ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-১৬+১৭

0
2621

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৬

★আদিত্য মাত্রই অফিস শেষ করে এখন গাড়ি ড্রাইভ করছে। আজ একটু বাসায় যাবে ও।আজ হঠাৎ করে ওর বাবার কথা খুব মনে পরছে।আদিত্য ভাবছে, ওর মাওতো সেই ছোটবেলায় ওদের রেখে চলে গেছে। কই ওর বাবাতো নূরের বাবার মতো কোনো নতুন মা নিয়ে আসেনি।তারবদলে সে নিজে একাই আমাদের মা বাবা দুজনের দায়িত্ব আর ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছেন।কখনো কোনো অভিযোগ করেননি। কখনো নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করেননি।

এসব কথা ভেবে আদিত্যের মনে মনে প্রচুর গিল্টি ফিল হয়।নিজেকে অনেক স্বার্থপর মনে হচ্ছে।আগে কখনো এভাবে ভাবাই হয়নি। মা মারা যাওয়ার পর থেকে শুধু নিজের কষ্ট আর নিজের দুঃখ নিয়েই থেকেছি। বাবাওতো এতো বছর মাকে ছাড়া একাই কাটিয়েছেন। তারও নিশ্চয় কতো কষ্ট হয়েছে মাকে ছাড়া থাকতে। তবুও কখনো আমাদের সেটা বুঝতে দেননি। সবসময় আমদের সামনে স্ট্রং থেকেছেন। সেতো ইচ্ছে করলেই পারতো, আরেকটা বিয়ে করে সুখী হতে। কিন্তু তা করেননি। বরং সবসময় আমাদের সুখের কথা চিন্তা করেছেন।
এসব ভেবেই আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। নূরের ডাইরিটা না পড়লে হয়তো কখনো এটা মাথায় আসতো না। সত্যিই আমি অনেক লাকি যে উনি আমার বাবা।

আদিত্য বাসার দরজায় এসে কলিং বেল বাজালো।একটু পরেই আদিত্যের চাঁচি এসে দরজা খুলে দিল। আদিত্যকে দেখে ওর চাঁচি একগাল হেসে বললো।
…আরে আদিত্য ইউ? হাউ আছো তুমি?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো সবাই?

…উই গুড আছি। ইউ কাম ভেতরে।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সানা সোফায় বসে চিপস খাচ্ছিলো আর কার্টুন দেখছিলো।আদিত্যকে আসতে দেখে খুশী হয়ে দৌড়ে যেয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে সানা।তারপর বলে।
….ওয়াও ভাইয়া তুমি এসেছো।আই মিস ইউ সো মাচ।কেমন আছো তুমি?

আদিত্যও সানাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…আমি ভালো আছি। আমার পিচ্চিটা কেমন আছে?

সানা হেসে দিয়ে বললো।
…ভালো ছিলাম। তোমাকে দেখে সুপার ভালো হয়ে গেছি।
তারপর ওরা দুজন সোফায় যেয়ে বসলো। আদিত্য সানাকে জিজ্ঞেস করলো।
…তোর কলেজ কেমন চলছে? পড়াশোনা ঠিকমতো করছিস তো?

…হ্যা ভাইয়া সব ঠিক আছে।

পিছন থেকে আবির ফোড়ন কেটে বললো।
…ভালো না ছাই।সারাদিন শুধু আড্ডা মারা ছাড়া আর কিছু কাজ নেই মহারানীর।

সানা আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে কটমট করতে করতে বললো।
…আমার আর ভাইয়ার কথার মাঝে তোমাকে কে নাক গলাতে বলেছে হ্যাহ?তুমি নিজের চরকায় তেল দেও।

আবির সোফায় আরাম করে বসে বললো।
…তুই আমার ভোলাভালা ভাইটারে বোকা বানাবি তাতো আর আমি হতে দিতে পারিনা। আমারওতো একটা দায়িত্ব আছে তাই না?

সানা আবিরের সামনে আঙুল তুলে বললো।
…দেখো ভাইয়া ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম।

আবির তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো।
…তোর দ্বারা ভালো কিছু আশাও করা যায় না।

দুজনের ঝগড়া দেখে আদিত্য বিরক্ত হয়ে বললো।
…এই থামবি তোরা?তোরা কি এখনো ছোট আছিস? বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস?

আদিত্যর ধমক শুনে দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। দুজনেই ভেংচি কেটে আরেকদিকে মুখ করে বসে রইলো।
আদিত্য সানাকে জিজ্ঞেস করলো।
…বাবা কোথায়?

সানা বললো।
…বাবাতো নিজের রুমে।

…ঠিক আছে আমি বাবার সাথে দেখা করে আসছি। কথাটি বলে আদিত্য উঠে গেলো।

বাবার রুমের সামনে এসে দেখলো দরজা খোলায় আছে। আদিত্য দরজাটা একটু খুলে দেখলো ওর বাবা মায়ের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছে। আদিত্যের মনের ভেতরও খারাপ লাগলো। আদিত্য আস্তে করে যেয়ে ওর বাবার পাশে বেডের ওপর বসলো।
আদিত্য বসতেই ওর বাবা আদিত্যের দিকে তাকালো।হঠাৎ আদিত্যকে দেখে ওর বাবা একটু চমকে গেল। আদিত্য সচরাচর ওর বাবার রুমে আসেনা।খুব দরকার ছাড়া। তাই আদিত্যের বাবা একটু অবাক হলো আদিত্যকে দেখে। তারপর মুচকি হেসে বললো।
…আরে তুমি কখন এলে? কেমন আছো?

আদিত্যও মুচকি হেসে বললো।
….ভালো আছি। এইমাত্রই এলাম।

…ওহ আচ্ছা। তা হঠাৎ আমার রুমে? কোনো দরকার ছিলো কি?

….কেন বাবা দরকার ছাড়া কি আসতে পারি না?

….না না তা কেন হবে। তোমরা যখন খুশী তখন আসতে পারো।এটাও তোমাদেরই রুম।

আদিত্য মুচকি হেসে ওর বাবার হাত থেকে ওর মায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে ছবির দিকে তাকিয়ে বললো।
…মাকে খুব মিস করো তাইনা বাবা?

আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে বললো।
…মিস তো তাকে করা যায় যাকে কখনো ভোলা যায়। আমি তোমার মাকে একমুহূর্তের জন্যেও ভুলিনি।

আদিত্য অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….আচ্ছা বাবা তুমি মা চলে যাওয়ার পর আর কখনো বিয়ে করোনি কেন?তুমি চাইলেই বিয়ে করতে পারতে।তাহলে আর তোমাকে একা থাকতে হতো না।

আদিত্যর কথায় ওর বাবা অনেক অবাক হয়।আদিত্য আগে কখনো ওর বাবার সাথে এভাবে মন খুলে কথা বলেনি।মনে মনে অনেক ভালো লাগে আদিত্যের বাবার। তারপর মুচকি হেসে বলে।
…ওইযে বললাম না।আমি তোমার মাকে কখনো ভুলতেই পারিনি তাহলে অন্য কাওকে কিভাবে আমার জীবনে জায়গা দিব?আর আমি একা কোথায় তোরা আছিসনা আমার জীবনে? আর কি লাগে?
আদিত্যের বাবার কথা শুনে আদিত্যের মনটা ভোরে উঠে।আবেগে আপ্লূত হয়ে আদিত্য হঠাৎ ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে।
…আই লাভ ইউ বাবা।ইউ আর দা বেস্ট ফাদার ইন দা ওয়ার্ল্ড। আদিত্যের বাবার মনটাও খুশিতে ভরে উঠলো। এই প্রথম আদিত্য তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে।খুশিতে আদিত্যের বাবার চোখে পানি চলে এলো। আদিত্যের আড়ালেই চোখের পানিটা মুছে নিল।তারপর মুচকি হেসে আদিত্যের পিঠে হাত বুলিয়ে বললো।
….আর তুমিও ওয়ার্ল্ডের বেস্ট ছেলে।

পিছন থেকে সানার কথা শুনে আদিত্য ওর বাবাকে ছেড়ে দিয়ে পেছনে তাকালো।সানা কোমরে হাত দিয়ে বললো।
….বারে,,আমি বুঝি পর হয়ে গেলাম?

আদিত্যর বাবা মুচকি হেসে হাত বাড়ালো সানার দিকে। সানাও হেসে দিয়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যের বাবা এক হাতে সানাকে আরেক হাতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো।

একটু পরে সবাই একসাথে ডিনার করতে বসলো। আদিত্যের বাবা খেয়াল করছে। আদিত্য আগের থেকে অনেকটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। কেমন হাসি খুশী হতে শুরু করেছে। আদিত্যকে এভাবে দেখে মনে মনে অনেক খুশী হলো আদিত্যের বাবা। সে বুঝতে পেরেছে আদিত্যের জীবনে কেউতো এসেছে জার কারণে তার ছেলের ভেতর এতো পরিবর্তন এসেছে।

আদিত্যের চাঁচি এসে বললো।
….টুডে আই মেক নিউ এসিপি (রেসিপি)

সবাই বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। সানা মুচকি হেসে বললো।
….চাঁচি ওটা রেসিপি নট এসিপি।

এতক্ষণে সবাই বুঝতে পারলো। আবির হেসে দিয়ে বললো।
….মা তুমিও না একদম এপিক। মানে বসে বসে তুমি এসিপি বানিয়ে ফেললে।রিয়েলি ইউ আর গ্রেট।

এতক্ষণে আদিত্যের চাচা বললো।
… আর তোমাকে না কতদিন বলেছি।এসব নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করে আমাদের বারোটা বাজাবে না।সেদিন আমার অফিসের লোককে কি খাইয়েছিলে। বেচারা এখনো হসপিটালে ভর্তি আছে। তোমার এসব ফালতু খাবার খাইয়ে আমাদেরও কি হসপিটালে ভর্তি করতে চাও নাকি?

আদিত্যের চাচার কথা শুনে সবার মাথায় হাত। কারণ সবাই জানে এখন কি হতে চলেছে। আদিত্যের চাঁচি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো।
….কিহহ? হুয়াট টেল তুমি? হুয়াট টেল?মাই রান্না ইজ খারাপ? ইওর সাহস হাউ হলো? মাই রান্নাকে ব্যাড বলার?

আদিত্যর চাচা তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন।
….সত্যি কথা বললে সবারি গা পোড়ে।সবসময় যা পারোনা সেটাই করতে যাও কেন?
ব্যাচ্ দুজনের বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। সবাই একবার আদিত্যের চাঁচির দিকে তো একবার চাচার দিকে তাকাচ্ছে।
আদিত্যের বাবা ছোট ভাইকে একটা ধমক দিয়ে বললো।
…ব্যাচ্ কি শুরু করেছিস তোরা।বাচ্চাদের সামনে নিজেরাই ছোট বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস। লজ্জা করেনা?

আদিত্যের বাবার ধমকে দুজনেই চুপ হয়ে গেলো। মাঝখান থেকে আবির বলে উঠলো।
….হ্যা হ্যা বড়ো আব্বু ঠিকই বলেছে।লড়াই লড়াই মাফ করো, গরুর গবর সাফ করো।

আবিরের এমন উদ্ভট কথায় সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকায় আবিরের দিকে। তারপর সবাই একসাথে হেসে ওঠে।

———————————–

রাত ১১ টা
আদিত্য মাত্রই রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়েছে। হঠাৎ ওর নূরের কথা খুব মনে পরছে।একটু কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা নূর কি ঘুমিয়ে পরেছে? একবার ফোন করে দেখবো? আদিত্য ফোনটা বের করে ভাবছে কল করবে কি করবেনা।নাহ এতো না ভেবে কলটা করেই দেখি।আদিত্য নূরের নাম্বারে কল দিল।এই প্রথম ও নূরকে কল করলো।ওর বুকের ভেতর কেমন ধুকধুক করছে।

নূর ঘুমে কাদা হয়ে আছে। সারাদিন এতো কাজ করে। এজন্য রাতে সোয়ার সাথে সাথে ক্লান্ত হয়ে ঘুমে তলিয়ে যায়। হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে ওঠে। কিন্তু ও ঘুমে থাকায় টের পাচ্ছে না। ফোনটা বাজতে বাজতে একায় বন্ধ হয়ে গেলো।

আদিত্য একটু হতাশ হলো। তাহলে কি নূর ঘুমিয়ে পরেছে? আদিত্য আবারও কল দিল।নূর ফোনের রিংটোন শুনতে পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ধরতে পারছে না। আবারও বাজতে বাজতে থেমে গেল। আদিত্য আবারও হতাশ হয়।মনে মনে ভাবে এইবারই শেষ। এবার না ধরলে আর দিবনা।শুধু শুধু ঘুমের ডিস্টার্ব করার দরকার নেই। এসব ভেবেই আদিত্য আরো একবার কল করে।
নূরের ফোন বাজতে শুরু করে। নূর শুনতে পাচ্ছে। চোখ না খুলে ঘুমের ঘোরেই হাত দিয়ে বিছানার উপর হাতাতে থাকে ফোনের উদ্দেশ্যে।একসময় ফোন হাতে পেয়ে যায়।

ফোন বাজতে বাজতে প্রায় শেষের দিকে। আদিত্য ভাবছে হয়তো এবারও ফোন ধরবে না নূর। হঠাৎ আদিত্যর মনে হয় ফোনটা রিসিভ হয়েছে। আদিত্য খুশি হয়ে ফোনটা সামনে এনে দেখে হ্যা সত্যি নূর ফোন রিসিভ করেছে। আদিত্য খুশি মনে ফোনটা আবার কানে নিয়ে বললো।
….হ্যালো নূর?

নূর এখনো চোখ খোলেনি। ঘুমের ঘোরেই ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে আছে।

আদিত্য আবারও বললো।
…হ্যালো নূর, আর ইউ দেয়ার?

নূর ঘুমের ঘোরেই বললো।
…হ্য,,,লো কে বলছেন?

আদিত্য ঝট করে উঠে বসে বুকের বাম পাশে হাত রাখলো।নূরের এমন ঘুমো ঘুমো কন্ঠের কথা শুনে আদিত্যের হার্টবিটই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল প্রায়।কারো ঘুম জড়ানো কন্ঠও যে এতো মারাত্মক হতে পারে তা জানা ছিল না আদিত্যের। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নেয় আদিত্য। তারপর আবার ফোনে বলে।
… হ্যালো নূর তুমি কি ঘুমিয়ে পরেছো?

নূর আবারও ঘুমের ঘোরেই বলে।
…হুউউম,,সেইইই কখোওওওন।

আদিত্যের এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যিই ওর হার্টটা বন্ধ হয়ে যাবে। নূরের এমন ঘুম জড়ানো কন্ঠ অনেক আবেদনময়ী লাগছে আদিত্যের কাছে। একদম নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে। আদিত্যের ভাবনার মাঝেই নূর আবারও বলে উঠলো।
….আপনি কে বলুনতো? এভাবে কারোর স্বপ্নের ভেতর কেউ ফোন দেয়?

নূরের কথা শুনে আদিত্য ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। ও ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে? তুমি কি স্বপ্ন দেখছিলে?

….দেখছিলে মানে? আমিতো এখনো স্বপ্নই দেখছি। আর আপনি আমার স্বপ্নের ভেতর ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছেন।

আদিত্যের এবার প্রচুর হাসি পাচ্ছে। তারমানে নূর ভাবছে ও স্বপ্নের ভেতর কথা বলছে। এটা ভেবেই আদিত্য নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো।তারপর বললো।
…আচ্ছা তো কি স্বপ্ন দেখছিলে?

…আপনাকে কেন বলবো? আমি অপরিচিত কাউকে কিছু বলিনা।

আদিত্য ভাবলো একটু মজা নেওয়া যাক। আদিত্য একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….তুমি জানো আমি কে?

…নাতো, আপনিতো বলেননি আপনি কে?

আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে কন্ঠ ভারী করে বললো।
…আমি হলাম অচিন রাজ্যের রাজকুমার। তোমাকে নিতে এসেছি।

নূর ঘুমের ভেতরেই ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে বললো।
…সত্যিই? আপনি আমার রাজকুমার? আমার সেই স্বপ্নের রাজকুমার?

আদিত্য ফোনটা একটু কান থেকে সরিয়ে হেসে নিল।তারপর আবার গম্ভীর ভাব ধরে বললো।
….হুম। আমিই তোমার সেই রাজকুমার। তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি আমার রাজ্যে।যাবে আমার সাথে।

….কিন্তু আপনিতো আমাকে দেখননি। আর আমিও আপনাকে দেখিনি। নাদেখে কিভাবে বলি?

….তুমি না দেখলেও আমি তোমাকে দেখেছি। তাই আমার কোনো সমস্যা নেই।

….কিন্তু আমিতো আপনাকে দেখিনি। আচ্ছা আপনি দেখতে কেমন?

…নিজের কথা আর কি বলবো? সবাইতো হ্যান্ডসামই বলে। বাকিটা তুমি দেখলে বুঝবে।

…..তাই? আচ্ছা আপনি কি উনার মতো সুন্দর?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…এই উনিটা আবার কে?

….আরে উনি।উনাকে চেনেন না?উনি দেখতে খুব সুন্দর।

আদিত্যর হঠাৎ রাগ উঠতে শুরু করলো। চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…কে উনি?নাম বলো ড্যাম ইট।

…উনার নাম সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য।

আদিত্যর রাগ এক ঝটকায় গায়েব হয়ে গেলো। সেখানে এসে হাজির হলো রাজ্যের ভালোলাগা।আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে দিয়ে বললো।
…তাই? উনি কি সত্যিই সুন্দর?

…হুম, উনি অনেক সুন্দর।তানির জেইন এর চেয়েও বেশি সুন্দর। একদম হলিউডের হিরোদের মতো।

আদিত্য বালিশে শুয়ে চুলের ভেতর হাত দিয়ে টেনে ধরে নিঃশব্দে হাসলো।তারপর বললো।
….আমার সামনে তোমার ওই আদিত্য ফাদিত্যর কোনো বেল নাই। আমি ওর থেকেও অনেক বেশি সুন্দর। আমাকে দেখলে তুমি ওই আদিত্য ফাদিত্যকে ভুলে যাবে। শুধু আমাকেই দেখবে আর চুমু খেতে চাইবে।

নূরের প্রচন্ড রাগ হতে শুরু করলো। ঘুমের মাঝেই ওর ভ্রু কুঁচকে আসলো।ক্ষিপ্ত স্বরে বললো।
…মোটেই না।উনার চেয়ে বেশি কেও সুন্দর হতেই পারে না। আর আপনি উনাকে নিয়ে এভাবে কথা বলছেন কেন? একদম এভাবে কথা বলবেন না উনাকে নিয়ে। উনি খুব ভালো মানুষ। আর আমি আপনাকে কেন চুমু খেতে যাব।আমিতো শুধু উনাকে চুমু দেই আর কাওকে না।বুঝতে পেরেছেন?

নূরের মুখে নিজের প্রসংশা শুনে আদিত্যের সারা মন জুড়ে ভালো লাগার ঢেউ খেলছে।এর আগেও কতো মেয়ে আদিত্যের প্রসংশা করেছে। কিন্তু আদিত্য কখনো সেগুলো পাত্তাই দেয় নি। অথচ আজ নূরের কথাগুলো শুধু শুনতেই ইচ্ছে করছে। আদিত্য আবারও বললো।
…তাই? উনি এতো ভালো মানুষ?

…হুম, উনি এত্তো এত্তো এত্তোগুলা ভালো মানুষ। আজ অবশ্য তিনটা এত্তো থেকে একটা এত্তো বাদ দিয়েছিলাম। কারণ উনি আমার ডাইরি ফেরত দেওয়ার জন্য শর্ত দিয়েছিলো।তাই তখন একটা এত্তো বাদ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আবার যোগ করে দিছি।কারণ উনি যে শর্তগুলো দিয়েছে সেগুলো যে আমার ভালোর জন্য তা আমি বুঝতে পেরেছি। তাই উনি আবারও এত্তো এত্তো এত্তোগুলা ভালো। বুজেছেন?

আদিত্য হাত মুঠ করে কামড়ে ধরে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। আর ভাবছে মেয়েটা সত্যিই ইনোসেন্ট। বাচ্চাদের মতো কথা বলে। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
…যতো যাই বলোনা কেন?আমার কাছে মোটেও ভালো লাগে নি তোমার ওই আদিত্য ফাদিত্যকে। একদম ফালতু ছেলে।

নূর কপট রাগ দেখিয়ে বললো।
…এই এই আপনি আবার উনাকে নিয়ে পচা কথা বলছেন? আসলে ফালতু উনি না, ফালতু আপনি। আপনি একটা পচা রাজকুমার। আপনার সাথে কোনো কথা নেই। আপনার মতো পচা রাজকুমারের সাথে আমি কোথাও যাবো না।
কথাগুলো বলেই নূর ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে ফেললো। আর ফোনটা যেয়ে মুখের কাছে পরে রইলো।

আদিত্য যেন বোকা বনে গেল। একটু মজা নিতে যেয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেল। নূরের কথা শুনতে না পেয়ে আদিত্য বলে উঠলো।
…নূর? নূর? আর ইউ হিয়ার মি?

আদিত্য নূরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেলো। ও বুঝতে পারলো নূর আবার ঘুমিয়ে পরেছে।আদিত্য মুচকি হেসে ভাবলো মেয়েটা সত্যিই একটা পিচ্চি। ঘুমের ভেতরেই কথা বললো অথচ টেরও পেলো না।
আদিত্য ফোনটা কাটলো না।ফোন কানে রেখেই নূরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে…..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৭

★ভোরের আলো ফুটতেই রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। টাইম দেখার জন্য মোবাইল খুজতে লাগলো। চেয়ে দেখলো ফোন বালিশের কাছে পরে আছে। নূর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফোন বন্ধ হয়ে আছে।নূর ফোনটা অন করে দেখলো চার্জ শেষ। নূর ভ্রু কুঁচকে ভাবলো কাল রাতেইতো চার্জ দিয়েছিল। তারপরে তো আর ফোন ধরেনি। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি চার্জ কিভাবে শেষ হয়ে গেলো? হয়তো পুরানো হয়ে গেছে তাই এমন হচ্ছে। নূর আর কিছু না ভেবে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিল।তারপর বাসার কাজ শুরু করে দিল।
বাসার সব কাজ শেষ করে নূর ময়লা ফেলার জন্য গেটের বাইরে গেল। গেটের বাইরে এসে ময়লা ফেলে ফেরার সময় নূর দেখলো রাস্তায় মাঝামাঝি একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হয়তো রাস্তা পার হতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। নূরের খুব মায়া হলো মহিলারটার জন্য। ও এগিয়ে গেল মহিলাটাকে সাহায্য করার জন্য।

মহিলাটার কাছে যেয়ে বললো।
…কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?

মহিলাটা করুন সুরে বললো।
…আসলে আমি ঢাকায় নতুন। রাস্তা পার হতে পারি না। আমার খুব ভয় করে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….ভয় নেই আমার হাত ধরেন।আমি আপনাকে পার করে দিচ্ছি।

মহিলাটা মাথা ঝাকিয়ে নূরের হাত ধরলো। নূর মহিলাটার হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিলো।

রাস্তা পার হয়ে মহিলাটা কৃতজ্ঞতা মূলক হাসি দিয়ে বললো।
….তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।তুমি না আসলে হয়তো আমি পারিই হতে পারতাম না।

নূর সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে বললো।
….ইটস ওকে। মানুষই তো মানুষের কাজে আসবে। এটাই স্বাভাবিক।তা আপনি কোথায় থাকেন?আগেতো কখনো দেখিনি মনে হচ্ছে।
….হ্যা তুমি ঠিকই বলেছো।আমি এখানে নতুন। হাত উঠিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো। ওইযে ওই বাসাটা দেখছো। ওখানেই নতুন এসেছি।আমার ছেলে আর আমি এই দুজনই থাকি।
….ওহহ।আমি আপনার এই পাশের বাসাতেই থাকি।

মহিলাটা খুশী হয়ে বললো।
…তাই? তাহলেতো অনেক ভালো হলো। জানো,আমার ছেলেটা সেই সকালে চাকরিতে চলে যায় আর রাতে আসে। সারাদিন বাসায় একা একা আমার সময় কাটে না।এখানে তেমন কাওকে চিনিওনা। এখন যখন তোমার সাথে পরিচিত হলাম। তাহলে মাঝে মধ্যে তোমার সাথে এসে সময় কাটাবো। তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তুমি কি রাগ করবে আমি আসলে?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
..না না রাগ করবো কেন? আমার আরো ভালো লাগবে। আপনার যখন খুশি চলে আসবেন আন্টি।

মহিলাটি খুশি হয়ে বললো।
…ঠিক আছে তাহলে এখুনি চলো।তোমার বাসাটা চিনে আসি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে চলুন।

