#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩০
★ আদিত্যকে দেখে নূর যেন নতুন প্রাণ ফিরে পেল। আদিত্যের দিকে করুণ ভাবে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো। নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্যের কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর কলিজার ভেতর কেউ চাকু ঢুকিয়ে কলিজাটাই ছিড়ে আনছে।
নূরের কাছে থাকা ছেলেটা আদিত্যদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..এই তোরা কারা? এখানে কি করছিস? দেখছিস না এখানে ইম্পর্টেন্ট একটা কাজ চলছে? নিজেদের ভালো চাসতো, এখান থেকে চলে যা।
আদিত্য নূরের দিক থেকে নজর সরিয়ে হিংস্র চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো। আদিত্যর চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে উঠেছে। চোয়াল শক্ত করে দুই হাত শক্ত করে মুঠ করে আছে। আদিত্যকে এই মূহুর্তে কোনো হিংস্র বাঘের মতো লাগছে।
আদিত্য আর এক মূহুর্তও দেরি না করে দৌড়ে যেয়ে নূরের কাছে থাকা ছেলেটার কলার চেপে ধরে টেনে তুললো। তারপর নিজের মাথা দিয়ে ছেলেটার মাথায় জোরে একটা হিট করলো। সাথে সাথে ছেলেটা ছিটকে নিচে পরে গেলো। আদিত্য আবার যেয়ে ছেলেটার বুকের ওপর বসে এলোপাতাড়ি ছেলেটার মুখে ঘুষাতে লাগলো।
এদিকে আবির আর তাসির বাকি দুজনকে ধরে আচ্ছা মতো পেটাতে লাগলো।
আদিত্য মারতে মারতে বলতে লাগলো।
….ইউ বাস্টার্ড, তোর সাহস কি করে হলো নূরের সাথে এসব করার? সাহস কি করে হলো ওকে ছোঁয়ার? তোকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না।আই উইল কিল ইউ বাস্টার্ড। আই উইল কিল ইউ।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো এদিক ওদিক কিছু খুজতে লাগলো। কিছুটা দূরে একটা রড দেখতে পেল। আদিত্য দৌড়ে যেয়ে রডটা হাতে নিল। তারপর ছেলেটার কাছে যেয়ে রড উঁচু করে মাথায় বারি দিতে নিলেই, তাসির দৌড়ে এসে ওকে পেছন থেকে আটকে ধরে বলে উঠলো।
….দেখ ছেলেটা এমনিই আধমরা হয়ে গেছে। এই রড দিয়ে মারলে ও একদম মরে যাবে।
আদিত্য ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
…. মরুক, ওর মরে যাওয়ায় উচিৎ। ও আমার প্রাণপাখির দিকে হাত বাড়িয়েছে। ওর এই দুনিয়ায় বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। ওকেতো আজ মরতেই হবে। তুই ছাড় আমাকে।
নূর এসব আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
তাসির সেটা দেখে আদিত্যকে বললো।
….. দেখ নূর জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। তুই নূরের কাছে যা। এদের আমরা দেখছি।
তাসিরের কথা শুনে আদিত্য চমকে উঠে নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো,নূর সত্যি সত্যিই অজ্ঞান হয়ে গেছে।
আদিত্য হাতের রডটা ঠাস্ করে নিচে ফেলে দিয়ে দৌড়ে নূরের কাছে গেল। নূরের মাথার কাছে হাটু গেড়ে বসে দুহাতে নূরের মাথাটা নিজের কোলের উপরে তুলে নিল। নূরের গালে হাত দিয়ে অস্থির হয়ে বলতে লাগলো।
…..এ এই নূর,নূরপাখি ওঠনা। দেখো আমি চলে এসেছি তোমার কাছে। আর কোনো ভয় নেই। কেউ তোমার কিছু করতে পারবে না। প্রাণপাখী, ওঠনা প্লিজ।
আদিত্য আর সময় নষ্ট না করে, নূরকে কোলে তুলে নিল। তারপর তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই তিনজনকে আমার গোডাউনে নিয়ে যা। আমি পরে এদের খবর নিচ্ছি।
আদিত্যর কথায় তাসির মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
আদিত্য নূরকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
——————————–
রাত ১১টা
আদিত্যের বিছানায় শুয়ে আছে নূর। এখনো জ্ঞান ফেরেনি ওর। আদিত্য নূরকে নিজের ফ্লাটে নিয়ে এসেছে। ফ্লাটে এসে আদিত্য ডক্টরকে ফোন করে নিয়ে আসে। ডক্টর এসে নূরকে চেক আপ করে গেছে। বলেছে শারীরিক ভাবে তেমন কোনো আঘাত পায়নি। ভয় আর মানসিক প্রেশারের কারণে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরে আসবে।
নূরের মাথার কাছে টুলের ওপর বসে আছে আদিত্য। নিজের এক হাত দিয়ে নূরের এক হাত ধরে মুখের কাছে এনে নূরের হাতের তালুতে একটা চুমু দিল। তারপর নূরের মুখের ওপর ঝুঁকে আরেক হাত দিয়ে নূরের মাথায় আর গালে হাত বুলাতে লাগলো। আদিত্য মনে মনে ভাবছে, আজ কি ভেবেছিল, আর কি হয়ে গেলো? আজতো ও নূরকে নিজের মনের কথা বলতে চেয়েছিল। নূরের জন্য কতো সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। সেগুলো কিছুই নূরকে দিতে পারলো না।
আদিত্য আরেকটু ঝুকে নূরের কপালে আঘাতের স্থানে নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল। কিছুক্ষণ ওভাবেই ঠোঁট ছুঁইয়ে রাখলো। তারপর নূরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নূরের গালে হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করে বললো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখি। আমি তোমাকে প্রটেক্ট করতে পারিনি। আমি তোমাকে একা রেখে না গেলে, তোমার সাথে এসব কিছুই হতোনা। আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। আমি তোমাকে প্রমিজ করছি। আর কখনো তোমাকে একা ছাড়বো না। তোমার কোনো ক্ষতি হতে দেব না। খুব শীঘ্রই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। বাবা গ্রাম থেকে ফিরে আসলেই, বাবাকে আমাদের বিয়ের কথা বলবো। তারপর আমার প্রাণপাখী টাকে বউ করে আমার ঘরে নিয়ে আসবো। তখন আর তোমাকে এক সেকেন্ডের জন্যেও আমার চোখের আড়াল হতে দিবোনা। একদম আমার কলিজার ভেতর লুকিয়ে রাখবো। যাতে কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে না পারে।
আদিত্যের নজর গেল নূরের ঠোঁটের দিকে। ঠোটটা ফেটে ঠোঁটের কোনায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে । এটা দেখে আদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। আবারও ওই সয়তান গুলোর কথা মনে পরলো। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে সবগুলোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে।
আদিত্য একটা টিস্যু ভিজিয়ে আলতো করে নূরের ঠোঁট মুছে দিতে লাগলো।
নূর হঠাৎ একটু নড়ে উঠলো। এটা দেখে আদিত্যের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আদিত্য আস্তে করে নূরকে ডাকতে লাগলো।
নূর চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই কেমন যেন ছটফট করতে লাগলো। ওর চোখের সামনে সেই ভয়ানক দৃশ্যটা ভেসে উঠছে। হঠাৎ নূর একটা চিৎকার দিয়ে চোখ খুলে উঠে বসলো। তারপর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাটু ভাজ করে, হাটুর ভেতর মুখ লুকিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে ওর। আদিত্য নূরের কাঁধে হাত দিতে গেলেই, নূর ভয় পেয়ে ছিটকে সরে যায়।
আদিত্য নূরকে অভয় ফিল করানোর জন্য, নিজের দুই হাত হ্যান্ডসআপ এর মতো উঁচু করে বললো।
……ওকে ওকে আমি ধরছি না। তুমি শান্ত হও। দেখো কোনো ভয় নেই। এদিকে একবার তাকাও। দেখ এটা আমি। আমি আদিত্য। তুমি এখন আমার কাছে সেফ আছো। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তুমি প্লিজ ভয় পেয়োনা।
নূর ধীরে ধীরে একটু শান্ত হলো। আস্তে করে মাথাটা তুলে আদিত্যের দিকে তাকালো।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলো, যে নূর এখন সেফ আছে।
নূর হঠাৎ আদিত্যের কাছে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কেঁদে উঠলো।
আদিত্যও নূরকে দু’হাতে জড়িয়ে বুকের মাঝে আগলে নিল। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
নূর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো।
….আ আ আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়? আমিতো কখনো কারোর কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে আমার সাথেই কেন এমন হয়? আমি কি এতই খারাপ?
নূরের চোখের পানিতে আদিত্যের শার্ট ভিজে পানি পানি হয়ে যাচ্ছে। নূরের কান্না যেন আদিত্যের বুকে তীরের মতো বিঁধছে। কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না ওর।আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো।
…শুশশ শুশ…. কান্না থামাও প্লিজ। তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ ওই সয়তান গুলোর। এবং তার শাস্তিও ওরা পেয়ে যাবে। তুমি এখন একটু শান্ত হও প্লিজ। এতো কান্না করলে তোমার শরীর খারাপ করবে।
১০ মিনিট ধরে কান্না করার পর নূর ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। হঠাৎ ওর হুঁশ আসে যে ও কোথায়। এবং হুঁশ আসতেই নূর লজ্জায় পরে যায়। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের পিঠ থেকে হাত নামিয়ে নেয়।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ও নিজেও নূরকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে।
নূর মাথা নিচু করে বসে থাকে।
আদিত্য নূরকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো।
…..তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে নেও, ভালো লাগবে। আর শাড়িটাও অনেক ময়লা হয়ে গেছে। চেঞ্জ করে নেও।
নূর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।
….কি কিন্তু আমার কাছেতো কোনো জামা কাপড় নেই। চেঞ্জ করে কি পরবো?
আদিত্য একটু ভাবনায় পরে গেলো। এটাতো ও চিন্তাই করেনি। এ বাসায়তো কোনো মেয়ে মানুষও নেই যে তার জামা কাপড় এনে দিবে নূরকে।
আদিত্য কিছু একটা ভেবে, উঠে গিয়ে নিজের কাবার্ড থেকে একটা টিশার্ট আর টাওজার বের করে নূরের সামনে ধরে বললো।
…..এই নেও , আপাতত এগুলই পরে নেও।
নূর চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
….এ এ এগুলো?
…..হ্যাঁ, তাছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। এই বাসায় কোনো মেয়ে মানুষ নেই যে তার জামা কাপড় তোমাকে দিবো। আর এতরাতে কোনো দোকানপাটও খোলা নেই। তুমি এভাবে ময়লা কাপড়ে থাকলে, ইনফেকশন হতে পারে। তাই বলছি আপাতত এটা পরে নেও।
নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে মাথা ঝাকিয়ে আদিত্যর হাত থেকে শুধু টিশার্ট টা নিয়ে বললো।
….. আ আমার পেটিকটের নিচে প্লাজু পরা আছ। তাই শুধু টিশার্ট হলেই চলবে।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।
তারপর নূরের হাতে একটা তোয়ালে দিয়ে ওয়াসরুমে পাঠিয়ে দিল।
আদিত্য ততক্ষণে কিচেনে এসে নূরের জন্য সুপ রান্না করতে লাগলো।
রান্না শেষ হলে একটা বোলে সুপ ঢেলে ট্রের ওপর রেখে নূরের কাছে গেল।
রুমের ভেতরে ঢুকে সামনে তাকাতেই আদিত্য থ হয়ে গেলো।
নূর মাত্রই ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছে। পরনে ওর দেওয়া টিশার্ট। চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে আছে। এই প্রথম আদিত্য নূরের চুল দেখলো।কি সুন্দর লম্বা লম্বা দীঘল কালো চুল। মনে হচ্ছে কোনো রুপকথার রাজকন্য। আদিত্য নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। নিজেকে কন্ট্রোল করা অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে ওর জন্য। মনে মনে ভাবছে, মেয়েটা বোধহয় আমাকে চরিত্রহীন করেই ছাড়বে।
নূর আদিত্যকে দেখে প্রচুর লজ্জায় পরে যায়। তাড়াতাড়ি করে হাতের তোয়ালেটা বুকের ওপর দিয়ে ওড়নার মতো করে নেয়।
আদিত্য নিজের মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তারপর আবার নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
…..গরম গরম সুপটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও।
নূর বলে উঠলো।
….আমার ক্ষিদে নেই। এখন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
আদিত্য ট্রেটা টি টেবিলের ওপর রেখে নূরের হাত ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসালো। তারপর বলে উঠলো।
….তা বললে তো হচ্ছে না। খাবার না খেলে ডক্টর যে পেইন কিলার দিয়ে গেছে, সেগুলো কিভাবে নিবে? তাই লক্ষী মেয়ের মতো সুপটা খেয়ে নেও। তারপর মেডিসিন নিতে হবে।
নূর অসহায় মুখ করে বললো।
…..সত্যিই বলছি, আমার একদম খেতে ইচ্ছে করছে না।
আদিত্য সুপের বোলটা হাতে নিয়ে, এক চামচ সুপ নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে বললো।
….কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। চুপচাপ এখুনি খেয়ে নেও।
নূর আর উপায় না পেয়ে হা করে সুপটা মুখে নেয়।
খাওয়া শেষে আদিত্য নূরকে মেডিসিন দিয়ে দেই।
একটু পরে নূর আমতা আমতা করে বললো।
…বা বাসায় কখন যাবো?
আদিত্য বললো।
….রাত অনেক হয়েছে। সকালে বাসায় পৌছে দিয়ে আসবো। তুমি চিন্তা করোনা।
নূর মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তাহলে এখন যাও বেডে যেয়ে ঘুমিয়ে পরো।
নূর একটু ইতস্তত ভাবে বললো।
…আ আপনি কোথায় ঘুমাবেন?
…..আমি অন্য রুমে ঘুমাবো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে উঠে যেয়ে বেডে কাত হয়ে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই নূরের চোখের সামনে আবারও সেই ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে উঠলো। নূর ঝট করে চোখ খুলে উঠে বসলো।
আদিত্য দেখতে পেয়ে দৌড়ে নূরের কাছে এসে বেডের ওপর বসে চিন্তিত স্বরে বললো।
….কি হয়েছে? আবার ভয় পেয়েছ?
নূর ভীতু ভাবে মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।
আদিত্য নূরের দুই হাত নিজের হাতের ভেতর নিয়ে বললো।
…..ভয় কিসের? আমি আছিতো তোমার পাশে। তুমি চিন্তা করোনা। তোমার ঘুম না আসা পর্যন্ত আমি এখানেই বসে আছি। তুমি শুয়ে পরো।
নূর আবার শুয়ে পরলো। আদিত্য বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে নূরের পাশে বসে, নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
ধীরে ধীরে নূর একসময় ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল। আদিত্যও নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হেলান দেওয়া অবস্থাতেই ঘুমিয়ে পরলো।
———————————-
সকালের মিষ্টি রোদ জানালার কাচ ভেদ করে মুখে এসে পরতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে তাকালো। নিজেকে অন্য কোনো জায়গায় দেখে নূর একটু চমকে গেল। তারপর কালকের কথা সব মনে পরলো ওর। হঠাৎ নূরের নাকে সেই মাতাল করা ঘ্রাণটা এসে লাগলো। নূর বুঝতে পারছে না ঘ্রাণ টা কোথা থেকে আসছে? নূর নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর গায়ে আদিত্যের টিশার্ট। নূর নিজের হাত দিয়ে টিশার্টের কলারটা একটু টেনে নাকের কাছে আনলো।নূর বুঝতে পারলো ঘ্রাণটা এই টিশার্ট থেকেই আসছে । এটাতে উনার শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। নাক টেনে কতক্ষণ ঘ্রাণ নিতে থাকলো নূর।তারপর পাশে ঘুরে তাকাতেই দেখলো আদিত্য বেডের সাথে হেলান দিয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। ঘুমের ভেতরে মাথাটা একটু নিচের দিকে হেলে পড়েছে।
নূর আস্তে করে উঠে বসলো। মায়া ভরা চোখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো, উনি আমার জন্য কতো কিছু করছে। আমার কতো কেয়ার করে। সবসময় আমার চিন্তা করে। মানুষটা বোধ হয় সত্যি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে। আমিও যে মনে মনে উনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। কথাগুলো ভেবে নূর নিজে নিজেই লাজুক হাসলো।
হঠাৎ আদিত্য নড়েচড়ে উঠলো।
নূর সাথে সাথে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
আদিত্য চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো নূর বসে আছে। আদিত্য সোজা হয়ে বসে বললো।
….তুমি উঠে পরেছো? আ্যাম সরি আসলে কখন যে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছি টের পায়নি। তুমি কিছু মনে করোনা।
নূর মুচকি হেসে বললো।
…..আপনাকে সরি বলতে হবে না। ইটস ওকে। আপনিতো আমার জন্যই বসে ছিলেন।
আদিত্যও মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও। আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি। ব্রেকফাস্ট শেষ করে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
একটু পরে নূর ফ্রেশ হয়ে রুমের বাইরে এসে দেখলো আদিত্য টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। নূর এগিয়ে এসে বললো।
….আপনি একা কেন এসব করছেন? আমাকে ডাকলেই তো আমি হেল্প করতাম।
আদিত্য নূরের দিকে বললো।
…এটা কোনো ব্যাপার না। এগুলো আমার রোজকার কাজ। আমি এসব রোজ নিজের হাতেই করি। এখন এসব কথা বাদ দিয়ে এখানে বসে ব্রেকফাস্টটা করে নেও।
নূর মাথা ঝাকিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। ব্রেকফাস্ট করতে করতে নূর জিজ্ঞেস করলো।
…আপনি কি এই বাসায় একাই থাকেন?
…হ্যাঁ
…আপনার পরিবার কোথায় থাকে?
…ওরা সাভারের বাড়িতে থাকে। এখানে আমি একাই থাকি।
এভাবে টুকটাক কথার ভেতর ওরা ব্রেকফাস্ট শেষ করলো। হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। আদিত্য যেয়ে দরজা খুলে একটা প্যাকেট নিয়ে আসলো। তারপর নূরের কাছে এসে প্যাকেট টা নূরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
….এখানে একটা ড্রেস আছে। তুমি পরে নেও। তারপর তোমাকে বাসায় দিয়ে আসছি।
নূর বললো।
…কিন্তু ড্রেস কোথাথেকে আসলো?
…আমি অর্ডার করেছিলাম। মাত্রই দিয়ে গেল। এখন যাও চেঞ্জ করে আসো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে প্যাকেট টা হাতে নিয়ে রুমের ভেতর গেল চেঞ্জ করতে।
আদিত্যও অন্য রুমে যেয়ে রেডি হয়ে নিল। একটু পরেই দুজন বেড়িয়ে পরলো।
নূরের বাসার সামনে এসে আদিত্য গাড়ি থামিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…আজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার দরকার নেই। বাসায় রেস্ট নেও। কাল সকালে এসে আমি নিয়ে যাবো। আর হ্যাঁ একদম ভয় পাবেনা। যেকোনো সমস্যা হলে আমাকে ফোন দিবে কেমন?
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে গেল।
আদিত্য ফোন বের করে নূরের দেখাশোনা করার জন্য যে মহিলাকে রেখেছিল তাকে ফোন করে বললো।
….নূরের বাসার লোক না ফেরা পর্যন্ত আপনি সবসময় ওর সাথেই থাকবেন। এমনকি রাতেও ওর সাথেই থাকবেন। বুঝতে পেরেছেন?
