ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৬৫+৬৬

0
2214

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৫

★সন্ধ্যা ৭টা
হলুদ আর মেয়েদীর ফাংশন মোটামুটি শেষ হয়ে গেছে। সবাই উঠানে বসে কথা বলছে। মেয়েরা খেয়াল করলো যে ছেলেরা সবাই মিলে কি যেন খুসুর ফুসুর করছে। তানি ভ্রু কুঁচকে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এরা নিশ্চয় কোনো ফন্দি পাকাচ্ছে। দেখনা কেমন খুসুর ফুসুর করছে।

নূর ঠোঁট উল্টে বললো।
….কিজানি আমি কিছু জানি না।

তানি সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….সানা তুমি কিছু জানো?

….না না ছোট ভাবি আমিও কিছু জানি না।

হঠাৎ নিশি এসে বললো।
….ভাবি আমি জানি ওরা কি পাকাচ্ছে। আমি ব্রেকিং নিউজ পেয়েছি।

সবাই কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…কি?

…শুনেছি ছেলেরা নাকি আজ রাত ব্যাচেলর পার্টি করবে। সেটারই প্লানিং করছে ওরা।

তানি বলে উঠলো।
….কিহহ ওরা ব্যাচেলর পার্টি করছে আর আমাদের জানালও না। এখুনি আবিরকে মজা দেখাচ্ছি।

নূর বলে উঠলো।
….আরে করুক না। তাতে কি হয়েছে? ওরা ছেলেরা ছেলেরা একটু মজাই করতে চাচ্ছে। আমাদের ওদের একটু স্পেস দেওয়া উচিৎ।

তানি বলে উঠলো।
…আরে গাঁধি, তুই কিছুই জানিস না। এইসব ব্যাচেলর পার্টিতে সব ছেলেরা মেয়েদের নিয়ে এসে নাচগান করে। আনন্দ ফুর্তি করে বুজেছিস?

নূর মুচকি হেসে বললো।
….আদিত্যর উপর আমি নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। ও এমন কাজ কখনো করতে পারবে না।

সানা বলে উঠলো।
….হ্যাঁ ছোট ভাবি,বড়ো ভাবি একদম ঠিক বলেছে। ওরা এমন কাজ কখনোই করবে না। আর চাইলেও আদিত্য ভাইয়া থাকতে সেটা কখনো পারবে না।

নিশি বলে উঠলো।
….আর আমরা ওদের পেছনে পরে ওদের সামনে নিজেদের ওয়েট কেন কমাব? ওরা যদি ব্যাচেলর পার্টি করতে পারে তাহলে আমরাও গার্লস পার্টি করবো। ওরা ওদের মতো মজা করবে আর আমরা আমাদের মতো মজা করবো। কেমন আইডিয়া?

সানা বলে উঠলো।
….ওয়াও ইটস এ গ্রেট আইডিয়া। আমরাতো ওদের থেকেও বেশি মজা করতে পারবো।

তানিও হাসি মুখে বললো।
…ঠিক আছে তাহলে আমরাও আজ রাতে পার্টি করবো। কিন্তু কোথায় করবো?

সানা বলে উঠলো।
….আমাদের বাড়ির ছাদে করবো। ওখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করবে না।

তানি বলে উঠলো।
….ঠিক আছে ডান। তাহলে ওই কথাই রইলো?

নূর আমতা আমতা করে বললো।
….আমি আগে আদিত্যকে জিজ্ঞেস করে নেই। ওকে না জানিয়ে আমি কিছু করতে চাই না।

তানি বলে উঠলো।
…ওরাতো ঠিকই আমাদের না জানিয়ে পার্টি করছে। তাহলে আমরা কেন জিজ্ঞেস করবো?

নূর মুচকি হেসে বললো।
….অন্যদের কথা জানি না। তবে আমি জানি আদিত্য আমাকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবে পার্টিতে যাওয়ার আগে।

ওরা তিনজন একসাথে বলে উঠলো।
….Awwwwwwwww

নূর লাজুক হাসলো।

এদিকে ছেলেরা ওদের পার্টির ডিসকাশন করছে। আবির বলে উঠলো।
…তাহলে ওই কোথায় রইলো। আজ রাত বাড়ির পেছন সাইডে পুকুর পাড়ে আমরা পার্টি করবো ওঁকে।

সবাই ওকে বললো। তবে আদিত্য আলসেমি ভাব ধরে বললো।
….বলছি তোরা যা না, আমার না এসব পার্টির মুড নেই। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।

আবির বলে উঠলো।
….ভাই তোর মনে হয়না, বিয়ের পর থেকে তুই সকাল সকাল ঘুমাতে শুরু করেছিস? তোর কি মনে হয়, আমরা এসব বুঝিনা? দেখ মেরে ভাই এক রাত একটু বউয়ের কাছ থেকে কিছুক্ষণ দূরে থাকলে তুই মরে যাবিনা। তাই বাহানা না দিয়ে পার্টিতে যাওয়ার জন্য রেডি হ। নাহলে তুইতো আমাকে চিনিসই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো যে তুই শুধু একরাত না এখানে যে কয়দিন থাকবি সেই কয়দিনই ভাবিকে তোর থেকে আলাদা রাখবো বলে দিলাম?

আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
…..ওঁকে ওঁকে ঠিক আছে। তোরা যখন এত ইনসিস্ট করছিস, তাহলে আমি আসবো।

সায়েম বলে উঠলো।
…ব্রো আমরা কি পার্টিতে ডান্সার আনবো? হেব্বি মজা হবে।

আদিত্য বলে উঠলো।
….নো নো এসব কিছুই করা যাবেনা। নূর এসব ব্যাপারে অনেক সেনসেটিভ। তাই এসব ফালতু আইডিয়া বাদ।

সবাই আদিত্যর কথায় রাজি হয়ে গেল।
——–

রাত ৮টা
নূর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের গহনা খুলছে। যেগুলো ও হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য পড়েছিল। তখনই আদিত্য পেছন থেকে এসে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
…..নিড এনি হেল্প প্রাণপাখী? আপনার খেদমতে বান্দা হাজির আছে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….নো আই ডোন্ট নিড এনি হেল্প। আই ক্যান ডু ইট মাইসেল্ফ। তুমি কি খেদমত করতে পারবে তা আমার ভালো করে জানা আছে

আদিত্য নূরের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বললো।
….শোন না প্রাণপাখী , একটা কথা বলার ছিল।

….বল কি বলবে?