তারপর নূর মহিলাটিকে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। ভেতরে ঢুকে নূর মহিলাটিকে সোফা দেখিয়ে বললো।
…আন্টি আপনি বসুন।আমি আপনার জন্য চা করে আনছি।

মহিলাটি বললো।
…আরে না না আমি ওসব চা টা খাই না।সকাল সকাল ভাত রান্না করে খেয়ে এসেছি। তাই এখন কিছুই খাবো না।

…আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি তাহলে বসুন।আমি একটু রান্না করে আসছি।

….ঠিক আছে চলো আমিও তোমার সাহায্য করছি।

নূর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
…না না আন্টি, আপনি কেন কাজ করবেন। আপনি এখানেই বসুন। আমি এখুনি কাজ শেষ করে আসছি।

….দেখ আমি গ্রামের মানুষ বসে বসে আমার ভালো লাগে না। টুকটাক কাজ করলে ভালো লাগে।
…তবুও আন্টি আপনাকে দিয়ে কাজ করানো আমার কাছে ভালো লাগছে না।

…দেখো,আমি তোমার মায়ের বয়সী।তোমার মায়ের মতোই। তুমি কি তোমার মায়ের কথা রাখবে না?
…নূরের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। আজ পর্যন্ত কেউ ওর সাথে এভাবে ভালোবেসে কথা বলেনি।নূর আর কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।

নূর সব কাজ শেষ করলো। মহিলাটি সাহায্য করায় নূরের কাজ, আজ অনেক তাড়াতাড়ি আর সহজে হয়ে গেলো। কাজ শেষ করে নূর নিজের রুমে গেল রেডি হতে। রেডি হয়ে এসে নূর মহিলাটিকে বললো।
…..আন্টি আমি এখন ভার্সিটিতে যাবো।

মহিলাটি বললো।
…হ্যা হ্যা চলো আমি আর থেকে কি করবো? আমিও তোমার সাথেই বের হই।

নূর মাথা ঝাকালো। তারপর দুজনে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে এসে নূর মহিলাটিকে বিদায় দিয়ে নিজের রাস্তায় চলে গেলো।

মহিলাটি কিছুদূর আসতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। মহিলাটা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে নাকি? তারপর ফোনটা রিসিভ করে বললো।
….স্যার, আপনি যেভাবে বলেছেন।আমি সেভাবেই করেছি।

….নূর আপনাকে সন্দেহ করেনি তো?

….আরে না না উনার কোনো সন্দেহ হয়নি।

……হুম গুড। এখন থেকে নূর যখনই ওর বাসায় থাকবে। আপনিও যতটা পারেন ওর সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। ওর ভালো মন্দের খেয়াল রাখবেন। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। ঠিক আছে?

….জ্বি স্যার আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই করবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।

…হুম। ধন্যবাদ।

….আরে আপনি কেন ধন্যবাদ বলছেন? আপনার জন্য কিছু করতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্য। আপনি না থাকলে আমাদের সবার না খেয়ে মরতে হতো। আপনি আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার ছেলেটাকে চাকরি দিলেন। আপনার জন্য যাই করিনা কেন কম হবে।

…আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি।বায়। বলেই আদিত্য ফোনটা রেখে গাড়ির কাচ নামিয়ে মুগ্ধ নয়নে রাস্তা দিয়ে আসা নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
হ্যা আদিত্যই ওই মহিলাটিকে পাঠিয়েছে নূরের সাহায্য করার জন্য। যাতে বাসায় থাকা অবস্থায় নূরের খোঁজখবর নিতে পারে।

নূর হাটতে হাটতে সামনে তাকিয়ে দেখলো।আদিত্য গাড়ির ভেতর বসে আছে। নূর ভাবছে, উনি সত্যি সত্যিই আমাকে নিতে এসেছে! কথাটা ভাবতেই নূরের মনে মনে অনেক ভালো লাগলো।নূর মুচকি হেসে আদিত্যের গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হলো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি গাড়ির ভেতর উঠে বসবে?

নূর মাথা নিচু করে ঝাকালো। আদিত্য দরজা খুলে দিতেই নূর উঠে বসলো।নূরের স্বাভাবিক থাকা দেখে আদিত্য সিওর হয়ে গেলো যে রাতের কথা ওর কিছুই মনে নেই। তাই আদিত্যও আর কিছু বললো না। তারপর আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো।নূরের কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। নূর ভাবছে, আচ্ছা উনি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছেন? তাহলে কি তানি যেটা বললো সেটা সত্যি? উনি কি আমাকে সত্যিই পছন্দ করেন? নূর আরচোখে আদিত্যকে দেখতে লাগলো। আদিত্য সোজা সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। নূর আবারও জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে ওর। একটু পরেই ওরা ভার্সিটি পৌঁছে যায়। আদিত্য নূরকে বললো।
….তুমি নেমে চলে যাও। আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।তারপর নেমে চলে গেল।

————————————–

নূর ক্লাস শেষ করে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে আসছে। পিছন থেকে দেখতে পেল। আদিত্য ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে। নূর নিচের দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হাসলো।তারপর এগিয়ে গেল আদিত্যের কাছে।

নূর আদিত্যের কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদিত্য বললো।
…বসো।দাঁড়িয়ে আছো কেন?

