ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-২৪+২৫

0
2631

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৪

★ নূর অবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে। মাত্রই এসে পৌঁছেছ ওরা। বাইক থেকে নামার পর থেকে নূর শুধু হা করে সবকিছু দেখছে। মনে মনে ভাবছে এটা কি ফার্মহাউস নাকি কোনো রিসোর্ট?
দোতলা বিশিষ্ট একটা ডুপ্লেক্স বাসা। যার চারিদিকে কাচের দেয়াল। সামনে বিশাল একটা সুইমিং পুল। পুলের পাশে ছাতা বিশিষ্ট কয়েকটা চেয়ার আছে। বাসার দুইপাশে সারি সারি নানা রকমের গাছ গাছালি আর ফুলের বাগান। সত্যিই জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। নূর মুগ্ধ হয়ে দেখছে সবকিছু।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….কি? পছন্দ হয়েছে আমাদের ফার্মহাউস?

আদিত্যের কথায় নূরের ঘোর কাটলো। নূর মুচকি হেসে বললো।
…পছন্দ মানে?অনেক পছন্দ হয়েছে। জায়গাটা খুব সুন্দর।

ওদের কথার মাঝে আবির আর তানিও চলে এলো। আবিরও তানিকে নিয়ে বাইকে এসেছে। তানি বাইক থেকে নেমে অতি উৎসাহ নিয়ে নূরের কাছে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…ওয়াও নূর তুই এসেছিস? আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে দেখে, বলে বুঝাতে পারবো না।

আবির এগিয়ে এসে বললো।
…বাহ্ এতো কষ্ট করে বাইক রাইড করে নিয়ে আসলাম আমি। আর হাগ বান্ধবীকে? এ কেমন বিচার?

আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল।
আদিত্য আবিরকে জিজ্ঞেস করলো।
…সানা কার সাথে আসছে?

…..সানা ড্রাইভার কাকা গাড়িতে দিয়ে যাবে।

….ওওহ।

একটু পর তাসিরও বাইক নিয়ে চলে এলো। তাসির বাইক থামিয়ে নেমে দাড়াতেই ওর সামনে সানার গাড়ি এসে থামলো। গাড়ির দরজা খুলে সানা বাইরে বের হয়ে দাঁড়ালো।
তাসির হা হয়ে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। পিংক কালারের টপসে পিচ্চিটাকে একদম বারবিডল লাগছে। হঠাৎ খেয়াল করলো সানা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তারপর হাসি মুখ করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে জড়িয়ে ধরবে। তাসির একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মেয়েটা কি সত্যি সত্যিই ওকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরবে নাকি? সানা যতো কাছে আসছে তাসিরের হার্টবিট ততই ফাস্ট চলছে। সানা তাসিরের কাছাকাছি আসতেই তাসির চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তাসির চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো সামনে কেউই নেই। তাসির পেছনে তাকিয়ে দেখলো সানা নূরকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাসির যেন বোকা বনে গেল। তারমানে সানা আমার দিকে না, নূরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আর আমি কিনা কি ভেবে বসে আছি। এসব ভেবে তাসির নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মাড়লো।

অতঃপর সবাই বাসার ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরে ঢুকে নূর আর তানি দুজনেই আবারও হা হয়ে গেল। ভেতরেও সবকিছু একদম ফাইভ স্টার হোটেলের মতো সুন্দর।

সবাই যেয়ে সোফায় বসে পড়লো। নূর জিজ্ঞেস করলো।
…এখানে কি কেউ থাকে? না মানে সবকিছু এতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখছি তাই বললাম।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…না এখানে কেউ থাকেনা।তবে দেখাশোনার জন্য লোক রাখা আছে। তারাই এসে সবকিছু পরিস্কার করে রাখে।আর আজ আমাদের আসার কথা জানানো হয়েছিল তাই সব পরিস্কার করে রেখেছে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
..ওহহ।

তাসির বলে উঠলো।
…তো আজকের প্লান কি কি? প্রথমে আমরা কি করবো?

আদিত্য বললো।
….আপাতত আমরা একটু রেস্ট করবো। হাল্কা নাস্তা পানি করবো। তারপর আমরা সাইকেলিং করবো।

সাইকেলিং এর কথা শুনে নূর অবাক হয়ে তাকালো আদিত্যের দিকে। নূরের সাইকেলিং অনেক পছন্দ। ছোট বেলায় ওর দাদি ওঁকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলো। সেটা চালাতে অনেক মজা পেত নূর। তারপর বড়ো হওয়ার পর নূরের বাবার একটা পুরানো সাইকেল ছিল। সেটা চালিয়ে নূর স্কুলে যেতো। নূরের অনেক ভালো লাগতো সাইকেল চালাতে। কিন্তু ওর বাবার সাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আর কখনও সাইকেল চালাতে পারেনি। তাই হঠাৎ সাইকেলের কথা শুনে নূর একটু অবাক হয়ে যায়। আবার মনে মনে খুশিও হয়। অনেক দিন পর সাইকেল চালাতে পারবে এটা ভেবে।

তাসির উৎসাহিত কন্ঠে বললো।
…ওয়াও সাইকেলিং দ্যাটস গ্রেট আইডিয়া। অনেক দিন পর সাইকেলিং। ইট উইল বি ফান।

আবির বলে উঠলো।
….ইয়া। তারপর আমরা সুইমিং করবো আর পুল গেম খেলবো।

আদিত্য বললো।
…ওকে দেন। সবাই তাহলে একটু ফ্রেশ হয়ে নেওয়া যাক।
তারপর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…সানা তুই নূর আর তানিকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুম দেখিয়ে দে।

সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া।

তারপর একে একে সবাই উঠে গেলো ফ্রেশ হতে।

নূর বসে বসে ভাবছে আদিত্যকে পায়েসটা কিভাবে দিবে। এভাবে আমার পায়েস আনা উনি যদি পছন্দ না করেন তখন? এক কাজ করি ডাইনিং টেবিলে অন্য খাবার গুলোর সাথে রেখে দেই। তাহলে আর বুঝতে পারবে না কে এনেছে। নাস্তার সাথে ওটাও খেয়ে নিবে। হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

নূর দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো আপাতত ডাইনিং এরিয়ায় কেউ নেই। নূর মনে মনে খুশি হয়ে গেলো। এটাই সুযোগ এই ফাঁকে পায়েসটা রেখে চলে আসবো। নূর চুপিচুপি ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো। সাইড ব্যাগ থেকে পায়েসের বক্সটা বের করে যেই রাখতে যাবে। হঠাৎ পেছন থেকে আদিত্যের গলা শুনে চমকে পিছনে তাকালো নূর।

… তোমার হাতে ওটা কি?

নূর থতমত খেয়ে গেল। মনে হচ্ছে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গেছে। কি বলবে এখন ভেবে পাচ্ছে না। নূর আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলো।
….আ আ আসলে। ইয়ে মানে।আ আ আমি।

নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নিল। তারপর নিজেই বক্সটা খুলে দেখার চেষ্টা করলো কি আছে। নূর চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

বক্সের ভেতর পায়েস দেখে আদিত্য অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। নূর ওর জন্য পায়েস রান্না করে এনেছে? মা মারা যাবার পর আদিত্য আর কখনও পায়েস খায়নি। বাবা অবশ্য অনেকবার বুয়াদের দিয়ে পায়েস রান্না করিয়েছে। কিন্তু আদিত্য কখনো তা খায়নি। কিন্তু আজ নূর ওর জন্য পায়েস এনেছে। এটা ভাবতেই আদিত্যর মন ভরে উঠছে। আদিত্য মায়া ভরা চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…এটা তুমি আমার জন্য এনেছো?

আদিত্যের কথায় নূর চোখ খুলে তাকায়। তারপর মাথা ঝাকায়। মানে হ্যাঁ।

আদিত্য একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো।
…তাহলে আমাকে না দিয়ে এখানে রাখছিলে কেন?

নূর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
….না মানে।

….থাক আর মানে মানে করতে হবে না। একটা প্রিজে ঢেলে উপরে আমার রুমে নিয়ে আসো। আমি রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।

আদিত্য মুচকি হেসে চলে গেলো।
নূরও মনে মনে অনেক খুশী হলো। তারপর কিচেনে গিয়ে একটা প্রিজে একটু পায়েস ঢেলে ট্রেতে করে নিয়ে গেলো আদিত্যের রুমে।

আদিত্যের রুমের সামনে এসে নক করতে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা। নূর আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো আদিত্য রুমে নেই। ওয়াশরুমের পানির শব্দে নূর বুঝতে পারলো আদিত্য ওয়াশরুমে। নূর টি-টেবিলের ওপর ট্রেটা রেখে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগলো।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে নূর পেছনে তাকালো। নূর দেখলো আদিত্য খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছে। উদোম শরীরে সিক্স প্যাক বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখে পানি দেওয়ার কারণে সামনের চুলগুলো ভিজে কপালে লেপ্টে আছে। দেখতে কি মারাত্মক হট লাগছে। নূর লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ালো। মনে মনে ভাবলো ছি ছি নূর তুই একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলি? তুই কবে থেকে এতো লুচু হয়ে গেলি?

আদিত্য বাঁকা হেসে নূরকে বললো।
…হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এদিকে ঘুরো আমি টি শার্ট পরে নিয়েছি।

নূর মাথা নিচু করেই আদিত্যের দিকে ঘুরে আমতা আমতা করে বললো।
….আ আ আমি যাই তাহলে। আপনি পায়েসটা খেয়ে নিয়েন।

কথাটা বলে নূর যেতে নিলেই আদিত্য নূরকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
….দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছো? আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?

নূর চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
আদিত্য পায়েসের প্রিজটা হাতে নিয়ে বেডের ওপর বসে নূরকে বললো ।
….এখানে এসে বসো।

নূর আদিত্যের কথামতো ওর পাশে যেয়ে বসলো। আদিত্য পায়েসের প্রিজটা নূরের হাতে দিয়ে বললো।
…নেও পায়েসটা আমাকে খাইয়ে দেও।

নূর আদিত্যের দিকে চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
…আ আ আমি?

…হ্যাঁ, তুমি ছাড়া এখানে আর কেউ আছে নাকি? তুমি যখন এটা মনে রেখেছো যে, মা আমার জন্মদিনে পায়েস রান্না করতো। এটাও নিশ্চয় মনে আছে যে, মা আমাকে সেটা নিজের হাতে খাইয়েও দিতো। কাজ যখন করেছো তখন পুরোটাই করো। অর্ধেক কেন করবে?

নূর ভীষণ লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে ওড়নার কোণা আঙুলে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে লাজুক হাসলো।

আদিত্য আবার বললো।
…কি হলো নেও।নাহলে কিন্তু আমি খাবোনা।

নূর আর উপায় না পেয়ে প্রিজটা হাতে নিয়ে এক চামচ পায়েস নিয়ে আদিত্যের মুখের সামনে ধরলো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই হা করে পায়েসটা মুখে নিল। পায়েস মুখে নিতেই পায়েসের অপূর্ব স্বাদে আদিত্য আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।

নূর মনে মনে একটু ভয়ে আছে। নাজানি উনার কেমন লাগবে? যদি ভালো না হয়?
আদিত্য একটু পরে চোখ খুলে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো।
…অসম্ভব মজা হয়েছে। একদম আমার মায়ের মতো।

আদিত্যের কথা শুনে নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক উনার ভালো লেগেছে। এটা ভেবে নূরও একটা তৃপ্তির হাসি দিল।

দরজার আড়াল থেকে এতক্ষণ সানা সবকিছু দেখছে। ভাইকে এতো বছর পর পায়েস খেতে দেখে সানার চোখে খুশির পানি চলে এলো। ভাইকে এভাবে খুশি দেখে সানারও মন ভরে এলো। সানা একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে এলো।

পায়েস খাওয়ানো শেষে নূর চলে যেতে নিলে। আদিত্য নূরের হাত ধরে বললো।
…কাজ কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। মা আমাকে পায়েস খাওয়ানোর পরে কপালে একটা চুমুও কিন্তু দিতো।

নূর বেচারি লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এক পায়েসের জন্য ওকে কতকিছু করতে হচ্ছে।

আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
…এমনিতেও তোমার আমাকে রোজ একটা করে চুমু দেওয়ার কথা আছে। সেই হিসেবেই নাহয় চুমু দাও।

নূর মাথা নিচু করে ঝাকালো। মানে সে রাজি।
আদিত্য মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো।
নূর আদিত্যের কপালে চুমু দিয়ে সবসময়ের মতো দৌড়ে চলে গেলো।

তাসির নিজের রুম থেকে বেড় হতেই সানার সাথে ধাক্কা খেলো।
তাসির তড়িঘড়ি করে বললো।
…সরি সরি আমি আসলে খেয়াল করিনি।

সানা মুচকি হেসে বললো।
…হইছে হইছে। আর সরির মালা গাঁথতে হবে না।
হঠাৎ সানা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো। আবির তানির হাত ধরে একটা রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সানার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। সানা ফট করে তাসিরের হাত ধরে বললো।
…চলেন একটু মজা নেওয়া জাক।

তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?

..আরে এতো মানে মানে না করে আমার সাথে চলেন।কথাটা বলেই সানা তাসিরের হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল। আর তাসির বেচারা আর কি বলবে? সানা ওর হাত ধরে থাকায় এমনিতেই ওর বুকের ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে।

আবির তানিকে নিয়ে যে রুমে ঢুকেছে, সানা তাসিরকে নিয়ে এসে সেই রুমের দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। তাসির শুধু হা করে সানাকে দেখছে।

আবির তানিকে নিয়ে রুমের ভেতর এসে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে দুষ্টু হেসে তাকিয়ে থাকে।
তানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
…কি ব্যাপার? তুমি আমাকে এখানে আনলে কেন?

