আর ঘাটালো না। হয়তো জ্ঞান ফেরার পর পায়নি সেজন্য। ক্যান্টিন থেকে একটা ছেলে এসে খাবার দিয়ে গেলো। সাদা ভাত উইথ মুরগীর মাংস। তানভীর বললো, ‘ শেষ করো। ‘
‘ বমি করেছি। পারবোনা। ‘
‘ লেবু চিপে ভাতের সাথে মুখে দাও। ‘
লাবিবা টুকে টুকে ঘন্টা লাগিয়ে ঐটুকু খাবার খেলো। এক লিটারের বোতলের পানি শেষ করলো। পানি দিয়েই গিলেছে ভাতগুলো। তানভীর ইশারা করে বললো, ‘ পাশে শুয়ে পড়ো। ‘ লাবিবা ওড়না গায়ের উপর ছড়িয়ে দিয়ে তানভীরের পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লো। তানভীর নড়াচড়া করতে পারেনা। কিছুতেই সুবিধা করতে পারলোনা। ঘাড়টা এদিক সেদিক করে ব্যাথা হয়ে গেলো। বললো,
‘ হাতটা আমার সামনে নিয়ে আসোতো। ‘ লাবিবা হাত দিতেই তানভীর তালুতে চুমু খেলো। এতোক্ষন যাবৎ শক্ত লাবিবা এখন মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। তানভীর মৃদু হাসলো। আদুরে গলায় বলল, ‘ রাণী সাহেবা, জয় এসেছে। এবার একসাথে ঘুমাই চলো। ‘

মাস দুয়েক লাগিয়ে তানভীর প্রায় সুস্থ। লাবিবাকে অন্য কোথাও এডমিশন নিতে দেয়নি। তার কলেজেই মাস্টার্সে ভর্তি করিয়েছে। লাবিবার সেবায় তানভীর অপেক্ষা কৃত তাড়াতাড়িই কাজে ব্যাক করতে পেরেছে। শরীর এখনো দুর্বল। সবল হয়ে যাবে ধীরে ধীরে। ফিরোজ খান ছাড় দেয়নি তার অস্তিত্বে আঘাতকারীকে। মামলা দিয়ে বিরোধী পার্টির নেতাকে আদা জল খাইয়ে ছাড়ছে। ভদ্র সেজে পাওয়ার ব্যবহারেও থেমে থাকেনি। উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তবেই ক্ষান্ত হবে। এরইমধ্যে তামিম বললো ছেলের ছয়মাসের জম্মদিন আর তাদের দুই বছরের এনিভার্সারি একসাথেই করবে। তানভীর খুব আবাক হলো। সময় কতো দ্রুত যায়। লাবিবাকে বললো,
‘ তোমার বয়স তাহলে তিন বছর হতে চললো?’
‘ মানে?’
‘ মানে সেদিনই তো আমার বউ হলে। নরম নরম হাত। তুলতুলে গাল। বড় বড় চোখ। কোমল পা। ‘
‘ কি বলছেন এসব? এসব তো বাচ্চার বিবরণ। ‘
‘ আমার কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। আমার বউকে তো নতুন নতুন লাগে সব সময়। মনে হয় তিনমাস হলো বউ পেলাম। এরি মধ্যে তিন বছর হতে চললো?’
লাবিবা এবার ব্যপারটা বুঝতে পারলো। শ্বাস নিলো। বললো, ‘ খান সাহেব। তিন বছর হতে আরো তিনমাস বাকি আছে। হয়নি এখনো। এর মধ্যে নয় মাস আপনি আমাকে কাঁদিয়েছেন। সেটাও ভুলবোনা কখনো। ‘
‘ সেসব ছাড়ো। মুদ্দা কথা কি জানো? এই তিনবছরে আমার আদর পেয়ে তুমি কিন্তু তিনগুন বেশী সুন্দর হয়ে গেছো। ‘
লাবিবা সাথে সাথে শাড়ির আঁচলে ঘোমটা টেনে নিজেকে ঢেকে নিলো। তানভীর মুখে বিরক্তির আওয়াজ করলো।
‘ ইসস! দেখতে দাও না। ঘোমটা টানলে কেনো?’
লাবিবা শুনলে তো। খান সাহেব স্থান কাল পাত্র ভুলার মানুষ। সেতো নয়। আউট হাউজের সামনে বসে কাজ করছে। মানুষের আড়ালে নয়। রোদে নীল অপরাজিতা শুকাতে দিয়েছে। জবেদা এসে দেখে মুখে হাত রাখলো। অবাক হবার এক্সপ্রেশন দিলো। ‘ ছোট বউ কতগুলান নীল ফুল ছিলো। শুকিয়ে এই একটুখানি হয়ে গেলো। কি করবেন এগুলো?’
‘ গুড়ো করে চা বানাবো। ‘
‘ এই চা খেলে হইবো?’
লাবিবা তানভীরের দিকে ঘোমটা তুলে একবার তাকালো।
‘ তোমার ছোট ভাইজানের মস্তিষ্ক দিন দিন ঢাল হচ্ছে। কার্যকলাপ বৃদ্ধি হইবো। ‘

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা