#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১০
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*কেক কাটা শেষ হতেই অর্পা অয়নকে নিজে হাতে কেক খাইয়ে দিলো। অয়ন এই বিষয়টাকে তেমন একটা পাত্তা দিলো না। আসলে জন্মদিনে পার্টিতে কেক খাওয়া হবে না। তা কি করে হয়? তবে আদু এটা কেমন পার্টি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কেক খাওয়া শেষ হতেই অয়ন অর্পাকে উদ্দেশ্য করে হাস্যজ্বল মুখে বলে উঠলো
— জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইলো অর্পা। আমার লেট হয়ে যাচ্ছে। আমি আজ আসি কেমন।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই অর্পার সামনে থেকে চলে যেতে লাগলো। অয়ন দু পা এগিয়ে যেতেই হঠাৎ করে অয়নের মাথাটা ঘুরতে লাগলো। অয়ন মাথার শিরার উপর হাত জোড়া রেখে থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। অয়ন মাথাটা চেপে ধরে টাল সামলাতে পারছে না। মিনিটের মধ্যে অয়ন হাঁটু গেড়ে বসে পরলো মাটিতে। অর্পা অয়নের অবস্থা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাবার উপক্রম হলো। অয়নকে নিস্তেজ হয়ে পরতে দেখে অর্পার মনে মধ্যে অদ্ভুত এক ভালো লাগা ঢেউ খেলে যেতে লাগলো। অর্পার মুখের হাসিতে স্পষ্ট যে সে কোনো এক নোংরা খেলায় মেতে উঠতে চাইছে। অয়ন মাটিতে বসে মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। অর্পা আর দাঁড়িয়ে থাকলো না। হাস্যজ্বল চেহারাটা এক সেকেন্ডের মধ্যে বদলে ফেললো সে। বিচলিত দৃষ্টিতে অয়নের কাছে গিয়ে অয়নের পিঠে হাত জোড়া আলতো ভাবে স্পর্শ করে অয়নকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে অর্পা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অয়ন তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কি হয়েছে? মাথা ঘুরছে? খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার!
* অয়নের কানে অর্পার কোনো কথাই যাচ্ছিলো না। অয়ন অর্পার হাত জোড়া নিজের পিঠের উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে মাথা যন্ত্রণা উপেক্ষা করে উঠে দাঁড়ানো ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। অর্পা অয়নকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে দেখে বেশ দ্রুত একটা গ্লাস অয়নের ঠোঁটের উপর চেপে ধরলো। অর্পা নিজের তৈরি করা অত্যান্ত শক্তিশালী নেশা যুক্ত ড্রিংক্সটা অয়নকে জোর করতে খাইয়ে দিলো। অয়ন না খাওয়ার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। অর্পা অয়নকে ড্রিংক্সটা খাইয়ে দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। হাতে থাকা গ্লাসটা ফেলে দিয়ে অর্পা উন্মাদের মতো হাসতে লাগলো। অর্পা নিজের চেষ্টায় সফল হতে চলেছে। অয়ন নেশায় আসক্ত হয়ে মাটিতে পরে আছে। অর্পা হাসতে হাসতে চিৎকার করে বলতে লাগলো “এই বার কি হবে মিস্টার অয়ন চৌধুরী? অর্পাকে ছেড়ে অধরাকে আপন করে নেয়া তো আর হচ্ছে না। আজ তোমাকে নিজের করে নিবোই আমি। আজকের পর থেকে তোমার ভালোবাসার সংসার একদম শেষ। আমি ততটাই কষ্ট তোমায় আর অধরাকে দিবো যতটা কষ্ট আমি নিজে পেয়েছি। আমাকে প্রত্যাক্ষাণ করার পরিনাম কতটা মারাত্মক হতে পারে তা তোমার ধারনার বাহিরে। আমি আগেও চাইতাম তোমাদের এই মধুর প্রেমের অবসান হোক। আর এখন ও তাই চাই। তবে আগে সফল হতে পারি নাই। কিন্তু, কিন্তু এখন আমাকে আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই”।
* অধরা নিজের কথা গুলো শেষ করতেই খুশিতে ফেটে পরে। আজকের খুশিটা অর্পা রোজ চাইতো। অর্পা অয়নের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে উঠলো
— বয়েস, স্যারকে রুমে নিয়ে যাও।
অধরার কথা শেষ হতেই চারজন লোক এসে অয়নকে মাটি থেকে তুলে রুমের দিকে নিয়ে যায়। অর্পা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে একটা অজানা নাম্বারে কল করে। অতঃপর ফোনটা হাতে নিয়েই রুমে দিকে চলে যায়। রুমে আসতেই অর্পা একটু রাগি কন্ঠে ওয়েটারদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো
— এই তোদের দিকে কোন কাজটা ঠিক মতো হবে? স্যারকে বিছানায় রেখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিস কি? তোদের কাজ শেষ এখন জানা থেকে বিদায় নে।
অর্পার ভারী কন্ঠস্বর শুনে লোক গুলো দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। অর্পা নিজের শড়িরের উপর থেকে শাড়িটা খুলে ফেলে দিলো ফ্লোরে। শাড়িটা খুলে অর্পা নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলো। এতো সুন্দর একটা শরীর। কি সুন্দর ফিগার। ফর্সা নাভির উপর একটা কালো তিল। বুকের বাম পাশের তিলটা তার সুন্দর্য্যকে আরো ফুঁপিয়ে তুলেছে। অর্পা নিজের দিকে তাকাতেই মনটা খারাপ করে ফেলল। এতোটা সুন্দর্য্য থাকা সত্ত্বেও অয়ন তার এই রূপে বন্দি হলো না। অয়ন তাকে মুখের উপর প্রত্যাক্ষান করে। “অধরা কি তবে আমার থেকেও বেশি সুন্দরী”? কথাটা ভাবতেই নিজের দিক থেকে মুখ নামিয়ে নিলো অর্পা। অর্পা আয়নার সামনে থেকে বিছানার দিকে চলে যায়। অয়ন নেশার ঘোরে উল্টো পাল্টা বকছে। অর্পা অয়নের দিকে একটু ঝুঁকে পরে অয়নের ঠোঁট বরাবর নিজের ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিয়ে ফিসফিসিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— আমার রূপে বন্দি করতে পারি আর না পারি তোমার সাধের সংসার ভেঙ্গে তোমায় আমি আপন করেই ছাড়বো।
কথাটা বলতেই অয়নের ঠোঁটের দিকে আরো একটু এগিয়ে আসতেই হঠাৎ করে অয়ন অর্পাকে সজোরে একটা ধাক্কা দিয়ে অয়নের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়। অর্পা বিছানার উপর তাল সামলাতে না পেরে পরে যায়। অর্পা একদম অবাক হয়ে যায় অয়নের ব্যবহারে। অর্পা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো নেশা হবার পরে এতো তাড়াতাড়ি কি করে নেশা কেটে গেলো? অর্পা বিছানার থেকে উঠে দাঁড়াতেই অয়ন নিজের শার্ট ঠিক করতে করতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। জামা ঠিক করে অয়ন অর্পার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলো। অর্পা অয়নের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অয়ন তোমার নেশা কেটে গেছে কি করে! তুমি ঠিক হয়ে গেছো?
— উহু কাটেনি কিছুই। ইনফ্যাক্ট আমি নেশাই করি নাই। তোমার ড্রিংকটা ফেক ছিলো। আমি তোমার তৈরি করা ড্রিংকটা বদলে দিয়েছি। আমি এতোক্ষণ নাটক করছিলাম। আমি তখনি আঁচ করে ফেলেছি যে নিশ্চই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য আছে তোর। তাই সবার প্রথমে তোর লোকদের কিনে নিয়েছি। আমি যাস্ট জানতে চাইছিলাম তোর নোংরা পরিকল্পনার পেছনে আর কে আছে।
অয়নের কথা শুনে অর্পা রেগে আগুন হয়ে যায়। এতো সুন্দর একটা প্লান নষ্ট হয়ে গেলো। অর্পা প্রচন্ড রেগে গিয়ে অয়নের দিকে হনহন করে এগিয়ে এসে অয়নের শার্টের কলার চেপে ধরে। রাগে গজগজ করতে করতে অর্পা ভারী কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আমার হতে তোর এতো সমস্যা কোথায়? দেখ আমার শরীরের দিকে। কোনো কিছুর কমতি নেই। তোকে সুখ দেবার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আমার মধ্যে আছে। অধরা আর আমাকে এক করে দেখ। অধরার মতো আমাকে একটু ভালোবেসে আপন করে নে। তোর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে পাগল করে দে। প্লিজ।
অয়ন অর্পাকে কোনো কথার জবাব না দিয়ে অর্পাকে এক ধাক্কায় নিজের থেকে আলাদা করে দিয়ে অর্পার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো অয়ন। থাপ্পড়টা বের জোরে হওয়াতে অর্পার নাকের থেকে কিছুটা রক্ত বেরিয়ে আসে। অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তোর মধ্যে আছে কারো সংসার নষ্ট করার উদ্দেশ্যে। অধরার মধ্যে তা নেই। যদি কারো শরীরের প্রতি দুর্বল হয়ে ভালোবাসা হয়। তবে একেকজন পতিতা নারীর ভালোবাসার মানুষের অভাব হতো না। তোকে কোন মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তা আমার মাথায় ঢুকছে না। এতোটা নির্লজ্জ কি করে কেউ হতে পারে? সামান্যতম আত্নসম্মান বোধ নেই তোর?
— হ্যাঁ, নেই। আমি নির্লজ্জ। আমার তোকে চাই। সেটা যেভাবেই হোক না কেনো।
— ওহহহ বেবি সরি। আমি তোমার হতে পারবো না। নতুন কাউকে খুঁজে নাও।
— নতুন কাউকে না। আমার তোকে চাই।
কথাটা শেষ করতেই অর্পা অয়নকে জড়িয়ে ধরে। অয়ন অর্পার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করতেই অর্পা চিৎকার করতে থাকে। অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় অর্পার ব্যবহারে। হঠাৎ করে অর্পা চিৎকার করছে কেনো? অয়ন অর্পাকে কোনো মতে নিজের থেকে আলাদা করে দিয়ে দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে। অয়ন চলে যেতেই অর্পা বিছানার উপর বসে মৃদু হেসে দিলো। এই হাসির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রহস্য লুকিয়ে আছে।
— সরি ভাবী। আমার ভূল হয়ে গেছে। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
অর্ণব অধরার রুমে এসে অধরার সামনে হাত জোড় করে কথা বলছে। অধরা অর্ণবের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত। অধরা অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ঠিক আছে। এখন তুমি আমার রুম থেকে যাও। আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোমায়।
— না ভাবী আপনি আমায় ক্ষমা করেনি। আপনি ক্ষমা না করা উবদি আমি এখানে এই মাটিতে বসে থাকবো।
* কথাটা শেষ করতেই অর্ণব মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। অধরা অর্ণবকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় অয়ন রুমের ভিতর চলে আসে। অয়ন অর্ণবকে অধরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে থমকে যায়। অধরা অয়নকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। অয়ন অর্ণবকে দেখে মোটেও খুশি হয়নি। অয়ন প্রচন্ড রেগে গিয়ে পিছন থেকে অর্ণবকে…………………….
#চলবে……………………….