মহিলাটি বললো।
…জ্বি সার।আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই করবো।
আদিত্য ফোন রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
চলবে……
#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩১
★ অন্ধকার গোডাউনে চেয়ারে হাত পা বান্ধা অবস্থায় আধমরা ভাবে পরে আছে বদমাইশ তিনজন।
হঠাৎ গোডাউনের লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটের তিব্র আলো চোখে পরতেই ছেলেগুলো ওদের চোখ বন্ধ করে নিল।
একটু পরে গোডাউনের সাটার খুলে গেল। আদিত্য আবির আর তাসির ভেতরে ঢুকে ছেলেগুলোর সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। ওদের পেছনে পেছনে আদিত্যের লোকজনও এসে দাঁড়ালো।
আদিত্য হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে চেয়ারে বাঁধা ছেলেগুলোর দিকে। আদিত্য ওর নিজের লোকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো।
লোকটা মাথা ঝাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা বালটিতে করে পানি নিয়ে এসে ছেলেগুলোর মুখে ছিটে মারলো।
পানি মারায় ছেলেগুলো ধড়ফড়িয়ে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে তাকালো। আদিত্যের দিকে তাকিয়ে সবগুলো ভয়ে কাকুতি মিনতি করতে করতে বললো।
….ভা ভা ভাই, আমাদের ছেড়ে দিন ভাই। আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা আর কখনও এমন করবো না। এবারের মতো মাফ করে দেন। প্লিজ ছেড়ে দিন।
আদিত্যের চোখ মুখ আরো কঠোর হয়ে উঠলো। রাগে চোয়াল শক্ত করে পা দিয়ে সামনে থাকা ছেলেটার বুক বরাবর একটা লাথি মেরে দিল।
সাথে সাথে ছেলেটা চেয়ার সহ উল্টে পরে গেলো।
আদিত্য পিছন থেকে নিজের গানটা বের করে, ছেলেটার কাছে যেয়ে কপালে গান ঠেকিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো।
…..ছেড়ে দেব? তাও আবার তোদের? হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। ছেড়ে দেব তোদের। তবে এখান থেকে না। এই দুনিয়া থেকেই তোদের ফ্রী করে দেব। তোরা যে অপরাধ করেছিস তাতে তোদের এই পৃথিবীতে বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তোরা জানিস, তোরা কতো বড়ো অন্যায় করেছিস? আমাকে মেরে ফেললেও হয়তো তোরা মাফ পেয়ে যেতি। কিন্তু তোরা আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। আমার প্রাণপাখীকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছিস। যার সামান্য পরিমাণ চোখের পানিও আমার সহ্য হয়না। তোরা তার শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছিস। তাকে কষ্ট দিয়েছিস। সেও তোদের কাছে কাকুতি মিনতি করেছিল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তোরা শুনিসনি।তাহলে আমার কাছ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়ার আশা করছিস? তোদের কোনো রক্ষা নেই। তোদের একটাই শাস্তি তা হলো মৃত্যু।
আদিত্যের ক্রোধ দেখে আজ আবিরও ভয় পেয়ে গেছে। আদিত্যের এমন ভয়ংকর রুপ আগে কখনো দেখিনি আবির। আজ আর ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
আবির আর তাসির কারোরই সাহস হচ্ছে না আদিত্যকে কিছু বলার।
আদিত্য পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিতে গেলেই, ছেলেটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে তড়িঘড়ি করে বললো।
…..ভাই আমাদের কেও এটা করতে বলেছিল।
সাথে সাথে আদিত্যের হাত থেমে গেল। চমকে উঠে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে উচ্চস্বরে বললো।
…ওয়াটট???
ছেলেটা চোখ খুলে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
….জি জি জ্বি ভাই। একটা মেয়ে আমাদের টাকা দিয়েছিল ওসব করার জন্য। সত্যিই বলছি।
আবির আর তাসিরও একটু চমকে গেল একথা শুনে।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো।
….কে সে? কে বলেছে তোদের এসব করতে? নাম বল ফাস্ট। তাহলে হয়তো তোরা জানে বেচে যেতে পারিস।
….ভাই আমরা নাম জানি না। তবে দেখলে চিনতে পারবো।
তাসির কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনটা বের করে ফোনের ভেতর থেকে একটা ছবি বের ছেলেটার সামনে ধরে বলে উঠলো।
….এইটাই কি সেই মেয়েটা?
ছেলেটা ছবি দেখে তড়িঘড়ি করে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ, এটাই তো সেই মেয়েটা যে আমাদের এসব করতে বলেছিল।
আদিত্য খপ করে তাসিরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে থাকা মেয়েটির ছবি দেখে নিল। ছবিটা দেখেই আদিত্য আরো ক্রোধে ফেটে পরলো। ছবিটা এ্যানির, তারমানে এ্যানিই এসব করিয়েছে?
আদিত্য চোখ মুখ কঠোর করে বললো।
…..ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে যেতে নিয়ে আবার থেমে যায়। তারপর পিছনে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো।
…. আমি আমার কথার কখনো বরখেলাপ করিনা। আমি যখন বলেছি তোরা জানে বেচে যাবি, তারমানে তোদের আমি জানে মারবো না। তবে আমি আমার প্রাণপাখি কেও প্রমিজ করেছি যে তোরা তোদের প্রাপ্য শাস্তি পেয়ে যাবি। তাই আমি তোদের এমন শাস্তি দেব যে তোরা আজ বেচে গেলেও। পরবর্তীতে তোরা নিজেরাই রোজ তোদের কামনা করবি। আর আপসোস করবি কেন আমি তোদের আজ মেরে ফেললাম না।
কথাগুলো বলেই আদিত্য ছেলেগুলোর দুই হাতে আর পায়ে গুলি করে দিল। সাথে সাথে ছেলেগুলো আর্তনাদ করে তৎক্ষনাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো। আদিত্য ওর লোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..এদের কে কোনো হসপিটালের সামনে ফেলে এসো।
তারপর আদিত্যরা ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।
—————————————-
এ্যানি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বারবার কাওকে ফোন করে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে ওই ছেলেগুলো ফোন ধরছে না কেন? কাজ শেষ করেছে কিনা কিছুই জানতে পারছি না।
এ্যানির ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। বাসার কাজের মেয়েটা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই, একঝাঁক মহিলারা কোথাথেকে হুড়মুড় করে ঢুকে পরলো।
কাজের মেয়েটা হতভম্ব হয়ে বললো।
…..আপনারা কারা? এখানে কাকে চান?