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই মাথা ঝাকালো। তারপর আদিত্যের পাশে বসে পড়লো। নূর বসতেই আদিত্য বলে উঠলো।
…তোমার চোখ দুটো বন্ধ করো।

আদিত্যর কথা শুনে নূর চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
…জ্বিহ্?

আদিত্য বললো।
…চোখ বন্ধ করতে বলেছি।আরো বড়ো করতে বলিনি। চোখ বন্ধ করো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

নূর অবাক হয়ে বললো
….স সসারপ্রাইজ?

….হ্যা সারপ্রাইজ। এখন বেশি কথা না বলে চোখ বন্ধ করো।

আদিত্যের কথা মতো নূর চোখ বন্ধ করে ফেললো। একটু পরে আদিত্য ব্রঞ্চের নিচ থেকে কিছু একটা বের করে বললো
….. এখন খোলো চোখ।

নূর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। চোখ মুখ খুশিতে চকচক হয়ে উঠলো।দুই হাত ঠোঁটে চেপে ধরে হেসে দিলো।
আদিত্যর হাতে খরগোশ ছানাটাকে দেখে নূর অত্যন্ত খুশি হয়ে যায়। নূরকে খুশি হতে দেখে আদিত্যেরও অনেক ভালো লাগে।

আদিত্য বললো।
….কি হলো শুধু দেখবেই? কোলে নিবে না?

নূর খুশী হয়ে মাথা ঝাকালো। তারপর বাস্কেটের ভেতর থেকে খরগোশ ছানাটাকে হাতে নিল। ছানাটার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললো।
…আগের থেকে আরো সুন্দর হয়ে গেছে ও।কতো মসৃণ আর কোমল হয়ে গেছে।
তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি ওকে অনেক ভালো রেখেছেন। আপনি সত্যিই এত্তো এত্তো এত্তো এত্তোগুলা ভালো।

নূরের খুশি দেখে আদিত্য মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল। মুচকি হেসে বললো।
…. কালতো তিনটা এত্তো ছিল। আজ আরেকটা বেড়ে গেল?

নূরও হেসে দিয়ে বললো।
…হুম। আপনি যতো ভালো কাজ করবেন। ততই এত্তো বেড়ে যাবে।

আদিত্য দুই দিকে মাথা ঝাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

নূর ছানাটাকে আদর করতে করতে যখনি চুমু খেতে যাবে। আদিত্য দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে তড়িঘড়ি করে বললো।
…এই এই কি করছো? ওকে চুমু দিচ্ছো কেন?

আদিত্যের এমন রিয়্যাকশন দেখে নূর থতমত খেয়ে গেল। ও চমকে উঠে বললো।
…কেন কি হয়েছে? ওকে চুমু খেলে কি সমস্যা?

আদিত্য আনমনেই বলে ফেললো। অবশ্যই সমস্যা আছে। তুমি শুধু আমাকে চুমু খাবে আর কাওকে না।

নূর বুঝতে না পেরে বললো।
…জ্বিহহহ্?

আদিত্যের এতক্ষণে হুঁশ এলো ও কি বলে ফেলেছে। ও কথাটা ঘুরানোর জন্য আমতা আমতা করে বললো।
…আ আই মিন,ওকে চুমু দিলে ওর লোম পেটে গেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।তাই চুমু দেওয়ার দরকার নেই।

নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

হঠাৎ নূর বলে উঠলো।
…আচ্ছা আমরা কতোদিন ছানটাকে ওকে ওকে বলে ডাকবো? ছানাটার একটা নাম হওয়া উচিত তাইনা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…হুম ঠিকই বলেছো একটা নাম দেওয়া উচিৎ। তা তুমিই বলো কি নাম দিবে?

নূর কতক্ষণ চিন্তা করে হঠাৎ খুশি হয়ে বললো।
…হুম পেয়েছি। ও যেহেতু দুধের মতো সাদা তাই ওর নাম আজ থেকে মিল্কি। ভালো না নামটা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…হুম অনেক ভালো। তুমি এতো ব্রেন খাটিয়ে রেখেছো, ভালোতো হতেই হবে।

নূরও হেসে দিলো। আরো কিছুক্ষণ ওখানে বসে নূরের চুমু দেওয়ার পর ওরা বেড়িয়ে গেলো। তারপর আদিত্য নূরকে নামিয়ে দিয়ে এলো।গাড়িতে সারারাস্তা নূর ছানার সাথে খেললো।আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখলো। তারপর নূরকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো আদিত্য।
———————————

রাত ১২ টা নূর যথারীতি ঘুমে কাদা হয়ে আছে। হঠাৎ বাইরে জোরে জোরে বৃষ্টি শুরু হলো।আর বৃষ্টির সাথে শুরু হলো ঠাস্ ঠাস্ করে বাজ পরার শব্দ। বাজ পরার শব্দে এক ঝটকায় নূরের ঘুম ভেঙে গেল। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। নূর কাথার ভেতর ঢুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে দুই কান চেপে ধরে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করলো। হঠাৎ কারেন্টও চলে গেল। নূর আরো ভয় পেয়ে গেল। চোখ মুখ খিচে থরথর করে কাঁপতে থাকলো।ভয়ে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।

আদিত্য মাত্রই ঘুমিয়েছিল। বৃষ্টির শব্দে ওর ঘুমটা হালকা হয়ে এলো।আদিত্য জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবলো,এই অমৌসুমে আবার বৃষ্টি কোথা থেকে আসলো। আদিত্য আবারও ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করতেই, ঠাস্ করে চোখ দুটো খুলে উঠে বসলো। আদিত্যের মনে পড়লো নূর ওর ডাইরিতে লিখেছিলো। বৃষ্টির বাজ পরার শব্দে ও অনেক ভয় পায়।তাহলে নূর হয়তো এখন ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের অনেক চিন্তা হতে লাগলো নূরের জন্য। আদিত্য তাড়াহুড়ো করে নিজের ফোনটা খুজতে লাগলো। ফোন খুঁজে বের করে নূরের নাম্বারে ফোন দিল।

নূরের ভয়ে বেহাল অবস্থা। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।নূর এমনিতেই ভয়ে ছিল তারওপর এতো রাতে ফোনের রিংটোনে ও আরও ভয় পেয়ে যায়। কাথা জড়িয়ে ধরে আরও গুটিশুটি হয়ে যায়।

নূর ফোন রিসিভ না করায় আদিত্যের টেনশন আরও বেড়ে যায়। আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে সারা ঘরে পায়চারী করতে থাকে। এক হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে আরেক হাত দিয়ে নূরকে ফোন করতে থাকে।

এভাবে দুই তিন বার ফোন বাজার পর।চার বারের বেলায় নূর সাহস করে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে। নূর দেখে একটা আননোন নাম্বার। নূর রিসিভ করে কানে নেয়।

নূর ফোন রিসিভ করতেই আদিত্য উদ্বিগ্ন হয়ে বলে।
…হ্যালো নূর? আর ইউ হিয়ার মি?নূর আর ইউ ওকে?নূর?

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনরকমে বললো।
…ক কককে??

…নূর আমি। আমি আদিত্য। শুনতে পাচ্ছো আমাকে?

নূর অবাক হয়ে বললো।
…আ আআপনি?

….হ্যা আমি আদিত্য। নূর তুমি ঠিক আছো? তুমি কি ভয় পাচ্ছো?

নূর ভয় আর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কোনরকমে ঢোক চিপে বললো।
….হুউউম।

নূরের এমন করুন কণ্ঠ শুনে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ইশশ মেয়েটা কতো ভয় পেয়ে গেছে। আদিত্যের ইচ্ছে করছে এখনি দৌড়ে যেয়ে নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে সব ভয় দূর করে দিতে। আদিত্য খাটে বসে চোখ বন্ধ করে হাত শক্ত করে মুঠ করে নিয়ে নিজেকে একটু ঠিক করে নিল।তারপর নূরকে বললো।
…নূর, দেখ ভয় পেয়না। আমি আছি তোমার সাথে। আমার সাথে কথা বলো।

নূরের ভয়ের চোটে কোনো কথায় বের হচ্ছে না। শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে।
নূর কথা না বলায় আদিত্য আরো চিন্তায় পরে গেলো। নূরের নিঃশ্বাসের শব্দে আদিত্য বুঝতে পারছে নূরের ভেতরে ভয়ে হাইপার হয়ে আছে। নূরকে শান্ত করতে হবে। নাহলে ও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। আদিত্য কিছু একটা ভেবে নূরকে বললো।
…নূর আমার না এখন গান গাইতে ইচ্ছে করছে। তুমি শুনবে আমার গান?

আদিত্যের কথায় নূরের ভয়টা হালকা কমে এলো।আদিত্যের গানতো নূরের কাছে অনেক ভালো লাগে। তাই ও এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। নূর আস্তে করে বললো।
…হুম

আদিত্য মুচকি হেসে গাওয়া শুরু করলো।

♬ ভেজা সন্ধ্যা, অঝোর বৃষ্টি ♪
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি।

হালকা আধার দিয়েছে ঘিরে
আবছা আলো নিয়েছে ছুয়ে
অল্প করে হোকনা শুরু
ভালোবাসা এখনো ভিরু।

হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি।

ডাকছে সময় পিছু
বলবে কি মন কিছু
নিবিড় এই ভালোবাসা
জোড়ালো কিছু আবাস

হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি

ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা
♬ শুধু হয়েছে অনুভূতি। ♪ ♩

আদিত্যের গান শুনতে শুনতে নূর একদম শান্ত হয়ে গেলো। মন থেকে সব ভয় দূর হয়ে গেলো। মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে লাগলো। গান শুনতে শুনতেই একসময় ঘুমিয়ে পরলো।

আদিত্য নূরের সাড়াশব্দ না পেয়ে।আস্তে করে নূরকে ডাক দিলো।
…নূর? নূর আর ইউ দেয়ার?

নূরের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে আদিত্য বুঝতে পারলো নূর ঘুমিয়ে পরেছে। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর নিজেও শুয়ে পরে। আবারও নূরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে……