ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৯৪+৯৫

0
1112

#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো

(৯৪)‌
বিসিএসে অংশগ্রহণ করেছিলো লাবিবা, উর্মিলা, নাকিব তিন জনই। প্রিলিতে একমাত্র নাকিব টিকেছে। লাবিবা উর্মিলা কেউ টিকেনি। তানভীর কনগ্ৰাচুলেট করেছে নাকিবকে। নাকিবের দুই বছরের মধ্যে সরকারী চাকরী পেতেই হবে। খালার মেয়েকে পাওয়ার এই একটাই শর্ত। সরকারি চাকুরীজীবী জামাই লাগবে। নাকিব দিন রাত এক করে পড়াশোনার পেছনে লেগেছে। নাকিব পড়তে পড়তেই কি মনে করে চেচালো। ‘ খালার মেয়ে। ঐ খালার মেয়ে। ‘
তার খালাও সমান তালে চেঁচালো, ‘ আমার মেয়েকে ডাকিস কেনো? ডাকবিনা একদম বলে দিলাম। ‘
নাকিব চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে খালার বাসায় ঢুকলো। পাশাপাশি বাসা হওয়ায় এই ফেলিসিটি পাওয়া গেছে। যখন তখন ঢুকে পড়া যায়। ঘরে ঢুকে দেখলো তার প্রিয়তমা ফোনে ব্যস্ত। নাকিব ডাকলে বিরক্তি প্রকাশ করলো। ‘ দেখছো না ফোনে কথা বলছি? যাওতো। ‘
নাকিব সাথে সাথে বেরিয়ে এলো। যার জন্য দিনরাত এক করে দিচ্ছে সে আছে অন্য ডালে ঘুরতে। টুকটাক কথা নাকিবের কানেও আসে। আজকাল সে পড়তে বসেও থেমে থেমে যায়। মন খারাপ হলে কিছুই করতে ভালো লাগে না।

লাবিবার বাসায় তাফিফকে নিয়ে খেলছে নাকিব। কি হাসি খুশি বাচ্চা! মন খারাপ টা একদম দূরে সরে গেছে তাফিফকে পেয়ে ‌। লাবিবাকে বলে, ‘ তুই কেনো বাচ্চা নিচ্ছিস না? মামা হবো তো নাকি? শালার আপদে ভরা জীবন আর কতই একা টানবো? ভাগিনা দে। মামা ভাগিনা যেখানে আপদ নাই সেখানে। ‘
লাবিবার চোখে মুখে আঁধার নেমে আসে। নাকিবকেই ঝাড়ি দেয়।
‘ পড়াশোনা করছি দেখছিস না? ঐসব জোট ঝামেলার কথা মুখেও আনবি না। ‘
‘ আরেব্বাস! ভুতের মুখে রাম রাম। কয়েকমাস আগেও তো মরে যাচ্ছিলি বাচ্চা বাচ্চা করে। এখন আবার কি বলিস এই গুলা?’
লাবিবা উত্তর দিলো না। তাফিফকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তামিম এলো। তাফিফকে আদর দিয়ে নাকিবকে বললো, ‘ সামনে বাড়িতে অনুষ্টান আছে। তোমার ভাতিজার হাফ ইয়ার বার্থডে। নাকিব আঙ্কেল আন্টি ভাই বোন সবাইকে নিয়ে আসবে। ‘
নাকিব হাসলো শুধু। তামিম চলে গেলো হসপিটালে।
যখনি মন খারাপ করে লাবিবা নয়তো উর্মিলার বাড়িতে গিয়ে নাকিব বসে থাকে। আগের মতো ক্লাস হয়না, আড্ডা হয়না কিন্তু এই দুইজন জানের জিগারের সাথে খুনশুটি না করলে তার মন ভালো থাকে না। এদের হাজব্যান্ড ও হয়েছে মুক্তমনের। নাকিবকে নিজের শালা থেকে কম কিছু ভাবেনা। যত প্রব্লেমই থাক বললেই সমাধান করে দেয়। নাকিব তানভীরের কানে কথাটা তুললো, ‘ স্যার আমার প্রিয়তমা অন্য ডালে পা বাড়িয়েছে। আর আমি তাকে পাওয়ার জন্য দিন রাত এক করে ভালো চাকরী জোটানোর পথ বের করছি। আমার কি করা উচিত?’
‘ আমার জানা মতে তোমার তো খালাতো বোন। দুজনের বন্ডিংটাও মজবুত আছে। ‘
‘ এখন আর নেই। তাকে সময় কম দেই জন্য আলতু ফালতু ছেলের সাথে টাইম পাস করছে। ‘
‘ আসলেই কি করছে নাকি তোমাকে জালাচ্ছে আগে খোঁজ নাও। ‘
‘ একটু বেশিই মেশামেশি হচ্ছে। কানে আসছে। ছবি ভিডিও প্রুফ আছে। সরাসরি যে জিজ্ঞেস করবো সুযোগ দেয় না। সামনে গেলেই দু ছাই ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। বুঝতে পারছিনা কিছু। ‘
‘ চাকরিটা আগে হোক তারপর বুঝতে পারবে। ‘
‘ কিভাবে?’
‘ সে যদি তোমার চাকরী পাওয়ার পর তোমার সাথে বর্তমানে যে বিহেভিয়ার চালিয়ে যায় তাহলে তুমি বুঝবে হয়তো তোমার ভালোবাসা তার হৃদয় ছুঁতে পারেনি নয়তো সে তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য তোমার সাথে এমনটা করছে যাতে তুমি তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করো। প্রথমটা হওয়ার চান্স বেশি। আর যদি চাকরী পাওয়ার পর রিলেশনশিপ ভালো থাকার সময় যেমন ছিলো তেমন বিহেব করে সব কিছু আগের মতো করে নেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে মেয়েটাকে বিয়ে করোনা। মারাত্মক ধরা খাবে। এমনটা হলে বুঝবে এই মেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ‘
‘ আমি তাকে ভালোবাসি। রক্তের টান, মনের টান দুইদিক থেকে আমার প্রাণ সে। ‘
‘ উলুবনে মুক্তো ছড়িয়েছো। দেখো কি হয়। ভবিষ্যত কথা বলবে। ‘
‘ এইভাবে ঠকে যাবো?’
‘ জিতেও যেতে পারো। ধৈর্য্য ধরো। ‘