মহিলাগুলোর ভেতর থেকে একজন বলে উঠলো।
….আমরা এ্যানির সাথে দেখা করতে এসেছি। এ্যানি কোথায়?
এ্যানি সোফায় বসে থেকেই কাজের মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
…কে এসেছে?
কাজের মেয়েটা বললো।
….আফা কতগুলো মহিলা আইছে। আপনার সাথে দেখা করবার চায়।
এ্যানি ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, আমার সাথে আবার কে দেখা করতে এলো? এ্যানি দরজার কাছে এগিয়ে গেল। সামনে এতগুলো মহিলা দেখে এ্যানি একটু অবাক হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো।
….আপনারা কারা? আর আমার কাছে কি চান?
মহিলগুলোর ভেতর থেকে লিডার টাইপের মহিলাটি বলে উঠলো।
….ও,, তাহলে তুই সেই এ্যানি?
এ্যানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?
লিডার মহিলাটি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
….এখনি বলছি।
কথাটা বলেই লিডার মহিলাটি এ্যানির সামনে যেয়ে ঠাস্ করে ওর গালে একটা চড় মেরে দিল।
এভাবে চড় মারা দেখে কাজের মেয়েটা এত্তো বড়ো হা করে মুখের ওপর হাত চেপে ধরলো।
চড় খেয়ে এ্যানির মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরে গেল।
এ্যানি গালে হাত দিয়ে রাগী চোখে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো।
….হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো আমার গালে চড় মারার?
মহিলাটি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..সাহসের তো এখনো কিছুই দেখিসনি। আগে দেখ তোর সাথে আমরা কি করি?
কথাটা বলেই মহিলাটি পাশে থাকা মহিগুলোর দিকে কিছু একটা ইশারা করলো।
সাথে সাথে দুজন মহিলা এগিয়ে এসে এ্যানির দুই হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে বাসার সামনে রাস্তায় নিয়ে এলো।
এ্যানি অনেক ছোটাছুটি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো।
…..এই এই কি করছো তোমরা? ছাড়ো আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? দেখ ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। তোমরা আমাকে চিনোনা। আমার বাবা জানলে তোমাদের সবকয়টাকে জেলে ভরে দিবে। ভালোই ভালোই বলছি ছেড়ে দেও আমাকে।
মহিলাগুলো এ্যানির কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে ওকে টানতে টানতে বাসার সামনে রাস্তায় নিয়ে গেল।
কাজের মেয়েটা দৌড়ে যেয়ে এ্যানির মায়ের কাছে সব খুলে বললো। সব শুনে এ্যানির মা দৌড়ে গেল এ্যানির কাছে। যেতে যেতে এ্যানির বাবাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো।
মহিলাগুলো এ্যানিকে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে এসে ঠাস্ করে নিচে ফেলে দিল।
এ্যানি যেয়ে পরলো রাস্তার ওপর।
লিডার মহিলাটি যেয়ে এ্যানির চুলের মুঠি ধরে শক্ত করে টান দিয়ে কর্কশ গলায় বললো।
….আমাদের চিন্তা তোর করতে হবে না। তুই নিজের চিন্তা কর। তুই কি ভেবেছিলি? একটা নিস্পাপ মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করবি আর তোকে কেও কিছু বলবে না?
এ্যানি এবার একটু ঘাবড়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, এরা কি নূরের কথা বলছে? কিন্তু এরা জানলো কিভাবে? আর নূরই বা কোথায়?
এ্যানির মা দৌড়ে এসে এ্যানির কাছে যেতে নিলে, দুজন মহিলা তাকে আটকে ফেলে। এ্যানির মা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো।
….কারা আপনারা? কি চাই আপনাদের? আমার মেয়ের সাথে এমন করছেন কেন? ছেড়ে দিন ওকে প্লিজ। আপনাদের কতো টাকা চাই বলুন? আমি সব দিয়ে দিব। তবুও আমার মেয়েটাকে ছেড়েদিন দয়া করে।
লিডার মহিলাটি এ্যানির মায়ের কাছে তেড়ে এসে বললো।
….নিজের মেয়ের জন্য খুব দরদ উৎলে উঠছে তাইনা?অথচ তোর মেয়ে যে অন্যের মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলো, সে খবর আছে তোদের? আমাদের কি চাই জানিস? আমাদের চাই ইনসাফ। আর আমরা এখন ইনসাফ করে তারপরই যাবো।
কথাগুলো বলে মহিলাটি আবার এ্যানির কাছে যেয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
….তোর মানুষের ভিডিও বানিয়ে বদনাম করার খুব শখ তাইনা? আজ আমরা তোর সেই শখ পূরণ করবো।
কথাটা বলেই লিডার মহিলাটি পাশের মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….শিলা ক্যামেরা বের কর। আজ আমরা ওর ফাটাফাটি ভিডিও বানাবো । যা দেখলে মানুষ সারাজীবনেও ভুলবে না।
