#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লোখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬১
★সানা আসতেই তাসির সানার হাত টেনে ধরে দেয়ালের চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে বললো।
…..এসব কি হচ্ছে হ্যা? তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর তুমি আমাকে জানালেও না?
সানা ইনোসেন্ট ভাব ধরে বললো।
….আরে আমাকে রাগ দেখাচ্ছ কেন? আমি কি আগে থেকে জানতাম নাকি? আমিওতো দুপুরেই জানলাম। তোমাকে বলবো তার আগে তুমিই চলে এলে। এখন এতে আমার কি দোষ? আমিওতো তোমার মতই টেনশনে আছি তাইনা?
….তোমাকে দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে এই বিয়েতে তোমার আপত্তিই নেই। বলার সাথে সাথেই খুশী খুশী বিয়ে করে নিবে তুমি।
সানা এবার দুঃখী ভাব ধরে মেলোড্রামা করে বললো।
…..ও সামাঝতে হে হামে আদাত হে মুসকুরানে কি, আরে পাগলে এ তো আদা হে আপনি গাম ছুপানে কি।
….মানে?
…..মানে,তুমি এটা বলতে পারলে আমাকে? তুমি জানো ভেতরে ভেতরে কতো কষ্ট হচ্ছে আমার? কষ্টে বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। উপরে উপরে এই হাসিটা দেখছ না? এটা হলো নকল হাসি। কারণ আমি আমার কষ্টটা বাবা আর ভাইয়াকে দেখাতে চাই না। বাবা আর ভাইয়া আমাকে এতো কষ্ট করে মানুষ করেছে। এখন যদি তাদের সিদ্ধান্তে আমি দুঃখী হয়ে থাকি। তাহলে ওরা অনেক কষ্ট পাবে। আর আমি কখনো ওদের কষ্ট দিতে পারবো না, কখনো না। দরকার হলে নিজে ধুকে ধুকে মরে যাবো তবুও ওদেরকে খুশী রাখবো।
কথাগুলো বলে সানা মুখে ওড়নার আঁচল চেপে ধরে ন্যাকা কান্না করতে লাগলো।
তাসির বলে উঠলো।
….আর আমার কি হবে? আমার কথা তুমি একবারও ভাবলে না? তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করে চলে যাবে, আর আমি চেয়ে চেয়ে সেটা দেখবো? কখনই না। তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম যে,আদিকে সবটা জানিয়ে দেই। তাহলে আজ আর এসব হতো না। কিন্তু তুমিই আমাকে মানা করলে। একটা কথা ভালো করে মনে রেখ, তুমি অন্য কারোর হওয়ার আগে আমি তোমাকে জানে মেরে ফেলবো। তারপর নিজেও মরে যাবো। তবুও তোমাকে অন্য কারোর হতে দেব না।
….হ্যাঁ এটাই ভালো উপায়। চলো আমি আর তুমি একসাথে মরে গিয়ে আমাদের প্রেমকে অমর করে দেই।
….জাস্ট সাট আপ। এটা কোনো ফিল্ম নয় বুজেছ? আর মরে তারাই যারা কাপুরুষ। আর তুমি কোনো কাপুরুষকে ভালোবাসনি। আমি এখুনি যেয়ে আদিকে সব খুলে বলছি। আদি নিশ্চয় বুঝবে।
সানা দুঃখী ভাব ধরে বললো।
….ঠিক আছে তুমি যদি শেষ চেষ্টা করতে চাও করো। তবে আমার মনে হয়না কোনো লাভ হবে। হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা।
কথাটা বলে সানা মুখে ওড়নার কোণা চেপে ধরে টিভি সিরিয়ালের বউদের মতো ন্যাকা কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেল।
ডিনার শেষে সবাই সোফায় বসে আছে। তাসির আদিত্যর দিকে তাকিয়ে অনেক সাহস যুগিয়ে বলে উঠলো।
….আদি শোন না, তোর সাথে একটা জরুরি কথা ছিল।
…..হ্যাঁ বল না?
….আ আসলে, না মানে, হয়েছে কি,,
….কি আসলে নকলে করছিস?যা বলার সোজাসুজি বলনা?
…আমি সানাকে ভালবাসি। আর সানাও আমাকে ভালোবাসে।
কথাটা বলেই তাসির চোখ বন্ধ করে নিল।
আদিত্য প্রথমে মিটিমিটি হাসলো তারপর আবার সিরিয়াস ভাব ধরে বললো।
…কিহহ্? কি বললি তুই? এমন একটা কথা বলতে তোর একবারও লজ্জা হলোনা? ছি ছি ছি, তোর কাছ থেকে এটা আমি কখনোই আশা করিনি। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমার বোনের সাথেই? কাজটা তুই একদম ঠিক করিস নি। বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এইভাবে ধোঁকা দিলি?
আদিত্যর এমন রিয়্যাকশন দেখে তাসির প্রচুর ঘাবড়ে গেল। এতদিন যে ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো। আদিত্য ওকে ভুল বুঝলো। এখন কি করবে ও? তাসির বিনতীর সুরে বললো।
….আদি প্লিজ আমাকে ভুল বুজিস না। আমার কথাটা তো শোন?
….এরপরও আর কি বলার বাকি আছে তোর? আজ তুই আমার মনটা ভেঙে দিয়েছিস। তোর সাথে আর কোনো কথা নেই আমার। এই ব্যাপারে তোর আর কিছু বলার থাকলে সেটা তুই কাল বাবাকে যেয়ে বলিস। এখন তুই চলে যা এখান থেকে।
তাসির হতাশ হয়ে মন খারাপ করে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।
কথাটা বলে তাসির মন খারাপ করে চলে গেল।
তাসির চলে যেতেই নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….একটু বেশি হয়ে গেল না? বেচারা আমার ভাইটা কেমন মন খারাপ করে চলে গেল।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….আরে চিন্তা করোনা। কালকে এর থেকে চারগুণ বেশি খুশি হয়ে যাবে।
সানা বলে উঠলো।
…বায়দা ওয়ে ভাইয়া, আমিতো ভেবেছিলাম শুধু আবির ভাইয়াই ড্রামা করার ওস্তাদ। এখন তো দেখছি তুমিও কম যাওনা। কি ড্রামা টাই না করলে। বাপরে বেচারা তাসিরের নিশ্চয় আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে।
সানার কথায় সবাই হেসে দিল
————
পরের দিন দুপুর ২টা
আদিত্যরা সবাই ওদের সাভারের বাড়িতে এসেছে। ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। তখনই বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠল। আদিত্য একটা বাঁকা হাসি দিল। ও জানে এখন কে এসেছে। তাই সবার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো।
একটু পরে তাসির ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আদিত্যর দিকে তাকাতেই আদিত্য মিথ্যে রাগ দেখিয়ে আরেক দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। তাসির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিত্যের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আঙ্কেল আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
….আগে বসো বাবা, তারপর বলো কি বলবে?
তাসির সোফায় বসে মাথা নিচু করে কোনরকমে সাহস যুগিয়ে বললো।
….আ আসলে আঙ্কেল আপনি প্লিজ সানাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না।
সানার বাবা ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন? কি সমস্যা?
….আসলে আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না।তাই সরাসরিই বলছি। কথাগুলো হয়তো আমার বাবা মাকে নিয়ে বলা উচিত ছিল। কিন্তু এখন সেই সময় আমার কাছে নেই। তাই আমি নিজেই বলতে এসেছি।
আঙ্কেল আ আমি সানাকে ভালোবাসি। আর সানাও আমাকে ভালোবাসে। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। তাই আপনি প্লিজ ওর বিয়ে বা এঙ্গেজমেন্ট যাই ঠিক করে থাকেন না কেন, প্লিজ ক্যান্সোল করে দিন। প্লিজ আঙ্কেল আই রিকুয়েষ্ট ইউ।
আদিত্যর বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মন খারাপ করার মতো করে বললো।
….ঠিক আছে তুমি যখন নিজের এঙ্গেজমেন্ট নিজেই ক্যান্সেল করতে চাচ্ছ,তাহলে আর আমরা কি করতে পারি? আমি এখুনি তোমার মা বাবাকে এঙ্গেজমেন্ট ক্যান্সেল করতে বলে দিচ্ছি।
আদিত্যের বাবার কথা শুনে তাসির যেন হাজার বোল্টের একটা ঝটকা খেল। তাসির মাথা তুলে বেকুবের মতো তাকিয়ে বললো।
….মানে?
এবার সবাই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। সবার হাসি দেখে তাসির আরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। একটু পরে ভেতর থেকে তাসিরের মা বাবা বেরিয়ে এলো। তাদের দেখে তাসির আরো অবাক হলো। এখানে কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছে না। সবকিছু ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাসির ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তোমরা এখানে? কি হচ্ছে এসব? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
আদিত্য মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…আমি বলছি তোকে, তুই কি ভেবেছিলি হ্যাঁ? শুধু তুইই আমার ভালো মন্দ বুঝিস? আমি তোকে বুঝিনা? ভুলে যাসনা আমিও তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর মনের খবর আমার থেকে ভালো কেউ জাটনে না। আরে আমিতো অনেক আগে থেকেই জানতাম যে তুই পিচ্চিকে ভালোবাসিস। শুধু তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম। তার জন্যই তো এতো নাটক করতে হলো।
তাসির খুশি হয়ে বলে উঠলো।
…তারমানে এসব নাটক ছিল?
…সবটা নাটক না। সানার এঙ্গেজমেন্টটা সত্যি। তবে সেটা তোর সাথে পাগলা। কাল আমরা তোর আর সানার এঙ্গেজমেন্টের করতে চেয়েছি। বাট এখন তুই যখন চাচ্ছিস না। তাহলে আমরা এঙ্গেজমেন্টটা এখন ক্যান্সেলই করে দেই।
তাসির তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
….আরে আরে এঙ্গেজমেন্ট ক্যান্সেল কেন করবি? আমি করবো তো এঙ্গেজমেন্ট।
তারপর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তাই না সানা? বলোনা সবাইকে আমরা করবো এঙ্গেজমেন্ট।
তাসিরের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসছে। সানা সবার সামনে লজ্জায় পরে গেল তাসির কথাটা বলে নিজেও লজ্জায় পরে গেল।
একটু পরে সানার চাচী মিষ্টি নিয়ে এসে সবাইকে মিষ্টিমুখ করালো।
আবির তাসিরের কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ভাব নিয়ে বললো।
….শোন এখন থেকে কিন্তু আমি তোর সুমুন্দি হয়ে গেলাম। তো এখন থেকে আমাকে সম্মান দিয়ে চলবি বুজেছিস?
তাসির মেকি হেসে বললো।
…কিউ নেহি, কিউ নেহি। তো আপনাকে সম্মান কোন জায়গা দিয়ে দেব? উপর দিয়ে না নিচ দিয়ে?
…মানে? সম্মান কি সাবান নাকি,যে উপর নিচ দিয়ে দিবি?
….এখুনি দেখাচ্ছি বোজাচ্ছি তোকে।
কথাটা বলেই তাসির আবিরের পিঠে কিল মারতে লাগলো।
আবির বাঁচার চেষ্টা করতে করতে বললো।
…এই এই কি করছিস? সুমুন্দির সাথে কেউ এমন করে? সালা তোর সাথে বোনই বিয়ে দেবনা।
আবির ওখান থেকে উঠে এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলো। তাসির ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বললো।
….কেন তোর না রেসপেক্ট দরকার? নে আরো রেসপেক্ট নিয়ে যা।
আবির দৌড়াতে দৌড়াতে বললো।
….দেখ তুই কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছিস? আমি কিন্তু এর তিব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি?
ওদের কান্ড দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
——————–
পরদিন সন্ধ্যা ৬টা
আদিত্য নূরকে শাড়ী পরিয়ে দিচ্ছে সানার এঙ্গেজমেন্ট পার্টির জন্য। সেই কখন থেকে পরাচ্ছে তবুও শেষই হচ্ছে না। নূর একটু অধৈর্য হয়ে বললো।
….একটু তাড়াতাড়ি করোনা, একরকম পরিয়ে দিলেইতো হয়। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো। সবাই হয়তো রেডি হয়ে বেরিয়ে পরেছে পার্টি সেন্টারে যাওয়ার জন্য। আর বাড়ির বউই লেট হয়ে গেলে সবাই কি ভাববে?
আদিত্য শাড়ী পরানো শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
…এইতো হয়ে গেছে প্রাণপাখী। তুমিও না একটুতেই অধৈর্য হয়ে যাও।আর একরকম হলেই হবে না। তুমি সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যের বউ। তোমাকে দেখতে হবে সবচেয়ে বেস্ট বুজেছ?
আদিত্য নূরের কাঁধ ধরে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….ইশশ্ আমার প্রাণপাখীটা দিনে দিনে একদম হট হয়ে যাচ্ছে।
নূর লাজুক হেসে বললো।
….অনেক হয়েছে এবার চলো যাওয়া যাক।
আদিত্য নূরের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
….আমার তো যেতেই ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই। এই ফাঁকা বাড়িতে দুজন শুধু রোমাঞ্চ আর রোমাঞ্চ করবো। আইডিয়াটা দারুণ না?
নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে বললো।
….একদম ফালতু আইডিয়া। মাথায় শুধু এগুলোই ঘোরে তাইনা? চলতো এখন।
নূর আদিত্যর হাত ধরে বাচ্চাদের মতো টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
দরজা পর্যন্ত এসে আদিত্য নূরের হাত টেনে ধরে দরজার সাথে চেপে ধরে বললো।
….সময় আছে কিন্তু, এখনো ভেবে দেখ আমার আইডিয়ার ব্যাপারে।
….কোনো ভাবাভাবির সময় নেই। তাড়াতাড়ি চলতো।
আদিত্য নূরের পেছন পেছন যেতে যেতে আফসোসের সুরে বললো।
…হায় নির্দয় বউ।
রাত ৮টা
এঙ্গেজমেন্ট পার্টি পুরো দমে শুরু হয়ে গেছে। সব গেস্টরাও প্রায় চলে এসেছে। নূরের বাবা,ভাই আর তানিও এসেছে।
একটু পরে নূর আর তানি মিলে সানাকে নিয়ে এলো। সানাকে আজ মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। লেহাঙ্গার ওড়নাটা মাথার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝুলে আছে।
তাসির হা হয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। আজকে ওর পিচ্চিটাকে একদম বউ বউ লাগছে।
নূর আর তানি সানাকে স্টেজে নিয়ে এসে তাসিরের পাশে বসিয়ে দিল। তাসির এখনো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে সানার দিকে। সানা সেটা দেখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো। তাসির সেটা দেখে মুচকি হাসলো।
কিছুক্ষণ পরেই ওদের আংটি বদল হয়ে গেল। সবাই তালি বাজিয়ে ওদের অভিনন্দন জানালো। তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিল।
আদিত্য একজায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু গেস্টদের সাথে কথা বলছে। নূরও কিছুটা দূরে তানি আর নিশির সাথে কথা বলছিল। নূর কথা বলতে বলতে আদিত্যের দিকে তাকালো। তখনই কিছু একটা ওর নজরে পরলো। নূর ভালো করে তাকিয়ে জিনিসটা খেয়াল করলো। তারপর ওখান থেকে ধীরে ধীরে আদিত্যের কাছে এসে দাঁড়াল। সামনে গেস্ট থাকায় নূর গলা খাঁকারি দিয়ে আদিত্যকে ডাকলো।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কিছু বলবে?
নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে আস্তে করে বললো।
….একটু দরকার ছিল। আমার সাথে আসোনা?
আদিত্য মাথা ঝাঁকিয়ে গেস্টদের দিকে তাকিয়ে বললো।
…এক্সকিউজ মি প্লিজ?
কথাটা বলে আদিত্য নূরের সাথে গেল।
কিছুদূর যেয়ে আদিত্য নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…..কি হয়েছে প্রাণপাখী? কোনো সমস্যা?
নূর আদিত্যর হাত ধরে বললো।
….তুমি আগে আমার সাথে এসো তারপর বলছি।
কথাটা বলেই নূর আদিত্যর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে নূরের। অগত্যা ও নূরের সাথেই যেতে লাগলো।
নূর আদিত্যকে একটা ফাঁকা রুমের ভেতর নিয়ে এলো। রুমের ভেতর এসে নূর দরজা আটকে দিল। তারপর আদিত্যের সামনে এসে বললো।
….শার্ট খোল।
নূরের কথায় আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নূর শার্ট কেন খুলতে বলছে?
লোকে বলে “যার মনে যা ফাল ওঠে তা”। আদিত্যের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। নূরের কথায় ও নিজের মনমতো মিনিং বের করে নিল। আদিত্য নূরের দিকে ঝুকে আস্তে করে বললো।
….আর ইউ শিওর? এখুনি করতে চাও তুমি?
…হ্যাঁ হ্যাঁ এখুনি করতে হবে। এখুনি করা জরুরি। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন তো আর বাসায় যাওয়া সম্ভব না তাইনা? তাই এখানেই করতে হবে। কেন তুমি এখন করতে চাওনা?