নাকিবটা সত্যি সত্যি ঠকে যায়। ক্যাডার হবার পর তার গার্লফ্রেন্ড তার জীবনে ফিরে আসে। আগের মতোই মিশতে চেষ্টা করে। নাকিব দূরত্ব বজায় রাখে। তার খালা এবং মা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেয়। নাকিব এক কথায় না করে দেয়। নাকিবের এই আচরণ মেনে নিতে পারেনা। যখন সবাই নাকিবকে জেরা করতে থাকে, নাকিব তার প্রিয়তমার চোখের জল দেখেও টলে না। শেষে নাকিবের উপর আক্রমন করতে এলে বাঁধা দেয়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘ কয়টা লাগে তোর? লোভী মহিলা। দূরে সর। যাহ। ‘

সিঙ্গেল লাইফটা খুব সুন্দর উপভোগ করছে নাকিব। ভালোবাসা হারিয়েও ডিপ্রেশন তাকে ছুঁতে পারেনা। নতুন চাকরি, ট্রেনিং, নতুন নতুন কলিগ, বন্ধু, আড্ডা, কাজ, নতুন শহর, নতুন পরিবেশ সব মিলিয়ে নাকিবের মুভ অন করতে খুব একটা সময় নেয় না। মাঝে মাঝে মাঝরাতে যখন মায়াবী মুখটার কথা মনে পড়ে তখন বুকে ব্যাথা উঠে। ভীষন যন্ত্রনা দেয়। ঘুমের পিল তার একমাত্র সাথী হয়ে উঠে। তবুও নাকিব ভালো আছে। হাড্ডিসার শরীরটার ওজন বেড়েছে। এসির নিচে সাদা লাইটের নিচে থাকতে থাকতে গৌঢ় রং দৃশ্যমান হয়েছে। এ এক অন্য নাকিব। আগের মতো কথায় কথায় ছন্নছাড়া ভাব নেই। পার্সোনালিটিতে বিশাল পরিবর্তন। কিন্তু পুরোনো বান্ধবী দুজনের সামনে এলে তার যত্নে গড়া পারসোনালিটি জানালা দিয়ে ফুড়ুৎ দেয়। খুনশুটিতে লেগে থাকে তিনজনে। ঈদের ছুটিতে নাকিব বাড়ি ফিরেছে। লাবিবার ঘ্যানঘ্যানানিতে এসেছে দেখা করে যেতে। লাবিবা নাকিবকে দেখেই ভেংচি কাটে।
‘ অফিসার মানুষের পা ধুলো পড়লো তবে আমার বাড়িতে। ‘
নাকিবা হালকা হাসলো। মাথা নাড়ালো।
‘ কি যে বলিস! এতো এতো গুণী স্ট্যাবল মানুষের তোর পরিবার। আমাকেই তোদের পায়ের ধুলো দে। ‘
লাবিবা ঠোঁট ভেঙে ফেললো। ‘ সবাই স্টাবলিশড। আমার ই কোথাও কিছু হচ্ছে না। একের পর একটা চাকরীর পরিক্ষা দিচ্ছি রিটেনে টিকলেও ভাইভাতে বাদ পড়ছি। বিসিএসএ প্রিলিতে টিকতেই পারছিনা। ‘
‘ তোর ও হবে। আমার একটা কথা শোন তোর চাকরী কনফার্ম হবে। ‘
লাবিবা উৎসুক হয়ে তাকালো।
‘ কি? তাড়াতাড়ি বল। ‘
‘ দুই মাসের জন্য জামাইটা ত্যাগ কর। তোর চাকরী কনফার্ম। ‘
লাবিবা নাকিবের দিকে বালিশ ছুঁড়ে মারে।
‘ দুই দিন ও আলাদা থাকার শক্তি নেই আমার। আমার আড়াল হলেই উনার একটা কিছু হয়ে যায়। আমি পারবোনা উনাকে ছাড়তে। ‘
নাকিব বুঝতে পারলো। একটা ধাক্কায় মনের ভেতর ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আজো কমেনি। এক্সিডেন্ট টা না হলে এতোটা পাগল হতো না। কি বলছে এসব? পাগল তো আগে থেকেই ছিলো দুইটা। এক্সটিম লেভেলের পাগল। নাকিব ও না!……
‘ ভালো কথা ভালো লাগে না। হিসেব করে দেখ। এস এস সি,এইচ এস সি পরিক্ষার আগে আমরা ষোল ঘন্টা টানা পড়তাম। ছয় ঘণ্টা ঘুম। দুই ঘণ্টা অনান্য।এখন তুই হিসেব কর তো তুই কতক্ষন কি করিস?’
লাবিবা আবার ভেংচি কাটে। তার দিন রাতের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। প্রথমে নিজের দেখাশোনা, তারপর স্বামীর সেবা তারপর পড়াশোনা, তাফিফকে নিয়ে আদর করা, আজকাল রোজীর থেকে টুকটাক রান্না করা শিখছে। এটাতেই চলে যায় বেশিরভাগ সময়। অবশ্য তানভীরের অবর্তমানে চলে এসব। তানভীর যতক্ষন থাকে ততক্ষণ প্রব্লেম থাকলে দেখিয়ে দেয় আবার বাইরে যখন যায় তখন বলে যায় সারাদিন বসে বসে পড়বে। আর লাবিবা এদিকে ঘুরঘুর ঘুরঘুর করে সময় কাটায়। লাবিবার কি দোষ? রোজী কতো সুন্দর রান্নাতে এক্সপার্ট। হাতের গুন আছে বলতে হয়। যা রান্না করে তাই টেস্টি হয়। সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। লাবিবারো ইচ্ছে করে রান্না করতে। সবার জন্য নয়। তানভীরের জন্য। এই তানভীরের পছন্দের খাবার গুলো হুটহাট বানিয়ে সারপ্রাইজ দিতে। মন্দ হবে কি? তাফিফকে দেখলে নিজেকে আটকাতে পারে না। নাকের ময়লাটাও নিজ হাতে পরিষ্কার করে। গায়ে হিসু করলেও একটুও খারাপ লাগে না। যতবার ই বুকে ধরে মনে হয় সে মা। মা! রোজী স্কুলে গেলে লাবিবার কাছেই থাকে তাফিফ। টুকটাক নরম খাবার মুখে দেয়। ভাতটা বেশ ভালোই খায়। বুঝা যায় বাপ চাচার মতোই খাদক হবে বড় হলে।