শিলা মাথা ঝাকিয়ে মোবাইল ক্যামেরা বের করে শুট করা শুরু করলো।
এ্যানি ভয় পেয়ে বললো।
….দে দেখো এমন কিছুই করবে না। নাহলে কিন্তু আমার বাবা তোমাদের ছাড়বে না বলে দিলাম।
লিডার মহিলাটি আবারও ঠাস্ করে একটা চড় লাগিয়ে দিল এ্যানির গালে। তারপর রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….আগে নিজে এখান থেকে বেচে দেখা তারপর আমাদের চিন্তা করিস। আজ তোর এমন হাল করবো যে কাওকে নিজের মুখ দেখাতেও ভয় পাবি। যেটা তুই অন্যের সাথে করতে চেয়েছিলি সেটা এখন তোর সাথে হবে।
এ্যানি এবার ভয়ে কেঁদে দিয়ে বললো।
….প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কিছু করিনি।
এ্যানির মাও অনেক কাকুতি মিনতি করতে লাগলো এ্যানিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।
কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে লিডার মহিলাটি পাশের মহিলাকে কিছু একটা ইশারা করতেই, সেই মহিলাটি মাথা ঝাকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা কেচি বের করে লিডার মহিলাটর হাতে দিল। তারপর দুজন মহিলা যেয়ে এ্যানির দুই হাত চেপে ধরে এ্যানিকে আটকে রাখলো।
এ্যানি ভয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
লিডার মহিলাটি যেয়ে এ্যানির চুলের গোছা একহাতে নিয়ে আরের হাতে কেঁচি দিয়ে ঘ্যাচাং করে চুলগুলো কেটে ফেললো।
এ্যানি এবার চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিল। শিলা নামের মহিলাটি সবকিছুই তার ক্যামেরায় ভিডিও করছে।
এতক্ষণে রাস্তায় ভীড় জমে গেছে। পাবলিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে আর লাইভ মজা নিচ্ছে।
একটু পরে লিডার মহিলাটি আবারও পাশের মহিলার দিকে ইশারা করতেই, সেই মহিলাটি যেয়ে একটা বালতি নিয়ে এলো। বালতির ভেতর কালো রং মেশানো। সব মহিলাগুলো একে একে এগিয়ে এসে বালতির ভেতর নিজেদের হাত চুবিয়ে তারপর সেই হাত দিয়ে এ্যানির সারা মুখে কালি মেখে দিল।
তারপর আবার আরেকজন মহিলা অন্য একটা বালটি। এটার ভেতর গবর মেশানো। সবাই নিজেদের নাক চেপে ধরলো। আর মহিলাটি এ্যানির পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো বালতি ধরে এ্যানির মাথায় ঢেলে দিল। তারপর সবাই একটু দূরে যেয়ে নিজেদের নাক চেপে ধরে হাসতে লাগলো। শিলা নামের মহিলাটি এতক্ষণ যেগুলো ভিডিও করেছিলো সেটা সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয়। এবং সাথে সাথে সেটা ভাইরাল হওয়া শুরু করে দেয়।
এ্যানি গবরের গন্ধে বমি করা শুরু করে দিল
এতক্ষণে এ্যানির বাবা চলে এলো। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এ্যানির কাছে গেল। এ্যানির এমন অবস্থা দেখে ওর বাবা রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….কে করেছে আমার মেয়ের এই অবস্থা? আমি কাওকে ছাড়বো না। বলো কে করেছে এসব?
…..আমি করেছি এসব।
পেছন থেকে কারোর আওয়াজ পেয়ে এ্যানির বাবা তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে বললো কথাটা।
মহিলাগুলো সহ ভীড়ের মানুষ দুই দিকে ভাগ হয়ে সরে গেল। আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা হয়ে গেলো। সেখান দিয়ে এগিয়ে এলো আদিত্য। আর ওর পেছনে আবির আর তাসির।
আদিত্য এ্যানির বাবার কাছে এসে বললো।
…হ্যাঁ আমি করেছি।
এ্যানির বাবা ভ্রু কুঁচকে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….তুমি করেছো??? কিন্তু কেন করেছো? তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এমন কাজ করার?
আদিত্য একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
….সাহস আমার যথারীতিই একটু বেশি। সেটার কথা আর আপনাকে নাইবা বললাম। যাহোক কথা আসে এটা কেন করলাম? তাহলে শুনুন, আপনার মেয়ে যেটা করেছে সেখানে এগুলো তো কিছুই না। ওকেতো আরো কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ।
এ্যানির বাবা বললো।
….মানে??? কি এমন করেছে আমার মেয়ে? জার জন্য ওর সাথে এমন আচরণ করছো?
…..সেটা আপনার গুনধর মেয়ের কাছেই জিজ্ঞেস করুন। দেখুন বলতে পারে কিনা নিজের কুকীর্তির কথা?
এ্যানির বাবা এ্যানির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
….এ্যানি আদিত্য কি বলছে এসব? তুমি কি করেছ?
এ্যানি কিছু বলতে পারছেনা ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
এ্যানির বাবা ধমকের সুরে বললো।
….কি হলো? কথা বলছো না কেন?
আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…আঙ্কেল ও বলতে পারবে না আমি জানি। কারণ ওই ঘৃণিত কথাটা বলার সাহস ওর নেই, যে কাজটা ও নিজেই করতে চেয়েছিল।তাই আমিই আপনাকে বলছি। আমি কখনও কাউকে আমার কাজের এক্সপ্লেনেশন দেইনা। কিন্তু আপনি আমার বাবার বন্ধু বলে শুধু আপনাকে ব্যাপারটা খুলে বলছি।
তারপর আদিত্য এ্যানির বাবাকে সবকিছু খুলে বললো। সবকিছু শুনে এ্যানির বাবা হতভম্ব হয়ে গেলো। তার মেয়ে যে এতো খারাপ কাজ করতে পারে এটা সে কখনও কল্পনাও করেনি। এ্যানির বাবা এ্যানির দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো।
….আদিত্য যা বলছে তাকি সত্যিই? কথা বলছো না কেন? জবাব দেও আমাকে?
এ্যানি এবার উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি আমি। সব আমিই করেছি। কারণ ওই মেয়েটা আদিত্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। আদিত্যকে আমি ভালোবাসি। আর আদিত্য কিনা ওই মেয়েটার জন্য পাগল। তাই আমি ওকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এসব করেছি।
এ্যানির মুখে এসব কথা শুনে ওর বাবার লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। মেয়েটাকে বেশি আদর দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেলেছে।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে এ্যানির সামনে কিছুটা দূরে বসে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..জাস্ট সাট আপ। ভালোবাসার কথা তোর ওই নোংরা মুখে উচ্চারণও করবি না। তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসাতো দূরের কথা ঘৃণা করতেও আমার রুচিতে বাঁধে। আমি চাইলে তোর সাথেও সেই কাজটা করতে পারতাম যেটা তুই আমার নূরপাখির সাথে করতে চেয়েছিলি। কিন্তু না আমি তোর মতো এতো নিকৃষ্ট কাজ করতে পারলাম না। আমি তোকে পুকিশেও দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে তোর সাথে নূরেরও নাম বদনাম হতো। আর সেটা আমি কখনোই হতে দেব না। তুই কি ভেবেছিলি আমার প্রাণপাখিকে কষ্ট দিয়ে তুই পার পেয়ে যাবি? কখনোই না। ইচ্ছেতো করছে তোকে এখুনি গুলি করে মেরে ফেলতে।
কথাটা বলেই আদিত্য ওর গানটা বের করে এ্যানির কপাল বরাবর পয়েন্ট করলো ।
এ্যানির এবার ভয়ে আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।
এ্যানির বাবাও ভয় পেয়ে আদিত্যের সামনে বসে হাত জোর করে বিনীত সুরে বললো।
….না না আদিত্য প্লিজ ওকে জানে মেরোনা। যেমনই হোক একটা মাত্র মেয়ে আমার। দয়া করে ওকে মেরোনা প্লিজ। আমি তোমাকে প্রমিজ করছি, আর কখনও এ্যানি তোমাদের সামনেও যাবে না। দরকার হলে ওকে আমি বিদেশে পাঠিয়ে দিব। তবুও ওকে ছেড়ে দেও প্লিজ।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..ঠিক আছে। শুধুমাত্র আপনার কথামতো ওকে এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। তবে কখনও যদি ও নূরের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে সেদিনই ওর জীবনের শেষ দিন হবে। কথাটা মনে রাখবেন।
এ্যানির বাবা মাথা ঝাকালো। মানে সে বুঝতে পেরেছে।
আদিত্য ওখান থেকে সরে গিয়ে মহিগুলোর কাছে যেয়ে বললো।
….আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার কথামতো এখানে আসার জন্য।
লিডার মহিলাটি মুচকি হেসে বললো।
….কিযে বলেননা সার? আপনার দেওয়া টাকাতেই তো আমাদের মহিলা কল্যাণ সংস্থাটা চলছে। আপনার জন্য কিছু করতে পারাতো আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর তাছাড়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করাইতো আমাদের কাজ।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে, তাহলে আজ আসি। বায়।
বলেই আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।
আদিত্য গাড়ি ড্রাইভ করছে। পাশ থেকে আবির হাসতে হাসতে বললো।
….ভাই ভিডিও তো পুরা ভাইরাল হয়ে গেছে। এক ঘন্টায়ই ওয়ান মিলিয়ন ভিউস হয়ে গেছে। এ্যানিতো একদম ফেমাস সেলিব্রিটি হয়ে গেলো। সত্যিই ভাই একদম পুরো ফাটিয়ে দিয়েছিস। কি শায়েস্তা টাই না করলি। জীবন থাকতে আর আজকের দিনটা ভুলতে পারবে না।
কথাগুলো বলেই আবির হাসতে লাগলো। তাসিরও ওর সাথে হেসে দিল।
আদিত্য বাঁকা হেসে মনে মনে বললো। যারাই আমার প্রাণপাখির ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তাদের অবস্থা এর থেকেও ভয়ানক হবে। আমি থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আদিত্য আবার ভাবছে , গতকাল তো এসবের কারণে নূরকে প্রপোজ করতে পারলো না। তবে আগামীকাল অবশ্যই নূরকে প্রোপজ করবো। কাল ভার্সিটি শেষে কোথাও নিয়ে যেয়ে সারপ্রাইজ দিব। তারপর আমার মনের কথা বলে দিব আমার নূরপাখিকে।
এসব কথা ভেবে আদিত্য মুচকি হাসলো।এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।
চলবে……