আবির দুষ্টু হেসে বললো।
…বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে একটা রুমে নিশ্চয় লুডু খেলার জন্য নিয়ে আসে না? কিসের জন্য নিয়ে আসে তা নিশ্চয় তুমি ভালো করেই জানো। নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাও? হুহ? দুষ্টু।

…মানেহ?

…আসলে এমন রোমান্টিক মহলে আমার না অনেক জোরে জোরে প্রেম পাচ্ছে।

…ছিইহ, অসভ্য। তোমার মাথায় কি সারাক্ষণ এসবই ঘোরে? কোনো ভালো কিছু আসে না?

আবির বাঁকা হেসে ঋষি মুনিদের মতো হাত উঁচিয়ে বললো।
…..ভালো কথা, ভালো কাজ এগুলো সব মোহ্ মায়া। এসবে কিছুই নেই। এসব থেকে বেড়িয়ে আসো বালিকে। তবেই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

তানি একটু রাগী স্বরে বললো।
…সরোতো এখান থেকে। যত্তসব ঢং।
কথাটা বলে তানি আবিরকে ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই আবির খপ করে তানির হাত ধরে সিনেমার ভিলেনদের মতো সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….মুহা হা হা হা,,, তুমি কি ভেবেছো সুন্দরি? তোমাকে আমি এভাবে নির্জন জায়গায় এনে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? কখনোই না। তুমি এখন আমার শিকার। আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। হু হা হা হা

তানি ভালো করেই বুঝতে পারছে আবির ড্রামা করছে। তাই তানিও নিজের ড্রামা চালু করে দিলো।অসহায় দুঃখী ভাব ধরে কপালে এক হাত ঠেকিয়ে ন্যাকা কান্না করে বললো।
…নেহিইইইইই,,,ছাড় আমাকে ছেড়ে দে সয়তান। আমার এতবড় সর্বনাশ করিসনা।

আবির আবারও সয়তানি হেসে বললো।
…কখনোই না। আমার হাত থেকে আজ তোর রেহাই নেই।

…ছেড়ে দে আমাকে। তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু আমার মন পাবি না।

আবির আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই দরজার কাছে কারোর জোরে জোরে হাসার শব্দ শুনতে পেল।

আবির আর তানি দুজনেই একটু চমকে গেল। আবির ধীরে ধীরে যেয়ে দরজাটা খুলে দিতেই তাসির আর সানা হাসতে হাসতে নিচে পরে গেলো। তাসির মাটিতে পড়ে পেটে হাত দিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। সানাও সমানে হেসে যাচ্ছে। কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেনা। এতক্ষণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ওরা সবকিছুই শুনছিলো। শেষের দিকে এসে কিছুতেই ওরা হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলোনা। দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

তানি বেচারির ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। আবিরের ওপর রাগও হচ্ছে প্রচুর। সব ওর জন্যই হয়েছে। কি দরকার ছিল এতো ঢং করার। তানি আর থাকতে না পেরে দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো।

তাসির আর সানাতো এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আবির একটু বিরক্ত হয়ে বললো।
…এ এ এতো হাসার কি আছে? মনে হচ্ছে জন্মের হাসি একদিনেই হেসে শেষ করবি।

তাসির কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললো।
…তোদের দুজনকেই মিউজিয়ামে রাখা উচিত। লাইক সিরিয়াসলি ইয়ার , দ্যাট ওয়াজ এপিক। বলেই আবারও হাসি শুরু করে দিল তাসির।

আবিরও ওদের সাথে আর না পেরে কপট রাগ দেখিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।

চলবে….

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৫

★ সবাই বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছে সাইকেলিং করার জন্য। একটু পরে কিছু লোক এসে ছয়টা ব্রান্ড নিও সাইকেল দিয়ে গেল। নূরের সাথে বাকি সবাইও অনেক এক্সাইটেড সাইকেল দেখে তানি আর সানা দৌড়ে যেয়ে নিজেদের সাইকেল সিলেক্ট করে নিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…তুমিও যাও তোমার সাইকেল সিলেক্ট করো।

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সাইকেলের কাছে গেল। ওর অনেক আনন্দ লাগছে। আজ অনেকদিন পরে সাইকেল চালাবে।

এক এক করে সবাই যার যার সাইকেল সিলেক্ট করে নিল। আদিত্য সবার উদ্দেশ্যে বললো।
…ওঁকে দেন। লেটস স্টার্ট দা রেস। ওয়ান, টু, থ্রি বলেই সবাই সাইকেলিং শুরু করে দিল।

সবাই খুব হাসি খুশি ভাবেই সাইকেলিং করছে। ফার্মহাউসের আশেপাশের এলাকা সবই আদিত্যদের। তাই এইদিকে বাইরের মানুষ তেমন আসে না। চারিদিকে শুধু নানারকমের গাছগাছালিতে ঘেরা। মাঝখান দিয়ে রাস্তা। খুব সুন্দর নির্জন আর নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ। এমন একটা জায়গায় সময় কাটাতে নূরের খুব ভালো লাগছে। ওর কখনো বাড়ি আর স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এই প্রথম এত সুন্দর একটা জায়গায় এসে নূরের মনটা ভরে উঠছে। ইচ্ছে করছে এখানেই সারা জীবন থেকে যেতে।

সাইকেলিং করতে করতে ওরা অনেকটা দূরে চলে এসেছে। আদিত্য বলে উঠলো।
….আর বেশি দূর যাওয়া যাবে না। নাহলে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।
কিছুটা দূরে রাস্তার মাঝে থাকা স্পিড ব্রেকার দেখিয়ে বললো।
…ওইযে স্পিড ব্রেকারটা দেখছো ওইখানে যে আগে পৌঁছাবে সেই উইনার হবে। তারপর আমরা ওখান থেকেই ব্যাক করবো।

আদিত্যের কথামতো সবাই ফাস্ট হওয়ার জন্য যে যার আগে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তানি আবিরের সাথে পেরে উঠছে না। তাই মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি পাকালো।আবিরের দিকে তাকিয়ে ন্যাকামির স্বরে বললো।
…আবিইইর শোনোওওনা।

তানির এমন মধুর ডাকে আবির দাঁত কেলিয়ে বললো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ বলোনা, কিউটি।

আবির তানির দিকে তাকাতেই তানি নিজের ঠোঁট দুটো চোখাঁ করে চুমু দেখালো।
আবির বেচারা শক খেয়ে ওখানেই থেমে গেল সাইকেল নিয়ে। আর তানি দুষ্টু হেসে আবিরের আগে চলে গেলো। আবির দাড়িয়ে বোকা বনে গেল।

তানির এসব কাজ দেখে সানার মাথায়ও একই বুদ্ধি আসলো।সানা তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…তাসির ভাইয়া।

সানার ডাকে তাসির সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…হ্যা বলো

তাসির তাকাতেই সানা দুষ্টু হেসে একটা চোখ মেরে দিলো।
সানার এহেন কাজে তাসির বড়সড় একটা শক খেয়ে সাইকেলের ব্যালেন্স না রাখতে পেরে সাইকেল নিয়ে পরে গেল।
আর সানা হাসতে হাসতে তাসিরের আগে চলে গেলো।

আদিত্য ইচ্ছা করেই সাইকেল স্লো চালাচ্ছে। যাতে নূর আগে যায়।
এখন সামনে শুধু মেয়েরা আছে। নূর সবার আগে। এবং শেষমেশ নূরই জিতে যায়। নূর সাইকেল থামিয়ে বলে উঠলো।
…ইয়েএএএ আমি জিতে গেছি।

তানি আর সানা এসে হাসি মুখে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…কংগ্রাচুলেশন ইয়ার। তুই জিতে গেছিস।
নূরও হেসে দিয়ে বললো।
…থ্যাংক্স।

আদিত্য সাইকেল থামিয়ে, ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি নিয়ে নূরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূরকে এমন হাসি খুশি আর প্রাণ চঞ্চল দেখে আদিত্যের মনটাও খুশিতে ভরে উঠছে। নূরের খুশির
জন্যই তো ও এসব করেছে। নূরের ডাইরিতে আদিত্য পড়েছিলো যে নূরের সাইকেল চালানো খুব পছন্দ। তাইতো এই সাইকেলিং এর ব্যবস্থা করেছে আদিত্য ।
তোমার মুখের এই হাসির জন্য আমি সব করতে রাজি নূরপাখি।

একটু পরে সবাই আবার ব্যাক করলো। কিছুদূর আসতেই হঠাৎ নূরের সাইকেলের নিচে লোহা জাতীয় কিছু একটা পরায়, নূরের সাইকেলের টায়ার পানচার হয়ে যায়। নূর একটু ঘাবড়ে যেয়ে সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।

নূরের দাঁড়িয়ে পরা দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
…কি হয়েছে দাঁড়িয়ে পরলে কেন?

নূর অসহায় মুখ করে বললো।
… কি জানি? হঠাৎ কিভাবে যেন সাইকেলের টায়ার পানচার হয়ে গেলো?

আদিত্য নিজের সাইকেল থেকে নেমে নূরের সাইকেলের কাছে গেল। নিচে বসে চেক করে দেখলো, সত্যিই টায়ার পানচার হয়ে গেছে। আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে একটু চিন্তার সুরে বললো।
…হুম। টায়ারতো সত্যিই পানচার হয়ে গেছে।

নূর আদিত্যের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বললো ।
…তাহলে আমি এখন যাবো কি করে?

আদিত্য কিছু একটা ভেবে বললো।
… এক কাজ করো।এটা এখানেই ছেড়ে দেও। আর তুমি আমার সাথে আমার সাইকেলে চলো।

নূর একটু ইতস্তত ভাবে বললো।
…আ আ আপনার সাথে?

…হ্যাঁ। তাছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।বাকিরা তো সবাই অনেকক্ষানি এগিয়ে গেছে । তোমার কি আমার সাথে যেতে সমস্যা হবে?

নূর মাথা নিচু করে ঝাকালো। মানে না, সমস্যা হবে না।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…তাহলে চলো।

নূর বললো।
….তাহলে এই সাইকেলটার কি হবে?

…চিন্তা করোনা আমার লোকেরা এসে নিয়ে যাবে। এখন চলো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যের সাথে ওর সাইকেলের কাছে গেল। আদিত্য বললো।
…তুমি সামনে বসো।

আদিত্যের কথামতো নূর দুই পা একপাশে ঝুলিয়ে দুই হাত দিয়ে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে সামনে উঠে বসলো। নূর বসার পর আদিত্যও নূরের পেছনে সিটে উঠে বসলো। তারপর নূরের দুই পাশ দিয়ে দুই হাত নিয়ে হ্যান্ডেল ধরে চালাতে শুরু করলো।
আদিত্যের এতো কাছে থাকায় নূরের ভেতরে লজ্জা আর ভালো লাগা মিশ্রিত এক অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে। বুকের ভেতর জোরে জোরে ধুকধুক করছে। নূর মনে মনে ভাবছে আচ্ছা, আমারতো ইচ্ছা ছিল আমার স্বপ্নের রাজকুমারের সাথে এভাবে একসাথে সাইকেলে ঘুরবো। তাহলে কি উনিই আমার সেই স্বপ্নের রাজকুমার? সেই সাদা ঘোড়ায় চড়া রাজকুমার? কথাটা ভাবতেই নূরের চোখ মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো।

নূরকে এতো কাছে পেয়ে আদিত্য আবারও নূরের মোহে ডুবে যাচ্ছে। নূরের শরীর থেকে আসা সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা আদিত্যকে আরো বিমোহিত করে দিচ্ছে। বাতাসের কারণে নূরের সামনের কিছু চুল উড়ে ওড়নার বাইরে বেড়িয়ে আসছে। আর সেটা আদিত্যের মুখে বাড়ি খাচ্ছে। আদিত্য আবেসে চোখ বন্ধ করে নূরের চুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে। আদিত্য ক্রমশ নূরের নেশায় আসক্ত হয়ে পরছে। ধীরে ধীরে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে। আদিত্যের ইচ্ছে করছে সময়টাকে এখানেই থামিয়ে দিতে। এভাবেই নূরের সাথে জনম জনম ধরে একসাথে থাকতে।
——————————————

একটু পরে সবাই আবার ফার্মহাউসে ফিরে আসে। ভেতরে ঢুকে সবাই সোফায় বসে পরে।সাইকেলিং করে সবাই হালকা টায়ার্ড হয়ে গেছে। আদিত্য সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
…লাঞ্চে সবাই কে কি খাবে বলো।আমি অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি। এটা যেহেতু শহর থেকে কিছুটা দূরে। তাই খাবার আসতে সময় লাগবে। এইজন্য একটু আগেই অর্ডার করতে হবে।

আবির বাঁকা হেসে মনে মনে ভাবলো। তখন আমাদের সাথে চিটিং করেছিলে নাহ? এখন দেখাচ্ছি মজা । আবির তাসিরের দিকে চোখ টিপ দিয়ে বুঝালো ব্যাপারটা। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…ভাই এতগুলো মেয়ে মানুষ থাকতে আমরা বাইরের থেকে কেন খাবার অর্ডার করবো। ওদের বলো ওড়াই রান্না করবে। কিচেনেতো সবকিছু আছেই।

তাসিরও আবিরের ইশারা বুঝতে পেরে ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।
… হ্যাঁ আদি ও ঠিকই বলেছে। সবসময় বাইরের খাবার ভালো লাগে না। মেয়েদের বললে ওরা নিশ্চয় না করবেনা? বাঁকা হেসে আরচোখে সানার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো তাসির।

সানা আর তানি রাগী চোখে আবির আর তাসিরের দিকে তাকালো। ওরা ভালোই বুঝতে পারছে যে এরা বদলা নেওয়ার জন্যই এসব করছে।

আবির একটু ধমকের সুরে বললো।
….কি বলছিস এসব?ওরা এখানকার মেহমান। আর ওদের দিয়ে আমি কাজ করাবো? এটা কেমন কথা।

আবির বললো।
…মেহমান কোথায়? এরাতো সব নিজেদেরই লোক। একটা আমার বোন।একটা আমার হবু বউ। আর একটা আমার ভাব,,,আই মিন আমার হবু শালিকা। এখানেতো সব আমরা
আমরাই তাইনা?
তারপর তানির দিকে তাকিয়ে আবার বললো।
….আমিওতো দেখতে চাই। ভবিষ্যতে আমার কপালে কেমন খাবার জুটবে?

তানি চোখ গরম করে তাকালো আবিরের দিকে।

সানাও রাগ দেখিয়ে বললো।
…ভাইয়া আমি রান্না করতে পারিনা সেটা তুই জানিস না?

এতক্ষণে নূর বলে উঠলো।
….সমস্যা নেই। আপনারা বলুন কি খাবেন? আমি রান্না করে দিচ্ছি।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…না না তোমার কষ্ট করতে হবে না। ওদের কথা বাদ দেও । আমি খাবার অর্ডার করে দিচ্ছি।

…আমার কোনো সমস্যা হবে না। আপনারা শুধু বলুন কি খাবেন?

তানি বলে উঠলো।
… হ্যাঁ ভাইয়া নূর অনেক ভালো রান্না করতে পারে। স্পেশালি ওর বিরিয়ানি রান্নাটা সেই মজা হয়।

আবির উৎসাহ নিয়ে বললো।
…ব্যাচ তাহলে তো আর কথায় নেই। এখন তো নূরের হাতের বিরিয়ানি না খেলে চলবেই না।

সবার চাপাচাপিতে আদিত্যও আর না করতে পারে না। আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…ঠিক আছে। তবে নূরকে তোরা সবাই হেল্প করবি।

নূর বললো।
…তার দরকার নেই। আমাকে শুধু কোথায় কি আছে তা দেখিয়ে দিলেই চলবে।

আদিত্য বললো।
…ঠিক আছে চলো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।

তারপর ওরা দুজন কিচেনে গেল। আদিত্য নূরকে সবকিছু দেখিয়ে দিচ্ছে। নূর রান্না শুরু করলে আদিত্য ওকে টুকটাক হেল্প করছে।

তানি আবিরের দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে ওখান থেকে উঠে গেলো।
আবির মনে মনে ভাবলো, আজ তোর খবর আছে ভাই। শুধু শুধু কেন খ্যাপাতে গেলি? এখন বোঝ ঠেলা? আবিরও উঠে গেলো তানির পিছে ওর রাগ ভাঙানোর জন্য।

সানা তাকিয়ে তাকিয়ে আদিত্য আর নূরকে দেখছে।
তাসির সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…কি দেখছো এভাবে?

তাসিরের কথায় সানা তাসিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
… নূর আর ভাইয়াকে দেখছি। ভাইয়াকে আমি এর আগে এতো হাসি খুশি প্রাণবন্ত কখনো দেখিনি। ওদের একসাথে কতো সুন্দর মানিয়েছে তাইনা?

তাসির মুচকি হেসে বললো।
…হুম।

…নূর আপু কতো সুন্দর দেখতে। ইশশ আমিও যদি ওরকম সুন্দর হোতাম।

সানার কথা শুনে তাসির ভ্রু কুঁচকে আনমনেই বলে উঠলো ।
…কে বলেছে তুমি সুন্দর না? তুমিও অনেক সুন্দর।

সানা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…কিজে বলেননা? আমি আর সুন্দর? আমার মত শ্যামলা চেহারার নাক বোচা মেয়েকে আপনার সুন্দর মনে হয়?