লাবিবা নাকিব কে বলে, ‘তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। বস নিয়ে আসছি। ‘
লাবিবা নতুন শেফ। নাকিবের জন্য রান্না করেছে সে। বেশির ভাগ ই মাইক্রো ওয়েভে আর ইনডাকশনে। লাবিবার সাথে এলো ফাহা। দুজনের হাতেই নাস্তার ট্রে। ফাহা নাকিবকে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ভালো আছেন ভাইয়া? ‘
নাকিব হাসলো। ‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি তো ভালোই। বড় হয়ে গেছো। ম্যাম কেমন আছে?’
‘ মম ভালো। ‘
কথা এটুকুই এগোলো। ফাহা চলে গেলো। নাকিব বললো, ‘ কি নিয়ে এসছিস?’
‘ আমি রান্না করেছি। ‘
‘ কি বলিস? তুই তো পুরো সংসারী হয়ে গেছিস। পুডিংটাও তুই বানিয়েছিস? ‘
‘ হুম। টেস্ট কর। ‘
নাকিব খেয়ে বললো, ‘ আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা। তোর হাতের খাবার এতো মজা হতেই পারে না। ‘
লাবিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। সামনে থেকে বাটি সরিয়ে বললো, ‘ সর তোকে খেতেই হবে না। ‘
‘ আরে দেনা। কতদিন খাই না। ‘
‘ লাস্ট কবে খেয়েছিস?’
নাকিব তাচ্ছিল্য হাসলো। লাস্ট খেয়েছিলো এক্সের হাতে। শ্যামলীর বিয়ে হয়েছে । ছেলে ডিসি অফিসে কাজ করে। সেই ছেলের সাথেই টাইম পাস করছিলো। লোকসমাজে কথা রটে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে। বললো,
‘ মনে নেই রে। ‘
লাবিবা নাকিবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নাকিব চোখের জল লুকাতে ব্যস্ত।
‘ এখনো ভালোবাসিস?’
‘ ভালোবাসা বলতে কিছু নেই রে। সবই চেহারার কামাল। সুন্দর আছিস তাই জামাই পাইছিস। সুন্দর না হলে এখনো আবিয়াত্তা থাকতি। ‘
‘ তোকে বলছে? তাহলে তুই কেন ঐ কাঠবডিরে বিয়ে করতে চাইলি?’
‘ ভাবছিলাম খালাতো বোন । খালা বিয়ে শাদি দিতে পারবেনা তাই একটা গতি করে দেই। হেতি বিয়েও করছে আরেক গতিহীনরে। ডি সি অফিসে পিয়ন গিরি করে বেখাপ্পা ছেড়ি আসছিলো আমার সাথে ঠেস দিতে। বেকুব কথাকার। ‘
লাবিবা মুখে হাত দিয়ে হেসে ফেলে। নাকিব হো হো করে হাসে। নাকিব জিজ্ঞেস করে,
‘ ভাতিজা কই?’
‘ ঘুমায়। ‘