আদিত্য হাসি মুখে বললো।
…..আরে নেকি অর পুছ পুছ? আমি তো সবসময় এটার আশায়ই থাকি। এটার জন্য তো আমি এভার রেডি হয়ে থাকি।
নূর আদিত্যের কথায় বেশি ধ্যান না দিয়ে বললো।
….ঠিক আছে তাড়াতাড়ি শার্ট খোল।
আদিত্যর মনে যেন খুশিতে লাড্ডু ফুটছে। ওর বউ যে আজকে এতো বোল্ড হয়ে যাবে তা ও কল্পনাও করেনি। আদিত্য দেরি না করে ফটাফট শার্ট খুলে ফেললো। নূর শার্টটা হাতে নিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বললো।
….তুমিও শাড়ী খোল।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….শাড়ী কেন খুলব?
….আরে শাড়ী না খুলে কিভাবে হবে?
….শাড়ী না খুলেও করা যাবে। এখন শাড়ী খুললে পরে আবার পরতে সময় লাগবে অনেক।
…..ওঁকে ওঁকে তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে।
….ঠিক আছে তুমি এখানেই বস। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো
….ঠিক আছে। তবে তাড়াতাড়ি করো। আমি কিন্তু বেশি অপেক্ষা করতে পারবো না।
নূর মাথা নাড়িয়ে বললো।
….আমি জলদিই আসছি।
কথাটা বলে নূর আদিত্যর শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।
আদিত্য এদিকে এক্সাইটেড হয়ে ফুলে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে নানান রকম পজিশন নিচ্ছে। হায় আজকে আমার বউটা একদম ওয়াইল্ড হয়ে গেছে। আজতো খেলা জমবে। আদিত্যর এসব জল্পনা কল্পনার মাঝে একটু পরে নূর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
নূরকে দেখে আদিত্য হাসি মুখে উঠে দাঁড়াল। নূর আদিত্যর সামনে ওর শার্ট টা এগিয়ে দিয়ে বললো।
….এই নেও তোমার শার্ট। পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন পরে নেও।
নূরের কথা আদিত্য কিছুই বুঝতে পারছে না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…পরিস্কার হয়ে গেছে মানে? কি পরিস্কার হয়ে গেছে?
…আরে তোমার শার্টে যে খাবারের দাগ লেগে ছিল সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন তুমি শার্ট টা পরে নেও।
….মানে তুমি এতক্ষণ এই শার্টের দাগের কথা বলছিলে? আর এইজন্য তুমি আমার শার্ট খুলতে বলেছ?
….হ্যাঁ তা নয়তো কি? আরে পার্টিতে তখন আমি দেখলাম তোমার শার্টে খাবারের দাগ লেগে আছে। লোকে দেখলে কেমন লাগতো বল? তাইতো তোমাকে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এলাম। কেন তুমি কি ভেবেছিলে?
নূরের কথা শুনে আদিত্য যেন টুপ করে আসমান থেকে পড়লো। মুখটা চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হয়ে গেল। বেচারা কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেল?
নূর বলে উঠলো।
….যাইহোক চল এখন বাইরে যায়। নাহলে সবাই খুঁজবে আমাদের।
কথাটা বলে নূর যেতে নিলেই আদিত্য ওর হাত টেনে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে বললো।
….কোথায় যাচ্ছ প্রাণপাখী? এভাবে আমার আরমান জাগিয়ে তুমি চলে যাবে, তাতো হবে না।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি বলছ এসব? আমি কখন তোমার আরমান জাগালাম? ছাড়না এখন, বাইরে যেতে হবে। সবাই কি ভাববে?
….যা ভাবে ভাবুক, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি আরো ভাবলাম আমার বউটা আজকে হয়তো একটু ওয়াইল্ড হয়ে গেছে। তাইতো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
নূর চোখ মুখ ঘুচিয়ে বললো।
….ছিহ্ তুমি এটা ভেবেছ? আমি কি তোমার মতো বেশরম নাকি, যে এসব করবো। তোমার ব্রেনটা না ওয়াশ করা দরকার। মাথায় শুধু এসব ছাড়া আর কিছুই চলে না।
…সে যাইহোক, এখন আমার তোমাকে চাই ব্যাচ্।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো।
নূর ভীতু গলায় বলল।
…এই না না প্লিজ এমন করোনা। দেখ বাইরে সবাই কি ভাববে? বাসায় গিয়ে যা করার করো। প্লিজ এখন যেতে দেও।
নূরের কোনো কথায় আদিত্যর কানে ঢুকছে না। ও ওর কাজে ব্যাস্ত। আদিত্যর ঠোঁট নূরের ঠোঁটে ছুইছুই , তখনই হঠাৎ কেউ দরজায় নক করলো।
নক করার শব্দে আদিত্যের ঘোর কাটল। আদিত্য দরজার দিকে তাকালো। নূর দেখলো আদিত্যের হাত একটু ঢিলা হয়ে এসেছে। নূর সেই সুযগে হালকা ধাক্কা দিয়ে আদিত্যকে সরিয়ে দিল।
আদিত্য অপ্রস্তুত থাকায় আচমকা নূরের ধাক্কায় দু কদম পিছিয়ে গেল। নূর সেই সুযোগে ওখান থেকে দৌড় দিল। দরজার কাছে এসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।
আদিত্য পেছন থেকে উচ্চস্বরে বললো।
….এর প্রতিশোধ কিন্তু নিবোই। তারপর মাথা ঝাকিয়ে হেসে দিল
চলবে…….
