#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অফিসার রুল তুলে অয়নের ভাঙ্গা পা এ আঘাত করতেই অফিসারের পিছন থেকে রাজ চিৎকার করে বলে উঠলো
— স্টপ অফিসার। আর একটাও আঘাত অয়নকে করবেন না। অয়নের বেল হয়ে গেছে।
রাজের কথা শুনতেই অফিসার বেশ চমকে যায়। হাতে থাকা দুলটা ফেলে দিয়ে অফিসার বেল নোটিশটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো। অয়ন ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাজের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই রাজ দৌড়ে ছুটে আসতে লাগলো অয়নের দিকে। অয়ন রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— ওখানেই দাঁড়িয়ে যা। আজ হঠাৎ করে এখানে কেনো এলি?
— বন্ধুর বিপদের দিনে আমি আসবো না তো কে আসবে?
— তা ঠিক আছে। আবার সময় মতো বন্ধুকে ছেড়ে যেতেও তোদের সময় লাগে না।
— খারাপ কাজ থেকে তোকে দূরে রাখতে গিয়ে যদি তোর থেকে কিছু সময়ের জন্য আমাকে আড়াল হয়ে থাকতে হয়। তবে আমি রাজি।
— হুম।
অফিসার বেল নোটিশটা পড়ে বেল পেপারে সাইন করে অয়নকে কাস্টরি থেকে বের করে আনলো। অয়ন কালো রং এর সুটটা পড়তে পড়তে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অফিসার আমি অয়ন চৌধুরী। ইচ্ছে করলে তোমার মতো হাজারটা আইনের লোককে আমি আমার পকেটে রাখতে পারি। তবে আমি তা করি নাই। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অধরার মতো ভূল করেছো। কিন্তু না। তুমি তো বিক্রি হয়ে গেছো। এখন আমি বাহিরে বলে তোমাকে ঢপ দিচ্ছি না। কিছুক্ষণ পরেই তোমার চাকরিটা তোমায় হারাতে হবে। আমার শরীরের আঘাতের মাশুল শুধু তুমি না। তোমার স্ত্রী, বাচ্চা সবাইকে দিতে হবে। আসছি।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই থানা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। অফিসার দৌড়ে অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। হাত জোড় করে অনুরোধ করছে অয়নের সামনে
— প্লিজ স্যার। এমনটা করিয়েন না। আমি আমার ভূল বুঝতে পেরেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।
— সরি অফিসার আমি ক্ষমা করতে পারলাম না।
রাজের কাঁধের উপর ভর করে অয়ন গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসতেই রাজ অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো
— অয়ন হসপিটালের যাবি?
— উহু। আমি তোর বাড়ি যাবো।
— সেটা কেনো? অধরা, তোর মা বাবা সবাই চিহ্নিত অবস্থায় আছে আর তুই নিজের বাড়ি না গিয়ে এখন আমার বাড়ি যাবি।
— আগ্গে হ্যাঁ। আমি তোর বাড়ি যাবো। আর তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে আমার। এখন আর প্রশ্ন করিস না। এই কয় দিন জামাই আদর পেয়ে ঘুমাতে পারিনি। আমি বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নিতে চাই।
— হুম।
রাজ গাড়ি স্টার্ট করে গাড়ি নিয়ে থানার সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়ির আয়নায় নিজের মুখটা দেখে বাঁকা হাসি দিলো। সব কিছু জবাব দিতে হবে এদের। অয়ন রাজের বাড়ি এসে গেস্ট রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে লাগলো
— আজ থেকে অয়নের চেয়ারে আমি বসবো। উফফফফ! কি শান্তি এই চেয়ারে। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু করতে পারবো। যত খুশি টাকা নিজের করে নিতে পারবো আমি।
অর্পাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো আনন্দের সহিত বলছে অভ্র। অভ্রর উদ্দেশ্য মৃদু হেসে অর্পা বলল
— তুমি এতোটা লোভী ছেলে সত্যি আমার আগে জানা ছিলো না। অর্থ খরচ করতে হলে আগে আয় করতে জানতে হয়। এই কথাটা নিশ্চই জানো তুমি।
— বাহ! অয়ন জেলে যেতেই অয়নের মতো কথা বলতে শুরু করে দিয়েছো।
— সত্যি বলছি। আচ্ছা ছাড়ো এই সব। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু বুঝে নাও। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
অর্পার শর্তের কথা শুনে অভ্র ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায় অর্পার দিকে
— কি শর্ত?
— অধরাকে সরিয়ে দাও। রাজ্য তোমার হয়ে যাবে। আমাকে রাজা দিয়ে দাও। সব কিছু তোমার। হ্যাঁ শুধু মাত্র তোমার।
— মানে? অধরাকে খুন করতে হবে!
— একদম ঠিক বুঝতে পেরেছো। আমি চাই না অধরা বেঁচে থাকুক। অয়ন কখন ও আমার হবে না। যতদিন ঐ অধরা নামক জীবটা বেঁচে থাকবে। খতম করে দাও ঐ অধরা নামক জীবটাকে। এই প্রপার্টি তোমার হয়ে যাবে।
— সত্যি!
— একদম সত্যি। পারবে তো?
— খুব পারবো।
* অর্পা আর অভ্র অধরাকে খুন করার পরিকল্পনা করতে লাগলো। অভ্র প্রপার্টির কথা শুনে লোভে চোখ জোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। টাকার জন্য অভ্রর দ্বারা যে সব সম্ভব তা অর্পার অজানা নয়। অর্পা অভ্রর সাথে কথা বলতেই আচমকা অর্পার ফোনে কল চলে আসে। অর্পা ফোনটা পিক করতেই ওপার থেকে বেশ হাঁপানো কন্ঠে কেউ বলতে লাগলো
— ম্যাম অয়ন জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
— ওয়াট? অয়ন বেরিয়ে গেলো কি করে? ওহহহহ গড! অয়ন এখন কোথায় আছে?
— সেটা জানি না। তবে অয়ন জেলে নেই। আমি দেখছি অয়ন কোথায় আছে।
— হ্যাঁ। খোঁজ নে। দেখ অয়ন কোথায় আছে।
কলটা কাট করতেই অর্পা মাথায় হাত রেখে সোফার উপর ধপাস পরৈ বসে পরলো। বিড়বিড় করে অর্পা বলতে লাগলো “এই অয়ন আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না। নিশ্চই বাড়ি ফিরে গেছে। অপহৃত লাগছে সব কিছু। এখন আমি অয়নকে কি করে নিজের করে পাবো? এই অফিসেও তো আর আশা হবে না। উফফফ! পুরো খেলাটা আমার হাতের বাহিরে চলে গেলো”।
অর্পার বিড়বিড় করে কথা বলার মাঝেই কেউ একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অর্পা আর অভ্রকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— কোনো খেলাই হাতের বাহিরে চলে যায় নি। অয়নের অবর্তমানে আমি অয়নের বিজনেস সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
কথাটা কানে ভেসে আসতেই অর্পার টনক নড়ে। অর্পা আর অভ্র অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকাতেই থ হয়ে যায়। অধরা অফিসে। অভ্র অধরাকে দেখে অয়নের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা অয়নের চেয়ারে অভ্রকে দেখতে পেয়ে রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অধরা অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এই মিস্টার তোমার সাহস হয় কি করে বসের চেয়ারে বসার?
অধরার রাগি কন্ঠস্বর শুনে অভ্র ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে? অভ্র আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— সরি ম্যাম। আমি ভেবেছি স্যার নেই তা হলে স্যারের কাজ গুলো তো কাউকে সামলাতে হবে। তাই এখানে বসেছি। আমায় ক্ষমা করে দিবেন।
— স্যার এর মিসেস আছে। সো এই নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। এখন যাও মিটিং এরেঞ্জ করো। আমি সকলের সাথে পরিচিত হতে চাই।
— সিওর ম্যাম।
অভ্র অধরার কথা শেষ হতেই দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অয়নের চেয়ারে বসে অর্পার দিকে দৃষ্টিপাত করে। অর্পাকে দেখে মনে হচ্ছে ভিশন সকের মধ্যে আছে সে। অধরা অর্পাকে উদ্দেশ্য করে একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠলো
— মিস অর্পা আপনি এই অফিসে কি করছেন? এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও আপনি এখানে আসলেন কি করে?
অর্পা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। মুখ কোনো ভাষা নেই। অবাক চোখ জোড়া এক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পার কোনো জবাব না পেয়ে অধরা আবার চিৎকার করে বলতে লাগলো
— মিস অর্পা আমি আপনাকে বলছি। এখানে এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও কেনো এসেছেন?
অধরার চিৎকারে অর্পার ঘোর কাটলো। অর্পা আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— আসলে ম্যাম আমার এই জবটা না থাকলে না খেতৈ পেয়ে মরতে হবে। তাই মানসম্মানে্য কথা না ভেবে আমি এখানে কাজের জন্য চলে আসি।
— ওহহহ। কিন্তু আপনার এই সময়ে অফিসে না আসাই ভালো। আসার সময় শুনতে পেলাম কিছু লোক আপনাকে আর আপনার চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে। আপনি বাড়িতে থাকুন। সময় মতো আপনার বেতন পৌঁছে যাবে।
— না ম্যাম। একদম না। আমি অফিসে আসবো কাজ করবো তারপর বেতন নিবো। এমনি এমনি টাকা আমি নিবো না।
— তা হলে সরি। আপনাকে অফিসে রাখতে পারলাম না। আপনি আসতে পারেন।
* অধরার বিরক্তি কর কন্ঠস্বর অর্পাকে অবাক করে দিলো। অর্পা অধরার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অধরা অর্পাকে……………………
#চলবে……………………..
#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্পা অধরার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অধরা অর্পাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলে উঠলো
— স্টপ। ওখানেই দাঁড়িয়ে যান। আপনাকে বললাম না এখান থেকে চলে যেতে? কথা কানে যায় না? গেইট আউট।
— ম্যাম, আমার সাথে রুডলি বিহ্যাভ করছেন কেনো? আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? আমি স্বাধীন ভাবে চাকরি করতে পারবো না কেনো? আপনার স্বামী আমাকে ধর্ষণ করেছে। এই কারনে আমায় নিয়ে লোকে হাজারটা কথা বলছে। আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। এখানে আমার ভূল টা কোথায়?
অর্পার কান্না ভেজা কন্ঠেস্বর আর চোখের কোনে জমে থাকা নোনা জল যে কারো মন গলে যাবে। অধরা অর্পার দিকে নিম্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল
— অর্পা, আমার স্বামী তোমার সাথে যা করেছে সত্যি তা খুব খারাপ করেছে। কিন্তু একটা কথা আমার স্বামী কিন্তু অফিসের মধ্যে তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেনি। কোথায় তোমাকে ধর্ষণ করেছে তা তুমি ভালো যানো। আমি প্রশ্ন করলে অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু না। সেটা আইন সিদ্ধান্ত নিবে। তুমি এখন যেতে পারো।
অধরার মৃদু কন্ঠে বলা কথাটি শেষ হতেই অভ্র কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। অধরাকে উদ্দেশ্য করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো
— ম্যাম, পরিচিত হবার জন্য বসাই মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে। আপনি আসুন।
অভ্রর কথাটা শেষ হতেই অধরা হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা এতো কিছু বলার পরেও অর্পা নিশ্চুপ হয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। অভ্রর দিকে তাকিয়ে অর্পা মুখ ঝামটা মেরে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।
— অয়ন এই শরীরে কোথায় যাচ্ছিস?
রাজের বিচলিত কন্ঠকে উপেক্ষা করে অয়ন মুচকি হেসে রাজকে উদ্দেশ্য করে বলল
— এই একটু বাহির থেকে ঘুরে আসছি। মনটা ফ্রেশ করে নিতে হবে তো নাকি।
— হুম। কিন্তু একটু সুস্থ হয়ে তারপর না হয়!
— আরে ভাই আমি ঠিক আছি। অনেক কিছু জানা বাকি আছে। খবর নেয়ার জন্য আমাকে যেতেই হবে।
* কথাটা শেষ করতেই অয়ন রাজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাজ অয়নের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এসব কি বলে গেলো অয়ন? কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। রাজ পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল করলো কোনো একজনকে। অয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা গাড়ি করে বেরিয়ে পরে অজানা গন্তব্যেহীন পথে। অর্পার এই নোংরা খেলার পিছনের মাস্টার মাইন্ডটা কে? তা জানতেই হবে। অর্পা আসলে কি চায়? আমায় না আমার প্রপার্টি? অর্পা আসলে কে? কি জন্য এসেছে? সব প্রশ্নের উত্তর চাই আমার। আর চাই মানে চাই। অয়নের মাথায় প্রশ্ন গুলো ঘোরপাক খাচ্ছে। কোথা থেকে শুরু করবে তা বুঝতে পারছে না অয়ন।
বাড়ির আসতে আসতে অর্পার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে। অর্পা নিজের ফ্লাটের দরজার লকটা খুলতেই দেখতে পেলো রুমটা ভিশন অন্ধকার। এতোটা আঁধার কালো হয়ে আছে যে রুমের মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অর্পা ফোনের টর্চটা অন করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। রুমের মধ্যে একটু হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অর্পা একটু একটু করে ভয় পাচ্ছ। অর্পা মেন সুইচের দিকে এগিয়ে এসে দেখে লোডসেটিং হয়েছে। কিন্তু অর্পার মাথায় আসছে না লোডসেটিং হলেও তো তার রুমে আলো থাকবে। কিন্তু আলো নেই কেনো? অর্পা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ইলেকট্রিসিয়ানকে কল করার জন্য। অর্পা নিজের রুমে গিয়ে টেবিলের উপর ডায়রীটা খোঁজ করতে লাগলো। ডায়রীর মধ্যে ইলেকট্রিসিয়ানের নাম্বার আছে। অর্পা মনোযোগ দিয়ে ডায়রীটা চেক করছে। আচমকা অর্পা অনুভব করলো তাকে পিছন থেকে কেউ জাপটে ধরে জড়িয়ে ধরেছে। অর্পা ষিজের পেটের উপর কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করছে। অর্পা ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো
— কে!?
অর্পা কোনো জবাব পেলো না। অর্পার ভয় আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অর্পা ফোনের টর্চটা নিজের পেটের উপর ধরতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠল। হ্যাঁ এক জোড়া হাত তার পেটের উপর রয়েছে। অর্পা পিছন ফিরে তাকাতেই বিদ্যুৎ চলে আসে। অর্পা পিছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠে। অর্পা দেখতে পেলো তার পিছনে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে অয়ন তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। অর্পা বিষ্ময় সূচক দৃষ্টিতে অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের মুখটা একদম শুকিয়ে আছে। অয়নকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে তার মনের মধ্যে হাজারটা অভিযোগ লুকিয়ে আছে। অর্পা আপন মনে ভাবছে “হঠাৎ করে অয়ন এমন ভাবে তার রুমে কেনো উপস্থিত হলো? অয়নের সাথে যা করেছি তার সাজা দিতেই কি অয়ন এখানে এসেছে? অয়ন কি কিছু করবে? অর্পা ভয় মিশ্রিত কন্ঠস্বর নিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো
— অয়ন তুমি এখানে? এমন ভাবে এলো! কি হয়েছে? জেল থেকে ছাড়া পেলে কি করে?
অর্পার প্রশ্ন শুনে অয়ন সোফার উপর ধপাস করে বসে পরলো। অর্পার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে একদম মৃদু কন্ঠে অয়ন বলে উঠলো
— আমাকে দেখে তুমি খুশি হওনি? তুমি কি চাইতে আমি জেলে পচে মরি? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি অর্পা তবে কেনো আমায় সাজা দিলে? কেনো আমায় কষ্ট দিলে? তুমি তো আমায় ভালোবাসো তবে কেনো এমনটা করলে?
অয়নের কথা গুলো অর্পাকে ভিশন রকম চমকে দিলো। আসলে কি অয়ন তার সামনে বসে আছে? নাকি অন্য কেউ? এই অয়নকে বেশ অচেনা লাগছে তার। আগের অয়ন তার সামনে বসে নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতোটা শান্ত ভাবে অয়ন কথা বলতে পারে না। অর্পা একটু চমকে গিয়ে অয়নকে আবার প্রশ্ন করে উঠলো
— অয়ন তুমি ঠিক আছো? তোমাকে দেখে কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে। কি হয়েছে?
অর্পার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়ন মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলল
— আমি ঠিক আছি। আজ কিছু সত্যের সামনাসামনি হয়েছি। তাই একটু আপসেট আছি।
অয়নের কথায় অর্পার মনে আবারও প্রশ্ন জাগলো কোন সত্যের কথা বলছে অয়ন? অয়ন কি আমার সত্যের কথা বলছে? অর্পা একটু সাহস বুকে সঞ্চয় করে অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলতে লাগলো
— অয়ন কোন সত্যির কথা বলছো তুমি? বিশ্বাস করো আমি এমনটা………
অর্পাকে বাকি কথা বলার সুযোগ অয়ন দিলো না। অর্পার কথার মাঝে অয়ন অর্পার হাত ধরে ফেলে। অর্পার হাত ধরে অয়ন একটানে অর্পাকে নিজের পাশে নিয়ে আসে। অর্পা অয়নের টানের তাল সামলাতে না পেরে অয়নের পাশে বসে পরে। অর্পা আবারও অবাক হয়ে যায়। অয়ন অর্পার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো
— তুমি আমায় কেনো এই মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে জেলে পাঠালে? আজ তোমার জন্য আমি সব সত্যি জানতে পেরেছি।
— বিশ্বাস করো অয়ন আমি তোমাকে অধরার থেকে আলাদা করতেই এই কাজ করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সহ্য হয় না অধরাকে। আমার তোমাকে চাই। তাই এই নোংরা খেলা খেলেছি আমি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। শুধু মাত্র তোমাকে আপন করে পাবো বলে। অয়ন আমাকে তুমি শাস্তি দাও। যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো। কিন্তু প্লিজ তোমার পায়ে পরি আমায় ক্ষমা করে দাও।
কথাটা শেষ করতে করতে অর্পা অয়নের পা ছুঁতে যাবে ঠিক এমন সময় অয়ন অর্পাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। অর্পার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন আলতো করে অর্পার চোখের পানি মুছে দিয়ে অর্পাকে বুকে নিয়ে বলতে লাগলো
— আমি ভূল করেছি অর্পা। অধরা আমার যোগ্য নয়। আজ জেল থেকে বেরিয়ে আমি জানতে পারি আমার অবর্তমানে অধরা আমার সমস্ত প্রপার্টি নিজের নামে করে নিয়েছে। অর্পা তোমার মিথ্যে অপবাদ যদি আজ না আসতো তবে আমি অধরার আসল সত্যি কখনও জানতে পারতাম না। অধরা আমায় আমার প্রপার্টির জন্য বিয়ে করেছে। ভালোবাসা মিথ্যে অভিনয় করেছে আমার সাথে। ওর জন্য আমি তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমার আর কাউকে চাই না। শুধু মাত্র তোমাকে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দাও তোমায় ভালোবাসার প্লিজ।
* অয়নের কথা গুলো অর্পার বিশ্বাস হচ্ছে না। আদু এটা স্বপ্ন কিনা তা নিয়ে অর্পার মনের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়ে গেছে। অর্পা অয়নের বুকে মাথা রেখে আনন্দে পাগল হয়ে আপন মনে বলছে “যা এদেখি মেঘ না চাইতেই জল। ভেবেছিলাম কি আর হলো কি? সবটা হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে গিয়েও আবার হতে ফিরে আসলো। উফফফফ! গড ইউ আর রিয়েলি গ্রেট। অধরার থেকে অয়নকে আলাদা করার আর কোনো চেষ্টা করতে হলো না আমায়। এখন রাজাও আমার আর রাজত্ব ও”। অর্পা আপনার মনে যখন এসব ভাবছে ঠিক ঐ মুহুর্তে অয়ন অর্পার ভাবনার মাঝে বলে উঠলো
— কি গো ক্ষমা করে আমায় সুযোগ দিবে না?
অর্পা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো
— দিবো কি? আমি তোমার আছি আর তোমারি থাকবো।
অয়ন আর অর্পা ভালোবাসার পরশ বিনিময়ের সময় হঠাৎ করে দরজার সামনে থেকে কেউ একজন হাত তালি দিতেই অয়ন আর অর্পার টনক নড়ে উঠলো। অর্পা অয়নের বুক থেকে মাথা তুলতেই দেখতে পেলো দরজার সামনে ওপারে দাঁড়িয়ে আছে……………………
#চলবে………………….