….আসলে বয়েসরা সবাই মিলে ব্যাচেলর পার্টি প্ল্যান করেছে। আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই কিন্তু ওরা ছাড়াছে না। তাই আমাকে যেতে হবে।

নূর আদিত্যর দিকে ঘুরে দুই হাতে আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….তো যাওনা, ওরা একটু ফান করতে চাচ্ছে। সেখানে তুমি না গেলে ওদের খারাপ লাগবে।

….কিন্তু ওখানে তো অনেক রাত পর্যন্ত থাকতে হবে। এতক্ষণ রুমে তোমার একা একা খারাপ লাগবে না? তোমাকে ছেড়ে আমার একটুও যেতে ইচ্ছে করছে না।

….এমন কিছুই হবে না। কারণ তোমাদের দেখাদেখি মেয়েরাও সবাই মিলে পার্টি করার ডিসিশন নিয়েছে। তাই আমাকেও ওখানে থাকতে হবে। তোমার কোনো সমস্যা নেই তো?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….আমার কি সমস্যা থাকবে। তোমরা মেয়েরা মেয়েরা একটু ইনজয় করবে এটাতো ভালো কথা। শুধু আমরা ছেলেরাই মজা করবো, আর মেয়েরা বসে থাকবে। তারচেয়ে ভালো আমরা দুজনরাই আনন্দ করি। তাহলে কারোরই খারাপ লাগবে না।

নূর মুচকি হেসে বললো।
…থ্যাংক ইউ রাজকুমার।

আদিত্য নূরের ঠোঁটে ফট করে একটা চুমু খেয়ে বললো।
….ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম রানী সাহেবা। তাহলে আমি রেডি হয়ে নি।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ , আমিও রেডি হয়ে নেই।
কথাটা বলে নূর কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে গেল। আর আদিত্য রুমের ভেতরেই চেঞ্জ করে রেডি হতে লাগলো।

আদিত্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। তখনই নূর ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। আদিত্য আনমনেই নূরের দিকে তাকালো। আর তাকাতেই আদিত্যর হার্টবিট যেন এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। নূর আজ ব্লু রঙের লেগিস প্যান্ট পরেছে। তারউপরে পিংক কালারের একটা সর্ট টপস পড়েছে। গলায় স্কার্প পেচিয়ে রেখেছে। নূরকে এই প্রথম ওয়েস্টার্ন ড্রেসে দেখে আদিত্য যেন হুঁশ হারিয়ে ফেলছে। হা হয়ে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে ধীরে ধীরে নূরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আদিত্য। আদিত্যকে এভাবে আসতে দেখে নূর লাজুক হেসে এক পা এক পা করে পেছাতে লাগলো। পেছাতে পেছাতে একসময় দেয়ালের সাথে লেগে গেল।

আদিত্য নূরের কাছে এসে নূরের দুই দিকে দেয়ালে হাত রেখে নূরকে আটকে দিল। নূরের মুখের ওপর ঝুকে নেশালো কন্ঠে বললো।
….দিস ইস নট ফেয়ার প্রাণপাখী। আমাকে এভাবে টর্চার কি মানে হয়? আমার এমনিতেই তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। তারউপর তুমি এই লুকে আমার সামনে এসে আমাকে আরও পাগল করে দিচ্ছ। এখন তো কিছুতেই তোমাকে ছেড়ে ইচ্ছে করছে না। এখন কি করবো আমি বলো?

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হেসে বললো।
….ও ওরা বলেছে আজকে সবাই যেন ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে। আ আমি মানা করেছিলাম কিন্তু শোনে নি।

আদিত্য নূরের গালে দুই আঙুল দিয়ে স্লাইড করে বললো।
….তাহলে তো ওদের একটা থ্যাংকস দিতে হয়। ওদের জন্য আজ তোমার এই রুপ দেখতে পেলাম। বাইদা ওয়ে এই লুকে কিন্তু তোমাকে চরম হট লাগছে। ইচ্ছে করছে একদম খেয়ে ফেলি।
কথাটা বলে আদিত্য মুখ নামিয়ে নূরের গলায় আলতো করে একটা কামড় দিল। তারপর সেই কামড় দেওয়া জায়গায় চুমু খেতে লাগলো।

নূর কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
….দে দেরি হয়ে যাচ্ছে। যে যেতে হবে প্লিজ?

আদিত্য নূরের গলায় চুমু খেতে খেতে বললো।
….হোক, আমরা যাবনা।

….দেখ আমরা না গেলে আবির আর তানি দুজনেই মন খারাপ করবে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো?

আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো।
….হুম, ঠিকই বলেছ। উই হ্যাব টু গো।
দুজন রেডি হয়ে একটু পরে বেড়িয়ে এলো।

নিচে ছেলেরা সবাই পার্টির জন্য রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যর জন্য। হটাৎ ওদের সামনে মেয়েরা একে একে বেড়িয়ে এলো। ওদের দেখে ছেলেদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। মেয়েরা একেকজন যেন একেক টা হটনেস ওভার লোড হয়ে গেছে। সব মেয়েরা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে স্টাইলিস আবতার নিয়ে কেয়ামত নামাচ্ছে।

ছেলেদের সবকটার যেন হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। বেচারারা সবাই শক খাওয়ার মতো হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ওরা নিজেদের পার্টি কি করবে, মেয়েদের দেখে ওদের ব্রেইন মুখে চলে এসেছে।

মেয়েরা ছেলেদের এমন অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে এটিটিউড নিয়ে ওদের সামনে দিয়ে হেটে উপরে চলে গেল। ছেলেরা এখনও হা হয়ে তাকিয়েই আছে।

একটু পরে আদিত্য ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। ওদের অবস্থা দেখে আদিত্য বুঝতে পারছে যে, এদের অবস্থাও ওর মতোই হয়েছে। আদিত্য সবার চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো।
….বয়েস, পিকচার খাতামা হো গায়া। এখন বাস্তবে ফিরে এসো।

আদিত্যর কথায় সবার হুঁশ এলো। আবির বিস্ময় নিয়ে বললো।
….ভাই এসব কি ছিল? স্বপ্ন নাকি বাস্তব? আর মেয়েরা সব ক্যাটরিনা কাইফ সেজে কোথায় যাচ্ছে?

আদিত্য বলে উঠলো।
…..নারে ভাই এগুলো সবই বাস্তব। আমিও একটু আগে এই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়ে এসেছি।

…মানে?