#ভালোবাসা_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্র-৬২
★ স্টেজের উপরে তাসির, সানা,আবির আর তানি আরো অনেকে বসে গল্প করছে। তখনই ওখানে এন্ট্রি নিল। গ্রেট রবি দা বাবাজী। রবি এসে ভাব নিয়ে বললো।
…. বৎস গন তেরা ধ্যান কিধার হে, রবি বাবাজী ইধার হে। সোয়াগাত নেহি কারোগে হামারা?
তাসির বলে উঠলো।
…আরে বাবাজী, আসুন আসুন। বাবাজী সবই আপনার কৃপা। আপনার দোয়ায় আজ এইসব হচ্ছে। আপনি ধন্য বাবা ।
…..আমি ধন্য না আমি রবি। যাইহোক আমি তোমাদের আগেই বলেছিলাম। আমার নজর তোমাদের ওপর পরেছে,তোমাদের এখন শুধু মঙ্গল না বুধ, বৃহস্পতি,শুক্রও হবে।
আবির বলে উঠলো।
….বাবাজী এবার আমার ওপরও একটু কৃপাদৃষ্টি করুন। আমারতো কিছু হচ্ছে না।
রবি বললো।
…বালক, কিছু হওয়ার জন্য তোমাকে আগে বিয়ে করতে হবে। তারপরে না কিছু হবে। বিয়ে করো তারপরে শুধু কিছু কেন মিছু, টিছু আরো যতগুলো চাও ততগুলাই হবে। যাইহোক আমি এখন যাই। আমার আরো ভক্তরা ওয়েট করছে তাদেরও দর্শন দিতে হবে।
কথাগুলো বলে রবি যেমন এসেছিল তেমনই আবার চলে গেল।
আর বাকিরা সবাই হাসতে লাগলো।
——-
নূর অনেকক্ষণ হলো আদিত্যকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। নূর ভাবলো, তখন ওভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে আসায় আদিত্য আবার রাগ করে নিত?
কথাটা ভেবে নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিত্যকে খুঁজতে লাগলো। একটু পরে নূর দেখলো আদিত্য এককোনায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। নূর মুচকি হেসে আদিত্যর দিকে এগিয়ে গেল। আদিত্যের কাছে এসে যেই কিছু বলতে যাবে, তখনই আদিত্য অন্যদিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে সেদিকে চলে গেল।
নূরের এবার সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। আদিত্য কি সত্যি সত্যিই ওর ওপর রেগে আছে? কথাটা ভেবে নূরের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। মুখটা মলিন হয়ে গেল। তখনই নিশি এসে নূরকে টেনে নিয়ে গেল ছবি তোলার জন্য। নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিশির সাথে গেল।
স্টেজের ওপর পরিবারের সবাই তাসির আর সানার চারিদিকে দাঁড়িয়ে আছে ফ্যামিলি ফটো তোলার জন্য। তবে আদিত্য এখনো আসেনি। তাই সবাই আদিত্যের জন্য ওয়েট করছে। আদিত্য না আসায় নূর মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে আদিত্য ওখানে এলো। নূর আদিত্যকে দেখে একটু খুশী হলো। আবির বলে উঠলো।
….ভাই কোথায় ছিলি তুই? তাড়াতাড়ি আয় আমরা সবাই মিলে ফ্যামিলি পিক তুলবো।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে সবার কাছে এসে নূরের পাশে দাঁড়াল। আদিত্য শুধু সামনে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। সেটা দেখে নূরের আরো খারাপ লাগছে। তবুও কিছু না বলে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে ছবি উঠলো। ছবি উঠা শেষে নূর আদিত্যকে কিছু বলতে যাবে, তখনই আদিত্যর ফোন বেজে উঠল। আদিত্য ফোনটা কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে ওখান থেকে চলে গেল। নূর এবার শিওর হয়ে গেছে যে,আদিত্য ওর ওপর রেগে আছে। নূর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুই ভালো লাগছে না ওর।
নূর নিচে নেমে এসে আদিত্যকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দেখতে পেল না। নূরের এবার প্রচুর কান্না পাচ্ছে।
একটু পরে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে এল। সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য বাইরে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। আদিত্য এখনো আসেনি। নূর শুধু অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিত্যকেই খুঁজছে। আবির তখন নূরের কাছে এসে বললো।
…..ভাবি তুমি আমাদের গাড়িতে চল। আদি ভাইয়ের একটা কাজ পরে গেছে। তাই ও আসতে পারবে না। আমাকে ম্যাসেজ করে বলে দিয়েছে। ওর কাজ শেষ হলে ও সরাসরি বাসায় চলে যাবে।
নূর বুঝতে পারছে যে , কাজ টাজ কিছুই না। আদিত্য ওর ওপর রেগে আছে তাই চলে গেছে এখান থেকে। তাইতো আমাকে কিছু না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে দিয়েছে। নূরের ভাবনার মাঝে আবির বলে উঠলো।
….কি হলো এস গাড়িতে বস।
নূরের ভেতরে কান্না জড়িয়ে আসছে। নূর ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। নূর জানালার দিকে তাকিয়ে সবার আড়ালে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। নিজের ওপর চরম রাগ লাগছে ওর। কি হতো তখন আদিত্যর কথাটা মেনে নিলে? তাহলে এখন আর রাগ করে থাকতো না। ওতো নিজের বউকে কাছে চেয়েছে অন্য কাউকে তো আর চাইনি? তাহলে কেন মানা করলাম আমি? আদিত্য আমার জন্য কতকিছু করে। আমার একটু খুশির জন্য পুরো দুনিয়া উলট পালট করে ফেলে। আর আমি কিনা ওর এইটুকু আবদারই রাখতে পারলাম না? কেমন বউ আমি নিজের স্বামীকেই নারাজ করে ফেললাম? এসব ভেবে ভেবে নূর নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
———
রাত ১২-৩০