ঈদে তামিম- রোজী,তানভীর-লাবিবা, উর্মিলা-আকাশ, নাকিব,তাফিফ, ফাহা মিলে ঘুরতে যায় বান্দরবানে তাঁদের রিসোর্টে। পুরো ট্রিপটা নাকিবের পক্ষ থেকে। ট্রিট বলা যায়। লাবিবার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিলো এই রিসোর্টে আসবে। উর্মিলা নাকিবের আপাদমস্তক স্কেন করলো। বললো, ‘ ট্রিট দিচ্ছিস বলে এতো ভাব নিস না। রিসোর্টের বিলটা তো দিতে হচ্ছেনা তাই সাহেব গিরি আসছে। পার নাইট বিল দিতে গেলে ছেড়া প্যান্ট পড়ে থাকতি। ‘
‘ থাকলাম। বউ নাই। সব তোদের।তোরাই খা। ‘
ফাহা কথাটা ধরে, ‘ কেনো ভাইয়া? আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে। ভাইয়াদের এনিভার্সারিতে দেখলাম না?’
‘ আরে কি বলো? ও তো খালাতো বোন। গার্লফ্রেন্ড কোথায় পাবো?’
‘ সরি ভাইয়া। ‘
উর্মিলা মুখ টিপে হাসছে। তানভীর এসে দাঁড়ালো তাদের মাঝে। পেছন পেছন লাবিবা। তানভীরের হাতে ক্যামেরা। এগিয়ে দিলো নাকিবের দিকে। স্কিনে দেখতেই নাকিব হা হয়ে গেলো। এতোক্ষন তারা আড্ডা দিচ্ছিলো আর তাদের ক্যান্ডিড ছবি তোলা হয়েছে। নাকিব উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো, ‘ স্যার ছবি গুলো দারুন হয়েছে। ক্যামেরা ম্যান কে? আপনি নাকি আমি? ‘
‘ তুমি প্রফেশনাল টাইপ। আমি নন প্রফেশনাল। ‘
‘ ট্রাই করলে ভালো করতেন। ‘
‘ আড্ডা দাও সবাই। আমরা আশে পাশেই আছি। ‘

তানভীর লাবিবার হাত ধরে বেরিয়ে গেলো। পথিমধ্যেই বললো, ‘ তাফিফ কে নিয়ে আসো। ‘
‘ ওর ঘুমের সময় এখন। ‘
‘ কোলেই ঘুমোবে। একদম শান্ত শিষ্ট। ভাইয়া ভাবীকে স্পেস দাও এই সুযোগে। তুমি তো অনেক এগিয়ে। ‘
‘ আমার মালদ্বীপ ট্রিপ কবে নিয়ে যাবেন?’
‘ এরা থাকুক। চলো আমরা কক্সবাজার চলে যাই। ‘
‘ কিপ্টামি করা শিখলেন কবে থেকে? ছেহ! ‘

লাবিবা তাফিফকে নিয়ে এলো। তাফিফের হাতে আপেল। ছোট ছোট দাত উঠেছে। কুটুস কুটুস করে কামড়ে খায়। তানভীরের কাছে যতক্ষন না এসে পৌঁছালো তানভীর তাকিয়ে রইলো। লাবিবা ভ্রু নাড়ালো। ‘ কি? ‘
‘ মাশাআল্লাহ। ‘
লাবিবা চকিতে তাফিফের দিকে তাকালো। ভাবলো তাফিফকে বলেছে। গাল টেনে চুমু দিলো।‌
‘আমার সোনা বাবাটা। ‘
তানভীর মৃদু হাসলো। ভাবলো লাবিবাকে বলবে তাদের মাঝে কাউকে আনতে। তার আগে ইসমাইলের সাথে আলাপ করা উচিত। এতো লেট আসলে করা উচিত না। লাবিবার কাঁধে হাত জড়িয়ে হাঁটতে লাগলো। রিসোর্ট টা শ্রীমঙ্গলের মতোই ডেকোরেটর। লাবিবা হেসে উঠলো।
‘ মামুনি বুঝি শুধু এই ডিজাইনটাই চুজ করেছিলো?’
‘ হতে পারে। খুব একটা খারাপ লাগে না। ‘
‘ সুন্দর। ‘
‘ তবে এই রিসোর্ট টা বেশি স্পেশাল একটা জায়গার জন্য। চলো। ‘
‘ কি আছে?’
‘ এলেই দেখতে পারবে। ‘
দুজনে একটা চূড়ায় গিয়ে দাঁড়ালো। দু পাশে বড় বড় সবুজ খাস। নরম ঘাসের উপর তানভীর সটানে শুয়ে পড়লো। একটুও ধুলো নেই। সবুজ ঘাসের উপর লাবিবাও বসে পড়লো। নরম ছোয়া লাগতেই জিজ্ঞেস করলো, ‘ এই ঘাসের নাম কি?’
‘ জানা নেই। ‘
‘ কি সুন্দর!’
‘ এই পাহাড়টাও আমাদের। ‘
‘ সত্যি?’
লাবিবা অদূরেই দেখলো একটা জুম ঘর। তানভীর বললো, ‘ এটাই এই রিসোর্টের বিশেষত্ব। লাবিবা উঠতে লাগলো, ‘ আমি যাবো। ‘
‘ এখন না। একটু পরে যাও। একটু আমার বুকে শোও । লাবিবা দুজনের মাঝে তাফিফকে বসিয়ে দিয়ে তানভীরের বুকে মাথা রাখলো। পাহাড়ের নিরিবিলি হাওয়া গা ছুঁয়ে গেলো। মসৃন এক ভালোলাগায় দুজনকে ঘিরে ধরলো।