….মানে শুধু আমরা না, আমাদের মতো মেয়েরাও আজ রাতে গার্লস পার্টি করবে।

সায়েম বলে উঠলো।
….ভাই আমারতো এখন এই পার্টি রেখে ওই পার্টিতে যেতে ইচ্ছে করছে।

আবির বলে উঠলো।
….নেমকহারাম, পার্টি বদলু, মাত্রই এই দলে ছিলি, এখনই আবার ওইদলে যেতে চাচ্ছিস লজ্জা করে না তোর? আরে ওরা যতই ফ্যাশন শো করুক, মজা তো আমাদের পার্টিতেই হবে দেখে নিস। এখন সময় নষ্ট না করে চল পার্টিতে যায়। তাড়াতাড়ি পার্টি শেষ করে ঘুমাতে হবে। আমার আবার কাল অনেক কাজ আছে। বিয়ে করতে হবে, বাসর করতে হবে। কত মেহনত লাগবে জানিস? তাই শরীরের একটু আরামের দরকার আছে।

আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল। তারপর ওরাও পার্টিতে চলে গেল।
——-

বাড়ির পেছন সাইডে পুকুর পাড়ে পার্টির এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। ডেকোরেটররা এসে জায়গাটা সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। সব ছেলেরা যার যার মতো পার্টি এনজয় করছে।
তবে আদিত্যর পার্টিতে একটুও মন নেই। ওর মন যেয়ে আছে নূরের কাছে। আদিত্য একটা সোফায় বসে ফোন বের করে কিছু দেখতে লাগলো।

একটু পরে সায়েম আদিত্যর পাশে বসে দুষ্টু হেসে বললো।
…ব্রো তুমিও আমার মতো ওদের পার্টির কথায় ভাবছো তাইনা?

আদিত্য কিছু না বলে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। একটু পরে ওখানে তাসিরও এসে বসে বললো।
….ইয়ার চলনা একটু যেয়ে দেখি ওদের পার্টি কেমন চলছে?

আদিত্য আবারও রহস্য হাসি দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। এবার ওখানে আবির এলো। আবির বলে উঠলো।
…ভাইলোক তোরা পার্টি বাদ দিয়ে এখানে কি করছিস?

সায়েম বলে উঠলো।
…মেয়েদের পার্টির কথা ভাবছি ব্রো। একটু দেখতে ইচ্ছে করছে, ওরা কি করছে।

আবির আমতা আমতা করে বললো।
….আসলে না আমারও দেখতে ইচ্ছে করছে। চল আমরা গিয়ে দেখি ওরা কি করছে।
কথাটা বলে আবির আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো।
….কিরে তুই কি ফোনে ঢুকে আছিস,আমরা কি বলছি শুনেছিস তুই?

আদিত্য ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো।
….তোদের চিন্তা ভাবনা যেখানে শেষ হয়,আমার সেখান থেকে শুরু হয়। তোরা দেখার কথা বলছিস, আমিতো অলরেডি দেখা শুরু করে দিয়েছি।

সবাই ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানেহ?

….মানে তোরা হয়তো ভুলে গিয়েছিস যে, আবিরের বিয়ের জন্য আমি পুরো বাসায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছি উইথ সাউন্ড সিস্টেম। তাই আমি এখন ওদের পার্টির লাইভ টেলিকাস্ট দেখছি।
কথাটা বলে আদিত্য হাতে থাকা ফোনটা সবার দিকে ঘুরিয়ে দেখালো।যেখানে মেয়েদের পার্টি দেখা যাচ্ছে।

সবাই আশ্চর্য হয়ে বলে উঠলো।
….ওয়াও ভাই ইউ আর গ্রেট। কি আইডিয়া বের করেছ।

তারপর সবাই একসাথে মিলে মেয়েদের পার্টি দেখতে লাগলো।
——

ছাদের উপর মেয়েদের পার্টির জন্য জাঁকজমক আয়োজন করা হয়েছে। সাউন্ড বক্স, খাবার দাবার সবকিছুই আছে। তানিকে বসানোর জন্য ছোট্ট একটা সিংহাসন করা হয়েছে। সেখানে তানি বসে আছে। আর মেয়েরা সবাই আনন্দ ফুর্তি করছে।

একটু পরে নিশি হাতে মাইক নিয়ে এসে সবার মাঝখানে খোলা জায়গায় দাঁড়াল। তারপর মাইকে বলতে শুরু করলো।
…..হ্যালো হ্যালো, মে আই হ্যাভ ইউর এ্যাটেনশন প্লিজ। গুড ইভিনিং লেডিস এন্ড লেডিস। এমনিতেতো বেশি কথা বলার অভ্যাস আমার নেই। তাও বলছি, আমরা সবাই জানি যে কাল আমাদের তানি আর আবির ভাইয়ার বিয়ে। তো সেই উপলক্ষে আমরা এখানে গার্লস পার্টি করছি। আর পার্টিতে নাচ গান না হলে কেমন হয়? একদম আলু ছাড়া সিঙ্গারা হয়ে যায়। তাই এখন আপনাদের সামনে এখন একটা পারফরম্যান্স হতে চলেছে। পারফরম্যান্স টা আমাদের ব্রাইড আর গ্রুম কে ডেডিকেটে করে তৈরি করে হয়েছে। সো গার্লস পুট ইউর হ্যান্ডস টুগেদার ফর সানা এন্ড নূর।
কথাটা বলে নিশি ওখান থেকে সরে গেল।

একটু পরে ওখানে নূর হেলেদুলে এন্ট্রি নিল। নূরকে দেখে তানি অবাক হয়ে গেল। কারণ নূর একদম সেম টু সেম তানির মতো ড্রেসআপ করে তানির মতোই অঙ্গভঙ্গি দেখাচ্ছে।
এসব সবকিছু আদিত্যরা ফোনে দেখতে পাচ্ছে। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য যেন একটা ঝটকা খেল। বাকি সবাইও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

নূর তানির মতো হেলেদুলে হাঁটছে। হঠাৎ সানা বাইকে এন্ট্রি নিয়ে এসে নূরের সামনে ব্রেক মারলো। সানাকে দেখে সবাই আরও একদফা অবাক হলো। সানা পুরো আবিরের মতো লুক নিয়েছে। আবিরের মতো ড্রেসআপ, মাথায় আবিরের চুলের মতো একটা পরচুলা লাগিয়েছে, চোখে কালো সানগ্লাস। সানাকে এইরুপে দেখে তাসির বেচারার কাশি উঠে গেল। তা দেখে বাকি ছেলেরা মিটিমিটি হাসছে।

সানা নূরের সামনে বাইক থামিয়ে, বাইক থেকে নেমে ছেলেদের মতো এটিটিউড নিয়ে টেডি স্মাইল দিয়ে নূরের সামনে এসে দাঁড়াল। নূর তা দেখে লাজুক লাজুক হাসছে। তখনই সাউন্ড বক্সে মিউজিক বেজে উঠলো। সানা নূরের কাছে এসে টেডি স্মাইল দিয়ে নূরের কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ছেলেদের মতো এটিটিউড নিয়ে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ ওই..
♬ ♬ তুই আমার রানী
♬ ♬ আমি তোর রাজা রে
♬ ♬ পাবিনা আমার মতো বাংলা বাজা রে
(সানা হাত উপরে তুলে নূরকে নিজের মাসলস দেখিয়ে দেখিয়ে পুরুষালী ভাব ধরে গাইলো)
♬ ♬ আমি তোর হিরো,আমি তোর হিরো
♬ ♬ আমি তোর হিরো,বাকি সব জিরো
(নূর সানাকে দেখে নিচের ঠোঁট কামড়ে দুই হাত পানি ঝাড়ার মতো করে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন এমন সুপুরুষ ও কখনো দেখিনি। তারপর দুই গালে হাত রেখে লাজুক হেসে গাইলো)
♬ ♬ তুই আমার হিরো,তুই আমার হিরো
♬ ♬ তুই আমার হিরো,বাকি সব জিরো
(সানা পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগ বের করে নূরের একটা ছবি দেখিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ পকেটে মানিব্যাগে আজতো গরের মাত
♬ ♬ শুধু আছে তোর ফটো
♬ ♬ তাতেই ঠাট বাট
(নূর সানার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ চাইনা গয়না গাটি
♬ ♬ শুধু চাই তোকে আজ
♬ ♬ হোক না হাওয়ায় চটি
♬ ♬ তুই আমার রংবাজ

♬ ♬ তুই আমার হিরো,তুই আমার হিরো
♬ ♬ তুই আমার হিরো,বাকি সব জিরো
(সানাও নূরের সাথে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ আমি তোর হিরো,আমি তোর হিরো
♬ ♬ আমি তোর হিরো,বাকি সব জিরো

♬ ♬ বাড়ি গাড়ি নেই যে আমার
♬ ♬ কেয়ার অফ ফুটপাত
♬ ♬ তোর প্রেমে পড়ে এবার
♬ ♬ করে দেব বাজিমাৎ
(নূর সানাকে দেখিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ তুই জংগী সোনা বেঙ্গল টাইগার
♬ ♬ জীবনে তোকে আমি চাইছি যে বারবার
(সানা নূরের হাত ধরে ঘুরিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ তুই আমার রানী
♬ ♬ আমি তোর রাজা রে
♬ ♬ পাবিনা আমার মতো বাংলা বাজা রে
♬ ♬ পরে নে বেনারসি,পালকি সাজা রে
♬ ♬ পাবিনা আমার মতো বাংলা বাজা করে
♬ ♬ আমি তোর হিরো,আমি তোর হিরো
♬ ♬ আমি তোর হিরো,বাকি সব জিরো

♬ ♬ তুই আমার হিরো,তুই আমার হিরো
♬ ♬ তুই আমার হিরো, বাকি সব জিরো

নাচের শেষে সানা নূরকে নিজের একহাতের ওপর বাঁকা করে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে কোমড় ধরে রাখলো।

পারফরম্যান্স শেষে সবাই জোরে জোরে করতালি আর সিটি দিতে লাগলো তানিও খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো।
….ওয়াও, দিস দ্যা বেস্ট পারফরম্যান্স অফ দ্যা ডে।

এদিকে ছেলেরা এতক্ষণ ওদের পারফরম্যান্স দেখে এখনো শকের ভেতরেই আছে। হা হয়ে গেছে সবগুলো। আদিত্য ভাবছে, নূর যে এতো ভালো ডান্স করতে পারে তাতো ওর জানাই ছিলনা।

একটু পরে তানির কিছু কাজিন সবাইকে কোল্ড ড্রিংকস এনে দিল। সবাই যার যার মতো নিয়ে খেতে লাগলো। নূর মুখে দিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।
….কোল্ড ড্রিংকস টা কেমন যেন একটু ডিফারেন্ট টেস্ট?

তানির কাজিন বলে উঠলো।
…..আরে এটা স্পেশাল কোল্ড ড্রিংকস, এটার টেস্ট একটু এরকমই খেতে খেতে মজা পাবেন। খেয়ে দেখেন।

নূর আর কিছু না বলে খেয়ে নিল। কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে সবার মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। হঠাৎ সবাই হাসতে শুরু করে দিল। নূর হেসে ঢুলতে ঢুলতে বললো।
….ঠিকই বলেছ অনেক মজা, আরো দেও আরো খাব।

নূরের সাথে সবাই বলতে লাগলো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ আমরাও খাব।

এভাবে খেতে খেতে একসময় সবগুলো পুরো মাতাল হয়ে গেল। এসব দেখে আদিত্য সহ বাকি সবার ভ্রু কুঁচকে আসলো। আদিত্য সন্দেহ হতে লাগলো। নিশ্চয় কিছু একটা গরবর হয়েছে ওখানে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ওরা দেখলো।

নূর একটা টেবিলের ওপর উঠে নাচতে শুরু করে দিয়েছে। নাচতে নাচতে হেসে হেসে গাইতে লাগলো।
♬ ♬ কি রস খাওয়াইলি আমায় ওগো জরিনা

নূরের সাথে বাকি সবাইও নাচতে লাগলো।

আদিত্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে উঠে দৌড় দিল। ছাদে যাওয়ার জন্য। বাকি ছেলেরাও ওর পিছে পিছে দৌড়াল।

আদিত্য দৌড়ে ছাদের দরজায় এসে দাড়িয়ে সামনে তাকাতেই ওড় চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল। বাকি ছেলেরাও ওর পিছে এসে দাঁড়াল। সামনে তাকাতেই ওদেরও চোখের মনি বেড়িয়ে আসার উপক্রম। আদিত্য বুঝতে পারছে যে ও আসতে দেরি করে ফেলেছে। এখন আর ওর হাতে কিছু নেই।

চলবে…….

#ভালোবাসার_চেয়েও-বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৬

★ নূর টেবিলের উপর হাঁটু ভাজ করে রানীদের মতো মুড নিয়ে বসে আছে। কপালে একটা পেপসির মুখ নিয়ে টিপ বানিয়ে লাগিয়ে রেখেছে। একটা চেয়ারের উপর এক হাত ঠেকিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে রানী শিবগামী সেজে বসে আছে। ওর সামনে দুই দিকে দুই সাড়ি হয়ে সৈন্যরা দাঁড়িয়ে আছে। আর নূরের ডান হাতের কাছে একজন মাথার উপর একটা স্টিলের বোল দিয়ে হাতে লাঠি নিয়ে কাটাপ্পা সেজে দাঁড়িয়ে আছে।

নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না।বেচারা একটা শকের ভেতরে আছে। বাকি ছেলেরাও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কান্ড দেখছে।

নূর সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো।
….রাণী শিবগামী আদেশ করছে আজকের দরবার শুরু করা হোক। আজকে আমি আমার প্রজাদের ফরিয়াদ শুনবো। তাদের সব সমস্যা, দুঃখ দুর্দশা দূর করবো। এ মেরা বাচ্চান(বাচান) হে, মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান(শাসান)। তাহলে দরবার শুরু করা হোক।

সৈন্য সেজে থাকা একটা মেয়ে মাথা ঝাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….প্রথম ফরিয়াদি হাজির হো,,

একটু পরে ওখানে তানি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। তারপর নূরের দিকে ঝুকে হাত দিয়ে আদাব করে বললো।
…..রানী শিবগামীর জয় হোক জয় হোক।

নূর হাত উঠিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে , ঠিক আছে বালিকা। বলো কি সমস্যা তোমার?

তানি দুঃখী ভাব ধরে বলে উঠলো।
….রানী সাহেবা, কি বলবো আপনাকে। আমার অনেএএএএক বড়ো একটা রোগ হয়েছে। দুনিয়ার যত ডাক্তার, কবিরাজ, জোত্যিষি, ফকির বাবা সব দেখিয়ে ফেলেছি তবুও আমার এই রোগের কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আপনিই বলুন আমি কি করবো রানী সাহেবা? কি হবে আমার?

তানির কথা শুধু আবির মনে মনে ভাবলো, তানির এমন কি রোগ হয়েছে যা আমি জানি না? ওর কি কোনো বড়ো রোগ হয়েছে?

নূর বলে উঠলো।
…..বলো বালিকা কি এমন রোগ হয়েছে তোমার?

তানি দুঃখী ভাব ধরে বললো।
….রানী সাহেবা, আমি যখন দাঁড়ায় তখন আমি বসিনা, আমি যখন বসি তখন দাড়ায় না। আমি যখন হাঁটি তখন দাঁড়ায় না, যখন দাঁড়ায় তখন হাঁটি না। আমি যখন কথা বলি তখন চুপ থাকিনা,যখন চুপ থাকি তখন কথা বলিনা। আমি যখন ঘুমাই তখন চোখে দেখিনা, যখন চেয়ে থাকি তখন ঘুমাই না। আমি যখন খাইনা তখন ক্ষুধা লাগে , যখন খাই তখন ক্ষুধা লাগে না। এখন আপনিই বলুন আমি কি করবো? আমার এই ভয়ংকর রোগ কি কখনো সাড়বে না?

তানির রোগের বর্ননা শুনে বেচারা আবিরের এখন নিজেরই আইসিও তে ভর্তি হওয়ার মতো অবস্থা। ও কি ভাবছিল আর কি হলো। ওতো ভুলেই গিয়েছিল যে এদের সবগুলোর স্ক্রু ঢিলা হয়ে আছে। আবির দুষ্টু হেসে আস্তে করে বললো।
….ভাই আমারতো জানাই ছিলনা যে,আমার হবু বউয়ের এতো বড়ো বড়ো রোগ আছে।
আবিরের কথায় সবগুলো মুখ টিপে হাসলো।

তানির কথা শুনে নূর হাতের উপর থুতনি ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করে বললো।
….হুমমম,,এটাতো অনেক বড়ো একটা রোগ। আসলে এটা রোগ না এটা একটা অভিশাপ তোমার ওপর। তোমার পূর্ব জনমের অভিশাপ এটা।

তানি আশ্চর্য হয়ে বললো।
….কিহহ্ আমার পূর্বজীবনের অভিশাপ? কিন্তু আমি কি এমন অন্যায় করেছি যে আমার ওপর এত বড়ো অভিশাপ দেওয়া হয়েছে রানী সাহেবা?

নূর ড্রামাটিক ভাবে বললো
….করেছ, তুমি অনেক বড়ো অন্যায় করেছ। তুমি একজোড়া নববিবাহিত স্বামী স্ত্রীকে তাদের বাসর ঘরে তাদের মিলন হওয়ার আগেই তাদের মেরে ফেলেছ তুমি।

কথাটা শোনার সাথে সাথে সবাই টিভিসিরিয়ালের মতো তিনবার করে রিয়্যাকশন দিতে লাগলো। পেছন থেকে একটা মেয়ে ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিতে লাগলো।
…..ধুম তানা না না, ধুম তানা না না

আবির আবারও দুষ্টু হেসে বললো।
…আয় হায় আমার বউতো দেখছি খুনিও। আমারে আবার পুলিশ এসে ধরে না নিয়ে গেলে হয়।

তানি অপরাধী সুরে বললো বলে উঠলো।
…..কিহহ্ আমি একজোড়া স্বামী স্ত্রীকে খুন করেছি?

নূর বলে উঠলো।
….হ্যাঁ তুমি একজোড়া মশা স্বামী স্ত্রীকে মেরে ফেলেছ। মশা স্বামী স্ত্রী যখন বাসর করতে যাচ্ছিল তখন তুমি তাদের ওপর এ্যারোসল স্প্রে করে দিয়েছ। আর সাথে সাথে সেই স্বামী স্ত্রী মৃত্যু বরণ করেছে। এবং মরার আগে তারা তোমাকে এই অভিশাপ দিয়ে গেছে। যারজন্য তোমার এই ভয়ংকর রোগ হয়েছে।

তানি দুই কানে হাত চেপে ধরে ধপ করে মাটিতে বসে পরে কান্নার ভান করে বললো।
….না না এ হতে পারে না। এতো বড়ো অন্যায় আমি কি করে করতে পারলাম? কি করে? কি করে? এখন আমি কি করবো রানী সাহেবা? কি করে আমি এই পাপের ভার থেকে মুক্ত হবো? আমি কি করেই বা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো? দয়া করে বলে দিন রানী সাহেবা?

নূর গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….হুমমম , উপায় একটা আছে। তবে অনেক কঠিন পারবে তো তুমি করতে?

….হ্যাঁ হ্যাঁ রানী সাহেবা যত কঠিনই হোক না কেন, আমি সবই করবো।আপনি বলে দিন কি করতে হবে?

…ঠিক আছে, তোমাকে একশো মশা প্রেমিক প্রেমিকার জুটিকে খুঁজে বের করে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। তবেই তুমি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। এবং তোমার রোগও সেরে যাবে। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

….ঠিক আছে রানী সাহেবা আমি তাই করবো। শুকরিয়া আপনার রানী সাহেবা আপনিই অনেক মহান।
কথাটা বলে তানি আদাব জানিয়ে ওখান থেকে সরে গেল।

এদের কথাবার্তা শুনে আবিরের এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। লাইক সিরিয়াসলি, মশার বিয়ে? তাও আবার একশো মশার জুটির?

এবার আবার সেই সৈন্যটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
…পরবর্তী ফরিয়াদি হাজির হোক।

একটু পরে সানা ওখানে হেলেদুলে হাজির হলো। তারপর নূরের তাকিয়ে বললো।
…ওয়াট’স আপ শিবস ম্যাম? অল গুড?

নূর বলে উঠলো।
….ইয়া ইয়া আ্যাম কুল। ওয়াট এবাউট ইউ? টেল মি ওয়াট ইস ইউর প্রবলেম?

সানা ডানে বামে হেলেদুলে মুখে আঁচল চিবিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
…..আসলে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমার একটা ইচ্ছে আছে। আপনি অনুমতি দিলে বলাতাম?

….হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই নির্ভয়ে বলো কি বলবে?

….আসলে আমি একজনকে না খুব পছন্দ করি। তাকে বিয়ে করতে চাই।

সানার কথা শুনে তাসির মনে মনে গদগদ হয়ে গেল। ও ভাবছে সানা ওর কথাই বলছে।

নূর বলে উঠলো।
…বলো কাকে বিয়ে করতে চাও তুমি?

সানা লাজুক ভঙ্গিতে বললো।
….আমার না স্পাইডার ম্যান অনেক পছন্দ। আমি স্পাইডার ম্যানকে বিয়ে করতে চাই।

বেচারা তাসিরের মনটা বেলুনের মতো ফটাস করে ফুটে গেল। শেষমেষ এই ছিল ওর কপালে? এখন স্পাইডার ম্যান কিনা ওর সতীন হবে?
তাসিরের এমন চুপসে যাওয়া চেহারা দেখে বাকিরা মিটিমিটি হাসছে।

সানার কথা শুনে নূর বলে উঠলো।
….কিহ স্পাইডার ম্যান? কিন্তু ওতো সবসময় উড়ে বেড়ায়। সংসার কখন করবে? আর ওতো একটা স্পাইডার, জাল বুনে সেখানে থাকে। তুমি কি করে সেখানে থাকবে? আর তাছাড়া ওতো সবসময় কস্টিউম পড়ে থাকে। তুমি চিনবে কি করে যে কস্টিউমের ভেতর কে আছে?

সানা ঠোঁট উল্টে বললো।
…..তাহলে আমি কি করবো শিবস ম্যাম?

….তুমি এক কাজ করো, ওই পোকামাকড় কে ছাড়। তুমি আমাদের কাটাপ্পাকে বিয়ে করো। হি ইস অলসো এ হ্যান্ডসাম এন্ড কুল গাই।ইউ ক্যান ম্যারী হিম।

তাসির বেচারার এবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রম। প্রথমে স্পাইডার ম্যান, এখন আবার কাটাপ্পা,? আরো কয়জন আছে সিরিয়ালে কে জানে?

নূর কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কাট্টু বয়, ইউ লাইক হার? ইউ ওয়ান্ট টু ম্যারী হার?

কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটা কাচুমাচু করে বললো।
…..নো শিবস্ ম্যাম, আই কান্ট ম্যারী হার।

নূর ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..বাট ওয়াই কাট্টু? লুক সি ইস ভেরি সুইট গার্ল?

…..আ আসলে শিবস ম্যাম, আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না কারণ, কারণ আমি, আমি, আমি আসলে একটা গে।

সবাই আবারও টিভি সিরিয়ালের মতো রিয়্যাকশান দিতে লাগলো। সেই মেয়েটি আবারও ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিতে লাগলো।
…..ধুম তানা না না, ধুম তানা না না

নূর বলে উঠলো।
….কিহহ্? কি বলছো এসব কাট্টু?

কাটাপ্পা সেজে থাকা মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে বললো
…..জ্বী শিবস ম্যাম, আই এ্যাম গে। এন্ড আই লাভ ভাল্লালদেবা।

ওদিকে ভাল্লালদেবা সেজে থাকা মেয়েটি খুশী হয়ে বললো।
….রিয়েলি কাট্টু, ইউ লাভ মি? অওওওও আই লাভ ইউ টু কাট্টু😘

এদের কথা শুনে নূর সানার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….হুম তাহলে আর কি করার। মিয়া বিবি রাজি তো কেয়া কারেগা কাজি। যাও কাট্টু বয় জিলো আপনি জিন্দেগী।

নূর এবার সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…. কাট্টু যখন রাজি না, তুমি তাহলে স্পাইডার ম্যান কেই বিয়ে করো। তবে তোমাকে স্পাইডার ম্যান এর মতো মুখ দিয়ে জাল বের করা শিখতে হবে। তবেই তুমি ওর তালে তাল মিলিয়ে সংসার করতে পারবে। তাই তুমি তাড়াতাড়ি মুখ দিয়ে জাল বের করা শেখ। তারপর আমি তোমার বিয়ে স্পাইডার ম্যান এর সাথে করাবো। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

সানা খুশী হয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ সো মাচ শিবস ম্যাম। ইউ আর দা বেস্ট।
কথাটা বলে সানা ওখান থেকে সরে গেল।

এদের এসব কান্ডকারখানা দেখে আদিত্যদের ব্রেইন কোমায় চলে যাচ্ছে। বেচারারা কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। মাথা পুরো ব্লাঙ্ক হয়ে যাচ্ছে।

একটু পরে আবার সেই সৈন্যটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….পরবর্তী ফরিয়াদি হাজির হোক,,

কিছুক্ষণ পরে ওখানে নিশি পুরাণ ছবির দুঃখীয়ারি নায়িকাদের মতো দৌড়ে এসে নূরের সামনে ঠাস করে ফ্লোরে উপর হয়ে পড়লো।

সেই মেয়েটা আবারও ব্যাকরাউন্ড মিউজিক দিয়ে উঠলো।
…আআ আ আ আ আ,,,,,

নিশিকে দেখে সায়েম হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিল। ও জানে যে এখন ওর পালা এসেছে পঁচার। এরতো এমনিতেই মাথার স্ক্রু ঢিলা। আজতো আরও বেশি ঢিলা হয়ে আছে।নাজানি এই নিশি আবার কি করবে।

নূর নিশিকে দেখে বলে উঠলো।
…কি হয়েছে তোমার বালিকা? কি চাই তোমার?

নিশি ফ্লোরে পরে থেকেই মাথা উপরে তুলে অতি নিরীহ দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…..মিলড ইনসাফ চাই আমার ইনসাফ। তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ মিলেছে, কিন্তু ইনসাফ পাইনি মিলড। ইনসাফ চাই আমার ইনসাফ।

নূর পাশের সৈন্য সেজে থাকা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..শোন এখানে আজকে কি কোনো ইনসাফ নামের ডিস তৈরি হয়েছে?

মেয়েটি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…না রানী সাহেবা, আমাদের এখানে কোনো ইনসাফ নামের ডিস রান্না হয় নি। তবে বাবুর্চি দের বললে নিশ্চয় ইনসাফ রান্না করে দেবে।

নূর এবার নিশির দিকে তাকিয়ে বললো।
…সরি ডিয়ার আমাদের এখানে কোনো ইনসাফ নামের ডিস রান্না হয়নি। তুমি চাইলে আরও অনেক কিছু আছে সেগুলো ট্রাই করতে পারো। যেমন পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, মাংসের রেজালা আরও অনেক কিছু আছে। তুমি সেগুলো খাও। ইনসাফই যে খেতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।

নিশি উঠে দাঁড়িয়ে বললো

…না না মিলড আপনি বুঝতে পারেন নি। ইনসাফ কোনো খাবার না।ইনসাফ মিনস জাস্টিস। আই ওয়ান্ট জাস্টিস।

নূর বলে উঠলো।
…..এইমাত্রই তো ইনসাফ চাইছিলে।এখন আবার জাস্টিন বিবারকে চাচ্ছ। একজন স্পাইডার ম্যান চায়,একজন জাস্টিন বিবার চায়।আমি কি এখানে ম্যারেজ বিরো খুলেছি নাকি?

…..না না মিলড আপনি আবারও ভুল বুচ্ছেন। আমি বলতে চাচ্ছি আমার ন্যায় চাই।ন্যায় বিচার চাই। আমার জীবনে অনেক দুঃখ মিলড, আপনি এর বিচার করুন।

….ওহ আচ্ছা, বলো বালিকা কি এমন দুঃখ তোমার? আমি তা দূর করার চেষ্টা করবো।

নিশি মাত্রাতিরিক্ত জনম দুঃখীনি ভাব ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
……মিলড আমার জীবনে এতো দুঃখ যে সেটা বলতে গেলে আমার এক জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও আমার দুঃখের কথা শেষ হবে না। আমার দুঃখের কথা বললে আসমান জমিন কেঁদে ওঠে। এতো দুঃখ আমার মিলড।

…..কি এতো দুঃখ তোমার? আমাদেরও বলো শুনি আমরা।

….মিলড কি বলবো আমার দুঃখের কথা , আমি যখন ফেসবুকে কিছু পোস্ট করতে যাই, আমার নেট থাকেনা। নেট থাকলে ফোনই হ্যাং হয়ে যায়।যদি কিছু পোস্ট করি সবাই হা হা রিয়্যাক্ট দেয়। কখনো আশা অনুযায়ি কমেন্ট পাই না। আমার কামিনী বান্ধবী গুলো উল্টো পাল্টা কমেন্ট করে আমাকে পচায়। আবাল মার্কা ফ্রেন্ড গুলো আমাকে আবাল মার্কা পোস্টে ট্যাগ করে। সবাই আলতু ফালতু গ্রুপে আর পেজে ইনভাইট করে করে বিরক্ত করে ফেলে। ম্যাসেঞ্জারে নক করে করে আমার লাইফ টা ঝালাপালা করে দেয়। আপনিই বলুন মিলড এতো দুঃখ আমি কোথায় রাখবো মিলড কোথায় রাখবো?

নিশির দুঃখে দরবারের সবাই দুঃখিত হয়ে পড়েছে।
নূর এক হাত উঁচু করে ব্যাথিত কন্ঠে বললো।
…বাচ্ বালিকা বাচ্, আমি আর শুনতে পারবো না তোমার এতো দুঃখের কাহিনী। তুমি এতো দুঃখ নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছ বালিকা? এতো দুঃখ কারোর জীবনে কিভাবে হতে পারে? আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।

নূর একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস টেনে নিয়ে বললো।….তুমি চিন্তা করোনা বালিকা, আমি বেচে থাকতে আমার প্রজারা কেউ দুঃখ কষ্টে থাকবে না। আমি তোমার জন্য একটা ফেসবুক এক্সপার্ট সেকরেটারি রেখে দেব।যে তোমার ফেসবুক চালাতে সাহায্য করবে। এ মেরা বাচ্চান হে,মেরা বাচ্চান হি হে শাহরুখ খান।

নিশি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললো।
…..ধন্যবাদ মিলড,আপনি সত্যিই মহান।
কথাটা বলে নিশি ওখান থেকে সরে গেল।

এভাবে আরও কিছুক্ষণ ওদের দরবার চলতে লাগলো। তারপর নূর বলে উঠলো।
…..বাচ্ আজকের দরবার এখানেই শেষ হলো। এখন রানী সাহেবার মনোরঞ্জনের পালা। আমরা সবাই মিলে এখন আনন্দ করবো।
সাউন্ড বক্সের কাছে থাকা মেয়েটার দিকে হাত উঠিয়ে বললো।
….ডিজে ওয়ালে বাবু যারা গানা চালাদ।

মেয়েটা মাথা ঝাকিয়ে গান প্লে করলো।

♬ ♬ ইটস বিন লং
♬ ♬ তেরে বিন সুনে হে পারদেসি
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়

♬ ♬ সাজনা বিন তেরে
♬ ♬ লাগে আঙ্গান টেঢ়ে
♬ ♬ মে নাচ না জানু
♬ ♬ এক রাত্তি এনি মোর
♬ ♬ লেহরানা না ভুলি
♬ ♬ ইঠলানা না ভুলি
♬ ♬ ঘার আ জানা
♬ ♬ ডোন্ট ইউ লাভ মি এনি মোর

♬ ♬ ইটস বিন লং
♬ ♬ তেরে বিন সুনেহে পারদেশি
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
♬ ♬ নাগিন দিন গিন গিন গিন গিন গিন
♬ ♬ গিন গিন গিন গিন গিন গিন মার গায়
(সংক্ষিপ্ত)

গানটাতে সবাই পাগলের মতো উড়াধুড়া নাচছে। নূর দুই হাত দিয়ে বিন বানিয়ে মুখের সামনে নিয়ে নাচছে। আর নূরের নিচে তানি শুয়ে থেকে দুহাত দিয়ে সাপের ফনা বানিয়ে নাচছে।

আদিত্য নূরের এমন অবস্থা দেখে আর থাকতে নিয়ে না পেরে নূরের যেতে নিলেই আবির ওর হাত টেনে ধরে বললো।
…..ভাই কি করছিস?

…কি করছি মানে? নূরের কাছে যাচ্ছি। দেখছিস না কি অবস্থা হয়েছে ওর?

….ভাই পাগল হয়ে গেছি? এখন ওদের কাছে যাওয়া মানে বাঘের গুহায় যাওয়া। দেখছিস না সবগুলো কেমন কালিমাতা সেজে আছে। আমরা ওখানে গেলে আমাদেরও বারোটা বাজিয়ে দিবে।

…শাট আপ, তাই বলে কি আমি নূরকে এই অবস্থায় ছেড়ে দিবো নাকি? এখন ওর হুঁশ নেই। কি করছে ওরা নিজেও জানেনা। যদি উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে তখন? আমি নূরের কাছে যাচ্ছি। সি নিডস মি। আর তোরাও তোদের পার্টনারের কাছে যা। ভুলে যাসনা কাল তোদের বিয়ে। তানি যদি ঠিক না হয় তখন তুই বিয়ে কার সাথে করবি, আর বাসর কার সাথে করবি?
কথাগুলো বলে আদিত্য নূরের কাছে গেল।

অন্য ছেলেরাও ভয়ে ভয়ে আদিত্য পিছনে গেল।

নূররা তো নাচাইতে ব্যাস্ত। আদিত্য এসে ডাকছে কিন্তু শুনতে পাচ্ছে না। আদিত্য রেগে গিয়ে সাউন্ড বক্সটা যেয়ে বন্ধ করে দিল। গান বন্ধ হতেই সবাই হইচই করে উঠলো।
…কি হলো কি হলো,গান কে বন্ধ করলো।

হঠাৎ ছেলেদের আসতে দেখে নূর বলে উঠলো।
….আরে দুশমনেরা আমাদের রাজ্যে হামলা করে দিয়েছে। সৈন্যরা আক্রমণ করো।

নূরের আদেশ মতো সব মেয়েরা ছেলেদের ওপর হামলা করলো। সব মেয়েরা মিলে ছেলেদের ঘিরে ধরে টানাটানি করতে লাগলো। ছেলেরা পড়ে গেছে এক গ্যারাকলে। না এদের সাথে লড়াই করতে পারছে, না এখান থেকে পলাতে পারছে। আদিত্যকে আসতে দেখে আবির বলে উঠলো।
….দেখেছিস ভাই বলেছিলাম না এখানে আসার দরকার নেই। এখন হলোতো। নিজেও মরলি সাথে আমাদেরও মারলি।

আদিত্যকে দেখে নূর আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠলো।
…..আরেএএ,এটাতো আমার আদু বেবি।

নূরের কথা শুনে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আদু বেবি? লাইক সিরিয়াসলি?
বাকি ছেলেরা নূরের কথা শুনে হেসে উঠলো। আদিত্য ওদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতেই ওদের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

নূর মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই এই ছাড় তোমারা আমার আদু বেবিকে। লজ্জা করে না নিজেদের রাজাকে আটকে রাখতে। ছাড় বলছি, একদম ছোঁবে না আমার আদু বেবিকে।
কথাটা বলে নূর মেয়েদের কাছ থেকে আদিত্যকে ছাড়িয়ে নিল।

তারপর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….আদু বেবি, আমি জানি তুমি কেন এখানে এসেছ। তোমার কিচ্ছি চাই তাইনা? নটি বয়, একটুও সবুর নেই না তোমার? এখানেও চলে এসেছ কিচ্ছি নিতে?

নূর কথায় আদিত্য যেন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। আর বাকি ছেলেরা আবার হাসা শুরু করে দিল।আবির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
….আদু বেবিইইই,,ইউ ওয়ান্ট কিচ্ছি? নিয়ে নেও কিচ্ছি।

নূর বলে উঠলো।
…আসো আদু বেবি, আমি তোমাকে কিচ্ছি দিচ্ছি।
কথাটা বলে নূর ঠোঁট চোখা করে আদিত্যের দিকে এগুচ্ছে চুমু দেওয়ার জন্য।

আদিত্য চোখ বড়ো বড়ো করে নূরকে আটকে দিয়ে বললো।
…..কি করছো নূর? সবাই দেখছে তো? চল এখান থেকে।

নূর আহ্লাদি কন্ঠে বললো।
….অওওওও আদু বেবির লজ্জা করছে? ঠিক আছে আমি এখুনি সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বলছি।
নূর সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই সবাই চোখ বন্ধ করো। তোমাদের রানী সাহেবা তার রাজাকে কিচ্ছি করবে। সবাই চোখ বন্ধ করো।

সব মেয়েরা নূরের কথামতো চোখ বন্ধ করে নিল। তবে ছেলেরা করলো না। ওরা নূরের কান্ড দেখে মজা নিচ্ছে।

নূর আবার ঠোঁট চোখা করে আদিত্যের দিকে এগুতে লাগলো। আদিত্য আর উপায় না পেয়ে নূরকে কাঁধে তুলে নিল। নূরকে কাঁধে নিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে লাগলো। নূর চমকে উঠে বললো।
….আরে আরে তোমাদের রানীকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁচাও আমাকে।

মেয়েদের এগিয়ে আসতে দেখে আদিত্য বলে উঠলো।
….রানী সাহেবার এখন আরামের সময় হয়েছে। তাই আমি ওনাকে আরাম কক্ষে নিয়ে যাচ্ছি। বুজেছ।

মেয়েরা আরকিছু বললো না। আদিত্য হাফ ছেড়ে নূরকে নিয়ে গেল।

বাকি ছেলেরাও অনেক কষ্টে তাদের পার্টনারদের নিয়ে গেল।

চলবে….