তাসির নিজের অজান্তেই বলে উঠলো।
… শুধু ফর্সা মেয়েরাই সুন্দর হয় না। শ্যামলা মেয়েরা দেখতে আরো বেশি সুন্দর হয়। তাদের চেহারায় আলাদা একটা মায়া থাকে। আর তোমাকে এই বুচি নাকে আরো বেশি কিউট লাগে তাকি জানো? নিজেকে কখনো কারোর থেকে ছোট মনে করবে না। আমার চোখেতো তুমি দুনিয়ায় সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।

তাসিরের কথায় সানা সন্দেহের নজরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

তাসিরের এতক্ষণে হুঁশ আসে ও কি বলে ফেলেছে। শিট্ আবেগের বসে এসব কি বলে ফেললাম। এখন যদি সানা সব বুঝতে পারে তখন? এসব ভেবে তাসির আমতা আমতা করে বললো।
…আমি একটু বাইরে থেকে আসছি। বলেই তাসির তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে উঠে গেলো।

তাসির চলে যেতেই সানা বাঁকা হেসে মনে মনে বললো।
…তারমানে আমার সন্দেহই ঠিক ছিল। আপনার উপর আমার আগে থেকেই সন্দেহ ছিল। আপনি যখন আমার দিকে তাকাতেন। তখন আপনার চাহনিতে আমি অন্য কিছু দেখতে পেতাম। আপনার চোখ অন্য কিছু বলতো। যেটা আমি বুঝতে পারতাম। কিন্তু আমি শিওর ছিলাম না।তবে আজ আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর হয়ে গেছ যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন। ছেলেটা একটু বোরিং,তবে ব্যাপার না চলবে। তো মিষ্টার তাসির, তৈরি হয়ে যান আমার জালওয়া দেখার জন্য। এসব ভেবেই সানা রহস্যময় হাসি দিল।

একটু পরে আবির এসে তাসির আর আদিত্যকে ডাকতে লাগলো।

তাসির এসে বললো।
…কি হয়েছে এভাবে চিল্লাছিস কেন?

…ইয়ার আর কতক্ষণ বসে থাকবো। আমরা পুলে কখন নামবো?

ওদের কথার মাঝে আদিত্য চলে এলো।আদিত্যকে দেখে আবির দুষ্টু হেসে বললো।
…কি ব্যাপার আজ কি কিচেনে বিনামূল্যে চাওল বিতরণ করছে নাকি, যে তুই ওখান থেকে সরছিসিই না।

আদিত্য দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…সাট আপ ইডিয়ট।

আবিরের কথায় তাসির একটু হাসলো। তারপর আদিত্যর দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস হয়ে বললো।
…বায়দা ওয়ে আজতো ভালো সুযোগ আছে। নূরকে তোর মনের কথাটা বলে দে।

আদিত্য বললো।
… না আজ না। আমি চাই নূর আমার সাথে আরেকটু ফ্রী হোক। তাই আজকের দিনটা ও ইনজয় করুক। আমার সাথে সময় কাটাক।এভাবে ও আমার সাথে ফ্রী হয়ে যাবে। ভাবছি পরশু দিন নবীন বরন উৎসব আছে। ওইদিনই ওকে বলবো সবকিছু।

তাসির মুচকি হেসে বললো।
…ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস। এখন চল এই আবিরের বাতিক আগে পুরোন করি।

আদিত্য হেসে উঠে বললো।
…হুম চল।

তারপর ওরা তিনজন সুইমিং পুলের দিকে গেল।

নূর রান্না শেষ করে বেড়িয়ে আসতেই সানা ওকে ধরে উৎসাহ নিয়ে বললো।
…নূর আপু চলো আমরা ছাদ থেকে ঘুরে আসি। ছাদ থেকে চারিদিকে অনেক কিছু দেখা যায়। অনেক সুন্দর লাগে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
…ঠিক আছে চলো।

নূর তানি আর সানা ছাদে উঠে গেলো। নূর মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে দেখতে লাগলো। জায়গাটা সত্যিই অপূর্ব।যতো দেখি ততই ভালো লাগে। ছাদের চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ ওরা নিচে সুইমিং পুলের দিকে তাকালো।

ছেলেরা তিনজনই থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট আর হাতা কাটা টিশার্ট পরেছে । একটু পরে আবির যেয়ে সাউন্ড বক্সে গান প্লে করলো।

♬ ♬ জিনেকে হে চারদিন
হোওও ও ও ও ও ও
বাকিহে বেকার দিন
৷ হোওও ও ও ও ও ও
যায়ে যায়ে, যায়ে যায়ে
এক বার যো যায়ে
জওয়ানি ফির না আয়ে
হে হে জওয়ানি ফির না আয়ে♬

গানের তালে আবির আর তাসির তোয়ালে দুই পায়ের মাঝে নিয়ে সালমান খানের স্টেপ করছে আর উড়াধুড়া ডান্স করছে।

ওরা তিনজন ছাদের ওপর থেকে এসব দেখে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

চলবে….