লাবিবা অফ হোয়াইট কালার ঘারারা পড়ে বাইরে এলো। সবাই তার জন্যই ওয়েট করছিলো। গ্ৰুপ ফটো নিবে একত্রে।তারপর আলাদা আলাদা ফটোসেশন হবে। আজকের ফটোগ্ৰাফার নাকিব নিজে। লাবিবা হিল হাতে দৌড়ে এসে দাড়ালো তানভীরের সামনে। ঘাসের উপর জুতো ফেলে পায়ে গলিয়ে নিলো তানভীরের হাতের সাপোর্ট নিয়ে। তারপর সামনে দিকে তাকিয়ে ফেক হাসি দিলো। সুন্দর ছবির স্বার্থে। প্রত্যেকটা ক্লিক নেবার আগে নাকিব চেঁচালো, ‘ স্যার এদিকে। স্যার সামনের দিকে। ‘
তানভীর কানে নিলো না। সে দেখতে ব্যস্ত বুকের সাথে মিশে দাঁড়ানো বউকে। তামিম মাথায় গাট্টা মারলো।
‘ সামনে তাকা। পরে দেখিস। তোর জন্য ফটো সুন্দর আসছে না। ‘
লাবিবা পড়লো বিপাকে। আরেকবার নাকিব মুখ খোলার আগেই সে মাথা তুলে তাকালো তানভীরের দিকে। তানভীর সাথে সাথে দুষ্টু হাসলো। এতোক্ষন যেনো এটারই অপেক্ষা করছিলো সে। তিন কাপলের মাঝে মাঝের কাপলে এই দুজন দুজনকে দেখার রোমান্টিক মুহূর্ত পুরো ছবিটাকে ভিন্ন একটা রুপ দিলো। সবুজ পাহাড়ের বুকে এমন দৃশ্যপটে নাকিবের হাতে অসাধারণ একটা ছবি হয়ে এলো। ফাহা নাকিবের পেছনেই দাঁড়িয়ে স্কিনে দেখছিলো। হাত তালি দিয়ে সে লাভ দিয়ে উঠলো, ‘ ওয়াও এতোগুলা সুন্দর হয়েছে। ‘
কানের পাশে বাজখাঁই এমন লাফের সাথে চিৎকারে নাকিব চমকে উঠলো। দু পা সরে গিয়ে ধমকালো ,
‘ এই মেয়ে পেছন থেকে ঘোড়ার মতো লাফাচ্ছো কেনো?’ ফাহার হাসিখুশি মুখটা চুপসে গেলো। নাকিবের ও খেয়াল হলো সে কি করে ফেলেছে। ভাইদের সামনে বোনের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে। ঝটপট সরি বললো।
‘ দেখো কিছু মনে করোনা। আমি আসলে আচমকা ব্যাপারটা নিতে পারিনি। ‘
ফাহা অমায়িক হাসলো। কেউ কিছুই বললো না নাকিবকে। একের পর এক ছবি তুলে দিলো। তানভীর লাবিবা ঝুমঘরে গিয়ে রোমান্টিক পোজে, পাহাড় প্রেমি পোজে অনেক ছবি তুললো। নাকিব একবার শুয়ে বসে আরেকবার আমগাছে উঠেও ছবি তুললো। ফাহা শুধু নাকিবকে মুখে হাত দিয়ে হেসে গেলো। নাকিব বুঝলো তাকে নিয়ে মেয়েটা মজা নিচ্ছে। কিন্তু কিছু বললোনা। আপাতত সে মজার ই পাত্র। ধমক খেয়ে মুখটা কেমন শুকিয়ে গিয়েছিলো। এখন হাসছে হাসুক। মনে থাকবেনা ধমকটার কথা হাসলে। সব শেষে নাকিব যখন মুক্তি পেলো তখন এসে বসলো রিসোর্টের বারান্দায়। ফাহা তার পাশেই এসে দাঁড়ালো। নাকিব জিজ্ঞেস করলো, ‘ হাসাহাসি শেষ?’
‘ কিছু মনে করেননি তো?’
‘কি আর মনে করবো? কম খাটুনি গেলো? বাপরে বাপ! অভাগা!’
‘ সব থেকে বড় অভাগা তো আমিই নাকিব ভাই।আপনি কাপলদের ছবি তুলে হাপাচ্ছেন। আমি কিছু বলিনা, চুপচাপ থাকি,একা মানুষ জন্য আমার একটাও ছবি তোলা হলোনা। আপনার নেওয়া সেলফিতেও আমি নেই। ছোট মানুষ বলে কেউ দাম দেয়না। ‘
নাকিব ফাহার দিকে চোখ তুলে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো, ‘ কিসে পড়ো?’
‘ বিবিএ থার্ড সেমিস্টার। নর্থ সাউথ। ‘
‘ আচ্ছা বেশ ভালো। মন খারাপ করোনা। চলো তোমার ও ছবি তুলে দিবো। ‘
‘ আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে। লাগবেনা। ‘
‘ আরে না। চলো। সুন্দর সুন্দর পোজ শিখিয়ে দিবো। ইডিট ও করে দিবো। ‘
‘ সেগুলো দিয়ে কি করবো? ‘
‘ বয়ফ্রেন্ডকে দিবে। একদম খুশি হয়ে যাবে দেখো। ‘
‘ বয়ফ্রেন্ড নেই। ‘
‘ ভেরি গুড। ভালো মেয়ে। বিয়ের পর হাজব্যান্ড কে দেখাবে। চলো। ‘
ফাহা নাকিবকে টেনে নিয়ে গেলো সেই জুমঘরে। সেখানে সে পা ঝুলিয়ে বসে থাকবে আর নাকিব তার ছবি তুলবে। ভাইদের ছবি উঠার সময় সে এমনটাই কল্পনা করেছিলো।