নূর বেডের ওপর হাঁটু ভাজ করে দুই হাতে হাঁটু জড়িয়ে ধরে, হাটুর ভেতর মুখ দিয়ে বসে আছে। আর চোখের পানি ফেলছে।চেঞ্জ না করে এখনো পার্টির শাড়ীই পরে আছে। আদিত্য এখনো আসেনি। নূর ফোন করেছিল ফোনও বন্ধ পেয়েছে। তাই ওর আরও খারাপ লাগছে। নিজেকেই নিজের মারতে ইচ্ছে করছে ওর। এখন কি করবো আমি? আদিত্য কোথায় তুমি? প্লিজ চলে এসো। আমি প্রমিজ করছি আর কখনো এমন করবোনা। কক্ষনো না। একবার চলে এস,আমি তোমার সব রাগ ভাঙ্গিয়ে দেব। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে এসব বলতে লাগলো নূর।
হঠাৎ গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে পেল নূর। নূরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তারমানে আদিত্য চলে এসেছে। নূর চোখের পানি মুছে বেলকনিতে যেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো, এটা আদিত্যরই গাড়ি। নূর ছলছল চোখে ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল। নূর দৌড়ে আদিত্যর কাছে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেল। আয়নার সামনে যেয়ে নিজেকে একবার দেখে নিল।তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো।
…..কি করছিস তুই নূর?এইভাবে পাগল বেসে তুই আদিত্যর সামনে যাবি? এমনিতেই আদিত্য তোর উপর রেগে আছে। তারওপর তোর এমন চোখ মুখ ফোলা,এলোমেলো চুলে দেখলে আদিত্য আরও রেগে যাবে। নানা আমাকে আদিত্যর রাগ ভাঙাতেই হবে।
কথাগুলো বলে নূর ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
একটু পরেই আদিত্য রুমে এলো। রুমে এসে দেখলো নূর রুমে নেই। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুঝলো নূর ওয়াশরুমে আছে। আদিত্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে হাতের ঘড়ি খুলে নিচে রাখল। গায়ের ব্লেজার খুলে রাখলো। তারপর শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। উপরের দুটো বোতাম খুলতেই, নূর এসে ধীরে ধীরে পেছন থেকে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যর শার্টের কলার নিচের দিকে নামিয়ে, পেছন থেকে আদিত্যের ঘাড়ে, গলায় চুমু খেতে লাগলো।
আদিত্য সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। নূর পেছনে থাকায় সেটা দেখতে পেল না। হঠাৎ আদিত্য চোখ খুলে নূরের হাত ছাড়িয়ে বলে উঠলো।
…..নূর আমার ভালো লাগছে না।আমি শাওয়ার নিবো।
কথাটা বলে আদিত্য ওয়াশরুমে চলে গেল।
আদিত্যের এমন বিহেভিয়ার নূর আর সহ্য করতে পারলো না। মুখে হাত চেপে ধরে বাইরে চলে গেল।
বিশ মিনিট পর আদিত্য ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। রুমে এসে দেখলো নূর নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, নূর আবার কই গেল? একটু আগেওতো তো এতো রোমান্টিক হচ্ছিল, এখনি আবার গায়েব? এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।
কথাগুলো ভেবে আদিত্য মুচকি হেসে, কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর টাওজার বের করে পড়ে নিল। আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে, একটু পারফিউম লাগিয়ে নিল। এভাবে দশ মিনিট পার হয়ে গেল তবুও নূর রুমে আসছে না। আদিত্য আর না পেরে বাইরে বেরিয়ে দেখতে গেল নূর কোথায় আছে।
আদিত্য নিচে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো সেখানে কেউই নেই। তারপর কিচেনে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই। আদিত্যের এবার চিন্তা হতে লাগলো। এতরাতে নূর কোথায় গেল? আদিত্যের হঠাৎ ছাদের কথা মনে হলো। আদিত্য তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদে এসে দেখলো নূর ছাদে মেঝেতে হাঁটু ভাজ করে, হাটুর ভেতর মুখ দিয়ে বসে আছে।
আদিত্য নূরের কাছে এসে বুঝতে পারলো নূর কাঁদছে। আদিত্যর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। আদিত্য তড়িৎ গতিতে নূরের সামনে বসে দুই হাতে নূরের মুখটা উপরে তুলে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….হেইই প্রাণপাখী, কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ করছে? নাকি কেউ কিছু বলেছে? বলনা সোনা?
নূর এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….আই এ্যাম সরি, আই এ্যাম সরি। আর কখনো এমন করবোনা। প্লিজ তুমি রাগ করে থেকনা প্লিজ। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও দাও, তবুও রাগ করে থেকনা প্লিজ। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আদিত্য নূরকে সামনে এনে দুই হাতে মুখটা আগলে ধরে বললো।
……কি বলছ এসব প্রাণপাখী? কিসের সরি? আমি কখন রাগ করলাম তোমার ওপর? আর কেনই বা রাগ করবো?
….তুমি আমাকে শান্ত করার জন্য মিথ্যে বলছ তাইনা? আমি জানি তখন ওভাবে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে আসার জন্য তুমি আমার উপর রেগে আছ। আমি আসলেই খুব খারাপ বউ।
আদিত্য এবার ধমকের সুরে বললো।
….জাস্ট শাট আপ, কি আবোলতাবোল বলছ এসব? পাগল হয়ে গেছ? আমাকে কি তোমার ওইসব হাসব্যান্ড মনে হয়, যারা শুধু তার বউকে দৈহিক চাহিদার জন্য ভালোবাসে হ্যাহ্?
নূর ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো।
….তা তাহলে তুমি আমাকে ওভাবে ইগনোর করছিলে কেন?
…আমি কখন তোমাকে ইগনোর করলাম?
….তখন পার্টিতে আমি যখন তোমাকে ডাকতে গেলাম, তুমি অন্যদিকে হাত নাড়িয়ে চলে গেলে। আবার ছবি তোলার পরে আমি যখন তোমার সাথে কথা বলতে চাইলাম, তখন তুমি ফোন কানে নিয়ে চলে গেলে। আর এলে না। আমাকে কিছু না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে বলে দিলে। আমি যখন ফোন করলাম তখন তোমার ফোন বন্ধ। আর এখন রুমে আমি যখন তোমাকে আদর করছিলাম, তুমি আমাকে ছাড়িয়ে চলে গেলে। এখনো বলবে যে তুমি আমার ওপর রাগ করোনি?
আদিত্য নূরের বোকামি দেখে একটু মুচকি হেসে বললো।
…..হায়রে পাগলি কি থেকে কি ধরে নিয়ে বসে আছে। আরে পার্টিতে তুমি যখন আমাকে ডাকতে এসেছিলে তখন তো আমি তোমাকে খেয়ালই করিনি। ওইসময় আমার অনেক পুরানো একটা ফ্রেন্ড কে দেখতে পেয়েছিলাম। তাই ওর দিকে হাত নাড়িয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর ছবি তোলার পরে যে ফোনটা এসেছিল সেটাও ওই ফ্রেন্ডরই। ওর গাড়ি নো পার্কিং-এ থাকায় পুলিশ ওর গাড়ি টো করে নিয়ে গিয়েছিল। ও আমার কাছে হেল্প চেয়েছিল। তাইতো ওর সাথে তখন পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছিল। তোমাকে বললে তুমি টেনশন করবে তাই তোমাকে না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে দিয়েছিলাম। আর পরে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতসময় পুলিশ স্টেশনে থেকে শরীরে ঘাম আর ময়লা লেগে ছিল। তাই তখন তোমাকে ছেড়ে শাওয়ার নিতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে সব খুলে বলবো। কিন্তু তোমার তো আবার একলাইন বেশি বোঝার অভ্যাস। তাইতো নিজের মতো কাহিনি গড়ে নিয়ে বসে বসে কাদছ।
নূর আবার আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
…তো কি করবো? তুমি জানো না,তোমার একটুখানি অবহেলাও আমি সহ্য করতে পারি না? আমার অনেক কষ্ট হয়। আর কখনো এমন করবে না। যাই হয়ে যাক না কেন,আমাকে সব বলবে। আমার কাছ থেকে কখনো কিছু লুকাবে না।
আদিত্যও নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….ইশশ্ আমার প্রাণপাখী টা আমার জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে। আই এ্যাম সো সরি প্রাণপাখী। আর কখনো এমন হবে না।আই প্রমিজ।
তারপর আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে আসলো।রুমে এসে আদিত্য নূরকে বেডে বসিয়ে দিল। নিজেও নূরের পাশে বসে মুচকি হেসে নূরের হাত দুটো ধরতেই, নূর ব্যাথায় হালকা ককিয়ে উঠলো।
….আহহ্
আদিত্য চমকে উঠে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী?
নূরের মনে পরলো তখন ছাদে নিজের উপর রাগ করে দুই হাতের তালু মেঝের সাথে ঘষে ঘষে লাল করে ফেলেছে। শেষেতো রক্তও বের হয়েছে হাত দিয়ে। এখন আদিত্য দেখলে নিশ্চয় রাগ করবে। তাই নূর হাত দুটো তাড়াতাড়ি পেছনে নিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
……ক কিকিছুই হয়নি। কি হবে আবার? রাত অনেক হয়েছে তুমি এখন শুয়ে পড় হ্যাঁ? আমিও শুয়ে পরছি।
কথাটা বলে নূর পেছাতে নিলেই, আদিত্য শক্ত গলায় বলে উঠলো।
….নূর হাত দেখাও আমাকে।
নূর তবুও দেখাচ্ছে না।আদিত্য এবার রাগী সুরে বললো।
….নূর শো মি ইউর হ্যান্ডস।
কথাটা বলে আদিত্য নিজেই নূরের হাত দুটো সামনে নিয়ে এলো। হাত ধরায় নূর ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নিল। চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো।
নূরের হাতদুটো সামনে মেলে ধরতেই, আদিত্য আৎকে উঠলো। চোখ দুটো লাল হয়ে আসলো। কতক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে রইলো।নূরের দুই হাতের তালুর চামড়া উঠে গেছে, রক্তগুলো জমাট বেঁধে আছে। নূরের হাতের এমন করুন অবস্থা দেখে আদিত্যের হাতদুটো কাপছে। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
….এ এসব কি? কিভাবে হলো এটা?
আদিত্যকে এভাবে দেখে নূরের প্রচুর ভয় লাগছে। নূর ভীতু স্বরে বললো।
….আ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার ধাক্কা দেওয়ায় রাগ করেছ। তা তাই আমি আমার হাতকে শা শাস্তি দিয়েছি।
নূরের কথায় আদিত্যের রাগ যেন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেল। আদিত্য নূরের হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতে নিজের চুল শক্ত করে টেনে ধরে, চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আদিত্য অতিরিক্ত রাগে সামনের টি টেবিলে একটা লাথি মেরে দিল। নূর আদিত্যের রাগ দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য নূরের সামনে বসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে বললো।
….হাউ ডেয়ার ইউ নূর? হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো নিজেকে আঘাত করার? তোমাকে বলেছি না, তোমার সবকিছু আমার? তোমার নিজের ওপর তোমার কোনো অধিকার নেই? তাহলে তোমার সাহস কি করে হলো আমার জিনিসকে আঘাত করার? বলো?
নূর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো।
…..স সসরি,,
নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের হুঁশ এল। আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু শান্ত করে নিল। তারপর উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। নূরের সামনে বসে তুলোই স্যাভলন লাগালো। নূরের হাতটা আলতো করে নিজের হাতে নিয়ে স্যাভলন লাগানোর চেষ্টা করে বললো।
….এ একটু জ্বলবে তুমি সহ্য করতে পারবে তো?
নূর মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝাল।আদিত্য একবার নূরের হাতের কাছে স্যাভলন ওয়ালা হাত নিচ্ছে আবার পিছিয়ে আনছে। মনে হচ্ছে নূরের হাতে না নিজের হাতে লাগাতে যাচ্ছে। টেনশনে বেচারার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে নূরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। নূর ঠোঁট টিপে নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। আদিত্য নূরের হাতে স্যাভলন লাগাতেই, নূর হালকা ককিয়ে উঠলো।
….আহহ্
আদিত্য ঘাবড়ে উঠে বললো।
….সরি, সরি,সরি এখুনি ঠিক হয়ে যাবে। আর একটু খানি বাচ, তারপরই হয়ে যাবে।
আদিত্য বাচ্চাদের মতো নূরকে শান্তনা দিচ্ছে আর ফু দিয়ে দিয়ে স্যাভলন দিয়ে হাত পরিস্কার করে দিচ্ছে। হাত পরিস্কার শেষে আদিত্য নূরের হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। আদিত্য সেটা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা?হাসি বন্ধ করো। আমি কিন্তু তোমার ওপর অনেক রেগে আছি। ভেবনা যে তোমার হাসি দেখে আমি গলে যাবো।
নূর মুচকি হেসে বাচ্চাদের মতো করে বললো।
….একটুও না?
….না একটুও না।
নূর ফট করে আদিত্যের এক গালে চুমু দিয়ে বললো।
….এখন?
….এখনও না?
নূর এবার আরেক গালে চুমু দিয়ে বললো।
…এখন?
আদিত্য ভেতরে ভেতরে খুশী হলেও উপরে উপরে বললো।
….এক চিমটিও না।এসব করে কোনো লাভ হবে না। আমার রাগ এত স,,,,
আর বলতে পারলোনা আদিত্য। নূর আদিত্যের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু খেতে লাগলো। আদিত্য অপ্রস্তুত থাকায় প্রথমে একটু অবাক হয়ে গেলেও পরে নিজেও নূরের ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো। পাঁচ মিনিট চুমু খাওয়ার নূর আদিত্যের ঠোট ছেড়ে দিয়ে লাজুক হেসে মাথা নিচু করে বললো।
….এখন কি সরি এক্সেপ্টেবল হয়েছে?
আদিত্য দুষ্টু হেসে বললো।
….এখনো পুরোপুরি হয়নি। তবে আরেকটু চুমু খেলে হয়তো হতে পারে।
নূর লাজুক হেসে আদিত্য জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই এ্যাম সরি।
আদিত্যও মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই এ্যাম অলসো সরি প্রাণপাখী। এন্ড আই লাভ ইউ।
—-+—-
এক সপ্তাহ পর।
সকাল ৮ট।
সাভারের বাড়িতে সবাই ডাইনিং টেবিলে নাস্তার জন্য এসেছে। আদিত্যরা এঙ্গেজমেন্টের পরের দিনই চলে গেছে। তাই আপাতত ওরা নেই।
হঠাৎ সিড়ির দিকে তাকাতেই সবাই অবাক হয়ে গেল। কারণ আবির সকাল সকাল সুট বুট পড়ে একদম ফর্মাল ড্রেসআপে নেমে আসছে। একেতো এত সকাল সকাল আবির ঘুম থেকে উঠেছে, তারওপর আবার এমন ড্রেসআপ দেখে সবাই হা হয়ে গেছে।
সানা ওর বাবার দিকে হালকা কাত হয়ে বললো।
….বাবা আমার মনে হয় আমার ঘুম এখনো ভাঙেনি। তাইতো স্বপ্ন দেখছি যে আবির ভাইয়া এতো সকাল সকাল রেডি হয়ে এসেছে।
সানার বাবা মুচকি হেসে বললো।
……কিন্তু আমিতো সেই ভোরবেলায় উঠেছি। তাহলে আমি কি করে স্বপ্ন দেখছি?
….তারমানে আবির ভাইয়া সত্যি সত্যিই আসছে?
….হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে।
আবির ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে হাসি মুখে বললো।
….গুড মর্নিং এভরিওয়ান।
সবাই অটো হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথাই বলছে না।আবির সেটা দেখে বললো।
….কি হয়েছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম, তাই বলে এভাবে দেখার কি আছে? নজর লেগে যাবে তো আমার।
আবিরের বাবা বলে উঠলো।
….আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে, যে জনাব এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে? আর এই সঙ সেজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
আবির বলে উঠলো।
….ওয়াট ইস সঙ বাবা? দিস ইস নট সঙ,দিস ইস অফিশিয়াল ড্রেসআপ। কারণ তোমরা জেনে খুশী হবে যে আমি আজ থেকে অফিস জয়েন করছি।
কথাটা শোনার সাথে সাথে সানার মুখে থাকা পানি ফুস হয়ে বেড়িয়ে গেল। কাজের মেয়েটা খাবারের ট্রে নিয়ে আসছিল। আবিরের কথা শুনে ওর হাত ঠাস করে ট্রে টা নিচে পড়ে গেল। আর আবিরের মাতো আরও একধাপ এগিয়ে, সে এতবড় শক হজম না করতে পেরে সোজা অজ্ঞানই হয়ে গেল।
আবির এদের অবস্থা দেখে বললো।
….মনে হচ্ছে এতো খুশি এরা বরদাস্ত করতে পারছে না। যাইহোক আমি গেলাম। তোমরা ধীরে ধীরে খুশীটা হজম করে নেও।বাই এভরিওয়ান
কথাগুলো বলে আবির এটিটিউড নিয়ে বেরিয়ে গেল।
চলবে…..