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৯৫)
পাহাড়ের ঝিরি চিংড়ি দিয়ে একটা আইটেম লাবিবার বেশ ভালো লেগেছে। এটা দিয়েই সে খাচ্ছে। তানভীর খাচ্ছে বাঁশ ভাজি। লাবিবার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি । কিভাবে খাচ্ছে যেনো কি সুস্বাদু খাবার! লাবিবা মুখ টিপে হাসলো। ভাত মাখিয়ে তানভীরের মুখে ধরলো, ‘ এটা খেয়ে দেখেন। বাঁশ ভাজি থেকে মাচ বেটার। ‘
তানভীর মুখে নিলো। খেয়ে কিছু বললোনা। লাবিবা পরবর্তী লুকমা মুখে নেবার আগেই সে মুখে নিয়ে নিলো। লাবিবার আর খাওয়া হলোনা। তানভীরকেই খাওয়ালো। তানভীরের খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও সে উঠলোনা। চেয়ারে হাত তুলে আরাম করে বসলো। লাবিবা তার এটো থালা নিজের দিকে টেনে নেবার সময় দেখে সামনে উর্মিলা এবং ফাহা মুচকি মুচকি হাসছে। নাকিব আর আকাশও তাদের সাথে যোগ দিয়েছে। তামিম রোজী এসব দেখে অভ্যস্ত। বরং রোজী নিজে চেষ্টা করে লাবিবাকে অনুকরণ করতে। কি করলে তামিম তাকে বেশী বেশী ভালোবাসবে সেসব উপায় খোঁজে বেড়ায় সে । লাবিবা নিজে থেকেই বললো, ‘ এতো হাসার কিছু নেই। হ্যাজবেন্ডের এটো খাবার খেলে মোহাব্বত বাড়ে। ‘ লাবিবার কথায় তানভীর একবার চোখ তুলে তাদের দেখে নিলো। সবাই এখন স্বাভাবিক। খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই একে একে চলে গেলো। লাবিবা এখনো খাচ্ছে। তানভীরকে খাওয়াতে গিয়ে তার লেট হয়ে গেছে। তানভীর লাবিবাকেই দেখে যাচ্ছে। হাত তার নিশপিশ করছে। চেয়ার এগিয়ে নিয়ে এসে বসলো। লাবিবার ঘাড়ের উপর চুল বেরিয়ে আছে। সেখানেই আঙুলে আঁকিবুঁকি আঁকতে লাগলো। লাবিবার সুড়সুড়ি লাগছে। বললো,
‘ সুড়সুড়ি লাগছে। খাচ্ছিতো। ‘
‘ তোমাকে ভালো মেয়ে ভেবেছিলাম। ষড়যন্ত্র করলে কেনো?’
লাবিবার খাওয়া থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে তানভীরের দিকে মুখ করলো। অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
‘ কি বলছেন এগুলো?’
তানভীর মুখ এগিয়ে আনলো। দৃষ্টি তার পুরোপুরি নেশাক্ত। লাবিবা এই দৃষ্টি চেনে। তাড়াহুড়ো করে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। তানভীর চিন্তিত স্বরে বললো,
‘ দিন দিন এতো সুন্দর কেনো হচ্ছো? অন্য দিকে চোখ ফেরাতেই পারি না। কোথায় ভেবেছিলাম বউ অনেক মোটা হয়ে ফিগার নষ্ট হয়ে যাবে। ভালো লাগবে না। দ্বিতীয় বার চান্স নিবো । তা না মাথা যতটা ঠিক ছিলো ততোটাও নষ্ট করে দিচ্ছো। ‘
লাবিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। বোঝার চেষ্টা করলো তানভীর তাকে নিয়ে মজা নিচ্ছে কিনা। কিন্তু তানভীর কে ভীষন সিরিয়াস দেখা গেলো। রাগে লাবিবার মুখটা লাল হয়ে গেলো। হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘ দ্বিতীয় চান্স তাইনা? আজ থেকে আপনার খাওয়া বন্ধ। ‘
‘ খেলাম ই তো। ‘
লাবিবা হন হন করে হেঁটে চলে গেলো। মাথায় দেড়িতে হলেও কেস করতেই তানভীর চেয়ার ফেলেই লাবিবার পেছনে ছুটলো।
‘ এই বউ শোনো। ‘
লাবিবা মিটি মিটি হাসলো। তানভীরকে ধরা দিলো না। মুখটা ভার করেই রাখলো। রোজীর দরজায় গিয়ে নক দিলো। ‘ আপু তাফিফকে দাও। থাকুক আমার কাছে। ‘
‘ তাফিফকে আকাশ নিয়ে গেলো। আজ নাকি ওদের সাথেই রাখবে। ‘
লাবিবা মুচকি হাসলো। দরজা টেনে দিতেই তানভীর কোলে তুলে নিলো। নাকের পাশে নাক লাগিয়ে শ্বাস নিলো। লাবিবা দু হাতে মাথাটা চেপে ধরলো। তানভীর বললো,’ তাফিফকে কেনো টানছো? তুমি চাইলে আমরা লাবিবকে নিয়ে আসতে পারি। ‘
‘ আমার কোনো ভাই নেইতো। ‘
তানভীর ঠোঁটে কামড় বসালো।
‘ টিউবলাইট একটা। মাথা এখনো খুলে না। ‘
লাবিবা কানেই নিলো না । তানভীরের ঠোঁটে নিজের থেকেই ভালোবাসায় ঢুব দিলো। তানভীর লাবিবাকে নিয়ে কটেজের খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। লাবিবাকে নামিয়ে দিয়ে দু হাতে কোমড় জড়িয়ে তুলে ধরলো। উষ্ণ ছোঁয়ায় সুখের সমুদ্রে ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হলো। খোলা আকাশের নিচে পাহাড় সাক্ষী হলো।

নাকিবের ফোনে বার বার কল আসছে। নাকিব তুলছে না। হটাৎ পেছন থেকে কেউ ডেকে উঠল। নাকিব ঘুরে ফিহাকে দেখলো। জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি ব্যাপার ফিহা? ঘুমাও নি?’
‘ ঘুম আসছে নাতো। ‘
‘ ও আচ্ছা। ‘
‘ ছবি গুলো তো দেখালেন না। ‘
‘ ছবি।দেখাবো। ‘
‘ দেখান। ‘
‘ কাল দেখাবো। রাত হয়েছে।‌ঘুমোতে যাও। ‘
‘ সকাল সকাল তো বেরিয়েই পড়বো। ফিরেই বাসায় ব্যাক করবো। আপনাকে পাবো কোথায়?’
নাকিব তার ল্যাপটপটা নিয়ে এলো। আলাদা আলাদা কাপলের আলাদা আলাদা ফাইল। ফাহার ফাইল ও আলাদা। তিনশত বারোটা ছবি। নাকিব বললো,
‘ তোমার ছবি গুলো সুন্দর হয়েছে। ইডিট করে ফিনিশিং টাচ দিলে দারুন একেকটা ছবি বেরোবে। ‘
নাকিব বসতেই ফাহা পাশে এসে বসলো। ফাহা নিজের একেকটা ছবি দেখতে লাগলো। যে যে ছবিতে ইটিড করতে হবে নাকিব দেখিয়ে দিলো। ফাহা কিভাবে ইডিট করে দেখতে চাইলো। একটার পর একটা ফাহাকে পাশে রেখেই ইডিট করা হলো। কখন ভোরের পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়েছে দুজনের কেউই টের পেলো না। আজান শুনে নাকিবের টনক নড়লো। ফাহার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। ফাহার মুখে বিন্দুমাত্র ক্লান্তি নেই। নাকিব জানতে চাইলো, ‘ তোমার রাতে ঘুম হয়না?’
‘ ইদানিং হচ্ছে না। ‘
‘ কোন সমস্যা? তামিম ভাইকে জানিয়েছো?’
‘ তামিম ভাই কি করবে? সেই টাইপ তো কোনো অসুখ না। আগে তো আমি প্রচুর ঘুমাতাম। কদিন থেকেই ঘুম হচ্ছেনা। ‘
‘ টেনশন করো?’
‘ হ্যা। ‘
‘ কি নিয়ে এতো টেনশন? পড়াশুনা?’
‘ না। ঐতো এমনি। ‘
‘ লজ্জা পেও না। বলতে না চাইলে আমি শুনতে চাইনা।’
‘ বাকি ছবি গুলো পরে দেখবো। আপনার ফোন নাম্বার টা দেন। ‘
‘ নতুন সিম নিয়েছি। নাম্বার মনে পড়ছে না। লাবিবার থেকে নিও । ‘
‘ আচ্ছা। ‘
ফাহা চলে গেলো। তাকে ঘুমোতে হবে। নাকিবের আর ঘুম হলো না।

সকাল সকাল সবাই লাগেজ গুছিয়ে গাড়িতে তুলে দিলো। সবার প্রায় রেডি হওয়া শেষ। লাবিবা ফাহাকে টেনে তুলেছে ঘুম থেকে। ফাহার ঘুম হয়নি। কাঁদো কাঁদো মুখে বলেছে,’ ভাবী ঘুম হয়নি রাতে। ‘
‘ নতুন পরিবেশ তাই হয়তো। উঠো রেডি হয়ে নাও। গাড়িতে ঘুমিও। ‘
শাকিবের ফোনে মায়ের কল এলো। ফোন রিসিভ করতেই কান্নার রোল পড়লো। নাকিব বিরক্ত হলো। ‘ আহ! মা। কেদো নাতো। ‘
‘ শিম্পাঞ্জির বাচ্চা তুই বাড়ি আয়। তোর পিঠের ছাল আমি একটাও রাখবো না। ‘
‘ যাচ্ছিনা। ‘
‘ বাবা মা ছাড়া কিভাবে তুই ঈদ করিস বাবু ? মায়ের সাথে ঈদ করতে এসে বান্দরবান গিয়ে পড়ে থাকলি? ‘
‘ থাকলাম। কারণ আমি মহিলা না। ঘরে বসে বা লুকিয়ে থাকার কাজ আমার না। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার ভাগনী বাড়ি ছেড়েছে?’
‘ কে শ্যামলী? কাল বিদায় হবে। ‘
‘ কুত্তার ঘি ভাত এখনো খাওয়া শেষ হলো না। ‘
‘ তুই বাড়ি আয় বাবু। ‘
‘ আগে ঐ শাকচুন্নী কে বিদায় করো। আমি তার মুখমুখী হতে চাই না। পরশু ফিরবো। আজকেও ফিরছিনা। ‘
নাকিব ফোন রেখে দিলো। গাড়িতে গিয়ে বসেই জিজ্ঞেস করলো,
‘কার বাড়িতে নিয়ে যাবি আমাকে? আজ বাড়ি ফিরছিনা। ‘
আকাশ বললো, ‘ আমাদের বাসায় চলো। ছুটি শেষে রংপুর চলে গেলে তোমাকে তো আর পাবোই না। ‘
উর্মিলা চিন্তিত মুখে বললো, ‘ আমাদের রোমান্টিক কাপল এখনো এলো না কেনো? লাব্বুকে তো রেডিই দেখেছিলাম। ‘
‘ একটু গিয়ে তাড়খ দিয়ে আসো। ‘ তামিম বললো।
উর্মিলা গাড়ি থেকে নেমে লাবিবাদের ডাকতে গেলো। দরজায় নক করে অর্ধেক খুলে উঁকি দিলো। লাবিবা বললো, ‘ আয়। ‘
লাবিবা তখন নিচে বসে তানভীরের ডান পায়ে মোজা গলিয়ে দিয়েছে। জুতোটাও পড়িয়ে দিলো। উর্মিলা হা করে তাকিয়ে দেখলো। লাবিবা ইশারা করতেই বললো,
‘ আসলেই দোস্ত? এতো!’
লাবিবা চোখ রাঙালো। উর্মিলা তাড়া দিয়ে বেরিয়ে এলো। তানভীর জিজ্ঞেস করলো, ‘ তোমার বান্ধবী কিসের কথা বললো?’
‘ কিছু বলেনি তো। ‘
‘ তোমাদের চোখে চোখে আদান প্রদান চলে। আমার সন্দেহ হবার আগে ঠিক ঠাক বলো কি কথা হলো।’
লাবিবা মিথ্যা রাগ দেখালো।
‘ দুঃখ প্রকাশ করে গেলো। সামান্য কোটাটি ভেঙে সরায় নি যে আমি তাকে আপনি দিন রাত খাটিয়ে মারছেন। ‘
তানভীরের চেহারায় চিন্তার রেশ দেখা গেলো। কনফিউজড গলায় বললো, ‘ এটাতো দাহা মিথ্যা কথা বললে বউ। দিনরাত কোথায় খাটো? রাতের পরিশ্রম তো আমারই হয়। ‘
‘ চুপ থাকেন। ‘
‘ মাঝে মাঝে একটু হেল্প করো বলে এভাবে বলো? যাও আজ থেকে কোন হেল্প নিচ্ছিনা। তানভীর খান একাই__উমমম__।’
লাবিবা হাতে মুখ চেপে ধরলো। তানভীরের ছুটা মুখ বাধাপ্রাপ্ত হলো। বাহির থেকে তামিমের ডাকে লাবিবা মুখ থেকে হাত ছাড়িয়েই তানভীরকে রেখেই ছুটলো।

ইসমাইল রাণী মহলের কোনায় কোনায় চেক দিচ্ছে। বাড়িটা কমপ্লিট করে ডেকোরেশন করতে বছর দুয়েকের বেশি সময় লেগে গেলো। লাক্সারিয়াস ইন্টেরিয়রের চারিপাশ উজ্জলতা ছড়াচ্ছে। লাবিবা নিজে ঘাঁটাঘাঁটি করে বাড়ির প্রতিটা আনাচে কানাচে কালার, ফার্ণিচার, শোপিচ আনিয়েছে।‌ বাড়িটির ছাদে পুরোটা জুড়ে ফুলের গার্ডেন। আর চারপাশে সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো পছন্দের ফলের গাছ। পেছন থেকে লাবিবা ডাকলো, ‘ আব্বু মনে হচ্ছে না কোনো সপ্নপুরীতে চলে এসেছো? এতো সুন্দর কেনো?’
ইসমাইল হাত বাড়িয়ে লাবিবার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। হাঁটতে হাঁটতে দেখতে লাগলো। অজান্তেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
‘ আমার মা, তুমি যখন আমার আশে পাশে থাকো আমার পুরো দুনিয়াটাই শান্তিময় লাগে। যখনি তুমি দূরে চলে যাও এই সপ্নপুরীতেও মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে। ‘
লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখলো করুন দৃষ্টিতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।‌ ইসমাইল মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ আমার মাকে আমি কখনোই চোখের আড়াল হতে দিবো না। তুমি আমার দৃষ্টির মাঝেই থাকবে।
লাবিবা আবদারের সুর তুলে, ‘ আব্বু কালই চলে এলে কি হয়? কেনো লেট করছো? এখানে থেকে কতো কাছে হয়। মাত্র দশমিনিটের হাঁটা। আমি মন চাইলে সারাদিনই এবাড়ি ওবাড়ি করতে পারবো। ‘
‘ তোমার আম্মুই তো দুটোনা থেকে বের হতে পারছেনা। এতোগুলা দিন সেই বাড়িতে আছি। দুজন মানুষ চলে এলেই তো বাড়িটা খালি হয়ে যাবে। মরা বাড়ির মতো পরে থাকবে। ‘
‘ ভাড়া দিয়ে দাও। ‘
‘ সেখানে কে ভাড়া নিবে?’
‘ একবার না বললে আশা ব্যাংক তোমাকে বলেছিলো তাদের জন্য জায়গা খুঁজে দিতে। সিকিউরিটি চার্জ ও তো দিতে চেয়েছিলো। আমাদের বাড়ি তো রাস্তার সাথেই। পার্কিং এর জায়গাও আছে। সামনে থেকে তিনটা রুম দিয়ে দাও। ভেতর দিকের গুলোতে আমরা যখন যাবো থাকা যাবে। ‘
‘ হুম। দেখি কথা বলে। ‘

চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা